প্রিয় রোদ্দুর পর্ব-২২+২৩

0
349

#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:২২

ধীরে ধীরে চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে পেলাম আমি।মাথাটা ভীষণ ভারি লাগছে।অনুভব করলাম আমি আমার পা নাড়াতে পারছি না।
মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। পাশে তাকিয়ে দেখি আব্বু আম্মু বসে আছে।আর আরেক পাশে দ্বীপ,ফুপি,সায়ন্তি।
খুব দূরে দরজায় দাঁড়িয়ে থাক রোদ্দুর স্যারকে চোখে পড়লো আমার।মুহূর্তেই আমার মনে পড়ে গেলো সেই এনাউন্সমেন্টের ঘটনাটা।চোখজোড়া আবার ছলছল করে উঠলো।আম্মু আমাকে দেখে বললো,

-“জ্ঞান ফিরেছে।অতসীর আব্বু!”

আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

-“আমি এক্ষুণি ডাক্তার ডেকে আনছি।”

বলেই চলে গেলো।আম্মু বলতে লাগলো,

-“এখন কেমন আছিস মা?”

-“ভা..ভালো।”

-“একা একা কেন গিয়েছিলি বাইরে?আমরা সবাই তোকে খুঁজতে খুঁজতে বাহিরে না এলে কি হতো ভাবতে পারছিস।ডাক্তার বলেছে আর একটু দেরী হলে পা টা কেটে বাদ দিতে হতো।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,

-“আমার পায়ে কি হয়েছে আম্মু। ”

-“একটা চাকা তোর পায়ে পড়েছে।তাই পা একটা ভেঙে গেছে। প্লাস্টার করা হয়েছে। ”

আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।ফুপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

-“কাঁদিস না আম্মু।কিছু হয়নি।ঠিক হয়ে যাবে।মাথায় অল্প চোট লেগেছে। আর পায়ের যত্ন নিলে ঠিক হয়ে যাবে।”

আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,

-“আ..আমি ম..মরে যাবো।”

দ্বীপ এবার ধমক দিয়ে বললো,

-“একটা থাপ্পড় মারব।এতক্ষণ ধরে কিছু বলছি না বলে একদম বেশি বলা হচ্ছে। ”

ফুপি দ্বীপকে চুপ করিয়ে বললো,

-“চুপ কর না!আর বকিস না।ভয় পাচ্ছে ও।”

আম্মু রোদ্দুর স্যারকে দেখিয়ে বললো,

-“দেখ,তোর স্যারও তোর জন্য বসে ছিলো।যায়নি।তোকে কোলে করে নিয়ে এসেছে।”

আমি সেদিকে তাকিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম।ওনার মুখ দেখাও আমার জন্য পাপ।উনি আস্তে আস্তে এগিয়ে এলেন আমার দিকে।কিছু বলবেন তার আগেই আব্বু ডাক্তার নিয়ে এলো।ডাক্তার আমাকে ভালো করে দেখে বললো,

-“হুম এখন ঠিক আছে সব।তিনদিন পর বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।তবে পায়ের ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে।”

বলে উনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-“এখন কেমন লাগছে মা?”

-“জ্বী ডক্টর।ভালো।”

-“একা একা এভাবে কেউ রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলে?বড় কিছু হতে পারত।”

আমি মাথা নিচু করে রইলাম।ডক্টর আবার বললেন,

-“মিস্টার আহমেদ, রুমটা খালি করুন।আর আমার সাথে একটু আসুন।”

বলেই চলে গেলেন।আব্বু ফুপিকে আর সায়ন্তিকে চলে যেতে বললো বাসায়।আম্মু থাকতে চাইলো কিন্তু সারারাত থাকায় আম্মুকেও যেতে বললো।
দ্বীপ গেলো না।ও থাকতে চাইলো।
তাই আব্বু আর না করলো না।ডাক্তারের পিছনে চলে গেলো।
ফুপি,আম্মু আর সায়ন্তি আমাকে বিদায় দিয়ে একে একে সবাই চলে গেলো।আম্মু বললো,

