প্রাণপ্রিয় পর্ব-০৭

0
11

#প্রাণপ্রিয়❤️ [পর্ব-০৭]
~আফিয়া আফরিন

“আমি আমার জীবনের একটা অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কী করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আমার কোনো বড় বোন থাকলে হয়ত তার সাথে বিষয়টা শেয়ার করতে পারতাম। হয়েছে কি, আমি প্রচন্ড প্রেমে পড়ে গেছি। এতদিন তো নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, কিন্তু এরপর? ও আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না। ওর সামনে গিয়ে কি বলে দিব, আমি আপনাকে ভালোবাসি! একটু অতিরিক্ত হয়ে যাবে না? আচ্ছা হলে হোক, নির্লজ্জ হতে হলে তাই নাহয় হবো। তারপর দরকার পড়লে ওর সামনেই আর আসব না কখনো।”
০১ জুন, ২০০০.

“মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। যথারীতি নিচে নামলাম। ও মাঠে বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলছিল। আমি জানি সন্ধ্যা নামার কিছুক্ষণ পর সে বাড়ি ঢুকবে। তাই গেটেই দাঁড়িয়ে রইলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। সে এলো, আমাকে দেখে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি এখানে?’
আমি সোজা উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ, আপনার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।’
সে কিছুটা অবাক হলো। তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘আমার জন্য কেনো? দরকার ছিল কোনো?’
আমি বললাম, ‘আপনাকে আমি ভালোবাসি মনে হয়!’
সে দীর্ঘক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমিও চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। নীরবতা ভেঙে সে বলল, ‘বাহিরে যাবে?’
আমি বললাম, ‘বাহিরেই তো আছি।’
সে হেসে মেইন গেট খুলে বের হলো। আমাকে বলল, ‘ভালবাসলে চলে এসো।’
কিছুটা আশ্চর্য হলেও আমি তার পিছু পিছু গেলাম। গলির মোড় পর্যন্ত চুপচাপ ছিলাম দু’জনেই। বড় বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে সে আমায় বলল, ‘হঠাৎ ভালবাসলে কেন? তাও আবার আমাকে?’
আমি মাথা তুলে তাকালাম। বললাম, ‘ভালবাসতে কোন কারণ লাগে না। ইচ্ছে হয়েছে তাই বেসেছি।’
‘গুড। কিন্তু তুমি সিওর আমাকে আসলেই ভালোবাসো?’
আমি মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়লাম। সে বলল, ‘ভালোবাসা এতো সোজা না। তোমার বয়স কত হুম?’
‘মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই।’
সে হো হো করে হেসে উঠল। আমি আরও একবার তার হাসির প্রেমে পড়ে ফাঁসি খেলাম।
সে আমাকে সময় দিল। বলল, ভেবে দেখতে। আমি তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দিলাম, ‘আমি আর কিছু ভাবতে চাই না, বুঝতে চাই না।’
০৬ জুন, ২০০০.

“আমার আবার রাত জাগার অভ্যাস আছে। বেশিরভাগ সময় রাত জেগে সিনেমা দেখতাম। এখানে এসে সিনেমা না দেখা হলেও অযথাই রাত জাগছি। ভাবলাম, ছাদে যাই। আজকে পূর্ণিমা, আকাশে সুন্দর চাঁদ উঠেছে। স্নেহা ঘুম, নাহয় ওকে নিয়ে যেতাম। ছাদে উঠতেই তাকে দেখতে পেলাম রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছে। একবার চলে যেতে চাইলাম, কিন্তু গেলাম না। পায়ের আওয়াজে সে আমার দিকে ফিরে তাকাল। আমাকে দেখে কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলাম না তার মধ্যে। সে বলল, ‘ভালো আছো?’
আমি সে কথার জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলাম, ‘আপনি সিগারেট খান?’
‘হুঁ, খাই তো। ভীষণ পছন্দের।’
‘কিন্তু আমার যে ভীষণ অপছন্দের!’
‘কে? আমি?’ সে আমার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করল।
আমি উত্তর দিলাম, ‘না, আপনার হাতের এই বস্তুটা।’
‘আর আমাকে? আমাকে পছন্দ করো?’
আমিও সরাসরি তার চোখের দিকে তাকালাম। দৃঢ় কন্ঠস্বরে বললাম, ‘আপনাকে শুধু পছন্দই করি না, ভালোওবাসি।’
সে হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিল। আমি তবুও দমে গেলাম না। পুনরায় বললাম, ‘কাউকে ভালোবাসা খারাপ? আমি আপনাকে ভালবাসতে পারি না কিংবা আপনি আমাকে ভালবাসতে পারেন না?’
সে চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। ও আমার দিকে তাকালে আমি কখনোই পাল্টা ওর দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারতাম না, সব সময় মাথা নিচু করে রাখতাম। ও আমাকে দেখছে দেখুক, যখন আমার সময় হবে তখন আবার আমি দেখব।
এক পর্যায়ে সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘এই সময়ে ছাদে কেন এসেছ?’
আমি রেলিংয়ে হাত রাখলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘পূর্ণিমার রাত দেখতে এসেছি। আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর, তাই না?’
সে মাথা নেড়ে ভীষণ খুশি হয়ে বলল, ‘একদম তোমার মত!’
১০ জুন, ২০০০.

