#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৪৫ (নিখোঁজ আর লুকায়িত সত্য🥺)
“দেখুন আমরা আপনার মেয়ের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি। এখনো অব্দি কোনো খবর পাওয়া যায়নি। দোয়া করে আপনারা নিজেদের কে সামলান।”
মোঃ আবু সিদ্দিক এর সঙ্গে থাকা নাছির উদ্দিন ক্ষেপে উঠলেন পুলিশ অফিসার এর উপর।
“এই আপনাকে এখানে ডিউটির মধ্যে কে বসিয়েছে হুম! আমার মেয়ে নিখোঁজ তার ফাইল করিয়েছি দুদিন আগেই। আজ আবারো এলাম কিন্তু আপনাদের মাঝে দেখি কোনো হেলদোলও নাই। আমার মেয়ের যদি কিছু হয়ে থাকি আপনাদের সবার বেহাল অবস্থা করব। উপরমহলের সাথে আমার ভালোই পরিচিত আছে বুঝছেন।”
পুলিশ অফিসার পান গিলে চুপসে যাওয়া মুখ করে নেয়। উপরমহলের ধ’মকি শুনলে কার না ভয় লাগে! তিনি তো সামান্য টাকার অফিসার মাত্র। উপরমহলের কথায় উঠবে,বসবে,নাচবে। দাঁত কিড়মিড়িয়ে নাছির উদ্দিন জোরালো হাত চাপড়ে দেন টেবিলের উপর। মোঃ আবু সিদ্দিক নাছির উদ্দিন কে ধরে বসিয়ে দেন।
“মাথা ঠান্ডা রাখ। আমি হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করছি।”
“দেখুন অফিসার কমিশনার মিজান আমার বাল্যকালীন বন্ধু। আপনি যদি নিজের চাকরি বাঁচিয়ে রাখতে চান। তবে আমাদের ঘরের বউমাকে খুঁজে বের করুন। অন্যথায় আমি কমিশনার এর কাছে যেতে বাধ্য হবো।”
অফিসার কিছুটা হকচকিয়ে গেল। সে আমতা আমতা করে ইনভেস্টিগেশন এর লক্ষ্যে জিজ্ঞেস করে।
“আপনাদের মেয়ে কবে হারিয়েছে, কেমনে, কোন সময়ে পুরো ডিটেলস বলুন।”
মোঃ আবু সিদ্দিক মুখ খুলার পূর্বেই সেখানে অন্য কারো কণ্ঠস্বর শোনা গেল। ‘স্যার আমি বলছি’ কণ্ঠস্বর শুনে তাদের কাছে ফারদিন মনে হলো। তারা পেছন ফিরতেই দেখল ফারদিন আর ইপশিতা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মুখে বান্ধবীর জন্য চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ফারদিন এসে বলে,
“স্যার গত দু’দিন আগে…।”
পুরো ঘটনা শোনার পর অফিসার বলে,
‘উনার ফোন নাম্বারে কল দিন তো।’
ফারদিন তড়িঘড়ি ফোন বের করে ডায়াল করে। কিন্তু নাম্বার বন্ধ দেখায়। অফিসার তখন নাম্বারটি কালেক্ট করে বলে,
“আপনারা চিন্তা করবেন না। আমরা ফোনের লাস্ট লোকেশন ট্র্যাকিং করে বের করার চেষ্টা করছি। যদি কোনো খবর হাতে পায় তবে আপনাদের ইনফর্ম করা হবে।”
নাছির উদ্দিন কে বিধ্বস্ত লাগছে মেয়ের চিন্তায় দূর্বল হয়ে পড়ছে তার শরীরটা। একমাস আগেই তিনি শরীরের অপারেশন সেরেছে। দূর্বল শরীর নিয়ে মেয়ের চিন্তায় টানাহেঁচড়া চলছে বাড়িতে।
ফারদিন আলতো হাত কাঁধে তুলে ধরল নাছির উদ্দিন কে। মোঃ আবু সিদ্দিক গাড়িতে গিয়ে ড্রাইভার কে গাড়ি চালানোর জন্য আদেশ করলেন। তারা গাড়িতে উঠে সোজা সিদ্দিক বাড়িতে যান।
রূপালি বেগম দরজার পানে তাকিয়ে পায়চারী করছেন। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। টিস্যু দিয়ে মুছেন আবার অপেক্ষায় কাতরতায় হাঁটতে থাকেন। জাহানারা পুষ্প স্বামীর নাম্বারে ডায়াল করেন। কিন্তু ফোনের রিং হলেও রিসিভ করছেন না তিনি। চিন্তায় তিনিও অসহায় হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছেন। সাজিয়া বাড়ির পরিবেশ মনমরা পেয়ে নিজেই খাবার রান্না করতে গেল।
আজ দুদিন শেহরীনার নিখোঁজে পরিবারের সবাই চিন্তায় খাওয়া দাওয়া ভুলতে বসেছে। সাজিয়া খাবার রান্না করার মাঝে তার ফোনে সারোয়ার এর মেসেজ আসে।
‘বোন তোরা সবাই কোথায়! কেউ ফোন ধরছিস না কেনো! আর শেহরীনাও বা কোথায়। তার ফোন নাম্বার তো একবারেই অফ দেখাচ্ছে। কী হয়েছে সত্যি করে বল তো।’
ভাইয়ের মেসেজ স্ক্রিনে দেখে ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে রইল। সে সত্যি বলবে না মিথ্যে জানাবে বুঝছে না! লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)একে তো ভাইয়ের আসার নাম গন্ধ নেই। আরো তিনদিন ইংল্যান্ডের মধ্যে থাকবে। তাকে জানালে তড়িঘড়ি চলে আসবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। পুনরায় মেসেজের টুন শুনে ফোন হাতে নেয়। আরেক হাতে চুলার আঁচ কমিয়ে দিল। ঢোক গিলে কল দিতে গেলে তৎক্ষণাৎ ফোনটা ছো মে’রে কেড়ে নিলো কেউ। সাজিয়া দেখল নিলীমা ফোন হাতে নিয়েছে। সাজিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
“ফোন নিয়েছো কেনো! এদিক দাও ভাইয়া কে ভাবীর নিখোঁজ খবর জানাতে হবে। আর লুকানো ঠিক হবে না।”
নিলীমা আমতা আমতা করে বলে,
‘আরে আপু এখনি চাও তোমার ভাইয়া চলে এসে বিধ্বস্ত হয়ে শেহরীনা ভাবী কে খুঁজুক। দেখো আগে ভাবী কে আমরা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি। তারপর না হয় জানিয়ে দেবো। এখন সবাই চিন্তায় বিচলিত আছে।’
সাজিয়া ভাবল নিলীমা সঠিক বলছে। বিধেয় সে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে রান্নায় মন দিলো। নিলীমা সাজিয়ার অগোচরে চোখের পলকে ফোন থেকে সারোয়ার এর নাম্বার ডিলেট করে ব্লকলিস্টে ফেলে দিলো। নিলীমা স্বস্তির শ্বাস নিলো। ফোনটা আলতো হাতে নিবিড়ে সাজিয়ার কাছে রেখে কাজ করার বাহানায় বলে,
“বোন আমারও টেনশন হচ্ছে। কিন্তু সবার খাবারের ব্যবস্থা ও করতে হচ্ছে তোমার। আমাকেও বলো আমি করে দিচ্ছি।”
সাজিয়া ইতিমধ্যে ভর্তা করেছে দুপদের এবং চুলায় পাতিলের মধ্যে মুরগির মাংস কষাতে দিয়েছে। নিলীমা জোর করছে দেখে সে ফ্রিজের দিকে ইশারা করে বলে,
“ওখানে দেখো বক্স আছে পেঁয়াজ,টমেটোর। সেখান থেকে হাফ হাফ করে নিয়ে সালাদ বানিয়ে নাও। আর কিছু পেঁয়াজ কুচি করে করো ফুলকপির ভাজি করব।”
নিলীমা মাথা নাড়ল। কিন্তু অগোচরে ঢোক গিলল। সে তো কখনো রান্নাঘরের মধ্যে কাজ করেনি। তার মাথায় ও নেই কেমনে সালাদ বানায়! কিন্তু প্রেস্টিজ এর ব্যাপার! ফলস্বরূপ ফ্রিজের কাছে গিয়ে চোখ উপর-নিচ,বাম-ডান করে। সাজিয়া খেয়াল করল বক্স সামনেই অথচ মেয়েটা খুঁজে যাচ্ছে। তপ্ত শ্বাস ফেলে সে চুলার আঁচ মিডিয়ামে রেখে নিজেই বক্স বের করে বলে,
“দেখো যা পারো না তা নিয়ে ওভার টক করবে না।”
নিলীমা মুখ বাঁকিয়ে রান্নাঘরে থেকে চলে যায়। সাজিয়া কে উদাসীন দেখে দেওয়ান নিজেই রান্নাঘরে এসে কাজে হাত লাগায়। স্বামীর সহায়পনা দেখে খুশি হলো সে। দেওয়ান টুকটাক কাজ জানে। যখন ব্যাচেলর ছিল তখন নিজে থেকে রান্না করা শিখেছে। তাই তার কষ্ট হচ্ছে না।
ইংল্যান্ডের বিলাসবহুল ফাংশনে নেওয়া হয়েছে সারোয়ার এ। ফাংশনটি যে জায়গায় রাখা হয়েছে সেই জায়গা উন্নতমানের। নাম মার্ভেল ক্লিফটন। সেখানেই খাদ্যমন্ত্রী আইনটন ব্রেশি (কাল্পনিক) কে ন্যায় হিসেবে নির্দোষ প্রমাণে সহায়তা করে ছিল সারোয়ার। আইনটন ব্রেশি খাদ্য উন্নতমানের উপর নজরদারিতে নেই। অসৎ লোভীদের ধারণা তিনি টাকা খেয়ে খেয়ে ভেজাল খাবার বাজারে বিক্রির নির্দেশনা দেন। সবার এই ভ্রান্তি ধারণা বদলে দিয়েছে সারোয়ার স্ব বুদ্ধিমত্তার জোরে। মিডিয়ায় নানান খবর ছড়িয়ে দিয়ে ছিল সে। আইনটন ব্রেশির পক্ষপাতীত্ব হয়ে লড়ে ছিলেন ক্রস ইউন। যিনি আইনটন ব্রেশির হয়ে কোর্টে সুপারিশ করেছেন। আজ জয় উল্লাসের দিনেই সারোয়ার কে এওয়ার্ড দিয়ে গর্বিত করবেন সকলের সামনে। বাঙালি পুরুষ হিসেবে সেরা ব্যারিস্টার সারোয়ার।
স্লো সাউন্ডে ইংলিশ মিউজিক চালু করা হয়েছে। সারোয়ার কলিগদের সাথে একটা বিশাল বড় টেবিলে স্থান পেয়ে বসে আছে। কিন্তু তার ধ্যান ধারণা সর্বদা শেহরীনার উপর মশগুল।
‘কৃষ্ণবউ দুদিন যাবত কল তুলছে না কেনো! কারণ কী হতে পারে!’
