#প্রিয় রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা রাত❤️(ছদ্মনাম)
#পর্ব: ০৯
সেদিন মার খাওয়ার পর রাগ হলেও রাতে আমার মনটা গলে গিয়েছিল। এভাবে বললে যে কারোর মন গলবে এটাই স্বাভাবিক।
নিজের রুমে বসে যখন আমি আলমারি মুছে চলেছি ঠিক তখনই রুমে ঢুকল ফুপি।বিছানায় বসতে বসতে বলল,
-“কিরে অতসী!চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি।”
আমি মুছতে মুছতেই বলছি,
-“কোথায় যাবে?”
-“এইত রেস্টুরেন্টে? ”
আমি তো খুব খুশি হয়ে গেলাম শুনেই । একে তো আমি ঘুরতে ভালবাসি!ছবিটবি তুলে একদম বিন্দাস ঘুরব। ভেবেই আমি যেই না হ্যা বললো অমনি একটা কথা মনে পড়ে গেল।আমি দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললাম,
-“যেতাম বাট স্যার আছে ত…”
-“কোন স্যার?”
-“আরে ফুপি রোদ্দুর স্যার।পড়াতে আসবে তো।”
-“তো না করে দে আজ।”
-“আরে তুমি জানো না কিছু। স্যার একদিনও মিস করা পছন্দ না! ”
-“প্রতিদিন পড়ায়?”
-“হুমম!”
-“তাহলে তো সায়ন্তি কেও পড়ানো যায়।কেমন পড়ায় রে?”
-“পড়ায় তো ভালোই।”
-“তোর মায়ের সাথে কথা বলব!”
আমার মনটা কেমন যেন করে উঠল।উপলব্ধি করলাম যে রোদ্দুর স্যার সায়ন্তি করে পড়াবে এটা আমার পছন্দ হচ্ছে না।চোখের সামনে ভেসে উঠছে ওদের দুজনের মুখ।আমার জায়গায় সায়ন্তি পড়ছে ওনার কাছে। হাসাহাসি করছে।আমার মোটেও সহ্য হচ্ছে না। আমি হঠাৎ চেচিয়ে উঠলাম,
-“নাআআআ!”
ফুপি কেঁপে উঠে বললো,
-“এই কি হয়েছে রে তোর!”
আমি স্বাভাবিক হয়ে বললাম,
-“ক..কই কিছু না তো।”
-“চেঁচালি কেন?”
আমি ফুপির পাশে বসতে বসতে বললাম,
-“কিছু না ফুপি এমনি।বসো তো।”
-“গিয়ে কথা বলি তোর মায়ের সাথে! ”
-“নাআআ!”
-“ওমা কেন?”
-“আরে ফুপি তুমি সায়ন্তি কে কেন ওনার কাছে পড়াবে।”
-“তুইই তো বললি ভালো পড়ায়!”
-“হুম তো তাতে কি।”
-“তো আমিও পড়াব।”
এই রে!কি করে মেসেজ করি! আমি ভেবে ভেবে বলে উঠলাম,
-“ফুপি সায়ন্তি এমনেই পড়াশোনার চাপে সময় পায়না।আরো স্যার রাখলে তো রেগেমেগে অস্থির হয়ে যাবে।”
এবার ফুপি কিছু সময় ভাবলো।তারপর বলল,
-“হ্যা রে।পরে আমার উপরই রাগ করবে।”
যাক বাবা বাঁচা গেলো।ফুপি এবার যেতে যেতে বললো,
-“শোন তুই বিকালে রেডি হোস।আমি তোর মাকে বলছি তোর স্যারকে না করবে আসতে।”
-“আচ্ছা ফুপি।”
ফুপি চলে গেলো।আমি জোরে শ্বাস ফেলে বিছানায় বসে পড়লাম। উফ শান্তি!
এখন তো সায়ন্তি আর পড়তে পারবে না ওনার কাছে। ভাবতেই খুশি লাগছে।
আমি ছাড়া আর কেউ ওনার কাছে পড়বে না হুহ!
উনি শুধু আমার স্যার।আমার রোদ্দুর স্যার!
ভেবেই হেসে ফেললাম।
ড্রইং রুমে আসতেই আম্মু বললো,
-“তোর স্যারকে কল করে আমার কানে লাগা তো।”
আমি ফোনে নাম্বার ডায়াল করে কি ভেবে লাউড স্পিকারে চাপ দিলাম।আম্মুর কানে লাগাতেই উনি রিসিভ করে বললেন,
-“হ্যা অতসী বলো!”
