#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৬
“মা আপনি ভাইয়ার বিয়ে নিলীমা আপুর সাথে দিতে চাইছেন কেনো? নিলীমা কী আদৌ আমাদের ঘরের বউ হবার জন্য যোগ্য?”
সাজিয়ার কথায় জাহানারা পুষ্প ফোঁস করে শ্বাস ছাড়েন। তিনি স্বামীর কাছ থেকে সত্য জানার পর দিগ্বিদিক পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। মেয়ে বাসায় এসে সেই যে কানের কাছে বসে কথা আওড়ে যাচ্ছেন সেই দিকে তার খেয়াল নেই। তিনি অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন। সহ্য করতে না পেরে দিয়ে ফেলেন এক ধমক মেয়েকে। সাজিয়া চুপসে গেল ভয়ে। মাকে কখনো রাগতে দেখেনি সে। জাহানারা পুষ্প চোখ বুঁজে জোরালো দম ছাড়েন। ক্লান্ত মেয়ের মুখশ্রীর দিকে একপলক তাকিয়ে বলেন,
“মা-রে সেসব কথা রাখ। তুই আর জামাই ক্লান্ত হয়ে এসেছিস। যাহ্ ফ্রেশ হয়ে নেহ। আমি বুয়াকে বলে তোদের নাস্তার ব্যবস্থা করছি।”
মায়ের আদুরীয় কণ্ঠস্বর শুনে মুচকি হেসে সাজিয়া চলে গেল। দেওয়ান শেখর রুমে স্ত্রীর অপেক্ষায় বসে ছিল সাজিয়াকে রুমের ভেতর আসতে দেখে সেও উঠে দাঁড়ায়। সাজিয়া দরজা আটকে কাপড় পাল্টানোর জন্য ওয়াশরুমে যায়। দেওয়ান ভ্রু কুঁচকে মেয়ের কার্যকলাপ দেখছে।
‘হলো কী তার?’
ভাবনার মাঝে দরজা খোলার শব্দ হলো। সে অনায়াসে দরজার দিকে তাকায়। সাজিয়া বেরিয়ে এলো সুতি শাড়ি পরে। দেওয়ান শেখর স্ত্রীর মুখে মলিন তার ছাপ দেখে বোঝে গেল নিশ্চয়ই তার স্ত্রী কোনো কিছু ঘটাতে পারেনি। সামনে এগোয় স্ত্রীর কাঁধ চেপে ধরে মালিশ করতে লাগল। সাজিয়ার আরাম বোধ করে। স্বামীর এ দিকটা সাজিয়ার খুব পছন্দের। মিনমিন কণ্ঠে আওড়ায়।
“এতো বুঝেন কেনো আমাকে?”
“কারণ তুমি বড় হলেও তোমার বুঝজ্ঞান এখনো ছোট রয়ে গেল। স্বামী হিসেবে অবশ্য আমার স্ত্রী কে সহি পথ দেখানো আমার কর্তব্য। বলি কেনো বারংবার মাইমুনার কথা শ্বাশুড়ি আর শালকের কাছে বলে চেঁতাও? মাইমুনা কী তোমার সাথে খারাপ আচরণ করে?”
সাজিয়ার মুখ চোখ চুপসে গেল। সে কখনো এক ভাইয়ের কাছে বোনের বদনামি করতে চাই না। কেননা তার নিজেরও ভাই আছে। তপ্ত শ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে না বোঝায়। দেওয়ান সাজিয়াকে আলগোছে পাঁজাকোলা করে নেয়। চমকে স্বামীর কাঁধ জড়িয়ে ধরল সে। দেওয়ান স্ত্রী কে পরম আদরে বিছানায় শুইয়ে বলে,
“তুমি না বললেও আমি জানি সব। তোমার কী মনে হয় আমি খালি ব্যবসায় ব্যস্ত থাকি বলে ঘরসংসারে কী চলছে তা জানতে পারব না? তোমার সাথে মাইমুনা যা যা করেছি তার বিনিময়ে শাস্তি সেও পেয়েছে। তুমি আমায় জিজ্ঞেস করেছিলে না আমি কেনো মাইমুনা কে হোস্টেলে পাঠিয়েছি? ঐ কারণেই সে তোমার সাথে আমার অগোচরে খারাপ আচরণ করে। সে ভুলে গিয়েছিল সেও যেমন নারী তুমিও জ্যান্ত র’ক্ত মাংসে গড়া নারী। তার ভাগ্য ভালো আমি চাপাতি দিয়ে তার গদান আলাদা করিনী। নাহলে আমার একমাত্র আদরের সন্তানকে ডাস্টে ফেলার হু’মকি দেওয়ার পরিণতি কেমন হয় তা বুঝিয়ে দিতাম।”
সাজিয়া নিজেকে আটকে রাখতে পারল না। স্বামীর উদারতা দেখে সে কেঁদে ফেলল। সব নারীর নিজস্ব সমস্যার মূল সূত্রপাত আছে তাদের সংসারে। হয়ত সেই কারণে এক নারী খারাপ হতে বাধ্য হয়ে যায়। যার সুখ তার প্রাপ্য। প্রাপ্যতা পেতে মানুষ গলদ পথ আমলে নিতেও দ্বিধাবোধ করে না।
“আম্মা আম্মা আমি ঘুমাবো।”
ছেলে সাফুয়ানের কণ্ঠস্বর শুনে সাজিয়া আর দেওয়ান স্বাভাবিক হয়ে গেল। স্বামীর বুকের নিচ থেকে চটকে দূরে সরে গেল মেয়েটা। দেওয়ান মিটমিটে হাসে স্ত্রীর কান্ডে।
___
শেহরীনার পাশে সবাই গালে হাত দিয়ে বসে আছে। সে চোখ পিটপিট করে তাদের অসহায় মুখখানী দেখছে। কেউ কোনো কথা ও বলছে না। এখন ব্রেক টাইম সহসায় তারা হালকা নাস্তা পানি খেতে ক্যান্টিনে এসেছে। কিন্তু এসে থেকে তাদের মুড অফ হওয়ার কারণ বুঝছে না শেহরীনা। ছোট এক ছেলে এসে অর্ডার চাইল!
