প্রীতিলতা পর্ব-২৬

0
431

#প্রীতিলতা❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#২৬_তম_পর্ব🍂

গোধূলি বেলায় প্রিয় মানুষটার বুকে মাথা রেখে সাগর কন্যার পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা এ যেন এক প্রকার স্বর্গীয় সুখানুভূতি। বুক ভরে একমুঠো প্রশান্তির বায়ু টেনে নিলাম নিজের মধ্যে। তার সাথে নাকে ধাক্কা খেলে সেই চির পরিচিত মানুষটার গন্ধ। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। মনে মনে কয়েক বার আওড়ালাম একটা শব্দ।” আমার মানুষ” “আমার একান্ত মানুষ”।

মুখটা আরো গুজে দিলাম তার বুকে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্যটা সাগরে অতলে তলিয়ে গেল। চারিদিকে কেমন অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে উঠলো। সাফওয়ান এবার আমাকে তার বুক থেকে সরিয়ে সোজাসুজি দার করিয়ে মুখটা কিছুটা নিচে নামিয়ে এনে আমার নাকের সাথে নাকের একটা ঘষা দিয়ে বললো,

— চলুন ম্যাডাম এবার কটেজে ফিরে যাওয়া যাক।

আমি না বোধক মাথা নাড়ালাম অবুঝ শিশুর মত। তা দেখে সেও ছোট বাচ্চাদের মত মুখ করে প্রশ্ন করল কেন?

আমি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললাম,

আমি আরো কিছুক্ষণ থাকবো।

বলে তার কানের কাছ থেকে মুখটা সরিয়ে এনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মাথা হ্যা বোধক নাড়ালাম। মুখটা কুচকে অনুরোধ করে বললাম প্লিজ।

সাফওয়ান আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হেসে দিয়ে বলল,

— আচ্ছা ঠিক আছে।

ইশ্ আবার সেই হৃদয় বিগলিত হাসি। এই হাসিরই তো পাগল হয়েছিলাম আমি। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মাথায় একটা প্রশ্ন চলে আসলো। তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাকে প্রশ্ন করলাম,

— আচ্ছা সাফওয়ান আমি এখানে আসলাম
কিভাবে?

কিছুক্ষণ ভাবুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল ,

— এভাবে।

মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে শূন্যে অনুভব করলাম। হঠাৎ এমন হওয়ায় ভয়ে তার ঘাড়ের কাছে কোটটা খামচে ধরলাম।

— এই নামাও নামাও পড়ে যাব আমি।

আমাকে কোলে করে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

— এত বড় সাহস তোমার আমার কোল থেকে পড়ে যাবে তুমি। পড়লে আগে আমি ফেলব তোমাকে তার পরে তুমি পড়বে । নিজে থেকে পড়লে তোমার খবর আছে।

আমি বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এই ছেলে বলে কি মাথা টাথা গেছে নাকি?

আমাকে কোলে করে নিয়ে সি বিচ এর ছাতাওয়ালা লম্বা চেয়ার টিতে গিয়ে বসলো। নিজে হেলান দিয়ে বসলো আর আমাকে টেনে তার বুকে আধার শোয়া করে বসিয়ে দিল।

দুজনেই সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ আমি তাকে প্রশ্ন করলাম,

— বললেনাতো এখানে কিভাবে আসলাম? আর এক রাতের মধ্যে তোমার আচরণ এত পরিবর্তন হলো কিভাবে? কি হয়েছিল কাল রাতে?

আমাকে তার বুকের সাথে আমার একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

— অনেক কিছু হয়েছে গতকাল রাতে। বাবার হাতে থাপ্পড় খেয়েছি, তোমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছি তারপরে কোলে করে নিয়ে এই কটেজ এসে উঠেছি।

আমি তাকে ঝাড়া দিয়ে উঠে বসে এক প্রকার চিৎকার করে বললাম,

— কিহ…!!

তোমাকে বাবা মেরেছে। তুমি আমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো?