মনের ভয় কাটাতে পুনরায় কল দিলো। না, বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অস্বস্তি নিয়ে ফাংশন করার কোনো ইচ্ছেই নেই সারোয়ার এর। ফাংশন হঠাৎ এগিয়ে এসেছে আইনটন ব্রেশির জন্য। তার নাতনীর জন্মদিন তিনদিন পর। ফাংশনের পরপর তিনি নাতনী আর ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে যাবেন। তার কথায় কেউ নড়বড় করল না।
সারোয়ার অস্থির হয়ে তার মায়ের নাম্বারে কল দেয়। কেউই রিসিভ করছে না। অবাক কর বিষয় কারো নাম্বারেই রিং যাওয়ার বদলে কেটে যাচ্ছে। সারোয়ার এর মন কু ডাকছে।
‘তবে কী ফজরের সময়ের দেখা স্বপ্নটা সত্য হবে!’
অস্থিরতায় তার খেয়াল অব্দি নেই মাইকের মধ্যে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। ক্রস ইউন তার পাশে ছিল ফলে তিনি সারোয়ার কে সাড়া দেন। সারোয়ার নিয়ন্ত্রণপূর্বক হেঁটে স্টেজ থেকে এওয়ার্ড স্বহাতে গ্রহণ করে নেয়। আইনটন ব্রেশি সারোয়ার কে মোটিভ স্পিচের জন্য আজ্ঞা করেন। সারোয়ার এর হৃদয়ে ধুকপুক করছে। তার গলা কাঁপছে তবুও সে মোটিভ স্পিচ হিসেবে কিছু বাক্য ধাবিত করে।
‘I never thought I would deserve the award. But the strength of self-belief was mine. Remember if you are honest your whole goal will be honest.
If you are cynical about your goals, you will never reach your goals. In my opinion, Einton Breschy is a decent man who would never engage in adultery nor would he. This idea was mine so I won. Thank you.’
সারোয়ার এর মোটিভ স্পিচে করতালিতে পুরো রুম ভরে যায়। এওয়ার্ড নিয়ে সারোয়ার সময় ব্যয় করল না ফাংশন অর্ধ রেখেই বেরিয়ে পড়ে। আইনটন ব্রেশির নজরে পড়ে। তিনি ফোন হাতে নিয়ে কল দিলেন। সারোয়ার তার অস্থিরতার কথা জানিয়ে দেয়। ফলে তিনিও আর বাধ্য করেননি সারোয়ার কে।
সারোয়ার এসেই গাড়িতে উঠে পড়ল। তার মনের গন্তব্য সিদ্দিক বাড়ি তার বাড়ি। আলিশান বিল্ডিং এর সামনে এসে গাড়ি থামল। সারোয়ার তড়িৎ বেগে রুমের সামনে এসে ভেতরে প্রবেশ করে। গলার টাই লুজ করে পরণের কোট খুলে বিছানায় ছুঁড়ে মা’রল। শার্টের হাতার বোতাম খুলে ফোল্ড করে সোফায় গাঁ হেলিয়ে দেয়। ফোন হাতে নিয়ে এয়ার টিকেট বুকিং করতে লাগে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার সময় ফ্লাইট পড়েছে বিকালে। সারোয়ার সময় নষ্ট না করে তৎক্ষণাৎ তানভির কে কল দেয়। তানভির নিজেও তার স্যারের ওয়াইফ তথা তার ভাবী শেহরীনা কে পাগলের মত খুঁজে বেড়াচ্ছে।
ক্লান্ত হয়ে মাত্র বাড়িতে এলো। তার মা খাবার দিলেও গলা দিয়ে খাবার হজম করতে পারছে না। তার গাফিলতি সে স্যারের বউয়ের উপর খেয়াল আর নজর রাখতে পারেনি। তানভির মা ছেলেকে পেরেশানিতে দেখে তিনি আশ্বস্ত কণ্ঠে বলেন,
“দেখবি তোর স্যারের বউকে পাওয়া যাবে। ভালো করে খোঁজে দেখ।”
তানভির এর ফোনে কল এলো। ঢোক গিলে কলটা রিসিভ করল। সারোয়ার গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে।
‘কী হয়েছে!’
‘সসস্যার আসলে…।’
‘দেখো তানভির আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিও না।’
‘আমাকে ক্ষমা করুন স্যার আমি ভাবীর খেয়াল রাখতে পারিনি। আজ দুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না ভাবী কে।’
তানভির কেঁদে দিল। তার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হওয়ায় ছেলেটা কাঁদছে। সারোয়ার এর রাগে গাঁ জ্বলে উঠে। ফোন চেপে ধরে শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করে।
‘কখন কেমনে হয়েছে!’
তানভির পুরো ঘটনা শোনায়। সেদিন তানভির সারোয়ার এর কথায় খাবার অর্ডার দিয়ে পেও করে দেয়। কিন্তু শেহরীনার জন্য অপেক্ষা করতে পারেনি। কারণ নিলীমা তাকে টেনেটুনে জোর করে নিজের সাথে বীচে নিয়ে যায়। সেও ভেবেছে তার ভাবী তার বন্ধুবান্ধব এর সাথে থাকলে অস্বস্তি একাকিত্ব বোধ করবে না।
কিন্তু সন্ধ্যায় তানভির চেয়ে ছিল কল করে আসবে কি-না জানার জন্য। তখনি নিলীমা তাকে থামিয়ে বলে,
‘আরে ধুর কল কেনো দিচ্ছো ইপশিতা আপু বলেছে সে নাকি আছে ভাবীর সঙ্গে। তার সঙ্গেই চলে যাচ্ছে।’
তানভির শুনে ভ্রুক্ষেপ করেনি। সেও নিলীমার সাথে সন্ধ্যা বেলা কাটিয়ে তাকে বাসা অব্দি ছেড়ে চলে আসে বাড়িতে। সারোয়ার দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
‘আমি কালকেই আসছি। তোর ঐ প্রেমিকা কে ধরে বেঁধে আমার বাসায় নিয়ে রাখ। খবরদার সে যেনো পালিয়ে না যায়।’
তানভির এর মুখে কালো আঁধার ঘনিয়ে আসে। সে নম্র কণ্ঠে বলে,
‘স্যার নিলীমা আপনাদের বাড়িতেই আছে এখন।’
‘কীই!’