শেহরীনা ধমকে তাদের কে অর্ডার করতে বলে। তড়িঘড়ি তারা একেকজন অর্ডার দেয়। শেহরীনাও মুখ ঝামটে বলে,
“আমার জন্য চিকেন চীজ বার্গার আর একটা স্ট্রুবেরি ফ্লেভার জুস আনবে।”
ছেলেটি মাথা নেড়ে অর্ডারগুলো রিপিট করে শুনিয়ে দেয়। সবাই ঠিক আছে বলে। সে চলে গেলে ধুমছে তাদের কান ধরে মৃদু চেঁচিয়ে বলে,
“এই কু*ত্তার দল তোদের সমস্যা কী হ্যাঁ? কথা বলছিস না কেন? সব গুলোর মুখে তালা মেরেছিস নাকি-রে। বলি ঘুম থেকে উঠে কী গু খাইছিলি?”
তিক্ত শব্দ শুনে ফারদিন ‘ইয়াক ইয়াক’ করতে লাগে। ইপশিতা চুপসে যাওয়া মুখ করে তার গাঁ ঘেঁষে রইল। জাফরান আমতা আমতা মুখ করে নেয়। ফারদিন স্বাভাবিক হয়ে জাফরান এর পিঠে ‘ঠাস ঠাস’ চাপড় দেয়। বেচারা ‘আহ আহ’ করে পিঠ মালিশ করে চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকায়। শেহরীনার ভ্রু কুঁচকে এলো।
“এই জাফরান তোর চেহারায় চোরা চোরা ভাব কেন? বল তলে তলে কী ঘটনা ঘটিয়েছিস?”
ঢোক গিলে জাফরান করুন দৃষ্টিতে তাকায়। ফারদিন সজোরে ‘চ’ উচ্চারণ করে।
“জানস এই হা’লায় বিয়ে না কইরা বিলাই মে’রে দিলো। হা’লার ঘরত হা’লা। এটুকুন ধৈর্য্য ধরতে পারলি না শা’লা। তুই না ইনজেকশন চুবাতে ভয় পাস কিন্তু হ্লা ডাক্তারনির ভেতর কতবড় না ছোট সুই ঢুকাতে তোর লজ্জা করল না শ্লার বেডা শ্লা।”
কথার ছলে জাফরান এর পিঠে চাপড় মা’রতে ভুলে না ফারদিন। শেহরীনার চোয়াল ফাঁকা হয়ে গেল। ইপশিতাও আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে আছে। কেননা তারা শেহরীনাকে চেনে অন্যায় কর্ম সে সহ্য করে না। শেহরীনা অবুঝ কণ্ঠে বলে,
“মা…মানে আবার বল কী বললি তুই জাফরান বিলাই মা’রল? মানে কী এসবের?”
জাফরান অপরাধীর মত মাথা নিচু করে নেয়। তখনি সেখানে নিচু মুখ করে এগিয়ে এসে বসল অপরিচিত মুখখানার এক মেয়ে। চিকনচাকন গড়া, শ্যামলা বর্ণধারী, খাটা খাটা আদুরীয় চেহারার মেয়ে কে দেখে সবাই চুপ হয়ে গেল। এ মেয়েটাই কী তবে জাফরান এর গার্লফ্রেন্ড ছিল? শেহরীনার ভাবনার মাঝে জাফরান স্বয়ং মেয়েটার হাত ধরে বলে,
“এই হলো রোকসানা। এমবিএস করছে প্রথম বর্ষে। আমাদের তো দ্বিতীয় বর্ষ শুরু হবে। আর যা হয়েছে আসলে আমি….।”
রোকসানা মেয়েটি জাফরান এর হাত চেপে ধরে লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিল। মিনমিনে তবুও জাফরান বলে,
“দোস্ত আমার বিয়ে করতে হবে আজেন্ট! তোরা হেল্প কর প্লিজ! আর তোরা তো জানিস আমি একলা সন্তান। বাবা নেই। কিন্তু রোকসানার বাবা-মা আছে। তারা আমায় মানতে রাজি না। সে জন্য রোকসানা পালিয়ে এসেছে।”
শুনে তাদের মাথা ভনভন করছে। শেহরীনা মাথা চুলকে এদিক ওদিক তাকিয়ে মাথাটা ঝাড়ল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)সে ফারদিনদের পাশ থেকে উঠে জাফরান কে ঠেলা মে’রে ফারদিনের কোলে ফেলে রোকসানার সামনে মুখোমুখি বসল। রোকসানা ঘাবড়ে গেল। সে জাফরান এর কাছ থেকে শুনে ছিল তাদের বন্ধু মহলে শেহরীনাই একমাত্র অভিজ্ঞ আর সেই তাদের সবার রিলেশনশিপ এর সঠিক মতামত জানায়। রোকসানাকে আপাতমস্তক পরখ করে। মেয়েটিকে নার্ভাস দেখাচ্ছে। সে হেসে বলে,
“ভয় পেয়ো না আমায় ঘটনা খুলে বলো।”
