প্রানেশা পর্ব-১১

0
285

#প্রানেশা
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা

মিরার কথায় রিহান তৎক্ষনাৎ চমকে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো।সাদা রঙের থ্রি-পিস পড়া মিরা কে দেখতে বেশ লাগছে।
রিহানের ভাবনার মাঝেই মিরা ইতস্তত করে বলল,

-“আমার একটা কথা রাখবেন?”

-“বলো!”

রিহান সিগারেট ঠোঁটে চেপে ধোঁয়া ছেড়ে নির্বিকার জবাবে বলল।
মিরা মাথা নিচু করে ওড়নার একটা কোণা তর্জনী আঙ্গুলে পেঁচাতে পেঁচাতে আবদার স্বরে বলল,

-“আপনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকবেন।
আমি একটু বৃষ্টিতে ভিজবো!”

-“মাথা খারাপ হয়েছে!
এই বৃষ্টিতে ভিজতে যাবে?নো ওয়ে!”

মিরার কথায় চমকে ওঠে রিহান বলে উঠলো।
মিরা এপর্যায়ে এসে মাথা উঁচু করে করুন স্বরে বলল

-“একবার প্লিজ!”

রিহান থমকাল।মেয়ে টা রেগে ছিল। সে কোথায় ভেবে ছিল রাতে সরি বলে নেবে। কিন্তু এই মেয়ে তো এখন নিজে এসে যা শুরু করেছে। রিহান আর ভাবতে পারে না। মেয়েটার এই ছোট আবদার টা ফেলে দিলে যে বড় অন্যয় হবে।রিহান সিগারেট টা শেষ বার ঠোঁটে চেপে আবার ধোঁয়া ছাড়ল।সব টা ধোঁয়া মিরার মুখের উপর ছেড়ে দিয়ে জানালো,

-“বেশি না।
পাঁচ মিনিট। মা দেখলে আমার উপর রেগে যাবে।”

-“আচ্ছা। পাঁচ মিনিট।”

বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল মিরা।কিন্তু সিগারেট এর ধোঁয়ার কারণে মেয়ে টার চোখের কোঠার জল চিকচিক করছে। যাতে করে রিহানের কাছে বেশ লাগলো মিরা ছোটখাটো গোলগাল বদনখানি।
মায়াময় সেই মুখ। যাকে সে রোজ অবহেলা করছে।
কিন্তু কেন করছে? যদি অবহেলাই করবে তাহলে বিয়ে করেছেন কেন মেয়ে টাকে?
রিহান এর ভাবনার মাঝেই মিরা রুম হতে বেড়িয়ে এলো। রিহান নিজেও পেছন পেছন এলো।
মিরা মেইন গেইট খুলে উঠোনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ততক্ষণে। অন্ধকার আবছা আলোয়ে সাদা রঙের থ্রি-পিস পড়া মিরার শরীরে বৃষ্টির পানির ফোঁটা পড়ে মূহুর্তে মধ্যে গায়ে লেপ্টে গেলো জামা।ওড়না গলায় ঝুলিয়ে দুই হাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে মিরা।
শরীর এর মেয়েলী ভাঁজ গুলো স্পষ্ট ফুটে উঠছে।রিহান আস্তে করে একটা ফাঁকা ঢোক গিলে।যতই হোক পুরুষ মানুষ একটা মেয়ে এমন অবস্থায় কোনো পুরুষের সামনে থাকলে সেই পুরুষ কি ঠিক থাকতে? সাথে যদি হয় রমণী পুরুষ টার স্ত্রী। সেখানে তো কোনো কথাই নেই।
রিহানের যেনো নিজে কে সামলানো দায় হয়ে এলো।দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরাল।
পকেট হাতরে সিগারেট বেড় করে লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরালো।বেশ কয়েকটা টান দিলো।কিন্তু এতেও যেনো কিচ্ছু হচ্ছে না।
আজ যেনো সিগারেটও রিহানের সাথে বেইমানী করছে।রিহান যেনো শুনতে পাচ্ছে।সিগারেট তাঁকে চিৎকার করে বলছে।”এতো দিন আমি তোর দুঃখ কষ্ট সৃতি ভুলিয়ে রাখতে সাহায্য করেছি।কিন্তু এখন সব এক্কেবারে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য তোর ঔষধ এসছে।” রিহান সিগারেট ফেলে দিলো। চুল খামচে ধরে নিজের মাথা ঝাঁকাল।নিজে কে স্বাভাবিক করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালো।আদৌও কতটুকু তা সফল হলো রিহান জানে না।নিজে কে স্বাভাবিক করতে ফোন বেড় করলো। সেটা হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে রইল।নিজে কে ধাতস্থ করে ফোনের স্কিনে দৃষ্টি রেখেই গম্ভীর কণ্ঠে মিরা কে ডাকল,

-“মিরা রুমে এসো!”

