প্রেমনেশা পর্ব-৪০+৪১+৪২

0
8

#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
৪০.

ধ্রুব নিজের মায়ের সামনে এসে বসলো। ধ্রুবর মা ধ্রুবর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। ধ্রুব বলল,’ আম্মু আমি তোমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই।’
‘ কি কথা?’ তিনি উৎসুক চোখে ধ্রুবর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব আমতা আমতা করতে লাগল‌। কীভাবে মাকে চারুর কথা বলবে বুঝতে পারছে না। আর কাউকে নিয়েই ধ্রুব চিন্তিত না কিন্তু মাকে নিয়েই ভয়। মায়ের অসুস্থতার জন্য ধ্রুবর নিজের সাহস কমে গেছে। মাকে একবার মানিয়ে নিতে পারলে আর কোন প্যারা নেই।
‘ কি হলো বলো।’
মায়ের কথায় চমকে উঠল ধ্রুব। চোরা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’ আম্মু আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই কিন্তু আমি বলতে পারছি না।’
ধ্রুবর মা ধ্রুবর গালে হাত রেখে বলল,’ কি হয়েছে?’
ধ্রুব মায়ের দিকে ভালো করে চেয়ে দেখল তিনি খুবই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে সাথে কিছুটা স্তব্ধ হয়ে আছে এভাবে ধ্রুব কে কখনোই তিনি দেখেন নি এজন্য তাকে চিন্তিত লাগছে।
ধ্রুব জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। ছেলের সংকোচ দেখে তিনি ধ্রুব কে সহজ করে বলল,’ এতো ভয় পাচ্ছ কেন? বলো কি হয়েছে?’
ধ্রুব উঠে দাঁড়াল তারপর বলার জন্য মুখ খুলতে যাবে তখনি ধ্রুবর বাবা এসে রুমে ঢুকল। বাবা কে দেখেই ধ্রুব ছিটকে উঠল। বাবা কখনোই এই সম্পর্ক মেনে নিবে না ধ্রুব জানে তিনি যে পরিমাণ রাগী কিন্তু তাকে ভয় পায় না ধ্রুব। ধ্রুব কে দেখে ধ্রুবর বাবা বললেন,’ ধ্রুব তুমি এখানে কি করছো?’
ধ্রুব উত্তর দেওয়ার আগেই ধ্রুবর মা উত্তর দিলেন,’ আমাকে কি যেন জরুরি কথা বলতে এসেছে।’
ধ্রুবর বাবা ভ্রু কুঁচকে তাকালেন ছেলের দিকে। ধ্রুব বাবা কে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো বাবার সামনে মায়ের সাথে শান্তিতে কথা বলতে পারব না। এখনি আব্বুর আসতে হলো রুমে। ধ্রুব স্থির দাঁড়িয়ে আছে কিছুই বলছে না।
ধ্রুব মা জিজ্ঞেস করলেন,’ কি হলো ধ্রুব বলো কি বলতো এসেছো?’
ধ্রুব বলল,’ আম্মু আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব এখন যাই।’
ধ্রুবর বাবা ধ্রুব কে পিছু ডাকলেন কিছুটা গম্ভীর স্বরে,’ দাঁড়াও তোমার সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।’
ধ্রুব কপাল কুঁচকে বলল,’ মানে?’
‘ ওই মেইড এই বাসায় কি করছে? ওকে কোথা থেকে তুলে এনেছো আর কেন এনেছো?’ রাগী স্বরে বললেন তিনি।
ধ্রুব বলল,’ এখন আমি কি কাউকে বাসায় ও আনতে পারবে না?’