সারোয়ার গর্জে উঠল। তার বুঝতে বাকি রইল না কেনো সবাই তার কল পাচ্ছে না। মেয়েটা কৌশলে সবার ফোন থেকে তাকে ব্লক করে দিয়েছে। তানভির স্যারের গর্জন শুনে ভারী চুপসে গেল।
‘তানভির আমি দেশে পৌঁছাব রাত নয়টায়। নিলীমার কার্যবিধি অবলোকন করে যাও। আমার সন্দেহ সত্যি হলে সে নিশ্চিত কিছু জানে। সেই আমার নাম্বার সবার ফোন থেকে ব্লক করে দিয়েছে। বুঝতে পেরেছো কী বলেছি।’
‘ওকে স্যার।’
তানভির এর মনে আকাশকুসুম কল্পনা এলো।
‘তুমি কী আমায় ধোঁকা দিচ্ছো নিলীমা! এমনটা হলে আই সোয়্যার তোমার মত ধোঁকাবাজি মেয়ের চেহারাটুকুও আর দেখতে চাইব না। ভালোবাসা দেখেছো আমার ত্যাগ ঘৃণা দেখোনি।’
আপনমনে ভেবেই দুঃখ মিশ্রিত দম নিলো। মা ছেলের কাহিল অবস্থা দেখে নিজ হাতেই খাবার মুখে পুরে দেন। মায়ের আহ্লাদ পেয়ে তানভির শান্তশিষ্ট মনে খেতে লাগল।
____
মোঃ আবু সিদ্দিক ফোন হাতে নিয়ে নিস্তদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার ফোনে পদ্মিতার নাম্বার থেকে কিছু এডিট পিকচার এসেছে। পুরনো ছবি সেদিন কার। যখন পদ্মিতা তাকে জড়িয়ে পুনরায় সংসার করার জন্য অনুরোধ করে ছিল। সেই ছবিকে মেয়েটা এত জ’ঘ’ন্য রুপে উপস্থাপন করল।
দাঁতে দাঁত চেপে বেলকনিতে গিয়ে পদ্মিতার নাম্বারে ডায়াল করে। পদ্মিতা অপেক্ষায় ছিল। সঙ্গেই কল রিসিভ করে ‘হ্যালো জান’ বলে উঠল।
‘এসবের মানে কী!’
‘কোনসব ওহ ছবিগুলোর!’
‘কেনো করছিস এসব!’
‘তোমার কারণেই করছি মোঃ আবু সিদ্দিক। মনে পড়ে আমার জেদ ভালোবাসা ছিলে তুমি। কিন্তু তোমার কাছে পুষ্প ছিল সর্বদা একান্ত নারী। একটুন ধারেকাছেও ঘেঁষতে দিতে না। যদি না আমি ছলেবলে তোমার জুসে নেশা মিশিয়ে না দিতাম তবে সারোয়ার এই পৃথিবীর আলো দেখতোই না। কী হতো যদি আমার সাথে সামিল থেকে আমার হাতে হাত মেলাতে।’
‘তোর মত নিকৃষ্ট মেয়ে আমি দুটো দেখিনি পদ্ম। তুই আর তোর জ’ঘ’ন্য ভাই ঐক্য। দুজনেই ভালো খেলা চালিয়েছিলি। আমার আর আমার পরিবার কে ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু আফসোস আমার চোখের সামনে সব পরিষ্কার হওয়ায় জোর করে হোক ছলনা করে হোক রূপালির বিয়ে নাছিরের সাথে দিয়ে দিলাম। আর তোর গর্ভ থেকে ছিনিয়ে নিলাম আমার সন্তান কে।’
‘যাকগে আমার কী শোনো জান ওত কিছু বুঝি না বাপু। আমায় বিয়ে করে সংসারে জায়গা দিতে হবে অন্যথায় ছবিগুলো ভাইরাল হতে এক সেকেন্ড ও লাগবে না। আর রইল ঐক্যের কথা তার ব্যাপারে জেনেও লাভ নেই। মৃত মানুষের কথা জানতে নেই বুঝেছো।’
‘কী কী বলেছো!’
‘হ্যাঁ যেটা সত্য সেটাই বললাম। ঐক্য কে আমি নিজ হাতে মে’রে দিয়েছি। শা’লার সৎ ভাই হয়ে আমার সম্পত্তির দিকে নজর মা’রতে চেয়ে ছিল। দেখো তাকেও রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলাম। এখন তোমার বেলায় হয় তুমি পুষ্প কে তালাক দিয়ে আমায় গ্রহণ করবে না হয় আমিই তোমার সংসার কে জ্বালিয়ে দেবো। নিশ্চয় শেহরীনার কথা ভুলোনি। সে আবার আমার বউমা হয় সম্পর্কে। তাই একটু আহ্লাদেই আপ্যায়ন করছি। ভুলেও পুলিশি ঝামেলায় জড়াবে না সিদ্দিক। আমি কাঁচা খেলোয়াড় নয় জান। আজকের মত কথা শেষ বাই।’
‘হ্যালো হ্যালো পদ্ম!….টু টু টু…।’
ধপাস করে বিছানার উপর বসে পড়লেন মোঃ আবু সিদ্দিক। তার ভালোবাসায় কখনো খুঁত ছিল না। পদ্ম কে ভালোবেসে ছিল মোহে পড়ে তবুও মন দিয়েছিলেন। তিনি পুষ্প কেও ভুলে যেতেন পরন্তু ছলনার শাস্তি মেয়েটার পাওয়াই উচিৎ ছিল। তাইত ভাগ্যের জোরে তিনি পুষ্পের স্বামী। কিন্তু বর্তমান সময়টায় তাদের সংসারে ফাটল ছাড়া ভালো কিছু লক্ষ্য হচ্ছে না। তিনি কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না!
‘আপনি আমাকে পুরো সত্য কেনো বলেননি!’
কণ্ঠস্বর শুনে থমকে গেলেন মোঃ আবু সিদ্দিক। চোখজোড়ায় পানি জমেছে তার। চুপটি করে জানালার ধারে বসে রইলেন।
চলবে……
#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৪৬ (অভেদ বন্ধন🔥)
“নিলীমা এখনো সময় আছে বলে দাও কী পাপ করেছো তুমি। আমি চাই না আমার ভালোবাসার উপর তুমি নামক বেঈমানির তর্কমা লাগুক। প্লিজ! নিলীমা তোমাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। বলে দাও সত্য কী!”
নিলীমা কে আজ ১২ ঘণ্টা অব্দি চেয়ারে বসিয়ে হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে তানভির। নিলীমা সহজে তার হাতের মুঠোয় আসতো পারেনি। তার জন্য তানভির নিজ বুদ্ধিমত্তায় নিলীমা কে তার কব্জায় এনেছে। ১২ ঘণ্টা পূর্বে নিলীমার বাবা-মা ঘন ঘন মেয়ের বাহিরে যাওয়া কে সন্দেহ করতে থাকেন। এ ব্যাপারে নিলীমার মা মিশকিতা জাহানারা পুষ্প কে জানান। জাহানারা পুষ্প কয়েকদিন ধরে সিদ্দিক বাড়িতে নিলীমার আনাগোনা লক্ষ্য করেছেন। যবে থেকে শেহরীনা নিখোঁজ তখন থেকে নিলীমা ঢাল হয়ে সিদ্দিক বাড়ির সদস্যদের কাছে থাকছে। এ বিষয়ে তিনি ভ্রুক্ষেপ করেননি। কারণ সম্পর্কে বোনের মেয়ে হয়। বাসায় আসতেই পারে স্বাভাবিক। কিন্তু মিশকিতার কথা শুনে তিনি খোঁজ নেওয়ার জন্য তানভির কে জানান। তানভির শুনে প্রথমত বিশ্বাস করতে চাইনি। পরন্তু জাহানারা পুষ্প এর আকুল বিনতির জোড়ে সে হার মেনে খোঁজ নিতে শুরু করে। নিলীমা কে রাস্তার পাশে থাকা টেলিফোন থেকে কারো সাথে কথা বলতে দেখে তানভির মনে সন্দেহের বীজ জাগে। সে টেলিফোন এর কাছে গিয়ে তার ঠিকানা অর্থাৎ টেলিফোন লাইন কোন জায়গায় অবস্থিত সেটা নোট করে ফেলে।
তানভির অফিসে এসেই সেই ঠিকানায় যোগাযোগ চালায়। তাদের কে নির্দিষ্ট এক সময়ের কথা জানিয়ে নিলীমার কথা বলার ব্যক্তির নাম্বারটি চাইল। যোগাযোগ মাধ্যমের লোকগণ দ্বিরুক্ত করেননি। তারা ১০/১৫ মিনিট সময় চেয়ে কল কেটে দেয়। তানভির অফিসের মধ্যে পায়চারি করতে থাকে। মন বলছে নিলীমা দোষী নয়। কিন্তু মস্তিষ্কের নিশানা সোজা নিলীমার উপর পড়ছে। নিলীমা কে দোষী সাব্যস্ত করছে। সে নিশ্চিত নয়। সারোয়ার ও নিলীমার উপর নজর রাখতে বলেছে। ইত্তেফাক নয় এটা।
হঠাৎ তার ফোনে কল আসে। সে তাদের কাছ থেকে নাম্বারটি ঠুকে নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে কল রেখে দেয়। দীর্ঘ এক শ্বাস টেনে ফোন নিয়ে সেই অপর ব্যক্তির নাম্বারটি ডায়াল করে। রিং হচ্ছে দেখাচ্ছে। ঢোক গিলল তানভির। অপরপাশের ব্যক্তি যেনো নিলীমার আত্নীয় অথবা বান্ধবী হোক সেই প্রার্থনা করছে সে মনদিল জুড়ে। কল রিসিভ হলো। অপরপাশ হতে ভারী বয়স্ক গম্ভীর কণ্ঠস্বর শোনা গেল। স্তদ্ধ হয়ে যায় তানভির।
‘হ্যালো মিস্টার শোয়াইব মিলদাজ স্পিকিং হু ইজ ইট!’
