প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-২৪+২৫

0
279

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যাঃ ২৪
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

(পর্বটা ভালোভাবে পড়বেন)

গোলাপ ফুলে সজ্জিত বিছানার ঠিক মাঝে শুয়ে আছে শুভ্রা।পাশেই আরহাম শুভ্রার একহাত নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে আছে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহাম শুভ্রার দিকে। মায়াবী মুখখানা এতটুকু সময়ে শুকিয়ে গেছে। ঠোঁট জোড়া হালকা কালো হয়ে আছে। খোপা করে রাখা চুলগুলো খুলে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।আরহামের চোখ থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে শুভ্রার গালে। ছেলে মানুষের নাকি কাদতে নেই কিন্তু আরহাম কোনোভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আজ আবারও প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয় তার মনে জেঁকে বসেছে। চোখ বন্ধ করে ফেলে আরহাম।চোখের সামনে ভেসে উঠছে তিন বছর আগের সেই কালো অতীত। তার ব্যর্থতা।

“ভাইয়া,তুমি পারোনি আমাকে বাঁচাতে। তুমি ব্যর্থ ভাইয়া ,তুমি ব্যর্থ। জানো ভাইয়া খুব কষ্ট হয় আমার। আমার শরীর খুব জ্বলে ভাইয়া। একটু ঔষধ লাগিয়ে দিবে ভাইয়া। আমিতো সহ্য করতে পারি না। তুমিনা তোমার এই ছোট্ট বোনটার কষ্ট একটুও সহ্য করতে পারো না। আমি মরে যাচ্ছি ভাইয়া। ওরা পুড়িয়ে ফেলছে আমাকে।”

‘নীলা’ বলে চিৎকার করে উঠে আরহাম। ঘর সাউন্ডপ্রুফ হওয়ায় সেই আওয়াজ বাইরে যায় না। সে ব্যর্থ, ভাই হিসেবে সে একজন ব্যর্থ মানুষ। যেই ব্যর্থতা তাকে তিনটা বছর ধরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। কিন্তু স্বামী হিসেবে সে ব্যর্থ হতে চায়না।

আরহাম তাকায় নিজের দিকে। পাঞ্জাবির উপরের দিকের দুটো বোতাম ছিঁড়ে গিয়েছে। গলার কাছে নখের দাগ বসেছে। হালকা রক্ত জমাট বেঁধেছে জায়গাগুলোতে।
________

দীর্ঘ ৩১ বছরের অবিবাহিত জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে একরাশ আশা নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকলো আরহাম। বাড়িতে আসার পর শুভ্রাকে বরণ করে তার ঘরেই রেখে যাওয়া হয়েছে। বন্ধুবান্ধব খুব বেশি না থাকায় ঘরে ঢুকতে অসুবিধা হয়নি। কাজিনদের হাতে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে সে ঘরে ঢুকেছে।ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাড়াতেই তার পাঞ্জাবি দুই হাতে খামচে ধরে শুভ্রা। শুভ্রার হাতের বড় বড় নখ বিধে যাচ্ছে আরহামের শরীরে। তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই শুভ্রার। সাপের মতো ফোস ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ছে সে।ভূত দেখার মতো চোখ বড় বড় করে দেখেছে আরহাম শুভ্রাকে। কোথায় তাকে সালাম করবে তা না করে তার পাঞ্জাবি এভাবে ধরেছে।
শুভ্রাকে ভালোভাবে দেখতেই আরহামের মস্তিষ্ক জানান দেয় শুভ্রা নিজের মধ্যে নেই। শুভ্রাকে দেখে নেশাগ্রস্থ লাগছে আরহামের।

” এতক্ষণ কোথায় ছিলেন আপনি হ্যাঁ কোথায় ছিলেন? ওই নেহার কাছে ছিলেন আপনি? কেনো ছিলেন নেহার কাছে ,কেনো? জবাব দিন। আমাকে ভালো লাগে না আমাকে আপনার? কি নেই আমার মধ্যে? আপনি কেনো যাবেন ওর কাছে,কেনো?আপনি আমায় বলুন আপনি যাননি ওর কাছে। কি হলো বলুন?”

