প্রীতিলতা পর্ব-১০

0
407

#প্রীতিলতা ❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#১০ম_পর্ব🍂

গাড়ি এসে থামল একটি বুটিক সেন্টারের সামনে। উপরের নেমপ্লেটে বড় বড় করে লেখা শায়লা বুটিক হাউস। নামটা দেখে কেমন সন্দেহ হলো। নামটা তো আমার শাশুড়ি মায়ের। তাহলে এটা কি মায়ের বুটিক হাউস।

তাছাড়া সাফওয়ান এখন এখানে এনেছো কেন আমাকে?

গাড়ি থামাতেই দরজা খুলে লাফিয়ে বেরিয়ে পরল পুতুল। আমিও বের হয়ে রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়ালাম। সাফওয়ান গাড়িটা ভালো মতো সাইট করে রেখে এসে আমাদেরকে বললেন ,

— ভেতরে চলো।

আমিও আর কোন কথাবার্তা না বাড়িয়ে পুতুলের হাত ধরে তাকে অনুসরণ করলাম। ভেতরে ঢুকতেই একটি চৌদ্দকি পনেরো বছরের বয়সের ছেলে এগিয়ে এসে সাফওয়ানকে সালাম দিল।

— আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।

সাফওয়ান মুচকি হেসে সালামের উত্তর দিলে

— ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো রবিন?

— জি ভাইয়া ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

তারপর ছেলেটা পুতুলটা হাই হ্যালো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— আসসালামু আলাইকুম ভাবি। কেমন আছেন?

— জি ভাইয়া ভালো আছি।

তারপর ছেলেটা আমাদেরকে নিয়ে শোরুমের দোতলায় এগিয়ে বসালো। দেখে মনে হল পুরোটাই মেয়েদের জন্যই খোলা হয়েছে বুটিক্স হাউজ। কারণ মেয়েদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সাজসজ্জার সবকিছুই এখানে আছে। সিঁড়ি দিয়ে দোতালায় ওঠার আগে সবকিছু চোখ বুলিয়ে নিলাম। বেশ সুন্দর বুটিক হাউস টা।

দোতালায় উঠে আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম। পুরো তলাটা জুড়ে একটা রুমের মতো তৈরি করা হয়েছে। এখানে মেয়েদের পাশাপাশি অন্য কর্ণারে ছোট বাচ্চাদের এবং ছেলেদের বিয়ের শেরওয়ানি, পাজামা পাঞ্জাবি নিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

সাফওয়ান সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ছেলেটার কাছ থেকে বুটিকের নানা রকম পড়া খবর এবং সুবিধা অসুবিধা শুনছিল। তাদের এখানে কাজ করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা সেটাও শুনে নিল। আর আমি শুধু পুতুলের হাতটা ধরে চারিদিকে নজর বুলাচ্ছিলাম।

ছেলেটা আমাদেরকে চেয়ারে বসিয়ে নিচে চলে গেল। পাশের কাউন্টার থেকে দুটো মেয়ে উঠে আসলো আমাদের সামনে। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ দেখে আমার দারুন লাগলো। একই রঙের একই রকমের পোশাক পরা। ফুল হাতার কালো থ্রি পিস উপরে কালো হিজাব পিন আপ করা।

একটা জিনিস খেয়াল করলাম এখানে ছেলেদের থেকে মেয়ে কর্মীদের সংখ্যা বেশি। বাইরে একজন দারোয়ান আর এই রবিন নামের ছেলেটা ছাড়া নিজে এবং উপরে প্রায় সবই মেয়ে সহকর্মী দেখলাম।

মেয়ে দুটো প্রথমে আমাদেরকে এসে সালাম দিয়ে সাফওয়ান কে জিজ্ঞাসা করল,

— ভাইয়া ভাবীর জন্য কি বের করব? শাড়ি, থ্রি পিস, নাকি…..

