প্রিয় সুখ পর্ব-৪০

0
63

প্রিয় সুখ-৪০
হাফসা আলম
___________________
রক্তিম আকাশ। এক ফালি রক্ত ছুঁড়ে মেরেছে নীল গগণের বুকে। গৌধুলির সুর বেজে চলেছে। আকাশে উড়ছে ঘুড়ি। শীতল হওয়া, কুয়াশারা নামছে নেচে নেচে। পাখিরা উড়ছে গেয়ে গেয়ে। পৌষের ঠান্ডা আবহাওয়া শীতল করে তুলছে চারপাশকে। কি অদ্ভুৎ প্রকৃতি! মানুষকে সাজায়। গুঁছিয়ে নেয়। নিজের মতই তৈরি করে নেয়। কিন্তু নিজে পরিবর্তন হয় না। ঠিক মানুষের মনের মত। মনবাড়ির কুটিরে কেউ আসে হুট করে। প্রকৃতিতে শীত বর্ষা হেমন্ত বসন্ত যেভাবে আসে। কিছু সময় দোলা দিয়ে যায়। প্রেমানুভূতি জাগায়। তারপর মানুষকে এক অগাধ দুঃখে ভাসিয়ে চলে যায়। হৃদয় ক্লেশে ফেঁটে পড়ে। অথচ মুখ থাকে স্বাভাবিকের মতই সচ্ছ। হৃদয় যদি আরশির সামনে দাড়িয়ে দেখা যেত তাহলে কি কষ্টটাই না পেত চক্ষু। মানুষের হৃদয় এমনেই। এভাবেই ঝরের কবলে পড়ে সে। এতই কোমল যে একবার ভাঙ্গলে জোরা লাগতে সময় লাগে। বহু সময়। কিন্তু জোড়া তো লাগেই। প্রকৃতি থেকে শীত যেতে যেমন কষ্ট হয়ে আবার তা ধীরে ধীরে মুঁছে যেতে থাকে ঠিক তেমনই কষ্ট মুছে যায়। তবে মনে পড়ে সেই শীতকে। সেই ভালোবাসাকে। ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খা সারাটা জনম ধরে থেকে যায়। ভালোবাসা তো প্রকৃতির মত আসে। কিন্তু চক্র আকারে প্রকৃতির মত আবর্তিত হয় না। এটাই এর নিয়ম। মানুষের কাছে ভালোবাসার কোন ব্যাখা নেই। অর্থ নেই। তবুও মানুষ ভালোবাসে। কি অদ্ভুৎ! হুট করে কি সত্যি ভালোবাসা হয়? হয় না। ভালোবাসা হুট করে কখনোই হয় না। হুট করে হয় পছন্দ। তা থেকে ধীরে ধীরে তা মায়া মোহ নেশা আকাঙ্খা গড়িয়ে ভালোবাসার দরজায় এসে পৌছায়। ভালোবাসা পাওয়া তো এতো সহজ নয়। সহজ বিষয়ের দাম তো বড্ড কম। ভালোবাসার দাম একটু বেশি। অনেক বেশি। যতটা বেশি হলে জীবন তুচ্ছ মনে হয়। ঠিক ততটা দাম বহন করে এই ভালোবাসা। সেই দামি ভালোবাসার কিছু শব্দ কেউ কাগজে বন্দি করে নীহারিকার দরবারে নিয়ে এসেছে। ডাকপিয়নের সময়টা যেন ফিরে এসেছে। সময় বহু বহু বছর পিছিয়ে গেছে। পূর্বের মত সাদা পৃষ্ঠা নয় এটি। খুব সুন্দর একটি বাদামী কাগজে কৃষ্ণ বর্ণের লেখা। নীহারিকা ছাদের এক পাশে বসে ছিলো। তাদের বাড়ির সামনের বিশাল দালানটির জন্য এখন আর সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করা যায় না। নীহারিকার খুব দুঃখ অনুভব হয়। কেনো মানুষ এতো বাড়ি ঘর তৈরি করে? সুন্দর পরিবেশ গুলোকে কেন এতো নষ্ট করে? প্রয়োজনের বেশি কেনো প্রয়োজন তাদের? হঠাৎ খুব বিরক্তি কাজ করছে তার। হাতের কাগজটি একদম দুমড়ে মুচড়ে ফেলল। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক নজরে। তখনই দেখল গেট দিয়ে একটি কালো গাড়ি প্রবেশ করছে। এটি কার গাড়ি সে যানে। আজ বিমুগ্ধ তার পরিবার নিয়ে সামনের সাদা দানবীয় বাড়িতে উঠবে। সকাল থেকে ফার্নিচার আসতে শুরু করেছে। গাড়ি থেকে নেমেই বিমুগ্ধ সবার আগে দূরের ছাদে বসে থাকা উদাসিন রমনীতে দৃষ্টি রাখল। মেয়েটি এভাবে বসে আছে কেন? পৃথিবীর কিছু দৃশ্য, কিছু অনুভূতি, কিছু সুখ মানুষ তার জীবনে বার বার অনুভব করতে চায়। বিমুগ্ধ এই রমনীর সকাল হতে চায়। সন্ধ্যার সঙ্গী হতে চায়। এমন হাজারও চাওয়ার মাঝের নতুন একটি এক ছুটে ছাদে উঠে মেয়েটির পাশে বসে তার কোলে মাথা রেখে দূরের সুন্দর আকাশটি উপভোগ করা। এসব সত্যি হবে তো!