তানভির ঝটপট কল কেটে দেয়।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তার হাতে কাঁপন ধরে যায়। নিলীমা তার সাথে প্রতারণা, বেঈমানি করেছে। ধোঁকার রেশ কেনো এতটা গভীর হয়! তানভির সহ্য করতে পারছে না। মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে পড়ল। এসি চলছে তবুও তার মেজাজ হাই ভোল্টেজ পাওয়ারের মত বেড়েই যাচ্ছে। চোখমুখে তার সন্দেহের বীজ পরিপূর্ণ হয়।
সেদিন নিলীমার হঠাৎ বীচে ঘুরতে যাওয়ার বায়না, ফোন নিয়ে শেহরীনা কে কল করতে গেলে তার আটকে নেওয়া। কারণ আর কারণের সমাধি বুঝতে পারল তানভির। সে বোকার মত ভালোবাসা ধরে নিয়ে ছিল। তানভির এর চোখমুখে সারোয়ার এর দেওয়া মায়া-ভালোবাসার চিত্র ভেসে উঠে। তার ভালোবাসায় সে বেঁচে আছে পৃথিবীতে। সে কখনো তার স্যারের বিপক্ষে যেতে পারবে না। সন্তপর্ণে দাঁড়িয়ে যায়। নিজমনে পণ করে নেয়।
‘নিলীমা এর শাস্তি তুমি পাবেই। বেঈমানি করেছো তো বুঝতে পারবে এর ফলাফল কেমন হয়! এজন্য মানুষ বলে ভালোবাসায় কখনো অন্ধ বিশ্বাস করতে নেই।’
‘পপপানি পপানি খখাবো।’
করুন কণ্ঠস্বর শুনে ভাবনার সুতো থেকে ফিরে আসে তানভির। চোখ যায় ১২ ঘণ্টার পর অভুক্ত অনাহারী নারীর দিকে। চোখের নিচে মৃদু কালির ছাপ, গালে চ’ড় এর দাগ স্পষ্ট। তানভির স্বহস্তে মে’রেছে। কেননা নিলীমা কে সম্মতি সূচক ঘরে আসার আহ্বান করেছিল। মেয়েটাও নাছোড়বান্দ। পালানোর চেষ্টা করেছিল বিধেয় তানভির তার বাধ্য মনে হাত উঠিয়ে দেয়। তানভির এর চোখ গেল নিলীমার সবুজ রঙের ফ্রকের দিকে। গলার দিক ভিজে জবজবে হয়ে গেছে। হবেই না বা কেনো! রুমটার মধ্যে না আছে কোনো আলো, না আছে কোনো বাতাস। আয়না ঘরের সমতুল্য।তানভির এর চোখ জ্বালা করে উঠে। মেয়েটা কে অল্প সময়েই মন দিয়ে ফেলেছিল। সে যে প্রথম প্রেমেই ব্যর্থ হবে কে জানতো! নিলীমার আকুতি কণ্ঠস্বর শুনে জার থেকে এক গ্লাস পানি ভরে তার সন্নিকটে যায় তানভির।
আলতো হাতে চিবুক ধরে গ্লাসটি ঠোঁটের সাথে লাগিয়ে দেয়। পানি পান করা হলে নিলীমা জোরালো এক দম ছাড়ে। আকস্মিক কেঁদে উঠে সে। তার ভেতরেও যে দহন হচ্ছে না তা নয়। কথায় আছে না রাগের বশীভূত হয়ে মানুষ আপনপর ভুলে যায়। মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু একটা কথাই ঘুরে বিনাশ। শত্রুর বিনাশ। বাই হুক অর বাই ক্রুক। নিলীমাও জেদ বজায় রেখে শেহরীনার অপহরণ হতে সহায়তা করেছে তার আসল বাবা কে। তানভির মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। তার আসলে বলার মত ভাষা নেই।
নিলীমা তাচ্ছিল্যের হেসে বলে,
‘ভালোবাসো খুব!’
তানভির নিরুত্তর হয়ে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। নিলীমার চোখ ফেটে কান্না আসছে। বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়েও পড়তে সময় নিলো না। ফুপাঁনো কণ্ঠে বলে,
‘আমিও ভালোবাসি তানভির। কিন্তু আমি কী করতাম! সারোয়ার আমায় রিজেক্ট করেছিল। তাই আমি সহ্য করতে পারিনি। জানো আমার নামডাক ছিল উচ্চতর স্থানে। সব ছেলেরা আমায় প্রপোজ করতে, বিয়ে করতে লাইনে থাকতো। কিন্তু প্রথম আমার আকর্ষণ কাজ করেছে সারোয়ার এর উপর। যেদিন পুষ্পমনি আমায় বিয়ের জন্য বলেছে সেদিন থেকে আমি সারোয়ার কে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেছি। জানো এক মেয়ের স্বপ্ন ভাঙ্গা কতটা কষ্টকর, কতটা যন্ত্রণাময়। জানবে কেমনে তোমাদের চোখে খালি পার্শ্বিক দৃশ্যেই পড়ে। অভ্যন্তরীণ মনের খবর রাখো কেউ! আমি সারোয়ার কে নিজের স্বামী মেনে ছিলাম। কিন্তু সে…সে প্রতিবার আমায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। কেনো ঐ কালি মেয়ের মধ্যে কী এমন আছে যা আমার মধ্যে নেই। আমি কী দেখতে খারাপ না আমার…।’
কথাগুলো শুনে তানভির এর রাগে ঘি ঢালার মতো হলো। দাঁতে দাঁত চেপে চেঁচিয়ে বলে,
‘তোমার অন্তর নি’কৃষ্ট, তোমার মন মস্তিষ্ক পুরোটাই হলো জ’ঘ’ন্য। কোথায় দেখেছো শরীরের বর্ণের কারণে কোনো মেয়ের বিয়ে হয় না অথবা তারা ভালোবাসতে পারবে না। তাদের কী ভালোবাসতে বারণ করেছিল সংবিধানে না ইসলামে লিখিত ছিল তাদের ভালোবাসার অধিকার নেই! কোথাও তো লেখেনি তাহলে তুমি সামান্য এক মেয়ে হয়ে কোন হকে শেহরীনা ভাবীর সৌন্দর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলো। জানো এই মাত্র বললে না ভাবী আর তোমার মধ্যে পার্থক্য কী! পার্থক্য এটাই তোমার মন কুৎসিত আর ভাবীর মন শীতল সৌন্দর্যে ভরা। উনি ভালোই কালো হোক কিন্তু উনার সান্নিধ্যে যে থাকবেন তিনিও প্রেমে পড়ে যাবেন। ভাবীর ব্যক্তিত্ব এতই প্রখর যার সাথে তোমার তুলনাই হবে না। কখনো ভাবী কে বুঝতে চেষ্টা করেছো! তুমি না আসায় ভাবী আমায় প্রতিবার তোমার কথা জিজ্ঞেস করতো। তোমার খেয়াল রাখছি কি-না জিজ্ঞেস করতো। সর্বদা তোমার ব্যাপারে সচেতন থাকতে আদেশ করতো। এগুলো কিসের জন্য করতেন উনি! এসব বলে উনার কী লাভ! এসব হচ্ছে ব্যক্তিত্ব। মনের দিক থেকে উনি রাণী আর তুমি শূন্যতায় ডুবে আছো নিলু।’
তানভির নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না। ধপাস করে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। তার চোখজোড়া দিয়ে বিন্দু বিন্দু জল পড়ছে তা নিয়ে নিশ্চিত নিলীমা। আজ সে উপলব্ধি করতে পারছে সে কী হারিয়েছে! তানভির হাত দিয়ে চোখের জল মুছে গম্ভীর আক্রোশ কণ্ঠে বলে,
‘সময় আছে বলে দাও শেহরীনা ভাবী কোথায় নাহয় তোমাকে জেলে যেতে হবে।’
নিলীমা মাথা নিচু করে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,
‘এই গল্পের কাহিনী যাদের কে দিয়ে রচিত একমাত্র তারাই জানেন গল্পের মূল ফটক কোথায়! সেখানে গিয়ে খোঁজ লাগাও। দেখবে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।’
‘দেখো তোমার কাছ থেকে ধাঁধা শুনতে চাইনি। সরাসরি জবাব দাও।’
‘এই কথা শেহরীনার মা আর সারোয়ার এর বাবাই দিতে পারবেন। আমার সাথে এতদিন শোয়াইব মিলদাজ তার ভাড়া ফ্লাটে দেখা করেছে। কিন্তু যতদূর মনে পড়ে তারা শেহরীনা কে শহরে রাখেননি। আসল বাসস্থানে রেখেছে। খোঁজ নিয়ে দেখতে বলো তাদের।’
তানভির হতদন্ত হয়ে বের হতে গেলে নিলীমা চিৎকার করে ডেকে উঠে। তানভির এর পা থেমে যায়। নিলীমা ভয়ার্ত গলায় করুন চাহনি নিয়ে বলে,
‘প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না তানভির। আমার একা অন্ধকার রুমে ভীষণ ভয় লাগে। আমায় সাথে নিয়ে যাও। আমি আর কোনো ভুল, দুষ্টমি করব না প্রমিজ। প্লিজ! একা করে যেও না মরে যাবো আমি।’
তানভির শুনে পাত্তা দিলো না। তার কাছে উল্টো ন্যাকামি লাগল কথাগুলো। ভীষণ টিট্টকারের সহিতে বলে,
‘ওহ রিয়েলি তুমিই সেদিন অন্ধকার রুমে আমায় ভয় পাওয়াতে চাইছিলে মনে আছে! আর এ নিয়ে কিন্তু তুমি ৪/৫ বার বাতি বন্ধ করে আমায় ভয় লাগিয়ে ছিলে। অথচ আমি ভয় পায়নি। তবে তুমি ঠিকই আমায় বিরক্ত করতে তৎপর ছিলে। আমিও কিছু বলতাম না গাধার মত তোমার ভালোবাসা ভেবে মজার ছলে উড়িয়ে দিতাম। আজ এই অন্ধকার খুঁড়ো রুমই হবে তোমার সঙ্গি। থাকো তুমি যতক্ষণ আমি আসব না ততক্ষণ তোমার রেহাই নেই।’
নিলীমা ভয়ে মুখ দিয়ে ‘আ’ ধ্বনি চেষ্টা করলে তানভির এসেই তার মুখে কস্টেপ মে’রে রুম থেকে বেরিয়ে দরজা তালা দিয়ে দেয়। নিলীমার চোখ বেয়ে জল গড়াল। তার অতিরিক্ত মজা করা, অতিরিক্ত রাগই কী তবে তার সর্বনাশ ডেকে আনল!
