#প্রলয়_পুতুল
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৫
(কপি করা নিষিদ্ধ 🚫❌)
জুবায়ের শেষমেষ জিনিয়ার জেদের কাছে হেরে গিয়ে ওকে নিয়ে বের হয়েছে। বাইকের পিছনে জিনিয়া উঠে তো বহুত খুশি। হাত দুইপাশে প্রসারিত করে বলল,
“আই লাভ ইউ ভাইয়া।”
জুবায়ের মুচকি হাসলো। উপরে তা প্রকাশ না করে কর্কশ কন্ঠে বলল,
“হাত ঠিক কর। তাছাড়া এখানে নামিয়ে দিবো বলে দিলাম।”
জিনিয়া গাল ফুলিয়ে হাত ঠিক করে রাখলো। জুবায়ের মিটমিটিয়ে হাসলো। জুবায়েরের হাসি স্থায়ী হলো না। কারণ জিনিয়া ওর টিশার্ট টেনে ধরে বলতে লাগলো,
“আইসক্রিম খাবো, ভাইয়া আইসক্রিম কিনে দেও।”
“এ্যাহ এ তো খেতে দিলে শুতে চায়। সর এখান থেকে। পারবো না কিনে দিতে।”
“কিনে না দিলে কিন্তু তোকে কামড় দিবো।”
“তুই কি জংলী বিল্লি নাকি যে কামড়াকামড়ি করবি?”
“হ আমি জংলী বিল্লিই এখন আমি আইসক্রিম খাবোই।”
“পারবো না আমি।”
“পারবি না তো?”
জিনিয়ার কথার পিঠে জুবায়ের সোজাসুজি বলে দিলো,
“না”
জিনিয়া ফুসে উঠলো।
“দেখবি তোর বউ রাক্ষসী হবে। অনবরত তোর মাথার চুল টেনে লাফিয়ে লাফিয়ে নাঁচবে।”
জুবায়ের মুখ বাঁকালো।
“আর তোর বর হবে রক্ত খেকো জলহস্তী। তোরে উঠতে বসতে কথা শোনাবে।”
জিনিয়া জুবায়েরের বাহুতে খামচে ধরলো। জুবায়ের বাইক থামিয়ে কটমটিয়ে জিনিয়ার দিকে তাকালো। জিনিয়া নেমে পরলো বাইক থেকে। জুবায়ের বিরক্তি নিয়ে বলল,
“হয়েছেটা কি?”
জিনিয়া দাঁত বের করে হাসলো।
“আইসক্রিম!”
জুবায়ের ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বাইক ঠেকে নেমে দাঁড়ালো। জুবায়ের নামতেই জিনিয়া বিজয়ের হাসি হাসলো। জুবায়ের একটা দোকানের দিকে এগিয়ে গেলো। জিনিয়াও পিছু পিছু গেলো। জুবায়ের দুটো আইসক্রিম কিনে একটা আইসক্রিম জিনিয়ার হাত দিলো।
জিনিয়া আইসক্রিমের প্যাকেট খুলে খেতে লাগলো। জুবায়েরে কল আসায় সে একটু সাইডে গেলো কথা বলতে। আবিদ কল করেছে। বিকালে তো ওদের সাথে দেখা করার কথা ছিলো।
জিনিয়া ঠিকমতো খেয়াল না করে যেই না ঘুরতে নিবে ওমনি একটা খাম্বার সাথে ধাক্কা খেলো। কপালে বাম হাত চেপে ধরলো।
“মাগো মা, রাস্তার মাঝে এই খাম্বা কোথায় থেকে এলো।”
নুহানের কপালে ভাঁজ পরলো। সে সারা আর রোজের জন্য আইসক্রিম কিনতে এদিকেই আসছিলো। এমন সময় জিনিয়া বেখেয়ালি ভাবে ঘুরতেই জিনিয়া ওর বলিষ্ঠ বুকের সাথে ধাক্কা খেলো। শুধু ও ধাক্কা খায়নি ওর আইসক্রিমটাও ধাক্কা খেয়েছে। যার জন্য নুহানের কালো টিশার্টের একাংশে আইসক্রিম লেগে মেখে গেছে। এমনিতে তার টিশার্ট মাখিয়েছে তার উপরে তাকে খাম্বা বলেছে। নুহান ক্ষেপে গেলো। বাজখাই গলায় বলে উঠলো,
“এই মেয়ে চোখ কি আকাশে রেখে চলাফেরা করো?”