নীহারিকা কাগজটি মেলে মুখের কাছে ধরল। এভাবে শুধু একজনই লিখতে পারে। কি অদ্ভুৎ লিখা! কোনো সম্বোধন, তারিখ বা অন্যকিছু লিখেনি। শুধু কালো কালিগুলো যেন কথা বলছে,
“ পাগল অনেক ধরনের হয়। মানুষের আচরণ ভেদে পাগলের সংখ্যা অনেক রকমের। তবে আমরা যাদের পাগল বলি তারা প্রকৃত পাগল নয়। তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ। ব্রেনের সমস্যা যাকে বলে। কিন্তু পাগলও পৃথিবীতে আছে। আমার কাছে এদের সংজ্ঞা অন্যরকম। একটু ভিন্ন। পাগল তারাই হয় যারা মন থেকে এলোমেলো। অসুস্থ। মানসিক রোগের চিকিৎসক হিসেবে আমি এটাই বুঝি। মস্তিস্কের বিকৃতি ঘটলে মানুষ অসুস্থ থাকে। সারিয়ে তোলা যায়। ঔষুধ পরলেই মানুষের রোগ নিরাময় হয়। কিন্তু মনের রোগ নিরাময় যোগ্য নয়। এর ঔষুধ পাওয়াও কঠিন। খুবই কঠিন। যা নিরাময় হতে পারে না আমার কাছে তাই পাগলামী। হ্যা পাগল না হলে পাগলামী বুঝা যায় না। ডাক্তাররা কখনো পাগল হয়? হয়। কারণ পাগল যে কেউ হতে পারে। ভালোবাসা জিনিসটিই তো পাগলামী। এই ভালোবাসার জন্য ঘুমাতে না পারাই পাগলামী। তুমি কখনো পাগলামী করেছ জীবনে? কখনো কি কষ্ট এবং সুখের সন্ধান এক সাথে পেয়েছ? ভালো খারাপের মাঝে বসবাস করেছ? আনন্দ কান্না এক সাথে এসে চোখে মুখে ভীর করেছে? কখনো কি যন্ত্রণা এবং স্বস্ত্যয়ন এক সাথে অনুভব করেছ? যদি না করো তাহলে তুমি সুস্থ। স্বাভাবিক। সাধারণ। পাগল নও। আমার মনে হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে এই রোগ আমার উপরে ভর করছে। পাগলামী এসে চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। ঔষুধ বিহিন এক পাগলের ডাক্তার পাগল হয়ে মরতে বসবে মনে হচ্ছে। বিষয়টি কতটা ভয়ংকর বুঝতে পারছ তুমি? তুমি বুঝতে পারবে না। এক পাগল ব্যতিত অন্যপাগলের অনুভূতি কেউ বুঝবে না। এসব পড়ে নিশ্চয় তোমার রাগ হচ্ছে? রাগেশ্বরী তোমার রাগী মুখের সৌন্দর্য্য আমার হৃদয়ে সবচেয়ে সুন্দর করে আঁকা। তোমাকে রাগলে ভালো লাগে। তোমার চোখ তখন কঠিনহয়ে উঠে। নাক লাল হয়ে যায়। ঠোঁট কথা বলে। গালে গোলাপ বাস করে। গোলাপী গোলাপ। কপালে ভাঁজ পড়ে। নিঃশ্বাস দীর্ঘ হয়। ভালো লাগে দেখতে। মানুষকে সবচেয়ে বেশি হাসলে ভালো লাগলেও রাগেশ্বরীকে রাগলে ভালো লাগে। তার দীর্ঘ আঁখিতে রাগ ভাসলে আনন্দ লাগে। তার চোখের তারায় তারায় ক্রোধ বসবাস করলে মনে হয় স্বর্গীয় আগুণ। আচ্ছা স্বর্গ জান্নাত বেহেশতে এসবে আগুন আছে তো? না কি আগুণ শুধুই জাহান্নামের জন্য? কিন্তু তোমার রাগ তো স্বর্গীয়। তোমার চোখের আগুণ তো বেহেশতী। তোমার ক্রুদ্ধ ঠোঁট তো জান্নাতি। কতই না আবেগী রাগ। হা হা হা। আমার মন বলছে তোমাকে বানানো হয়েছে আমার মত পাগলের জন্যই। আমার মন কি সত্য কথা বলে?