আমার অন্তরাত্মা কেমন কেঁপে উঠলো।ওনার গলাটাও আজকাল এতটা ভালো লাগছে। এত সুন্দর করে ডাকলো আমায়। আম্মু উত্তর দিলো,
-“বাবা আমি অতসীর আম্মু।”
-“হ্যা আন্টি বলুন।”
-“শোনো,আজ অতসী পড়বে না। ”
-“কেন আন্টি?ও কি অসুস্থ নাকি!আবার কি রোগ নিয়ে এলো।আমি আসব?”(বিচলিত হয়ে)
-“আরে না না । ও ঠিক আছে।আজ বিকালে ঘুরতে যাবে একটু।”
-“আন্টি ওর তো সামনে পরীক্ষা। এখন একা একা কিসের এত ঘুরাঘুরি। ”
-“একা না।ওর ফুপি,আমি সবাই যাবে।”
-“আন্টি একটু ওকে ফোনটা পাস করুন তো।”
-“আচ্ছা। ”
আমি বারবার মাথা নাড়িয়ে না করছি। যা বলার আম্মুই বলুক।কিন্তু না। আম্মু চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“যা পারমিশন নিয়ে আয়।”
আমি স্পিকার টা কমিয়ে দিলাম।কিসের পারমিশন ভাই?
সে কি আমার তেমন কেউ নাকি যে পারমিশন নিতে হবে।আম্মু যে কি বলে!ফোনটা কানে নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললাম,
-“জ..জ্বী!”
-“খেয়েছ?”
-“না স্যার।আপনি?”
আমার প্রশ্নটাকে সম্পূর্ণ পাত্তা না করে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লেন,
-“কয়টা বাজে?
-“তিনটা!”(ঘড়ি পরখ করতে করতে)
-“এখনো খাওনি কেন? ”
-“যাচ্ছি।”(নিচু স্বরে)
-“এজন্যই তো পরে অসুস্থ হও।”
-“তাতে কি?”
উনি কিছু সময় চুপ থেকে বললেন,
-“আব..তাতে পড়াশোনার ক্ষতি হয়।খালি পড়ার থেকে বাঁচার চেষ্টা। ফাঁকিবাজ একটা ! ”
আমি মুখ ফুলিয়ে ফেললাম।উনি বলে উঠলেন,
-“এখন আর মুখ ফোলাতে হবে না।”
ওমা উনি কি করে বুঝলেন! আমি অবাক হয়ে বললাম,
-“আপনি….”
-“তোমার মুখের ভঙ্গিমা আমার মুখস্থ! “(হেসে)
-” মানে!”
-“মানে কিছু না।শোনো,ভালো মেয়ের মত থাকবে।আর আন্টির থেকে হাত ছাড়িয়ে কোথাও যাবে না! ”
-“স্যার আমি কোনো বাচ্চা নই।”
-“হোপপ!যেটা বলছি সেটাই।রাস্তা পার হবা ভালো মত।তোমায় বিশ্বাস নেই। ”
-“হুহ!”
-“হইছে মন খারাপ না করে খেতে যাও।আবার সেজে পেত্নী হইও না! ”
-“কি বললেন আপনি আমাকে!”
-“পেত্নী!”
-“আপনি ভূত!”
-“আরে শোনো শোনো!তুমি যখন গাঢ় কাজল পড়ে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক পড়ো,গালে লাল আভায় তোমাকে…”
আমি বিভোর হয়ে তার আনমনে বলা কথা শুনছি।আর বলে উঠলাম,
-“আমাকে?”
-“পুরো পেত্নী লাগে!”
বলেই হো হো করে হাসতে লাগলেন।আমি রেগে বললাম,
-“পঁচা স্যার!”
বলেই কল কাটলাম।খালি আমাকে পচায়।বাজে স্যার একটা।নিজে যে একটা ভূত!রাম গরুরের ছানা!
সেটার কি!হুহ।
।
ঘুরাঘুরি করে আসতে আসতে রাত ৯ টা বেজে গেলো।আমি নিজের ছবিগুলো বেছে বেছে স্টোরি দিতে ব্যস্ত।
স্টোরি দিয়ে তবে শান্ত হয়ে গেলাম ফ্রেশ হতে।
আসলে টিনা শয়তান্নিটা আমাকে রেখে ঘুরছে। এজন্য ওরে দেখানোর জন্য স্টোরি দিলাম।এখন নক দিস শুধু আমাকে।
ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ফোনটা টুং করে শব্দ করলো।আমি ভাবলাম হয়ত টিনা।মনে মনে রিপ্লাই সাজাতে সাজাতে ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম এ যে সাক্ষাৎ রাক্ষস!
