#প্রেমজাল
পর্ব ১৫
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
-“একচুয়েলি কোথায় যাবো? না গিয়ে তোমার শাড়ি পরা দেখা ভালো হবে বয়ে খারাপ হবে না, তাই না? দেন লেটস স্টার্ট সুইটহার্ট । তো শাড়ি তুমি খুলবে নাকি আমি খুলবো মিসেস আয়ান চৌধুরী?”
আয়ানের কথা শুনে আমার চোখ কোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম। মুখে যা আসে তাই বলে ফেলে নাকি? এই লোকটার মুখে হয়তো কিছুই আটকায় না। সহজে তো কিছু বলে না, কিন্তু বাই এনি চান্স কিছু আমাকে বলে, তাহলে মুখ লাল নীল সবুজ করিয়ে দেয়। ভয়ংকরের থেকেও মহা ভয়ংকর!! সভ্য হতে পয়সা লাগে না, হুহ। কিন্তু এই কান্ডতে উনি সবর্দা অকৃতকার্য থাকবে।
মুখে শুধু বিড়বিড় করে বললাম,
-“অসভ্য লোক”
উনি শুনতে পেলো কিনা কে জানে? উনি বাকা হাসি দিয়ে বললো,
-“উন্মুক্ত পেট-কোমর দেখিয়ে শাড়ি সামলানো অনেক সভ্যের কাজের মধ্যে পরে তাই না? আর আমি কিছু বললেই অসভ্য হয়ে যাই?”
আমি উনার কথার মানে সাথে সাথে না বুঝতে পারলেও পরক্ষণেই বুঝলাম। অনেকটা অস্বস্তিতে পরে গেলাম। তখন আলো কম থাকলেও এখন অনেকটা তীব্র আলোক রশ্মি। আমি ইস্তদন্তে সাথে সাথে কাধ থেকে শাড়ির আঁচল নামিয়ে নিলাম। পোকার ভয়ে এতোক্ষণ টেরই পাই নি।
আমি উনার দিকে তীক্ষ্ণ চাহনিতে দাতে দাত চেপে বললাম,
-“আপনি যে একটা অতি অশ্লীল ধরনের লোক তা কি আপনি জানেন?”
আয়ান আমার দিকে চোখ সরু করে ঝুকে তাকাতেই আমি আবার বললাম,
-“শুধু অশ্লীল নন। একেবারে অশ্লীল পাওয়ার টু ইনফিনিটি”
মুখে চরম লেভেলের সাহস নিয়ে বললেও মনে মনে ২/৩ টা থাপ্পড় খাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু উনি এমন কিছুই না করে শুধু এক দফা হেসে বেরিয়ে গেলো।আমি কিছুটা হতবাক হলাম। তবুও আমিও আর কোথা বাড়ালাম না। কারণ কথাই কথা বাড়ায়। আর এমনে ভিজা শাড়ি থাকলে নির্ঘাত শরীর খারাপ হবে। আমি দরজাটা বিরিয়ে দিয়ে “মিশন কাপড় পরা” নামক ৩য় বিশ্বযুদ্ধ চালনা করতে লাগলাম।
——————
লো ভোল্টেজের বাতি জ্বলছে একটা বদ্ধ ঘরে। একে অপরকে আবছা আবছা আবশে দেখতে পারছে। একদিকে তিন জন ছেলেকে অজ্ঞান করে চেয়ারের সাথে দড়ি দিয়ে জোরালো ভাবে বেধে রাখা হয়েছে। অপর দিকে তাদের বিপরীতে চেয়ারে বসে আরাম করে টেবিলে এক পায়ের অপর আরেক পা রেখে রিভয়েলবার হাত নিয়ে বাকা হাসছেন একজন মুখোশধারী লোক। পাশে দাঁড়িয়ে আছে দু’তিনেক গার্ডস।
এদের মধ্যে একজন গার্ডস উচ্চাকাঙ্খায় নিয়ে বললো,
-“স্যার!! ফাইনালি আমরা মেইন কার্লপ্রিটের নাম জানতে পেরেছি। অল্রেডি এদের স্ট্যাটমেন্ট রেকর্ড করাও হয়েছে। আমরা আমাদের লক্ষ্যের খুব কাছে চলে এসেছি। নিশ্চিত আশার আলো দেখতে পারবো”
গার্ডস এর প্রতিত্তোরে চেয়ারে বসা লোকটি রিভয়েলবার ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,
-“খুব শীঘ্রই উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে লক্ষ্যে পৌছে যাবো। শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা” বলে চেয়ার থেকে উঠে বেরিয়ে নিতে গেলেই একজন গার্ডস হন্তদন্ত করে জিজ্ঞেস করলো,
-“স্যার! তাহলে এদের এখন কি করবো?”
