প্রীতিলতা পর্ব-২৫

0
406

#প্রীতিলতা❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#২৫_তম_পর্ব🍂

পিটপিট করে চোখ খুলেই প্রথমে নজর গেল ছাদের দিকে।বড্ড বেশি অপরিচিত লাগলো। কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ মানসপটে সব ঘটনা একের পর এক ভেসে উঠলো।

ধরফর করে উঠে বসলাম আমি। চারিদিকে খুব সূক্ষ্মভাবে নজর ঘোরালাম। না এটা সাফওয়ানের রুম নয়। সম্পূর্ণ অন্য একটা ঘর। সম্ভবত সেই ফ্ল্যাট।
বাবা যেখানে আমাকে রাখতে চেয়েছিলেন। ভাবতেই চোখ জোড়া অশ্রুতে টই টুম্বুর হয়ে গেল।

আমাকে তার জীবন থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার এতই তাড়া। যে আমার অচেতন অবস্থায় এই ফ্লাটে এসে রেখে গেছে আমাকে। এতটা পাষাণ, হৃদয়হীন! মানুষ কিভাবে হতে পারে? এতগুলো দিন একই ছাদের নিচে তার সাথে থেকেছি ভালোবাসা দূরে থাক একটু কি দয়া মায়া জন্মায়নি আমার উপরে।

কথাগুলো নিজ মনে ভাবতেই ঠোঁট ভেঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়লাম আমি। দুই হাতের তালু মাথার চুলের মধ্যে চালিয়ে চুলগুলো মুঠো করে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।

কান্নার চাপে দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে আমার।ফোপাতে ফোপাতে বলে উঠলাম,

— কম চেষ্টা তো করিনি সাফওয়ান তোমার মনে জায়গা করার জন্য। একটু কেন বুঝলে না তুমি আমাকে? আমাকে একটু ভালোবাসলে তোমার কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো?

তুমি যদি বলতে যে তুমি আমাকে ঘেন্না করো তাহলে আমি নিজের মনকে বোঝাতে পারতাম । কিন্তু তুমি তো শুধু সব সময় নীরবতা পালন করে এসেছো আমি থেকে গেলেও তোমার কিচ্ছু যায় আসেনা চলে গেলেও যায় আসে না। তোমার এমন উদাসীন আচরণ আমি মেনে নিতে পারি না।

কেন এমন করলে তুমি আমার সাথে?কেনো?

বলে পাশে রাখা ডেক্সের ওপর ফুলদানি টা হাত দিয়ে আছাড় মেরে ভেঙে ফেললাম। ফুলদানিটা কয়েক টুকরো হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে আর ফুলগুলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।

কাঁচের ফুলদানি হওয়ায় ভাঙার সময় বেশ জোরে শব্দ হয়েছে। তৎক্ষণাৎ দরজার লক খুলে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করল কেউ। দরজা খোলার শব্দ হতেই মাথা তুলে সেদিকে তাকালাম।

আমার বয়সে একটি মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে ব্ল্যাক সালোয়ার কামিজ কিন্তু পোশাকটা দেখে কেমন uniform এর মত লাগছে। আমি ভুরু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে কিছুটা এগিয়ে এসে আমার উদ্দেশ্যে বললো,

— এনিথিং রং ম্যাম?

কথা না বলে তার দিকে তাকিয়ে আছি এক নজরে। আমার কোন রেসপন্স না পেয়ে আরো কিছুটা এগিয়ে আসতে দেখে কাছের ফুলদানিটা নিচে ভেঙ্গে পড়ে আছে। সে ওটা পা দিয়ে ডিঙিয়ে আমার কাছে এসে হাত ধরে দেখে বলল,

— আপনার লাগেনি তো ম্যাম?

আমি না বোধক মাথা নাড়ালাম তা দেখে মেয়েটা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তারপরে জায়গাটা পরিষ্কার করে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

— আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন ম্যাম। আমি আপনার জন্য খাবার আনছি।

এবার আমি মুখ খুললাম তাকে প্রশ্ন করলাম,

— তুমি কে?

