প্রীতিলতা পর্ব-২৮

0
453

#প্রীতিলতা❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#২৮_তম_পর্ব🍂

বিছানা জুড়ে বিয়ের গর্জিয়াস লাল লেহেঙ্গা , গহনা সহ বিয়েতে সাজার জন্য মেয়েদের যাবতীয় শ্বাস সরঞ্জাম রাখা রয়েছে।

সকালে হাতমুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম সাফওয়ান রুমে নেই কিছুক্ষণ পর মিতা এসে বিছানার পরে এক এক করে বিয়ের শ্বাস সরঞ্জাম সাজিয়ে রাখলো। বলতে গেলে একেবারে এলাহি কাণ্ড।

আমি অবাক হয়ে মিতাকে প্রশ্ন করলাম,

ওগুলো কি মিতা?

আপনার বিয়ের পোশাক আপু। আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন স্যার গিয়ে এই সমস্ত শাড়ি গহনা আপনার জন্য কিনে এনেছেন। এখন তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করে গোসল করে নিন। কিছুক্ষণের মধ্যে পার্লারের মেয়েরা চলে আসবে আপনাকে সাজানোর জন্য।

আমি বিছানার কোনায় বসে বিছানার উপরে রাখা জিনিসপত্রের দিকে তাকিয়ে ব্রেকফাস্ট এর প্লেটটা নিজের হাতে তুলে নিলাম। কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না। একদৃষ্টিতে ওই জিনিসগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি আমি।

আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমি বিয়েতে লাল লেহেঙ্গা পড়বো, ভারী সাজগোজ। কিন্তু আমার আশা পূরণ হয়নি । বিয়েটা খুব তাড়াহুড়ো আর ঘরোয়া ভাবে হয়েছিল বলে বেনারসি আর কিছু হালকা গহনা পড়েছিলাম আমি বিয়েতে।

কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আমার সেই ইচ্ছাটা পূরণ হবে। ভাবতেই চোখের কোনায় সুখের অশ্রু জমা হল। কোনরকমে নাস্তাটা করে চলে গেলাম সোজা গোসল করার জন্য।

_____🌺🌺______

প্রায় ২০ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হলাম আমি। বের হয়ে দেখলাম পার্লারের দুটো মেয়ে বসে আছে সোফা সেটের উপরে। আমাকে দেখে সালাম দিয়ে হ্যাঙ্গারে ঝুলানো লেহেঙ্গা সেট টা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে চেঞ্জিং রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আসতে বলল।

কিছুক্ষণ পর পুরো কমপ্লিট লাল কম্বিনেশন এর লেহেঙ্গা টা পড়ে চেঞ্জিং রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি। চুলগুলো পেছনে ছেড়ে দেওয়া , মুখে কোন মেকাপ নেই। ওড়নাটা বুকের উপরে দিয়ে রেখেছি আমি।

মেয়ে দুটো আমার কাছে এসে আউটফিটটা আরেকটু ঠিকঠাক করে দিয়ে বলল,

— স্যার বলেছে খুব হালকা মেকআপ করাতে। তার ওয়াইফ এমনিতেই খুব সুন্দর দেখতে। এখন তো দেখছি মেকআপেরও কোন প্রয়োজন পড়বে না। এভাবেই স্যারের সামনে নিয়ে গেলে স্যার মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।

আমি মাথা নিচু করে নিঃশব্দে হাসলাম। মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে আমাকে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলে বসিয়ে দিল। দ্রুত হাতে হেয়ার ড্রায়ার বের করে চুলগুলো প্রথম শুকিয়ে নিল। তারপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল তাদের স্যারের নির্দেশনা পালন করতে।

প্রায় এক ঘন্টা পরে আমার সাজগোজ সম্পন্ন হল। মেয়ে দুটো এখন লেহেঙ্গার বড় ওড়নাটা মাথায় তুলে সেট করে দিচ্ছে। আয়নার দিকে তাকিয়ে আজ নিজেকে চিনতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বেশ সাদাসিধে নরমাল পোশাক পড়তে পছন্দ করি আমি। কিন্তু বিয়ের সাজ প্রতিটা মেয়েরই স্বপ্ন থাকে। সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন আজ নিজের মধ্যে দেখে সত্যি চঞ্চল হয়ে উঠেছে আমার দুটো চোখ। নিজেকে খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। মনে হচ্ছে আমি যেন স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু না অতীতের স্বপ্নটা আজ বাস্তবায়ন হয়েছে।

______🌺🌺______

বাইরে বের হতেই একটি কালো গাড়ি কটেজের বাইরে পার্ক করা দেখলাম। ড্রাইভার বাইরে বেরিয়ে এসে বলল,