পাগল পাগল লাগছে শুভ্রার। মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। একই সাথে বুকেও ব্যাথা অনুভব করছে।মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ছে। আরহামের পাঞ্জাবি খামচে ধরে মুখস্ত পড়ার মত একই কথা বার বার বলে যাচ্ছে “কেনো গিয়েছিলেন আপনি ওর কাছে?” ।টপ টপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে শুভ্রার। সাধারণের তুলনায় অধিক পরিমাণে লাল হয়ে গিয়েছে চোখ জোড়া। আরহাম ঠাঁই দাড়িয়ে আছে। শুভ্রার প্রতিটা গতিবিধি লক্ষ্য করছে সে। এই আচরণগুলো তার চেনা। তিক্ততায় মোড়ানো অতীতে অরহ বার সে এই আচরণ দেখেছে। অতীতের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে আবারো অন্য কারো মাধ্যমে। যদি তার ভাবনা সঠিক হয় তাহলে আরহাম জানে এখন কি হবে। আরহামের পাঞ্জাবি থেকে শুভ্রার হাতের বাধন আসতে আসতে খুলে যেতে শুরু করেছে। চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসছে শুভ্রার। পরে যেতে নিলেই শুভ্রার নরম কোমল কোমর পুরুষালী হাতে চেপে ধরে আরহাম। শুভ্রা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আরহাম আলগোছে কোলে তুলে নেয় শুভ্রাকে। বিছানায় শুইয়ে দেয়। পাশেই শুভ্রার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে পড়ে সে।

________

নিজেকে শান্ত করে আরহাম ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শুভ্রার শরীর থেকে কয়েকফোটা রক্ত বের করে নেয়। আরহাম শুভ্রার বাম হাতে ইঞ্জেকশন পুস করে তার কিছুটা নিচে আরো একটা ইঞ্জেকজেশন এর চিহ্ন দেখতে পায়। খুব সম্ভবত কিছু সময় আগের হবে। তাইতো হালকা ফুলে উঠেছে।একটা কাচের ছোট্ট শিশিতে ভরে ফোন করে কাউকে। অপরপাশের ব্যক্তির কথা শুনে আরহাম আলগোছে ঘর থেকে বের হয়। বাড়ির বাইরে এসে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার হাতে তুলে দেয় শিশিটা। ছেলেটা চলে যায় শিশিটা নিয়ে।

আরহাম যেভাবে বাইরে বেরিয়েছিল ঠিক সেভাবেই আলগোছে বাড়িতে প্রবেশ করে। সন্তর্পনে নিজের ঘরে ফেরে। বিছানায় শুয়ে থাকা শুভ্রার একপাশে সে নিজেও শুয়ে পড়ে। অন্যদের মতো হয়তো আজকে তারও বাসরটা স্বাভাবিক হতো। ঘরে প্রবেশ করে, ফুল সজ্জিত বিছানায় লাল টুকটুকে শাড়ি পরে একহাত ঘোমটা টেনে লজ্জামাখা মুখে বসে থাকতো তার বউ। আরহামের উপস্থিতি টের পেয়ে হয়তো সালাম করতো। আরহাম বাধা দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিত।হাজারো ভাবনার মাঝে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে আরহাম নিজেও টের পায় না।

________

সকালের স্নিগ্ধ আলোয় চোখ খোলে শুভ্রা। নিজেকে আবিষ্কার করে কারো প্রশস্ত বুকে। ধড়ফড়িয়ে উঠতে নিলে দেখে সে তার মন্ত্রী মশাইয়ের বুকে। স্বপ্ন ভেবে নিজের হাতে চিমটি কাটে শুভ্রা। ব্যাথা পায়। মনে পড়ে মন্ত্রী মশাই এখন তার ব্যক্তিগত পুরুষ। বারান্দার দরজা খোলা থাকায় সকালের মিষ্টি রোদ ভিতরে প্রবেশ করছে। আরহামের মুখের উপর পড়েছে। দেখে মনে হচ্ছে আরহামের মুখশ্রী থেকে আলো ছড়াচ্ছে। শুভ্রা আলতো হাতে স্পর্শ করে আরহামের মুখ। নড়েচড়ে উঠে আরহাম। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুভ্রাকে। ঘোর কাটে শুভ্রার। মাথাটা কেমন ঝিম ধরে আছে।
রাতে তার আর মন্ত্রী মশাইয়ের বাসর ছিল মনে পড়তেই নিজের দিকে ভালোভাবে তাকায় শুভ্রা। নাহ্ কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলো না। রাতে তো সে বিছানায় বসে অপেক্ষা করছিল আরহামের। তারপর কি হয়েছিল কোনোভাবেই মনে করতে পারছে না। মনে করতে গেলেই মাথায় ব্যাথা অনুভব করছে। শুভ্রা ভাবে হয়তো কালকে সারাদিনের অতো ধকলের কারণে এমন হচ্ছে।সাবধানতার সাথে আরহামের হাতের ভিতর ঠিক বের হয় শুভ্রা। আরহামের এতো সুন্দর ঘুম কোনোভাবেই ভাঙাতে চাইছে না সে। কাবার্ড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হলে হয়তো কিছুটা হালকা লাগবে। শুভ্রার যাওয়ার পরে পরেই চোখ খোলে আরহাম। সে এতক্ষণ জেগে ছিল। মৃদু হেসে আবারো চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।