— আমি মিতা। আপনার দেখাশোনা করার জন্য এসেছি। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন ম্যাম আমি আসছি।

বেরিয়ে যাচ্ছিল প্রায় তখনই আমি ওকে প্রশ্ন করলাম,

— কতক্ষণ আগে নিয়ে এসেছে আমাকে এখানে?

পেছনে ফিরে আমার উদ্দেশ্যে বলল,

— দুই ঘন্টা আগে ম্যাম।

আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। চোখ মেলে তার উদ্দেশ্যে বললাম,

— চলে গেছে তাই না।

মেয়েটি হাত দুটো সামনে রেখে অনুগত ছাত্রের মত উত্তর দিল

— জ্বী ম্যাম। কিছুক্ষণ আগে।

— আচ্ছা তুমি যাও। আমার জন্য এক কাপ আদা চা বানিয়ে আন। মাথাটা খুব ব্যথা করছে।

— ওকে ম্যাম। আর এই যে আপনার লাগেজ। এখানে আপনার সবকিছু আছে।

আমি মাথা নাড়াতেই মিতা রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
চাদরটা সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। আরেকবার ঘরটায় চোখ বুলিয়ে লাগেজ এর কাছে এগিয়ে গিয়ে খুলে জামা কাপড় আর তোয়ালে বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।

প্রায় ৪৫ মিনিটের মত একটা শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসলাম ওয়াশরুম থেকে। বের হতে ই মিতাকে দেখলাম ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ সেন্টার টেবিল এর উপরে রাখছে। আমাকে দেখে বলল,

— এই নিন ম্যাম গরম গরম চা। আগেরটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। খেয়ে নিন তাড়াতাড়ি।

আমার হাত থেকে টাওলটা নিয়ে বারান্দায় মেলে দিয়ে এসে বলল,

— আমি খাবার আনছি ম্যাম। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন।

— তাড়াতাড়ি কেন?

মেয়েটা কিছুটা দমে গেল। কিছুক্ষণ পরে বলল,

— না ম্যাম ।আপনি নাকি রাত থেকে কিছু খান নি তাই বললাম।

— ওহ। খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি যাও। আর হ্যাঁ, তুমি আমাকে আপু বলে ডাকতে পারো।ম্যাম বলো না । শুনতে ভালো লাগছে না।

মেয়েটা খুশি খুশি আমাকে বলে উঠলো,

— তাহলে ভাবি ডাকি।

কথাটা কানে যেতেই আমার যেন সর্বাঙ্গ জ্বলে উঠলো। আমি বেশ জোরেই বলে উঠলাম,

— মোটেও না। আমাকে একদম ভাবি বলে ডাকবে না। আপু ডাকতে বলেছি।তাই ডাকবে। বুঝতে পেরেছো।

মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ের সম্মতি জানালো।তারপর চলে গেল। আমি বিরক্ততে “চ” এর মত উচ্চারণ করে বললাম,

— কার রাগ কার উপরে ঝাড়ছি আমি। ধ্যাত…!

রুমে রাখা সোফার উপরে বসে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চা খেতে লাগলাম। মাথাটা সত্যি বড্ড ব্যথা করছে।

__________🌺🌺________

কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পর সে আবার ঘরে চলে আসলো। হাতে খাবারের ট্রে।

কিছু বলতে যাব তার আগেই মেয়েটা সেন্টার টেবিল এর উপরে খাবার পরিবেশন করলো। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত, কালোজিরা আর শুঁটকি মাছের ভর্তা, আর মুরগির মাংস ।

আমি খাবারের উপর চোখ বুলিয়ে মিতার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও মুখভরা হাসি দিয়ে বলল,

— আমি জানি আপু। এগুলো আপনার খুব পছন্দের খাবার এবার তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন।

আমি মিতার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম ও জানবে কিভাবে যে এই খাবারগুলো আমার খুব পছন্দের। কেউ তো জানেনা। আমি মিতাকে প্রশ্ন করলাম,

— কে বলেছে এগুলো আমার পছন্দের খাবার?