সাফওয়ান আমার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে সোজা হয়ে ওঠে বসে নিজের পরনের কোটটা ঠিক করে বলল,

— তো কি হয়েছে? পরের মেয়ে নিয়ে তো আর পালাইনি নিজের বউ নিয়ে পালিয়েছি।

আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম,

— কি সর্বনাশ তুমি সবাইকে না বলে আমাকে নিয়ে চলে এসেছ ওদিকে তো তাহলে সবাই আমাদেরকে খুঁজছে। ফোন করে জানিয়েছ ওদেরকে?

সাফওয়ান দায় সারাভাবে উত্তর দিল,

— তাদেরকে জানানোর প্রশ্নই আসে না। আর খুঁজুক যত পারে খুঁজুক। কি সর্বনাশী কথা আমার বউকে আমার সামনেই আবার বিয়ে দেবে। দেওয়াচ্ছি বিয়ে।

এখানে আগে আমরা দুজন আবার বিয়ে করবো। হানিমুন করবো। একটা দুটো বাচ্চা কাচ্চা হলে তারপরে সেগুলো কোলে করে নিয়ে বাড়ি যাবো। তখন এই সেকেন্ড হ্যান্ডকে আর কেউ বিয়ে করতে চাইবে না।

কথাটা শেষ করে আমাকে একটা চোখ মারলো সাফওয়ান। ওর কথার মুখের ভঙ্গিমা দেখে আমার বিষম লেগে গেল। এই সাফওয়ান কী সেই সাফওয়ান। আমি কিছুটা তার দিকে এগিয়ে গিয়ে ভালো করে দেখে বললাম,

— এতক্ষণ আমার ডাউট হচ্ছিল কিন্তু এবার আমি একদম শিওর যে তুমি মানুষ নও সাফওয়ানের ভূত হবে অথবা আমি কল্পনা করতেছি ।

কথা শেষ হওয়ার আগেই কোমর পর্যন্ত চুলে বেশ জোরেশোরে টান পরলো আমার। ব্যথায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠলাম। মাথা ডোলে চোখ গরম করে সাফওয়ানের দিকে তাকালাম।

সাফওয়ান গাল বেঁকিয়ে হেসে বললেন,

— কি এবার স্বপ্ন মনে হচ্ছে।

দাঁত কটমট করে বললাম,

— না। এত জোরে কেউ চুল ধরে টানে।

হেলান দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে আমার উদ্দেশ্যে বলল,

— তোমার তো সব চুল টেনে ছিড়ে ফেলে দেওয়া উচিত ফাজিল মেয়ে। সবাইকে দেখায় বেড়াও না দেখো আমার কোমর পর্যন্ত চুল সবাই আমাকে দেখে ফিদা হয়ে যাও ।

আর ওই সায়েম আরেক ফাজিল ব্যাটা । ওর সাথে অত হা হা হি হি করার কি আছে? ইচ্ছা তো করতো ওটার ঘুষি মেরে দাঁত ফেলে দেই আর তোমার মুখে কসটেপ মেরে রেখে দি।

আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম,

— আমি কখন হাহা হিহি করলাম। স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেছি ভাইয়ার সাথে। তাছাড়া ওনাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম। ডাক্তার ভাইয়া বলে ডাকি আমি ওনাকে।

উহ ভাইয়া। ডাক্তার ভাইয়া। তোমার মায়ের পেটের ভাই না। যে অত খাতিরদারি করা লাগবে। সেদিন দেখলাম তো একেবারে মাথার কাপড় ফেলিয়ে দিয়ে চায়ের কাপ নিয়ে তার হাতে গিয়ে দিলে।

আরে ওটা তো আমি ইচ্ছা করে দেইনি। ভাইয়া ডেকেই আমার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে নিয়েছিল কিন্তু আমি কি কর…

মাথার মধ্যে হঠাৎ একটা শয়তানের বুদ্ধি খেলে গেল। চুলগুলো কানের পিছনে গুজে তার দিকে আরো কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বললাম

— জেলাসি…! জ্বলে তাই না। আপনি তো আবার আমাকে পছন্দই করেন না তাহলে এত জ্বলতেছে কেন আপনার?

