প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-০১

0
129

প্রিয় মন্ত্রী মশাই (সূচনা পর্ব)
#আহিয়া_শিকদার_আহি_শ্যামাপাখি
#আহিয়া_শিকদার_আহি
#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই

” আমি আপনাকে ভালবাসি মন্ত্রী মশাই , ভালোবাসি আপনাকে। এই শুভ্রা ভালোবাসে আপনাকে, বড্ড বেশি ভালোবাসে।”

তড়িৎগতিতে পিছোন ফিরে তাকায় মন্ত্রী আরহাম শিকদার। দৃষ্টিতে আবদ্ধ হয় একজন শাড়ি পরিহিতা রমনী। তার থেকে কয়েক হাত দূরে অবস্থান রমনীটির। মুখে মাস্ক থাকার দরুন স্পস্ট ফুটে উঠেছে তার ডাগর ডাগর আঁখি জোড়া। মুখের সামনে লেপ্টে আছে কয়েকটা অবাদ্ধ চুল। পরোনে কালো শাড়ি, খোঁপা করে রাখা চুলে বেলি ফুলের গাজরা,হাত ভর্তি কালো চুড়ি।

বিরোধী দলকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন আরহাম শিকদার। উহু শুধু আরহাম শিকদার নয় এখন তার নামের সাথে জুরেছে ‘মন্ত্রী’ শব্দটি।
উজ্জ্বল শুভ্র ,৬’২ ফুট উচ্চতার এই সুঠামদেহী যুবকের জন্য কতো নারী পাগল সে কি জানে? বর্তমান তরুণ তরুণীদের গর্ব সে। হবেই বা না কেনো , মাত্র ৩১ বছর বয়সে একজন মন্ত্রী সে।

কিছুক্ষণ আগেই নির্বাচনের ফলাফল জানার পর হইহুল্লোরে মেতে উঠেছিল তার দল।বিরক্ত সে এসবে। মাথার পিছনে ঝুটি করে রাখা চুল গুলো আলতো হাতে স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে পরে সে। উদ্দেশ্য বাড়িতে যাওয়া। ঠিক তখনি কর্ণগোচর হয় নারী কন্ঠটি।

উপস্থিত সকলেই হতবাক। মন্ত্রী আরহাম শিকদার মেয়েদের স্বপ্নের পুরুষ এতে কোনো সন্দেহ নেই কারোর। তাই বলে এরকম জনসম্মুখে এমন কিছু কেউ বলবে তা কল্পনারও বাইরে। যার সামনে সকলের হাত পা কাঁপে তাঁর সামনে কীভাবে এই রকম বাক্য উচ্চারণ করতে পারলো? সকলেই একবার মন্ত্রী আরহাম শিকদার এর দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার রমনীটির দিকে।
মন্ত্রী আরহাম শিকদার এর শান্ত দৃষ্টি যে কোনো ভয়ঙ্কর কিছুর আগাম সংকেত তা ভালো করেই বুঝতে পারছে সকলে।

” এই মেয়ে কি বললে এখনি তুমি ?”

“ভালবাসে মন্ত্রী মশাই ,এই শুভ্রা আপনাকে ভালোবাসে”

নিজের দিকে ইশারা করে বললো শুভ্রা। তাকিয়ে আছে সে তার সামনে থাকা সুদর্শন পুরুষটির দিকে।

আরহাম শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্রার চোখের দিকে।অবাক সে, যার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও মানুষের হাঁটু কাপে তার দিকেই এই মেয়ে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে। নিজ মনে শুভ্রাকে ‘অসভ্য মেয়ে’ হিসেবে ভেবে নেয় সে। উপস্থিত সকলের নজর তাদের দিকে।

শুভ্রার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী অদিতি।
অদিতি বার বার খোঁচাচ্ছে শুভ্রাকে। চুপ করতে বলছে তাকে।অদিতির হাত পা কাপছে। কখন যে কি হয় তাদের সাথে। তার সামনে যে সয়ং মন্ত্রী আরহাম শিকদার দাড়িয়ে আছে।

