#প্রাণপ্রিয়❤️ [পর্ব-০২]
~আফিয়া আফরিন
অনিতার ঘুম ভাঙ্গে সূর্যি মামা উঠার’ও আগে। তারপর সূর্যি মামার সাথে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। আজ সম্ভব হলো না। ঘুম ভাঙতে ভাঙতে আটটা পেরিয়ে গেছে। রাতে ওই ঘটনার পর ঠিকঠাক মত আর ঘুম হলো না, তারপর ভোরের দিকে চোখটা লেগে গেল।
অনিতা উঠে কাউকে দেখতে পেল না ঘরে। ফুপি নিশ্চয়ই রান্নাঘরে। রাতের কথাটা মনে পড়ে গেল তার। ভাবতে ভাবতে এদিক ওদিক তাকাতেই অদূরে টেবিলের উপর পড়ে থাকতে দেখল ডায়েরীটা। অনিতা চট করে উঠে দাঁড়াল। দরজায় একবার উঁকি দিয়ে টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াল। ফুপির জিনিস কেউ কখনোই তার অনুমতি ব্যতীত স্পর্শ করে না, তাই হয়ত অনিতা থাকা সত্ত্বেও সে এটা এভাবে রেখে গেছে। অনিতা ভাবল, কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে এত কৌতুহল ভালো না। ফুপি তাকে কত বিশ্বাস করে, হঠাৎ যদি এসে দেখে তখন? কিন্তু রাতের আঁধারে কান্নার ব্যাপারটাও যে রয়ে যায়। অনিতা পড়ল উভয় সংকটে।
দ্বিধান্বিত হয়েই ডায়েরীটা হাতে তুলে নিল। বোঝা গেল, যত্নের কোনো কমতি নেই এতে। প্রথম পাতা উল্টাতেই একটা তারিখ নজরে এলো—২৭ অক্টোবর, ১৯৯৯.
উরিম্মা, এতো তার জন্মের’ও কত বছর আগে!
মাঝের আরেকটা পৃষ্ঠায় দৃষ্টি আটকাল। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘প্রিয় মানুষের দেখা পাওয়া আর আকাশের চাঁদের দেখা পাওয়া বোধ হয় একই অনুভূতি তৈরি করে। কী যে ভালো লাগছে! দু’চোখ প্রতিদিন যারে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায়, মন প্রতিনিয়ত যার জন্য দিশেহারা—তার দেখা পেয়েছি। প্রিয় সম্বোধন করলাম, কিন্তু সে আমার ঠিক কতটা প্রিয় আমি জানিনা। তবে তাকে দেখতে ভালো লাগে, বুকের ভেতরটা প্রশান্তিতে ছেয়ে যায়। মন কেমন করে সেই অনুভূতি আমি লিখে প্রকাশ করতে পারব না।’
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০০০.
অনিতা ডায়েরী বন্ধ করল। একটা চাপা শ্বাস ফেলল। যথেষ্ট সাহস দেখানো হয়েছে, আর নয়। সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।
সেই ভাবনাতেই বুঁদ হয়ে রইল। তাহলে ফুপির জীবনেও কেউ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল? পরিবার থেকে মোটেও বাঁধা ছিল না। অনিতার স্পষ্ট মনে আছে, অনুর বিয়ে দেওয়ার সেই সময়টাতে মা-বাবা, দাদা-দাদী সকলেই বলেছিল তার পছন্দের কেউ থাকলে জানাতে। তারা অবশ্যই খোঁজখবর নিয়ে সেখানেই বিয়ের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু অনু একবাক্যে বলে দিয়েছিল, তার পছন্দের কেউ নেই এবং কখনো কেউ ছিল না।
অনিতা আর কিছু ভাবতে চাইল না। কিছু তো একটা ব্যাপার আছেই। নয়ত এত লুকোচুরি কীসের? আপাতত থাকুক সব। পড়ে সময় এবং সুযোগ বুঝে ডায়েরীটা আরেকবার পড়লেই হয়ত বোঝা যাবে সব।
অনিতা মায়ের কাছে এসে বসতেই তিনি তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হ্যাঁ রে অনি, তোর পছন্দের যে কেউ আছে আমাদের তো কখনো বলিস নাই। বুঝতেও দিস নাই। আমরা কি তোকে অমতে বিয়ে দিতাম? তোর বাবাকে নাহয় না বললি, আমার থেকেও গোপন করতে হবে?’