জিনিয়ার কপালে ভাঁজ পরলো। খাম্বা তো কথা বলে না তাহলে! চোখের সামনে থেকে চুলগুলো সরাতেই দেখলো তার আইসক্রিম ছেলেটার টিশার্টের চাপা খেয়ে নিহত হয়েছে। আইসক্রিম বেচারার এ অবস্থা দেখে ঠোঁট উল্টে এলো জিনিয়ার। কান্না পেলো তার। কত কষ্ট করে ভাইয়ের থেকে বলে নিয়েছিলো। জিনিয়ার রাগ হলো। নাকমুখ কুচকে মাথা উঁচু করে তাকালো। সুদর্শন এক যুবক। যার গায়ের রঙ ফর্সা। রাগের কারণে যা এই মুহুর্তে লালচে হয়ে আছে। জিনিয়ার কাছে বর্তমানে ছেলেটাকে লাল মহিষের মতো দেখাচ্ছে।
“আমার না হয় চোখ ছিলো না আপনার চোখ কি গরুর কাছে ধার দিয়েছিলেন?”
নুহানের মেজাজ আরো খারাপ হলো। কোথায় সরিটরি বলবে তা না পকপক করছে?
নুহান আঙুল তুলে বলল,
“মুখ সামলে কথা বলো। একে তো তুমি ভুল করেছো আবার আমাকে উল্টাপাল্টা বলছো।”
“আমি ভুল করেছি মানে? আপনিই তো উপরের দিকে তাকিয়ে এসে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন।”
সারা আর রোজ এগিয়ে এলো। রোজ নুহানের টিশার্টে তাকিয়ে জিভের কামড় বসালো। এটা তো নুহানের প্রিয় টিশার্টের একটা। রোজ চোখ ফিরিয়ে তাকালো সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে। মেয়েটার পরনে হালকা গোলাপি লং স্কার্ট, সাদা টপস আর গলায় স্কার্ফ প্যাঁচানো। মুখটা বেশ আদুরে, গোলগাল, কোঁকড়ানো চুলগুলোতে মেয়েটাকে আরো কিউট লাগছে।
রোজ ওদের বাঁধা দিয়ে বলল,
“কি হয়েছে?”
জিনিয়া রোজের দিকে তাকালো। ঠোঁট উল্টে বলল,
“আপু দেখেন না এই লোকটা আমার আইসক্রিমকে নিহত করেছে আমার কপালে খাম্বার মতো শরীর দিয়ে ধাক্কা দিয়েছে। তার উপর আমাকে কতগুলো কথা শোনাচ্ছে। আপনি ওনাকে কিছু বলুন না।”
রোজকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নুহান বলে উঠলো,
“ও কি বলবে হ্যাঁ? আমি খাম্বা আর তুমি কি? গিনিপিগ কথাকার!”
জুবায়ের ফোন পকেটে রেখে এদিকেই আসছিলো তখনি জিনিয়াকে রোজের সাথে কথা বলতে দেখে কপালে ভাঁজ পরলো তার। দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বলল,
“এই মেয়ে তুমি এখানে?”
রোজ অর্ধ পরিচিত ভয়েজ শুনে আশেপাশে তাকালো। জিনিয়ার পাশে জুবায়েরকে দেখে রোজ ভ্রু কুচকে বলল,
“আপনি!”
জিনিয়া ভাইকে দেখে আঙুল তুলে নুহাকে দেখিয়ে বলল,
“দেখ না ভাইয়া এই লোক আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।”
নুহান সরু চোখে জুবায়েরের দিকে তাকালো। জুবায়ের কিছু বলতে নিবে তার আগেই রোজ বলে উঠলো,
“এইজন্যেই মেয়েটা এতো ঝগড়া করছিলো। করবেই বা না কেন আপনারই তো বোন।”
“এই মেয়ে তুমি আমাকে ইনডাইরেক্টলি ঝগড়ুটে বললে।”
“ওটা আবার বলতে হবে নাকি!আপনি তো ঝগড়ুটেই।”
“এই মেয়ে তুমি কিন্তু বড্ড বেড়েছো।”
“বাড়াবাড়ির কি দেখলেন আপনি?”
সারা আর সহ্য করতে না পেরে চেঁচিয়ে বলল,
“চুপ, একদম চুপ! আর কেউ কোনো কথা বলবে না।”
সারার চেঁচানোতে চারজনই তাকালো সারার দিকে। সারা খিটমিট করতে করতে বলল,
“তখন থেকে দেখছি একজন আরেকজনের সাথে ঝগড়া করেই যাচ্ছো। আর নুহান তুমি মেয়েটার জন্যেও একটা আইসক্রিম কিনে নিয়ে এসো।”
নুহান অবাক হয়ে কিছু বলতে নিবে তখনি সারা হাত তুলে ওকে থামিয়ে দিলো। জুবায়ের থমথমে গলায় বলল,
“লাগবে না আইসক্রিম।”
“লাগবেনা মানে আপনাকে দিচ্ছে কে?”