-“তোর দাদীকে পাঠাব।একা মেয়ে মানুষ। উনি থাকলে সব বলতে পারবি।দ্বীপ তো ছেলে।”

আমি মাথা নাড়ালাম। আম্মু আমার মাথায় চুমু দিয়ে চলে গেলো।রোদ্দুর স্যারকে বললো,

-“তুমিও এখন বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হও।সেই রাত থেকে রক্তমাখা শার্ট টা পড়ে আছো।”

-“একটু পর যাবো।”

আম্মু চলে গেলো।দ্বীপ আমার পাশে চেয়ার টায় বসে বললো,

-“কেন এমন করলি তুই?”

আমি ইশারায় স্যারকে দেখালাম।তাই ও আর কিছু বললো না। রোদ্দুর স্যার এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন।তারপর কিছু বলার আগেই দ্বীপের ফোনে কল এলো আর দ্বীপ বললো,

-“আংকেলের ফোন।নিশ্চয় কিছু লাগবে।আসছি আমি।”

বলেই বের হয়ে গেলো।আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। রোদ্দুর স্যার সেই চেয়ারটায় বসলেন। একদম আমার মুখের সামনে।আমি মুখটা ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।উনি আমার হাতটা ধরলেন।আমি ছাড়িয়ে নিতে গেলাম।উনি বললেন,

-“এত নড়ো না।ব্যাথা পাবা।”

-“আপনার কি স্যার!ছাড়ুন আমাকে।”

-“ছাড়ব।আগে আমার কথাটা শুনো।”

-“কি শুনবো আমি?আমার কিছু শোনার নেই।”

বলেই হাত ছোটাতে চাইলাম।স্যালাইনে টান লেগে আমার হাতে ব্যাথা পেলাম।

-“আহ!”

উনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন।তারপর বললেন,

-“তুমি কি স্থির হয়ে থাকতে পারো না কিছু সময়?”

-“আপনি প্লিজ আমার সামনে থেকে সরে যান।তাহলে আমি শান্তি পাব।”

-“কিন্তু আমি পাব না অতসী।আর তুমি আমার সাথে এমন বিহেভিয়ার কেন করছো?ভুলে যেও না আমি তোমার…..”

-“আপনি আমার স্যার।মনে আছে আমার।”

-“হ্যা।”

-“আমি আমার লিমিটে আছি স্যার।আপনিও থাকেন।”

-“যা বলছো ভেবে বলছো তো?”(দাঁতে দাঁত চেপে)

-“হ্যা।সব ভেবেই বলছি।আপনি আর আপনার গার্লফ্রেন্ড সুখে থাকুন।”

-“থাকবই তো।তাতে তোমার কি?”

-“আমার..”

বলতে গিয়েও আটকে গেলাম।উনি এগিয়ে এসে বললেন,

-“হুম বলো অতসী। বলো? ”

আমি কিছু বললাম না।
উনি আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললেন,

-“কিছু বলবেও না।তোমার কাছে তো তোমার ইগো বড়।এখন এখানে শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে?কেন এভাবে বের হয়ে গেছিলে তুমি?”

-“আমার ইচ্ছে। ”

-“তোমার ইচ্ছে মানে।তুমি জানো কি হতে পারত!”

-“যা ইচ্ছে হত।তাতে আপনার কি।প্লিজ আপনি যান তো।”

আমি হাইপার হয়ে গেলাম।

-“আ..আচ্ছা আ’ম গোয়িং।তাও উত্তেজিত হইও না।”