— এক এক করে বের করুন যেটা ভালো লাগবে সেটাই নেবো।

— আচ্ছা।

বলে মেয়েটা একে একে প্রায় ১০-১৫টা শাড়ি তাক থেকে নামিয়ে আনলো। তারপরে একে একে থ্রি পিস এছাড়া আরো অন্যান্য চলতে সময়ের আধুনিক পোষাক ও নিয়ে আসলেন একগাদা।

এর মধ্যে রবিন নামের ছেলেটি ট্রেতে করে দুটো কোলড্রিংস একটা জুস আর কিছু স্নাক্স নিয়ে আসলো। ট্রেটা পাশে টুলের উপর রেখে আমাদের হাতে কোল্ড ড্রিংসের বোতল দিয়ে দিল আর পুতুল তো পুরো দোতলা দৌড়ে বেড়াচ্ছে ।

আমি খালি বসে অবাক চোখে এদের কাণ্ডকারখানা দেখছি।

মেয়েগুলো অবশেষে ক্ষ্যান্ত হলো। একপাশে কাপড়ের স্তুপ তৈরি করে ফেলেছে তারা। এরপর আমাদের সামনে কাউন্টারে বসে এক এক করে ড্রেস মেলে ধরতে শুরু করল। প্রথমের শাড়ি বের করলো।

একেকটা শাড়ির ওজন তো আমার থেকেও বেশি। এসব শাড়ি পড়ে হেঁটে চলে বেড়ানো তো দূরের কথা ঠিকমতো সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারবো না আমি। আমার মুখের শোচনীয় অবস্থা দেখে সাফয়ানের মনে হয়তো কিঞ্চিত দয়া হলো।

সে শাড়িগুলো সরাতে বলল। থ্রি পিস চুরিদার দেখানো শুরু করল। মেয়েগুলো হয়তো আমাকে নতুন বউ ভেবে সব থেকে বেশি গর্জিয়াস জামা কাপড় নিয়ে এসে হাজির করেছে আমার সামনে। এরা হয়তো জানে না আমি সিম্প্লিসিটি পছন্দ করি। ওদের দেখানো এই চোখ ধাঁধানো জামা কাপড় চোখে ভালো লাগলেও আমার তেমন পছন্দ হলো না।

সাফওয়ান কেউ দেখলাম দু-একটা কাপড়চোপড় নাড়াচাড়া করে রেখে দিল। মেয়েদুটো আমাদের অবস্থা দেখে আবার একগাদা কাপড় আনতে ছুটল। কিন্তু সাফওয়ান উঠে দাঁড়ানোতে মেয়েগুলো থেমে গেল। মেয়েগুলোকে বললো,

— এই সবগুলো উঠিয়ে রাখুন।

সাফওয়ান হাঁটতে শুরু করল ডিসপ্লেতে সাজানো ড্রেসগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। এর মধ্যে পুতুল এসে আমার পাশ ঘেঁষে বসলো,

— প্রীতিলতা। জুসের বোতল টা খুলে দাও।

সামনে বসে মেয়ে দুটো কেমন অবাক হয়ে পুতুলের দিকে তাকালো। আমি বুঝতে পারলাম ওদের অবাক হওয়ার কারণ।

জুসের বোতলটা হাতে নিয়ে মুখ খুলতে লাগলাম। সামনে বসা একটা মেয়ে পুতুলের গাল টেনে বলল,

— আপু ইনি তো তোমার ভাবি হয়। তুমি ওনার নাম ধরে ডাকছো কেন?

পুতুল কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে বলল,

— না ও আমার প্রীতিলতা হয়। আমি ওকে প্রীতিলতা বলেই ডাকি আর ডাকবো।

আমি হেসে ওর হাতে জুসের বোতলটা দিলে দিয়ে খেতে খেতে আবারো ও দিকে চলে গেল।

আমি সৌজন্যের খাতিরে হেসে বললাম,

— আমার নাম প্রীতি। ও আমাকে ভালোবেসে প্রীতিলতা বলে ডাকে। ভালোবাসাটাই তো আসল উদ্দেশ্য। কি নামে ডাকলো না ডাকলো তাতে কি যায় আসে। এতে আমার কোন অভিযোগ নেই বরং আমি ওকে ডাকতে বলেছি।

