প্রাণপ্রিয় পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
2

#প্রাণপ্রিয়❤️ [অন্তিম পর্ব]
~আফিয়া আফরিন

অনিতাকে বিদায় দিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ০৮ টা বাজল। অনু তার মাকে জানিয়ে দিল, ‘সকাল সকাল সে রাজশাহীর উদ্দেশ্য রওনা দিবে।’
তিনি রা করলেন না। মেয়ে সারাজীবন তাই করে এসেছে, যা সে নিজে চায়। অন্যকারো বাঁধা দেওয়াতে কোনো লাভ-ক্ষতি নেই।
তবে রুবি বললেন, ‘কাল অনিতা আসবে, আর তুমি চলে যাবে?’

‘অনি আবার কাল কেনো আসবে?’

‘বৌ-ভাত না? আমরা গিয়ে ওকে নিয়ে আসব না? তুমি যাবে না কাল আমাদের সাথে? অনি বারবার যেতে বলেছে।’

‘না আমি যাব না। আমার কাজকর্ম আছে। কতদিন আর ফেলে রাখব? কতদিন এখানে আছি চিন্তা করতে পারো? আমার কর্মজীবনে এটাই হাইস্ট কাজকর্ম ছেড়ে থাকা। আর থাকতে বলো না আমাকে, সম্ভব নয়।’

‘অন্তত অনির সাথে দেখা করে যাও। ও তোমাকে না দেখলে মন খারাপ করবে।’

অনু কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে উত্তর দিল, ‘বলছ? মন খারাপ করবে? ঠিক আছে, তাহলে বরং থেকেই যাই।’
অনু নিজের ঘরে চলে গেল।
‘ওর কি হয়েছে জানো বৌমা? এইরকম সহজ ভাবে থেকে গেল বিশ্বাস’ই হচ্ছে না।’

শাশুড়ির কথায় পাশ ফিরে তাকিয়ে বললেন, ‘মানুষের জীবন কি সবসময় একরকম থাকে আম্মা? ওই যে আমি বললাম, আপনি বললেন, রাজি হলো না; অনিতার কথা বলতেই রাজি হয়ে গেল।’

‘ও এমন ছিল না রে মা। এত জেদি, চাপা স্বভাব, কোনোটাই ওর মধ্যে কখনোই ছিল না। হঠাৎ করে কী যে হয়ে গেল। কিছু বলেও না আমাদের। প্রথম যখন ওর এমন উদ্ভট পরিবর্তন দেখি সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম আমি।’ তিনি ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করে কথাটা বললেন। রুবি কিছু বলল না। সে বিয়ের পর থেকেই অনুকে এইরকম একঘেয়ে দেখে আসছে। সে নিজেও ওইসময়টা অনুকে বোঝার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সে মানুষ নিজেকে ইচ্ছাকৃতভাবে সবকিছু থেকে আলাদা রেখে একটা দৃঢ় খোলসে আবদ্ধ করে নেয়, তাকে বোঝা অসম্ভব।
.
‘আজ আসতে এত দেরি করলে যে?’ অনু কপট রাগ দেখিয়ে কোমড়ে দু’হাত গুঁজে বলল।

সে মুখ টিপে হেসে বলল, ‘মা মাঝে মাঝে বাবাকে এইভাবে জিজ্ঞেস করে, বাবা যখন বাড়ি ফিরতে দেরি করে। তখন বাবা কি বলে জানো?’

‘কী বলে শুনি তো।’

‘বলে, ঘরে বউ থাকলে যেমন অফিসে আসতে দেরি হয় সেইরকম রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম থাকলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হয়।’

‘আসছে সিনেমার ডায়লগ দিতে।’ অনু নাকমুখ কুঁচকে বলল।

সে হাসতে হাসতে বলল, ‘হ্যাঁ একদম একদম। মা ঠিক এই কথাই বলে, মুখের রিয়্যাকশনটাও ঠিক এইরকম’ই থাকে।’