প্রতিটি সুন্দর জিনিসের একটি ভয়ংকর দিক থাকে। যেমন সমুদ্রের মাঝে ঝড়, পাহাড়ের মাঝে ধ্বস, বরফের মাঝে তুষারপাত, বৃষ্টির মাঝে বন্যা, ঠিক তেমনই নারীর মাঝেও রয়েছে ধ্বংস। প্রেমের মাঝে রয়েছে বিচ্ছেদ। ভালোবাসার মাঝে রয়েছে পাগলামী। যা একজন মানুষকে শেষ করার জন্যেই যথেষ্ঠ। প্রিয় নীহারিকা, তুমি কি আমার ভালোবাসার ভয়ংকর রকমের পাগলামী দেখতে প্রস্তুত?’

স্তব্দ হয়ে নীহারিকা শেষ অংশ পড়তে নিতেই বাতাসের তোপে চিঠি উড়ে গেল। নিচে কারো পায়ের কাছে পিষ্ট হচ্ছে। নীহারিকার সেদিকে মনোযোগ নেই। সে দৌড়ে নিচে নামতে শুরু করল। শেষে কি লেখা ছিলো? বিমুগ্ধ কি করবে? কি ভয়ংকর পাগলামী করবে সে? নীহারিকা কখনো চায় না পরিবারের মাঝে ঝড় উঠুক। যে ঝড় একটি পরিবারকে শেষ করে দিবে। সে চায় না কোন ভয়ংকর তুফান তাদের জোড়া লাগা পরিবার আবার টেনে হিঁচড়ে ছিড়ে আলাদা করে দিক। ভালোবাসাকে কি পরিবারের জন্য উৎসর্গ করা যায় না? মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব কার? পরিবারের না কি ভালোবাসার? নীহারিকার জীবনে কি ভালোবাসা আছে? সে কি চায় বিমুগ্ধ নামক এক অদ্ভুৎ পুরুষের সাথে বাকিটা পথ কাঁটাতে? সকালের সূর্যদয়, গোধূলীর সূর্যঅস্ত, কিংবা ঋিতু পরিবর্তনের মিলন উৎসব উপভোগ করতে?

নীহারিকা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ জাওয়াদের হাতের দিকে। সে বেশ বুঝতে পারছে অনেকটা পড়ে নিয়েছে জাওয়াদ। সাথে সাথে বিরক্ত হলো খুব। মুখটা কঠিন করে বলল,’ অন্যের জিনিস জিজ্ঞেস করে পড়তে হয়।’
‘ এটা তোমার?’ জাওয়াদের মুখ রক্তিম। অনেকটা গম্ভীর কণ্ঠ। নীহারিকা কখনো তাকে এমন গলায় কথা বলতে শুনেনি। মনে মনে নীহারিকা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। বিমুগ্ধের সাথে বাবার সম্পর্ক তেমন ভালো না। এখন জাওয়াদ যদি এই চিঠি তার কাছে নিয়ে যায় তাহলে পরিবেশ বেশ জটিল হবে। আজকে রাতে তাদের বাসায় আয়োজন আছে। বড় বাবাদের পরিবারের সকলের দাওয়াত। দাদামশায় চেয়েছেন তারা প্রথম দিন নিজেদের বাবার বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করবে। মা খুব খুশি। নেচে নেচে রান্না করছে। এদিকে ছড়িয়ে পড়ছে ঘ্রাণ। জাওয়াদের পরিবারও যে দাওয়াত পেয়ে বসে আছে সে যানতো না। বাবার প্রতি মনে মনে নীহারিকা একটু মন ক্ষুণ্ণ হলো। কথায় কথায় এই লোকটাকে বাসায় নিয়ে আসে। এভাবেই একদিন তার জীবনেও নিয়ে আসবে। নীহারিকা আর ভাবতে পারছে না। জাওয়াদ কিছুটা রেগে বলল,’ এটা তোমার? কে দিয়েছে? ময়লা একটা কাগজে কেউ এভাবে প্রেম পত্র দেয়? নাম বলো একবার আমি মজা দেখাবো?’