শাওয়ার নিয়ে লাল রঙের হালকা কাজ করা শাড়ি পরে বের হয় শুভ্রা। শাড়ি পরতে তার কোনো অসুবিধে হয় না। অভ্যাস আছে। বেলকনিতে টাওয়াল মেলে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে বসে। আয়নায় ভালো করে নিজেকে দেখছে আর গতকাল রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করছে।

গতকাল রাতে,
বাড়িতে আসার পর আরহামের মা চাচিরা মিলে তাদের বরণ করে ভিতরে প্রবেশ করায়। এর মধ্যে আরহামের কাজিনরা মিলে শুভ্রাকে ঘরে নিয়ে যায়। ঘরে ঢোকা মাত্রই থমকে যায় শুভ্রা। সে যেভাবে কল্পনা করেছিল তার থেকেও কয়েকগুণ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। বিছানার মাঝে গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে লাভ সেপ তৈরি করা। তাছাড়া ড্রেসিং টেবিল থেকে শুরু করে সব জায়গায় ক্যান্ডেলের সাথে গোলাপের সমাহার। সবাই মিলে শুভ্রাকে বিছানার মাঝে বসিয়ে দেয়। আরহামের কাজিন বোনেরা বিবাহিত হওয়ায় নানান রকম লজ্জা দিতে শুরু করে শুভ্রাকে।একেকজনের একেকরকম লাগামহীন কথা শুনে কান গরম হয়ে যায় শুভ্রার। মনে হচ্ছে এখনি কান দিয়ে ধোয়া বের হবে।অসস্তি শুরু হয় তার। পাশে বসা রাইমার হাতের উপর হাত রেখে শুভ্রা। রাইমা বুঝতে পারে শুভ্রার অবস্থা। সে কোনরকমে সবাইকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। শুভ্রাকে ইশারা করে যায় সবাইকে বাইরে রেখে সে আসছে। শুভ্রা সম্মতি জানায়। কাজিনদের মধ্যে কেউ কোনোদিন আরহামের ঘরে প্রবেশ করার সাহস পায় নি। তাছাড়া সব সময় লক করা থাকে। আজকে যখন সুযোগ পেয়েছে কিছুতেই তারা বের হতে চাচ্ছে না। রাইমা অনেক কষ্ট তাদের নিয়ে বের হয়। সবাই যাওয়ার পর শুভ্রা বড় একটা নিশ্বাস ছাড়ে। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তার। ভীষণ লজ্জা করছে তার। কল্পনায় আরহামকে নিয়ে নানান রকম স্বপ্ন সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে নেহা প্রবেশ করলো ঘরে। চারিদিক ভালোভাবে দেখে নিলো নেহা। ধীর পায়ে শুভ্রার কাছে গিয়ে বসলো। পাশে কতো উপস্থিতি টের পেয়ে শুভ্রা তাকায় সেদিকে। নেহাকে দেখে লজ্জারাঙ্গা মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার।বিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোথাও দেখেনি নেহাকে। রাইমা আর অদিতি স্টেজে বলেছিল নেহা বিয়েতে উপস্থিত ছিল না। নেহা ঈর্ষাত্মক দৃষ্টিতে দেখে শুভ্রাকে। মেয়েটা তার থেকেও সুন্দর। এইজন্যই বুঝি আরহাম এই মেয়েকে বিয়ে করেছে। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় নেহার।

“আমি নেহা। আরহামের কাজিন।”

আরহাম কমপক্ষে হলেও নেহার থেকে পাঁচ ছয় বছরের বড় হবে। তাহলে এভাবে নাম ধরে ডাকবে কেনো?

” আপু আমি যতদূর জানি আপনি মন্ত্রী মশাইয়ের চাচাতো বোন। আপনি ওনার থেকে কমপক্ষে হলেও পাঁচ ছয় বছরের ছোট হবেন। তাহলে নিজের ভাইকে এভাবে নাম ধরে বলেছেন কেন?”

” আরহাম আমার নিজের ভাই নয় যে তাকে নাম ধরে ডাকতে পারবো না। তাছাড়া আমি আরহামকে ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি। আরহাম ও আমাকে ভালোবাসে। মাঝখানে তুমি কাটা হয়ে ঢুকে পড়েছো।তুমি জানো আমি এতক্ষন কোথায় ছিলাম?”