রোকসানা একপলক জাফরান এর দিকে তাকায়। সে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। স্বস্তির শ্বাস ফেলে সে বলতে লাগে।
“আমি এমবিবিএস পড়ছিলাম আমার বাবার স্বপ্নের জন্যে। সেই হিসেবে আমি জাফরান কেও ভালোবাসতাম কলেজ লাইফ থেকে। এমবিবিএস করতে ঢুকার পর বাবার কাছে নানান সম্বন্ধ আসতে লাগল। আমি চুরেচুপে জাফরান কে ব্যবস্থা নিতে বলি। সেও চেষ্টা করে ব্যবসায় হাত দেয়। সাথে তার পড়াশোনা ও আছে। কিন্তু বাবাকে জাফরান এর কথা বলেছিলাম আজ থেকে সাত মাস আগে। তিনি রাজি না হওয়ায় আমায় ধমকে তার থেকে দূরে থাকতে বলে। আমিও অসহায় হয়ে দূরে থাকি। কিন্তু প্রেম মন মানছিল না। দুজন দুজনকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম। এর কয়েকমাস আমাদের দেখাসাক্ষাৎ বেড়ে যায়। কিন্তু ভুলবশত আমাদের সাথে একটা কান্ড ঘটে যায় গত মাসের শেষ সপ্তাহে।”
রোকসানা মারা নুইয়ে নিল। মেয়েটার কাঁপান্বিত ঠোঁট দেখে শেহরীনা এবার জাফরান এর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। সে ঢোক গিলে বলে,
“ওভাবে তাকাস না আমি বলি কী হয়েছে! আসলে এর মাঝে আমাদের দেখা হয় একটা বিয়ের ক্লাবে। আমরা বিয়ের একটা পার্টিতে গিয়ে ছিলাম। সেখানে আমার দুষ্টু কাজিন ভাং নিয়ে এসেছিল। নেশাদায়ক ভাং শরবতে মিক্স করায় ঐ শরবত আমি আর রোকসানা খেয়ে ফেলি। তখনো আমরা জানতাম না ঐ শরবতে ভাং ছিল। আমার সাথে নেশা অবস্থায় রোকসানা একটা রুমে বন্দি হয়ে যায়। আর সেখানেই…।”
চুপসে গেল জাফরান। শেহরীনা সহ তারা থ। ফারদিন পুনরায় দাঁতে দাঁত চেপে চাপড় মে’রে বলে,
“শ্লা সুই মে’রে দেখ কেমনে বর্ণনাও দিচ্ছে তো মিয়া সাহেব হুঁশ আসার পর পিল দেননি?”
জাফরান অসহায় মুখ করে তাকায়। ইপশিতাদের মাথায় হাত। শেহরীনা তো রেগে ঠাস করে একটা কষে চ’ড় লাগিয়ে দিলো। রোকসানা তার প্রিয় মানুষ কে চ’ড় খেতে দেখে ভয়ে কেঁদে দিলো। তার ফ্যাস ফ্যাস কান্না দেখে শেহরীনা তাকেও ধমকে দেয়।
“এই মেয়ে এখন ন্যাকা কান্না করে কী লাভ? যা করার তা তো করেই ফেলেছো! আর তুই!”
জাফরান এর দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে শাসানোর রূপ নিয়ে তাকায়।
“তুই শ্লা তোর ও জ্ঞান বুদ্ধি নেই। এত বড় কান্ড করে আবার বিয়ের জন্য লাফাস।”
জাফরান গালে মালিশ করতে থেকে অপরাধীর মত তাকিয়ে আছে। শেহরীনা মাথা ঠান্ডা করে রোকসানা কে সামাল দিতে নম্র কণ্ঠ বলে,
“টেস্ট করে ছিলে?”
রোকসানা মাথা নেড়ে না বোঝায়।
“তাহলে কিছু পেয়েছো?”
“আপু আমি নিজেই এমবিবিএস নিয়ে পড়ছি আমার নিজের টেস্ট করানো না করানো কোনো ব্যাপার না। তবে আমি প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে চেক করেছি। পজেটিভ দেখাচ্ছে।”
শেহরীনা ফারদিনদের দিকে তাকায়। ইপশিতা ঠোঁট কামড়ে পরিস্থিতির সাপেক্ষে শেহরীনাকে বলে,
“এক কাজ করা যায় চল রোকসানা কে নিয়ে হাসপাতালে যায়। টেস্ট করিয়ে দেখি। কম সময় হয়েছে হলে আই হোপ বিয়ে করানোর জন্য সময় পাবো হাতে আর যদি বেশি সময় হয়ে থাকে তাহলে কম….।”
“এই যে বলদদের রাণী। শুনিসনি ঐ বলেছে গতমাসে হয়েছে। কুসবি ইয়ার!”
