প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-০৮

0
146

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৮

নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে চারপাশে। অরিন কোনো মতে ছাদে উঠলো। ছাদের দরজা নিঃশব্দে প্রবেশ করলো ছাদে। কার্নিশের দিকে চোখ পরতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে পেয়ে গেলো। অরিন ভীষণ অস্থির হয়ে পরেছে। কেনো এসেছে এই লোক। কি চাইছে তার কাছে। নিজেকে শান্ত করলো। অতঃপর ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো। কিছুটা কাছে আসতেই ধূসর তার দিকে ফিরলো। অরিন রুষ্ট পুরুষকে দেখে থমকালো, চমকালো। এ কি অবস্থা তার! উষ্ণ খুষ্ক চুল, রক্ত জবার ন্যায় আঁখি জোড়া লাল বর্ণ ধারণ করেছে।

অরিন আরেকটু এগিয়ে আসলো ধূসরের দিকে। বেশ খানিকটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়ালো। ধূসর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়াবী মুখ খানার দিকে। অরিন আহামরী সুন্দরী নয়, তবে হলদে ফর্সা গায়ের রঙে উঁচু নাক চিকন ঠোঁট জোড়া বেশ মানিয়েছে। ধূসরের কাছে মনে হয় তার নিবেদিতার চাইতে মায়াবতী সুন্দরী নারী এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মায়ের পরে সেি একমাত্র নারী যাকে সে ভালোবেসেছে। তার ভালোবাসার গভীরতা প্রখর। নিবেদিতার মুখ পানে তাকাতেই তার রুষ্ট পুরুষ ভুলে গেলো তার রাগ। নিবেদিতা কাছে আসলো তার ফিসফিস করে বলল,,

“আপনি! আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন?”

ধূসর আনমনে বলে উঠলো,,
“তোমায় দেখতে এসেছি নিবেদিতা। তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখার যন্ত্রণা প্রচন্ড প্রখর। আমি সেই বিরহে পুড়ছি। কেনো এতো পোড়াচ্ছো আমায়?”

অরিন স্তব্ধ হয়ে গেলো। তব্দা খেয়ে আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে। হতবাক হতবিহ্বল হয়ে গিয়েছে। ধূসর কি বলছে এসব। সে টেনে টেনে বলল,,,“মানে?”

“ভালোবাসি!”

অরিন আরেকবার ঝটকা খেলো। আজ কি তার হতবাক হওয়ার দিন। রুষ্ট পুরুষ কি তাকে আজ অবাক করতে করতে মেরে ফেলবে। কি চাইছে ধূসর। এতো মাস পর এই প্রথম ধূসর নিজের মনের কথা জানালো। এতো মাসে কখনো বলেনি ভালোবাসে তাকে, আজ মুখ ফুটে ভালোবাসি কথাটা বলছে। আচ্ছা এখন অরিনের কি করা উচিত? সে অবাক হবে না খুশি হবে। অরিনকে উত্তর দিতে না দেখে ধূসর আবার বলল,,,

“ভালোবাসি অরিন, ভীষণ ভালেবাসি তোমাকে”

অরিন নিজেকে স্বাভাবিক করলো প্রথমে। এরপর উত্তর দিলো,,“কতটা ভালোবাসেন?”

“কতটা ভালোবাসা তোমার প্রয়োজন নিবেদিতা?”

অরিন উত্তর দিলো না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ধূসরের আঁখি জোড়ার দিকে। রুষ্ট পুরুষটি অন্য দিকে তাকানো। হঠাৎই রুষ্ট পুরুষ তাকালো তার দিকে। আখিঁজোড়ার মিলন ঘটলো। কেউ দৃষ্টি সরালো না। অরিন বোঝার চেষ্টা করলো সেই শান্ত আঁখি জোড়া। তবে অরিন বুঝে উঠতে পারলো না গভীর কালো চোখ জোড়ার চাহুনি। এ ক্ষমতা যে তার নেই। ধূসর মৃদু কন্ঠে শুধালো,,