আচমকা মায়ের এমন আক্রমণে অনিতা অবাক হলো বটে, কিছু বলার ভাষাও খুঁজে পেল না। ফুপি তারমানে সব বলে দিয়েছে। মনে মনে প্রফুল্লবোধ করলেও মায়ের কথায় সামান্য অপরাধবোধ জাগল। আসলেই তো, মাকে জানালে কী এমন হতো?
রুবি পুনরায় বলল, ‘তোর ফুপি সকালে এসে তোর বাবা আর আমাকে বলল ছেলেটার কথা। কী যেন নাম? আহির, তাই তো। তোকে তোর বাবা ডেকেছে, যা গিয়ে দেখা করে আয়।’
অনিতা নাবোধক মাথা নাড়ল। মাকে বলল, ‘বাবা কি রাগারাগী করবে? আমি একলা যাব না, তুমিও চলো।’
রুবি মুখ ঝামটে উত্তর দিলেন, ‘প্রেম করার সময় তখন তো আমার প্রয়োজন পড়ে নাই, তবে এখন কেনো?’
অনিতা অনুরোধের সুরে বলল, ‘মা, প্লিজ। তুমি ছাড়া আমাকে এই মুহূর্তে হেল্প করার জন্য আর কে আছে? আহিরের কথা বলছি, ও অনেক ভালো ছেলে।’
‘তো কথাটা নিজের বাবার সামনে গিয়ে বল। আমি এসবের মধ্যে একদম নেই।’
অনিতা আরও কিছুক্ষণ মায়ের আঁচল ধরে টানাটানি করল। রুবি একটুখানিও নড়লেন না। ঠিক সেসময় সাদাত হাসানের গলার আওয়াজ ভেসে এলো।
তিনি অনিতাকেই ডাকছেন। রুবি অনিতাকে চায়ের ট্রে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘যা এখন। আমার মাথা খাস না।’
অনিতা অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল মায়ের দিকে আরেকবার। রুবি চোখ গরম করে তাকাতেই সে দ্রুত বেরিয়ে গেল।
অনিতা ড্রয়িং রুমে এসে কাউকে দেখতে পেল না। একটু আগে ফুপিও এখানে ছিল, অথচ এখন বাবা ছাড়া কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সব বেইমান, বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক! তাকে একা ভানের জলে ভাসিয়ে দিয়ে পালিয়েছে। বাবা যদি এখন আহিরের কথা জিজ্ঞেস করে, তাহলে সে উত্তর দিবে কোন মুখে? ছিঃ ছিঃ!
অনিতা ধীর পায়ে এগিয়ে চায়ের ট্রে টি-টেবিলে রেখে বাবাকে বলল, ‘এইতো চা নিয়ে এসেছি।’
তারপর সে উল্টো দিক ঘুরে মানে মানে এখান থেকে কেটে পড়তে চাইল। কিন্তু এই যাত্রায় তা আর হলো না। বাবা ফের পিছু ডাকল। অনিতা থমকে তাকাল।
সাদাত হাসান বললেন, ‘বসো। কথা আছে তোমার সাথে।’
অনিতা ধপাস করে পাশের সোফায় বসে পড়ল। তবে বাবার দিকে তাকাল না। নিচের দিকে তাকিয়ে আবোলতাবোল ভাবতে লাগল।
তিনি বেশ সহজ গলায় মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছেলের নাম কি? কী করে? কোথায় থাকে? পড়াশোনা কতদূর? কীভাবে পরিচয়?’