মেয়েটি অকপটে জবাব দিল,

— কেন স্যার বলেছে।

আমি মনে মনে ভাবলাম বাবা বাবা জানলেন কিভাবে মেয়েটার ডাকে আমার হুস ফিরল আর কিছু না ভেবে খাবারের মনোযোগ দিলাম সত্যি বড্ড খিদে পেয়েছে আমার।

খাওয়া-দাওয়া শেষে এখন একটু শরীরটা ভালো লাগছে মেয়েটা মাথা যন্ত্রণার ওষুধ আর পানি আমার হাতে ধরিয়ে দিল মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওষুধটা খেয়ে নিলাম সত্যি এটুকু সময় মেয়েটাকে আমার বড্ড ভালোই লেগেছে মেয়েটা আমার মাথার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে বলল,

— এ কী আপু। তোমার চুলগুলো তো দেখি একেবারে ভেজা। এসো আমার সাথে

বলে হাত ধরে টেনে বেড সাইড ড্রেসিং টেবিলের সামনে চেয়ারে বসিয়ে দিল আমাকে প্রথমে তোয়ালে দিয়ে চুলগুলো মুছে তারপর হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল গুলো ভালো করে শুকিয়ে ঝরঝরে করে পিঠে ছড়িয়ে দিল ।

হঠাৎ এর মধ্যে মেয়েটার ফোন বেজে উঠলো মেয়েটার ফোন নিয়ে কথা বলতে বাহিরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা ফিরে এসে ওয়াল আলমারি থেকে হ্যাঙ্গারে ঝুলানো একটা লং ড্রেস ব্যাগ বের করল।

হাতে করে নিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে চেন খুলে ড্রেসটা বের করল। ওশান ব্লু কালারের লং জর্জেট গাউন। এক কথায় অসাধারণ একটা গাউন চোখ ধাঁধিয়ে গেল আমার।

আমি ড্রেস থেকে চোখ সরিয়ে মিতার দিকে তাকালাম। মিতা আমার হাতের ড্রেসটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,

— এটা পড়ে নিন আপু।

আমি অবাক হয়ে তাকে প্রশ্ন করলাম,

— ড্রেস পড়বো মানে? এই ড্রেস কেন পড়বো আমি? আর কোথায় যাব এটা পরে?

মেয়েটা ড্রেস আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

— তা আমি বলতে পারব না ম্যাম সময় হলে আপনি বুঝতে পারবেন কিন্তু তাড়াতাড়ি এটা পড়ে আসুন বেশি সময় নেই হাতে।

— আমি পড়বো না।

— প্লিজ আপু স্যার বলেছে আপনাকে তাড়াতাড়ি রেডি করে দিতে। আধা ঘন্টার মধ্যে আপনাকে তৈরি করে দিতে না পারলে স্যার আমাকে বকা দেবেন।

কখন থেকে মেয়েটা খালি স্যার স্যার করেই যাচ্ছে।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,

— তোমার স্যার কে এখানে আসতে বল। এই ড্রেস আমি পড়বো না।

— প্লিজ আপু।

— বললাম না তোমার স্যারকে আসতে বল।

মেয়েটার উপায় না পেয়ে কাকে যেন ফোন করল। ফোনটা কেটে দেওয়ার পরে হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে নাম্বারটা দেখতে সাথে সাথে রিসিভ করলাম আমি।

— হ্যাঁ বাবা।

— ””””

— কিন্তু বাবা কেন?

—- “”””””

— আচ্ছা ঠিক আছে।

ফোনটা কেটে দিয়ে ড্রেসটা হাতে নিয়ে মিতার দেখানো চেঞ্জিং রুমে চলে গেলাম আমি। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আসলাম গাউটা পড়ে । গাউনটা অনেক লং তাই ঘের ধরে উঁচু করে হাঁটতে হচ্ছে। আমাকে বেরিয়ে আসতে দেখে মেয়েটা বলল,

— মাশাল্লাহ। আপনাকে একদম বার্বি ডলের মত লাগছে। স্যারের পছন্দ সত্যিই অসাধারণ।

ভুরু কুঁচকে মেকার দিকে তাকালাম সে কখন থেকে খালি স্যারের গুনগান করেই যাচ্ছে।কে এই স্যার?

