#প্রীতিলতা ❤️
#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury
#১৩_তম_পর্ব🍂
সাইমা তুমি….!
সাইমা মুখে কোন কথা না বলে ধীরে ধীরে আমার কাছে এসে হেচকা টান দিয়ে উঠে দাঁড় করালো। হীর হির করে টানতে টানতে সোফার উপরে ফেলে দিল আমাকে। আবারো বাম হাতের কব্জিতে খুব জোরে ব্যথা পেলাম। ব্যথায় চোখ কুঁচকে গেল। এবার আমার ভারী রাগ হলো। দাঁতের দাঁত চিপে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বললাম,
— তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন। কি করেছি আমি?
— কি করেছো তুমি? সবকিছু কেড়ে নিয়ে এখন বলছো কি করেছো?
এবার আমি ওর মুখের দিকে ভালো করে তাকালাম। বিধ্বস্ত লাগছে। চুলগুলো সব এলোমেলো। গায়ে ওড়না নেই। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে ওকে।
আমি কিছুটা দমে গেলাম। আমাকে চুপ হয়ে যেতে দেখে আরো বেশি করে তেড়ে আসলো আমার উপর। লোফার দুই হ্যান্ডেলের উপর হাত রেখে আমার ওপর ঝুঁকে জোরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
— তুমি আমার জীবনটাকে নরকে পরিণত করেছ। সবকিছু কেড়ে নিয়ে এখন বলছ কি করেছ? কেন এসেছ আমাদের দুইজনের মাঝে? কী চাই তোমার?
টাকা তো। বড়লোকের ছেলে পেয়েছো কোটিপতি শশুর বাড়ি। আর কি চাই হ্যাঁ। আজীবন পায়ের উপর পা তুলে বসে খেতে পারব। লাইফ পুরাই সেট। লোভ সামলাতে পারোনি তাই না। যেই সুযোগ পেয়েছো অমনি চোখ বুঝে কোপ মেরে দিয়েছো।
আমি সাইমার কথা শুনে থমকে গেলাম। তার এই অপমানে জড়ানো কথাবার্তাগুলো বিষের মতো সারা শরীর জ্বালিয়ে দিল আমাকে। এমন মনে হচ্ছে যেন কানে কেউ গরম সীসা ঢেলে দিয়েছে। চোখ দিয়ে দু ফোটানো না জল গড়িয়ে গেল।
— কী যা তা বলছো তুমি সায়মা। মুখ সামলে কথা বল।
সাইমা নিজের চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে বিদ্রুপের হাসি হেসে বলল,
— গা জ্বলছে তাই না। কথা শুনলে সবারই এমন গা জ্বলে। তোমার করতে কোন দোষ নেই আমি বললেই দোষ। আমি এতদিন জানতাম গরিবদের আর কিছু থাকুক আর না থাকুক আত্ম সম্মানবোধ আছে।
কিন্তু তোমার তো দেখে এই চেহারাটা ছাড়া আর কিছুই নেই। তা এই চেহারা দেখিয়ে কয়টা ছেলের মাথা ঘুরালে শুনি।
— সাইমাআআআআআ..!
— গলা নিচে নামিয়ে কথা বলো। লোভী আত্মমর্যাদাহীন কোন মেয়ের গলা উঁচু করে কথা বলার কোন অধিকার নেই। আসলে তোমাদের মত এরকম মেয়েদের জন্য আজ অনেক মেয়ের সংসার ভেঙে যাচ্ছে। অনেক মেয়ে তার প্রিয়জনকে হারাচ্ছে। যেমন আমি হারিয়েছি…!
আমার এবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। অনেক হয়েছে। আমি এবার উঠে সাইমাকে এক ধাক্কা মেরে সোফায় উপরে ফেলে দিলাম। ডান হাতে সাইমার গাল চেপে ধরে বললাম,
— মুখ সামলে কথা বলো সাইমা। না হলে পরের শব্দ উচ্চারণ করার জন্যই মুখটা থাকবে না। আর কিছু না জেনে না বুঝে কি যা তা বলে যাচ্ছ। মাথা ঠিক আছে তোমার? পাগল হয়ে গেছো নাকি?