লোকটি মুখ প্রসারিত করে বললো,
-“বেচারারা ২ দিন ধরে না খাওয়া, ভালো-মন্দ কিছু খেতে দিস। আজ আছে কাল তো আর নাও থাকতে পারে, তাই নয় কি?” বলে আর কাওকে কিছু না বলতে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
গার্ডরা একে অপরের দিকে কৌতুহল প্রবণ দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকালো। একজন কটাক্ষ করে বলেও ফেললো,
-“স্যার চাইছে টা কি? উনি মারতে বলে আবার উনিই চিকিৎসাও করায়। খাবার দিতে নিষেধ করে এখন আবার উনি নিজেই বলছে ভালো-মন্দ কিছু দিতে। ব্যপারটা হজম হলো না ওস্তাদ”
-“উনিই বা কি করবেন? আমাদের মাস্টার মাইন্ড বসের নির্দেশনায় উনি নিজেই চলে। অপর থেকে যা করতে বলবে তাই তো উনি করবেন তাই না? তুই নতুন বুঝবি না”
বাকিরা মাথা উপর-নিচ হেলিয়ে সম্মতি জানিয়ে যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
__________________
চাঁদ তুমি যেমন রাতকে ভালোবাসো❤️
আমিও তেমনি একজনকে ভালোবাসি💙
তোমার ভালোবাসা যেমন কেউ বোঝে না🤍
তেমনি আমার ভালোবাসাও সে বোঝে না🖤
ঘরের সামনের ছোট্ট বারান্দায় দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের উজ্জ্বল প্রতিমা দেখে স্বজরে কথা গুলো বলছিলো আয়ান। আমি মণিপুরী তাতের হালকা গোলাপি রঙের কাপড় পরে ঘর থেকে বের হয়ে কর্ণকুহর হতেই থেমে গেলাম । বুকের বাম পাশে চিন চিন করে খুব ব্যথা করছে । কারণটা আমার জানা নেই। হঠাৎ করে কেনো বুকের ভেতর চিপ খেয়ে যাচ্ছে? এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে আমার? ভালোবাসার পরিপ্রেক্ষিতে? আদৌ কি সে আমাকে ভালোবাসে? হাহ!! ভালোবাসা নই আমি শুধু মাত্র তার দায়িত্ববোধ। ৬ মাসের জোরপূর্বক দায়িত্ব। যা সম্পূর্ণ ক্ষণস্থায়ী। নির্ভর করছে এক টুকরো কাগজের অপর। আ অনেকের কাছে ঠুনকো জিনিস আবার অনেকের কাছে প্রাণভোমরা। দায়িত্ব ফুরিয়ে গেলেই তার আসল ভালোবাসা রিয়া আপুকে আপন করে নিবে। ভাবতে ভাবতেই অজান্তে আমার বেহায়া চোখ পানিতে ডুবো ডুবো অবস্থা। এখন চাইলে শান্তিতে কাদতে যে পারি না। মনের সব দুঃখ ঝেড়ে ফেলার বৃথা চেষ্টায় তপ্ত নিশ্বাস নিয়ে মুখে তাচ্ছিল্য হাসির সাপেক্ষে সযত্নে মুছে নিলাম চোখের পানি।
কাপড়ের পাতলা আচল দিয়ে মুছে সামনে তাকাতেই ভীমড়ি খেয়ে পরলাম। আয়ান আমার সামনে স্ট্যাচু অফ ল্যাবারেটির মতো দাঁড়িয়ে আছে। আচ্ছা উনি আমাকে চোখ মুছতে কি দেখে ফেললো? আমার চোখের পলক এদিক-অদিক চঞ্চল। উনি কিছু বলছে না সাথে সরেও যাচ্ছে না। আমি উনার দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকালাম। ব্রাউন মণিযুক্ত চোখে তার অদ্ভুত চাহনী। চোখে চোখ পরার পরও উনি চোখ ফিরালেন না। এর থেকে ভয়াত বিষয় হতেই পারে না। আমার মনটা কেমন জানি উশখুশ করতে লাগলো। আমার দিকে একনাগারে কেও এভাবে এতোক্ষণ তাকায়নি। এমনকি উনিও না। উনার কোনো ভাবান্তর না দেখে। আমিই উনার দিকে চোখ সরু করে তাকাতেই কয়েক সেকেন্ড পর হালকা কেশে অন্যদিকে চোখ সরালেন। আমি এখনো উনার হাব-ভাব বুঝে উঠতে পারছি না। আমি উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি আমার ডান কানে গোজা বেলী ফুলটা নিয়ে বাম কানে গুজে দিলেন। এই বেলী ফুলটা কিছুক্ষণ আগে আমি ঘরের জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বেলী গাছের ডাল থেকে টুপ করে ছিড়ে নিয়েছিলাম। যখন ফুলটা হাতে নিলো বুকটা ধক করে উঠেছিলো, হয়তো এই বুঝি নির্দয় পাষাণের মতো পিষে ফেলবে। কিন্তু উনি অন্য কানে পরম যত্নে গুজে দিয়েছে। এই যেনো আমার কাছে খুবই দুষ্কর বিষয়। আমার আঁচল টেনে ঘোমটা দিয়ে কপালের মাঝ বরাবর চুম্বনের শীতল স্পর্শ পেতেই আমার ভাবনার ছেদ ঘটলো। আমি উনার কান্ডে হতভম্ব। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে উনার তাকানো ছাড়া আর কোনো পন্থী দেখলাম না।
আয়ান মুখে আলতো হেসে চোখ টিপ দিয়ে বললো,
-“খুব ভয়ংকর পেত্নি বউ লাগছে”
“বউ” ডাক সম্নোধনটা বুকের মাঝে তোলপাড় করে দিলেও পেত্নি শব্দটা আমার মাথায় ঝেকে বসলো। খুবই বিরক্ত হলাম।
আমি নাক ফুলিয়ে মুখ ঝামটি দিয়ে বললাম,
-“আপনি আসলেই একটা অসহ্যকর পাবলিক” বলে উনার পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলেই উনি পিছন থেকে আমার ডান হাত খপ করে ধরে ফেললেন। আমি হাতের টানের বাধা পেয়ে পিছন না ফিরেই ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম। আয়ান আমার ডান হাত চেপেই সামনে এগোলেন। পিছন থেকে আমার বাম হাত উনার বাম হাতে আবদ্ধ করে নিলেন। পিছন থেকে ঝাপটে ধরতেই আমার ভ্রু স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকোচন হয়ে গেলো। আমি উনার বলিষ্ঠ বাহু দ্বয়ের মাঝে আবদ্ধ।
-“যদি সারা জীবন এই অসহ্যকর পাবলিককেই সহ্য করে নিতে হয় তখন?
#চলবে….