মিতার কথায় ধ্যান ভাঙল।

— আপু আপনার বেশি সাজগোজের প্রয়োজন নেই এমনিতেই অপ্সরীর মত লাগছে।

আমাকে নিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসালো। চুল খোলাই রাখল সে। শুধু বাম দিকে থেকে শিথি করে চুলগুলো কপালের ডান সাইট থেকে নিয়ে গিয়ে পেছনে ওশান ব্লু কালারের পাথরে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিল।

ঠোঁটে হালকা মিষ্টি কালারের লিপস্টিক, চোখে কাজল , আইলাইন ার আর হালকা মেকআপ দিয়ে সাজিয়ে দিলো আমাকে। তারপর সামনে রাখা সাদা পাথরের একটা নেকলেস আমার গলায় পরিয়ে দিল হাতে দুই জোড়া করে পাথরের চুরি আর কানে পাথরের কানের দুল পরিয়ে দিল।

— ব্যাস। আপনার সাজ কমপ্লিট। কি লাগছে আপু আপনাকে। আমারিতো চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। তার কি হবে কে জানে?

আমিও আয়নায় নিজেকে দেখলাম। তারপর চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। মিতা আমার হাত ধরে উঠে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল,

— চলুন আপু আমাদের এবার যেতে হবে।

— কোথায় যাব আমি?

— গেলেই দেখতে পাবেন।

রুম থেকে বাইরে বের হতে কেমন খটকা লাগলো। এটা তো কোন ফ্লাট নয়। দেখে তো মনে হচ্ছে কোন রেসর্ট। মিতা আমার হাত ধরে ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ড্রয়িং রুমে পৌঁছাতেই দেখলাম সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি করা একটি ঘর।

আমি মিতার হাত ছাড়িয়ে বললাম,

— এটা কোথায় মিতা?

মিতা থেমে গিয়ে পিছনে ঘুরে আমার উদ্দেশ্যে বলল,

— আপু আপনি কুয়াকাটায় আছেন।এটা একটি কটেজ

আমি চমকে উঠলাম। অবাকের শীর্ষে চলে গিয়েছি যেন। মৃদুস্বরে চিৎকার করে বললাম,

কীহ…! কুয়াকাটা! এখানে আমি আসলাম কি করে?কে এখানে নিয়ে এসেছে আমাকে ?

— এটা আমি আপনাকে বলতে পারবো না আপু। আপনি চলুন আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

— না আমি কোথাও যাবো না।কারা তোমরা?

— আপনি আমার সাথে চলুন সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। নিশ্চিন্তে আসুন আপনার কোন ক্ষতি হবে না।

আমি আর কথা বাড়ালাম না। মনের মধ্যে একরাশ কৌতূহল নিয়ে মিতার পেছন পেছন যেতে লাগলাম। মেইন ডোর পেড়িয়ে সামনে এগোতেই দেখতে পেলাম সাগর কন্যাকে।

ঢেউ এসে পাড়ে আছড়ে পড়ছে। মেইন গেটের কাছে গিয়ে দাড়াতেই দেখতে পেলাম জায়গাটা কেমন একটা দ্বীপের মত। কিন্তু সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে যে কিছুক্ষণ আগের ব্যাপার গুলো মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।

মিতা আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,

— এবার আপনাকে একাই যেতে হবে আপু। আপনি সোজা এগিয়ে যান।

আমি পেছনে ঘুরে মিতার দিকে এক নজর তাকিয়ে সামনে এগোতে লাগলাম। দু হাতে লং গাউনটা উঁচু করে ধরে ধীরপায়ে এগিয়ে গেলাম। বেশ কিছুটা যেতেই একটা জিনিসের চোখ আটকে গেল।

সামনে চাওনা একটা ফুলে বিছানো রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সে রাস্তার দুই ধারে স্টিক পুতে তাতে রংবেরঙের বেলুন ঝুলিয়ে খুব সুন্দর একটা সেতুর মতো তৈরি করা হয়েছে। দেখতে এত সুন্দর হয়েছে যে আমার মাথায় আর প্রশ্ন আসলো না যে এটা কার জন্য তৈরি করা হয়েছে?