রাগলে সত্যি জাওয়াদকে খুব বিশ্রী দেখায়। এখনো দেখাচ্ছে। নীহারিকা পাল্টা রেগে বলল,’ এক পাগল তার রাগেশ্বরীকে দিয়েছে। আপনার হিরোগীরি বন্ধ করে বাসায় যান।’
সে এক প্রকার টেনে নিয়েছে পত্রটি। তখনই বাবা এসে হাজির। ভয়ে নীহারিকার কপালে পানি জমছে। জাওয়াদ কি বলেদিবে? বাবা আবার উল্টোপাল্টা বুঝলে? নীহারিকা দেখল জাওয়াদ বাঁকা চোখে তাকে দেখছে। বাবাও তার দিকে তাকিয়ে আছে। দূরের ছাদে বিমুগ্ধের গম্ভীর, রাগী, ভয়ংকর দৃষ্টি। নীহারিকা বুঝলো না! সবাই তাকে এভাবে দেখছে কেনো? সে কি এমন অপরাধ করেছে?
____________
রাত দশটা। নীহারিকাদের পুরোনো আমলের বাড়িটিতে মানুষের ভীর। চট্টগ্রাম থেকে ফাবিহা এবং তার নব জামাইকেও দাওয়াত করা হয়েছে। বয়স্ক সকলে ড্রয়িং রুমে বসে আছে। নীহারিকা চোখ মুখ কুঁচকে নিচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর। অঘোষিত নীড়ব এক যুদ্ধ ক্ষেত্র মনে হচ্ছে। নাফিস উদ্দিন বিমুগ্ধকে দেখছে। বিমুগ্ধও তাকে দেখছে। নবীন উদ্দিন বিমুগ্ধকে দেখছে। জাওয়াদ এবং তার বাবা নাফিস উদ্দিনকে দেখছে। আর এদের কয়েকজনকে ঘিরে বাচ্চাদের চোখ নিবন্ধ রয়েছে। নীহারিকার দাদা একটি বড় চেয়ারে বসে আছে। নিজের দুই ছেলেকে দেখে তিনি একটু পর পর হাপিয়ে উঠে দীর্ঘ নিঃশ্বাস টেনে নিচ্ছেন। বড় দুঃখ লাগে উনার। এতো বড় ছেলেগুলো বাচ্চাদের মত ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত থাকে ইদানিং। আজকের এই চোখ গরম চাহনী গুলোর কারণ তিনি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন। হয় তো এর একমাত্র কারণ তার নাতনী নীহারিকা। তার প্রিয় নাতনী। তার সবচেয়ে বেশি যত্ন এই নাতনীই করে। তিনিও খুব ভালোবাসেন তাকে। তার বিয়ে নিয়ে যখন এতো মাতামাতি তখন তিনি অবশ্যয় কথা বলবেন। গলা পরিষ্কার করে তিনি বললেন,’ সবাই একে অপরকে গিলে খাচ্ছ কেন?’
জাওয়াদের বাবা বললেন,’ আসলে আঙ্কেল আমি চাইছি আমাদের পুরোনো সম্পর্কটিকে আবার নতুন করে মজবুত করতে।’
‘ সম্পর্ক কি বাড়ি ঘর না কি যে ইট সিমেন্ট দিয়ে মজবুত করতে হবে?’
বৃদ্ধের কথায় থতমত খেয়ে গেল মধ্যবয়স্ক লোক। জাওয়াদ বলল,’ আসলে দাদু তারা আমাদের মাধ্যমে মজবুত করতে চাইছে।’
‘ শুনেছি তুমি ডাক্তার। ইট সিমেন্ট কবে হলা?’
জাওয়াদ চুপ করে গেল। এই লোক আজকে তার পিছনে পড়েছে কেন? আশ্চর্য্য তো! নবীন উদ্দিন এবার নিজের বিষয়টি পরিষ্কার করে বললেন,’ মা চেয়েছে নীহারিকা আমার বাড়ির বউ হয়ে আসুক। এটা তার শেষ ইচ্ছে ছিলো। বাবা তুমি অনুমতি দিলে দ্রুত এই বিয়ের আয়োজন হবে।’
নাফিস সাহেব প্রচন্ড ক্ষিপ্ত। গলার স্বর আরও খারাপ করে বললেন,’ নীহারিকা আমার মেয়ে। বাবার নয়। আর আমার মেয়েকে আমি আমার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিবো। কোন ছিঁচকে পাগলের ডাক্তারের সাথে নয়।’
‘ এই ছিঁচকে বললে কাকে? আমার ছেলেকে তোমার ফেলনা মনে হয়।’
‘ অবশ্যয়। তার কোন গুরুত্ব নেই আমার জীবনে।’
নবীন সাহেব বেশ উত্তেজিত। নীহারিকা এসব দেখে এক ফাঁকে ছাদে চলে গেল। তার গোলমাল ভালো লাগছে না। এরা তাকে বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে কেন? সে কি বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে? মিতু আপু ফাবিহা তার পিছন পিছন এসে দাড়িয়েছে। বিসন্ন নীহারিকাকে সচরাচর দেখা যায় না। আজ হঠাৎ দেখে মিতু আপু বললেন,’ জাওয়াদকেই বিয়ে করে নে। সুন্দর পুরুষ।’
ফাবিহা ঘোর বিরোধিতা করে বলল,’ তাজিন ভাইয়া বেস্ট। নীহু তুই তাকেই বিয়ে কর।’
‘ ভাইয়া আমারও প্রিয়। কিন্তু নীহুকে জাওয়াদের সাথেই বেশি মানাবে।’
দুই বোন তর্ক বিতর্কে লেগে গেলো। প্রচন্ড চাপ নিতে না পেরে নীহারিকা চেচিয়ে বলল,’ আমার বিয়ে নিয়ে তোমাদের সবার এতো তাড়া কেন? প্লিজ চুপ যাও। তা না হলে এখান থেকে যাও।’
‘ ও মা রেগে যাচ্ছিস কেন?’