-“আর একটু থাকি না,প্লিজ।”

মিরা কাতর কণ্ঠে সময় চাইলো।
কিন্তু না রিহান শুনলো না।
ফোনের স্কিনে দৃষ্টি রেখেই হুকুমের স্বরে আবার বলল,

-“আর একটুও না।
ঘুম পাচ্ছে আমার।
এসো, এসো।”

মিরা আশাহত হলো।
ওড়না টেনেটুনে ঠিক করতে করতে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
পেছনে রিহান গেইট টেনে লক করে সেও মিরার পেছনে আসে।
ততক্ষণে মিরা রুমে এসে চেঞ্জ করে কাপড় বালতিতে রেখে দিয়েছে।
রিহান রুমে এসে গায়ের শার্ট খুলে আলনায় রাখতে গিয়ে মিরার অর্ধ বস্ত্র নজরে এলো। এসব রিহান আগেও দেখেছে সেটা মিরা জানে না। কিন্তু আজ রিহানের মিরার দিকে চোরা চোখে চাইলো।মিরা তখন জামার ফিতা বাঁধতে চেষ্টা করছে।
রিহান অনেক্ক্ষণ দেখলো।মিরা না পেরে ব্যর্থ হয়ে ওড়না টেনে নিয়ে বিছানো গিয়ে এক কোণায় চুপটি করে শুয়ে পড়লো। সে তো এতোক্ষণ মনে প্রাণে চাইছিল রিহান ফিতা টা বেঁধে দিক।কিন্তু আফসোস ব্যাটা রিহান থুড়ি না তাকাল মিরার দিকে।
মিরার মনঃক্ষুণ্ন হলো।
চোখ বন্ধ করে নাক টানল।নাকের বাঁশি শিরশির করছে। সাথে মাথা টাও ভার লাগছে। হয়তো এতোক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজবার ফলে।মিরা চোখ বন্ধ করে ওড়না টা গায়ে টেনে নিতে গিয়ে শক্ত অনুভব করল।কিন্তু ওড়না টা পেছনের দিকে সরে যাচ্ছে।
মিরা চমকে গিয়ে পাশ ফিরতে গেলেই রিহানের রাশভারী কণ্ঠ শোনা গেলো

-“আহ,নড়ে না।
আমাকে কাজ টা করতে দাও।”

রিহান মিরার ওড়না টা খুলে পাশে রাখলো।অতঃপর ফিতা টা বেঁধে দিলো।মিরা রিহানের আঙ্গুলের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠল।
তবে চোখ বন্ধ করে খিঁচে পরে রইলো।
রিহান নিজেও কাজ টা করতে এসে বুঝতে পারলো।বিপাকে পরে গিয়েছে। তারাহুরো করেই বেঁধে দিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে কয়েকবার জোরে জোরে।

-“রিহান ভাই!
ঘুমিয়ে পড়েছেন? ”

মিরা বেশ অনেক টা সময় চুপচাপ থাকার পর ওপাশ থেকে মাথা টা একটু সোজা করে জিগ্যেস করলো রিহান কে।

-“নাহ।
আমি তোমার ভাই?”

রিহান ফটাফট জবাব দিলো।
তবে নিজেও উল্টো প্রশ্ন করলো। মিরা চুপ করে রইল। কোনো জবাব দিলো না। রিহান জবাব এর অপেক্ষা করে নিরাশ হয়ে গেলো।
কিন্তু রিহান কে অবাক করে দিয়ে মিরা স্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো

-“স্বামী স্ত্রী কোনো সম্পর্ক বুঝি আমাদের মাঝে হয়েছে!”