‘হয়েছে এখন থামো। এমনিতেই দেরি করে এসেছ, তার উপর কথা বাড়িয়ে আরও দেরি করো না। আমার আবার বাড়ি ফিরতে দেরি হবে, মা বকবে। আমার জন্য যে কত মিথ্যা বললাম! কত বকা যে খেলাম! কবে জানিনা মা পিঠের উপর চ্যালা কাঠ ভাঙ্গে।’
সে হাসে। এই হাসি টুকুর জন্য বারবার ফিরে আসে, সেই কত দূর থেকে। প্রিয় মানুষের হাসি আর তার আনন্দ; দু’টো একাকার হয়ে আকাশ ছুঁতে চায়। ঘুরতে ঘুরতে একসময় বাড়ি ফেরার সময় হয়ে যায়। সে আসে অনুকে এগিয়ে দিতে। অনু সেখানেও রাগের ভান করে মুখ ভার করে রাখে। সে জিজ্ঞেস করে, ‘আবার কি হয়েছে?’

‘আজকে তো বললে না।’

‘কী?’

‘এইইইই ভুলে গেলে?’

‘কি ভুলেছি?’

‘ভালোবাসার কথা বলতে!’

সে মাথায় হাত দিয়ে বলে, ‘ওহো। নিজের আসল ডিউটি ভুলে বসে আছি। তবে ম্যাডাম এখন কি আমাকে চাকরিচ্যুত করবেন?’

‘জি না। আজকের মত মাফ করলাম। এরপর যেনো কখনো আমাকে মনে করিয়ে দিতে না হয়, নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাক মত নিজেই পালন করবেন। নাহলে কিন্তু……’

‘আচ্ছা আচ্ছা, আর বলতে হবে না। সব মনে থাকবে আমার।’
———-
মানুষ বাঁচে কীসে? স্মৃতিতে! স্মৃতিচারণে!
মানুষের গোটা একটা জীবনে অনেক চাওয়া-পাওয়া থাকে, অনেক মানে অনেক! একদম হিসেব ছাড়া। ক’টা ইচ্ছে তাদের পূর্ণ হয়, আর ক’টাই বা অপূর্ণ থাকে? যারা পেয়ে যায় তারাও বেঁচে থাকে, যারা পায় না তারাও সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত হায়াৎ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
ভালোবাসা সবসময় তার কাছে অনন্য। সেই জন্যই আজও, এখনও নিজের ভেতর বাঁচিয়ে রেখেছে। অনু ডায়েরীটা বের করল। এটার আর প্রয়োজন নেই তার জীবনে। এটা ছাড়াই সে বেঁচে থাকতে পারবে, যেভাবে তাকে ছাড়া বেঁচেছে গত ছাব্বিশটা বছর। ওই সময়টার তুলনায় এই সময়টা কিছুই নয়। তখন বেঁচে থাকা অনেক কষ্টকর মনে হয়েছিল, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে না। আজ জীবনটা ভীষণ সুখের স্বাচ্ছন্দ্যের মনে হচ্ছে। যদিও তা মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই, তবুও মনে হচ্ছে!

