প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-২২

0
161

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২২

আকাশে ঘনকালো মেঘ। বৃষ্টি নামবে হয়তো। ধূসর তৈরি হচ্ছে। ও বাড়িতে যাবে সে আজ। আজ গিয়ে দেখা করে আসবে। এরপর খুব শীঘ্রই তার একমাত্র বউকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরবে। ধূসর আজ এক মাসের ও বেশি সময় পর নিজের বাড়িতে ফিরবে। কি হয় কে জানে! তার মা হয়তো ভীষণ অভিমান করেছে। তবে সেই বা কি করবে। তার বউয়ের যে সে ছাড়া আর কেউ নেই। তাকে সেই মুহুর্তে সামলানোটা বেশি জরুরি ছিলো। ধূসর তৈরি হয়ে নিবেদিতা বলে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো। অরিন রান্নাঘর ছেড়ে ছুটে আসলো। অরিন ভেবেছে ধূসরের বোধ হয় কিছু লাগবে। ধূসর অরিনকে রুমে প্রবেশ করতে দেখেই টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।অরিন প্রথমে ভড়কে যায়। অতঃপর বুঝতে পারে ধূসরের মাথায় দুষ্টমি ঘুরছে।

“ধূসর ছাড়ুন হায়াত চলে আসতে পারে”

“নিবেদিতা কেউ আসবে না। দেখো রুমের দরজা বন্ধ করা। আমার ভীষণ আদর আদর পাচ্ছে এই জন্য তোমায় ডেকে আনলাম। ছটফট করো না তো। একটু শান্ত ভাবে দাঁড়াও তো।”

“ধূসর আপনি দিন দিন অনেক বেশি অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন। ছাড়ুন। রান্না করতে হবে। আপনি এমন ভাবে ডেকেছেন আমি ভেবেছি কিছু লাগবে আপনার। এমন করবেন জানলে জীবনেও আসতাম না”

“তুমি আমার কাছে আসতে বাধ্য নিবেদিতা। তুমি আমার শুধু আমার। অন্য কারো হওয়ারও চেষ্টা করো না মেরে ফেলবো। তুমি যেখানেই যাও না কেনো ঘুরে ফিরে আমার খাঁচাতেই বন্দি তুমি বউ”

ধূসর কথাগুলো বলে অরিনের নাকের সাথে নিজের নাক ঘষলো। অরিন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে। মানুষটার চোখে তার জন্য আকাশসম ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে। যার শেষ নেই। ধূসর বা হাতে অরিনের মুখে পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে বলল,,,
“এই যে ম্যাডাম এতো ভাববেন না। পাগল হয়ে যাবেন। আমার ভালোবাসার গভীরতা প্রখর নিবেদিতা। আকাশ যেমন অন্তহীন, আমার ভালোবাসাও তেমন অন্তহীন। দুটোরই শেষ নেই”

“এতো ভালো কেনো বাসেন?”

“জানলে বোধ হয় ভালো হতো। তবে আমি জানি না কেনো তোমায় এতো ভালোবাসি আমি। তবে ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি। বউ তোমাকে একদিন আমার ভালোবাসার গভীরতা বোঝাবো বুঝেছো তো?”

ধূসর শেষের কথাটা বলে চোখ মারলো অরিনকে। অরিন মানে বুঝতে পেরে ভীষণ লজ্জা পেলো। লজ্জায় গালদুটো হালকা গোলাপী বর্ণ ধারণ করলো। ধূসর টুপ করে অরিনের ডান গালে অধর স্পর্শ করলো। অরিন চমকে উঠলো ধূসরের এরূপ কাজে।চোখ বড় বড় করে ধূসরের দিকে তাকিয়ে রইলো। ধূসর ঠোঁট কামড়ে হাসলো। বাম গালেও অধর স্পর্শ করলো ধূসর। অরিন স্থির হয়ে রইলো। ধূসর মুখটা অরিনের কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,,
“এটুকুতেই আপনার হয়ে গেলো বউ। তো পুরো আমি তাকে কিভাবে সামলাবেন আপনি?”

অরিনের এবার লজ্জায় কান দিয়ে ধোঁয়া বেরনোর উপক্রম। ধূসর ইচ্ছে করে লজ্জা দিচ্ছে তার নিবেদিতাকে। নিবেদিতার লজ্জায় রাঙা মুখ খানা দেখতে তার ভীষণ ভালো লাগে। তার লজ্জাবতী লতা। লজ্জায় নাকটা কেমন লাল বর্ণ ধারণ করেছে। ধূসর বা হাতে অরিনের মুখ খানা তুলল। অরিন আঁখি জোড়া ততক্ষণে বন্ধ করে নিয়েছে। নাকে টুপ করে এক খানা চুমু দিয়ে ছেড়ে দিলো। অরিন তখনো আগের ন্যায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধূসর শব্দ করে হেসে ফেললো। অরিন অসভ্য বলে ছুটে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। ইশ কি লজ্জা। এতো লজ্জা কোথায় রাখবে সে। তার রুষ্ট পুরুষ ও দিন দিন অসভ্য হয়ে উঠছে।

অরিন রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভাবছিলো। আনমনে ডান হাতটা বামগালে চলে গেলো। এখনো মনে হচ্ছে ধূসরের স্পর্শ লেগে আছে। অরিন এসব ভাবা বন্ধ করলো। এখন রান্না করতে হবে। অরিন দ্রুত এক গ্লাস দুধ নিয়ে হায়াতের রুমে আসলো। মেয়েটা পড়ছে। অরিন দুধের গ্লাসটা টেবিলে রেখে বলল,,,

“খেয়ে নে হায়াত। আর অনেক পড়েছিস এখন উঠ। যা তোহার কাছ থেকে ঘুরে আয়। এরপর এসে দুপুরে খাবি।”

“আরেকটু পড়ি?”

