প্রাণনাশিনী পর্ব-১৭

0
10

#প্রাণনাশিনী
#পর্ব_১৭
#সুহাসিনি_মিমি

–“সুবহা! ওই সুবহা! দরজা খুলতাসোস না কেন? ওই মাইয়া!”

দরজার ওপাশ থেকে বিলকিস বেগমের রাগত কণ্ঠে একই সরে ডাক ভেসে এলো বারবার। সেই আওয়াজে দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সামলানোর চেষ্টা করলো নাওফিক। তবে তার মনোযোগ তখন অন্য কোথাও। আর ঠিক সেই সুযোগটাই কাজে লাগালো সুবহা। তড়িৎ বেগে সরে গিয়ে হঠাৎ করে দৌড়ে দরজার ছিটকিনি খুলে বাইরে বেরিয়ে এল হুড়মুড়িয়ে।

এদিকে মেয়ের ঘরে পা দিয়েই ভিতরের দৃশ্য মস্তিস্ক আহরণ করতেই থমকে দাঁড়ালেন বিলকিস বেগম। মেয়ের ঘরের ভিতর নাওফিক কে কে দেখে বিস্ময় তার আকাশ ছুলো। মুখে দুশ্চিন্তাময় ভাব নিয়ে মায়ের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে শ্রেয়ান। নাওফিক কড়া চোখে তাকাতেই শ্রেয়ান শুষ্ক ঢুক গিললো। কেবল হতাশার চোখে ইশারা করলো যে সে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল তবে থামাতে পারেনি তার মাকে।

বিলকিস বেগম রাগত গলায় বলে অকোস্মাৎ বলে উঠলেন চেঁচিয়ে,

–“তুমি এই রুমে? কী করো এখানে? যাও নাই?”

–“আসছিলাম বউটার সাথে একটু দেখা করতে। দেখা না করলে যদি রাগ করে বসে?”

বিলকিস বেগম ভুরু কুঁচকে বললেন,

–“বেশি কথা বইলো না নাওফিক। আমার মাইয়া তোমারে দেখলে দোষ মাইল দূরে গিয়ে থাকে ভয়ে ভয়ে। রাগ করার প্রশ্নই ওঠে না। আমি তো তোমারে নিষেধ করছিলাম উপরে উঠতে।”

নাওফিক হালকা ব্যঙ্গ মেশানো কণ্ঠে বললো,

–“মেয়ের জামাইকে বরণ তো দূরের কথা উল্টো তাড়িয়ে দিচ্ছেন। কী অদ্ভুত শাশুড়ি আপনি!”

বিলকিস বেগমের চোখে আগুন জ্বলে উঠলো তৎক্ষণাৎ।

–“আমার মাইয়ারে জোড় কইরা তুইলা নিয়া গিয়া বিয়া করসো। ভাবো কেমন ধরণের পোলা তুমি?”

নাওফিক হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে সরে দাঁড়ালো। ধূসর চোখদুটো রাগে চকচক করে উঠল। ঠোঁটের কোণে বিদ্রূপের ছায়া টেনে বলল,

–“আপনাকে অভিশাপ দিলাম আমি। সবাই মিলে চক্রান্ত করে আমার পেছনে লেগেছেন। কিন্তু একদিন… একদিন দেখবেন, আপনার মেয়ের কোলে সাত-আটটা পোলাপান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আপনার কূলে উঠে আপনারা চুল টেনে ছিড়বে। তখন হারে হারে বুঝবেন এই নাওফিক চৌধুরী আসলে কী জিনিস!”

বিলকিস বেগম বিদ্রুপ করে হেসে বললেন,

–“হবেই তো! তোমার ছেলেপুলে বলে কথা।”

নাওফিক ততক্ষণে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো। বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,

–“সরেন দরজা থেকে! মাতারি কোথাকার!”