‘ তোমরা সকলে আমার বিয়ে নিয়ে পড়েছ কেন? কেন? বলো?’
‘ কারন তোকে সিঙ্গেল রূপে দেখতে ভালো লাগছে না।’ বলেই মিতু আপু হো হো করে হাসলেন। নীহারিকা বিরক্ত হয়ে ছাদের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল। তার অবিরাম সুখি হৃদয়ে মেদুর ছায়া পরেছে। মন কেমনের পঙ্খিরাজ উড়ে যাচ্ছে কুয়াশায় ঢাকা মেঘল আকাশে।
‘ একজন নারীর জীবনে কি বিয়েই সব মিতু আপু?’
মিতুয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর দুইজনই বসে পরলো পাশে।
‘ বিয়েই সব নয়। আবার বিয়ে ছাড়া সব কমপ্লিটও নয়। জীবনকে পরিপূর্ণ করতে বিয়ে প্রয়োজন নীহু।’ মিতুয়া জড়িয়ে ধরলো তাকে। নীহারিকা চুপ করে শুধু চিন্তা করছে তার আসলে কাকে বিয়ে করা প্রয়োজন? বাবার পছন্দের ছেলেকে না কি নিজের পছন্দের ছেলেকে? তার পছন্দের পুরুষ কে? বিমুগ্ধ? নীহারিকা লাফিয়ে উঠে গেল। এই পুরুষের কথা একদম ভাবতে ইচ্ছে করছে না। সে যখন নিচে নেমে আসল, তখন পরিবেশ বিধ্বংসী। চারপাশে সব কিছু এলোমেলো। কিছু সময় পূর্বেই ভয়ংকর এক ঝড় এসেছিলো মনে হয়। নীহারিকা দেখলো বিমুগ্ধ দুই হাতে প্রিয়মের হাত গুলো শক্ত করে ধরে রেখেছে। তার বাবা এবং বড় বাবার মাঝে হাতাহাতি হয়েছে। সামনের টেবিলটি প্রায় উল্টে পড়ে আছে। হতভম্ব সে শুধু জিজ্ঞেস করল,’ কি হয়েছে এখানে?’
সকলে আবার নিজ নিজ স্থানে চলে গেছে। প্রিয়ম টেবিল তুলছে। বিমুগ্ধ টব ঠিক করছে। জাওয়াদ পানি পরিষ্কার করছে টিস্যু দিয়ে। তার বাবা এবং বড় বাবা খুব পরিপাটি হয়ে বসে গেছে সোফায়। নীহারিকার ফুফাতো বোন এগিয়ে এসে গড়গড় করে সব উপড়ে দিলো। এতো নাটক টিকলো না। নীহারিকা চলে যেতেই নবীন উদ্দিন মায়ের শেষ চিঠি বের করে বললেন,’ চিঠি পড়লে নিশ্চয়ই তোর বিশ্বাস হবে?’ তিনি কাগজটি এগিয়ে দিলেন। বুকের ভিতরের চাপা উদ্বেগ নিয়ে চিঠিটি পড়লেন নাফিস উদ্দিন। তবুও তিনি নিজের ত্যাড়ামিকে সর্বোচ্চ স্থানে রেখে বললেন,’ আমি এসব শুনতে চাই না। নীহারিকার বিয়ে আগেই ঠিক করা। এখন এসে এসব বললে তো হবে না!’
জাওয়াদ খুব কঠিন ভাবে বলল,’ আপনি উড়ে এসে জুড়ে বসবেন না প্লিজ আঙ্কেল। আমরা আগেই এই বিষয়ে একে অন্যের সাথে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ।’
বিমুগ্ধ দীর্ঘ সময় চুপ করে ছিলো। জাওয়াদের কথায় তার উত্তপ্ত রাগ গুলো একটু একটু প্রকাশ পাচ্ছে। সে কিছুটা রসিয়ে রসিয়ে বলল,’ নীহারিকা আপনাকে বলেছে সে আপনাকে বিয়ে করতে চায়?’
