প্রীতিলতা পর্ব-১৭

0
442

#প্রীতিলতা ❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#১৭_তম_পর্ব🍂

তরকারি দিয়ে ভাত মেখে মুখে দিতেই চোখ মুখ কুঁচকে গেল সাফয়ানের। তরকারিটা কেমন যেন বিষাদ লাগলো তার কাছে। পাশাপাশি মাছ থেকেও কেমন যেন হালকা আঁশটে গন্ধ ও লাগলো নাকে। সাফওয়ান স্বভাবতই খুবই খুঁতখুঁতে। আগে মায়ের রান্না ছাড়া তার মুখে অন্য কারোর রান্নার রুচি ছিল না। কিন্তু ইদানিং প্রীতির হাতের রান্নায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। সে মনে প্রানে বিশ্বাস করে প্রীতির রান্নার হাত অসাধারণ।

সাফওয়ান গলা ছেড়ে খালাকে ডাকলো। খালা রান্নাঘর পরিষ্কার করছিলেন। হাত মুছতে মুছতে সাফয়ানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন,

— কি হয়েছে ছোট বাবা?

সাফওয়ান হাত ধুয়ে এসে টিস্যুতে মুছে বলল,

— আজকে রান্নাটা কে করেছে খালা?

সাফানের প্রশ্নটা শুনতে খালার মুখ জুড়ে আতঙ্ক ভর করলো। তিনি জানেন যে তার ছোট বাবা কতটা খুঁতখুতে। ইতস্তত করে জবাব দিল

— আমি রান্না করেছি। আসলে নতুন বউয়ের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছিল আর তাড়াতাড়ি তাকে বের হতে হবে। তাই আমি জোর করে তাকে রান্না করতে না দিয়ে নিজেই রান্না করেছি। নতুন বউ শুধু পায়েস রান্না করেছে।

সাফওয়ান টেবিলের উপর হাত রেখে এতক্ষণ খালার কথা শুনছিলেন। কথা শেষ হতে মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে বললেন,

— কি এমন রাজকার্য ছিল ওই বাড়িতে যে একটু রান্না করে যাওয়ার সময় হয়নি তার।

সাফওয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে খালাকে প্রশ্ন করলেন,

— দুধ আছে?

— হ্যাঁ আছে তো নতুন বউ পায়েশ রান্না করছিল আর আলাদা পাতিলে অল্প দুধ রাখা আছে।

খালার কথা শেষ হতেই সাফওয়ান রান্নাঘরে চলে গেলেন। দুধটা গরম করে একটা বাটিতে ঢেলে তাতে কনফ্লেক্স মিশিয়ে নিয়ে চলে আসছিলেন কিন্তু হঠাৎ পাশে রাখা ক্ষীরের পাত্র দেখে আরো একটা বাটি বের করে তাতে বড় দুই চামচ পায়েস তুলে নিল সাফওয়ান। একটা ট্রেতে দুটো পাত্র রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে চলে গেলেন নিজের রুমে।

ল্যাপটপটা নিজের পায়ের উপরে রেখে দ্রুত হাতে টাইপ করা শুরু করলেন। কনফ্লেক্স এর বাটিটা উঠাতে গিয়েও তা রেখে দিয়ে পায়েসের বাটিটা তুলে নিল হাতে। তা থেকে এক চামচ পায়েস মুখে দিতে আপন ইচ্ছায় আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসলো তার। তৃপ্তি ভরে এক চামচের পর আরেক চামচ মুখে দিতেই লাগলেন সাফওয়ান। অবশেষে পুরো বাটিটা সাবাড় করে দম নিল সে। কিন্তু বেশিক্ষণ নয় হঠাৎ তার কাশি শুরু হলো। আপন মনেই বলে উঠলো,

— পানি। পানি দাও প্রীতি।

হাত বাড়িয়ে দেয় আপন মনে। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সামনে তাকায় হঠাৎ তার টনক নড়ে যে প্রীতি এই ঘরে নেই। নিজেই উঠে গিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা এনে বিছানায় বসে ঢক ঢক করে পুরো গ্লাসটা ফাঁকা করে দিল।

তারপরও রুমটাতে এক নজর ঘুরিয়ে ল্যাপটপ টা পায়ের উপর তুলে আবার কাজ করতে শুরু করলো সাফওয়ান। ফোনের রিংটোনে তার ধ্যান ভাঙল। একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। সাফওয়ান কিছু একটা ভাবনা তারপর ফোনটা রিসিভ করল। কানে ধরতে ওপাশ থেকে একটা কণ্ঠস্বর শুনে মুচকি হেসে কথা বলতে শুরু করল।