সারা বিরক্ত হলো।
“উফ বাবা থামো তো সবাই। আচ্ছা সেসব বাদে সরি তো বলতেই পারো একে অপরকে।”
নুহান ভেংচি কাটলো। জিনিয়াও অন্যপাশে ঘুরে ভেংচি কাটলো। সারা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে জিনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“সরি বনু। মন খারাপ করো না।”
নুহান আড়চোখে জিনিয়ার দিকে তাকালো। জিনিয়া সারাকে বলল,
“আপু আপনি কেন সরি বলছেন? যার দোষ সে বুঝবে।”
জুবায়েরের ফোনটা আবারো বেজে উঠলো। নিজের হাতের আইসক্রিমটা জিনিয়ার হাতে দিয়ে বলল,
“চল তো কল দিয়ে পাগল হয়ে গেলো।”
জিনিয়া নুহানের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে চলে গেলো। ওরা যেতেই সারা চোখ ছোট ছোট করে রোজ আর নুহানের দিকে তাকালো।
.সারার চোখের সেই রাগী চাহনি দেখে রোজ চুপসে গেলো, নুহান মাথা নিচু করে টিশার্টের দিকে তাকাতে লাগলো।যেখানে আইসক্রিমের সাদা ছোপটা এখনো স্পষ্ট।
সারা হাত কোমরে রেখে বলল,
“তোমরা দুইজন মিলে মানুষের বাজারে হাঁটতে আসো, না নেটফ্লিক্সের লাইভ শো করতে আসো বুঝি না!এতো কথা বলো তোমরা উফ। চলো এবার।”
নুহান দাঁড়িয়ে আছে দেখে সারা পিছনে ঘুরে বলল,
“আরে বাবা ধুঁয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে। বাসায় চলে যাবো আমি নাকি আসবে।”
নুহান মুখটাকে ঝুলিয়ে যেতে লাগলো।
অন্যদিকে জিনিয়া বাইকে উঠে আইসক্রিমে বাইট দিতে দিতে বলল,
“ওই আপুটাকে তুমি চিনো?”
জুবায়ের ভ্রুকুচকে তাকাতেই জিনিয়া চোখ পিটপিট করে জুবায়েরের দিকে তাকালো। জুবায়ের গম্ভীর মুখে বলল,
“তোর এতোকিছু জানতে হবে না। এখন চুপচাপ বাসায় যাবি। জিদ করে বের না হলে আজ এমন হতোই না।”
জিনিয়া ভেংচি কেটে আইসক্রিম খেতে লাগলো। জুবায়ের একটা দীর্ঘশ্বাস বাইক চালাতে লাগলো। জিনিয়াকে বাসার সামনে রেখে সে রওনা হলো বন্ধুদের কাছে যাওয়ার জন্য।
রোজরা ঘুরে ফিরে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরলো। সারাকে এখন কিছুটা স্বাভাবিক লাগছে। ফোন সে অফ করেই রেখেছে। নেহালকে আর বিরক্ত করেনি সে। মনে মনে ঠিক করে রেখেছে নেহাল বাসায় আসলে সে বাপের বাড়ি চলে যাবে। ওকে যেহেতু নেহাল পছন্দ করছেনা থেকে কি করবে?
নুহান নিজের রুমে এসে টিশার্টটা খুলে ছুঁড়ে ফেলল। মেজাজটা তার এখনো বিগড়ে আছে। হাঁটুর বয়সী মেয়েটা আর সাথে কেমন তর্ক করলো। একে তো নিজে বেখেয়ালি ছিলো তার উপরে তাকে খাম্বা বলা। নিজে তো গিনিপিগের মতো আবার আমার সাথে লাগতে আসে। এগুলো ভাবতে ভাবতেই সে ওয়াশরুমে গেলো।
রাতের খাবার শেষ করে রোজ নিজের রুমে এসে ফোন টিপতে লাগলো। ফেসবুকে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করে তার চোখ পরলো একটা আইডির দিকে। এটা তো জুবায়ের মোরগা। রোজ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো প্রোফাইল পিকটার দিকে। একটা নীল রঙের সুট পড়েছে সে। চোখে নীল সানগ্লাস। ঠোঁটের হাসি দেখে গা যেন জ্বলে গেলো রোজের।
“এ্যাহ ঢং দেখো না। মুখ দেখে মনে হয় যেন ভাঁজা মাছ উল্টে খেতে জানে না। শালার ঝগড়ুটে ব্যাটা।”
হুদাই জুবায়েরের আইডিতে ঢুকে একটু দেখতে লাগলো।
“আইডি নয় তো মনে হয় মেয়েদের বাজার। এই খাটাশ ব্যাটার আসল ব্যবহার দেখলে নির্ঘাত সব মাইয়া লেজ গুটিয়ে পালাতো।”
কি যেন মনে করে হুট করে জুবায়েরকে ব্লক করে দিলো রোজ। এখন আগের থেকে ভালো লাগছে। হুদাই এই কাজ গুলো করে সে শান্তি পায়। হুটহাট মানুষকে ব্লক করাই তার স্বভাব।
#চলবে