___
“দেখ মা তোকে এইভাবে বেঁধে রাখতে আমার খুব কষ্ট হয়। এই নেহ্ এই তিন পেপারে সাইন করে দেয়। তারপর বাপ-মেয়ে মিলে বিদেশে সুন্দর ভাবে পরিবার হয়ে থাকব। তোর জন্য আমি একটা ভালো ঘরও দেখে রেখেছি। এই নেহ্ মা সাইন করে ফেল। প্লিজ! মা আমাকে আর তরফাস না। তোর মাও অন্যপুরুষের বুকে আছে। তাকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। আমার সন্তানকে ও জেল থেকে রেহাই দেবে না। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর সেই কবে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেল। তুইই একমাত্র সম্বল আমার। প্লিজ মা সাইন করে দে।”
শেহরীনা ভেতর ভেতর ভয়ে কাঁপছে। তবে বাহ্যিক রূপে প্রকাশ করছে না। শক্তপোক্ত মনে বসে রইল বিছানায়। আজ তিনদিন হয়ে গেল শোয়াইব মিলদাজ অর্থাৎ তার আসল বাবার বাড়িতে সে বন্দি হয়ে আছে। তার উপস্থিতি রুমটি আর তার বাবার রুম ছাড়া সে কোথাও যাওয়ার মত জায়গা পাচ্ছে না। ঘরের চারপাশ জুড়ে ভাড়াটে গুন্ডা রেখেছেন তিনি। সেই তিনদিন যাবত কিসের এক তিন দলিলে সাইন করানোর চেষ্টা করছেন শোয়াইব মিলদাজ। কিন্তু শেহরীনা ও হার মানার পাত্রী নয়। সে নিশ্চুপ, নিরব চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। পদ্মিতা চেয়েছিলেন বেধম প্রহার করতে। কিন্তু শোয়াইব মিলদাজ এর কড়া নির্দেশ তার মেয়ের গাঁয়ে কেউ হাত তুলতে পারবে না। অন্যথায় তিনি খবর করে দেবেন। শেহরীনা দোটানায় ভোগছে। পুনশ্চ তার মন মস্তিষ্কে তার মায়ের উপর বাবার দেওয়া আ’ঘাত এর পীড়া দৃশ্যপট হয়ে ভেসে উঠে।
মায়ের যন্ত্রণা সে উপলব্ধি করেছে দাঁত খিঁচে চোখ দিয়ে দেখে যায় কিন্তু মুখ ফুটে টু শব্দ করে না। শোয়াইব মিলদাজ হতাশ হলেন। মেয়েকে স্বাভাবিক রেখেই তিনি দরজা বন্ধ করে তালা লাগিয়ে রুমে ফিরে আসেন। দলিলপত্র টি-টেবিলের উপর রেখে সোফায় বসে পড়েন। মাথা ব্যথায় টনটন করছে। মেয়েটার র’ক্ত গরম। বলে না, বাবা-মায়ের আচরণ সন্তানেরা পায়। ঠিক সেটাই তার র’ক্ত ঠান্ডা কিন্তু রূপালি বেগম এর র’ক্ত গরম। রূপালি বেগম ও ছিলেন প্রায় তেমনি এক নারী।অতীতে তার রাগ উঠলেই ছ্যাত করে উঠতেন, জেদ , রাগ ছিল তার মূল সম্পত্তি। এক দেখায় প্রেমে পড়ে ছিলেন শোয়াইব। অতীতের স্মৃতি বিচরণের সময় কারো আহাট শুনতে পান তিনি। চোখ ঘুরিয়ে দেখেন পদ্মিতা দাঁড়িয়ে আছেন। পদ্মিতা দুটো গ্লাসে করে শরবত এনেছেন। সোফার বিপরীত দিকে শোয়াইব মিলদাজের মুখোমুখি হয়ে শরবতটি রাখেন। তিনি গ্লাসটি নিয়ে ঢকঢকে পান করেন। এবার যেনো মাথার ব্যথা কমতে লাগল। পদ্মিতা ধীরস্থির হয়ে পান করছেন। এক চুমুক দিয়ে মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন।
‘তো মেনেছে আপনার গুণবতী মেয়ে!’
‘না।’
‘এখন তবে আমি চেষ্টা করে দেখি!’
‘দরকার নেই। আমার মেয়ে দূর্বল হয়ে পড়েছে। তোমার কারণে তার ক্ষতি হোক সেটা আমি মোটেও চাইছি না।’
‘সন্তানের জন্য খুব দরদ উতলে পড়ছে দেখি। নিলীমা মেয়েটার চোখের দৃষ্টি তবে তুখোড়। ভুলো না তুমি আমার সাথে হাত মিলিয়েছো। ঐ মেয়েকে কয়েকদিনের জন্যেই মেয়ে রূপে রাখতে পারবে। তারপর কোম্পানির মাল বহনকারী আসলে তাকে বেছে দিতে হবে। যত আহ্লাদ করার দরকার করে নাও। দরকার পড়লে হাতে নিয়ে খাইয়ে দাও। আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মাথায় রাখবে একবার দলিল সাইন হলেই ৫০% ভাগ তোমার আর বাকি ৫০% ভাগ আমার।’
‘বুঝলাম। তো তোমার কাজ কতদূর হলো!’
‘ছবিগুলো দিয়ে ছিলাম কিন্তু বাইন**চদ** সিদ্দিক এর বাচ্চা ভয় পেয়েছে তবে এখনো জবাব আসেনি।’
শোয়াইব মিলদাজ হেসে বলেন,
‘আসবেও না দেখে নিও। কারণ মেয়েদের বুঝা আর সামলানোর পদ্ধতি আমার চেয়ে বেশি সিদ্দিক এর জ্ঞান আছে বেশি।’
‘যাই হোক আমার থেকে মাল আর মেয়ে দুটোই লাগবে।’
শোয়াইব মিলদাজ পায়ের উপর পা তুলে বাঁকা হেসে বলেন,
‘আমি কী বারণ করেছি!’