উনি আমাকে সামলাতে না পেরে বের হয়ে গেলেন।উনি যেতেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। চোখ দিয়ে দুি ফোটা পানি আমার গাল বেয়ে পড়লো।খনো ওনার সাথে কাটানো সব মুহূর্ত আমার মনে দানা কাটছে।প্রথম ভালোবাসাকে ভোলা অনেক কঠিন।অনেক।এভাবে বেশ অনেক্ষণ কেটে গেলো।কিছু সময় পর অনুভব করলাম কেউ দরজা খুলে ঢুকলো।রোদ্দুর স্যারের পারফিউমের গন্ধ পাচ্ছি।উনিই এসেছেন।উনি এসে আমার পাশে বসলেন।আমি চোখ খুলতে গিয়েও খুললাম না।উনি আমার মাথায় হাত রাখলেন।চুলে হাত বুলিয়ে বললেন,

-“সত্যিটা তোমার থেকে বের গিয়ে আমাকে অনেককিছু করতে হচ্ছে অতসী।আমায় তুমি ভুল বুঝো না।আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না অতসী।আমার জন্যই তোমার এত বড় ক্ষতি হলো।আমায় তুমি ভুল বুঝো না,ভুল বুঝো না।”

বলে আমার কপালে চুমু খেলেন।আমি চোখ খুললাম।উনি তা দেখে তাড়াহুড়ো কর বের হয়ে গেলেন।উনি আমার কপালে কিস করলেন?
কেন!!উনি তো আমায় ভালোবাসেন না।তাহলে এসব কথার মানে কি।আমার ভাবনার মাঝেই দ্বীপ ঢুকলো।আমার পাশে বসে বললো,

-“কেন এমন করলি?”

-“আমি ইচ্ছে করে করিনি।”

-“রাস্তায় কেন গিয়েছিলি?”

-“খেয়াল ছিলো না কখন রাস্তায় চলে এসেছিলাম।
আচ্ছা দ্বীপ!”

-“কি?”

-“তোর এখনো মনে হয় লোকটা আমাকে ভালোবাসে?”(তাচ্ছিল্যের হাসি)

-“হুম।”

-“কিহহ!কি বলছিস তুই।এতকিছুর পরেও তুই এটাই বলবি?”

-“উনি তোকে ভালো না বাসলে সবার আগে তোর খোঁজ করতেন না।আমাদের কারোরই তোর কথা খেয়াল ছিল না।উনিই তোকে পাগলের মত খুঁজছিলেন। বাহির থেকে তোর আওয়াজ শুনে উনি দৌড়ে যান।তোকে দেখে কিভাবে কান্না করছিলো।আর বলছিলো,তোমার কিছু হবে না অতসী।তোমার কিচ্ছু হতে দিব না আমি। বলে পাগলের মত ছুটছিলো তোকো কোলে নিয়ে।কি করবে বুঝতে পারছিল না হয়ত।পাগলের মত এদিক-ওদিক ছুটছিলো।”

-“কিহ!”

-“হ্যা।উনি তোকে ভালোবাসেন।আর উনি চাপে পড়ে অথবা অন্য কোনো কারণে এসব করছেন।”

-“কি কারণ হতে পারে?”

-“জানি না।সেটাই আমাকে বের করতে হবে।তোকে আমার পাশে চাই।”

আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম,

-“যা ইচ্ছে হয়ে যাক।আমি ওনাকে দেখতেও চাই না।আমার আত্মসম্মান আছে।”

-“তো উনি কি তোকে অপমান করেছে নাকি?ওনারা কেউ হয়ত তোর ফিলিংস জানে না।”

-“উনি তো জানেন তাহলে উনি বলতেন।”

-“এটাই তো কথা।কেন বললেন না।তোকে আমার সাথ দিতেই হবে।”

-“আমি নেই এসবে।আমি এসব থেকে দূরে থাকতে চাই।”

-“চাঁদনী প্লিজ!ভালোবাসাকে পেতে হলে একটু কষ্ট পেতেই হয়।আমাদের বের করতে হবে যে ওনার সমস্যা টা কি। তুই আমার সাথে আছিস?”

