প্রীতিলতা পর্ব-২৪

0
441

#প্রীতিলতা❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#২৪_তম_পর্ব🍂

এমন হটোকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া তো ঠিক না প্রীতি। তুমি আর একটু ভেবে দেখো। এভাবে চলে যেতে চাইলেই যে চলে যাওয়া যায় না। কথাটা সামিরা ভাবি বলে উঠলেন। একই সাথে তাল মিলিয়ে মা বললেন,

— হ্যাঁ সেটাই তো। তুমি এ বাড়ির ছোট বউ প্রীতি। কিভাবে বলতে পারো বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে? মানছি তোমার রাগ হয়েছে তাই বলে এভাবে কেন তুমি সারা জীবনের জন্য চলে যাবে?

একটু সময় দাও আমার ছেলেকে। ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি জানি আমার ছেলে খারাপ ছাড়া, বেপরোয়া, এই সম্পর্কটা নিয়ে সে উদাসীন। কিন্তু তাই বলে তুমি একেবারে ওকে ছেড়ে চলে যাবে এ কেমন সিদ্ধান্ত।

মা আমার কাছে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

প্রত্যেকটা সংসার এই রকম ছোটখাটো ঝামেলা সমস্যা হয়েই থাকে তাই বলে কি সবাই সংসার ভেঙে চলে যায় নাকি।বরং মানিয়ে নিতে হয়।

আমি শুকনো হেসে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

— মা মানিয়ে তো আপন মানুষের সাথে নিতে হয়। আপনার ছেলে যে আপন মানুষ হতে চাইনি কখনো। আপনারা ঢাকায় যাওয়ার আগেরদিন রাত্রে উনি ডাইনিং রুমে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন,

* ওনাকে বিয়েটা করতে বাধ্য করা হয়েছিল। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে, উনি আমাকে বিয়েটা করেছিলেন। উনি চাননি এই সম্পর্কটা তৈরি হোক। তাহলে কেন আমি এখানে থেকে তার বিরক্তির কারণ হব।

মা আরো কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু বাবা-মাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

— ও তো ঠিকই বলেছে… প্রীতি কেন তোমার ছেলের বিরক্তির কারণ হবে? একপাক্ষিক প্রচেষ্টা কেন শুধু প্রীতি করবে শুধুমাত্র এবাড়ির বউ বলে।

এখানে যদি তোমার নিজের মেয়ে থাকতো তাকেও কি জামাইয়ের দোষ লুকিয়ে ফেলে মানিয়ে নিতে বলতে। সেই জামাই এর কাছে তুমি কৈফিয়ত চাইতে না যে সে কেন তোমার মেয়ের সাথে এমন আচরণ করছে?

কেন শুধু শুধু তোমার বেপরোয়া ছেলের সাথে মানিয়ে নেবে? রূপে গুনে যোগ্যতায় কোন দিক থেকে কম আছে সে যে এখানে তোমার ছেলের শত অবহেলা শর্তেও মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে।

কি যোগ্যতা আছে তোমার ছেলের, প্রীতির পাশে দাঁড়ানোর। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষিত বেকার সেজে বসে আছে ঘরে। শুধুমাত্র আমার উপরে জেদ করে।

আমার কথা না শোনার কসম কেটে বসে আছে তো তোমার ছেলে। আমি বুঝতে পেরেছি ও আমার সাথে জেদ করে প্রীতি মামণির সাথে এমন আচরণ করছে।

তোমার ছেলের কাছে শুনো তো আমি তার কি ক্ষতি করেছি? শুধুমাত্র নিজের ছেলেকে বিচারকের আসনে দেখতে চেয়েছিলাম। এটা কি আমার ঘোর অন্যায় হয়ে গেছে।

প্রত্যেক মা-বাবার কি তার সন্তানের কাছে কিছু চাওয়া পাওয়া থাকে না থাকতে পারে না? তাই বলে এমন আচরণ করে কেন তোমার ছেলে?