মেয়েগুলো আর কোন কথা বলিনি। আমাদের সমাজে অবস্থিত মানুষের ছোটবেলা থেকেই মাইন্ডে এটা সেট করে দেয় কে রক্তের সম্পর্কের কে রক্তের সম্পর্কের নয় । কার সাথে কেমন আচরণ করতে হবে। কিন্তু এরা বুঝেও বুঝতে চায় না যে রক্তের সম্পর্কের বাইরের সম্পর্ক টাও কতটা আপন আর কতটা মধুর হয়।

এরমধ্যে সাফওয়ান ব্লাক কালারের একটা গাউন নিয়ে এসে কাউন্টারে রাখল। হঠাৎ সামনে কিছু পড়ায় আমি চমকে উঠলাম। পাশে তাকিয়ে দেখলাম সাফওয়ান দাঁড়িয়ে আছে। চেয়ারে বসে বললেন,

— এই গাউনটা পরে এসো।

নিচে যে একটা গাউন রাখা আছে এতক্ষণ তার দিকে তাকাইনি আমি। গাউনটার দিকে নজর যেতে কিঞ্চিৎ ভুরু কুঁচকে গেল আমার।

কাপড়টা কিসের বলতে পারব না কারণ কাপড় সম্পর্কে আমার তেমন আইডিয়া নেই। হাতে নিয়ে মনে হচ্ছে জর্জেট টাইপ। গোল্ডেন সুতো এবং হালকা পাথরের কাজ করা অসাধারণ একটি গাউন। কাপড়টা খুব সফট আর তেমন ভারী ও নয়। কিন্তু অসাধারণ জরি সুতোর নকশা করা।

ড্রেসের উপর হাত বুলিয়ে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আবারো কানে প্রতিধ্বনি ভেজে উঠলো,

— যাও ড্রেসটা গিয়ে পড়ে এসো, ফিটিং আছে কিনা দেখতে হবে।

আমি চমকে উঠলাম। মানে কি। বাইরে শোরুমে আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো নাকি। জীবনেও না কক্ষনো না। আমি সাফয়ানের দিকে কিছুটা হেলে যেতেই সেও পিছিয়ে গেল। অসহ্য মার্কা ছেলে একটা। ওর কি মনে হয় ওর সাথে রোমান্স করার জন্যই ভরা বাজারের মধ্যে ওর দিকে হেলছি। হাত ধরে টেনে আমার দিকে এগিয়ে নিয়ে এসে কানে কানে বললাম,

— আপনার কোন আক্কেল জ্ঞান নাই। আপনি আমাকে এই ভরা শোরুম এর মধ্যে কোথায় গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে বলতেছেন। জীবনেও এখানে ড্রেস চেঞ্জ করবো না আমি। কোথায় কি ক্যামেরা-টামেরা লাগানো আছে তার নাই ঠিক।

সাফয়ান বিরক্তির একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,

— সব আক্কেল আর কাণ্ডজ্ঞান তো তোমার মধ্যে ঠুসে ঠুসে ভরা আছে। তার মধ্যে থেকে কিছু ধার দাও। না হলে তো রাস্তাঘাটে বিপদে পড়বো।

এবার সে উল্টো আমার দিকে হেলে এসে বললো,

— এটা আমার শোরুম। আম্মু পরিচালনা করে। এখানে ট্রায়াল রুম আছে। সেখানে ক্যামেরা বসানোর মত কান্ডজ্ঞানহীন কাজ আমি করবো না।

— হুহ ভাব দেখ আমার শোরুম।(ব্যঙ্গাত্মকভাবে)

আমার সামনে থেকে একটা মেয়েকে ডেকে বলল,

— আপনাদের ম্যাডামকে সাথে করে নিয়ে যান ।

আমি গাউনটা হাতে তুলে নিতে চাইলে মেয়েটা আমার হাতের থেকে গাউনটা নিয়ে নিল। তারপরে আমাকে নিয়ে গেল অন্য রুম।

কিছুক্ষণ পর….

দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছি। সাফওয়ান ফোনে মনোযোগ সহকারে কি যেন দেখছিল। মেয়েটা এগিয়ে গিয়ে বলল,

— স্যার ম্যাডামকে নিয়ে এসেছি।

তার কথা সে আমার দিকে তাকালো। বোরকা হিজাব খুলে চুল ছেড়ে দিয়ে ফ্লোর ছুই ছুই গাউনটা দুহাতে আঁকড়ে ধরে হেটে এসে সাফওয়ানের সামনে দাঁড়ালাম। উনার দৃষ্টি আমার দিকে আটকে আছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসলো।

হুহ। ওভাবে হাসার কি হলো । আমাকে কি দেখতে কার্টুনের মত লাগছে নাকি। এবার ঘুরে আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। নিজেকেই নিজে পা থেকে মাথা অব্দি দেখে অবাক হয়ে গেলাম। মুখে আমার হাসি ফুটে উঠলো। মেয়েটা এসে কাঁধের এক সাইড থেকে গাউনের ওড়নাটা দিয়ে দিল। এগুলো ভালোভাবে সেট করে দিয়ে আবার সাফওয়ানের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে বলল,

— স্যার মাশাল্লাহ ম্যাডামের গায়ের রং এর সাথে এই পোশাকটা এত সুন্দর ম্যাচ করেছে। বিয়ের লেহেঙ্গা পড়লেও মেয়েদের এত সুন্দর লাগে না। কোনরকম সাজ ছাড়াই এত সুন্দর লাগছে। সাজালে না জানি কত সুন্দর লাগে।

আমি সাফওয়ানের দিকে তাকালাম। উনার মুখে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারলাম না। মেয়েটা তো প্রশংসা করে ধুয়ে দিল আমাকে। কিন্তু যার প্রশংসা শোনার জন্য সামনে এসে দাঁড়ালাম সেই তো কিছু বলল না ধুর। সবই কপাল আমার।

পোশাক চেঞ্জ করে আসার পর। দেখলাম বেশ কয়েকটা শপিং ব্যাগ কাউন্টারের রাখা আছে। আমি মনে করলাম হয়তো তার আর পুতুলের জন্য কিনেছে। আমি স্বপনকে জিজ্ঞাসা করলাম,

— পুতুল কোথায় ওর জন্যও তো কিছু কিনতে হবে।

— জন্য অলরেডি কেনা হয়ে গেছে। নিচে রবিনের সাথে আছে।

— আর আপনার জন্য।

কিছু বললেন না আমার দিকে তাকিয়ে নিজের ডেবিট কার্ড টা রিসেপশনের মেয়ের দিকে এগিয়ে দিলেন। বিল পে করা হয়ে গেলে ব্যাগগুলো নিয়ে নেমে আসলেন নিচে। মেয়েগুলো আমাকে সালাম দিয়ে আবার আসার জন্য আমন্ত্রণ জানালো। সালামের উত্তর দিয়ে সৌজন্যের হাসি হেসে চলে আসলাম।

গাড়িতে করে সোজা বাড়িতে।

_______🌺🌺_______

মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে আদা চা তৈরি করলাম সবার জন্য। মাথাটা বেশ ধরেছে আমার। চা খেতে খেতে খালাকে বললাম,

— আসতে কিন্তু দেরি হবে খালা। তুমি সব দরজা জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়ো। দরকার হলে চাবি দিয়ে খুলে ভেতরে আসবো। আর খেয়ে নিও কিন্তু রাত্রে। বললাম আমাদের সাথে যেতে কিন্তু তুমি তো যাবা না।

—- নারে মা। এমনিতেই আমি কাজের মানুষ। এখানে যা পাচ্ছি এখানে এই অনেক।

— হুম। আমার বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় দেখো তোমাকে কিভাবে পাকড়াও করে নিয়ে যায় আমি। তখন এমা না আমি যাব না। কোন কিছুই শুনবো না।