বলেই হাতটা এগিয়ে দিলো।আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।ও আমার হাতটা নিয়ে নিজের হাতের উপর দিয়ে বললো,

-“ওকে ডান।”

-“কি ডান ডান শুরু করছিস!সর এখান থেকে।আমাকে একা থাকতে দে।”

-“তুই যতই একা থাকিস না কেন!তুই ওনাকে ভুলতে পারবি না।”

আমি অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে রইলাম।উনি অন্য কারোর বর হবেন।আমার ওনার উপর কোনো অধিকার নেই।এটা আমাকে মেনে নিতেই হবে কিন্তু আমার মনে অনেক প্রশ্ন আছে।ওনার বিহেভিয়ার নিয়ে।আমাকেও এসবের উত্তর জানতেই হবে।একটু কষ্ট হলেও আমাকে এটা করতেই হবে।
তাই আর না পেরে আমি দ্বীপের কথায় সায় দিয়ে ওর সাথে হাত মিলালাম।
এবার দ্বীপ ওর মত প্ল্যান বলতে লাগলো।আর আমি সাথ দিচ্ছি। এবার সত্যি বের না হয়ে যাবে কোথায়!

চলবে….

#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:২৩

হাসপাতালের বেডে শুয়েই সবাইকে সাক্ষী রেখে আমি পাশে বসে থাকা দ্বীপের হাত ধরে বললাম,

-“আমি তোমাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে একটা কথা বলতে চাই।আমি আর দ্বীপ মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এতটুকু বলতেই কোত্থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন রোদ্দুর স্যার।দরজা খুলে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,

-“তোমাকে আমার কিছু বলার আছে অতসী!”

আমি এটা শুনে সেদিকে তাকালাম।ওনার পিছন থেকে ওনার আম্মুও বের হয়ে এলেন।আর বলতে লাগলেন,

-“সবার সামনে!”

উনি সবাইকে দেখে চুপ হয়ে গেলেন।দ্বীপ আর আমি একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি।আমি অবাক হয়ে বললাম,

-“কি বলবেন আপনি স্যার?”

স্যার কিছু বলতে গিয়েও বললেন না।সায়ন্তি বললো,

-“কি না বলবি তুই!”

আমি কিছু বলার আগেই স্যার বললেন,

-“কি বলবে তুমি অতসী?”

আমি মুচকি হেসে বললাম,

-“স্যারও এসে গেছেন ভালোই হলো।তো আমি যেটা বলছিলাম।আমি আর দ্বীপ সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা বিয়ে করব।”

বলেই দ্বীপের দিকে তাকালাম।দ্বীপের ঠিক পিছনেই স্যার আর ওনার আম্মু।আমি সেদিকে তাকাইনি তাই ওনার রিয়াকশনটা বলতে পারছি না।ফুপি এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন,

-“আমি অনেক খুশি হয়েছি।এই প্রস্তাব টাই আমি তোর মাকে দিতে চেয়েছিলাম।”

আমি হেসে সায় দিলাম।দ্বীপ আমার হাত ধরে বসলো।আম্মু বলতে লাগলো,

-“ছেলে-মেয়েদের পছন্দ থাকলে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু এখনই বিয়ে…”

আব্বু বলতে লাগলো,

-“সমস্যা কি!এখন কাবিন করিয়ে রাখবো।অতসীর রেজাল্টের পর নাহয় তুলে নেয়া হবে।আর তাছাড়া ভালোই তো হলো এতদিনে আমাদের মেয়ে রাজি হলো।কম তো ছেলে দেখিনি।”

দাদী আচমকা বলতে লাগলো,

-“কিসের বিয়ে।এতটুকু মেয়ের কোনো বিয়ে নেই!”

আমি ভ্রু উঁচিয়ে তাকালাম। দ্বীপের হাতে চিমটি কেটে বললাম,

-“দাদীর রিয়াকশন এমন কেন?”