আর হ্যাঁ ওর মতামত ছাড়াই সাইমার সাথে বিয়ে ঠিক করে আমি ভুল করেছিলাম।আমি স্বীকার করছি।যার জন্য ওকে ভরা আসরে অপমানিত হতে হয়েছিল।

তা আমিও কি কম অপমানিত হয়েছিলাম।
মানুষের ভুল হতে পারে না। আমারও হয়েছিল। তার জন্য কি এখন ওর পা ধরে মাফ চাইতে হবে আমার। তাহলে কী ও আমাকে ক্ষমা করবে?

উপস্থিত সকলে বাবার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে আমি তো যেন আমার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। বাবা যে এমন কিছু বলবেন আমি ভাবতেও পারিনি।

আর সেই রাগ ভিতরে পুষতে পুষতে তোমার ছেলের সেটা জেদে পরিণত হয়েছে আর তা থেকে একের পর এক ভুল করে যাচ্ছে সে।

আমি বুঝতে পেরেছি ও কেন প্রীতিকে মেনে নেয় নি। ওই যে ও আমার বন্ধুর মেয়ে বলে।এটাই হয়েছে মেয়েটার আসল অপরাধ।আচ্ছা ঠিক আছে।

ও ওর ক্রোধ আর ইগো এগুলো নিয়েই থাকুক। আমার ওই একটা ভুলের জন্য ও যদি সারা জীবন আমার ওপরে রাগ দেখিয়ে শান্তিতে থাকতে পারে ও তাই থাকুক। বাবা হিসেবে আমি সবসময় চাই আমার সকল সন্তানরা ভালো থাকুক।

একাই থাকুক ও সারা জীবন। এই ধরনের মানুষদের কখনো সঙ্গী থাকে না।

আমাদের দুজনের রেষারেষির মধ্যে আমি প্রীতির জীবন নষ্ট করতে পারি না। ওর ও ভালো থাকার পূর্ণ অধিকার আছে। সেই ব্যবস্থা আমি করব।

কথাগুলো শেষ করে বাবা আমার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

প্রীতি মামনি তুমি আমার একটা কথা রাখো শুধুমাত্র। আমি জানি মামনি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি আমি। তোমার মায়ের মাথায় ভুত চেপে ছিল তার ছেলেকে ঠিক একমাত্র তুমিই পারবে।

আমি নিষেধ করেছিলাম কিন্তু তিনি তা কানে নেননি। এক সময় আমিও বিশ্বাস করেছিলাম যে আমার ছেলেটা হয়তো তোমার সান্নিধ্যে গেলে হয়তো সবকিছু আবার আগের মত হয়ে যাবে। লোভী হয়ে গিয়েছিলাম মা। ছেলেটাকে আবার আগের মতন নিজেদের কাছে ফিরে পাব বলে।

কিন্তু না বড্ড ভুল হয়ে গেছে আমাদের। তোমার মা-বাবা এখনই তোমার বিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন না।এক প্রকার জোর করে তোমাকে চেয়ে এনেছিলাম আমি তাদের কাছ থেকে।

খুব বড় মুখ করে বলেছিলাম যে তোমাকে একদম নিজের মেয়ের মত করে রাখবো। সামান্য কষ্ট স্পর্শ করতে দেব না তোমাকে। কিন্তু না কথা রাখতে পারিনি আমি।

তাকে বাধা দিয়ে বললাম,

— না বাবা আপনি এসব কি কথা বলছেন। এমন শশুর শাশুড়ি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু আমার ভাগ্যে এত সুখ শান্তি লেখা ছিল না। এতে আপনাদের কারোর কোন দোষ নেই।

কিন্তু মা আমি তো নিজের কাছে নিজে অনেক অপরাধী হয়ে গেছি। অপরাধ থেকে সামান্য হলেও মুক্তি দান করো আমাকে। আমার একটা মাত্র অনুরোধ রাখ। তাহলে বুঝবো আমার একটু হলেও অপরাধমোচন হয়েছে।

আমার সাথে সাথে উৎসুক দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালো। পাশে তাকিয়ে দেখলাম আমার বরাবর সোফা সেটের উপরে মাথা নিচু করে বসে আছেন সাফওয়ান।

সেদিক থেকে নজর ঘুরিয়ে বাবার উদ্দেশ্যে বললাম

— কি অনুরোধ বাবা?

বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

— আমি তোমাকে নিজের মেয়ের মত মনে করি। তাই আমাদের ভুলের কারণে তোমার জীবনে যেটুকু সময় নষ্ট হয়েছে সময়টা তো ফিরিয়ে দিতে পারব না কিন্তু তোমার একটা নতুন জীবন উপহার দিতে পারব।

পরবর্তী জীবনটাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে চাই। তুমি যদি বাড়িতে থাকতে না চাও থাকবে না। আমার মেয়ে বাইরে পড়াশোনা করলে তাকে যেভাবে সবদিক থেকে খেয়াল রাখতাম আমিও তাই রাখবো।

আর দয়া করে তোমার মা-বাবাকে এখন কিছু জানিও না। লজ্জা, আমি তাদেরকে মুখ দেখাতে পারবো না। আগে তোমার একটা যথার্থ ব্যবস্থা করে নেই তারপরে ভাইয়ের কাছে হাতজোড় করে মাপ চেয়ে নেব আমি।

আর তোমার পড়াশোনা শেষ হয়ে গেলে আমি ভালো ছেলে দেখে তোমাকে আবার বিয়ে দিব। তোমার যোগ্য পাত্রই তোমাকে উপহার দিব।

বাবার বলা শেষ কথাটি কানে পৌঁছাতে যেন বজ্রপাত হলো আমার ওপরে। পায়ের তলার মাটিটাও যেন কেঁপে উঠল আমার। এসব কি বলছেন বাবা…!

মা এবার বাবার হাত চেপে ধরে কাঁপা গলায় বললেন,

— এসব তুমি কি বলছো? ও আমার ছোট ছেলের বউ। তুমি আবার ওর বিয়ে দেবে মানে?

বাবা দৃঢ় গলায় বললেন,

— হ্যাঁ। আমার ছেলের সাথে ডিভোর্স করিয়ে আমি প্রীতিকে আমার বিয়ে দেব। ভুল যখন আমি করেছি শুধরে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।

আমার সারা শরীর কাঁপছে। ঘাড় ঘুরিয়ে সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি চমকে বাবার দিকে তাকালেন। কিন্তু তিনি বরাবরের মতো নিশ্চুপ।শান্ত দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তার চোখ হালকা ছল ছল করছে বাবা ও তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।

সাফোয়ান শুকনো হেসে অন্য দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালেন। সবাইকে পেরিয়ে তিনি সিড়িতে পা রাখতেই

বাবা দ্বিতীয়বারের মতো হুংকার ছাড়লেন। যার ফলে উপস্থিত সবাই হালকা কেঁপে উঠলোও সাফোয়ান আগের মত ভাবলেশহীন ভাবে দাড়িয়ে পড়লো

— আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। প্রীতি তুমি উপরে যাও গিয়ে তোমার সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে পুতুলের রুমে চলে এসো। কাল সকালে আমার মেয়ের জন্য কেনা ফ্লাটে তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো।

আপাতত কাল থেকে তুমি ওখানেই থাকবে। আর আমি তোমার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেব। তুমি শুধু তোমার ক্যারিয়ারে মনোনিবেশ কর।

আর হ্যাঁ ।সকলের উদ্দেশ্যে বলছি। আমি এখন যে কথাগুলো বললাম এইগুলোই শেষ কথা। এই কথার নড়চড় হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। এবার যাও সবাই যে যার রুমে যাও।