খালা আমার কথা শুনে হেসে দিয়ে বললেন,

— আচ্ছা সে পরে দেখা যাবে। তুই যা গিয়ে রেডী হয়ে নে।

— আচ্ছা।

আমি উপরে চলে আসলাম। এসে দেখি সাফওয়ান ল্যাপটপে বসে কি যেন করছে। আমাকে দেখে কিছু না বলে আবার কাজে মনোযোগ দিল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সাতটা বেজে গেছে। আমি ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আমি বের হতেই সাফওয়ান ওয়াস রুমে গেল। ব্যাগ থেকে কালো রংয়ের সেই গাউনটা বের করলাম। তার সাথে ম্যাচিং ব্ল্যাক হিজাব রয়েছে। চেঞ্জিং রুমে গিয়ে পরে আসলাম। মুখে ক্রিম। ও হালকা পাউডার মেখে নিলাম চোখে হালকা করে কাজল। ঠোঁটে হালকা লিপ বাম । ব্যাস আমার সাজগোজ কমপ্লিট।

তখনই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলেন সাফওয়ান পরনে শুধু ব্লাক জিন্স প্যান্ট আর গলায় টাওয়েল ঝুলছে। খালি গায়ে তাকে এই প্রথম দেখলাম ‌। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম কেমন জানি সারা শরীরের মধ্যে একটা শিহরণ বয়ে গেল। দ্রুত চলে আসলাম পুতুলের রুমে।

________🌺🌺_______

বাড়িটার উপরে বড় বড় করে লেখা “সাইম-সাইমা” ম্যানশন। সাফওয়ান গেটের সামনে গাড়ি থামিয়ে দুইবার হর্ণ দিতেই দারোয়ান এসে গেইট খুলে দিল।
তারপর গাড়িটা পার্কিং লটে গিয়ে থামলো। সাফওয়ান নিজে নেমে পুতুল এবং আমাকে নামিয়ে গাড়িটা লক করে দিলো।

নিজের পরনের কালো কোটটা দু হাতে ঠিক করে নিয়ে পুতুলের হাত ধরে মেইন ডোরের কাছে গিয়ে ডোর বেল বাজালো। কিছুক্ষণ পর দরজাটা ভাবি খুলল। ভাবিকে দেখে আমি কিছুটা অবাক হলাম। পরনে টাইট ফিট সেলোয়ার কামিজ। ওড়নাটাও গলায় ঝুলছে।

এমনি সময় তো ঘরের মধ্যে শাড়ি পড়ে থাকে এখানে এসে এত পরিবর্তন। ভাবি দরজা খুলে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমাদের ভিতরে আসার জন্য বললেন। সাফওয়ানের দিকে তাকালাম তার চেহারা একদম ভাবলেশহীন।

ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ভাবি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,

— আসতে এত দেরি হল কেন? বাহিরে গিয়েছিলে বুঝি?

উত্তরে আমি শুধু হাসলাম।

আমরা সোফায় গিয়ে বসলাম। বড় ভাইয়া আমাদের পাশে এসে বসলেন। দুই ভাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। ভাবি গিয়েছিলেন রান্নাঘরে। কিছুক্ষণ পরে ফিরেও এলেন। হাতে একটা ট্রে। আমাদের সামনে রাখলেন। জুসের গ্লাসটা আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলেন। সাফান ভাবিকে জিজ্ঞাসা করলেন,

— সায়েম কী এখনো হসপিটাল থেকে আসেনি।

— না । কিন্তু ফিরছে বাসায় রাস্তাতে আছে। আমি বলেছি তোমরা আসছো তাই আজ তাড়াতাড়ি ফিরছে।

তখনই দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো একটি মেয়ে । দৃষ্টিটা আমাতে নিবদ্ধ। মুখে লেগে আছে তাচ্ছিল্যের হাসি। কিন্তু কেন….!

চলবে……❣️