ইপশিতা মুখ চেপে ধরল। রোকসানা আর জাফরান লজ্জায় লাল হয়ে গেল। তখনি পেছন থেকে কারো কণ্ঠস্বর ভেসে আছে। শেহরীনা চোখ বুজে দাঁতে দাঁত চাপল। সারোয়ার ফারদিনের কাছে আসতে থেকে শেহরীনার দিকে তাকিয়ে রইল।
“ইশ মহারানী দেখি সবার রিলেশনশিপ এ সঠিক মতামত দেয়। তাহলে নিজের রিলেশনশিপে মতামত দিলে কী তার গায়ে ফোস্কা পড়বে?”
“হেই ইউ আমার ম্যাটারে পড়বেন না প্লিজ!”
এক ঝটকে পেছন ফেরে সারোয়ারকে শাঁসায়। সারোয়ার দেখে হামি দেওয়ার ভান করে আরামে ফারদিন এর পাশ ঘেঁষে বসে পড়ে। তারা দুজন হ্যান্ডশেক করে।
“আমি কী তোমার উপর পড়েছি না তুমি যেচেতেচে আমার সাথে নিজের ম্যাটারের ইন্টারফেয়ার করো। দেখলেই বোঝা যায় আমি তোমার নাম নেই না অথচ তুমি ন’টি গার্ল যেখানে সেখানে আমাকে ভেবে ,স্মরণ করে আমাকে ইন্টারফেয়ার করাও। আই লাইক ইট ভেরি মাস।”
‘ননসেন্স’। মুখ বাঁকিয়ে গেইটের দিকে এগোল শেহরীনা। সঙ্গে রোকসানা কে সাথে নিতে ভুলে না। এর মাঝে ফারদিন সহ ইপশিতা জাফরান এর ঘটনা খুলে জানায় সারোয়ারকে।
চলবে……
#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৭+২৮
কাজি অফিসে জাফরান লাজুক মুখে তার প্রিয় নারীর হাত ধরে বসে আছে। বিয়ের সাক্ষী হিসেবে জাফরান এর পক্ষে শেহরীনা আর সারোয়ার দাঁড়িয়ে আছে। রোকসানার পক্ষপাতী নিল ফারদিন আর ইপশিতা। জাফরান কে লজ্জা পেতে দেখে ফারদিন তার মাথায় হালকা করে চাপড় দিয়ে বলল,
“বিয়ে করছিস বাসর করতে হবে না আর। একবার বিলাই মে’রে দ্বিতীয় বার মা’রার স্বপ্ন দেখস লজ্জা করে না তোর?”
জাফরান চোখ পাকিয়ে তাকায়। আরে বউ তার বাসর চাইলে দুইতিন বার করবে কে তাকে থামাবে দেখে নেবে সে! রোকসানাকে টেনে গাঁ ঘেঁষে বসায়। বেচারীও চিকনচাকন শরীর জাফরান এর মত সুস্থ স্বাস্থ্যময় শরীরের মাঝে চুনোপুঁটির মত লেপ্টে গেল। ইপশিতা ফারদিন কে বাহুডোরে আবদ্ধ করে ফাজলামি থামায়। গাধাটার জন্য আবার বিয়ের সময় না চলে যায়!
শেহরীনাকে একদৃষ্টিতে কাবিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সারোয়ার তার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আপনি চাইলে কিন্তু আমরাও শুভ কাজটা করে ফেলতে পারি। কী বলুন তো আমি আবার খুব সভ্য সাধু মানব। অসভ্য অসাধুতা প্রমাণ করার সুযোগ দিলে আমি দুপায়ে রাজি।”
শেহরীনার শুনে কান গরম হয়ে গেল। তবুও প্রকাশ করল না তার মনো প্রতিক্রিয়া। কারণ সে সাড়া দিলে লোকটা অতিরিক্ত বেপরোয়া হয়ে যাবে। বেপরোয়া সব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে ধাবিত হয়। রমণীর নিশ্চুপতাকে মৌ সম্মতি ভেবে নিল। অবশ্য সে জানে তা সম্মতির বিপরীত। তবুও ফাজলামির সহিতে কাজিকে বলে,
“কাজি সাহেব কাবিননামা আরেকটা তৈরি করবেন। যেখানে নাম থাকবে শেহরীনা ওরফ সারোয়ার।”
শেহরীনা চমকে তাকায়। সে জবাব দেয়নি বলে কী লোকটার থেকে কাবিননামা বানাতে বলতে হবে? সে ‘আম’ ধ্বনি দ্বারা কিছু বোঝাতে গিয়েও পারল না কাজি সাহেব নিজেই বলেন,
“বাবা সময় লাগবে। জাফরান বাবা এ দুদিন আগেই তৈরি করতে বলেছিলেন তাই এখন হাতে আছে।”
“বাহ্ দেখলেন আপনি ঘাবড়ে গেলেন অথচ লাক আপনার সঙ্গ দিয়ে বসল। চিন্তে করবেন না লাক অলওয়েজ সঙ্গ দেবে না। আজ দিয়েছে কারণ আমি আপনার কাছ থেকে সম্মতি চাইছিলাম।”
তাদের মনো বিয়োগের মাঝে সুন্দর ভাবে জাফরান এর বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে গেল। সাক্ষীপক্ষ সাইন করার পর দেনমোহর আর কাবিননামার হিসেব বুঝিয়ে জাফরান রোকসানার স্বামী হয়ে গেল। জাফরান তার বন্ধুদের জড়িয়ে শোকরিয়া জানায়। তারাও তাকে আগ্রহ দেয়। রোকসানা কে সাহস দেয় যেনো সে ভীতি হয়ে না পড়ে। জাফরান রোকসানা কে নিয়ে তার বাসার দিকে অগ্রসর হয়। তাদের জন্য গাড়ি আনিয়েছে সারোয়ার স্পেশাল ফিল হওয়ার জন্য। যা শেহরীনার কাছে মুগ্ধতার অনুভব করায়। সারোয়ার গাড়িতে বসে শেহরীনা সহ ফারদিনকে বলে,
“চল আজ কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যায়।”
“হ্যাঁ ভাই খুব খিদে পেয়েছে জাফরান তো বউ নিয়ে চলে গেল। আমরা সিঙ্গেল পিচ মাঝদিনে ঘুরেও লাভ নেই।”
“এই আপনেরা কেমন মানুষ হুম? আমাদের মত সুন্দর মনের মেয়েদের মাঝ রাস্তায় ফেলে যাবেন বলছেন!”