ইশশশ, কীভাবে পরিচয়? এখন সে বাবাকে কি করে বলবে, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে বান্ধবীর সাথে সিনেমা দেখতে গিয়ে সেই হলে তার সাথে পরিচয়! ফুপি এতকিছু বলতে পারল, অথচ নাম ঠিকানা কিছু জানাল না?
অনিতা মৃদুস্বরে বলল, ‘ফুপি তোমাকে বলে নাই কিছু?’
‘আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি।’
ভালোই! অনিতা নিজেই মনে মনে নিজের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করল। তারপর বলল, ‘ওর নাম আহির। পড়াশোনা করছে পাশাপাশি জব।’
‘বাসা কোথায়?’
অনিতা সামান্য এইটুকু কথা বাবাকে বলতে গিয়েই চোখমুখ লাল করে ফেলেছে। নার্ভাসনেস’এ আর কিছু মনে আসছে না। সমস্ত কিছু গুলিয়ে ফেলেছে। মনে করার চেষ্টা করল, আহিরের বাসা কোথায়? আশ্চর্য! মাথার ভেতর সব জ্যাম পাকিয়ে বসে আছে। মনেও পড়ছে না, সে কোন সাবজেক্টে পড়াশোনা করে! এমন অসহায় পরিস্থিতিতে জীবনেও পড়ে নাই।
তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হলো? ছেলেটা থাকে কোথায়?’
অনিতা তোতলাতে তোতলাতে বলল, ‘থাকে মানে, থাকে তো ওর বাসায়।’
‘ওর বাসাটা কোথায় সেটাই জিজ্ঞেস করছি।’ তিনি সরু কণ্ঠে বললেন।
‘ওর বাসা?’ অনিতা ফাঁকা ঢোক গিলল।
‘হুঁ বাসা? কেনো নেই?’
অনিতা নিজে একদিন গিয়ে ঘুরে এসেছিল ওর বাসা থেকে। অথচ এই মুহূর্তে নামটা মনে পড়ছে না। আর বাবা’ও পুলিশি জেরা শুরু করে দিয়েছে। অনিতা মাথা চুলকে বলল, ‘মনে পড়ছে না তো।’
সাদাত হাসান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সোফায় আয়েশ করে হেলান দিয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে। মনে করে বলো।’
‘বাবা আমি পরে বলি?’ অনিতা সাবধানে জিজ্ঞেস করল।
‘উহুঁ, পরে আমি শোনার সময় পাব না। এখন আমার কোন তাড়া নেই। আজকে অফিসেও গেলাম না, তোমার কথা শোনার জন্য। সমস্যা নেই, তুমি মনে করে বলো!’
‘আমার আজকে একটা ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ছিল। এটেন্ড করতে না পারলে…..’
মেয়ের বাকি কথাটুকু শেষ করতে দিলেন না। বললেন, ‘কী? পরীক্ষায় সমস্যা হবে?’
অনিতা উপর নিচ মাথা ঝাঁকাল। তিনি ফেল বললেন, ‘আচ্ছা হোক। তোমার রেজাল্ট কোনোকালেই খুব একটা ভালো হয় নাই। এইবার’ও না হলে ক্ষতি নেই। বলো দেখি! ওহ আচ্ছা, মনে নেই? মনে করার চেষ্টা করো। আমি অপেক্ষা করছি।’
আজ ভালোই গ্যাড়াকলে পড়েছে। বাবা যে সহজে ছাড়বে না বোঝা গেছে। এমন বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য মা, ফুপি কিংবা দাদিও একবার এলো না। অনিতার মনটাই খারাপ হয়ে গেল! তারপর আচমকা মনেও পড়ে গেল।
তড়িৎবেগে বাবাকে বলল, ‘ওর বাড়ি গাজিপুর। ওখানেই থাকে, পুরো পরিবার।’
‘এই ছোট্ট কথাটা মনে করতে এতো সময় লাগল?’