অনু ডায়েরীর প্রথম পাতায় হাত রাখল। ‘প্রাণপ্রিয়’— তার জীবনের ব্যাপক জায়গা জুড়ে থাকা এক অধ্যায়ের নাম, তার ভালোবাসার নাম। খুব যত্ন করে নামটা দিয়েছিল। যে মানুষ প্রথম প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছিল; তাকে প্রাণপ্রিয় ব্যতীত আর কি নামে আখ্যায়িত করা যায়, সেটা তার জানা ছিল না।
নিজেকে প্রতিনিয়ত কতভাবে শান্ত্বনা দেয়, কতভাবে বোঝায়, কত যুদ্ধ করে; অথচ এই দিনের শেষ পর্যায়ে এসে মন আর কিছু মানে না। বুক ভেঙ্গে আসে। এখন তো আরও বেশি। কিছু কিছু সময় মানুষের দুঃখেও চোখের পানি বাঁধ ভেঙে যায়, আর নিজের দুঃখ হলে তো তা প্রকাশ করাই সম্ভব নয়।
মা একসময় বলেছিলেন, ‘কখনো কারো কাছে দুর্বল হবি না, নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করবি না। যতই কষ্ট পাস না কেনো, হাসিমুখে থাকবি। কষ্ট লুকিয়ে বাঁচতে জানলে তবেই না মানুষের মত মানুষ হবি।’
অনুর খুব জানতে ইচ্ছে করে, সে কি আসলেই মানুষ হতে পেরেছে? কষ্ট লুকিয়ে সে ঠিক বেঁচে আছে। মাকে আর জিজ্ঞেস করা যাবে না, মা তার অনুভূতি বুঝবে না। ইদানিং মা তো কোনো কথাই শুনতে চান না। শুনবেন’ই বা কেনো? মেয়ে তার কোনো কথাটা শুনেছিল?
আফসোস হয় ভীষণ! কী কারণে আফসোস হয় তাও জানা নেই। তবে হয়। কারণের তো আর অভাব নেই।
আশ্চর্য! আজকে হলো কি তার? কীসব মনে করছে? অযথা মন খারাপ করছে? ধুর, সে কি এতটা দুর্বল নাকি? নাহ, এতকিছু তো চিন্তা করা যাবে না। মাথা ঘুরে যাবে। তার জীবনের একটাই লক্ষ্য, সে কাজেকর্মে মন দিবে; একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করবে। আর কিচ্ছু না।
অনু ঘড়ির দিকে তাকাল। রাত তিনটা পার হয়েছে। সে এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘরের বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। অনিতার কথা মনে পড়ল। মেয়েটা কাল’ও পাশে শুয়ে শুয়ে রাজ্যের গল্প করছিল। আর আজ! নতুন ঠিকানায়, নতুন বাড়িতে, নতুন পরিবেশে, জীবনের নতুন অধ্যায়ে, নতুন ধারায়, নতুনত্বের প্রতিটা সময়ে!
.
শশুড় বাড়িতে প্রথম সকাল অনিতার। এখানে আসার পর থেকেই নার্ভাস হয়েছিল। আহির এত বুঝিয়েও কিছু করতে পারে নাই। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অনেকক্ষণ পর্যন্ত সারা ঘর জুড়ে পায়চারি করল। বাহিরে বের হতে লজ্জা করছে। আহিরটাও ঘুমাচ্ছে, অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করেও সাড়া পায় নাই। আস্ত কুম্ভকর্ণ একটা!
আজকে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান। বাড়ি থেকে সবাই আসবে। অনিতাও তাদের সাথে নিজের বাড়ি পাড়ি জমাবে। ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে। সে ফুপিকে একটা মেসেজ দিয়ে রাখল‌— ‘সবাইকে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এসো কিন্তু। আমার একলা একলা সকলের মাঝে খুব বোরিং লাগতেছে। সবাই শুধু নতুন বউ নিয়ে আদিখ্যেতা করতেছে। তোমরা এলে আমার সহজ লাগবে। তাড়াতাড়ি আসো, আমি এখনও ঘর ছেড়ে বের হইনাই। আমার কি এখন বের হয়ে সবার সাথে দেখা করা উচিত? দ্রুত রিপ্লাই দাও।’

অনু মেসেজ পড়ে কতক্ষণ হাসল। মেয়ে বলে কী? আমার একলা একলা সকলের মাঝে বোরিং লাগতেছে! একলা একলা, আবার সকলের মাঝে? হাস্যকর।
তিনি উত্তরে লিখলেন, —’অবশ্যই সবার সাথে গিয়ে কুশল বিনিময় করতে হবে। নতুন বউ এভাবে ঘরের মধ্যে বসে থাকলে ভালো দেখায় না। তুই নিজে সহজ হওয়ার চেষ্টা কর। সবার সঙ্গে গিয়ে কথাবার্তা বল, ভালো লাগবে। বাড়ির সবাই দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যাবে ইনশাআল্লাহ।’
অনিতা তার ফুপির কথা মত তাই করল। যাওয়ার আগে মেসেজ দিয়ে গেল, —’সবাই এক্ষুনি রওনা দাওওও।’