সাইমা এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। দুহাতে নিজের মাথার চুল শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ছিঁড়ে ফেলার মত করে ধরে বলল,
— হ্যাঁ হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি আমি। নিজের সব থেকে প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে সত্যি পাগল হয়ে গেছি। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। বিশেষ করে তোমাকে ওর পাশে মোটেও সহ্য হচ্ছে না আমার কেন এসেছ বলতো তুমি ওর লাইফে?
— তারমানে তুমি সাফয়ানকে….!
— হ্যাঁ ভালোবাসি। আর সাফওয়ান ও আমাকে ভালবাসে। ইনফ্যাক্ট গত ডিসেম্বরে আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
কথাটা কানে পৌঁছাই আমার সারা শরীর অবশ হয়ে গেল। হৃদপিণ্ড টা মনে হচ্ছে কেউ খামচে ধরেছে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে আমার।সাইমা সাফওয়ানকে ভালোবাসে এর থেকেও বেশি পীড়া দিচ্ছিল এই কথা শুনে সাফয়ান ও সাইমাকে ভালোবাসে।
ওরা যদি একে অপরকে ভালোবাসে, আবার যদি গত ডিসেম্বরে বিয়ে হওয়ার কথা ও ছিল তাহলে বিয়ে হলো না কেন? মস্তিষ্কের নিউরন গুলো হঠাৎ সজাগ হয়ে আমাকে জানিয়ে দিল খালামণি ও গত ডিসেম্বরে সাফওয়ানের বিয়ে নিয়ে কিছু বলছিল। কিন্তু বলতে বলতে থেমে গেলে কিছু একটা লুকিয়ে গেলেন আমার কাছ থেকে তাহলে সাফওয়ানের সাথে সাইমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তাহলে হলো না কেন কারণটা কি?
না আমি আর ভাবতে পারছি না মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে দুচোখের অশ্রু ও বহমান রয়েছে। আমি খাটের স্ট্যান্ড ধরে বিছানায় বসে পড়লাম পুরো রুম জুড়ে নীরবতা বিরাজ করছে কিছুক্ষণ পর পর হেঁচকি তুলে গুনগুন করে কান্নার আওয়াজ আসছে সাইমার। আর আমি তো কাঁদতে ভুলে গেছি।
আমি সায়মার দিকে তাকালাম সায়মা মুখ থেকে এখনো কাঁদছে আমি বিরষ গলায় তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লাম,
— এতই যখন ভালোবেসেছিলে দুজন দুজনকে ডিসেম্বরেও বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তোমাদের তাহলে বিয়ে হলো না কেন?(লাস্টের লাইনটা বলতে গিয়ে আমার গলাটা ধরে গেল।)
সাইমা নিজেকে স্বাভাবিক করতে কিছুটা সময় নিল। চোখ মুছে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,
— বিয়েটা হয়নি আমার দোষে।
আমি ভুরু কুঁচকে তাকালাম সায়মার দিকে। তা দেখে সে বলল,
— অবাক হচ্ছো তাই না। কিন্তু এটাই সত্যি আমার একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য সাফওয়ান আজ আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।
সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো সাইমা। শূন্যদৃষ্টিতে ঘরের ছাদে তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কোন স্মৃতির গহব্বরে তলিয়ে যাচ্ছে সে। কিছুটা জড়ানো কন্ঠে বলতে শুরু করলো,য়
— ছোটবেলার সাফওয়ান ও ছিল আমার খেলার সাথী। দুই পরিবারের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকায় যাতায়াত ছিল বরাবর ভালো। মামনি মানে তোমার শাশুড়ি আমাকে খুব ভালবাসতেন। বলতে গেলে একদম নিজের মেয়ের মত যত্ন করতেন আমাকে।
শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিয়েছিলাম সাফওয়ান এর হাত ধরে। আবেগ অনুভূতি প্রগাঢ় হতে শুরু করেছিল যার সমস্তটা জুড়ে ছিল সাফওয়ান। জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি বোঝো প্রীতি?