বিলকিস বেগম আকস্মিক এহেন কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। মুহূর্তের জন্য থ বনে গেলেন তিনি। অতঃপর ঝাঁঝিয়ে উঠলেন,

–“এই ছেলে! কি কইলা তুমি আমারে? ”

নাওফিক থামলো না। দরজার বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে উঠল,

–“চাচারে কইবেন কানের ডাক্তার দেখাইতে।মাতারি বলসি মাতারি!”

ঘরের ভিতরে থমথমে পরিবেশ। সবার মুখ স্তব্ধ।
ওদিকে মায়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রেয়ান বুঝে গেল পরিস্থিতি টালমাটাল। এখান থেকে কেটে পরা শ্রেয় ভেবেই সবার আগে নিজের রুমের দরজার দিকে ছোটার সিদ্ধান্ত নিলো।

**

আশু মিয়ার চায়ের দোকানের ধুলোমাখা বেঞ্চে পা তুলে বসে আছে নাওফিক। এক হাতে ধরা আধখাওয়া সিগারেট থেকে ধোঁয়া উঠছে ধীর গতিতে। চোখ দুটো দূরে কোথাও স্থির। ভিতরে ভিতরে জ্বলছে খুব। পাশেই বসে শ্রেয়ান। হাতে চায়ের কাপ। চোখে চিন্তার ছাপ।

নাওফিক নিশ্চুপ। ছেলেটাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে রাগ ঠিক কতটা গভীরে গেঁথে বসেছে ওর।শ্রেয়ান একটু ইতস্তত করে বলল,

–“আমার কি মনে হয় জানিস… যদি কিছু মনে না করিস তাহলে বলি বলতে পারি।”

নাওফিক থেমে তাকাল বন্ধুর পানে।ধোঁয়া ছেড়ে কাশল একবার। তারপর হালকা গলায় বলল,

–“অর্ধেক কথা সহ্য করতে পারি না আমি। ঝেড়ে কাশ!”

শ্রেয়ান একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

–“তুই বরং বিদেশ চলে যা আবার। আমার মনে হয় এটাই তোর জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে।”

এইবার নাওফিক সোজা হয়ে বসে রীতিমতো চোখ রাঙিয়ে তাকালো শ্রেয়ানের দিকে। তবে শ্রেয়ান দমল না। গলা চড়িয়ে বলল তড়িঘড়ি করে,

–“আরে দাড়া দাড়া ভাই। পুরা কথাটা তো আগে শুনবি! আমি বলছি দেখ বোনটা আমার এখনো ছোট। আর সেটাই তো সবার আসল সমস্যা। তুই বরং কয়েক বছরের জন্য বিদেশ চলে যা। এইদিকে আমি তো আছি সুবহার খেয়াল রাখার জন্য। ও যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন আর কেউ তোদের কিছু বলবে না।”

নাওফিক মুখে একরাশ ব্যঙ্গ নিয়ে হাসল। তারপর চড়া গলায় বলল,

–“হো! তারপর তোর বোন কলেজে উঠে নতুন নতুন পোলাগো লগে ট্যাংকি মারবে। আর আমি বিদেশে বসে সেই কাহিনি শুনবো? সালা তোর বোনের বয়স দেখছিস, আর আমার বয়সটা দেখলি নাহ? তোর বোন প্রাপ্তবয়স্ক হতে হতে আমার চুল বা”ল সব পেকে যাবে! তখন তোর বোন নিজেই আমারে কইবো বুড়া!”

শ্রেয়ান হেসে ফেলল হুট্ করেই। মাথা নেড়ে বলল,

–“আরে ভাই, এত ভাবছিস কেন? আমি আমার বোনকে চিনি। সুবহা ওরকম মেয়ে না। আর বিয়ের আগেই যখন তোদের ব্যাপারটা আমি হ্যান্ডেল করেছি। এখন তো তোর জিনিস। একদম তোদেরই। ভাই হয়ে তোকে এতটুকু গ্যারান্টি দিতে পারি তোর বউ কে আমি আগলে রাখবো।”

নাওফিক এবার ঠোঁটে একটা হালকা হাসি টেনে সিগারেটের শেষ টানটা দিয়ে ফেলে দিল ধূলোয়। সেটা। এরপর একটু চুপ থেকে শ্রেয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“ঠিক বলছিস?”