ফারদিন টোন মেরে বলে,’আমরা কী মোটেও বলেছি শুধু দুজন যাবো?’
ইপশিতা জ্বিভ কামড়ে ধরল। ভুল জায়গায় টপ মে’রে দিলো। ইশ পুরো কথা শুনে ঢপ মা’রা উচিৎ ছিল তার। শেহরীনাকে নিশ্চুপ দেখে সারোয়ার গলা খাঁকড়ে ভেতরে আসার আহ্বান জানায়।
ফারদিন ফ্রন্ট সিটে বসতে গেলে সারোয়ার কাশতে আরম্ভ করে। শেহরীনা বিচলিত হয়ে সারোয়ার এর কাছে গিয়ে তার শার্টের কলার থেকে দুয়েক বোতাম খুলে তাকে স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করে।
“কী হলো আপনার? গলায় কিছু আটকে গিয়েছে? কিছু বলেন এতো কাশি আসছে কেনো হঠাৎ আপনার?”
সারোয়ার এর ভালো লাগছে তার অভিনয়ে সে শুধু ফারদিন কে ইপশিতার সাথে বসাতে চেয়েছিল। তার অভিনয়ের পাক্কা ছক্কা তো এ মুহুর্তে মে’রেছে। শেহরীনার দুশ্চিন্তা আর বিচলিত রূপ দেখে সে মনো তৃপ্তিতে কেশেই যাচ্ছে। ফারদিন ছেলে হয়ে আরেক ছেলের মুখের ভাষা পড়তে পারবে না তা কী হয় নাকি? সেও অভিনয় কণ্ঠে শেহরীনাকে বলে,
“দোস্ত দোস্ত জলদি ভাইকে গাড়িতে বসা আমরা পেছনেই বসছি।”
হিতাহিত দিক না ভেবে ফারদিন সারোয়ারকে ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে সে নিজেও পেছনের সিটে ইপশিতার পাশে বসে যায়।
“ভাইয়া আপনি চিন্তে করবেন না এখনি আমরা হাসপাতালে যাবো।”
ইপশিতার কথায় ফারদিন এর হাসি পেল। তবুও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে হাসলে তার জান কবজ খুবলে খাবে বাঘিনী দুটো। তাই চুপ থেকে তাল মেলানোই শ্রেয়। সারোয়ার এর পাশে চিন্তিত রূপে বসে পড়ল শেহরীনা। ব্যস তখনিই কমতে লাগল সারোয়ার এর কাশি। শেহরীনা চিন্তামুক্ত হলো। তার ব্যাগ হাতড়ে পানির বোতল বের করে সারোয়ার কে খাইয়ে দিতে লাগে। এ দৃশ্য দেখে ইপশিতা ফাটা ফাটা চোখ করে তাকায়। ফারদিন মিটমিটে হাসছে। শেহরীনার শুধু সারোয়ার এর দিকেই চোখজোড়া আবদ্ধ। হঠাৎ লোকটার কাশি পাওয়া দেখে তার ভেতর অগ্নিগিরির ন্যায় ব্যথার জ্বলন সৃষ্টি হয়ে ছিল।
সারোয়ার একঢকে পানি খেয়ে দম ফেলল। পাক্কা অভিনয়ের ফলাফল প্রকাশ পেল। স্বস্তির শ্বাস ফেলে মিররগ্লাস দিয়ে ফারদিনের সাথে চোখাচোখি হলো তার। ফারদিন বুকে বার দুয়েক হাত মেরে তাকে ইঙ্গিতে ‘সঙ্গে আছি’ বোঝায়। বিনিময়ে সারোয়ার তৃপ্তির হাসি উপহার দেয়। সূক্ষ্ম ধারালো নরম দাড়ির মাঝে হাসির রেখা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় শেহরীনা। বেডা কেশে মৃত্যসম হয়ে গিয়েছিল। সেই এখন হাসছে! মুখ ফিরিয়ে বলে,
“উপকার করেছি কোথায় শোকরিয়া জানাবে তা না করে হাসছে অলুক বেডা কোনকার।”
“আহেম উপকারীকে আমি শোকরিয়া জানাতে চাই মিস শেহরীনা। তবে আপনি উপকারের উপকারিতা দেখতে অথবা গ্রহণ করতে না চাইলে আমার তো কোনো দোষ নেই। বাই দ্যা ওয়ে আপনাকে থ্যাংকিউ জানিয়ে নিজের প্রেস্টিজ নষ্ট করতে চাই না। থ্যাংকিউ পর মানুষ কে জানানো যায়।”
আগামাথা কিছুই বুঝল না শেহরীনা।
দূর থেকে মুদি দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইপশিতার মা পুরো দৃশ্য দেখে আতঙ্কে স্তদ্ধ হয়ে যান। ফোন শক্ত হাতে চেপে রেখে ঘরের দিকে রওনা হলেন। মেয়েকে তিনি ঘরেই শায়েস্তা করবেন। আপাতত মাঝ রাস্তায় কথা বাড়ানো মানে সম্মান খোয়ানো।
চিলোক্স রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি এসে থামে। শেহরীনা বন্ধুমহলের সঙ্গে বার কয়েক নানান রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে ছিল। কিন্তু সবচেয়ে মজাদার খাবার হিসেবে চিলোক্স বেস্ট। তবে সারোয়ার কেমনে বুঝল তার চিলোক্সের খাবার খাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে? মন্ত্র তান্ত্রিকের ন্যায় মন পড়েছে কী?