ভুরু কুঁচকে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাতের কনুই ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,

আমার পেছনে লাগা হচ্ছে, তাই না। আমি একবার তোমার পেছনে লেগে গেলে না জীবন কয়লা বানিয়ে দেবো কিন্তু। লাগবো নাকি?

আমি তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,

— আরে না না ছেড়ে দিন। বাবা আগে আনরোমান্টিক ছিল ওটাই ঢের ভালো ছিল। এখন রোমান্টিক হোল কিউব হয়ে গেছে। জীবনটা আগে তো তেজপাতা ছিল এখন আরো বেশি তেজপাতা হয়ে যাবে।

আচ্ছা আপনি বলুন না গতকালকে কি হয়েছিল।

নিজে সেই লম্বা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আমার বাম হাতটা টেনে নিয়ে তার বুকের বা পাশে রেখে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। কিছুক্ষণ পর নিজে থেকেই বলতে শুরু করল,

— আমি প্রথমে সত্যিই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যেন। তুমি আসলেই কালকে উন্মাদের মত আচরণ করেছ। তারপর যখন সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে। তখন তো আমার ভয়ে হাত পায়ে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। আমার পৃথিবী যেন থমকে গিয়েছিল।

তখন কি করব ভেবে না পেয়ে তোমাকে তাড়াতাড়ি কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়েছিলাম দরজা খুলে আম্মু আব্বুকে জোরে জোরে চিৎকার করে ডেকে যাচ্ছিলাম।

কিছুক্ষণ পর তারাও ঘরে এসে উপস্থিত হল বিছানায় তোমাকে ওইভাবে শোয়া দেখে আম্মু আর ভাবি দৌড়ে চলে গিয়েছিল তোমার কাছে।

ভাবি যখন বলল সেন্সলেস হয়ে গেছ তুমি।

বাবা তৎক্ষণাৎ থাপ্পড় মেরে দিলেন আমার বা-গালে। ছিটকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলাম আমি। আব্বু বলতে শুরু করলেন,

— কুলাঙ্গার জন্ম দিয়েছি আমি। না হলে এমন হবে কেন সে। কি করেছিস তুই মেয়েটার সাথে। এমনিতেই তো তোকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে মেয়েটা আধমরা। সরিয়েই তো দিচ্ছি তোর জীবন থেকে। আর কি চাচ্ছিস তুই। পরের মেয়েকে মেরে ফেলবো আমি।

আম্মু এসে ওকে আটকে দিলেন। ভাব নিও জোরে চিৎকার করে বলল,

— তেমন কিছু হয়নি আব্বু। মনে হয় অনেক স্ট্রেসের মধ্যে ছিল তাই এখন সেন্সলেস হয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া হয়তো ঠিকমতো করেনি। তার থেকেই এমন হয়েছে।

বাবা ভাবীর উদ্দেশ্যে বললেন,

— দ্রুত জ্ঞান ফেরাও। ওকে আমি রাত্রি বেলায় ফ্ল্যাটে রেখে আসবো। এই ছেলের আশেপাশে আর এই মেয়েকে রাখবো না। মেয়ের উপরে তোর ছায়াও যাতে না পড়ে সেই ব্যবস্থা করছি আমি।

বলে আব্বু রুম থেকে চলে গেলেন। আম্মু আর ভাবি আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভাইয়া আর সায়েম বেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। ভাবির কথা মত আম্মু তোমার জন্য স্যুপ বানাতে গিয়েছিল। সেই ফাঁকে আমি গিয়ে তোমার মাথার কাছে বসলাম। ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— তুই কিন্তু ভুল করছিস সাফোয়ান। মেয়েটা কিন্তু অনেক ভালো। তুই এভাবে ওকে ইগনোর করতে পারিস না। দেখ অতীতে যা হয়েছে হয়েছে সবকিছু ভুলে এবার তো নিজের জীবনে এগিয়ে যায়।

আমি ভাবির দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নজর সরিয়ে তোমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেছিলাম,

— অনেক আগেই এগিয়ে এসেছি আমি ভাবি। আর এতটা এগিয়েছি যে এই মেয়েটার থেকে দূরে যাও আমার পক্ষে সম্ভব না। কোন ভাবেই সম্ভব না।আমি শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ও যে বড্ড ছেলেমানুষই করে।

ভাবি আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

— সঠিক সময় মানে!