শ্রেয়ান চোখ গরম করে বলল,

–“তোর আমার উপর বিশ্বাস নাই?”

নাওফিক মুখে একরাশ যন্ত্রণা মেশানো হাসি টেনে বলল,

–“বিশ্বাস তো আছেই ভাই। কিন্ত আসল সমস্যা টাতো তোর বইন। ওরে না দেইখা থাকমু কেমনে? তোর বইনটার ভেতর যে আমার প্রাণপাখিটা। একদিন না দেখলেই মনে হয় বুকের ভেতরটা ছোট ফট করে উঠতেছে!”

শ্রেয়ান চায়ের কাপটা নামিয়ে বলল,

–“আরে ভাই এখন তো ফোন আছে, ভিডিও কল আছে। যখন মন চাইবে কল দিবি আগের মতই। সমস্যা কি?”

নাওফিক এবার কড়া গলায় বলল,

–“শোন, আমি যদি শুনি আমার অবর্তমানে তোর বইন কোনো পোলার লগে ইটিস পিটিশ শুরু করছে তাইলে আগে আমি দেশে ফিরেই তোর ১৪টা বাজামু আগে ! তারপর তোর বোনের ১২টা! ভাই-বোন দুইজনকেই ধরে বেলতলার ঘাটে চুবামু কসম করে কইলাম!”

শ্রেয়ান মুখে চায়ের চুমুক থামিয়ে রীতিমতো হাঁপ ছেড়ে বলল,

–“এই জন্যেই তোকে কেউ সিরিয়াসলি নিতে চায় না। কথায় কথায় ধমক,চুবানি। আরে ভাই একটু তো রেস্পেক্ট দে। সম্পর্কে তোর বড় হই।”

**

সবকিছু ভেবে-চিন্তে শেষমেশ একটা সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছালো নাওফিক। ঠিক করল বিদেশ যাবে সে। ওর বাবার পুরোনো ব্যবসা এখনো আছে সেখানে। মোটামুটি বেশ কয়েকটা দোকান আছে বিদেশে। একসময় অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিলেন সেই বিজনেস। সেই স্বপ্ন আজ ধুলো খাচ্ছে। নাওফিক সিদ্ধান্ত নিলো এবার সেই দায়িত্ব সে নিজেই তুলে নেবে কাঁধে। সাবলম্বী হবে। কারো মুখের দিকে চেয়ে বাঁচবে না আর। অন্তত কারো টাকায় বেঁচে থাকার খোঁটা তো আর সহ্য করতে হবে না।

আর বাবার সেই দুই নাম্বারি টাকার ওপর তো নাওফিক এমনিতেই নির্ভরশীল নয়। ঘৃণা করে সে সেই পথ। কিন্তু তোফাজ্জল সাহেবও কম যান না। ছেলের মুখে বিদেশ যাওয়ার কথা শুনেই চেয়ার ঠেলেই উঠে দাঁড়ান। ছেলের কথার পিঠে উত্তর করলেন,

–“তাহলে বিদেশ যাচ্ছিস কার টাকায় নালায়েক? ছেলেমেয়েরা বাপের ভরসা হয় আর তুই হইছিস আমার কাঁধের বোঝা!”

তবে নাওফিক ধার ধাড়লো না বাবার এহেন কথায়। বলল,

–“বিদেশ গিয়া আপনার সব টাকা সুধে আসলে পরিশোধ করে দিবো আব্বাজান। ”

**

সুবহাদের বাড়ির বসার প্রাঙ্গনে সন্ধ্যার নরম আলো ছড়িয়ে আছে। বাতাসে হালকা একটা শীতলতা ভাব বহমান। যেন আসন্ন বিদায়ের আভাস। সেইখানেই আপাতত চোখ মুখ ভাঁর করে বসে আছে নাওফিক। পাশেই বসে শ্রেয়ান। বাড়িতে নেই বিলকিস বেগম।
বাবার বাড়িতে গেছেন। গেছেন নয় বরং পাঠানো হয়েছে তাকে। বন্ধুর জন্য মাকে মিথ্যা বলে নানার বাড়ি পাঠিয়েছে শ্রেয়ান।