“স্বপ্নের দিনগুলি, ভীষণ সুন্দর। আমি-না আমার মনটা ভীষণ বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। ওর সাথে দেখা করার সময় কোনোকিছু ভাবতে চাইতাম না। আগে কেমন ভয় ভয় লাগত। কোনো ছেলে মানুষের সাথে কথা বললেও, বারবার মনে হতো কেউ যদি দেখে ফেলে! কিন্তু ওর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু কাউকে মানতাম না, কারো কথা শুনতাম না। আমার জীবন জুড়ে অল্প সময়ের জন্য সে বিশাল এক জায়গা দখল করে নিয়েছে। এই জায়গার নাম’ই তো ভালোবাসা, তাই না?”
১২ জুন, ২০০০.

“১০ টাকার বাদাম খেতে খেতে আমাদের প্রেমটা একদিন ঠিকই হয়ে গেল। সে নাকি এতদিন আমার অনুভূতি দেখার অপেক্ষায় ছিল। কথাটা শুনে একটু মন খারাপ হয়েছিল বটে, তবে ভালোবাসা পেয়েছি—এটাই তো অনেক। তবে আবার মন খারাপ স্থায়ী করব কোন দুঃখে?
ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আমাকে বিশ্বাস হয় না?’
সে বলেছিল, ‘আজ এবং এই মুহুর্ত থেকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করছি।’
‘এতদিন বিশ্বাস হতো না তাই না?
‘তাও হতো, তবে আমি পরিপূর্ণতার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এরমধ্যে তোমার মন যদি পরিবর্তন হয়ে যেত, তাহলে তো কাহিনী সেখানেই ডিশমিস। কিন্তু তোমার মন পরিবর্তন হয় নাই বলেই, আজ দু’জন এখানে এবং একসাথে।’
মন খারাপ আর থাকলো কই? ও কখনো আমার মন খারাপ দেখতে পারত না। আমার মুখের হাসিটাই যেন তার প্রাণশক্তি ছিল। একদিন না দেখলেই পাগল হয়ে যেত।”
২৮ জুন, ২০০০.

“ওর পাগল হওয়াটা বোধহয় এইবার স্থায়ী হয়ে গেল! এই সময়টায় আমাদের উরাধুরা লেভেলের প্রেম চলছিল। কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারছি না। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করার জন্য সবসময় উদগ্রীব হয়ে থাকত। আমিও দেখা দিতাম সময় করে, সবাইকে ফাঁকি দিয়ে। এখানে তো আমাকে শাসন করার মত কেউ নেই। মামা, মামী প্রচুর আদর করে। তাই আমার অনিয়মেও শাসন করতো না।
আমার পরীক্ষা ফল বের হলো আজকে। পরীক্ষা তো ভালোই দিয়েছিলাম, কিন্তু ফলাফল আমাকে হতাশ করল। এটা ভেবে আরোও হতাশ হলাম যে, আমাকে ঢাকা ফিরে যেতে হবে। ওর সাথে আমার আর দেখা হবে না। মা আমাকে ভীষণ তাড়া দিতে লাগলেন। বললেন, ‘ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে আয়। এখানে থেকেই যতটুকু পারিস, যেভাবে পারিস পড়াশোনা কর। কত মানুষ তো পড়াশোনার সুযোগই পায় না, আর তুই পেয়েও নাটক করছিস?’
মাকে কী করে বোঝাই? অবশেষে সেদিন রাতে ছাদে তার সাথে দেখা করলাম। ও আমাকে বোঝাল এবং বলল, ঢাকা ফিরে যেতে। কিন্তু আমি তখন আক্ষেপে অস্থির। সবাই ভেবেছিল, চান্স না পাওয়ার কারণে হয়তো আমার এই অস্থিরতা। কিন্তু আমার মনের মধ্যে দিয়ে কী চলছে, কী ঘূর্ণিঝড় বয়ে চলছে তা কেবল আমিই জানতাম।”
০৮ জুলাই, ২০০০.