দাঁতে দাঁত চেপে নেহার কথা শুনছে শুভ্রা। নেহার একটা কথাও যে সত্যি নয় সে জানে। তবুও রাগ হচ্ছে তার। রাগ নিয়ন্ত্রণ করে মুচকি হেসে বলে,

” আচ্ছা বুঝলাম মন্ত্রী মশাই আপনাকে ভালোবাসে। যেহেতু এখন আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তিনি এখন থেকে তার বউকে মানে আমাকে ভালোবাসবেন। তার মানে কি দাঁড়ালো একসময় ভালোবাসতো আপনাকে যদিও সঠিক কিনা সন্দেহ কিন্তু এখন তার সর্বত্র জুড়ে আমার বাস। বুঝলেন আমার জামাইয়ের বোন ননদিনী।”

নেহার নাক হালকা করে টেনে দেয় শুভ্রা। তাজ্জব বনে যায় নেহা। হাসে শুভ্রা। নেহার গা জ্বলে যাচ্ছে।

“এই মেয়ে ননদিনী কাকে বলছো? আরহাম আমার শুনেছ তুমি। যাইহোক তুমি জানো আমি আরহামের কাছ থেকে আসলাম? ইশ আমাকে ছাড়তেই চাচ্ছিল না। মাঝে কয়েকবছর আমি ছিলাম না এখানে সেজন্য সব ভালবাসা একবারেই দিয়ে দিচ্ছিল। তোমার সাথে বিয়েতো পরিবারের চাপে পড়ে করেছে। কিছুদিন পর তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কাছে চলে আসবে।”

নিজের ব্যক্তিগত পুরুষকে নিয়ে অন্য কোনো নারীর মুখে এরকম কথা কেউ সহ্য করতে পারবে না। শুভ্রাও পারছে না।
মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে তার। বাম হাতে হঠাৎ পিপড়া কামড় দেওয়ার মতো ব্যথা হলো। কিন্তু রেগে থাকার কারণে এড়িয়ে গেলো।মানুষ বরাবরই রাগের মাথায় সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে শুভ্রার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হলো না। সমস্ত রাগ আরহামের উপর উঠতে লাগলো। ভুলে গেলো নেহা আর মন্ত্রী মশাইয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক কেমন। মাথার ঘুরতে শুরু করলো মন্ত্রী মশাই নেহার কাছে ছিল।
নেহা উঠে দাড়ালো। তার কাজ শেষ। যা করতে এসেছিলো সেটা করতে পেরেছে। হাসি মুখে ঘর থেকে বের হতে নেয় সে। দরজার কাছে আসতেই রাইমার মুখোমুখি হয়। রাইমা ভ্রু কুচকে তাকায় নেহার দিকে।

” আপু তুমি এখানে কি করছো?”

” কেনো আসতে পারি না? তোদের ভাইয়ের বউকে দেখতে এসেছিলাম। দেখা শেষ এখন চলে যাচ্ছি। তুইও চল। আর এখানে থাকতে হবে না। আরহামের আসার সময় হয়েছে।”

রাইমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নেহা টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে। রাইমার সন্দেহ হয় নেহার ব্যাবহারে। কিন্তু আরহামের আসার সময় হয়েছে বিধায় সে আর এসব নিয়ে ঘাটে না।

আর মনে করতে পারছে না শুভ্রা। রাইমাদের ঘর থেকে বেরোতে দেখেছিল সে রাতে। তারপর কি হয়েছে, আরহাম কখন এসেছে কিছুই মনে নেই তার। হাজার চেষ্টা করার পরও যখন মনে করতে পারল বা তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই আরহাম কে ঘুম থেকে জাগাতে শুরু করলো। একমাত্র আরহাম’ই তাকে সব বলতে পারবে।

শুভ্রা আলতো হাতে আরহামের মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে ডাকতে শুরু করেন। কিন্তু শুভ্রাকি জানতো যখন সে রাতের কথা মনে করায় মগ্ন ছিল তখন আরহাম তাকে মুগ্ধ নয়নে দেখেছে। সদ্য ফোটা পদ্মফুল দেখেছে আরহাম। সেই ফুলে শিশিরের ন্যায় পানি জমে ছিল। স্নিগ্ধতার সাথে মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল। তখন তার মাথায় একটাই নাম এসেছিল, “শুভ্রপরি”। তার শুভ্রপরি। শুভ্রা যখন তাকে ডাকতে ধরে তখনি সে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলে।

” মন্ত্রী মশাই, মন্ত্রী মশাই উঠুন। এইযে মন্ত্রী মশাই। আরে উঠুন না।”

আরহাম শুভ্রাকে নিজে বুকের উপর টেনে জড়িয়ে নেয়। হা হয়ে যায় শুভ্রা। এই মন্ত্রী ঘুমের মধ্যে তার সাথে কি শুরু করলো।
আরহাম ঘুম জড়ানো গলায় বলে,

” ঘুমাতে দেও বউ। এতো সকাল সকাল ডাকছো কেন? এমনিতেই রাতে তোমার জন্য ঘুমোতে পারি নি।”

” আমার জন্য ঘুমাতে পারেননি মানে? কি করেছি আমি? আপনি উঠুন তো আমাকে রাতে কি হয়েছে বলুন। আমার কিছু মনে পড়ছে না।”

আরহাম বুকের ওপর থেকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় শুভ্রাকে। শুভ্রার দুই পাশে দুই হাত রেখে কেমন যেন চাহনিতে দেখতে শুরু করে তাকে। চোখ পিট পিট করে শুভ্রা। মন্ত্রীর হাব ভাব মোটেও সুবিধের লাগছে না তার কাছে। আরহামকে দুইহাতে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে চটজলদি উঠে পড়ে সে। বাকা হাসে আরহাম।

” আপনি এমন কেনো করছেন? সত্যি করে বলুন রাতে কি হয়েছে?”