শুভ্রা আর পারলো না বান্ধবীর খোঁচা সহ্য করতে । একটু চিৎকার করে সে বলে উঠে,

” কি সমস্যা তোর অদিতি। দেখছিস মন্ত্রী মশাইকে মনের কথা জানাচ্ছি তাহলে কেনো বার বার খোঁচাচ্ছিস? চুপ চাপ দাড়িয়ে থাক। নাহলে কানের নিচে মারবো একটা যে নিজের প্রেমিকের চোদ্দগুষ্ঠীর নাম ভুলে যাবি। আহাম্মক কোথাকার। একদম জালাবি না।”

কাশি উঠে যায় অদিতির। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার জানায় সে। কোন আক্কেলে এই নির্লজ্জ মেয়েকে ও থামাতে গিয়েছিল। শুভ্রা যে নির্লজ্জ তার তো জানা ছিল।

আরহাম অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্রার দিকে।

” কি মন্ত্রী মশাই ওভাবে কি দেখছেন?নির্লজ্জ ছেলেদের মতো একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো?এই আপনি না মন্ত্রী। জনগণের সামনে একটা মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন লজ্জা করছে না আপনার। যদিও তাকাতেই পারেন। আমি তো আপনারই। তবে অন্য কোনো মেয়ের দিকে এভাবে যেনো তাকাতে না দেখি। তাহলে চোখ তুলে ফেলবো আপনার সাথে যার দিকে তাকাবেন তার ও। মনে থাকে যেন আমার কথা। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। দাদুন এর ঔষধের সময় হয়ে গেছে, ওনাকে খাওয়াতে হবে। তাই এখন আসছি। রাতে ফোন করবো আপনাকে। তখন না হয় আপনিও বলে দিয়েন ‘ ভালোবাসি শুভ্রা ‘ । ফোনে বলতে না চাইলে কালকে আপনার সমাবেশ এর বাইরে থাকবো আমি তখন বলে দিয়েন সামনা সামনি। এখন আসি । এই যে ফাহিম ভাইয়া তোমার মন্ত্রীকে নিয়ে বাসা যাও। ওনার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।”

একনাগাড়ে কথা গুলো বলে অদিতির হাত ধরে হাটা শুরু করে শুভ্রা। পিছনে যে কতো গুলো মানুষ তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা নিয়ে ভাবান্তর হলো না তার।

মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না আরহামের। মস্তিষ্ক যেনো কিছুক্ষণের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তার। ভাবতে পারছে না সে। একটা মেয়ে তাকে এভাবে বললো।

আরহামের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলো তার ডান হাত ফাহিম। সে এতক্ষণ শুভ্রাকে পর্যবেক্ষণ করছিল।

” আল্লাহ্, এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। এখন ভাইয়ের হাত থেকে কে ওকে বাঁচাবে। শুভ্রা রে তুই শেষ। কতো করে তোকে বুঝালাম ভাইয়ের আশা করিস না কিন্তু তুই কি করলি সরাসরি ভালোবাসি বললি। এখন তোকে ভাইয়ের হাত থেকে কে বাঁচাবে বোন। আরো যদি ভাই জানতে করে তুই আমার চাচাতো বোন তাহলে আমাকেই না আবার উল্টো ঝুলিয়ে রাখে। তোকে বলেছিলাম ভাইয়ের সম্পর্কে সব। তবুও পাকনামি করলি তো এখন বুঝবি ভাই কি জিনিস। ভাগ্যিস কিছুক্ষণ আগেই সাংবাদিকদের বিদায় করা হয়েছিল। নাহলে এখনি খবরের কাগজের সেরা খবর হতো’ মন্ত্রী আরহাম শিকদার কে একটি মেয়ে সকলের সামনে প্রেম নিবেদন করেছে’ কি ভয়ংকর ব্যাপার ”