জাওয়াদ উল্টো বলল,’ তোমাকে কি বলেছে?’
‘ না বলুক। আমি জানি সে কাকে বিয়ে করতে চায়। আপনি এসবে কথা না বললে আমি খুশি হবো জাওয়াদ।’
রাগে ফোঁস ফোঁস করে চুপ করে যায় সে। নবীন উদ্দিন এবং তার ছোট ভাইয়ের তর্ক বিতর্ক একটা সময় খুব ক্ষিপ্ত রূপ ধারণ করে। একে অপরের দূর্বল স্থান গুলোতে খোঁচা দিতে শুরু করেছে। দাদামশায় এসব দেখে দুঃখে হতাশাগ্রস্ত হয়ে কয়েকবার থামতে বললেন। কিন্তু কাজ হলো না। দুই ভাই হাতাহাতিতে লিপ্ত হলে প্রিয়ম ছুটে যায় নিজের বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে। তখন বিমুগ্ধ উঠে তাকে চেপে ধরে বলল,’ আপনি অংশগ্রহন করলে কিন্তু আমিও করবো। মারামারিতে আমি কত দক্ষ নিশ্চয়ই জানেন?’

সব শুনে নীহারিকা এখনো রেগে তাকিয়ে আছে বিমুগ্ধের দিকে। বিমুগ্ধ স্বাভাবিক। নাফিস উদ্দিন মেয়েকে পাশে বসালেন। নীহারিকার রাগী মুখ মুহূর্তে পরিবর্তন হয়ে গেল ভয়ে। বাবা এভাবে কেন বসিয়েছে? নিশ্চয়ই কিছু চাইবে? কি চাইবে বাবা?’
নাফিস উদ্দিন অনেক সময় নিয়ে বললেন,’ অনেক তো হলো নীহারিকা তোমার জীবনের সিদ্ধান্ত বলো। আমি চাই জীবিত থাকতে থাকতে তোমাকে পাত্রস্থ করতে।’
নীহারিকা চুপ করে আছে। বিমুগ্ধ খুব উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,’ হ্যা এটাই বেস্ট হবে। তুমি বলো রাগেশ্বরী।’
নাফিস উদ্দিন ধমকে উঠে বললেন,’ ওর নাম নীহারিকা।’
‘ সে তো আপনার মেয়ে। রাগেশ্বরী শুধু আমার।’
পরিবেশ বেশ বিপদজনক। দুই বোন একজন আর একজনের সাথে কথা বলছে না। শত হোক এই বিষয়ে কথা বললে যদি ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়েন? দু’জনেই চুপ করে আছে। নীহারিকার চোখ মুখ কঠিন। সে কিছুই বলছে না দেখে তার বাবা তাকে আবার বলল,’ বলো তুমি কি চাও? আমি বিশ্বাস করি তুমি কখনো তোমার বাবাকে নিরাশ করবে না।’
নীহারিকা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে পড়তে পারছে তার বাবার চোখে মুখে কি ভীষণ আত্মবিশ্বাস। সে অনুভব করছে তার বাবা তার হাতটি শক্ত করে ধরে রেখেছে। নবীন সাহেব বললেন,’ বলো নীহারিকা। আমরা শুনতে চাই তোমার মন কি বলছে?’
জাওয়াদ প্রচন্ড ভয়ে আছে। তার শরীর খারাপ করছে। সে দ্রুত বলল,’ নীহারিকা তোমার বাবা আমাকে পছন্দ করেছে তোমার জন্য। তুমি কি বিষয়টা বুঝতে পারছ?’