“ওর কাছে আমাদের রামপুরার বাসার ঠিকানাটা দিলাম। ও আমায় আশ্বস্ত করেছে, এসে দেখা করবে। ফিরে যাওয়ার আগে সবকিছুর জন্য আমার মন কেমন উঠল। এইবার মামীর কাছে অনেকদিন ছিলাম, তিনি প্রচুর কান্নাকাটি করলেন। আমাকে যেতেই দিবেন না। স্নেহাকে বিদায় জানালাম, মামাকে বলে গাড়িতে উঠলাম ভাইয়ার সাথে। আমি দেখি নাই তবুও আমি জানি, আরোও একজোড়া দৃষ্টি ছাদ থেকে আমায় দেখছে। আমি চোখ বন্ধ করলাম, অনুভব করলাম তাকে। মনে হলো, এইতো একদম কাছেই আছে আমার। তবে দূরত্ব আর কোথায়? শুধুমাত্র স্থান ভেদে কয়েক কিলোমিটারের দূরত্ব কিন্তু মন নিয়ে তো আমরা কাছাকাছি’ই!”
১০ জুলাই, ২০০০.

“ইদানিং আমার ব্যস্ততা একটু বেড়ে গেছে। পড়াশোনা, রোজ ক্লাস করা, তারপর প্রাইভেট—সবকিছুতে হাঁপিয়ে গেছি। তবে আনন্দের বিষয় হচ্ছে, এইকয়েক মাসে সে আমার সাথে দেখা করার জন্য চারবার ঢাকায় এসেছিল। প্রথম যেদিন এসেছিল, আমি একদম সারপ্রাইজড হয়ে গেছিলাম। ইচ্ছে হচ্ছিল, ছুট্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু সেই সুযোগ ছিল না। প্রথমত, এটা আমার বিদ্যাপীঠ আর দ্বিতীয়ত, আমি এসবে অভ্যস্ত নই। সেইদিন সারাদিন আমরা ঘুরে বেড়ালাম। আমি জীবনে প্রথমবারের মত ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রেম করতে গেছিলাম। আমার জীবনের সেরা অ্যাডভেঞ্চার! ঘটনাটা ছিল, জুলাই মাসের ২৮ তারিখের। অথচ আজ কতগুলো দিন পেরিয়ে গেলে তা লিখতে বসলাম।”
০১ সেপ্টেম্বর, ২০০০.

“দ্বিতীয়বার যখন আমাদের দেখা হলো, তখন’ও ক্লাস ফাঁকি দিলাম অথচ সামনে আমার পরীক্ষা। একটু ভয় ভয় লাগত, নিজের শহর, সকল মানুষজন চেনা পরিচিত, যদি কেউ দেখে ফেলে? তবে পরোয়া করতাম না। যার ইচ্ছে হয় দেখুক! আমার কী তাতে? কোনো পাপ তো করতেছি না, শুধুমাত্র ভালোবেসেছি।
সেদিন’ও পার্কে বসে গল্প করছিলাম; গল্প তো করছিলাম না, একজন আরেকজনকে চুপিচুপি দেখছিলাম আর কী!
ও হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘দুনিয়াতে এত মানুষ থাকতে আমাকে ভালোবাসলে কেনো? কি আছে আমার মধ্যে? মা আমায় কি বলে জানো? আমি নাকি আস্ত একটা মাকাল ফল।’
আমি হাসলাম। তবে জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না। নিজের মনেই ভাবলাম, দুনিয়ায় দেখা-অদেখা এত মানুষের মাঝে আমার সাথে সাত সমুদ্র তেরো নদী দূরত্বের একটা মানুষকে কেনো ভালোবাসলাম? কী আছে তারমধ্যে? এই কথাটা অবশ্য অন্যকেউ বলতে পারবে। আমার কাছে তো তার সবকিছুই বিশেষ।
আচমকা পার্কে আমার ভাইয়াকে দেখতে পেলাম। সাথে পাশের বাসার মেয়েটা, নাম মিষ্টি। ভাসা ভাসা শুনেছিলাম, ওর সাথে ভাইয়ার প্রেম চলতেছে। আজকে তা নিজের চোখে দেখতে পেলাম। মনে মনে হাসি পেলেও ওকে নিয়ে ওখান থেকে কেটে পড়লাম। ওকে ভাইয়াকে দেখিয়ে বললাম, ‘দেখো ভাইয়া এসেছে তার প্রেমিকাকে নিয়ে।’
সে কী হাসি। হাসির দমকে কথাই ফুটছে না মুখে। তো হাসির কি হলো? সে প্রেম করতে আসতে পারে আর অন্যকেউ পারে না?
আমি জিজ্ঞেস করলাম তার হাসির কারণ। সে উত্তরে বলে, ‘হাসতেছি, কারণ ভাই-বোন একই পার্কে প্রেম করতে এসেছে।’
ও আবার ভীষণ রসিক মানুষ। আমাকে নিয়ে ভাইয়ার পিছু পিছু ফলো করতে লাগল। আফসোস করতে লাগল, কেনো সাথে করে ক্যামেরাটা নিয়ে এলো না? ক্যামেরা থাকলে ছবি তুলে রাখত। মিষ্টির সাথে ভাইয়ার বিয়ে হোক ছাই না হোক, সে শালা হিসেবে ভাইয়াকে খ্যাপাতো।
ওর কথাটা শুনে মনের মধ্যে অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছিল। শালা? তারমানে আমাকে নিয়ে ও বিয়ে পর্যন্ত ভেবেছে! আর কী লাগে আমার? ছোট্ট এই জীবনে ছোট্ট এই চাওয়াটুকু আমার জীবনে বিশাল বড় সুখ হয়ে ধরা দিয়েছে।”
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০০.