রিহান ভেবেছে মিরা কিছু বলবে না।
কিন্তু এমন গভীর প্রশ্ন মেয়ে টা করতে পারে সেটা কস্মিনকালেও ঠাহর করতে পারে নি রিহান।

-“তুমি চাও আমি তোমায় স্বামীর অধিকার নিয়ে তোমার দেহ ছুঁয়ে দেই?যদিও আমার মনে এখনো অন্য নারীর বসবাস নেই।কিন্তু তুমি নিজেও নেই।”

রিহান গম্ভীর কণ্ঠে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল।তবে মিরা কষ্ট পেলো।
কিন্তু এটা ভেবে ভালো লাগার দোলা দিলো নিজের মনে রিহান তাকে ভালোবাসতে চাইছে। একটা সম্পর্কে সবার আগে সম্মান আর বিশ্বাস থাকা জরুরী ভালোবাসা টা তো দু’জনের মাঝে বন্ডিং থাকলে এমনিতেই হয়ে যাবে। জোর করতে হবে না।
মিরা রিহানের পাশ ফিরল।রিহান মিরার দিকেই মুখ করে শুয়ে আছে।
মিরা অন্ধকারে আবছা আলোয়ে সেটা ঢের বুঝতে পারে।

-“ডেকেছো কি জন্য?”

মিরা কে জিজ্ঞেস করলো রিহান।
মিরা অনুমতি চাইলো,

-“একটা কথা, বলব?”

-“বলো।”

রিহান সাথে সাথে অনুমতি দিলো।
মিরা ফের জিজ্ঞেস করলো,

-“রাখবেন তো!”

-“বনিতা না করে বলবে!”

রিহানের বিরক্তিকর কণ্ঠে মিরার হাসি পেলো। লোক টাকে জ্বালাতে ওর এতো কেন ভালো লাগে ও বুঝতে পারে না।
মিরার নিজের হাসি চেপে তড়িঘড়ি করে বলল,

-“আচ্ছা,আচ্ছা বলছি।
আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন?
প্রতি রাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমবেন?”

রিহান থমকাল,বুকের ভেতর ধুকপুক শব্দ হলো।হৃদপিণ্ড টা স্বাভাবিক এরচেয়ে দ্রুত বেগে লাফাতে লাগলো।
রিহান বুঝে আসে না আজ কেন এটা এতো লাফালাফি করা শুরু করেছে।তবে বিষয় টায় নিজের দোষ টা বেশি দিলো রিহান।এতো হাইপার না হলে তো এটা এতো লাফালাফি করত না।
রিহান ভাবনা বাদ দিলো।
সামন্য এগিয়ে মিরা কে টেনে নিজের বুকের উপর এনে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো।
মিরা চোখ বন্ধ করে সময় টা উপভোগ করলো।ভালোবাসার মানুষ টার প্রথম স্পর্শ। নিজের শিরা-উপশিরায় ভালো লাগা ছড়াছড়ি হলো।শক্ত হাতে নিজেও জড়িয়ে ধরলো রিহান কে।

——

রাত গভীর। সমুদ্র রাশি কে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে নিজেও ফ্রেশ হতে এলো।ট্যাব ছাড়তেই উপর হতে ঝরঝর করে পানি পড়ে শরীর পড়তেই নখের আঁচড় গুলো জ্বলে ওঠলো।
রাশি জ্বর এসছে ভীষণ।রাতেই তো কত সুন্দর ভালো ছিল। সময় নিয়ে সমুদ্র’র ভালোবাসার সঙ্গ দিলো।কিন্তু হঠাৎ একটু আগে ঘুম থেকে ওঠে বিছানায় বসেই হরহর করে বমি করলো।
সমুদ্র সব পরিষ্কার করে গা মুছিয়ে ঔষধ খাইয়ে নিজেও ফ্রেশ হতে এলো।কারণ বমি করার সময় রাশি প্রায় সমুদ্র শরীর ঘেঁষে ছিল।
সমুদ্র সময় নিয়ে ফ্রেশ হলো।বেড়িয়ে এসে রাশির পাশে বসে একটা হাত মুঠোয় পুরো নিলো।হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে হঠাৎ বিরবির করে বলে উঠলো,

-“কাল কে আমাকে যেতে হবে।
আর আজ তোমার এমন অবস্থা। আমি কি করে চলে যাব! আমার কেন বারবার মনে হচ্ছে সামনে কোনো বিপদ আসতে চলেছে।”

#চলবে….