—- আচ্ছা দুপুর নাগাদ চলে আসবো আমি। হ্যাঁ হ্যাঁ আমি দুপুরেই আসবো। দুপুরে এসে একসাথে লাঞ্চ করব। আচ্ছা রাখছি বলে ফোনটা কেটে ল্যাপটপটা জায়গায় রেখে গোসল করতে চলে গেলেন সাফওয়ান।

________🌺🌺_______

অনেকদিন পরে সেই চিরচেনা রান্নাঘর। কোমরে আঁচল গুঁজে, দুপুরের জন্য রান্না বান্না করছে আম্মু। আমি পেছন থেকে গিয়ে আম্মুকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরি। আম্মু বুঝতে পেরে পিছনে না ঘুরে হাত বাড়িয়ে আমার মুখে হাত বুলিয়ে দিলেন।

থুতনি টা আম্মুর কাঁধে রেখে উঁচু হয়ে দেখে আম্মু মাংস কষাচ্ছে। একটি জিভে পানি চলে আসলো। আম্মুকে ছেড়ে পাশের রেক থেকে ছোট একটা বাটি বের করে আম্মুর পাশে এসে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,

— দাওনা আম্মু কয়েক পিস কষা মাংস। কতদিন তোমার হাতের কষা মাংস খাইনা।

আম্মু হেসে বাটিতে বেশ কয়েক পিস মাংস তুলে দিলেন। আমি রান্না ঘরের ডেক্সের এর উপর বসে আয়েশ করে মাংস খেতে শুরু করলাম।

— আহা আম্মু কতদিন পরে তোমার হাতের সেই কষা মাংস। খুব মিস করি জানো।

আম্মু হেসে উত্তর দিলেন,

— এইজন্যই তো তোর আব্বুকে বেশি করে আজ মাংস আনতে বলেছিলাম আমি জানতাম তুই আসবি আজকে।

মায়ের কথা শুনে আমি হেসে গালের মধ্যে এক টুকরো মাংস চিবতে লাগলাম।

আম্মু তরকারির নাড়া দিতে দিতে বললেন,

— ও বাড়ির সবার কি অবস্থা কেমন আছে?

— সবাই ভালো আছে। ভাইয়া ভাবি ভাবির বাপের বাড়িতে আছে। আর আমি আমার বাপের বাড়িতে।

— আর সাফওয়ান?

— সে তার বাপের বাড়িতে।

মা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন। তারপর তরকারিতে পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে আমার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললেন,

— জামাই আর তোর মধ্যকার সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে তো মা?

খাওয়া বন্ধ করে মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হালকা হেসে বললাম,

— বেঠিক কি ছিল যে ঠিক করতে হবে।

আম্মু আমার মাথায় গাট্টা মেরে বললাম,

— সব সময় এমন ত্যাড়া ব্যাকা উত্তর দিস কেন?

তোমার মেয়েটাই তো ঘাড় ত্যাড়া। বলে হেসে আরেক কিছু মাংস তুলছিলাম খাব বলে।

আম্মু বলছে ,

— তাহলে আজকে একা একা এলি কেন? জামাইকে সাথে করে কেন আনলি না। চোখ মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে যে জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করে এসেছিস।

আমি আম্মুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাটিটা সাইডে নামিয়ে রেখে ডেক্স থেকে নেমে বললাম,

— তারমানে এখন আমার এই বাড়িতে একা আসা নিষেধ?কী তাই তো।

আম্মু অবাক হয়ে আমাকে বলল,

— এটা আমি কখন তোকে বললাম?

— এইতো বললে।

আম্মু আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

— মেয়েদের নিয়ে মায়েদের মনে অনেক দুশ্চিন্তা থাকে । যেটা বিয়ের আগে থাকে একরকম বিয়ের পরে হয়ে যায় আরেকরকম। বিয়ের পরে মেয়েটা শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে নিতে পারছে কিনা স্বামীর সাথে এডজাস্টমেন্ট ঠিক আছে কিনা

এরকম নানারকম দুশ্চিন্তা ভর করে মায়েদের মনে।
তুই এখন এসব বুঝবি না আগে একটা মেয়ের মা হও তারপর হাড়ে হাড়ে টের পাবি। আর তারপর যদি মেয়েটা হয় তোর মতো ঘাড় ত্যাড়া । তাহলে তো আর কথাই নেই।

বলে মা শব্দ করে হেসে উঠলেন সাথে আমিও।

আম্মু চুলার আঁচটা ঠিক করে দিতে দিতে বললেন,

— শোনো মেয়ে এই ত্যাড়ামো গুলো জামাইয়ের সাথে করতে যেও না। কারণ

পুরুষরা হচ্ছে বন্য ঘোড়ার মত, যদি রেগে যায় তাহলে সংসার ওলট-পালট করে দেবে।

তুমি যদি তোমার ঘরে শান্তি চাও তাহলে কখনও তার ওপর হুকুম চালানোর চেষ্টা করো না; হুকুমের দাস হয়ে থাকার জন্য তার জন্মই হয় নি।

তবে হ্যাঁ,তার সাথে সবসময় ছায়ার মত থাকার চেষ্টা করো, তার প্রয়োজনের দিকে নজর রেখো, তার দেখাশোনার কোনো অবহেলা করো না,

তাহলে দেখবে সে কেমন সোজা ঘোড়ার মত তোমার কথায় চলে। যদি এ কায়দায় না চলতে পারো মা, তবে কখনই ওর মনে জায়গা করতে পারবে না..!