সেটা তোমাকে এখন আমি বলবো না। তুমি শুধু আমার একটা হেল্প কর।

— কি হেল্প?

— ওর যদি জ্ঞানও ফেরে খাইয়ে দাইয়ে আবার ঘুম পাড়ানোর ব্যবস্থা করে দাও।

— মানেই….!

— উফ এতটা হাইপার হওয়ার কিছু নেই। আমি ওকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালাবো। জ্ঞান থাকা অবস্থায় সেটা সম্ভব না। আর বাইরে একটা গাড়ির অ্যারেঞ্জ করে দাও। কোথায় যাব জিজ্ঞাসা করো না ওটা আমি তোমাকে বলতে পারব না।

— তুই পাগল হয়ে গেছিস এই অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবি তুই?

— বললাম না আমার বউকে সুস্থ করার দায়িত্ব তোমার সুস্থ করে দাও আর একটা গাড়ির অ্যারেঞ্জ করে দাও আর কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না তোমার আমার বউ আমি দেখে নেব।

— নিজে তো মরবি সাথে আমাকেও মারবি না।

— প্রবলেম নাই কেউ জানতে পারবে না তুমি আমাকে হেল্প করেছ। করবে কিনা বল।না হলে তোমার জামাইয়ের কিন্তু খবর খারাপ করে দেবো।

— থাক। তোমাকে আর কিচ্ছু করা লাগবে না। যা ভালো বোঝো তাই কর। যা যা করতে বলছো করবো কিন্তু কেউ যেন জানতে না পারে।

— নিশ্চিন্তে থাকো।

তারপরে আর কি তোমার মাঝখানে একটু জ্ঞান ফিরেছিল। মা যত্ন সহকারে নিজের হাতে করে তোমাকে চিকেন সুপ খাইয়ে দিয়েছিল। তারপরে শরীর দুর্বল থাকার কারণে তুমি আবারও শুয়ে পড়েছিলে। আমার কথা মত ভাবি তোমাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল।

তারপরে আর কি ফজরের আযানের পরে তোমাকে কোলে করে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম বাড়ি থেকে। এত কষ্ট করে ব্যাগ গোছালে তুমি। হানিমুনে যাবো না তা কি করে হয় সোনা ।

তাইতো তোমাকে কোলে করে নিয়ে সোজা কুয়াকাটা চলে এসেছি তুমিই তো বলেছিলে সমুদ্র তোমার খুব পছন্দের। তাই হানিমুন করার জন্য সমুদ্রের পাড়টাকেই বেছে নিলাম।

তাই ড্রাইভারকেউ টাকা খাইয়া মুখ বন্ধ করে রেখে এসেছি।

আপাতত ওই বাড়িতে ভাবি বাদে সবাই তোমাকে খুঁজছে। আর ভাবি, একটু একটু নাটক করছে।

আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। কি করেছেন আপনি এগুলো। ওই বাড়ির সবাই হয়তো টেনশনে টেনশনে অজ্ঞান হয়ে গেছে।আর এতক্ষণে তো আমার মা বাবার কানে ওই কথা চলে গেছে। না জানি কি করতেছে সবাই ঐদিকে সবাই। আর আপনি এখানে সটান হয়ে শুয়ে চিল করতেছেন।

সাফওয়ান বিরক্তিতে চ এর মত উচ্চারণ করে বলল,

— আরে ধুর। তোমার কি মনে হয় ভাবির যা পেট পাতলা তা এতক্ষণ না বলে বসে আছে সে। এতক্ষণে ওই বাড়ির সবাই জেনে গেছে তুমি আর আমি হানিমুনে এসেছি । আর বাচ্চাকাচ্চা নিয়েই ফিরবো।

