গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যা: ১০
লেখিকা: #আহিয়া_শিকদার_আহি
_______________
বালিশের কাছে রাখা ফোন হঠাৎ কর্কশ শব্দে বেজে উঠল পরপর দুবার। ঘুম কিছুটা হালকা হয়ে যায় শুভ্রার। বালিশ দিয়ে কান চেপে আবারও ঘুমের রাজ্যে পারি জমায়। কিন্তু নাহ্, ফোনটা বোধয় আজকে শপথ করেছে শুভ্রার ঘুম ভাঙিয়েই ছাড়বে তাইতো আবারো কর্কশ শব্দে বেজে উঠল। এবার রেগে যায় শুভ্রা। কানে চেপে রাখা বালিশটা ছুঁড়ে মারে বিছানার একপাশে। কলের অপর পাশের মানুষটির উপর বেশ রেগে যায়। কে ফোন করেছে না দেখে কল রিসিভ করে।
” কে রে তুই? এখান থেকে মারবো একটা যে সোজা গোবরে গিয়ে পরবি। তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি যে এভাবে আমার সাধের ঘুমটা ভাঙালি?কতো সুন্দর আমার মন্ত্রী মশাইকে নিয়ে নাতি-নাতনিদের সাথে গল্পঃ করছিলাম। দিলিতো বারোটা বাজিয়ে।”
বলেই কল কেটে দেয় শুভ্রা। আবার শুয়ে পরে।
________
আরহামের দৈনিক রুটিন অনুযায়ী সে প্রতিদিন ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে। তারপর টানা এক ঘন্টা শরীরচর্চা করে শাওয়ার নিয়ে বেলকনিতে চলে যায় নিজের পছন্দের গাছ গুলোর কাছে।
নিজের প্রিয় কালো গোলাপের সারিতে একটা ছোট চারা নেই দেখে ভ্রু কুচকে যায় তার। প্রথমে ভাবে হয়তো যে কয়টা আছে সে কয়টাই। কিন্তু নিজের তৃক্ষ্ণ মস্তিষ্ক তা আর হতে দিলো না। তাকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে এখানে ছোট একটি কালো গোলাপ চারা নেই।
ঘরে ফিরে আসে আরহাম। ঘরে থাকা হিডেন ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে শুরু করে। নজরে পড়ে তার ঘরে প্রবেশ করা অসভ্য মেয়েটাকে। আশ্চর্য হয় আরহাম। তার ঘরের পাসওয়ার্ড এই মেয়ে জানলো কিভাবে? সে ছাড়া এই ঘরের পাসওয়ার্ড আর কেউতো জানে না।
তাকায় একবার তার ড্রেসিং টেবিলের দিকে। এই জন্যই পারফিউমটা নিজের অবস্থানে ছিলো না। নিজের ছবিতে শুভ্রাকে চুমু খেতে দেখে কিছুটা অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করে সে। মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে আরহামের ভিতর। বুঝতে পারছে না এখন তার ঠিক কি করা উচিত? এই মেয়ের সাথে অসভ্য নামটার একদম মিল খুঁজে পাচ্ছে।
শুভ্রাকে গাছের চারাটি নিতে দেখে রেগে যায় আরহাম।
কোনো কিছু না ভেবেই নিজের ফোন ঘেটে ‘অসভ্য মেয়ে’ দিয়ে সংরক্ষিত করা নাম্বারটিতে কল দেয়।
প্রথম বার রিসিভ না করায় আরো রেগে যায় আরহাম। দ্বিতীয়বার ও একই। রাগের মাত্রা ক্রমশই বাড়ছে তার। তৃতীয়বারের সময় কল রিসিভ করতে দেখে কিছু বলতেই যাবে তার আগেই শুভ্রার এমন কথা শুনে থ হয়ে যায় আরহাম। সে যে মেয়েদের স্বপ্নের পুরুষ জানা আছে তাই বলে একদম নাতি নাতনির পর্যায়ে চলে গেছে এই মেয়ে। পরক্ষনেই শুভ্রার তুই তোকারি করা মনে পড়তেই আবারো কল দেয়।
________
আবার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় অগ্নিমূর্তি ধারণ করে শুভ্রা। প্রস্তুতি নেয় এবার বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দিবে তার আগেই,
” অসভ্য মেয়ে”
কথাটা কর্নোগোচর হতেই লাফিয়ে উঠে শুভ্রা। চোখে লেগে থাকা ঘুম এক ছুটে জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে তাকায় ফোনের স্ক্রিনের দিকে। ‘প্রিয় মন্ত্রী মশাই’ নামটা দেখে হা হয়ে যায় মুখটা। কিছু সময় আগের কথা মনে পড়ে শুভ্রার। তখন তো ঘুমের ঘোরে যা মুখে এসেছে তাই বলেছে। তখন কি মন্ত্রী মশাই তাকে কল দিয়েছিল? ভাবতেই জীবন যায় যায় অবস্থা শুভ্রার।
অপর পাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে রাগ তর তর করে বাড়ছে আরহামের।
” কথা কানে যাচ্ছে না , অসভ্য মেয়ে”
চিল্লিয়ে বলে আরহাম। শুভ্রার মনে হচ্ছে এক্ষনি তার কান ফেটে যাবে। সে কি কানে শুনতে পায়না নাকি যে এভাবে চিৎকার করে বলতে হবে। সব ভাবনা চিন্তা একপাশে রেখে দিয়ে কন্ঠে কিছুটা রাগ প্রকাশ করার চেষ্টা করে।
” এই আপনি কাকে অসভ্য মেয়ে বলছেন?”