‘ কেন এনেছো, বাসায় কি কাজের বুয়া নেই? তোমাকে বাসার বুয়া আনতে হলো এই নিয়ে তোমার চাচি কত নারাজ হয়েছে জানো। এখনি এই মেয়ে বাসা থেকে বের করো‌।’ আদেশ সুরে বললেন তিনি‌।
রাগী চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে ধ্রুব।
রাগে ওর শরীর কাঁপছে কিন্তু ওর বাবার সেদিকে খেয়াল নেই সে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল চারু কে বাসা থেকে এখনি যেন বের করে দেওয়া হয়।
ধ্রুব কিছু বলতে গিয়েও কথা আটকে নিল মায়ের দিকে তাকিয়ে। রাগে গজগজ করে রুমে থেকে বেরিয়ে গেল।

চারু বসে আছে গেস্ট রুমে এই রুমে ওকে পাঠিয়েছে ধ্রুবর মা। চারু ভাবছে ধ্রুব এখনো ওদের বিয়েটা লুকিয়ে রেখেছে। আবার নিজের চাচাতো বোনের সাথে এনগেজমেন্ট করে ফেলেছে। এখন বাসায় এনে নিজের রুমে জায়গা না দিয়ে গেস্ট রুমে পাঠিয়ে দিল। ধ্রুব কি তাহলে সত্যি ওকে ঠকালো। মাথায় চিনচিনে ব্যথা করছে কি হচ্ছে ওর সাথে সব কিছুই ওর মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে। ধ্রুব কে কল দিয়ে তো পাওয়া গেল না ও আশা ছেড়ে দিয়েছিল কিন্তু বিয়ের আগেই ধ্রুব কীভাবে যেন গিয়ে উপস্থিত হয়। পুলিশ সমেত তারপর কত সব কাহিনী সবার সামনে চিৎকার করে বলে,’ আমার ওয়াইফ কে আটকে আরেকজনের কাছে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করার জন্য আমি ময়না বেগমের নামে কেইস করেছি।’
সত্যি সত্যি চারুর চোখের সামনে ময়না বেগম কে পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়েছে। এমন কিছু ধ্রুব করবে কেউ হয়ত আশা করেনি। চারু নিজেও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ধ্রুব কীভাবে ওখানে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল চারু জানে না। কিন্তু যেভাবেই যাক গিয়েছিল বলেই ও বেঁচে গিয়েছে নয়ত ওখানে থেকে বের হবার সব পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। চারু এসব আকাশ পাতাল ভাবছিল তখনি দেখল দরজায় কাছে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে পিনাক। পিনাক ওকে দেখেই তো রাগে গমগম করছে শুধু। পিনাক কে দেখে চারু ডাকল।
পিনাক ডাক পেয়েই রেগে ভেতরে এলো,’ তোর সাহস তো কম না তুই আবার এসেছিস আমাদের বাসায়।’
চারুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ভেবেছিল মেয়েটার সাথে ভালো করে কথা বলবে দুটো কিন্তু এই মেয়েটা এতো বেয়াদব কথা বলাই ভুল। সব সময় তুই তোকারি করতে মেতে থাকে একটু ভদ্রতা নেই।
চারু বলল,’ বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে।’
পিনাক রাগে ফুস করে উঠল,’ তোর তো সাহস কম না আমাদের বাসায় এসে আমাকেই বের হতে বলিস।’
চারু উঠে দাঁড়াল তারপর পিনাক এর হাত ধরে ওকে টেনে রুম থেকে বের করে দিয়ে বলল,’ তোমার বাড়ি ঠিক আছে কিন্তু এই রুমে আমার থাকার বন্দোবস্ত হয়েছে তাই আমি যতদিন এই রুমে আছি এই রুমটা আমার তাই তোমাকে আমি বের হতে বলতে পারি।’
বলেই দড়াম করে চারু দরজা আটকে দিল। মেয়েটার শিক্ষা এতো নিচু। এইটুকু মেয়ে অথচ কেমন ঝাঁঝ।
চারু বিছানায় বসে আছে মেজাজ খারাপ করে কেন যেন এই পিনাকের সাথে কথা বললাম মনটাই খারাপ হয়ে গেল। চারু ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে
এলো। বিছানায় চুপ করে বসে আছে কি করবে এখন ধ্রুব ওদের বিয়ের কথা বাসায় বলেনি তার মানে এভাবে ধ্রুবর সাথে এই বাসায় আসায় সবাই ওকে নিয়ে কি ভাবছে। ধ্রুব কেন কিছু বলছে না মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এসব ভেবে চারু বিছানায় শুয়ে পড়ল তখনি দরজায় টোকা পড়ল।
চারু দরজার কাছে এসে দাঁড়াল আবার পিনাক এসেছে নাকি ওর সাথে বেয়াদবি করতে?