আমি দুঃখিত তোমাকে সাফওয়ানের বউ হিসেবে ভাবি সম্মোধন করতে পারছি না ইন ফ্যাক্ট আমি চাইছি না।
তা যা বলছিলাম। প্রথম প্রেমের অনুভূতিটা ও আমার তাকেই ঘিরে ছিল। চোখের সামনে এমন সুদর্শন টগবগে সদ্ব্য যৌবনে পা দেওয়া একটা যুবককে দেখে মনের ভিতরে আলাদা একটা শিহরণ জাগ্রত হত।
স্টপ ইট। আজেবাজে কথা রেখে আসল কথা বল।
সাইমা হেসে উঠলো শ্লেষের হাসি। আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
— কেন বুকের বা পাশটা জ্বলছে নাকি? মনে হচ্ছে কেউ ছুরি চালাচ্ছে তাই না। এমনটাই মনে হয়।
পড়াশুনা, স্পোর্টস, ডিফারেন্ট টাইপস কম্পিটিশন কোনোটাতেই পিছিয়ে ছিলো না সাফওয়ান। ওর লাইফের একটাই গোল ছিল। নিজেকে সর্বোচ্চ চূড়ায় দেখা। আমিও পাগলের মতো ওকে ফলো করতাম।
কিন্তু সমস্যাটা বেঁধে ছিল এক জায়গায় এসে। কলেজ কমপ্লিট করার পর হঠাৎ খালু বেশ বড়সড় আবদার করে বসলেন ছেলেকে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট অথবা জজ বানাবেন। তখন আমি সবে এসএসসি দিয়েছি।
কিন্তু সাফওয়ানের ইচ্ছা ছিল অন্যরকম। সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চেয়েছিল। তার কারণ ছিল সে লন্ডন অথবা কানাডা সেটেল্ড হবে। যেটা আমারও ইচ্ছা ছিল। আমিও চিন্তা করেছিলাম বাইরের দেশে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং টা কমপ্লিট করব সাফোয়ানের সাথে।
খালুর ইচ্ছায় সাফওয়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেরিট লিস্টে অতি সম্মানজনক একটা স্থানে উত্তীর্ণ হয়। আইন বিভাগে ভর্তি হয় সে। সেখান থেকে আমাদের দুজনের মধ্যে দূরত্বটা বাড়তে শুরু করে।
একটা সময় এইসএসসি পাশ করার পরে আমি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এবং বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। আমিও ঢাকায় চলে আসি। ঘুছে যায় দুজনের মধ্যকার দূরত্ব। দুজন কপোত কপতির মতো ঢাকা শহর জুড়ে প্রেম করে বেরিয়েছি। বিশ্বাস না হলে ওর কোন ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞাসা করতে পারো। উত্তর পেয়ে যাবে। এতটাই ভালবাসতাম যে নিজেরা লুকিয়ে বিয়ে করে নিতে চেয়েছিলাম । কিন্তু খালু খালা কষ্ট পাবেন বলে সাহস করে উঠিনি আমরা।
সায়মার প্রতিটা কথার বিষাক্ত তীর এর মতো আমার হৃদয়টাকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল। নিজের উপর অনেক জোর খাটিয়ে শক্ত করে খাটের স্ট্যান্ড ধরে রেখে বসে বসে তার কথাগুলো হজম করছিলাম।
পৃথিবীর কোন মেয়ের ই হয়তো সহ্য হবে না স্বামী সম্পর্কে তার ই প্রেমিকার মুখ থেকে তাদের প্রণয়ের কাহিনী শুনা।
গলার কাছে আটকে থাকা কান্নাটাকে অনেক কষ্টে গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে প্রশ্ন করলাম,
— তাহলে বিয়ে হলো না কেন তোমাদের? ভাইয়া ভাবির সাথে তো ডিসেম্বরে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তো কোন সমস্যা ছিল না।