“আমার ভালোবাসার গভীরতা বা প্রখরতা বুঝতে চেও না মেয়ে, বুঝতে চাইলে পাগল যে তোমায় হতেই হবে”

“আমি পাগল হতেও রাজি রুষ্ট পুরুষ”

জড়ানো কন্ঠে জবাব দিলো অরিন। ধূসর থমকালো। তার নিবেদিতা তার মাঝে পাগল হতে চাইছে। তবে কি নিবেদিতা তাকে ভালোবাসে। তবে সে কেনো বুঝেনি এতো দিন। কেনো এতো অবহেলায় রেখেছিলো। ধূসর ঝুঁকলো কিছুটা তার নিবেদিতার দিকে।

“আমাতে পাগল হতে চাইছো নিবেদিতা? বুঝে শুনে উত্তর দিও!”

“আপনাতে পাগল হতে রাজি আমি। আপনি আগলে রাইখেন আমি শক্ত কইরা ধইরে রাখবো আপনারে। এ জীবনে ছাড়বো না, শুধু থাইকা যাইয়েন আপনি”

ধূসরের গাঢ় অনুভূতিকে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা অরিনের নেই। রুষ্ট পুরুষ তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে, সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য কার আছে। নাহ আর যার থাকুক না কেনো নিবেদিতার নেই। ধূসরের আনন্দের সীমা নেই। তার নিবেদিতা ভালোবাসে তাকে, এর থেকে বেশি কিছু তার আর চাওয়ার নেই, পাওয়ার নেই। নিবেদিতাকে পেয়ে গেলে সে আর কিছু চায় না। ধূসর এতোটাই আনন্দিত হয়ে পরে যে দিক বেদিক হারিয়ে অরিনকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। অরিন থমকায়। প্রথম পুরুষের স্পর্শ। প্রিয় পুরুষের স্পর্শ, তবে বৈধ নয় তা। সে দ্রুত সরে আসলো। ধূসর লজ্জিত হলো। সে অত্যাধিক মাত্রায় আনন্দিত হওয়ার ফলে ভুলটা করে ফেলেছে। সে অস্থির কন্ঠি বলল,,

“আমায় ভুল বুঝো না নিবেদিতা। আমি অতিরিক্ত আনন্দিত হওয়ার ফলে ভুলটা করে ফেলেছি। দুঃখিত তোমায় অধিকার ব্যতিত স্পর্শ করার জন্য। ক্ষমা করো আমায়”

অরিন নিঃশব্দে কয়েকটা বড় বড় নিঃশ্বাস ফেললো। প্রিয় পুরুষ এতোটা কাছে এসেছে তার ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। অরিন নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,,
“ঠিক আছে এবারের মতো করছি ক্ষমা তবে এরপর থেকে দূরত্ব মেনে চলবেন”

ধূসর মাথায় নাড়ায়। এরপর নরম কন্ঠে বলে,,
“তোমায় অন্য কারো সাথে সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। দয়া করে আমাকে এই যন্ত্রণা দিও না। তার থেকে বরং আমায় মেরে ফেলো। তোমায় অন্য কারো সাথে দেখার আগে আমি মৃত্যুকেই গ্রহন করতে চাই”

অরিন তাকালো তার রুষ্ট পুরুষের দিকে। পুরুষটা বোধ হয় তাকে একটু বেশই ভালোবাসে। সে কি কখনো ভালোবাসতে পারবে ধূসরের মতো করে। না কখনোই পারবে না। ধূসর তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। হ্যাঁ সে সকালে দেখেছে এই পুরুষটিকে মার্কেটে যখন সে জাহিনের সাথে ছিলো। হয়তো তাকে জাহিনের সাথে দেখেই পুরুষটি আজ এই অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে বসলো।

“আপনি চিন্তা করবেন না ধূসর সাহেব আপনি ব্যতিত আমার জীবনে অন্য কোনো পুরুষ আসবে না, আজ এই মুহুর্ত থেকে নিষিদ্ধ সব পুরুষ আমার জন্য।”