অনু তো যাবেই না, আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। এখন মা, ভাবী জোরাজুরি করা শুরু করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ বাদে সাদাত হাসান’ও এসে বললেন, ‘চল অনু। এমনিতে তো তোর কোথাও যাওয়া হয় না। এখন চল, ঘুরেও এলি, অনিতাকে নিয়েও এলি।’
অনুর হাসি পেল। একসময় তার ভাই প্রেম করছিল, সেই সব প্রেমের সাক্ষী ছিল সে। আর সেই আজ তার বেয়াই মশাই রূপে ধরা দিয়েছে। তার নিশ্চয়ই সব মনে আছে, এখন ভাইয়াকে দেখবে আর মনে মনে হাসবে।
অনু শেষ পর্যন্ত গেল না। সজ্ঞানে আবার উনার সামনাসামনি উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছে নাই। অনিতা তো আসবেই, ওর আর আহিরের সাথে দেখাও হবে। তারপর কাল সকাল সকাল রাজশাহীর উদ্দেশ্য রওনা দেওয়া যাবে।
.
বাড়িঘর সাজানো হয় নাই কারণ বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান কমিউনিটি সেন্টারেই করা হয়েছিল। তাই জামাই আসা উপলক্ষ্যে অনু নিজেই ফুল, লতা, পাতা কিনে নিয়ে এসে ঘরবাড়ির চেহারা পরিবর্তন করে ফেলল। অনিতার রুমটাও গোলাপ, রজনীগন্ধা ফুলের সমন্বয়ে সাজিয়ে ফেলল। এরপর রান্নাবান্নার কাজে হাত দিল। সব কাজ শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সাদাত হাসান ফোন করে জানালেন, তারা ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন।

অনিতার মনে হলো, যুগ যুগ বাদে সে বাড়ি এসেছে। এখানে কত শান্তি! কত আনন্দ! তবে আহির কিছুতেই তাকে ছাড়ছে না। তার কথা হচ্ছে, ‘আমার এখানে লজ্জা লাগছে। তুমি প্লিজ সাথেই থাকো।’

‘যখন চুরি করতে আসছিলা তখন লজ্জা লাগে নাই?’

‘এই এই বাজে কথা বলো না তো। তোমার জন্য’ই তো এসেছি। তোমার রাগ ভাঙাতে গিয়েই তো শ্বশুড়ের কাছে কত্ত বড় বেইজ্জতি হলো। ছিঃ ছিঃ! লজ্জা লজ্জা! এখন তার খেসারত দাও।’

‘কী খেসারত?’

‘বরের পাশে চুপচাপ বসে থাকো। এতো ছটফট করো কেন? কাল আমাদের বাড়িতে তো মুখে কথা ফুটছিল না। মা এসে ঠেলেঠুলে দু’টো কথা বলেছিল। আর আজ?’

অনিতা একটা ধমক দিয়ে বলল, ‘এই চুপ থাকো তো।’
আহির চুপ করে গেল। বউয়ের ধমক খেয়ে শশুর বাড়িতে মানসম্মান নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে অনিতা আহিরকে নিয়ে ছাদে উঠল। দরজায় পা রাখতেই দেখতে পেল ফুপিকে। অনিতা ওখানে দাঁড়িয়ে আহিরকে বলল, ‘তুমি যাও তো। আমি একটু ফুপির সাথে কথা বলে আসি। না গেলে তুমিও আসতে পারো, যদি আনইজি ফিল করো তাহলে দরকার নাই।’

আহির অনিতার হাত টেনে ধরে বলল, ‘তাহলে আমাকে ঘরে রেখে এসো।’

‘আশ্চর্য! বাচ্চা নাকি তুমি? এসব কিন্তু বাড়াবাড়ি আহির। ভালো লাগে না।’

‘প্লিজ বউ প্লিজ!’
হাসির জন্য অনিতা রাগটাও ঠিকঠাক মত ধরে রাখতে পারছে না। সে আহিরকে ঘরে রেখে রাগে গজগজ করতে করতে আবারও উপরে উঠে এলো। সিঁড়িতে হঠাৎ ধোঁয়া দেখে দৌড়ে ছাদে উঠল। এক জায়গায় আগুন জ্বলছে, ফুপি পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে বুকে আড়াআড়ি ভাবে হাত রেখে।
অনিতা দৌড়ে গিয়ে বলল, ‘একি! কি পোড়াচ্ছ তুমি?’
অনু কিছু বলার আগেই অনিতা দেখতে পেল আগুনে পুড়ছে সেই ডায়েরীটা, যেটা সে খুঁজছে। অনিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ডায়েরী? এটা সেই ডায়েরী না যেটা তোমার কাছে সবসময় থাকত। আমি দেখেছিলাম।’

‘হুঁ, ওটাই।’

‘তাহলে পোড়ালে কেনো?’