নীহারিকার দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। কিছু সময়ের জন্য সে চোখ কান বন্ধ করে সোফার বুকে লেপ্টে তার দিকে তাকিয়ে থাকা পুরুষটিকে দেখলো। সে এখন খুব নিশ্চুপ। নীহারিকার মনে হচ্ছে ঝড়ের পূর্বের হিমেল হওয়া যেন চারপাশে। মনে পড়ছে বিমুগ্ধের সাথে প্রথম দেখা। মনে পড়ছে লোকটির অদ্ভুৎ সব কাজ। মনে পড়ছে একটু একটু করে তার জীবনে নিজের আধিপত্য নির্মাণ করা। চোখ তুলে আরও একবার দেখলো সে, লোকটি কত ব্যাকুলতার সাথে তার দিকে তাকিয়ে আছে এখন। নিজের বাবার দিকে তাকালো নীহারিকা। নীহারিকা সেই চোখের ভাষা জানে। তিনি খুব কষ্ট পাবে নীহারিকা তার বিরুদ্ধে গেলে। এই কষ্ট সাধারণ কষ্ট নয়। এই কষ্ট মা বাবার মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করার মত কষ্ট। এই কষ্ট বহু কষ্টে সন্তান বড় করার পরেও তাদের থেকে পাওয়া কষ্টের কষ্ট। নীহারিকা চোখ বন্ধ করে লম্বা একটি শ্বাস ফেলে একটু একটু করে বলল,’ বাবা আমি তোমাকে ভয় পাই সত্য। আমি তোমার বিধি নিষেধ মানতে চাই না সত্য। আমি তোমার নিয়ম নীতি থেকে পালিয়ে বেড়াতে চাই সত্য। আমি স্বাধিন ভাবে বাঁচতে চাই সত্য। কিন্তু দিন শেষে আমি তোমাকে সম্মান করি। ভালোবাসি। এবং সন্তান হওয়ার বিনিময়ে তুমি আমার থেকে এটা প্রাপ্য। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। তোমার ডিসিশন আমার উত্তর।’
নাফিস উদ্দিন এক গাল হেসে বললেন,’ আলহামদুলিল্লাহ। আমার মেয়ে বুঝতে পেরেছেন নবীন সাহেব। যার তার কথা সে শুনে না।’
নবীন সাহেব খুব রেগে বললেন,’ মা চেয়েছিলো এটা। তা না হলে আমারও কোন সখ ছিলো না।’
‘ কই মা তো কখনো আমাকে বলেনি যে তোমার আধপাগল ছেলেকে আমার মেয়ের জন্য তিনি বাছাই করেছেন।’
‘ এবার খুব বেশি হচ্ছে নাফিস। তুই তো একটা খু নি। তোর মেয়েকে আমিও নিজের ঘরে নিবো না।’
নাফিস উদ্দিন তীব্র অপমানে চুপ করে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। নীহারিকার ফুফু এই বিষয় উঠতেই লুকিয়ে রুমে চলে গেছে। আফিফা জানে আসল ঘটনা ভিন্ন। বহু বছর ধরে বুকে চেপে যাচ্ছেন। সেদিন নাফিস উদ্দিন নয় উনার বোন গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। এবং সেই বীভৎস এক্সিডেন্ট তার দ্বারা হয়েছিলো। নিজের বোনকে বাঁচাতে নাফিস উদ্দিন নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়েছিলেন। এবং তার বাবা নিজের নির্দোষ ছেলেকে বাঁচাতে অনেক টাকা দিয়ে কেস মীমাংসা করেছিলেন। মিথ্যা প্রমান জোগার করে ছিলেন। কোর্টে সে সব দেখিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে ছিলেন নাফিস উদ্দিনকে। কিন্তু নবীন উদ্দিন সে সব জানে না। তিনি শুধু নিজের প্রিয় বন্ধুর প্রতি হওয়া অন্যায় মেনে নিতে পারেন নি। তার বন্ধু একজন হাফেজ ছিলেন। অথচ তার বাবা তাকে মাদকাসক্ত প্রমান করেছিলেন। বলা হয়েছিলো সে মদ পান করে বাইক চালাচ্ছিলো। এটা নবীন মেনে নিতে পারেননি। এবং পরিবারের সাথে সম্পর্ক শেষ করে তিনি অন্য স্থানে বাসা নিয়ে চলে যান। এবং সুযোগ পেয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। আজও সেই দুঃখ তার মনে তাজা। তার ধারণা নাফিস উদ্দিনের জন্য তিনি মৃত মায়ের শেষ দেখা পাননি। যেদিন মা মারা যায় সেদিন অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে রাস্তায় গাড়ি ড্রাইভ করেছিলেন। এবং ফলে তার এক্সিডেন্ট হয় এবং নিজের পা হারান। সব মিলিয়ে বিমুগ্ধও নিজের চাচাকে একদম পছন্দ করে না। যদিও সে এখন প্রথম বিষয়টা জানে। তবুও তার মনে চাপা একটি মনস্তাপ কাজ করে নিজের চাচার প্রতি। তার সাথে এখন যোগ হয়েছে চাচাতো বোনের পাষাণতা। সে নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে সামনে বসে থাকা মেয়েটির দিকে। অবিশ্বাস্য চোখ মুখ। সে ভেবেছিলো নীহারিকা তাকে গভীর ভাবে অনুভব করে। ভালোবাসার খুটিটা হয় তো সে ঠুকে দিয়েছিলো কঠিন মনের গহীনে। কিন্তু সে মিথ্যা। বেশি কিছু না একটু কি সাহস করে বলা যেত না বাবা আমি এই বাউন্ডুলে, অদ্ভুৎ, আশ্চর্য্য মানবকে বিয়ে করতে চাই। সেটাও না বলতে চাইলে বলতে পারত আমি পছন্দ করি! বা বলতো জাওয়াদ নামক এই সাদা মুলাকে আমি বিয়ে করবো না! কিছু তো বলতে পারতই। কিন্তু সে কি করেছে?