ধূসর হাসলো। সে জানে তার নিবেদিতা তাকে কখনো ধোঁকা দিবে না। তার কাছে ধোঁকা দেওয়ার শাস্তি ভয়ংকর। নিবেদিতা এই কাজ করলে সে নিজ হাতে সেই শাস্তি দিবে। এরপর নিজেকেও মারবে। নিবেদিতা ব্যতিত বেঁচে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। বাঁচলে তার প্রিয় নারীকে নিয়েই বাঁচবে তা না হলে দরকার নেই বাঁচার। মৃত্যুই শ্রেয়।

“তুমি চাও বা না চাও তোমার আমার হয়েই থাকতে হবে নিবেদিতা। ভালো যখন বেসেছি তোমায়, তবে তুমি আমারই। আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় অন্য পুরুষ তোমাকে ছুঁতে পারবে না। মেরে ফেলবো তাকে”

“মৃত্যু অব্দি আপনারই থাকবো রুষ্ট পুরুষ।”

ধূসর হাসলো। মেয়েটা এখন থেকে তার প্রেমিকা। নিবেদিতা তার প্রেমিকা, এ আনন্দ সে কোথায় রাখবে! এতোটা আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত সে আগে হয়নি। ভালোবাসলে বোধ হয় মানুষ পাগল হয়ে যায়। অরিন নিঃশব্দে হাসলো। লোকটাকে এখন বাড়ি পাঠাতে হবে। গভীর রাত। আবার যদি কেউ দেখে ফেলে এই রাতে সে একটা পুরুষ মানুষের সাথে ছাদে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। তাহলে আর এলাকায় থাকা হবে না তাদের। অরিন তাড়া দেখিয়ে বলল,,

“অনেক রাত হয়েছে এবার বাড়িতে যান। আপনার আম্মু হয়তো চিন্তা করছে। এরকম গভীর রাতে বাইরে থাকবেন না। আন্টি চিন্তা করবে”

“যথা আঙ্গা ম্যাডাম। এই যে এখন আপনি চলে এসেছেন নিজের রুষ্ট পুরুষকে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য। এখন থেকে রুষ্ট পুরুষ নিবেদিতার কথা মতো ভালো ছেলে হয়ে যাবে।”

অরিন হাসতে হাসতে বললো,,
“আচ্ছা ঠিক আছে এখন যান। অনেক তো রাত হলো। বাড়িতে গিয়ে ঘুমান। কিন্তু আপনি ছাদে উঠেছেন কিভাবে বলুন তো?”

ধূসর মাথা চুলকে হেসে বলে,,
“প্রথমে দেওয়ালে উঠে তারপর সানশেড দিয়ে উপরে উঠেছি”

অরিন কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে বলল,,,“এইটা কেমন বাচ্চাদের কাজ বলুন তো। এখনই বাড়িতে যান। এরপর থেকে এরকম আর করবেন নাহ”

ধূসর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো। ধূসরের প্রচন্ড রকমের ভালো লাগলো নিবেদিতার এই শাসন। মিষ্টি শাসন, এখন তাকে সোজা করার জন্য তার নিবেদিতা আছে। ধূসর অরিনের থেকে বিদায় নিয়ে যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই চলে গেলো। অরিন ও ধীর পায়ে নিজের রুমে চলে আসলো। বইখাতা গুছিয়ে নিলো, বাতি নিভালো। মুঠোফোনটির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত তিনটা বেজে গিয়েছে। ধূসর আরো দশ মিনিট আগেই তাদের বাড়ি ছেড়েছে। এতোক্ষণে হয়তো নিজ বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে। অরিন মুঠোফোনটি পাশে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। তখনই মুঠোফোনটিতে টুং করে শব্দ হলো। মুঠোফোনটি হাতে নিতেই চোখে পরলো রুষ্ট পুরুষের একখানা মেসেজ যেখানে লেখা ছিলো,,

“তুমি আমার হৃদয়ে উষ্ণ ফুল নিবেদিতা, যাকে আমি সযত্নে আগলে রাখতে চাই। ঘুমিয়ে পরো শুভ রাত্রি”

#চলবে~