‘রেখে কি করব?’

‘মানে কি?’ অনিতাকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখাল।

‘কিছু কিছু সময় স্মৃতি জমিয়ে রাখতে হয় না, নষ্ট করে দিতে হয়। তাই নষ্ট করে ফেলেছি। অনেকদিন জমিয়ে রেখেছিলাম, অযথা নিজেকে কষ্ট দিয়েছি। কষ্টের দিন শেষ করলাম।’

‘কীসের স্মৃতি?’

‘ভালোবাসার!’

‘কাকে?’

অনু নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, ‘ছিল কেউ।’

‘এখন নেই?’

‘না। হারিয়ে ফেলেছি।’

‘খুঁজে পাও নাই এখনও?’

‘পেয়েছি।’ অনু মৃদু হাসল।
অনিতা আরেকবার অবাক হলো। খুব দেখতে ইচ্ছে করল সেই মানুষটাকে যে যার ফুপির সারাজীবনের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। সে নিজেও জিজ্ঞেস করত।
অনু ফের বলতে আরম্ভ করলেন, ‘আমার জীবনের এই গল্পটা সবার অজানা, অজানাই থাকুক। সবকিছু জানতে হয় না। কিন্তু মাঝে মাঝে নিজেকে ভীষণ ভারি মনে হয়, এত কষ্ট বইতে পারি না। অসহ্য লাগে। আমি তার সুখের বিনিময়ে নিজের জন্য দুঃখ বেছে নিয়েছি…..কিনে নিয়েছি। এখন পরিপূর্ণ ভাবে বাঁচতে চাই। তাই বাঁচার উপায় খুঁজে নিয়েছে। সবাই নিজেরটা বোঝে বলে ভালো আছে। আমি অভাগা কোনোদিন’ও নিজের ভালো বুঝলাম না। দেখ, তোর সাথে কি ফালতু বকবক শুরু করেছি। আহির ঘরে একা তাইনা? আচ্ছা যা তুই ঘরে যা।’
পরক্ষণেই আবার বলল, ‘আচ্ছা আমিই যাচ্ছি। তুই আহিরকে নিয়ে ছাদে আয়। সুন্দর চাঁদ উঠেছে, পূর্ণিমার চাঁদ। দু’জনে উপভোগ কর।’
তিনি চলে যাচ্ছেন। অনিতা সেই যাওয়ার পথে চেয়ে রয়েছে। বড্ড ধীর, নিস্তেজ তার চলার গতি। হাঁটছে হেলতে দুলতে, অসুস্থ মানুষের ন্যায়। অনিতার বুকের মধ্যে চিনচিন করে উঠল। সে নিজের চোখে দেখে নাই, কিন্তু ফুপির সেই মুহূর্তগুলো উপলব্ধি করে হলফ করে বলতে পারে, সে সত্যিই ভালোবেসেছিল।সেই ভালোবাসা তাকে এভাবে ভেঙ্গেচূরে ছাড়খার করে দিল? অনিতার ঘরে যেতে ইচ্ছে করল না। জানে, আহির তার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। তবুও গেল না। রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল অনেক্ষণ…… ভাবল নিজের ভালোবাসার কথাও।
না পাওয়াটা মোটেও কষ্টের না। কিন্তু পেয়ে যখন হারিয়ে যায়, সেটাও সহ্য করার মত না। অনিতা মনে মনে প্রার্থনা করল, ‘তার ফুপির মত এমন কষ্ট যেনো পৃথিবীতে আর কেউ না পায়। সবাই সবার ভালোবাসা ফিরে পাক, তার মতোই। সবার জীবন পরিপূর্ণ হোক রংধনুর সাত রঙে!’
আকাশে চাঁদ উঠেছে, বিশাল বড় চাঁদ। এত সৌন্দর্যেও অনিতার মনটা ভালো হলো না। সে ছুটে গেল তার ভালো থাকার মানুষের কাছে। সে আছে বর্তমানে, তাকে তো আগলে রাখতে হবে নাকি!
.
.
.
সমাপ্ত……

[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৯০০