” একদম কথা বাড়াবে না। কোন সাহসে আমার ঘরে ঢুকেছিলে?আমার ঘরের পাসওয়ার্ড জানলে কিভাবে তুমি?”
অবাক হয় শুভ্রা। মন্ত্রী মশাই জানলো কিভাবে? তখন তো মন্ত্রী মশাই বাড়িতে ছিল না। আর আসার সময় বার বার শিকদার বাড়িতে বলে এসেছে সে যে এসেছিল মন্ত্রী মশাই যেনো না জানে। তবুও কি কেউ বলে দিয়েছে নাকি?
“আমি আপনার ঘরে কিভাবে যাবো? আজব মানুষতো আপনি।”
” এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবো অসভ্য মেয়ে। আমাকে কি তোমার ছোট বাচ্চা মনে হয়। তোমার সাহস হলো কিভাবে আমার গাছ নিয়ে যাওয়ার। তোমার বাড়িতে কি পারফিউম নেই নাকি যে আমার পারফিউম ব্যবহার করেছো? আর আমার ছবিতে,,,”
থেমে যায় আরহাম।এদিকে শুভ্রা মুখ টিপে হাসছে।
” আপনার ছবিতে কি মন্ত্রী মশাই?”
“অসভ্য মেয়ে। তোমাকে যেগুলো জিজ্ঞেস করলাম তার উত্তর দেও।”
” আমি বাধ্য নই ”
” অবশ্যই তুমি বাধ্য। কারোর অনুমতি ছাড়া যে তার ঘরে ঢুকতে নেই জানো না তুমি।ঢুকেছো তো ঢুকেছো আবার চুরিও করেছো।”
” অনুমতি নিতে হবে কেনো? আমি আমার জামাইয়ের ঘরে ঢুকেছি তাতে আবার অনুমতি নেওয়ার কি আছে। আর আপনি চোর কাকে বলছেন? আমার জামাইয়ের গাছ আমি নিয়েছি।”
” চুপ, অসভ্য মেয়ে। তোমার আর আমার বয়সের পার্থক্য জানো তুমি? এক থাপ্পড়ে সিধে করবো তোমাকে। ”
” তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনি আমার বড় জন্যে আমাকে গ্রহণ করছেন না। মানে আপনিও আমাকে ভালোবাসেন। তাই হয়তো অজুহাত খুঁজছিলেন কিভাবে আমার সাথে কথা বলা যায়।”
থতমত খেয়ে যায় আরহাম। কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে গেলো এই মেয়ে। এখন আরও কিছু বললে না জানি কোথায় নিয়ে যাবে। শত রাগ থাকা সত্ত্বেও কল কেটে দেয় আরহাম। পরে দেখে নিবে এই মেয়েকে। মন্ত্রী আরহাম শিকদারের সাথে অসভ্যতামি হারে হারে বুঝাবে এর ফল।
এতো কিছুর মাঝে আরহাম বুঝতেই পারলো না শুভ্রা কিভাবে পাসওয়ার্ডের কথা কাটিয়ে দিলো।
শুভ্রা ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। মন্ত্রী মশাইকে জব্দ করে তার বেশ ভালো লাগছে। এখন আরামের ঘুম ঘুমানো যাবে। যেহেতু আজকে ভার্সিটি ছুটি।
___________
” এমন করে বসে আছো কেনো?”