নীহারিকা দেখলো বিমুগ্ধ এখনো তার দিরে তাকিয়ে আছে। সে দ্রুত চোখ লুকিয়ে ফেলল। বাবাকে কখনো বলতে পারবে না নিজের মনের কথা। নিজের গোপন অঘোষিত অন্যরকম, মন কেমনের অনুভূতি। কখনো না।

বিকট শব্দে বিমুগ্ধ সামনের কাচের টি টেবিল উল্টে দিয়েছে। উপস্থিত সকলের চোখ ঠিকরে অবাকতা বিস্ময়ে রূপ নিয়েছে। হতচকিত কণ্ঠে নাফিস উদ্দিন বললেন,’ কি করছ তুমি? পাগল হয়েছ উগ্র ছেলে। আমি জানতাম তুমি এমন। প্রথম থেকে ভদ্র সাজার নাটকটা এবার শেষ তাই তো?’ তিনি তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে ফুটিয়ে তুলতেই যাবেন তার আগেই বিমুগ্ধ নীহারিকার দিকে তাকিয়ে একে একে ধারে কাছের জিনিস গুলো ছুড়তে শুরু করেছে। কাঁচের জার, মাটির পাত্র, গ্লাস, ফুলদানি, বই, শোপিস যা হাতের কাছে পাচ্ছে সর্বোশক্তি দিয়ে ছুড়ে মারছে। নবীন উদ্দিনও তাকে থামাচ্ছেন না। তিনি জানেন আজ তার ছেলের রাগ তার জীবনে সবচেয়ে উঁচুতে আছে। কোন ভাবেই এই রাগ দমানো সম্ভব নয়। সকলে নীরব হয়ে দেখছে বিমুগ্ধকে। নীহারিকার সামনে গিয়ে খুব ক্ষিপ্ত ভাবে একটি টপ ছুড়ে মারলো। নীহারিকা ভয়ে চোখ জড়ো করে ফেলেছে। বিমুগ্ধ! হ্যা এটা কি সেই সব সময়ের অন্যরকম ছেলেটা? এতো উগ্র, এতো রাগ, এতো হিংস্র কবে হয়েছে সে? নীহারিকা নিভু চোখে এক বার শুধু তাকালো বিমুগ্ধের কঠিন শক্ত চোখ মুখের সাথে লালছে হয়ে আসা চোখের সাদা অংশের দিকে। কি ভীষণ ক্ষোভ, রাগ তাতে ভাসছে! কি ভীষণ লজ্জা সেই চোখে। কেন? নীহারিকা তাকে এভাবে সকলের সামনে গ্রহন করেনি বলে? দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস নিজের মাঝে টেনে নিয়ে বিমুগ্ধ তার বাবাকে বলল,’ এখানেই বসে থাকবে। মিস নীহারিকার যখন, সেই তারিখে, যেই সময়ে বিয়ে ঠিক হবে, ঠিক তখন সেই সময়ে, সেই তারিখে, সেই লগ্নে আমিও বিয়ে করবো। রূবাইদার পরিবারের সাথে কথা বলো।’
বিমুগ্ধ এলোমেলো হয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থেমে গিয়ে পিছনের দিকে ঘাড় বাকিয়ে বলল,’ শুভ কামনা নীহারিকা আপনাকে।’
আপনি! সামান্য একটি অভিভাষণ, সামান্য আহ্বান। অথচ নীহারিকার শান্ত, ভীতু চোখে কেমন জলোচ্ছাসের জন্ম দিচ্ছে। শিক্ত করছে গাল। হৃদয়ে এক বেদনার সুর উঠেছে। মনে হচ্ছে সে বহু বহু দূরে চলে যাচ্ছে যতটা দূরে গেলে বিমুগ্ধের আপনি হওয়া যায়। তার থেকে আরও কয়েক গজ দূরে। সকলের চোখ এড়িয়ে জাওয়াদের চোখে সেই অশ্রু যুক্ত চোখ আবদ্ধ হয়েছে। তবুও তবুও সে চোখ ফিরিয়ে নিলো। বিমুগ্ধের সাথে সে এই যুদ্ধে জিতবেই। বিমুগ্ধের চোখ তখনো নীহারিকার জল থৈ থৈ চোখে। নীহারিকা দেখলো সেই চোখে অসম্ভব অসম্ভব অসম্ভব আক্রোশ, হতাশা, অসহায়তা লুকুচুরি করছে। রক্তিম চোখ গুলোতে জলের এক অন্যরকম লুকায়িত খেলা। ভর্ৎসনা করছে তাকে। তার সাহসকে। তার ভালো লাগাকে। তার গোপন ভালোবাসাকে। সবচেয়ে বেশি নিজেকে। নিজের অনুভূতিকে। না পাওয়ার বেদনাকে।
_______________
চলবে…