আমি ঢোক গিলে মেসেজ অপশনে ঢুকতেই দেখলাম স্টোরির রিপ্লাই দেয়া,
-“এই পেত্নী স্টোরি দিসো কেন!তোমার সাহস তো কম না।”
আমি তাড়াতাড়ি করে টেক্সট করলাম,
-“মানেটা কি!আমি পেত্নী! ”
-“একদম কথা ঘোরাবে না।আজকাল পিক দিয়ে কত কিছু হচ্ছে!আর তুমি কিনা এভাবে স্টোরি দিয়েই চলেছো।ডিলিট করো!”
-“স্যার আমি রিলেটিভ বাদে সব হাইড করে রেখেছি।”
-“তুমি আমার কথা শুনবে না ত?”
আমি রিপ্লাই দিতে দিতে কল চলে এল ফোনে।আমি রিসিভ করতেই উনি শক্ত গলায় বললেন,
-“এক্ষুণি ডিলিট হবে নয়ত কালকে দেখাচ্ছি! ”
-“করছি!ধূর!”(মন খারাপ করে)
-“এত মন খারাপের কি আছে?কাকে দেখানোর জন্য স্টোরি দিলা?দাঁড়াও কাল তোমার হচ্ছে! ”
-“কাউকে দেখানোর জন্য না স্যার।এমনি দিসিলাম।”
(গোমড়া মুখে)
-“ডিলিট করেছ?”
আমি ফোনটা নিয়ে ডিলিট করে আবার কানে নিয়ে বললাম,
-“হুম!”
-“আমি চাই না এই পেত্নীকে প্রদর্শন করে কেউ অক্কা পাক!”
-“আবারররর!”
উনি হো হো করে হাসতে লাগলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে ওনার হাসি শুনছি।এই লোকটার সবকিছুই কেমন মায়া মায়া।বাইরে থেকে শক্ত।ভিতর থেকে নরম!
আমার ভাবনার মধ্যে উনি বললেন,
-“আচ্ছা অতসী আমার একটা কল আসছে,টাটা! ”
-“হুম।”
আমি কলটা কেটে দিলাম।বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম হাজারো কথা।নিজেকে একটু সময় দিচ্ছি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে ভাবার,পুরনো স্মৃতি মনে করার।এতে মনটা ভালো থাকে।
।
পরেরদিন কি ভেবে স্যার আসার কিছু সময় আগে আমি বেশ পরিপাটি হয়ে বসে রইলাম। কিন্তু ওনার দেখা নেই।
আটটা বাজার পরেও য়খন এলেন না তখন আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম।
নেটে ঢুকেও ওনাকে অনলাইন পেলাম না।
কল করবো কিনা বুঝতে পারছি না।
এভাবে ছটফট করতে করতে কল করেই ফেললাম।
কিন্তু রিসিভ হলো না।ব্যস্ত হয়ত এটা ভেবে আমি শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি তাতেও ঘুম আসছে না। এবার নেটেঢুকে মেসেজ সেন্ড করেই ফেললাম,
-“স্যার আজ আসেননি কেন?অসুস্থ আপনি?”
বলে আমি নিউজফিডটা ঘুরতে লাগলাম।রাত ২ টায় রিপ্লাই এলো,
-“হ্যা আর বলো না,জ্বর উঠেছে আবার।”
আমি তৎক্ষনাৎ রিপ্লাই করলাম,
-“সেকি!কিভাবে?”
-“হয়ে গেলো!”
-“আমাকে সাবধান করতে গিয়ে নিজেরি হয়ে গেল তো!”
-“হু তোমার অভিশাপে! ”
-“মোটেও আমি অভিশাপ দিইনি।”
-“দিয়েছই তো।”
-“উহু!”
-“আমি জানি ”
-“আপনি বেশি জানেন!ঔষধ খেয়েছেন?”
-“না রে!”
-“কেন?”
-“বাসায় একা তো।বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারিনি।আম্মু বাসায় নেই।”
-“তাই তো এই অবস্থা।”
-“মাথার যন্ত্রণায় শেষ আমি।”
-“আহারে।চা খান।”
-“তুমি এসে করে দিয়ে যাও।এত রাতে ঢং করে বলা হচ্ছে।মনে হয় সে এসে করে খাওয়াবে।”
আমি চুপ হয়ে গেলাম।আসলেই তো।
-“পেইন কিলার নিন।”
-“তুমি খাইয়ে দিয়ে যাও বললাম তো।”
আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম মেসেজটার দিকে।উনি আবার লিখলেন,
-“জাস্ট কিডিং।ঘুমিয়ে পড়ো।কাল আসব।”
-“কাল না আসলেও হবে।আপনি অসুস্থ! ”
-” না আসব।দুদিন মেডিসিন ছাড়া আছি রে।”
-“মানেহ?”
-“কিছু না।কাল আসছি!”
-“আচ্ছা। কাল আপনার জন্য একটা জিনিস বানাব আমি।”
-“অপেক্ষা করব।”
চলবে….