” শুনবে নাকি প্রাকটিক্যাল দেখবে?”

ভ্রু নাচিয়ে বলে আরহাম। শুভ্রা দুই হাতে মুখ চেপে ধরে। উল্টোপাল্টা চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

” উল্টোপাল্টা কিছু ভেবো না বউ।আমি ঘরে এসে দেখি ক্লান্ত থাকায় তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে বউ”

লজ্জা পায় শুভ্রা। আরহাম তার মনের কথা বুঝতে পেরেছে ভেবে। তাছাড়া কথায় কথায় বার বার বউ ডাকছে তাকে। অদ্ভুত এক ভালো লাগায় ঘিরে ফেলছে শুভ্রাকে। ঘরের বাইরে থেকে রাইমার ডাক শুনে শুভ্রা তাকায় ঘড়ির দিকে। সকাল ৮ টা বেজে গিয়েছে। নতুন বউ এখনো ঘর থেকে বের হয়নি কে কি ভাববে। তাড়াতাড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে শুভ্রা। আরহাম স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। শুভ্রাকে যা বলেছে তাই বিশ্বাস করেছে।

——————
রাইমা শুভ্রাকে বিভিন্ন ভাবে লজ্জা দিতে ব্যস্ত। শুভ্রাও চুপ চাপ হজম করছে। রাইমার সাথে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে হঠাৎ,,,

চলবে,,

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যাঃ ২৫
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে শুভ্রা। একটুর জন্য একটা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায় সামনে থাকা যুবকটির দিকে। চেনা-চেনা লাগছে তার।তাকে না ধরলে হয়তো সে নিচে পরে যেতো। আর তো মাত্র পাঁচ-ছয়টা সিঁড়ি ছিল। হঠাৎ কিভাবে সে পরে যেতে ধরলো এখনো বুঝতে পারছে না। রাইমা ভয়াতুর হয়ে আছে।

“আরে ভাবি। সাবধানে হাটা চলা করবেন তো।”

কিঞ্চিৎ অবাক হলো শুভ্রা। তাকে ভাবি ডাকছে কেনো? তার মানে ইনিও হয়তো তার মন্ত্রী মশাইয়ের কোনো কাজিন হবে। কিন্তু বিয়েতে তো দেখলো না।

” অবাক হচ্ছেন কেনো ভাবি? ওহ আচ্ছা আপনিতো আমাকে দেখেন নি। আমি নিতুল। আরহাম ভাইয়ার একমাত্র চাচাতো ভাই।”

” ধন্যবাদ, ভাইয়া।”

শুভ্রার কথার বিপরীতে মুচকি হাসলো নিতুল। শুভ্রা দেখলো। নিতুলের মুখ থেকে হাসি যাচ্ছেই না।
নি আর রাইমা ছাড়া আরহামের এর কোনো কাজিন এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। রাত জেগে আড্ডা দেওয়ার কারণে হয়তো। তাছাড়া বাড়ির বড়রা সকলেই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত।সবাই শুভ্রাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে। নীলিমা শিকদার উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন।

” মা তোর কিছু হয়নি তো?কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস?দেখেশুনে হাঁটতে পারিস না?এক্ষণি কতো বড় দুর্ঘটনা হতে যাচ্ছিলো। নিতুল না ধরলে কি হতো বলতো? আর এতো তাড়াতাড়ি তোকে উঠতে কে বলেছে?”

নীলিমা শিকদার শুভ্রাকে খুঁটিয়ে দেখছেন। চোখে পানি চিকচিক করছে।শুভ্রা অবাক চোখে দেখছে নীলিমা শিকদারকে। তার প্রতি একরাশ ভালোবাসা, স্নেহ দেখতে পাচ্ছে।নীলিমা শিকদারকে শান্ত হতে না দেখে শুভ্রা জড়িয়ে ধরে তাকে।

” আন্টি দেখুন আমার কিছু হয়নি। উনিতো ধরে ফেলেছেন আমাকে। আপনি উত্তেজিত হবেন না।”

নীলিমা শিকদার ত্বরিত নিজের কাছ থেকে আলাদা করে শুভ্রাকে। বড়সর একটা ধমক দেয়।

” যা সর, সামনে আসবি না আমার। রাইমা ওকে বল যেনো আমার সাথে আর কথা না বলে। আন্টি ,আন্টি করে যাচ্ছে। একমাত্র ছেলেকে কি বিয়ে দিয়েছি ছেলের বউয়ের মুখ থেকে আন্টি শোনার জন্য। এর আগে একবার বলেছিলাম আমাকে আন্টি না বলতে। বলে দে যে ওর আন্টি হয় তার কাছে যেতে। আমাকে যেনো না আসে।”