আমি সোজা তার মধ্যে দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। মনের মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হতে লাগলো। আপন ইচ্ছায় ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। দূর থেকেও সেই হাসিতে একজন তাল মেলালো।

বেশ অনেকটা পথ হাঁটার পর সেই ফুলে বিছানো রাস্তার শেষ প্রান্তে এসে থামলাম। এবার হঠাৎ মাথায় আসলো যে রাস্তাটা কার জন্য ছিল পেছনে ঘুরে এদিক-ওদিক তাকিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলাম পাড় থেকে ঢেউ সরে গেছে। আর সাথে সাথে আমার চোখগুলো যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। কারণ

সমুদ্রের পাড়ে মাঝারি সাইজের ঝিনুক দিয়ে খুব সুন্দর করে খোদাই করে লেখা ,

🐚শুভ জন্মদিন আমার প্রিয়তমা🐚
প্রীতিলতা।

লেখাটা পড়তেই বুকের মধ্যে কেমন হাতুড়ি পেটানো শুরু হল।আমার মনে হল এগুলা আমার চোখের ভুল। তাই আরো কিছুটাই এগিয়ে গিয়ে দেখলাম। না ঠিক আছে। উত্তেজনা, আনন্দ, ভয় তিনটাই কাজ করছে আমার মধ্যে।

ভাবনার মধ্যে দুই কদম পিছিয়ে গেলাম গাউনের ধরে পেছনে ঘুরে দৌড় দিতে থেমে গেলাম আমার সামনে এক হাটু গেড়ে বসে থাকা মানুষটাকে দেখে।

ফর্সা শরীরে ব্ল্যাক সুট দারুন মানিয়েছে তাকে। গলায় ওশান ব্লু রঙের টাই ঝুলানো। চুলগুলো জেল দিয়ে খুব সুন্দর করে সেট করা। আজ তাকে দেখতে অন্যদিনের তুলনায় বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।তার থেকে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে তার চোখ জোড়া আজ তা পুরোটাই মাদকতায় পরিপূর্ণ।

তাকে এভাবে দেখে ভিতরের সমস্ত আবেগ অশ্রু হয়ে চোখে ভিড় জমালো।

মুখ থেকে অস্পষ্ট সরে বেরিয়ে আসলো,

— স্ সাফওয়ান। আপনি…!

সাফওয়ান ওভাবেই বসে থেকে আমার দিকে তার বা হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

—- many many happy returns of the day my prettiest lady.

কথাগুলো কানে আসতেই আবেশে চোখ বুজে ফেললাম। শিরদাঁড়া দিয়ে যেন শীতল স্রোত বয়ে গেল। আহা আজ আমার জন্মদিন ।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।

ডান হাতে টান পড়তেই চোখ মেলে তাকালাম। দেখলাম ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুলে একটা আংটি পরিয়ে দিলেন সাফওয়ান। তারপর তালুর উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁয়েও উঠে দাঁড়ালেন।টান দিয়ে আমাকে তার সাথে মিশিয়ে নিলেন। বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে নেশাক্ত স্বরে বলে উঠলেন,

— I thought a different type gift for you. May I sweetheart…

শেষের শব্দটা ফিসফিস করে বললেন।

আমি অশ্রু সিক্ত নয়নে তার দিকে তাকালাম। সে যেন আরেকটু বেশি মাদকতাই ডুবে গেল। বাঁ হাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে তার সাথে আরো একটু গভীর ভাবে মিশিয়ে নিলেন ।ডান হাতটা আমার চুলের মধ্য গলিয়ে দিয়ে মাথার পিছনে হাতটা রেখে মুহূর্তের মধ্যে আমার ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নিলেন।

এমন হটোকারী কান্ডে আমি হকচকিয়ে গেলাম। প্রথমে হালকা কেঁপে উঠলাম।পরক্ষণে চোখ বুজে নিলাম। হয়ে গেলাম তার দুই বাহুর মধ্যে বন্দি ।কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। ইশ্ এ কেমন যেন এক অন্য রকম অনুভুতি।

#চলবে…..❣️