“মিস আপনাকে এখানে কী ইনভাইট দিয়ে ডাকতে হবে? আপনার চোখ নেই?”
‘এই আপনি!’
‘ওকে প্লিজ খিদে পেয়েছে ভেতরে আসুন।’
কথাটা বলে ইচ্ছেকৃত গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিল। শেহরীনা মুখ বাঁকিয়ে বেরিয়ে সামনে এগোল। সারোয়ার স্বস্তির শ্বাস ফেলে। মেয়েটার কথা বলা শুরু মানে তার কথা বলা বন্ধ। উফ কী জ্বালা যন্ত্রণা! ফারদিন আর ইপশিতা একসঙ্গে আর তাদের সামনে সারোয়ার আর শেহরীনা। মেয়েটা বিরক্ত হলো। চোখের ইশারায় ইপশিতাকে হু’মকি দেয় তোকে পরে দেখে নিবো। ইপশিতা পাত্তা দিল না সে দেখবে কেনো! মেয়েটা কেমন গাঁধী! এখানে সবাই কাপলস বসে। তারাও তো কাপলস। একসঙ্গে বসে কী বয়ফ্রেন্ডস, গার্লফ্রেন্ডস এর পরিচয় দেবে? ইপশিতা উল্টে চোখ দিয়ে শাঁসায়। শেহরীনার দিকে মেনু এগিয়ে দেয়। তার কাছে মেনু মুখস্থ।
“আরে আমি কী দেখব আপনি দেখুন। আমি খাবো চিজ বার্গার, ফিস্ট টস আর কোল্ড কফি।”
একে একে সবাই পছন্দ করে স্টার্ফ ডেকে অর্ডার করে। তিনি এসে একটা টোকেন দিয়ে বলেন,
“এটা রাখুন আপনার সিরিয়াল আসলে যাবেন।”
তারা টোকেনটা ঠুকে নেয়। এর মাঝে লাইটস অফ হয়ে গেল। স্মথলি সং প্লে করা হলো।
Jaagi hoon na soyi hoon
khayalon mein Teri khoyi hoon,
শেহরীনা লাজুক হাসল। সংটা তার ফেভারিট। একবছরের পূর্বের গান হলেও এই গানের সাথে তার অনুভূতি খুব নিবিড়ভাবে জড়িত। সাদ এর সাথে জেনিফার দেখা হওয়া, এক সাথে দূরে পাড়ি দেওয়া যেনো স্বপ্নের মত লেগেছিল শেহরীনার কাছে। ইপশিতা ঠোঁট কামড়ে ফারদিন কে ইশারায় কাছে ডাকে। সে উল্টো বুঝে টিপ্পনি মে’রে বলে,
“রোমান্স জাগছে?”
দাঁতে দাঁত চেপে ফারদিনের কান শক্ত করে চেপে ধরে কাছে এনে ফিস ফাঁস কণ্ঠে বলে,
“আরে তোমার ভাইয়ের ভালোবাসা ভেস্তে যেতে দিচ্ছো কেন? যাও একজন স্টার্ফ কে ভাড়া করে শিখিয়ে দাও কাপল ডান্স দেখানোর জন্য সারোয়ার আর শেহরীনা কে।”
ইপশিতার কথায় ফারদিন তার দিকে প্রশংসিত চোখে টিপ মা’রল। সে গিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে বসে পড়ে। হঠাৎ সং অফ হয়ে যায়। শেহরীনার মুখ কালো হয়ে গেল। কত সুন্দর অনুভূতি না জাগছিল মনে। এর মাঝে সারোয়ার ও কোথায় যেনো গেল। একলা সে ইপশিতা আর ফারদিনের সঙ্গে বসে আছে। হঠাৎ তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে হুবহু সাদের মত আরাবিয়ান স্টাইলে ইন গেঞ্জির উপর কর্টি পরিহিত মুখে চাপ দাড়ি দৃশ্যমান, ঠোঁটের কোণায় সজ্জিত হাসি নিয়ে সারোয়ার কে অন্য এক বেশভুষায় দেখে চমকে ঢোক গিলল শেহরীনা।প্রিয়সীর হাত চেপে ধরে দাঁড়াতে আহ্বান জানায় সে। থমথমে মুখ ছোট হয়ে এলো শেহরীনার। সকলের উৎসুক দৃষ্টি দেখে ভয়ে গুটিয়ে যেতে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সারোয়ার গোপন হেসে শক্ত হাতে তার নিকট ঝুকে আফিমময় কণ্ঠে আওড়ায়।
“ভয় নেই আমি আছি তো অপ্রিয় মেয়ে। প্রিয় না হলেও অপ্রিয় হয়ে আসেন। আশা করি আমার আহ্বানে নিরাশ হবেন না।”
শেহরীনা নিশ্চুপ হয়ে সারোয়ার এর সঙ্গে এগোয়। সং প্লে হলো।
Ahh gulimata , Nchoufek ana mata
ayane shog narou hayja f galbi
Aayi aayi aayi aayi.