‘এ কী এই না বললে মেয়ের ব্যাপারে কটুক্তি না বলতে।’
পদ্মিতার প্রশ্নে শোয়াইব মিলদাজ এর বাঁকা হাসি তিক্ষ্ম হলো। কিঞ্চিৎ পরই ‘হু হু’ করে হেসে বলেন,
‘হ্যাহ্ এমন মেয়ে থাকার চেয়ে না থাকাই শ্রেয়। যে মেয়ে বাবার গালে চ’ড় পড়তে দেখে। বাবা কে অন্য লোকের সামনে অপমান হতে দেখে। সেই মেয়ে থাকার এর চেয়েও ভালো ম’রে যাওয়া। ঐ মেয়ে কে আমার লাগছে তিনটি কাজে। একে তো সাইন করিয়ে নিজের ছেলেকে মুক্ত করা, দ্বিতীয়ত তার মামার সহায় সম্পত্তির সাইন এবং সারোয়ার এর সাথে তার তালাক। এই তিনটা দলিল রেখেছি। মেয়েটা দলিলপত্র দেখতে বলে, বারবার তাল বাহানা করে যাচ্ছি। তাও মেয়েটা মানছে না। আমার যা মনে হচ্ছে সে মানবে না। অন্য পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে।
____
তানভির এর কথায় বাড়িতে ছোটখাটো বিস্ফোরণ ঘটল। সারোয়ার ও উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে। নাছির উদ্দিন, রূপালি বেগম আর মোঃ আবু সিদ্দিক একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করেন। মোঃ আবু সিদ্দিক গলা ঝেড়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করেন।
‘বাবা নিলীমা কী সত্যিই এটা বলেছে!’
তানভির মাথা নেড়ে সায় দিলো। সারোয়ার এসেছে ৬/৭ ঘণ্টা হয়েছে। সে চিন্তিত কিন্তু ক্লান্ত শরীর হওয়ায় খোঁজ নেওয়ার জন্যে বের হতে পারেনি। তানভির এর কথা শুনে সারোয়ার ও আগ্রহ ধরে রেখেছে। শেহরীনা কে ফিরে পাবার ক্ষীণ আলো জ্বলেছে সবার মাঝে। মোঃ আবু সিদ্দিক রূপালি বেগম কে জড়ায় ধরে বলেন,
‘আমাকে ক্ষমা করিস বোন। আমার কারণে তোদের কে সাফার করতে হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোদের কে তোদের আসল বাসস্থানে পাঠিয়েছি। পদ্মিতার ঘৃণ্য ছলনায় তোদের জীবন নষ্ট হতে দেয়নি। এবারো দেবো না। আমি দেখে নেবো।’
মোঃ আবু সিদ্দিক রূপালি বেগম কে নাছির উদ্দিন এর পাশে দাঁড় করিয়ে সোফায় ছেলের পাশে বসে পড়েন। রূপালি বেগম নির্লিপ্ত চাহনি নিয়ে স্বামীর পানে তাকান। নাছির উদ্দিন ভ্রু কুঁচকে বলেন,
‘তাহলে আমরা আজি যাই। আজি এ শোয়াইবার উচিৎ শিক্ষা দিয়ে নেই।’
মোঃ আবু সিদ্দিক মাথা নেড়ে নেতিবাচক ইঙ্গিত করেন।
‘না এমন করলে সে আমাদের ঘরের মেয়ের সাথে ভুলভাল কিছু করতে পারে। যা করার সাবধানে করতে হবে। তানভির তুমি পুলিশ ফোর্স রেডি করে নিয়ে আসো। একসাথে যাবো। গল্পের মূল অধ্যায়ে পদ্মিতা শেষ টপ মা’রতে চেয়েছে। তাকে তার কাজে অবশ্য সফলকাম হতে দিতে হবে।’
সবার চোখজোড়া বিস্মিত হলেও সারোয়ার তার বাবার কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। সেও হাত মিলিয়ে নেয়। একেক জন হাত মিলিয়ে সঙ্গে দেওয়ার প্রয়াস করে।
চলবে…..
#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৪৭ (পরিণতি🔥 প্রথমাংশ)
“ছিঃ বউমা বমি আসলে ওয়াশরুমে যেতে পারোনি। দেখলে কী নোংরা করেছো। ইয়াক.. তোমার বমি আমি ধুয়ে পরিষ্কার করব ভাবছো! তাহলে তুমি ভুল ভেবে শুয়ে আছো। আমি তোমার বমি টমি সাফ করতে পারব না। পারলে নিজে পরিষ্কার করে শুবে। আসছে বাপের আহ্লাদী মেয়ে হতে। জ্বর আসলে নাপা খেতে পারোনি। রুমে তো তোমাকে কাপড়-চোপড় থেকে শুরু করে সব জিনিসই দেওয়া হয়েছে। তবুও কেনো শরীরের এত অবহেলা করেছো । দেখো বউমা তুমি আমার ছেলের বউ দেখে সুন্দর ভাবে কথাও বলছি আর ব্যবহার ও করছি। না হলে আমি…।”
“নাহলে আপনার মত কুৎসিত মহিলা দুনিয়ায় আর কেউ নেই তাইতো!”
পদ্মিতার রাগ পেল। তিনি এসে ঠাসস করে একটা চ’ড় লাগিয়ে দেন। শেহরীনার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। এতে কোনো ধ্যান দেননি তিনি। কারণ মেয়েটা মরলেও কী বাঁচলেও কী! তিনি আগেই ছবি কিছু জোগাড় করে রেখেছে মোঃ আবু সিদ্দিক কে বদনাম করার স্বার্থে। এ মুহুর্তে তাকে কটুক্তি শোনানো এ যেনো বড্ড অন্যায় হয়ে গেল। তার সহন হলো না। শেহরীনার গালে চ’ড় এর প্রকোপ মারাত্মক ভাবে লেগেছে। গাঁ গুলিয়ে পুনরায় ওয়া…ক করে বমি করে দেয়। এ নিয়ে তিনবার বমি হয়ে গেল তার। বিছানা ছেড়ে উঠার মত শক্তি হারিয়েছে সে। চিন্তায় পড়ে মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যায়। এ কথা শুনেনি এমন কম মানুষই আছেন। স্বাভাবিক জ্বর আসার নির্দিষ্ট কোনো কারণ লাগে না। প্রচণ্ড ব্যথা-যন্ত্রণায় জ্বর সর্বদা উপস্থিতি বহন করবে।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)পদ্মিতার শাড়িতে অল্প করে ছিটকে শেহরীনার বমি লাগায় তিনি চিৎকার করে দূরে সরে যান। ঘুম কাঁচা হয়ে এলো শোয়াইব মিলদাজ এর। মহিলার চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে শুনতে মহাবিরক্ত তিনি। বিছানা ছেড়ে পরণে শার্ট প্যান্ট জড়িয়ে রুম থেকে বের হোন। ঘুমে টলতে টলতে মেয়ের রুমের কাছে আসতেই নাকে বিদঘুটে গন্ধ এসে লাগল। থমকে যান তিনি। হাঁটার কদম থামিয়ে দেন তিনি। নাক চেপে মেয়ের রুমে ভেতর তাকান। পদ্মিতার শাড়িতে বমির ফোঁটা লাগায় চেঁচামেচি করছেন তিনি। শোয়াইব মিলদাজ তৎক্ষণাৎ অভিনয় করতে পদ্মিতার কাছে গিয়ে তার হাত ধরে ঘুরিয়ে নিয়ে, ঠাসস করে একটা চ’ড় লাগান তার নরম গালের মধ্যে। পদ্মিতা রেগেমেগে ‘তুই’ বলে কোনো শব্দ বের করতে চাইলে শোয়াইব মিলদাজ চোখের ইশারায় শান্ত থাকতে ইঙ্গিত দেন। কিন্তু পদ্মিতা শান্ত হয়নি উল্টো আক্রোশ নিয়ে রুম ত্যাগ করে। শোয়াইব মিলদাজ এবার পূর্ণ নজরে রুমের দিকে চোখ বুলিয়ে নেন।
টাইলার্সের উপর বমির ছড়াছড়ি। শেহরীনা নিজের ভার সামলে মুখটা বিছানার পাশে রেখেছে। যাতে বমি আসলে টাইলার্স ভাসিয়ে ফেলা যায়। বিছানা পরিপাটি রয়েছে। মেয়েটাকে শারীরিক ভাবে অসুস্থ লাগছে দেখে শোয়াইব মিলদাজ ঢং করে বলেন,
“ও মা তোমার কী জ্বর এসেছে! আমাকে ডাক দিতে পারোনি। সন্তানের পূর্ণ খেয়াল রাখা। তুমি কোনো চিন্তা করো না। বাবার তো দায়িত্বই এটাই। আমি এখনিই তোমার রুম পরিষ্কার করার জন্য লোক পাঠাচ্ছি। আজ আমি নিজ হাতেই আমার মেয়ে কে খাবার খাইয়ে দেবো। দেখো দুপুর ১২টা বাজছে। তোমার নিশ্চয় খিদে পেয়েছে। আমি খাবার আর ওষুধ নিয়ে আসছি। একজন নার্স আসবে সে তোমাকে ফ্রেশ করিয়ে দেবে।”
শেহরীনা জ্বরের ঘোরে থাকায় চোখে সরষে ফুল দেখছে। তার চোখের সামনে সবুজ রঙের গাঢ় বর্ণ জ্বলজ্বল করছে। রোগীর ন্যায় আচরণ তার। হাত দিয়ে খামচে ধরে রেখেছে সে। মনে মনে সারোয়ার কে খোঁজে বেড়াচ্ছে। সে তো এক অভাগী যে জানেও না তার স্বামী এসে তাকে উম্মাদের মত খুঁজছে। তার ধারণা সারোয়ার এখনো বিদেশ।
‘সসসারোয়ার আআপনাকে মমমমিস করছি খুব।’
শেহরীনা দেখল তার হাত কেউ স্পর্শ করছে। মেয়েলী হাতের স্পর্শ কখনো উষ্ণ আর তুলতুলে হয় না। শক্তপোক্ত উষ্ণ হাতের আভাস পেয়ে চট করে তার চোখের মধ্যে ভয় চলে এলো। চোখ খুলতেই বুড়ো এক লোকের বিশ্রী দাঁতের হাসি দিতে দেখতে পায়।
শেহরীনা গুটিয়ে গেল। কাঁথা বুকে চেপে উঠে বসল সে। লোকটা ‘হেহে’ ভয়ানক পান খাওয়া দাঁতের হাসি দিয়ে বলে,
“মাগো ডরাও কেন! আহো তোমারে গোসলখানায় নিয়া যাই।”
লোকটা পুনরায় হাত লাগাতে চাইলে শেহরীনা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“দেখুন আমার সাহায্যের দরকার নেই। যান আপনি।”
“আরে কী কইতেছো আম্মা! আহো আমার সাহায্য ছাড়া কী তুমি যাইতে পারবানি! আহো আহো আমার কাছে আহো।”
লোকটি বিছানায় পা রাখতে গেলে শেহরীনার মাথায় আগুন ধরে যায়। তার বিছানার পাশে থাকা ফুলদানি তুলে আছাড় মা’রে ভেঙ্গে নিলো। কাঁচ হাতে নিয়ে হু’মকির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“আর এক পা যদি বিছানায় রাখেন তাহলে আপনি জীবিত থাকবেন না।”
বুড়ো লোকটি ভয়ে সুরসুর করে পালিয়ে গেল রুম থেকে। শোয়াইব মিলদাজ পুরো দৃশ্যপট লক্ষ্য করেছেন। তিনি মনে মনে ভাবছেন, মেয়েটা ততটাও বোকা নয়। সে রাগ উঠলে অবশ্য প্রতিরোধ করতে পারবে। সাইন করাতে হলে অন্যকিছু করতে হবে।
শোয়াইব মিলদাজ দম ছেড়ে রুমের ভেতর ঢুকে অবাক হওয়ার ভান করে বলেন,
‘এ কী মা তুমি এখনো অপরিচ্ছন্ন অবস্থায়! সে মহিলাটা আসেনি।’
‘কোন মহিলা আপনি আমায় ওয়াশ করার জন্য একটা বুড়ো লোককে পাঠিয়েছেন। মাথার মধ্যে কী আপনার গোবর ভরা!’