আম্মু দাদীর কথার পাল্টা জবাব দিলো,

-“আম্মা আপনিই তো চাচ্ছিলেন বয়স থাকতে থাকতে যেন অতসীর বিয়েটা হয়ে যায়।আর ওর তো এমনিতেও একটু লেটে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ২০ বছর হয়ে যাচ্ছে।”

-“হ্যা আমি বলেছিলাম।কিন্তু এতটুকু মেয়েকে তুমি এখনই পরের বাড়িতে দিচ্ছ।”

ফুপি রাগ করে বললো,

-“নিজের মেয়েকে পর করে দিলে মা।যাবে তো আমার বাসায়ই।আর আমি তো কবে থেকে ভাইকে বলে রাখছিলাম যে ওর বড় মেয়েকে আমার দ্বীপের জন্য পছন্দ! ”

এভাবে একথা দুকথা নিয়ে পাল্টাপাল্টি উত্তর চলছে।দ্বীপের দিকে অসহায় চোখে তাকালাম আমি।ও আমাকে হাতে ইশারায় আমাকে চুপ থাকতে বলে কিছু বলতে নিলেই হঠাৎ রোদ্দুর স্যার চেঁচিয়ে উঠলেন,

-“সাইলেন্ট!!!!”

আমি কেঁপে উঠলাম।স্যারের দিকে অবাক হয়ে তাকালাম।উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,

-“বাচ্চা একটা মেয়ে!বয়স যতই হোক।এর মাথায় আছে টা কি?একে এখনই বিয়ে দিতে হবে এর কোনো মানে হয়?”

আব্বু বললো,

-“কাবিন করিয়ে রাখলে ক্ষতি কি!”

-“আংকেল।আপনার মেয়ে কি নিজ ইচ্ছেতে করছে নাকি অন্য জিদে সেটা আগে জিজ্ঞেস করুন।”

বলেই আমার দিকে কোণা চোখে তাকালো।
আমি তা দেখে মুখ ভেংচি কেটে বললাম,

-“আমি কোনো জিদে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।দ্বীপ আমার ভালো খেয়াল রাখবে।ওর সাথেই আমি ভালো থাকব।”

স্যার আমাকে উদ্দেশ্য করে কঠিন গলায় বললেন,

-“লজ্জা করে না বড়দের সামনে এসব বলছ?”

-” না করে না।আপনি বলেননি সেদিন?”

-“আমি তোমার চেয়ে যথেষ্ট বড়।”

-“আমিও অতটা বাচ্চা নই।”

আমাদের ঝগড়া দেখে দ্বীপ বললো,

-“কান্টিনিউ।বেস্ট অফ লাক চাঁদনী।”

বলেই আব্বুকে গিয়ে কি যেন বললো।এবার একজন একজন করে সবাই বের হয়ে চলে যাচ্ছে। আমরা ঝগড়া করেই যাচ্ছি।

-“নিজে কি হ্যা?সবসময় ঝগড়া আর ঝগড়া।আপনার কি আমি দ্বীপকে বিয়ে করবো।”

-“আমার আবার কি হবে।আমিও তো বিয়ে করব জোনাকিকে।”

-“তো করুন না।আমি কি আপনাকে আটকে রেখেছি নাকি হ্যা?”

বলেই আমি উত্তেজিত হয়ে আধশোয়া থেকে উঠতে নিতেই পড়ে যেতে নিলাম।রোদ্দুর স্যার এসে আমাকে ধরে ফেললেন।আমার হাত দিয়ে আমি ওনার কাঁধ ঝাপটে ধরলাম।ভয়ে কাঁপছি। উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন।
আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,

-“আপনি আমাকে এভাবে ধরলেন কেন?”

উনি নিজেকে পড়তে পড়তে সামলে নিলেন।দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

-“না ধরলে এখন পড়ে যেতে।এত উত্তেজিত হও কেন?কি হতে পারত।”

-“যা ইচ্ছে হোক।আপনার কি হ্যা। যান তো জোনাকিকে নিয়ে আলো ছড়ান!”

-“হোয়াট ননসেন্স। কিসের আলোকিত..হোয়াটস দ্যাট!”

-“আপনার মাথা!”

উনি রেগে গেলেন।আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,

-“বেশি বাড় বেড়ো না অতসী।”

আমি ওনার বুকে হাত দিয়ে বললাম,

-“কি করবেন?”