রাগে গজগজ করতে করতে রান্না ঘরে চলে গেলেন নীলিমা শিকদার। শুভ্রা ভ্যাবলার মত তাকিয়ে আছে। শাশুড়ির হঠাৎ এমন রেগে যাওয়ার কারণ মাথায় ঢুকলো না। সবার দিকে তাকাতেই দেখলো সবাই হাসছে। এতে আরো বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলো শুভ্রা। সে কি কোনো ভুল করেছে?

” কিরে রাইমা। আন্টি ওভাবে রেগে গেলো কেনো? আমি কি কোনো ভুল করেছি?”

শুভ্রার মাথায় চাটি মারে রাইমা। বুদ্ধিমতি শুভ্রা এতটুকু বুঝতে পড়লো না।

” মামিমা তোকে আগে বলেনি ওনাকে মা বলে ডাকতে?তাহলে আন্টি ডাকছিস কেনো? আন্টি ডাকার কারণেই অমন করলো। রাগ করেনি তোর উপর অভিমান করেছে। হয়তো কারো প্রতিচ্ছবি তোর ভিতর দেখতে পেয়েছে।”

জিভে কামড় দেয় শুভ্রা।এর আগে যে আন্টি বলার কারণে ধমক খেয়েছিল সে ভুলেই গিয়েছিল। সবার দিকে একবার তাকিয়ে দ্রুতপায়ে রান্না ঘরের দিকে যেতে শুরু করে। ইশ শশুর বাড়িতে প্রথম দিনই শাশুড়িমাকে রাগিয়ে দিয়েছে।
শুভ্রার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে সবাই। রাইমা ছাড়া সব মেয়ে বউরা রান্নাঘরে চলে গিয়েছে। বাড়ির উপস্থিত পুরুষরা সোফায় বসে।

সবাইকে সরে যেতে দেখে রাইমা তাকায় সিঁড়ির দিকে। নিচ থেকে পাঁচ নাম্বার সিরিটাতে তেল জাতীয় কিছু দেখতে পায়। হাত দিয়ে দেখতেই সিউর হয় সত্যিই তেল। অবাক হলেও কোনপ্রকার প্রতিক্রিয়া ছাড়া সকলের সাথে সোফায় গিয়ে বসে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখে।

___________

রান্নাঘরে সবাই মিলে সকালের নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুভ্রা এসে নীলিমা শিকদারকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। নীলিমা শিকদার প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও যখন বুঝলো তাকে শুভ্রা জড়িয়ে ধরেছে তখন মুচকি হাসলো।

” আমি না বলে আসলাম কেউ যেনো আমার কাছে না আসে। তাহলে আসলো কেনো?”

“মা”

থেমে গেলো নীলিমা শিকদারের হাত। কি অদ্ভুত,সেই একই অনুভূতি তার মাতৃত্বকে আবারো নাড়িয়ে তুললো। কতো বছর পর সে আবারও অনুভব করলো। হোক না সেটা ছেলের বউয়ের মুখ থেকে কিন্তু ডাকতো একই। ঘুরে দাড়ালেন তিনি। আলতো হাতে শুভ্রার গাল স্পর্শ করলেন। চোখে অশ্রুর সাথে অনির্দিষ্ট ভালোবাসা প্রকাশ পাচ্ছে।

” আর কোনো দিন আন্টি ডাকলে সত্যিই আমি তোর সাথে কথা বলব না। আর কোনো আপনি আপনি করবি না।”

” আচ্ছা আন্টি , আরে না। আচ্ছা মা”

রান্নাঘরের সবাই হাসলো শুভ্রার কথা শুনে। নীলিমা শিকদার মিছি মিছি রাগ দেখানোর ভান করলেও হেসে ফেললেন। শুভ্রা শাশুড়ির এমন ভালোমানুষিতে খুব বেশি অবাক হলো না। কারণ সে জানে সব শাশুড়ি এক রকম হয়না। তার শাশুড়ির মতো তো তার বাড়িতেও দুজন মানুষ আছে। যারা কখনোই তার ভাবিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি, উল্টো সবসময় নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছে। শুভ্রা সবসময় চাইতো তার শাশুড়িও যেনো তার বড়মাদের মতো হয়। তার চাওয়া পূরণ হয়েছে। আজ কতবছর পর কাউকে ‘ মা ‘ ডাকতে পেরে কেমন সুখ সুখ লাগছে শুভ্রার।চোখের কোনে পানি জমা হচ্ছে।