যেহেতু আমাদের মধ্যে এস ডিফারেন্স টা বেশি ছিল না। আর গত বছর হঠাৎ করে সাকলাইন ভাইয়া আর আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এদিকে কানাডা থেকে একটা দারুণ অপরচুনিটি পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।
ভাগ্যবশত বিয়ের দিনই আমার ফ্লাইট ডেট পড়ে গিয়েছিল। আমি জানতাম না আপু আর ভাইয়ার বিয়ের সাথে আমার আর সাফওয়ানের বিয়েটাও ঠিক করে রেখেছিল তারা ।
আমি কাউকে কিছু না চলে গিয়েছিলাম কানাডা। সেখান থেকে সাফওয়ান আমার সাথে রাগারাগি করে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। আর কানাডা থেকে আমার পক্ষে দেশে আসা ও সম্ভব হচ্ছিল না। আর এভাবেই ইতি ঘটেছিল আমাদের সম্পর্কের।
কিন্তু আমার একটা আশা ছিল যে দেশে এসে ঠিকই সাফওয়ানকে আমি মানিয়ে নেব। সমস্ত রাগ অভিমান আমি ভেঙে দেবো। কিন্তু তার আগেই আমাদের দুজনের মাঝখানে চীনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে গেলে তুমি।
সাইমা আমার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে বললো,
— আমার মন বলছে তুমি ফাঁসিয়েছো আমার সাফওয়ান কে। জোর করে বাধ্য করেছ বিয়ে করতে। না হলেও তো তোমাকে বিয়ে করতে পারে না ও তো আমাকে ভালবাসে। আর একজনকে ভালোবেসে আরেকজনের সাথে কোনদিনও সংসার করা যায় না।
সাইমার লাস্টের কথাটা আমার ভেতরটাকে পুরো চুরমার করে দিল। সত্যিই তো একজনকে ভালোবেসে আরেকজনের সাথে কখনো সংসার করা যায় না। সেজন্যই হয়তো সাফওয়ান এতদিনেও আমাকে মেনে নিতে পারিনি।
আমরা এক ছাদের নিচে থাকলেও আমাদের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব রয়েছে। সে মুখ ফুটে পর্যন্ত কখনো আমার সাথে কথা বলতে চায় না। আমি বরং যা তা বলে তাকে জ্বালাই। বিরক্ত করি।
কিন্তু সাফওয়ান আমাকে বলেছিল সে কাউকে ভালোবাসে না। তাহলে সে আমাকে মিথ্যে বলল কেন? কি উদ্দেশ্য ছিল মিথ্যে বলার?
আমি সাফওয়ানের কথার উপর জোর খাটিয়ে কিছুটা আশার আলো নিজের মনের মধ্যে সঞ্চার করে প্রশ্ন করলাম সাইমাকে,
— তুমি মিথ্যে বলছো সাইমা। সাফোয়ান তোমাকে ভালোবাসে না।ও আমাকে নিজের মুখে আমাকে বলেছে কাউকে ভালোবাসে না।
কথাগুলো শেষ করতে টুক করে দু ফোটা অশ্রু আমার গালবে গড়িয়ে পড়ল। তা দেখে সাইমা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
— প্রীতি ও ওটা আমার উপর অভিমান থেকে বলেছে। ও আমাকে ভালোবাসে। বুকে হাত দিয়ে একটা সত্যি কথা বলতো। তোমাদের দাম্পত্য জীবন কী আদৌ সুখের?
পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল যেন আমার। দুটো ঢুকে গেলে নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করে হ্যাঁ বলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তার আগেই সায়মা বলল,
— থাক এত কষ্ট করে নিজেকে আর সুখী দম্পতির অংশীদার বানাতে হবে না। তোমার মুখ দেখেই আমার সব বোঝা হয়ে গেছে। ও এখনো আমাকে ভালোবাসে বলে ই ওর জীবনে তোমার কোন অস্তিত্ব নেই। শুধু আগাছার মত জীবনে পরে আছো তুমি ।
একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করব প্রীতি। বিয়ের তো ২০ দিন হতে চলল। ও কী এখনো তোমাকে টাচ…..