“একটু ও না আর। চল উঠ আগে শেষ কর এটা। এরপর তোহার বাড়ি”

হায়াত মাথা নাড়ালো। দুধ টুকু খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। হায়াত বের হতেই অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেয়েটা সব কিছিু ভুলতে সারাটা সময় বইয়ের মাঝে ডুবে থাকে। অরিন রান্না ঘরে গিয়ে রান্নার জিনিস গোছাতে শুরু করে। ধূসর তৈরি রুম থেকে বের হলো। অরিন বুঝলো ধূসর বের হবে। তবে সামনে যেতে লজ্জা লাগছে। ভীষণ লজ্জা লাগছে একটু আগের কাহিনীর কারণে। কি কান্ডটাই না করলো ছেলেটা। ধূসর বুঝলো তার বউয়ের না আসার কারণ। নিঃশব্দে হাসলে। এরপর উঁচু গলায় ডেকে উঠলো নিবেদিতা বলে। অরিন থতমত খেয়ে দৌড়ে গেলো ধূসরের কাছে।

“কি হয়েছে? এভাবে ডাকছেন কেনো?”
“আমি বের হচ্ছি এখন আর তোমার মুখ খানা না দেখে কীভাবে বের হই বলো তো?”
“আচ্ছা দেখেছেন? এবার যান। সাবধানে যাবেন। আর তাড়াতাড়ি ফিরবেন দয়া করে”

ধূসর তার নিবেদিতাকে হালকা করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,,,“আমি ফিরবো তো পাগলি দ্রুত ফিরবো। আম্মু ডেকেছে না গিয়ে কি করে থাকি এরপর একে বারে তোমায় নিয়ে যাব ও বাড়ি। সাবধানে থেকো আর হায়াতের খেয়াল রেখো আসছি বউ”

ধূসর বেরিয়ে গেলো কথাটা বলে। অরিন মৃদু হেসে দরজা আটকে নিজের কাজে মন দিলো। অনেক কাজ। মাকে মনে পরলো। তবুও নিজেকে সামলালো। এখন হায়াতকে সামলাতে হবে। সে ভীষণ চিন্তিত মেয়েটাকে নিয়ে। হোস্টেলে থাকতে তো মনে হয় পারবে না কি করবে সে! কাজ করতে করতে ভাবতে লাগলো সামনে কি করবে সে।

ধূসর বাড়ি থেকে বাইক নিয়ে বের হয়ে সোজা তাদের আড্ডার জায়গাতে চলে আসলো। চায়ের দোকানের সামনেই উমেদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধূসর তার দিকে গিয়ে থামলো। উমেদ ধূসরকে বলল,,,

“তো কেমন আছিস? দিন কাল কেমন চলছে। ভাবি তো মনে হয় অনেক আদর যত্ন করছে”
“দূর ওসব বাদ দে। তোর অবস্থা কি?”
“আমার আর অবস্থা। তুমি মতো তোমার বউকে কাছে পাচ্ছো আর আমি! তাকে দেখার সুযোগ ও নেই। সে তো আমায় চেনেই না ঠিক মতো। কবে যে পাবো তাকে”
“পাবি পাবি ধৈর্য ধর। অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়।”
“তুই বলেছিলি অরিনকে?”
“হ্যাঁ তবে ও এখন রাজি নয়। আর আসলেই হায়াত অনেক ছোট সংসার জিনিসটা সামলানোর বয়স ওর হয়নি। ও আরেকটু বড় হোক এরপর না হয় সব দেখা যাবে।”

উমেদ সম্মতি জানালো। আসলেই মেয়েটা অনেক ছোট সংসার জিনিসটা তার কাঁধেনা চাপানোই ভালো। আর সে ওতোটাও সাধু পুরুষ নয় যে বউকে সামনে রেখে নিজেকে সামলে রাখবে। এর থেকে অপেক্ষা ভালো। অপেক্ষায় থাকলো তার প্রাণনাশিনীর বড় হওয়ার। ধূসর উমেদকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। আজ কত দিন পর সে বাড়ি ফিরছে। আচ্ছা মা তাকে দেখে কি খুব বকবে। কে জানে! বাড়ির সামনে আসতেই উমেদ বলে,,,
“অস্বস্থি রাখিস না মনে। ভেতরে যা”

ধূসর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। বুক ধুকপুক করছে। একটা মাসের ও বেশি এ বাড়িতে সে আসে না। অস্বস্তি হচ্ছে সত্যি। বাবা কি বলবে? চাচা চাচি সবাই। ইশ কি করবে সে। আগে তো এমন হয়নি। তবে আজই কেনো। নিজেকে ঠিক করে ভেতরে প্রবেশ করলো ধূসর। দরজা খোলাই ছিলো। হয়তো কেউ বের হয়েছে বা বাগানের দিকটায় আছে। ধূসর বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই সোফাতে নিজের মাকে বসা দেখতে পেলো। কত দিন পরে দেখছে নিজের মাকে।

#চলবে~