” তোমাদের শাশুড়ি বউমার ভালোবাসা শেষ হলে এখন রান্না শেষ করি। আমি একটা ছেলের বউ পেয়েছি, যে কিনা ভালোবাসা তো দুর সারাদিন ঝগড়া করে আমার সাথে। দেখো, দেখে শেখো শাশুড়িকে কিভাবে ভালবাসতে হয়।”

মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলল আরিফা তালুকদার। তার একমাত্র ছেলের বউ সাথি হেসে উঠলেন শাশুড়ির কথায়। সে নিজেও জড়িয়ে ধরলো আরিফা তালুকদারকে।

” হয়েছে এবার। তুমিতো আমার সাথে ঝগড়া করো। আমি মোটেও করি না।”

হাসলেন আরিফা তালুকদার। তার আর তার ছেলের বউয়ের সম্পর্কে সব কিছুই আছে। ঝগড়া ,ভালোবাসা।
নীলিমা শিকদারের বোন নিরিতা শেখ আর ভাবি রুবিনা মির্জা তাকায় তাদের বউমাদের দিকে। তাদের বউমারাও দেরি না করে জড়িয়ে ধরে তাদের। রান্না ঘরের সবাই একসাথেই হেসে উঠে।
ড্রইং রুম থেকে দেখে সবাই। তাদের মুখেও তৃপ্তির হাসি।

___________

জোর করে নিজের হাতে সকলের জন্য চা,কফি বানিয়েছে শুভ্রা। শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে কম বকা শুনতে হয়নি তাকে। কিছুতেই তাকে করতে দিবেন না বলে পণ করেছিলেন তিনি। যদি হাত পুড়িয়ে ফেলে সেই ভয়ে। কিন্তু শুভ্রাও তো নাছোড়বান্দা। শেষে বাধ্য হয়ে শুভ্রাকে শুধু চা, কফি বানানোর অনুমতি দিয়েছেন। কে চা খায় কে কফি খায় সব বলে দিয়েছেন এবং সাথে চিনির পরিমাণ। কিন্তু আরহামের বেলায় বলে দিতে হয়নি।শুভ্রা নিজেই করেছে। এই নিয়ে ভাবিদের কাছ থেকে লজ্জা পেতে হয়েছে তাকে। নিজেই পরিবেশন করবে বলে জানিয়েছে। এতক্ষনে ড্রয়িং রুমে পায় সবাই উপস্থিত হয়েছে। শুধু নেহা, আরহাম আর বাড়ির বাচ্চারা বাদে। নেহাকে উপস্থিত না দেখে বাকা হাসে শুভ্রা।
সবাইকে তাদের নির্দিষ্ট চা , কফি দিয়ে দেয়।

” অনেক সুন্দর হয়েছে বউমা।এতদিনে মনে হচ্ছে ভালো কোনো স্বাদ পেলাম। এতো দিন এক চা খেতে খেতে অবস্থা খারাপ ছিল। আজ মনটা জুড়িয়ে গেলো।”

নীলিমা শিকদার চোখ গরম করে তাকায় আসাদ শিকদারের দিকে। আসাদ শিকদার ফিক করে হেসে দেন।একে একে সকলে প্রশংসা করে। সাথী এক কাপ কফি এনে শুভ্রার হাতে ধরিয়ে দেয়।

“এটা তোমার মন্ত্রী মশাইকে দিয়ে এসো। নতুন বউ তুমি তবুও তোমাকে কাজ করতে বলছি। যেহেতু তুমি বানিয়েছো তাই তুমিই দিয়ে এসো। প্রতিদিন তো মামিমা দেয়। আজকে নাহয় তুমিই যাও।”

চোখ টিপে বলে সাথী। শুভ্রা যেতে না চাইলে জোর করে পাঠিয়ে দেয়।

____________

আরহাম সবে মাত্র শাওয়ার নিয়েছে। শার্টলেস হয়ে আছে। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। বিছানার উপর টাওয়াল রেখে দাঁড়ায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে। দৃষ্টিতে আবদ্ধ হয় গলার কাছে থাকা ক্ষত গুলো। হাত বুলায় সেগুলোর উপর। শুভ্রার বড় বড় নখের উপর তার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। বিনা কারণে কিভাবে ক্ষত করেছে। এগুলোতো অন্য কারণেও করতে পারতো।

শুভ্রা হাতে কফি মগ নিয়ে দরজায় পাসওয়ার্ড দিচ্ছে। কফি মগটার দিকে যতবার তাকাচ্ছে ততবার পেট ফেটে বমি আসতে চাচ্ছে। মিষ্টি বিহীন এই “তেঁতো” গুলো খাবে তার মন্ত্রী মশাই। এজন্যই হয়ত কফির মতই হয়েছে “তেঁতো”