চুপ করো তুমি। আমার এসব শুনতে আর ভালো লাগছে না।
হাহাহাহ… এটা তো খুব সাধারণ একটা প্রশ্ন। উত্তর দিতে এত অস্বস্তি বোধ করছ কেন? আমি তো বুক ফুলিয়ে বলতে পারি আমার প্রেমিক পুরুষ আমাকে অনেকবার জড়িয়ে ধরেছে। কিস ও
সহ্য হলো না আমার। উঠে গিয়ে সোফার সাথে বসে থাকা সায়মার গলা চেপে ধরলাম আমি। দাঁতের দাঁত চিপে অতি আক্রোশের সাথে বললাম,
— একদম আজেবাজে কথা বলবেনা তুমি। তুমি কি ভাবছো তুমি এসব উল্টোপাল্টা বলে সাফানের বিরুদ্ধে আমার মনটাকে বিষিয়ে দেবে। তা হচ্ছে না।
— আমার গলা ছাড়ো প্রীতি। আমার গলা চেপে ধরলেই সত্য টা মিথ্যা হয়ে যাবে না।
— কিসের সত্যি হ্যাঁ? বানিয়ে বানিয়ে বানোয়াট কথাবার্তা বলছো। থাম এবার তুমি অনেক বলে ফেলেছ।
— আমার কাছে প্রুফ আছে প্রীতি। আমার গ্যালারিতে এমন অজস্র ছবি দিয়ে পরিপূর্ণ। দেখবে দাঁড়াও দেখাচ্ছি।
তার আত্মবিশ্বাস দেখে ওর গলা থেকে আপন ইচ্ছায় হাত নেমে গেল আমার। সে পাশ থেকে ফোন হাতরে
নিয়ে গ্যালারি অন করে আমার মুখের সামনে স্ক্রিনটা তুলে ধরল। আমি অশ্রু সিক্ত নয়নের সেদিকে তাকালাম।
তাদের বিভিন্ন পোজের ছবি দিয়ে গ্যালারি পরিপূর্ণ। প্রতিটাতেই সাফওয়ানের হাস্যজ্জল মুখটা আমার নজর কেড়েছে। ধাক্কা মেরে ফোনটা ফেলে দিলাম।আর সহ্য হচ্ছে না আমার। নিজেকেই এখন কামড়ে কামড়ে ছিড়ে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
আমাকে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাইমা আমার সামনে এসে বলল,
— এখনো সময় আছে প্রীতি। সাফওয়ানের জীবন থেকে চলে যাও। তোমার সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে তা আঁকড়ে ধরো। এখানে থাকলে তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— নিজের চরকায় তেল দাও সাইমা। আমাকে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। এতটাও খুশি হয় না। যে ভবিষ্যতে তোমাকে পস্তাতে হয়।
বলে রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসলাম আমি। এলোমেলো পায়ে হাঁটছি আমি। নিজের অস্তিত্বটাকেই কেমন যেন ফিকে লাগছে আমার কাছে। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট চিপে ধরে নিজের ভেতরের সমস্ত কষ্টগুলো যথাসম্ভব দমন করার চেষ্টা করছি। সাইমার বলা কথাগুলোকে বারবার ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার ভেতরের সত্তা বারবার আমাকে জানান দিচ্ছে। সাইমার বলা একটা কথাও অযৌক্তিক নয়।
বারান্দার রেলিংটা কে শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরলাম। রেলিং এর ওপর জোর হাতে দুটো ঘা দিয়ে বললাম,
— প্রতিবার আমার সাথে কেন এমন হয়? যাকেই আমি জীবনে আকড়ে ধরতে চাই সেই আমার জীবনের জন্য বারবার ভুল প্রমাণিত কেন হয়?
নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না ঠোট ভেঙ্গে কাঁদতে শুরু করলাম।
পেছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো কানে,
চোখের পানি অনেক মূল্যবান । অপ্রয়োজনে তা খরচ করতে নেই। অপাত্রে আবার দানও করতে নেই। যেখানে যেটার মূল্য আছে সেখানেই সেটার সম্প্রদান শ্রেয়।
আমি পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম সায়েম দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তাকাতেই আমাকে উদ্দেশ্য করে আবার বলে উঠলেন,
— আমার সাথে আসুন। আপনার হাতটা অনেকখানি ছিলে গেছে। ওষুধ লাগাতে হবে।
আমি নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তাকে বললাম,
— মনের ক্ষতের ঔষধ কোথায় পাওয়া যায় সন্ধান দিতে পারেন।
আমার কথায় তিনি মুচকি হাসলেন। বাহ হাসলে তো আবার তার বাম গালে টোল পড়ে। আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বললেন,
— আগে হাতের ক্ষতটাতে প্রলেপ দেই। তারপরে না হয় মনের অসুখের প্রতিষেধক দেব।
চলবে…..❣️