শক্ত হাতে বাটি চেপে ধরেন শোয়াইব মিলদাজ। তবুও অভিনব উপায়ে তিনি মন খারাপের ভান ধরে বলেন,
‘মা আমি ভেবেছিলাম নার্স এসেছে। কিন্তু এমন হবে জানতাম না।’
‘দদেখুন আপনার সাহায্যের ককোনো দরকার নেই আমি নিজে যযেতে পপারবো।’
শেহরীনার ওয়াশরুমে যেতেই হতো। ভীষণ চাপ পেয়েছে। কুড়িয়ে কুড়িয়ে হেঁটে দেওয়াল ধরে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল সে। দরজা লক করার পর শোয়াইব মিলদাজ নিম্ন গলায় ‘চ’ উচ্চারণ করে রুম ত্যাগ করেন। পদ্মিতা সুযোগ বুঝে রুমে এসে খাবারের থালা আছে কি-না দৃষ্টি বুলিয়ে নেন। শোয়াইব মিলদাজ খাবারের থালা ওভার ড্রপের উপর রেখে গিয়েছেন। পদ্মিতা কৌশলে শেহরীনার অনুপস্থিতিতে খাবারের উপর একটা কাগজের টুকরো খুলে কিছু পাউডার ঢেলে হাত দিয়ে মিশিয়ে নেন। তার মুখে ফুটে উঠে বিশ্রী এক পৈশাচিক হাসি। আনন্দ মনে তিনি তৎক্ষণাৎ রুম ত্যাগ করেন। শেহরীনা অসুস্থ শরীরে খেয়াল করে তার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করালে সে অজ্ঞান হয়ে পড়বে। ঢোক গিলে দরজা খুলে বের হলো। রুমের দিকে একপলক নজর বুলিয়ে নেয়। অপরিষ্কার এবং দুর্গন্ধ ছড়িয়ে আছে বমির কারণে।
দূর্বলতা নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। তখনি মেয়েলি কড়া কণ্ঠস্বর শুনে চিবুক তুলে তাকায়। কোনো এক হাসপাতালের নার্সিং পোস্টে কর্মরত নার্সের পোশাক পরিহিত অর্ধবয়স্ক এক মহিলা দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
‘আপু আপনার কোনো সাহায্য লাগবে।’
শেহরীনার মাথায় চোড়াও হলো শোয়াইব মিলদাজ এর কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার অভিনব বুদ্ধি। ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে।
‘আআপনি কী ভদ্রলোকের কথায় কাজ করছেন।’
নার্সটির ভ্রু কুঁচকে এলো। মুখ বাঁকিয়ে বলে,
‘তা নাহয় কী! উনি টাকা দেবে বলেই আমাকে ডাকছেন।’
শেহরীনার মনে পড়ল। তার ব্যাগ রুমের মধ্যেই বিছানার পেছনে রাখা। ফোনটা নেই তবে সেখানে একটা পার্স আছে। পার্সে এক হাজার টাকার নোট আছে ৩টার মত। ফোনটা সেদিনই ভদ্রলোক নামক মুখোশধারী অসৎলোক ছিনিয়ে বন্ধ করে ফেলেছিল।
নার্সটিকে কৌশলে কথা ঘুরাতে বলে,
‘আআপনি রুমটা পরিষ্কার করে দিন। আমার খাবার খেতে হবে।’
নার্সটি বুঝল মেয়েটার শরীর খুব খারাপ। মায়া হলো তার। সে রুমটা ঝটপট গুছিয়ে বমি পরিষ্কার করে শেহরীনা কে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে কুসুম গরম পানি করে দেয়। শেহরীনা গোসল সেরে এলে নার্সটি খাবার এগিয়ে দেয়। শেহরীনা খাবারের দিকে তাকিয়ে রইল। এ খাবার ঐ অসৎ লোকটা এনেছেন। তার দেওয়া খাবার খাওয়া আদৌ যোগ্য! মনে মনে ভয় ভীতি ভর করছে তার অন্তর জুড়ে। চোখ এদিক ওদিক তাকিয়ে নার্স কে বলে,
‘আআপনি এএকটু পপানি এনে দিতে পারবেন।’
নার্সটি পুরো রুম চোখ বুলিয়ে দেখল পানির কোনো বোতল অথবা জার রাখা নেই। বিধেয় সে রুম থেকে বের হয়ে জার আনতে যায়। শেহরীনা কৌশলে অর্ধ ভাতটুকু ওয়াশরুমের মধ্যে থাকা ডাস্টে ফেলে তার উপর টিস্যু ফেলে চাপা দিয়ে পুনরায় বিছানায় এসে বসে পড়ল। তার মাথা ঘুরছে।
‘মনে হচ্ছে এখনিই ঘুমিয়ে পড়ব। আদৌ সারোয়ার কে আমি একপল দেখতে পারব! আপনার সাথে কথা না বলে বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। শরীর নেতিয়ে যাবে তবে আপনার কে দেখার বাসনা কখনো মিটবে না। ইশ আপনি তো বোধ হয় জেনে গেছেন আমি নেই। কোনো মাধ্যম ফেলেই আমি চলে আসার চেষ্টা করব।’
শেহরীনার হঠাৎ নজর পড়ল দরজা খোলা। তার চিত্ত জুড়ে সাহস উদয় হলো। পায়ের উপর চাপ প্রয়োগ করে দরজায় এসে উঁকিঝুঁকি দিলো। রুমের বাহিরে দূর দূর পর্যন্ত কেউ নেই। তার মাথায় বুদ্ধি এলো। সে পা চালিয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখে সামনে আগায়। তখনি তার কানে ভেসে এলো তিক্ত কিছু সত্য।
সে চোখ ঘুরিয়ে দেখে ভেতরের রুমে বসা দুজন ব্যক্তির দিকে। নার্সটি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শোয়াইব মিলদাজ এর সাথে তর্ক লেগেছে পদ্মিতার। সে চেঁচিয়ে বলছে,
‘দেহো আমি ভাতে ড্রাগ দিয়েছি। মেয়েটা খেলে হুঁশ হারিয়ে তার মত পাগলামি করবে। আর পাগলামির জোড়ে নিজের কাপড় নিজেই ছিঁড়ে হেরফের করবে। তখন সেই ভিডিও করে তার কাছ থেকে সাইন করিয়ে নেবো আমি।’
‘দেখো এমনটা করবে না। ভিডিও করার দরকার কী! সে হুঁশ হারালে তার টিপসই নিয়ে ফেলব। ব্যস আমাদের কাজ শেষ। তখন বাহিরে পাহারাদার যাদের ভাড়া করছি ওদের কাছে সর্পে দেবো।’
নিজের র’ক্তে’র বাবার এ কথন শুনে শেহরীনার ম’রে যেতে মন চাইছে। লোকটা কে সে প্রথম দিকে বিশ্বাস করে ভালোবাসতো। অথচ লোকটার আসল সত্য সামনে আসার পর থেকে তার মন চাই নিজের শরীর থেঁতলে যদি এই শরীর হতে লোকটার র’ক্ত বের করে ফেলে দিতে পারতো। তবেই সে প্রশান্তি অনুভব করতো। শেহরীনার আজ আবারো তার তিক্ত অতীত মনে পড়ে যায়। সে সামলে উঠতে না পেরে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যায়। তার পেছনে বড়সরো ফুলদানি ছিল কাঠের তৈরি। তার শরীরের ধাক্কায় তা ভেঙ্গে যায়। কাঠ ভাঙ্গায় কাঠের ধারালো তিক্ষ্ম চাপে শেহরীনার রগ কেটে চামড়া ছিঁড়ে যায়। তার আর্তনাদে রুম ভারী হয়ে যায়। ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা ভয় পেল। রুমের বাহিরে এসে তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। মুহুর্তেই র’ক্ত ছড়িয়ে যায় মাটিতে। শেহরীনার বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ কষ্ট লাগে শোয়াইব মিলদাজ এর। পদ্মিতার মাঝে কোনো ভাবাবেগ নেই। কিন্তু শোয়াইব মিলদাজ কাঁপছে। তার কাঁপন দেখে তিনি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করেন।
“কী হয়েছে কাঁপছো কেনো!”