চারু দরজা না খুলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে‌। আওয়াজ এলো ধ্রুবর।
চারু দরজা খুলে দিল ধ্রুব দরজা খুলতেই কপাল কুঁচকে বলল,’ কী হয়েছে দরজা আটকে ঘুমিয়ে পরেছিলে নাকি?’
চারু উত্তর দিল না বিছানায় এসে বসল। ধ্রুব ওর জন্য ট্রেতে করে খাবার নিয়ে এসেছে। ট্রে ট্রি টেবিলের উপর রেখে বলল,’ কি হয়েছে মন খারাপ নাকি?’
চারু বলল,’ আপনি এখনো আমাদের বিয়ের কথা বাসায় জানাননি কেন?’
চারুর গলায় রাগের আভাস ধ্রুব বলল,’ সেভাবে সুযোগ হয়নি। বলে দিব তো।’
চারু গম্ভীর মুখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’ সুযোগ হবে কীভাবে? সুযোগ হলে কি আর দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি নিতে পারবেন? আপনি ইচ্ছা করে কিছু বলেনি যাতে আপনার চাচাতো বোনের সাথে বিয়েটা ভেস্তে না যায় তাই না?’
রাগে চারুর মুখ মন্ডল লাল হয়ে উঠল। ধ্রুব বলল,’ আর ইউ ম্যাড কি যাতা বলছো?’
‘ সত্যি কথা বললেই আমি পাগল তাই না? আমার তো কথা বলাই উচিত না। কথা যাতে না বলতে পারি এজন্য তো আমাকে ফেলে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন। যাতে বিয়ে করে প্রতিশোধ নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেতে পারেন। কত বোকা আমি আপনাকে বিলিভ করেছিলাম আর আপনি বিয়ে নামে ছেলেখেলা করলেন আমার সাথে।’
‘ লিসেন চারু আমার কথা শোনো আলতু ফালতু কথা বলে আমার মেজাজ খারাপ করবে না।’ কন্ঠস্বর গম্ভীর হয়ে এলো‌ ধ্রুবর।
চারু খেপে উঠলো আঙুল তুলে বলল,’ মেজাজ দেখাবেন না আমাকে। আপনি আমাকে গেস্ট রুমে এনে জায়গা দিয়েছেন কেন আমি এই বাড়ির গেস্ট রুমে থাকব কেন? বিয়ে করেছেন আপনি আমায় নিজের ইচ্ছায় আমি কিন্তু জোর করিনি তাই আমাকে এখন ঠকানোর চেষ্টা ও করবেন না। আমি বোকা হতে পারি কিন্তু দূর্বল না আপনি যদি ভেবে থাকেন বিয়ে করে আমাকে এখন স্বীকার না করার ইচ্ছায় থাকবেন আমি সেটা সফল হতে দেব না।’
ধ্রুব কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল,’ উফ চারু তোমার কি মনে হয় আমি তোমায় ঠকাব? ঠকানোর হলে কেন তোমায় বাসায় নিয়ে এলাম বলো?’
‘ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। আমি এই রুমে থাকব না।’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল চারু।
‘ বললেই হয় তুমি আমায় ছাড়া থাকতে পারছ না।’ দুষ্টুমি কন্ঠে বলল ধ্রুব।
‘ দেখুন কথা ঘুরাবেন না।’
‘ ওকে জান। খেয়ে নাও।’
চারু মুখ ফিরিয়ে নিল ধ্রুবর মনে কি চলছে ও জানতে চাচ্ছে ধ্রুব ওকে ঠকাতে চাইলেই ও ছেড়ে দিবে এতো সহজ না।
#চলবে….

প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
৪১.