______________

আমি আম্মুর কথাগুলো শুনলাম। মনোযোগ সহকারে শুনলাম। আর মনে মনে ভাবলাম এত জটিল সমীকরণ আমি বুঝিনা আম্মু। যে থাকার সে হাজার প্রতিকূলতা ঝড় ঝাপটা পেরিয়েও থেকে যায়।

আর যার চলে যাওয়ার হয় তাকে হাজার ভালবাসা দিয়েও নিজের নীড়ে আটকে রাখা সম্ভব হয় না সে ঠিকই অন্য নীড়ের সন্ধানে ডানা ঝাপটে উড়ে চলে যায়।

আমি বুঝি আম্মু তোমার আসল ভয়টা কোথায়। কোন মেয়ের গায়ে যদি একবার ডিভোর্সের কালিমা লেগে যায় সেই মেয়ে যে সমাজের জন্য কতটা বোঝা হয়ে যায় তা রুমি আপুকে দেখে খুব ভালোভাবে বুঝেছি।

এ সমাজ বড্ড স্বার্থপর। তারা শুধু মেয়েটাকে এককভাবে দোষারোপ করে কিন্তু একটিবার কেউ ভেবে দেখে না যে মেয়েটা হয়তো তার সর্বোচ্চ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বিধ্বস্ত ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নিজের সাথে এক প্রকার বিশ্বযুদ্ধ করে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।

আমি জানিনা আমার ভাগ্যে কি লেখা আছে। কিন্তু এটুকু জানি আমি আমার মা বাবার বোঝা হয়ে থাকবো না। নিজের যেটুকু যোগ্যতা হয়েছে সেটুকু যোগ্যতা দিয়েই এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর সাথে লড়াই করে যাব।

আমি যে এক মরণ খেলায় নেমেছি। সংসার নামক এই মরণ খেলা। অনেকটা ডু অর ডাই ম্যাচও বলা চলে। জিতলে হয়তো ওই সংসার আর সংসারের লোকগুলো সারা জীবনের জন্য আমার হয়ে থাকবে।

আর যদি হেরে যাই….! তাহলে হয়তো তাদের মাঝ থেকে আমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব সারা জীবনের জন্য।

_______🌺🌺________

এমন সময় দরজায় কলিং বেল এর শব্দ কানে আসলো। আম্মু আমার দুইজনেরই ভুরু কুঁচকে গেল। এ সময়ে কে আসতে পারে?

আম্মু বলল,

— দেখ গিয়ে তোর আব্বু মনে হয় সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য আগে আগে অফিস থেকে চলে এসেছে তুই গিয়ে দরজা খোল।

— আচ্ছা।

বলে আমি রান্নাঘর থেকে এক ছুটে মেইন ডোরের কাছে চলে গেলাম। দরজা খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম।

কারণ আমার সামনে স্বয়ং সাফওয়ান দাঁড়িয়ে আছে। ঘাড়ে তার ক্রিকেট কিটের ব্যাগ ঝুলছে। যা বাম হাত দিয়ে খুব শক্ত করে আঁকড়ে রেখেছে। ডান হাতে কিছু মিষ্টি আর কেকের প্যাকেট।

আমি বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। দরজা থেকে যে সরে দাঁড়াব সে হুহ হারিয়ে ফেলেছি। হাত মুছে আম্মু এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,

— কিরে দরজার ঐ পাশে কি ভূত দেখেছিস নাকি এভাবে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন কে এসেছে?

দরজার ওপাশে সাফওয়ান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আম্মু এগিয়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল,

— জামাই এসেছে। আর এই মেয়েটাকে দেখো কান্ডজ্ঞানহীন এর মত দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এগুলো কি বাবা? এতকিছু?

— তেমন কিছু না আন্টি। প্রীতম কোথায়?

বলতে বলতে ড্রয়িং রুমের সোফায় এসে বসলেন তিনি।

গলা ছেড়ে প্রীতমকে ডাকলেন। প্রীতম ও কিছুক্ষনের মধ্যে ড্রইংরুমে এসে হাজির হলো। সাফওয়ান কে দেখে দৌড়ে এসে আলিঙ্গন করল তার সাথে। আমি সবকিছু অবাক ও নীরম দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছি।

সাফওয়ান আলিঙ্গনমুক্ত হয়ে প্রীতমকে জিজ্ঞাসা করল,

— কেমন আছো চ্যাম্প?