” তো কি করবো? তোমার একমাত্র গুণধর ছেলের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী সেই একমাস থেকে মেয়ে খুঁজে যাচ্ছি কিন্তু কারোর সাথে মিলছেই না। আরে বাবা আরহাম যদি মেয়েটাকে পছন্দই করে তাহলে ভালোভাবে বললেই তো হয়। এভাবে আমাকে ঘোরানোর কোনো মানে হয়।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নীলিমা শিকদার আর আসাদ শিকদার। সকালের খাবার টেবিলে বসেছেন তারা।
” আমরা মনে হয় আর নাতি নাতনির মুখ দেখতে পারবো না।”
কাদো কাদো কন্ঠে বললেন নীলিমা শিকদার। তার সাথে তাল মিলালেন আসাদ শিকদার। রাইমা মাথা নিচু করে আছে। কোনোভাবে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।আজমল শিকদারের অবস্থাও রাইমার মতো।
নীলিমা শিকদার এবার কেঁদে উঠলেন। বিলাপ করতে শুরু করলেন , তার একমাত্র ছেলে কেনো এখনো বিয়ে করছে না?
আরহাম তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।তার রাগ বেড়েই চলছে। একদিকে শুভ্রার উপর রাগ আরেকদিকে মায়ের এমন কান্না সহ্য করতে পারলো না। টেবিলে স্বজোরে আঘাত করলো। কেঁপে উঠলো সকলে।
আরহামের রক্তবর্ণ ধারণ করা চোখ দেখে রাইমা প্রায় কেঁদেই ফেলেছে।
” ব্যাস অনেক হয়েছে তোমাদের এসব কাহিনী। বিয়ের ব্যবস্থা করো। নাতি-নাতনি দেখার শখ তোমাদের তাইনা। পুরো একটা ফুটবল টিম তোমাদের এনে দিব। যাকে ইচ্ছা তাকেই ছেলের বউ বানানোর প্রস্তুতি নেও কিন্তু আগামী শুক্রবারের মধ্যে সব কিছু যেনো শেষ হয়ে যায়।”
বলেই গট গট পায়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে আরহাম। সকলেই অবাক হয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
সকলেই একবার নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে হেসে উঠে। রাইমা বলে,
” যা ভেবেছিলাম এতো দেখি তার চেয়েও ভালো কিছু হলো।”
____________
রেজাউল চৌধুরী আজকে আবার সেই বাড়িতে এসেছেন।
কিন্তু আজকে আর সেদিনের মতো হলো না। তিনি ভিতরে ঢুকে সোফার উপর বসে থাকতে দেখলেন যুবকটিকে।
” কাজ কতদূর এগোলো?”
” সে আমার শিকার। আপনাকে বলতে বাধ্য নই।”
“তোমার শিকার?”
” হ্যাঁ আমার শিকার। আপনার চিন্তা করতে হবে না খুব শীঘ্রই তাকে সরিয়ে ফেলবো।”
রেজাউল চৌধুরী তাকান যুবকটির দিকে। যুবকটির ঠোঁটে লেগে থাকা বাকা হাসি চোখের আড়াল হলো না তার। বুঝতে পারলেন না তিনি কিছুই। আর কিছু সময় ব্যয় করে চলে গেলেন তিনি।
” আমার শিকার ও আমার শিকার। অন্যকেউ চোখ তুলে তাকালে মেরে ফেলব।”
অট্টহাসিতে মেতে উঠে যুবকটি। ফোনের গ্যালারি থেকে বের করে একজনের ছবি। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছবিটির দিকে। যুবকটির ঠোঁট জোড়া অনবরত নড়ছে। কিছু একটা বিড়বিড় করছে।
_________
আধা ঘন্টা পরিশ্রম করে শুভ্রাকে ঘুম থেকে জাগাতে সক্ষম হয় রুপন্তি। বেলা ১১ টা বাজে। প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিন শুভ্রাকে এভাবে জাগাতে হয়। তাছাড়া বাকি দিন ঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠে।
” এভাবে ডাকছো কেন ভাবি?”
” কয়টা বাজে জানো?”
” এটা জানার জন্য আমার এতো সুন্দর ঘুমটা ভাঙালে?”
” তোমার না আজকে অদিতিদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল?”
” সেটাতো ১০ টায়। তুমি এতো তাড়াতাড়ি জাগালে কেনো?”
” এখন বেলা ১১ টা বাজে”
লাফিয়ে উঠে শুভ্রা।
” নিচে এক অদিতিরা বসে আছে?”
গলা শুকিয়ে এলো শুভ্রার। তাকে নিশ্চই আজকে ওরা কেটে রোদে শুকোতে দেবে। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দেয়। রুপন্তি হাসে শুভ্রার অবস্থা দেখে। বিছানা গুছিয়ে চলে যায় সে।
________
চলবে,,,