দুজনের মাঝে কোনো ফাঁকা নেয়। একে অপরের মাঝে হাত মিলিত হয়ে দুপাশ পা ফেলে চোখাচোখি করে।
Kendeer ana, Khabbi hubbek ana
Hali mefduh yana melli bia
aayi aayi aayi aayi
ঝুকিয়ে শেহরীনার মুখের আদলে হাত বুলিয়ে পুনরায় হাতের মুঠোয় করে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
মেয়ের প্লে এ শেহরীনাও তাল মিলিয়ে গেল। সারোয়ার মনে মনে হাসল।
Izhar hua,humey Bhai pyaar hua
Mulaqat ki hai ,ghadi ab aayi aayi aayi.
শেহরীনা আবেশে সারোয়ার এর গলা জড়িয়ে ধরল।
Needn mein Bhi,labon pe naam tera
Banke mein rahun Teri parchhai aayi aayi aayi.
শেহরীনা সারোয়ার এর কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুঁজে নেয়।
khalitini bla bik mahmoum
Mohal wash Baki ghanfrah fium
Ashmen denia ghadi fghyabek niish.
শেহরীনার কপালে গভীর চুমু খেয়ে মেয়েটাকে পেছন ফিরিয়ে সেও তার পিঠ লাগিয়ে দিল। দুই নরনারী পিঠে পীঠ লেগে যায়। ফারদিন ভিডিও করছে। ইপশিতা তার বান্ধবীর খুশিতে ভীষণ খুশি। সারোয়ার তার পকেট হাতড়ে একটা রিং আর একজোড়া বালা শেহরীনার হাতজোড়ায় পরিয়ে দেয়। তা দেখে লাজুক হেসে গেয়ে উঠে।
Khushi Khushi pehna tera diya gehna
Kitna kangan jacchey Dekh khalai aayi aayi aayi.
Tujey mere liye,mujhe tere liye
Hai banaya gaya, oh harjai aayi aayi aayi.
সারোয়ার এবার শেষ স্টেপে তার মত পুনরাবৃত্তি করে। শেহরীনাকে কাছে টেনে বাহুডোরে আবদ্ধ করে তাকে পেছন থেকে স্মথলি টার্চ করে যেনো কোনো ভাবে ব্যাড টার্চ না হয়। শেহরীনা মুগ্ধ হলো। ছেলেটা প্রতিটা স্টেপে খেয়াল রেখেছে কোনো ব্যাড টার্চ না হওয়ার।
মুগ্ধতার পাক্ষিক নিয়ে শেহরীনা লাজুক হেসে গেয়ে উঠে।
Ahh gulimata , Nchoufek ana mata
ayane shog narou hayja f galbi
Aayi aayi aayi aayi.
সারোয়ার সম্মতি সূচক গেয়ে যায়।
Needn mein Bhi,labon pe naam tera
Banke mein rahun Teri parchhai aayi aayi aayi.
সেখানে থাকা সবাই সারোয়ার এর বেশভূষা সাথে শেহরীনার সঙ্গে পারফর্ম করার দৃশ্য দেখে খুশি হয়ে তালি দেয়। শেহরীনা সারোয়ার এর কাছ থেকে সরে গুটি পায়ে হেঁটে চট করে বসে পড়ল। টোকেন অনুযায়ী তাদের সিরিয়াল চলে এলো। ফারদিন গিয়ে খাবার নিয়ে এলো। মিলমিশে খাওয়ার আনন্দ নেয় তারা। সারোয়ার এক দুয়েক শেহরীনার মুখে খাবার তুলে দিল। সেও দেয়নি তা নয়। সেও কোনো বাঁধাহীন খাইয়ে দিল। বিল মিটিয়ে সারোয়ার আর ফারদিন মিলে কোলাকুলি করে একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেয়। ফারদিন ইপশিতাকে নিয়ে একটা রিক্সায় উঠে যায়। সারোয়ার পরম আবেশে শেহরীনার হাত ধরে তাকে গাড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে বসাল।
___
কাজি সাহেব হলো মোকতাব মিয়ার ঘনিষ্ঠ পরিজন। সে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পথে কাজির সাথে দেখা করতে এসেছিল। কিন্তু ভেতরে আসার পূর্বে এক দম্পতির বিবাহ সম্পন্ন হওয়া দেখে বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ তার নজর পড়ে কৃষ্ণ মেয়ের দিকে। কৃষ্ণ মেয়ের আপাতমস্তক পরখ করার পরপর তার চোখে ভেসে উঠে নাছির উদ্দিন এর প্রতি তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা। সে ঠোঁট কামড়ে মেয়ের জিন্স ফ্রক পরিহিত দেহের দিকে একনজরে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে থাকা ছেলের কারণে সে ভালোমত দেখতে পারছিল না। তার কেনো যেনো মনে হচ্ছে ছিল ছেলেটা তাকে দেখেছে। নাহয় কেউ সর্বক্ষণ কাউকে পাহারা দিতে পারে? যাই হোক না কেনো মোকতাব মিয়া দুষ্টু পরিকল্পনা এঁটেছে মনের মাঝে। কাজির কাছ থেকে জেনেছে মেয়েটা ল নিয়ে অর্নাস করছে। তার উকিল হওয়ার খুব শখ জেনেই মোকতাব মিয়া দারুন এক পরিকল্পনা মাথায় এনেছে। কাজির কাছ থেকে কুশল বিনিময় করে সে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
সরলপাড়া হক গ্রামটির মাঝে আসতে মোকতাব মিয়ার দুঘণ্টা লেগে গেল। গ্রামের চেয়ারম্যান এর সাথে দেখা করতে তার বাসায় যায়। সেই গ্রামের চেয়ারম্যান খন্দকার মিয়া হলেন খুব লোভী আর অতিশ্রয়ী মানুষ। সৎ রূপী ভাব অথচ অসৎরূপী মনোভাবই তার প্রধান স্বভাব। যা একমাত্র মোকতাব মিয়া জানেন।
“আরে মোকতাব মিয়া যে কী খবর? হঠাৎ আমাগো গ্রামে কী কইতে আইলা?”