— চলুন ম্যাম আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।

আমি আশে পাশে তাকিয়ে সাফওয়ান কে খুঁজলাম কিন্তু তাকে পেলাম না। ড্রাইভার তা দেখে বলল,

স্যার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। শষ তার পর্যন্ত আমি আপনাকে পৌঁছে দেব। প্লিজ গাড়িতে উঠুন।

আমি মিতাকে আমার সঙ্গে যেতে বললাম। কিন্তু না ও আমাকে জড়িয়ে ধরে নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানালো। তারপর বলল,

— আপনারা আর আবার আসবেন আমাদের এখানে। খুব শীঘ্রই আমাদের হয়তো দেখা হবে।

আমি মুচকি হেসে আরো একবার তাকে জড়িয়ে ধরে। গাড়িতে উঠে বসলাম হাত বাড়িয়ে মিতাকে বিদায় জানালাম। তারপর গাড়িটা স্টার্ট দিল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মিতা চোখের আড়াল হয়ে গেল। দ্রুত গতিতে ছুটছে গাড়িটি। তার সাথে তাল মিলিয়ে ছুটছে আজ আমার হৃদপিন্ড । ইস এতটা নার্ভাস কেন লাগছে আমার।

বেশ কিছুক্ষণ পর গাড়িটা একটা বড় মাঠের সামনে এসে থামল। আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম খোলা মাঠ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। এবার কেন জানি আমার ভয় হতে শুরু করল। আমি এবং ড্রাইভার ছাড়া তো আর কেউ নেই এখানে। আমি বেশ গুটিশুটি মেরে বসলাম। তা দেখে ড্রাইভার বলল,

— ভয় পাবেন না ম্যাম। আমার যে নির্দেশনা দেওয়া ছিল আমি সেই নির্দেশনায় পালন করছি। এই পর্যন্তই আমি আপনার যাত্রা সঙ্গী ছিলাম। এবার অন্যভাবে আপনাকে যেতে হবে।

ভয় রীতিমতো আমার গলা কাঁপতে শুরু করল । কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম

— অ্ অন্যভাবে মানে…! ক্ কিভাবে যাব আমি? কোথায় যাব এখানকার রাস্তাঘাট তো কিছু চিনি না আমি।

ড্রাইভার আমাকে অভয় দিয়ে বললো আপনাকে কিছু ভাবতে হবে না ম্যাম আপনি মাঠে গিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন স্যার আসছে।

তার পরেও আমার ভয় একটুও কমেনি।মনে মনে ভাবলাম বদ্ধ গাড়ির মধ্যে বসে থাকার চেয়ে খোলা মাঠে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভালো। কোন অসুবিধা হলে দৌড়ে পালানো যাবে।

চুপিচাপে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম দুহাতে লেহেঙ্গার ঘেরটা উঁচু করে মাঠের এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আকাশটা হালকা মেঘাচ্ছন্ন সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বড্ড কাছে টানে আমার আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চারিপাশা আবারো নজর গোলাম না সাফওয়ানের কোন দেখা নেই।

হঠাৎ কিছুক্ষণ পর কেমন যেন হেলিকপ্টারের শব্দ কানে আসতে লাগলো খুব ক্ষীণ ভাবে। তাকিয়ে দেখলাম দূর আকাশে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। কিছু মুহূর্তের মধ্যেই ভালোভাবে দেখতে পারলাম সত্যি একটা হেলিকপ্টার।

ধীরে ধীরে শব্দ প্রগাঢ় হতে লাগলো তারপর এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে আকাশ থেকে নেমে আসতে লাগলো হেলিকপ্টারটি আমার সামনের মাঠে। মাঠের চারপাশের গাছপালায় যেন ঝড়ের তান্ডব হতে লাগলো।হেলিকপ্টার ের পাখার দাপটে আমার ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল এত পরিমানের বাতাস হচ্ছিল যেন।

তার কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে হেলিকপ্টারের পাখা বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো এবং চারিদিকের কৃত্রিম প্রলয় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে লাগলো তার কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানি পড়া সাফওয়ান। চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস চুলগুলো উঁচু করে সেট করে রাখা। পায়ে নাগরায় জুতা।

বেশ দ্রুত পায়ে এসে আমার সামনে থামলেন। সানগ্লাসটা খুলে শেরওয়ানির পকেটে ঝুলিয়ে রেখে আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে গাল বাকি হেসে বলল

— নট ব্যাড। ভালই লাগছে তোমাকে।

আমার ভারী রাগ হল। নাকের পাটা টা ফুলে উঠল রাগে। এতক্ষণ ধরে সেজেগুজে এসেছি যার জন্য তার মুখে শুধু এটুকুই প্রশংসা নট ব্যাড আর ভালই লাগছে। মুখ ভেঞ্চি দিয়ে বললাম,

— ইউ লুকিং সো জঘন্য।

সাফওয়ান চমকে উঠে বলল,

— কিহ…!