হান্নান সাহেবও নেই বাড়িতে। আরদে গেছেন তিনি। সবকিছু নিঃশব্দে পরিকল্পিত। কেউ টেরও পায়নি। আগামীকাল নাওফিকের ফ্লাইট।
বিদেশে যাচ্ছে সে। কে জানে কতদিনের জন্য।

তাই বন্ধুর কাছে শেষবার আর্জি পেশ করেছে বউটার সঙ্গে একান্তে কিছু পার্সোনাল টাইম স্পেন্ড করার। সেই সুবাদেই পরিকল্পিত ভাবে সমস্ত আয়োজন করেছে শ্রেয়ান।

তবে এতকিছু করে দেওয়ার পরও তার বন্ধুর মুখের এই গুমোট অভিব্যক্তি কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছেনা শ্রেয়ানের। চায়ের কাপটা ঠোঁটে তুলে এক চুমুক দিয়ে পাশে বসা নাওফিকের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। নাওফিক বসে আছে একেবারে নিশ্চুপ। শ্রেয়ান তাকাতেই শ্রেয়ানের দিকে রাগী চোখে তাকালো নাওফিক।

কেবলা কান্তের মতো মুখে মৃদু হাসি এনে হালকা করে বলে উঠল,

–“এভাবে রেগে আছিস কেন ভাই? সব তো করে রেখেছি। বাড়িতে তো কেউ নেই। বনু উপরেই আছে। যা।”

–“সালা তোর বোন ঘুমাইয়া আসে। আমি কি এখন ঘুমন্ত বউয়ের লগে গিয়ে রোমান্স করমু?”

শ্রেয়ান কিঞ্চিৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেল। বিব্রত বোধ হলো ওর। বলল মিনমিন করে,

–“উঠাইয়া দিমু?”

–“থাক আর এতো কষ্ট করতে হইবো নাহ। তোর ওই জিদ্রিস মা যখন তখন আইসা পড়তে পারে । সালার আমার একটা কপালই। বিয়া কইরাও শান্তি নাই। লুকাইয়া শুশুর বাড়ি আইসা বউরে দেখতে হয়।”

বলেই উঠে দাঁড়ালো নাওফিক। দ্রুত পা চালিয়ে উঠে গেল উপরে। সোজা সুবহার রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো।অতঃপর লম্বা এক শ্বাস নিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করল ও। মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে। বলা বাহুল্য মেয়েটা ঘুমের ঘরেও যথেষ্ট মার্জিত ভাবে ঘুমায়। আদুরে লাগছে নাওফিক এর নিকট তার ঘুমন্ত প্রাণ টাকে। কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে থামলো একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে। কাতুরে দৃষ্টি যুগল ফেলে দেখলো অনেকটা সময়। তৃষ্ণার্থ চোখ দুটো ভরে ভরে দেখলো। এরপর কি মনে করেই যেন আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বসল খাটের কোণায় ফ্লোরে হাটু ভেঙে। সুবহা কাত হয়ে শুয়ে। মুখটা নাওফিক এর বরাবর। নাওফিক হাত বাড়িয়ে দিলো সামনে। আজ আর কোনো বাধা নেই। ওর স্পর্শ, ছোঁয়া এখন পবিত্র। সুবহার কপালে পরে থাকা এলোমেলো চুলগুলো গুঁজে দিলো কানের পাশে। ঘুমের মাঝেও বোধহয় মেয়েটা ভয় পেল। কেঁপে উঠল স্পর্শ পাওয়া মাত্রই। দ্রুত হাত গুটিয়ে নিলো নাওফিক। উঠে যাবে কি সে। মেয়েটার ঘুমের ডিসটার্ব করবে না ভেবেই উঠে দাঁড়ালো। এই মেয়েটা জাদুকরি। কাছে এসেও শান্তি নেই আর না দূরে যেয়ে। আর দুটো বছর! দু বছর পর বাপ্ মা এমনকি পুরো জগৎ কারো কথার পাত্তা দিবেনা ও। এমনকি স্বয়ং এই মেয়েরও নাহ। করে নিবে নিজের। তবে এর জন্য তার বিদেশ যাওয়া টা জরুরি। কাছে থাকলে নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারবে না সে। ভেবেই দরজার দিকে বা বাড়াতে বাড়াতে বিড়বিড় করে বলে গেল,