অনিতা এইটুকু পড়ে ঘড়ির দিকে তাকাল। ফুপির আসার সময় হয়ে গেছে। সে ডায়েরী বন্ধ করল। ফুপির প্রেমকাহিনী পড়তে গিয়ে নিজের বাবার প্রেমকাহিনী’ও পড়া হয়ে গেল। বাহ! বাবার’ও তাহলে গার্লফ্রেন্ড ছিল। কয়টা প্রেম করেছিল জীবনে? তার জানামতে, মায়ের সাথে বাবার বিয়েটা পারিবারিকভাবেই হয়েছিল। তবে ওই মিষ্টি মেয়েটার সাথে ব্রেকআপ হলো কী করে? প্রেমের মধ্যে এত জটিলতা আর এত রহস্য ভালো লাগছিল না অনিতার। অপেক্ষা করতে হয় অনেক! তাছাড়া উপায় নেই। অপেক্ষা করে হলেও তো পড়তে পারে, ফুপি দেখে ফেললে নিশ্চিত ডায়েরী নিয়ে নেবে।

অনু বাড়ি আসার পর অনিতাকে দেখল বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে। সে টেবিলের উপর নিজের ব্যাগটা রেখে জিজ্ঞেস করল, ‘কী রে, একা একা বোর হচ্ছিলি?’

অনিতা এ’পাশ ঘুরল। বলল, ‘না এমনি শুয়ে আছি। তুমি কখন এলে?’

‘এইতো মাত্র। সকালের সময়টা তোকে একাই থাকতে হবে রে। তখন আমি একদম সময় দিতে পারব না। এইতো এখন থেকে সম্পূর্ণ ফ্রি। বল, কোথায় কোথায় যাবি? কী কী করবি? আচ্ছা তার আগে বল, তুই হঠাৎ আমার এখানে এলি যে?’

অনিতা মনমরা কণ্ঠে বলল, ‘ওখানে ভালো লাগছিল না। সবাই শুধু কেমন কেমন করে! মনে হয় কাউকে খু’ন করে ফেলেছি আমি।’

অনু হেসে বলল, ‘তোর বাবা এসব পছন্দ করে না।’

‘বাবা তো ঠিকই প্রেম করছিল। আমার বেলায় দোষ নাকি?’

‘দোষ তো কেউ দেয় নাই বাবু। ওইভাবে রাতে দেখা করাটা খারাপ দেখায়। আর তোর রোমিও কী রে? ধরা পড়ে গেল।’

অনিতা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বলল, ‘ভালোবাসলে একটু ফাঁসতেই হবে। ব্যাপার না। তুমি বলো, আমার বাবা কয়টা প্রেম করেছিল? গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরতে গেছিল?’

‘রমনা পার্ক থেকে শুরু করে, আশেপাশের সব পার্ক। তারপর ক্যাম্পাস তো আছেই। এরপর বৈশাখী মেলা, শিল্প মেলা সব ঘুরে শেষ করেছে।’

‘তুমি কীভাবে জানলে? বাবাকে পাহারা দিতে পিছু পিছু গিয়েছিলে নাকি?’

অনু কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে বলল, ‘পাহারা? হ্যাঁ পাহারাই দিতে গেছিলাম বটে।’

অনিতা এইবার বেশ সাবধানী কন্ঠে প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা তুমি কাউকে ভালোবেসে ছিলে কখনো?’

‘হুম, এখনও বাসি’ই তো!’
.
.
.
চলবে…..