ঘরে ঢুকে চোখ গুলো রসগোল্লার ন্যায় বড় বড় হয়ে গিয়েছে শুভ্রার। মোহিত হয়ে দেখছে আরহামকে। প্রতিদিন জিম করা আরহামের সিক্স প্যাক ওয়ালা বডি। আরহামের বুকের বা পাশের তিলটা অদ্ভুত ভাবে টানছে শুভ্রাকে।

আরহাম মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে আসে শুভ্রার কাছে। শুভ্রার হাত থেকে কফি মগ টা নিয়ে শুভ্রাকে টেনে নিয়ে গিয়ে বসায় বিছানার উপর। কিছুক্ষণ পর বলে,

” আমার কাজ শেষ। দেখোতো এখন কতো সুন্দর লাগছে।”

সম্মোহিত শুভ্রার ঘোড় কাটে। লজ্জা পায় , এভাবে তাকিয়ে ছিল ভেবে। আরহাম কখন তাকে বিছানায় বসিয়েছে বুঝতেই পারেনি।আরহামের হাতে থাকা নিজের দুই হাতের দিকে দেখতেই চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে যায়।তার এতো সাধের নখ গুলো নেই। আরহামের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে প্রথমে চোখ ডলে শুভ্রা তার পর ভালো করে হাতের দিকে তাকাতেই দেখে সত্যিই তার নখগুলো নেই। এতো যত্ন করে রাখা নখ গুলো একেবারেই কেটে দিলো। তেঁতে উঠে শুভ্রা। কিন্তু এটা কি হলো , শুভ্রাকে কোনো পাত্তা না দিতে কফি মগ হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো আরহাম।

রাগে দুঃখে মাথা ফাটাতে ইচ্ছা করছে শুভ্রার। আহারে তার সাধের নখ গুলো। হঠাৎ শুভ্রার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। সে আর আরহামকে কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। এখন কিছু করবে না এর শোধ তো তুলবে সময় মতো।

____________

কাউকে কিছু না জানিয়ে পার্টি অফিসে চলে এসেছে আরহাম। বাড়িতে জানালে হয়তো বিয়ের পরের দিন না আসার জন্য জোর করতো। কিন্তু সে মন্ত্রী মানুষ। জনগণের দায়িত্ব তার কাধে। আরহামের জন্য অগত্যা ফাহিমকেও আসতে হয়েছে। রাগে দুঃখে টেবিলের সাথে মাথা ঠেকিয়ে আরহামকে দেখছে ফাহিম।এখন মনে হচ্ছে বাবার বিজনেস সামলালেই ভালো হতো। কেনো যে রাজনীতিতে প্রতি এত আগ্রহ দেখাতে গেলো। আরহাম শান্ত চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তোবা কারোর আসার অপেক্ষা করছে।

” ভাই, আজকে কি খুব দরকার ছিল আসার?”

” চুপ থাক ফাহিম। সাধে কি বিয়ের পরের দিন বউ রেখে এসেছি নাকি। কোথায় এখন বউয়ের সাথে রোম্যান্স করবো তার বদলে কাজ করতে হচ্ছে। তোর আবার কিসের কষ্ট রে। চুপ থাক।”

কানে হাত চেপে ধরলো ফাহিম। মনে মনে আরহামের গুষ্ঠীর পিন্ডি চটকাচ্ছে। নির্লজ্জ মন্ত্রী।
আরহাম ফোনের নোটিফিকেশন আসায় সেদিকে দেখে। ঠোঁটে মৃদু হাসির সৃষ্টি হয়। তবে পরক্ষনেই আবার কোনো কিছুর চিন্তায় তা গায়েব হয়ে যায়। এবার দৃষ্টি ফেলে দরজার দিকে। তখনি শুভ ভিতরে প্রবেশ করে।

” ভাই এইযে”

আরহামের হাতে কয়েকটা কাগজ দেয় শুভ। আরহাম চোখ বন্ধ করে বড় করে নিশ্বাস ছেড়ে দেখে কাগজগুলো। আরহামের হাত কাপছে। চোখ জোড়া রক্তিম হয়ে উঠেছে। বুকের ভিতর প্রবল ব্যাথা হচ্ছে। ভয় তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে নিয়েছে। শুভ আর ফাহিম আরহামের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। ফাহিম পানি এগিয়ে দেয় আরহামের দিকে। আরহাম একহাতে খামচে ধরে কাগজগুলো আরেক হাতে গায়ের সর্বস্ব শক্তি প্রয়োগ করে টেবিলে ঘুষি মারে। মুহুর্তের মধ্যে হাত রক্তাক্ত হয়ে যায় আরহামের। গল গল করে রক্ত পরতে শুরু করে। অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে ফাহিম আর শুভর। আরহামকে কখনোই তারা এমন অবস্থায় দেখেনি।চিৎকার করে উঠে আরহাম।

“ড্রাগ”

চলবে,,