‘ভুলে গেছিলাম।’ মিনমিন স্বরে জবাব দিল অনিতা।
সাদাত হাসান কিছু একটা ভেবে বললেন, ‘এইজন্য পরীক্ষাতেও ডাব্বা মারো। যাইহোক, নিজেরা পছন্দ করেছে ভালো কথা। এখন আমাদের’ও তো যাচাই করে দেখতে হবে। নিয়ে এসো একদিন ছেলেটাকে। কথাবার্তা বলি, পরিচিত হই। বিয়ে-শাদীর ব্যাপার তারপরে। তোমার একলার পছন্দের ভিত্তিতে তো কিছু করতে পারছি না।’
অনিতা উঠে দাঁড়াল। বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে।’
তারপর দৌড় দিল সেখান থেকে। এতটাই জোরে দৌড়াল যে আসার পথে দরজায় বাড়ি খেল। কপালে হাত বোলাতে বোলাতে রান্নাঘর থেকে সকলের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। সেদিকেই ছুটল সে। অনিতাকে দেখা মাত্রই অনু হেসে উঠল। বলল, ‘কী রে, ইন্টারভিউ শেষ? কেমন হলো? কী মনে হয়, এই যাত্রায় চাকরীটা পাবি তো?’
অনুর কথা শুনে মা এবং দাদিও হেসে উঠলেন। সবার হাসি দেখে অনিতা মুখ গোমড়া করে বলল, ‘তোমাদের সাথে কথাই বলা উচিত না।’
দাদি বললেন, ‘আমাদের সুপারিশ ছাড়া চাকরি পাবি তুই?’
‘তাই বলে এভাবে আমাকে বাবার জেরার মুখে ফেলে দিবে তোমরা? কেউ নেই ওখানে? আমি….আমি….’ অনিতা ফুঁপিয়ে উঠল।
অনু উঠে গিয়ে তার মাথায় হাত রেখে বলল, ‘পাগল মেয়ে। প্রেম করার সাহস আছে, অথচ সেটা প্রকাশ করার সাহস নেই? প্রেম করার সময় একা করলি, বিয়ে করার সময়ও একা করবি, আমরা কেনো সবকিছুতে কাবাব মে হাড্ডি হতে যাব? এখন ঘরে যা। আমি আর ভাবি বের হবো একটু, তুই যাবি আমাদের সাথে?’
অনিতা একবাক্যে না বলে দিল। ফুপি বাইরে গেলে সেটাই হবে তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ। ডায়েরীটা পড়তে হবে। জানতে হবে যেই মানুষটাকে তার দেখতে ভালো লাগতো, সেই মানুষটার পরবর্তীতে কী হয়েছিল!
.
অনু আর রুবি বের হওয়া মাত্র অনিতা নিজের ঘরে এলো। ডায়েরীটা ওই জায়গায়’ই দেখতে পেল। ওষ্ঠ্যদ্বয়ে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। ডায়েরীটা হাতে নিয়ে উত্তরের বারান্দায় এসে বসল। এখান থেকে মূল ফটক স্পষ্ট দেখা যায়। ফুপি এলে ফটাফট জায়গার জিনিস জায়গায় রেখে দেওয়া যাবে।
অনিতা প্রথম পৃষ্ঠা উল্টাল। বিশেষ কিছু লেখা নেই। খুচরো খুচরো কিছু অনুভূতি লেখা আছে। পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার পর বাবার আদর, তারপর এই ডায়েরী গিফট করা! ভাইয়ের সাথে মারামারি, আইসক্রিম চকোলেট নিয়ে ঝগড়া!
একজায়গায় লেখা রয়েছে, ‘আজ ভাইয়ার সাথে একদফা ঝগড়া হয়ে গেল! বাবার কাছে আমার নামে নালিশ দিচ্ছে। আমিও কি ছেড়ে দিব? একদম না। ওর ক্লাসমেটের সাথে প্রেম করার ঘটনা ফাঁস করে দিয়েছি। তারপর বাবা তাকে রাগারাগী করল, আর ভাইয়া আমাকে! ব্যাপার না, ওসব আমি গায়ে মাখি না।’
১১ ডিসেম্বর, ১৯৯৯.