–“নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলে যাচ্ছি আজ তোকে ছেড়ে। তুই যদি তার একাংশ বুঝতি তাহলে হয়তো আজ নিয়তি আমাদের অন্য কিছু হতো। তবে ফিরে আসবো আমি। খুব শীগ্রই।”

**

চৌধুরী বাড়িতে আজ সাজ সাজ রব। ধুলোমাখা উঠোনে প্যান্ডেল টানানো হয়েছে বিশাল আকৃতির। রঙবেরঙের লাইটে ঝলমল করছে চারপাশ। গাছের গায়ে, বারান্দার খুঁটিতে, জানালার গ্রীলে গাঁথা ফুল আর বেলি-কামিনার মালা সবই আজকের গায়ে হলুদের সাজ।

গ্রামের মানুষজন, আত্মীয়-স্বজন সবাই এসেছে সুস্মিতার বিয়ের অনুষ্ঠানে। কনের স্টেজ এখনও ফাঁকা। কিন্তু চারপাশে চলাফেরা করা চাঞ্চল্য থেকে বোঝা যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়িই সে জায়গা আলোয় ভরে উঠবে কনের আগমনে।

এই হট্টগোলের মাঝেই চৌধুরী বাড়িতে পা রাখে সুবহা। আজও মেয়েটার মুখে চাপা সংকোচ বিদ্যমান।

তোফাজ্জল সাহেব নিজে গিয়েই এনেছেন ছেলের বউকে। হয়তো ছেলের প্রতি অভিমান এখনো আছে। কিন্তু এই মেয়েটাকে নিয়ে তার মনে গভীর মমতা, একটা দায়বদ্ধতা কাজ করে সবসময়। ছেলের অবর্তমানে তিনি নিজেই ছেলের বউয়ের সব দায়িত্ব নিয়েছেন। স্কুলে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া, ওষুধপত্র, এমনকি পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ সবকিছু নিজেই বহন করেছেন।

বাড়িতে ঢুকেই ঝর্ণা বেগম এগিয়ে এসে পুত্রবধূকে বুকে টেনে নেন।

–“আমার মেয়ে এসেছে বাড়িতে। ”

ছোট করে বলেই তিনি আলমারি খুলে সোনার বালা জোড়া পড়িয়ে দেন সুবহার হাতে।
সুবহা মাথা নিচু করে পরে নিলো সেটা।

নাওফিক বিদেশ যাওয়ার সময় পেরিয়েছে এক বছর। এই এক বছরে কতবার চেষ্টা করেছে সুবহা মন থেকে নাওফিক নামক মানুষটাকে মুছে ফেলতে। কিন্তু যে সম্পর্ক আল্লাহ বেঁধে দেন তা থেকে মুক্তি পাওয়া কি আদৌ মানুষের পক্ষে সম্ভব?

তবে লোকটার প্রতি যে ভয়ের মাত্রা কমে গেছে বিষয় টা তেমন নয়। নাওফিক ওর সামনে করলে শরীর নয় আত্মাটাও কেঁপে ওঠে ওর।
এই ভয়টাই ওকে দূরে রেখেছে। তাইতো একবারও যোগাযোগ করেনি সুবহা। আর না লোকটা ওর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রেখেছে। এই এক বছরের মধ্যে এর আগেও সুবহা কয়েকবার চৌধুরী বাড়িতে এসেছে। তবে রাত টুকু থাকা হয়নি কখনো। সকাল আসলে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই শ্রেয়ান এসে নিয়ে গেছে বোনকে।

চলবে….