_______🌺🌺_________

রুমে এসে আলমারির কাছে এগিয়ে গেলাম আলমারির লক খুলে আমার লাগেজটা বের করে নিলাম। আলমারিটা আটকাতে গিয়ে হঠাৎ সেই সাফয়ানের কিনে দেওয়া কালো লং গাউন এর দিকে নজর গেল। হাতে তুলে নিলাম গাউনটা তাতে হাত বুলিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরতেই চোখে দিয়ে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।

এই পোশাকটা তার দেওয়া প্রথম উপহার ছিল। ভালোবেসে দিক আর না বেসেই দিক তার থেকে পাওয়া প্রথম উপহার। এটা আমি এখানে রেখে যাব না। ব্যাগের চেইন খুলে ড্রেসটা ব্যাগে রেখে দিলাম। আলমারিটা লক করতে গিয়ে আবারো থেমে গেলাম আমি সাফওয়ানের শার্ট আর ছবি আগে ঢুকিয়ে যেন আটকে পেছনে ঘুরতেই সাফোয়ানের সাথে প্রায় ধাক্কা খেলাম।

তার চোখের দিকে তাকিয়ে যেন থমকে গেলাম। তার মুখটা আজ বড্ড শুকনো আর নির্জীব। শার্টের সামনের দুটো বোতাম খোলা চুলগুলো এলোমেলো চোখটা হালকা লালচে হয়ে আছে।

আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ ঘুরিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসে হেসে বলল,

— আজকাল কী নিজের পোশাক ছেড়ে আমার শার্ট গায়ে দেওয়াও শুরু করেছেন নাকি?

আমি তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললাম,

— না। প্রিয় মানুষটার বুকে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে তো তাই রাত্রে যদি ঘুম না আসে তাই ঘুমের ওষুধ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছি সাথে করে। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবো আর কি।

সাফওয়ান এক নজরে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন । দেখে মনে হচ্ছে উনি কিছু বলতে চাইছেন। দাঁড়িয়ে থাকে জিজ্ঞাসা করলাম,

— আপনি কি কিছু বলতে চাইছেন?

উনি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন।

আমার মনের মধ্যে কিঞ্চিত আশার সঞ্চার হল। হয়তো ইনি এখুনি বলবেন এই প্রীতি কোথায় যাবে তুমি? এই ঘর থেকে একবার বেরিয়ে দেখো তোমার হাল খারাপ করে দেবো আমি। কোথাও যাবে না বুঝেছ তুমি। এই ঘরে আমার বউ হয়েই সারা জীবন থাকতে হবে তোমাকে।

আমি সাফোয়ানের দিকে আরো কিছুটা এগিয়ে গিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

— বলুন না কি বলবেন আমি শুনছি।

তিনি কিছুক্ষণ ইতস্তত করে

হঠাৎ বলে উঠলেন,

— তুমি সত্যিই চলে যাবে প্রীতি?

আমার কিছুক্ষণ আগের ভাবনাগুলো চুরমার হয়ে আমারি চোখের সামনে ভেঙে পড়ে গেল। চোখে পানি নিয়েই জোরে হেসে উঠলাম।

— তো আপনার কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি। আপনি এমন কেন বলুন তো আপনার কেন মনে হয় আমি সব সময় মজা করার মুডে থাকি।

বরং মজা তো আপনি করলেন আপনি চাইলে কিন্তু সবকিছু ঠিক করে দিতে পারতেন। কিন্তু আপনি করলেন না। আমাকে ভালবাসলে কি আপনার খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত?