ফাহিমের ভাবনার মাঝেই আরহামের গম্ভীর কন্ঠস্বর কানে আসে। হকচকিয়ে যায় ফাহিম। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে থাকে।

” মেয়েটার পুরো পরিচিতি চাই আমার। আজকে সন্ধ্যার মধ্যে।মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগলো”

শুকনো ঢোক গিললো ফাহিম। সে কিভাবে বলবে মেয়েটা আর অন্য কেউ নয় আমার একমাত্র নির্লজ্জ চাচাতো বোন।কিন্তু মনের কথা মনেই রয়ে গেলো । মুখে আর প্রকাশ করলো না। অতঃপর আরহামের কথায় হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো সে।

আরহাম আর কিছু না বলেই গাড়িতে উঠলো সাথে ফাহিম ও উঠলো। গাড়ি চলতে শুরু করল শিকদার ভিলার দিকে। পিছনে আরো কয়েকটা গাড়ি। সেখানে রয়েছে তাদের দেহরক্ষী।
উপস্থিত জনগণ শুধু দেখেই গেলো আরহাম আর শুভ্রার কাহিনী। কানাঘুষা চলছে সকলের মাঝে।

___________

” দাদুন ,দাদুন,দাদুন, আমি বলতে পেরেছি ওনাকে। তোমার নাতনি বলতে পেরেছে দাদুন।”

খান বাড়ির সকলে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্রার দিকে। এই মেয়ে যে নির্লজ্জ তাতো জানে তারা। তাই বলে এভাবে সকলের সামনে। শুভ্রার দিদুন আনোয়ারা খান একবার নিজের স্বামীর দিকে তাকাচ্ছে তো আর একবার শুভ্রার দিকে।

” শুভ্রা থাম। তোর কি লজ্জা সরম কিছুই নেই। দেখছিস এখানে তোর চাচা,বড়বাবা সকলে আছে তবুও?”

” তাতে কি হয়েছে?”

শুভ্রার জবাবে বিরক্ত হলেন আনোয়ারা খান। এই মেয়েকে কোনো কিছু বলে লাভ নেই। একদম বাবার মতো হয়েছে, নির্লজ্জ।ছেলের কথা মনে পরতেই চোখ জোড়া ভিজে উঠে আনোয়ারা খানের। শুভ্রা দেখলো। জড়িয়ে ধরলো সে তার দিদুন কে।

” কি হয়েছে দিদুন?”

” তুই তোর বাবার মতো হয়েছিস শুভ্রা। তোর মধ্যে আমি আমার ছেলের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।”

বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন আনোয়ারা খান। উপস্থিত সকলে এতক্ষণ হাসি মজা করলেও কেমন যেন নিরব হয়ে গেলো। শুভ্রা নিজেও কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলো। অতঃপর নিজেকে স্বাভাবিক করে মুখে সেই মনোমুগ্ধকর হাসি ফুটিয়ে সকল কে উদ্দেশ্য করে বলল,

” কি হলো, সকলে এমন চুপচাপ হয়ে গেলে কেনো। ধুর ভালো লাগে না। কোথায় তোমাদের বাড়ির মেয়ে আজকে তার মনের মানুষকে তার মনের কথা জানিয়ে এসেছে জেনে খুশি হবে তা না করে মুখ এমন বাংলার পাঁচ করে রেখেছো। এটা কিন্তু ঠিক না”

লজ্জায় কেউ আর সেখানে থাকলো না। উঠে চলে গেলো নিজ নিজ ঘরে। শুধু বসে রইলেন শুভ্রার দাদুন ইশতিয়াক খান। সারাদিনের সকল ঘটনা বলতে শুরু করলো শুভ্রা তার দাদুনকে, তিনিও মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন নাতনীর কথা। পরিবারে আর কোনো মেয়ে না থাকার দরুন সকলের চোখের মনি সে।
_____

#চলবে