— একদম ফাস্ট ক্লাস। খুব খুশি হয়েছি ভাইয়া তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসেছ বলে।

আমার দিকে আর চোখে তাকিয়ে এক প্রকার আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,

—তুমি ডেকেছো আর আমি আসবো না এটা কখনো হয় নাকি।

আমি মনে মনে একটা মুখ ঝামটা দিলাম। সরাসরি দেওয়ার সাহস নেই।

— হুহ..! ঢং। কাল রাতে এক রূপ দেখলাম। এখন আরেক রূপ দেখতেছি। এই ব্যাটার যে কয়টা রূপ আছে একমাত্র আল্লাহই ভালো জানে।

আমার ভাবনার মাঝে ক্রিকেট কিট এর ব্যাগটা প্রীতমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

— এটা তোমার বার্থডে গিফট। প্র্যাকটিসটা যেন খুব সুন্দর হয়। নেক্সট স্কুল টুর্নামেন্টের এর ট্রফিটা যেন তোমার হাতেই দেখতে পাই।

— ওকে ভাইয়া আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।

আমি চলে এসেছি ওখান থেকে ওসব ঢং দেখার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। হাতটা ধুয়ে সবাইকে পাশ কাটিয়ে সিঁড়িবে ছাদে চলে এসেছি আমি। ছাদে পা রাখতেই দেখলাম। আমার লাগানো বেলি ফুল লাল গোলাপ এর গাছগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে। কলি আশা ও শুরু করে দিয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যত্নআত্তির কোন ত্রুটি হয় না এদের। পাশে কিছু ঝালগাছ আর গন্ধরাজ লেবু ও আছে। এগুলো আমার ভাইয়ের হাতে লাগানো।

গাছগুলোতে ছোট ছোট কয়েকটা লেবু ঝুলে আছে। মরিচ গাছে কিছু মরিচ ও আছে। গাছগুলো দেখে মন ভালো হয়ে গেল। সেদিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু গাছগুলোর কাছাকাছি আর যাওয়া হলো না। পেছন থেকে হাতের হেচকা টানে ঘুরিয়ে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দিল কেউ। শব্দ করে ছাদের দরজাটাও বন্ধ করে দিল সে।

এমন হওয়ায় ভয়ে চোখ কুঁচকে নিয়েছিলাম আমি। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি সাফওয়ান আমার বরাবর দাঁড়িয়ে আছেন।

আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন,

— আমাকে না বলে এখানে চলে এসেছ কেন তুমি?

— নিজের বাড়িতে এসেছি তাই বলে আসার প্রয়োজন বোধ করিনি। আপনি কেন এসেছেন এখানে? আমার বাড়ির মানুষগুলোকে দেখাতে দেখো আমি তোমাদের কত ভালো জামাই।

সাফওয়ান গাল বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন,

— এমন মনো ভাব যদি আমার হতো তাহলে তোমার সাথে এতদিন লোক দেখানো সংসার শুরু করে দিতাম। যাক গে। তোমাকে আমার কিছু বলার আছে। কিছু না অনেক কিছুই বলার আছে।

— আমি শুনতে ইচ্ছুক নই। আমার যা শোনার তা কাল রাত্রে সোনা হয়ে গেছে। আপনি কি আর কেমন এটা আপনার মধ্যে খিচুড়ি পাকিয়ে রেখে দিন। আমার জানার কোন প্রয়োজন নেই।

বলে দিয়েছেন না আমি আপনার বাবার পছন্দ। তাই যে পছন্দ করে নিয়ে এসেছে তার কাছেই একটা আর্জি জানাবো আমি। রাখলে রাখবেন না রাখলে আমার আর কিছু করার নেই।

সাফওয়ান আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললেন,

— কিসের আর্জি?

— সেটা আমি তাকেই বলবো।

বলে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা তার হাতটা সরিয়ে দিয়ে চলে আসতে নিলে আবার হাতটা খপ করে ধরে আটকে দিয়ে বললেন,

— বাড়ি ফিরে চলো প্রীতি।

— কিসের প্রয়োজনে?

— আমার প্রয়োজনে…!

কানে বজ্র ধ্বনির তোর শোনালো বাক্যটা। আমি অবাক স্বরে তাকে তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করলাম,

— ক্ কীহ বললেন?

সাফওয়ান আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের দুই বাহুর মধ্যে আমাকে নিয়ে তার মুখ কিছুটা আমার মুখের দিকে এগিয়ে এনে বললেন,

— কিছু না…!

চলবে…..❣️