আমি দুটো হাত ভাঁজ করে তার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,

— আমি এতক্ষণ সেজেগুজে এসে যদি শুধু নট ব্যাড আর ভালই লাগছে এমন কমপ্লিমেন্ট শুনি তাহলে তুমি তো কিছুই সাজগোজ করোনি, সেহেতু তোমাকে একদম জঘন্য লাগছে।

সাফওয়ান ভাবুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে শাহাদাত আঙ্গুল নাড়িয়ে বলল ,

— ইয়াহ লজিক আছে। তুমি এক কাজ কর ওকালতির কোর্সটা কমপ্লিট কর। তোমার ক্যারিয়ার একদম চকচক করছে।

আমি গাল ফুলিয়ে মাঠের অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।

সাফওয়ান হঠাৎ আমার ডান গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। তারপর মুখটা কিছুটা ডানের সরিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

— ইউ আর লুকিং ড্যাম গর্জিয়াস বিউটি কুইন। ইচ্ছা তো করছে এখনই কোলে করে নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকে যাই। যাবে নাকি।

আমার থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলেন।

আমার এবার আরো বেশি রাগ হল। কোথায় সাহিত্যিকদের মতো একটু বউয়ের প্রশংসা করবে। তা না। উনি আছে ওনার ধান্দা নিয়ে। ধুর ভালো লাগেনা।

আমি লেহেঙ্গার ঘের অল্প উঁচু করে ধরে উল্টোপথে হাঁটা শুরু করলাম। তা দেখে সাফওয়ান আমার পেছন পেছনে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

— কি হলো তুমি উল্টো যাচ্ছ কেন?

— আমি যাব না তোমার সাথে আর বিয়েও করবো না তোমাকে। সারা জীবনে কুয়াকাটাই থেকে যাব আমি। এমন কচুর বর আমার দরকার নেই।

সাফওয়ান আমার দিকে আরো কিছুটা এগিয়ে এসে বলল কি বললে তুমি? আমি তোমার কচুর বর। তুমি কি জানো এই গল্পের পাঠিকারা আমার উপরে ফিদা হয়ে বসে আছে। আর তুমি কিনা আমাকে কচুর বর বললে।

আমি মেকি হাসি দিয়ে বললাম,

— তা জান না আপনার পাঠিকাদের কাছে। আমার কাছে এসেছেন কেন? তারাও একটু বুঝুক আপনি কি চিজ। জীবনটাই আমার তেজপাতা বানিয়ে ছেড়েছেন আপনি।

স্বপন এবার কোমরে দুই হাত বাঁধিয়ে আমার সামনে তাকিয়ে বলল,

— তাহলে সত্যিই তুমি যাবা না?

— না।

— সত্যি..!

—সত্যি।

— তিন সত্যি।

আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম,

— ১০০ সত্যি।

সাফওয়ান শেরওয়ানির পকেট থেকে নিজের সানগ্লাস টা বের করে চোখে পড়ে নিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল

— ওকে থাকো তাহলে আমি গেলাম।

আমার এবার মনের মধ্যে ভয় কাজ করা শুরু করলো,

— এ ব্যাটা সত্যি সত্যি আমাকে ফেলে রেখে চলে যাবে না তো।

সাফওয়ান ঘুরে আমার পেছনে দিকে গিয়ে হঠাৎ কোলে তুলে নিলেন।

আমি মনে মনে বললাম,

— উফ আলহামদুলিল্লাহ। যাক এই ব্যাটা আমাকে নিয়েই যাবে তাহলে।

উপরে উপরে বললাম,

— কি হলো কথায় কথায় খালি কোলে নিচ্ছেন কেন? নামান আমাকে। আমি হেঁটে যেতেই পারবো।

সাফওয়ান উত্তর দিল,

— মাঠ পেরিয়ে ওই যে দূরে দেখছ গাছ পালায় ভরা জায়গা ওটা কিন্তু আসলে একটা জঙ্গল। রাতের বেলায় বাঘ মামারা তাদের পিকনিকের মাংস খুঁজতে এখানে আসে। তুমি তো হেঁটে যেতে চাইছিলে ওইখানে আমি না হয় তোমাকে কোলে করে পৌছে দিলাম।

ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। আমি চেয়েছি কিনা ওই জঙ্গলের মধ্যেই যেতে চাইছিলাম। সাফওয়ান হাঁটা শুরু করলে আমার হুশ ফিরল। তাকিয়ে দেখলাম সে সত্যি আমাকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে।

আমি তার কোলের মধ্যে লাফালাফি শুরু করে বললাম,

— এ্যাই না না আমি বাড়ি যাব। আমাকে দয়া করে বাড়িতে নিয়ে চলুন।আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকবো না। কী এমন বয়স আমার এখনই বাঘের পেটে যেতে চাই না আমি।

স্বপন আমার মুখের দিকে কিছুটা ঝুঁকে এসে সন্দিহান কন্ঠে বললেন,

— সিওর তো..!