অনিতা হাসল। আবার মনে মনে ভাবল, বাবার’ও তাহলে গার্লফ্রেন্ড ছিল! সে পরের পৃষ্ঠা উল্টাল।
‘রাজশাহীতে মামীর বাসায় আছি। পরীক্ষা শেষ, অফুরন্ত সময়। স্নেহার সাথে বেশ ভালো সময় কাটছে। আজ ঘুরতে গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। ওখানকার ছেলেপেলেরা ক্রিকেট খেলছিল। আচমকা একটা বল আমার দিকে দৌড়ে এলো, কিন্তু স্পর্শ করতে পারল না। সুপার হিরোর মত একটা ছেলে এসে বলটা ধরে ফেলল এবং আমাকে বলল, সরি! কী দারুণ!’
১০ জানুয়ারি, ২০০০.
‘আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সেদিনের সেই সুপার হিরোর দেখা পেলাম আজকে। ভুলতেই বসেছিলাম। স্মৃতি পুরোপুরি ভুলে যাওয়ার আগে আবার তার দেখা মিলল। মামাদের অ্যাপার্টমেন্টেই থাকে, চার তলায়। টুকটাক কথা হলো, পরিচিতিদের মত। অসাধারণ মানুষ! সত্যিই কি নাকি আমি একটু বেশি ভাবছি?’
১৮ জানুয়ারি, ২০০০.
‘স্নেহা আর মামির সাথে, ভালোই ঘোরাঘুরি করছি। বাড়ির কথা মনে পড়ছে, ভাইয়ার সাথে ঝগড়া ভীষণ মিস করছি। তবে এখানেও দারুণ সময় কাটছে। সেই সুপার হিরোর সাথে প্রায় দেখা হয়। ওর বাড়ি কুমিল্লা, কিন্তু পড়াশোনার সূত্রে এখানেই থাকে।’
২২ জানুয়ারি, ২০০০.
‘আজ একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে, সেই সুপার হিরোকে আমি স্বপ্নে দেখেছি, কিন্তু বাস্তবে বেশ কিছুদিন তার দেখা পাচ্ছি না। কোথায় গেল কে জানে? রোজ মাঠে যাই, কিন্তু দেখা পাই না। যতক্ষণ সময় পাই জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকি, যদি একনজর দেখা পাই! কিন্তু তার দেখা মিলছে না।’
০১ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০০০.
‘অনধিকার চর্চা জিনিসটা খুউব খারাপ। আমার মনে হচ্ছে, কয়েক’শ শতাব্দী আমি পেড়িয়ে এসেছি। এতদিনকার ভালোলাগা এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে। আর মন টিকছে না মামাবাড়িতে। কেনো?’
০৮ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০০০.
এইটুকু পড়ে অনিতা ডায়েরীটা বন্ধ করল। ফুপির মামাবাড়ি, স্নেহা ফুপি সবাইকেই তার চেনা। ওরা এখনও রাজশাহীতেই রয়েছে। স্নেহা ফুপি বিয়ে করে চট্টগ্রাম আছে বর্তমানে। তাদের সাথে বেশ ভালো পরিচয় রয়েছে, কিন্তু কথার প্রসঙ্গে কখনো ফুপির এই বিষয়টা শোনে নাই। নাকি শুনেছে কিছু, খেয়াল করে নাই। এই সুপার হিরো ছেলেটা কি তাদের পরিচিত কেউ?
অনিতা পুনরায় ডায়েরী খুলতে নিতেই চোখ পড়ল ফটকে। ফুপি আর মা আসছে। সে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। দৌড়ে ঘরে গিয়ে টেবিলের উপর ডায়েরীটা সযত্নে রেখে ছিল। বাকিটুকু পড়ার জন্য মন আকুলিবিকুলি করলেও সেই সুযোগ নেই আর। আবার অপেক্ষা করতে হবে, কখন ফুপি বাইরে যাবে অথবা অনিতা ডায়েরীটা একলা পাবে!
.
.
.
চলবে……