উনি একটা হাত আমার একপাশে রেখে বাঁকা হেসে বললেন,

-“যতটা ভদ্র ভাবছো ততটা আমি নই।”

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ওনার হাতের দিকে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বললাম,

-“হাতটা সরান।”

-“কেন?”

-“আপনি আমার টিচার তাই।”

উনি এবার আরেক পাশে হাত দিয়ে বললেন,

-“এবার কি করবে?”

-“দে..দেখুন স..স্যার!”

-“হুম বলো!”

বলে আমার দিকে একটু ঝুকে গেলো।আমি চোক খিঁচে বন্ধ করে বললাম,

-“আপনি আমার দিকে এভাবে ঝুঁকতে পারেন না।কারণ আপনার বউ হবে জোনাকি।আর আমারো বিয়ে হবে দ্বীপের সাথে।”

সাথে সাথে অনুভব করলাম আমার দুইপাশ থেকে হাতগুলো সরে গেছে। আমি পিটপিট করে চোখ খুললাম।কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে স্যার এদিক-ওদিক পায়চারী করছেন আর বারবার বুড়ো আঙুলের সাহায্যে নিজের কপাল ঘষছেন।কোনো সময় হাত দিয়ে ঘাড়ে ঘষছেন।রাগ উঠে গেছে মনে হয়।
আমি ঢোক গিললাম।কেউ আসে না কেন!
এই লোক আমাকে একা পেয়ে খেয়ে না ফেলে।
উনি হঠাৎ জোরে জোরে পা ফেলে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,

-“লিসেন!তুমি দ্বীপকে বিয়ে করবে না।”

আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-“কেন?আমি ওকে বিয়ে করব।”

উনি ভ্রু কুঁচকে শক্ত গলায় বললেন,

-“আমি যা বললাম তাই হবে।”

-“কেন হবে!আমার লাইফ।আমি বুঝব।”

-” না তুমি বুঝবে না।আমি বলেছি, তুমি দ্বীপকে বিয়ে করবে না।”

-“আমি করব।”

উনি চোখ বন্ধ করে বললেন,

-“আমার রাগ উঠিও না অতসী।”

-“আপনার কি আজব তো!আমার যাকে ইচ্ছে আমি বিয়ে করব।আপনার কি যায়-আসে! ”

-“আমার যায়-আসে ”

-“কেন!”

-“কারণ আমি তোমাকে…”

এতটুকু বলে উনি আটকে গেলেন।আমি ওনার দিকে উত্তরের আশায় চেয়ে আছি।আমার মুখে খুশির ঝিলিক।উনি আমাকে ভালোবাসেন।আর এটাই বলতে নিচ্ছিলেন। আমি বললাম,

-“কি হলো বলুন।থামলেন কেন?”

উনি চেয়ারে বসে পড়লেন।হাতে হাত ভাজ করে অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন,

-“আমি কেন!তুমি বলো।”

আমিও অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,

-“আমি কেন বলতে যাব।আপনি জানেন আপনি কি বলবেন।”

-“দেখো,আমিও জানি যে তুমি আমাকে কি বলতে চাও।”

-“জানেন তাহলে আমি আবার বলব কেন।আর এখন বলেই বা কি লাভ।”

-“কেন লাভ নেই কেন?”

-“নাহ কিছু না।আপনার বিয়ের আয়োজন কবে থেকে?আমাকে তো সুস্থ হতে হবে।”

-“বেশি না বকে চুপচাপ শুয়ে থাকো।”

-“আপনি চুপ করুন।”

-“অতসী,বেশি স্মার্ট হইও না ওকে!আমি কিন্তু তোমার স্যার।এসব বেয়াদবি করছো তুমি।যখন পড়াব,তখন কিন্তু সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিব।”

আমি ওনার দিকে জিভ দেখিয়ে বললাম,

-“আমি পড়বই না আপনার কাছে!”