আরো কিছুটা আমার দিকে এগিয়ে এসে ধীর গলায় বললেন,

—- উহু আমার না বরং তোমার খুব ক্ষতি হয়ে যেত। তোমার সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পরে আছে। রূপে গুনে যোগ্যতায় কোন দিক থেকে কম আছো তুমি? কেন মিছে আমার মত একটা বেকারের সংসার করবে।

আমি এবার রাগে নিজেকে সামলাতে না পেরে তার শার্টের কলার চেপে ধরলাম,

— আপনি জানেন আপনি কত বড় অমানুষ। নিজ হাতে করে আমার ভালোবাসাটাকে প্রতিনিয়ত গলা টিপে হত্যা করে যাচ্ছেন।

কেন করলেন আপনি আমার সাথে এমন? আপনাকে আমি জীবনেও ক্ষমা করব না। শুধুমাত্র রাগ জেদ আর ইগোর জন্য আপনি কতগুলো সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন একবার ভেবে দেখেছেন।

আপনি জীবনের কোন না কোন এক সময় গিয়ে এর জন্য পস্তাবেন আমি বলে রাখলাম। তখন হাজার খুজলেও আর কাউকে আপনার পাশে পাবেন না।

আমার ফ্রেন্ড আমাকে বলেছিল জীবনের প্রথম ভালোবাসা নাকি ভুল মানুষের সাথে হয়ে থাকে। আজ বুঝতে পারছি কথাটা মিথ্যা ছিল না। আপনি আমার জীবনের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল মানুষ। আর এই ভুল থেকে আমার মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে হয়তো সারা জীবনেও তা ঠিক হবে না।

শেষের কথাটা আমি কান্না জড়িত কণ্ঠে চিৎকার করে বললাম। উন্মদের মতো তার কলার ধরে ঝাকাতে লাগলাম,

— কেন করেছেন আপনি আমার সাথে এরকম? কেন কেন বলুন।

আমার হাত দুটো চেপে ধরে নিজের কলার ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন,

কি করছো তুমি প্রীতি এত জোরে জোরে চিৎকার কেন করছো? বাড়িতে সবাই শুনছে।

— শুনুক। এখানে আমি আমার হাজবেন্ডের সাথে চেঁচাচ্ছি । কার কী তাতে। আমাদের মাঝে যে আসবে তাকে আমি মেরেই ফেলবো।

সাফওয়ান আমাকে ধমকে বললেন,

— পাগল হয়ে গেছো তুমি?

—- হ্যাঁ। পাগল হয়ে গেছি আমি।

আর কি বললে তুমি? তুমি বেকার বলে আমি তোমার সংসার করতে চাইছি না? তুমি বেকার জেনেও আমি তোমার সংসার করতেই বাড়িতে এসেছি তোমার হাত ধরে। জেনে শুনেই বেকার ছেলেটাকেই ভালোবেসেছি আমি। ভবিষ্যতেও ভালোবেসে যাবো।

আর কী যেন ও হ্যাঁ যোগ্যতা….! ভালোবাসার জন্য কোন যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না । কেন বোঝনা তুমি এগুলো?

বরং এই বেকার ছেলেটা আমার ভালোবাসাটাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে আমাকে।

আপনি জানেন আপনার এই কথাগুলো শোনার পরে আপনাকে আমার খু/ন করতে ইচ্ছা করছে। আমি না আপনার এই খাপ ছাড়া আচরণে এই এক মাসে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আর নিতে পারছি না আপনার এই আচরণ।

এমনিতেই আজ সারা দিনের শারীরিক পরিশ্রম আর কিছুক্ষণ আগে মানসিক চাপের মুখে পড়ে শরীরটা একদম ক্লান্ত হয়ে গেছে। আমার গলার স্বর ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে আসলো।

মাথাটা কেমন যেন ঘুরে উঠল আমার। সাফওয়ানের কলার থেকে হাত সরিয়ে দু হাত পিঠের কাছে নিয়ে গিয়ে শার্টটা আঁকড়ে ধরে আমার মাথাটা দিয়ে তার বুকে জায়গা করে নিলাম।

চোখ বুজে ঝিমিয়ে আসা গলায় তাকে বললাম,

—আমি তোমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবেসেছি। আমার ভালবাসাটা মিথ্যা ছিল না সাফওয়ান। এমনটা না করলেও পারতেন। আপন….

বাকি কথাগুলো মুখের মধ্যেই হারিয়ে গেল। ঢলে পড়লাম তার বুকে…!

#চলবে….❣️