— ওয়ান থাউজেন্ড পার্সেন্ট।

সাফওয়ান এবার উল্টো ঘুরে হেলিকপ্টারের দিকে যেতে লাগলেন ‌। আমি ঘর ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকিয়ে জঙ্গলটা আরেকবার দেখে নিলাম না বাবা সব জায়গায় জেদ করতে নেই।

সাফওয়ান উত্তর দিলেন একদম ঠিক বলেছ সব জায়গায় জেদ করতে নেই। তার ফল ভালো হয় না বাবু।

আমি তো মুখ ফুটে কিছু বলিনি। তাহলে কিভাবে জানলেন?

সাফওয়ানগাল বাকি হেসে বলল,

— তোমার মন এত জোরে জোরে কথা বললে না শুনে কোথায় যাব আমি তো আর বহেড়া নই।

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,

— হুহ ঢং।

সাফওয়ান হেলিকপ্টারের সিটে আমাকে বসিয়ে দিলেন। পাশে নিজেও বসলেন। প্রথমে আমার সিটবেল্ট এবং পরের নিজের সিট বেল্ট বেঁধে দিয়ে হেলিকপ্টার স্টার্ট দিতে বললেন।

প্রথমবার এমন আকাশ ভ্রমণ মনের ভিতরে একটা আলাদা রোমাঞ্চকর মুহূর্তের সৃষ্টি করছে। আমি সিটে হেলান দিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। সাফওয়ান আমার পাশে বসে আছে ফোনে কি যেন দেখছেন।

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,

,— আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কোথায় কুমড়া পটাশ?

ফোনের দিকে নজর রেখে বললেন,

— গেলেই দেখতে পাবে। আপাতত কোন প্রশ্ন করো না।

তাই এটুকু তো বলুন হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা কেন করলেন।

সাফওয়ান ফোনটা পকেটে ভরে রেখে বললেন,

— গন্তব্য খুব নিকটে নয় তাই। তাছাড়া আমি একটা ঘোড়ার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম তোমার যা ওজন হয়েছে। তুমি ঘোড়ার পিঠে উঠলে সে তৎক্ষণাৎ পটল তুলতো। তাই তাড়াতাড়ি হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করেছি।

আমি তার শেরওয়ানি ধরে কিছুক্ষণ ঝাঁকাঝাকি করলাম। পরের দিন করে হাতের উপর একটা কিল বসিয়ে দিলাম।

সাফওয়ান নিজের বাহাত বলতে বলতে বলল,

— কেন এত লাফালাফি করে নিজের এনার্জি লস করছে? যানো মাটি থেকে আমরা কতটা উপরে আছি। আরে ক্যাপ্টেন ও কিন্তু বেজায় রাগী। রেগে গেলে তোমাকে আর আমাকে একসাথে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে। চুপচাপ হয়ে বসে থাকো।

আমিও আর তার সাথে কোন কথা না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। আকাশটা সত্যি আজ বড্ড সুন্দর।

______🌺🌺_______

প্রায় দুই ঘন্টা জার্নির পর সাফওয়ান এর গন্তব্যে এসে পৌছালাম। হেলিকপ্টার থেকে নেমে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম এটাও একটি মাঠ। সাফওয়ানো হেলিকপ্টার থেকে নেমে এসে আমার ডান হাতের কব্জি ধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো। চারিপাশ দেখে যায় বুঝলাম এটা একটা গ্রাম্য এলাকা। ইটের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গিয়ে সামনেই মেইন রোড।

সাফোয়ান হঠাৎ আমার পেছনে গিয়ে তার পকেট থেকে রুমাল বের করে আমার চোখ জোড়া বেঁধে দিলেন।

— কি করছেন? চোখ বেঁধে দিলেন কেন?

পেছনে দাঁড়িয়ে আমার দুই বাহু ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,

— এখন আর একটা কথাও বলবে না। যেখানে নিয়ে যাচ্ছি চুপচাপ সেখানে চল আমার সাথে। না হলে ফল কিন্তু ভালো হবে না।

সাফোয়ানের কন্ঠ টা কেমন যেন লাগছে আমার কাছে। কাঁপা কাঁপা গলায় আমি তাকে আবার প্রশ্ন করলাম,

— কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?

আবার ও সাফোয়ানের ফিসফিসানি কন্ঠ,

— হুসসস…! কিপ কোয়াইট। এন্ড কাম উইথ মি।

চলবে….🍁