-“কেন?”(ভ্রু কুঁচকে)

-“বাহ রে!আমার হাসবেন্ড বুঝি আমাকে পরপুরুষের কাছে পড়তে দিবে?”(চোখ বড় করে)

উনি শক্ত গলায় বললেন,

-“হোয়াট দা হেল!হাসবেন্ড মানে?আর আমি পরপুরুষ? ”

-“হ্যা আপনি তো পরপুরুষ ই!”

-“আর হাসবেন্ড কে?ওই দ্বীপ? ”

-“হুমম।”(ব্লাশিং হয়ে)

-“বেশি পাকামো করো না।”

-“আমি পাকামো করছি না!”

উনি চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করে বললেন,

-“বাঁচতে চাইলে চুপ করে থাকো।”

-“আপনি যান তো মশাই।আমার হাসবেন্ড আসবে।ওর সাথে আমার প্রাইভেট টাইম কাটানোর আছে।”

-“কি বললে তুমি?”

বলেই আবারো আগের ন্যায় দুইপাশে হাত রেখে ঝুঁকে গেলো।চোখগুলো লাল হয়ে আছে।হয়ত সারারাত ঘুমায়নি বলে।চুলগুলো এলোমেলো।
রাগে ভ্রু কুঁচকে আছে।আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-“আবার ঝুঁকলেন!”

-“হুম আমিই ঝুঁকবো। আমি নয়তো কে?ওই দ্বীপ?”

-“বারবার আমার দ্বীপের কথা তুলবেন না তো!”

-“ওহ আচ্ছা!তোমার দ্বীপ?”

-“হ্যা আমারই তো।ওর সাথে আমার বিয়ে হবে।আর তারপর ওর সাথে আমি ঘুরতে যাব।ওই তো আমাকে পড়াবে।”

-“আর আমি?”

-“আপনি আর কি!আপনি স্যার।আর আপনি তো জোনাকি আপুকে বিয়ে করবেন।তখন কি আর উনি অন্য মেয়েকে পড়াতে দিবেন?”

-“তুমি বেশি বাজে বকছো!”(দাঁতে দাঁত চেপে)

-“বকলে বকলাম!”

উনি চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমার খুব হাসি পেলো।তারমানে উনি জেলাস।আমি ভাবলাম,আরেকটু জেলাস করালে কেন হয়!যেই ভাবা সেই কাজ।আবার বললাম,

-“ভাবুন!আমার আর দ্বীপের বিয়েতে আপনি নাচলেন।কত ভালো হবে বলুন তো।আর তারপর দেখুন,আমদের বাসর রাতে আমি দ্বীপকে একটা সুন্দর গিফট দিবো।”

-“তোমার স্যারের সামনে এসব বলছো।লজ্জা নেই? বাসরের আলাপ পারছো।”

-“না নেই।আর এখন তো আর আপনি আমার স্যার নেই।আর তো পড়ব না।চিল।”

-“অতসী তুমি…”

-“আরে শুনুন না।আমি ওকে গিফটটা দিয়ে বলবো,
আই লাভ….!”

আমার চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।নিজের অধর জোড়ায় অন্য কারোর অধর জোড়ার স্পর্শে কেঁপে উঠছি।আমার সামনে থাকা ব্যক্তিটা চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কমাতে ব্যস্ত। এদিকে এমন শক পেয়ে আমি রিতীমত ফ্রিজড।কেউ ঢুকে এই অবস্থায় দেখে ফেললে কি হবে?
আমি ওনার বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিলাম।কিন্তু নড়াতে পারলাম না।উনি নিজের মত মত্ত!
আমি হাজার চেষ্টা করেও চোখগুলো খুলে রাখতে পারছি না।বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লজ্জায় আমি দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । কিছু সময় পর নিজেকে মুক্ত পেলাম।উনি আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে শ্বাস ছেড়ে ফিসফিস করে বললেন,

-“আই লাভ ইউ!”

আমার রুহ কেঁপে উঠলো।মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
পেয়েছি আমি!জীবনের সবচেয়ে বড় সুখটা আমি পেয়ে গেছি। এবার মরেও শান্তি।

চলবে…