আমি তার ডান বাহুতে চাপড় মেরে বললাম,

— ধ্যাত! বেশররম ব্যাটা।খালি আবোল তাবোল কথা বলে।

বলে আমি সী-বিচের দিকে তাকালাম। কিন্তু সী-বিচ এত সুনসান কেন? এত নিরব তো সমুদ্র সৈকত হয় না।

সাফওয়ানের বহু ঝাঁকিয়ে বললাম,

— সমুদ্র সৈকত তো এত নীরব হয় না। আজ এমন লাগছে কেন?

— তোমার দ্বিতীয় বিয়ে উপলক্ষে আমার সাথে সমুদ্র সৈকত ও নিরবতা পালন করছে।

— আরে ফাজলামি বন্ধ করে বলো না কি হয়েছে এখানে?

সাফওয়ান চেয়ারে বসে নিচু হয়ে নিজের শুয়ে ফিতে বাধতে বাডধতে বললো,

— একজন সাব জজ তার প্রিয়তমাকে নিয়ে এখানে সমুদ্র বিলাস করতে এসেছে ।তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুমতি নেওয়া আছে।

আমি চারিদিকে নজর বুলিয়ে কোথাও কাউকে দেখতে না পেয়ে বললাম,

— কোথায় তারা। দেখতে পাচ্ছি না তো তাদের।

সাফওয়ান তার জুতো বাধা শেষ করে আমার সামনে এসে নিজের কোট ঠিক করে বলল,

— সেই সাব জজ তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আর তার প্রিয়তমা আমার সামনে বসে আছে।

কথাটা কানে পৌঁছাতেই যেন স্থম্ভিত হয়ে গেলাম আমি। কথা বলতে ভুলে গেছি যেন। অবাক হয়ে তার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।

জড়ানো কন্ঠে মুখ বলে উঠলাম,

ত্ তার ম্ মানে…..

স্বপন আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— জ্বী আগ্গে। আপনি যেদিন আমার ওপরে রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন সেদিন দুপুরেই নিউজটা পেয়েছিলাম দশদিন পরে জয়নিং এর ডেট। তাই আপনার জন্মদিনটাকে স্পেশাল করার জন্য ই এতকিছু মুখ বুজে সহ্য করে গেছি।

কিন্তু তুমি তো তুমিই না বুঝে না শুনে। ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছো। পুরো পরিবারের গালাগালি শুনিয়েছো। নিজে অজ্ঞান হয়েছে সাথে আমাকেও থাপ্পড় খাইয়েছো। সিরিয়াসলি ডেঞ্জারেস মেয়ে তুমি।

আমি না থাকলে তোমার এগুলো যে কে সহ্য করত একমাত্র উপরওয়ালাই জানে।

আমি বসে বসে কলের পুতুলের মত তার কথাগুলো শুনছি। ও আমার জন্মদিনটাকে স্পেশাল করার জন্য এত কিছু সহ্য করার পরেও ধৈর্য ধরে এই দিনটার জন্য ওয়েট করেছিল। আর আমি কিনা কথাগুলো ভাবতেই চোখের কান্না আসবে এক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল।

হঠাৎ কোন কিছু না বলেই আবার আমাকে কোলে তুলে নিল। আচমকা এমন হওয়ায় আমিও কিছুটা ভরকে গেলাম।

কী হলো আবার কোলে নিচ্ছ কেন আমায়?

— এইটুকু সারপ্রাইজে কাবু হলে চলবে ম্যাডাম। তোমার জন্য আর সারপ্রাইজ অপেক্ষা করে বসে আছে।

নাকে না ঘসে দিয়ে বলল,

— এবার চলুন ম্যাডাম আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

সে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে অজানায় হারিয়ে যাচ্ছে, আমি তার গলা জড়িয়ে ধরে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছে দেখলাম সমুদ্রের বিশালতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

#চলবে…..❣️