শোয়াইব মিলদাজ জবাব দিতে পারলেন না। হিমায়িত শরীরে তিনি হঠাৎ শেহরীনা কে পাঁজাকোলা করে গাড়ির দিকে ছুটে যান। পদ্মিতার মাথা হ্যাং হয়ে গেল। তিনিও পিছু গিয়ে জোরে জোরে ডাক শোধান। তবে লোকটার যেনো কোনো কর্ণপাত হয়নি। তিনি গাড়িতে শেহরীনা কে বসিয়ে তার র’ক্তা’ক্ত হাতে কোনোমতে কাপড় বেঁধে দেন। তার ভাড়াটে গুন্ডা গুলো এসে তাকে থামিয়ে দেয়। একজন তো ক্ষেপে গিয়ে বলে,
‘এই আপনি মাইয়া নিয়ে কই যাইতেছেন! আপনে না কইছিলেন এই মাইয়া আমাগোর জন্য দেবেন।’
শোয়াইব মিলদাজ এর হাত-পা কাঁপছে। চোখের সামনে শেহরীনার অবস্থা দেখে তার মাথায় আজগুবি চিন্তা ভর করছে। তবুও লোকগুলোর কথায় তিনি সরতে যাবেন। তখনি শোয়াইব মিলদাজ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার চোখের দৃষ্টি ছিল শেহরীনার নেতিয়ে যাওয়া শরীরের দিকে। পদ্মিতা দেখে অবাক। শোয়াইব মিলদাজ এর বুক বরাবর কেউ গু’লি করেছে। তার বুক পকেটের কোণ বিন্দু দিয়ে র’ক্ত ঝরছে। এ দেখে আতঙ্কে পদ্মিতাও পালিয়ে যেতে নিলে কেউ তার মুখে কাপড় চেপে ধরে তাকে অজ্ঞান করে দেয়। গুন্ডা লোকেরা এদিকওদিক ছড়িয়ে পালিয়ে যেতে নিলে তাদের ঘেরাও করে ফেলল সারোয়ার এর সঙ্গে আসা পুলিশ ফোর্স। তানভির ও দুয়েকজন কে এক গাঁ লাগিয়ে পুলিশের হাতে সঁপে দেয়। নার্সটি ধরা পড়ায় হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে লাগে। তবে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য তাকেও থানায় আটক করা হবে বলে জানায় তানভির। পুলিশ ফোর্সের মধ্যে থাকা নারী পুলিশ এসে নার্স কে সঙ্গে করে দাঁড়ায়। অন্যথায়, হতদন্ত হয়ে পুরনো গ্রাম্য বাড়িটির চারপাশ জুড়ে সারোয়ার উম্মাদের মত শেহরীনা কে খোঁজছে। কিন্তু তার চিহ্ন অব্দি খুঁজে না পেয়ে সরাসরি গলা উঁচিয়ে ডাক শোধায়। গাড়ির পেছনের সিটে শায়িত এক নারীর বাঁক কে দেখে সারোয়ার তৎক্ষণাৎ গাড়ির দরজা খুলতেই তার মাথা ঘুরে উঠল। শেহরীনার হাতের অবস্থা মারাত্মক। সে কোনোদিকে না তাকিয়ে তাকে কোলে উঠিয়ে ছুটে নিজ গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দেয়। সেখানে নাছির উদ্দিন এবং মোঃ আবু সিদ্দিক অপেক্ষায় বসে ছিলেন। তারা মেয়ের শারীরিক অবস্থা নাজুক দেখে ভয় পেলেন।
‘সারোয়ার বাবা জলদি গাড়ি ঘুরিয়ে শহুরে নেহ্। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। বউমার অবস্থা খুব খারাপ জলদি কর।’
তানভির এসে ড্রাইভার করতে চাইলে নাছির উদ্দিন তাকে থামিয়ে বলে,
‘বাবা তুমি এদের সাথে থানায় যাও। আমরা শেহরীনার অবস্থা জেনে তবেই থানায় আসব।’
তানভির মাথা ঝাঁকিয়ে সরে যায়। সারোয়ার এর মাথা তার বউয়ের চিন্তায় বিভোর হয়ে পড়েছে। ড্রাইভিং সিটে বসে তৎক্ষণাৎ গাড়ি চালু করে রাস্তায় গাড়ি নামিয়ে নেয়। যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি ঘুরিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যায়।
তানভির পুলিশের গাড়িতে সবাই কে উঠিয়ে ঘরের ভেতর যায়। সেখানে কারোর উপস্থিতি না পেয়ে কিছুটা অবাক হলো। তাদের ধারণা ছিল এখানে শোয়াইব মিলদাজ এবং পদ্মিতা থাকবে। তবে কেউ নেই দেখে সেও আর ওতটা না ঘেঁটে বেড়িয়ে যায়। পরন্তু বাড়ির বাহিরে রাখা গাড়ির কাছে গিয়ে দেখল জমিনে র’ক্ত ছড়িয়ে আছে অথচ কোনো দেহ নেই। র’ক্তে আঙ্গুল ছুঁয়ে দেখে তরতাজা র’ক্ত। মনে হচ্ছে যেনো কেউ কৌশলে কারো দেহ সরিয়েছে। কেউ তো মা’রা যায়নি।
‘হতে পারে ভাবীর র’ক্ত পড়েছে। সবাই ধরা পড়েছে শুধু পদ্মিতা আর শোয়াইব মিলদাজ কে পাওয়া যায়নি।’
তানভির আপনমনে ভেবে আড়পলকে বাড়ির চৌপাশে নজর বুলিয়ে নেয়। অন্য কারো চিহ্ন বোঝা যাচ্ছে না। অতঃপর বেশিক্ষণ না থেকে সেও পুলিশের গাড়িতে উঠে বসে। পুলিশ অফিসার জানায়,
‘স্যার কেউ নেই কোথাও। আমাদের উচিৎ থানায় নিয়ে এদের উত্তম কেলানি দিয়ে জবান খোলানো।’
তানভির শুনে মৃদু মাথা ঝাঁকায়। তার মনে হচ্ছে সে হয়ত কিছু ফেলে যাচ্ছে যা সে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে না। গাড়ি ঘুরানোর সময় পুনরায় চোখের সূক্ষ্ম দৃষ্টি বাড়িটির দরজায় দেয়। নাহ, মনোভুল দেখে সে নৈঃশব্দ্যে দম নিলো। তাদের গাড়ি ছুটতে লাগল থানার উদ্দেশ্যে।
গাড়ি বহুদূরে চলে গেলে বাড়িটির পাশে থাকা বিশাল আকারের বকুলগাছের পেছন থেকে একজোড়া চোখের মালিক স্বশরীরে বেরিয়ে আসে। তার চোখের দৃষ্টিকোণ চলে যাওয়া সেই পুলিশের গাড়ির দিকে। কোথাও কারো উপস্থিতি না পেয়ে মুচকি হাসল সেই ব্যক্তিটি। যেনো এমনটা হওয়ার ছিল! ধারণাতীত হবে তাই তার চাওয়া-পাওয়া ছিল। একান্ত তারই চাওয়া-পাওয়া।
চলবে…..