“আপনার দ্বন্দ্বের লোকরে মনে আহে? নাহি আই মনে কইরা দিমু?”
খন্দকার মিয়া পানি চিবুতে থেকে লাল হওয়া জ্বিভ দিয়ে থুতু মাটিতে ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মোকতাব মিয়ার দিকে তাকায়। তার কথার অর্থ দ্বন্দ্বী লোক নাছির উদ্দিন। হ্যাঁ সে কখনো তাকে ভুলেননি ভুলবেনও না। নাছির মিয়ার কারণে তার ছেলে আদৌ জেলের চার দেওয়ালের মাঝে পঁচে মরছে। তাকে ভুলবে সে কখনোই না।
“নাছির মিয়ার পক্ষে কথা কইতে আইলা নাহি বিপক্ষে?”
“হের একখান কালা মাইয়া আছে। তোর পুতরে যেনে জেলে পইরা দিছিল তুই আর আমি মিইলা তার কালা মাইয়ারে কলঙ্ক বাইনা মাইরা দিলে কেমন হইবো?”
চেয়ারম্যান খন্দকার মিয়া মোকতাব মিয়ার অসৎ পরিকল্পনা চট করে ধরতে পারল। তার কাছে এই যেনো সুবর্ণ সুযোগ মনে হলো। তার শোধ যেমন পূর্ণ হবে তেমন তার বহু বছরের পুরুষাঙ্গের খোদাও মিটবো। তার ঠোঁটের কোণায় লাল হাসি ফুটে উঠল। যা দেখে মোকতাব মিয়াও পরিকল্পনা কাজে দিল। তারা হাত মিলিয়ে যোগসূত্র মজবুত করেন।
____
রূপালি বেগম এর সহায়তায় নাছির উদ্দিন সুস্থ অনুভব করছে কয়েকদিন যাবত। তিনি সুস্থ হলেও অপারেশন করাবেন মাসদুয়েক পরে। এখন ঘন বর্ষণের কারণে গ্রামপাট ডুবে থৈ থৈ করছে চারপাশ জুড়ে। তাদের ঘর এখনো ঠিকে আছে এই যেনো আল্লাহর কাছে রহমত স্বরূপ। নাছির উদ্দিন বুদ্ধি করে তার ঘরটা উঁচু মাটির উপর করে ছিলেন। যার ফলে পানি সহসাই তার ঘরের দিক পৌঁছায় না। নাছির উদ্দিন ব্যাগ হাতড়ে একটা হাজার পাঁচেক টাকার বান্ডিল পকেটে পুরে নেন। গলা উঁচিয়ে রূপালি বেগম কে ডাকেন। তিনি হাতের কাজ সেরে রুমে আসতেই তার হাতে টাকার বান্ডিলটি দিলেন তিনি। রূপালি বেগম প্রশ্নাতীত নজরে তাকান।
“এহানে গেরামের মাইনষের জন্য টেহা দিছি। যাইয়া উঠানের মোড়ে দাঁড়ানো লোকটারে দিয়া আহো।”
স্বামীর উদারমনা দেখে তৃপ্তি পান রূপালি বেগম। ত্রাণ বন্যার্তদের জন্য তার চিন্তা ভাবনা দেখলেই যে কেউ সন্তুষ্ট হবেন তাদের চেয়ারম্যান এর উপর। রূপালি বেগম দ্বিরুক্তি করলেন না সোজা কথামত দিয়ে এলেন। লোকটা নাছির উদ্দিন এর প্রতি তীব্র সন্তুষ্টি প্রকাশ করে চলে গেলেন। নাসমা আর নাসমুর অলস সময় পার করছে। বর্ষণ আর বন্যার কারণে তাদের স্কুল কলেজ গণছুটি চলছে। সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না তিনি। রূপালি বেগম স্বামীর শিউরে বসে বলেন,
“ভাইডারে খুব মনে পড়তাছে। আজ বা কাইল তাগো পরিবাররে দাওয়াত করিলে আপনে রাগ করবেন?”
নাছির উদ্দিন এর পক্ষ হতে জবাব এলো না। তিনি তীক্ষ্ণ ঝাঁজালো চোখে স্ত্রীর দিকে তাকান।
চলবে…..