চারু কিচেনে কফি তৈরি করছিল ধ্রুবর বাবার জন্য। দুইদিন ধরে এই বাসার গেস্ট রুমে আছে চারু। ধ্রুব বাসায় বলবে বলবে বলেও দুইদিন পার হয়ে গেল কিছুই বলতে পারল না। চারু কে সবাই দাসীর মতোই ট্রিট করছে চারু নিজের শ্বশুর বাড়ি ভেবে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু সবাই ওকে মেইড ভেবেই নিয়েছে। চারু কফি মগ ঢালছিল আর ওর চোখ বেঁয়ে অধরে জল গড়িয়ে পড়ছিল।
হঠাৎ কিচেনে এলো যুথি। এসেই অর্ডার দিল,’ চারু আমার জন্য এককাপ চা আনোতো খুব মাথা ধরেছে।’
বলেই চলে গেল। চারু এক পলক তাকাল যুথির দিকে যুথিই তো সেই মেয়ে যার সাথে ধ্রুব এনগেজমেন্ট হয়েছিল। চারুর বেদনা আরো বেড়ে গেল। আজ সকালেই যুথি এখানে এসেছে। যুথি ধ্রুবর কাজিন সকালেই চারু জানতে পেরেছে।
চারু অনিচ্ছা সত্ত্বেও চা করে নিল। ধ্রুবর বাবাকে কফি দিয়ে এসে যুথি চা দিল। যুথি চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,’ বাহ বেশ দারুণ চা বানাও তো তুমি চারু।’
প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠল সে। চারু ট্রে হাতে মলিন মুখে হালকা হেসে কিচেনের দিকে র‌ওনা হলো। ধ্রুব বাইরে গিয়েছিল তখনি বাসায় এসে উপস্থিত হলো। সোফায় বসতে বসতে চারুর দিকে তাকাল। চারু আড়চোখে চেয়ে গটগট করে কিচেনে ফিরে আসলো। ধ্রুব বোকা হয়ে ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। যুথি বলল,’ কোথায় গিয়েছিলে?’
‘ কেন?’ কপাল কুঁচকে বলল ধ্রুব।
যুথি বলল,’ তোমার কাছে কি সোজা প্রশ্নের জবাব নেই?’
ধ্রুব বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,’ তুমি এতো কিছু জানার চেষ্টায় থাকলেও আমি জবাব দিতে চাই না।’
যুথি বলল,’ চা খাবে? নতুন মেড দুর্দান্ত চা বানায়।’
ধ্রুবর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো যুথি উত্তরের আসায় থাকল না চিৎকার দিয়ে চারু কে ডেকে উঠল,’ চারু ধ্রুবর জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসো।’
ধ্রুব গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,’ আমি কি তোমার কাছে চা চেয়েছি?’
‘ শুনলাম নতুন মেড্ তুমি ঠিক করেছো?’
‘ চারু মেড না। আমার মেজাজ খারাপ করো না।’ বলেই ধ্রুব উঠে দাঁড়াল। যুথি ধ্রুবর রাগ দেখে বলল,’ কী হয়েছে এতো রাগ করছো কেন?’
ধ্রুব হনহনিয়ে নিজের বেডরুমে চলে গেল। যুথি কপাল কুঁচকে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে হঠাৎ এর আবার কী হলো?
যুথি ধ্রুবর রিয়েক্ট দেখে হতবাক হয়ে বসে আছে।চারু চা করে এনে দেখল যুথি একাই বসে আছে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। চারু কে চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে যুথি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’ ধ্রুব তো রুমে দাও আমার কাছে আমি নিয়ে যাচ্ছি।’
চারু কাপ হাতে শক্ত হয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। যুথি চারু কে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,’কি হলো আমার কাছে দাও কাপ।’
চমকে উঠে চারু কাপ যুথির হাতে দিতেই যুথি হেসে চলে গেল। চারু ছলছল চোখে সেদিক পানে তাকিয়ে আছে। চারু পাথরের মত সেখানেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ ধ্রুবর বাসা কাঁপিয়ে একটা চিৎকার ভেসে এলো। আর সেই চিৎকার এ চারু নড়েচড়ে উঠল। দৌড়ে উপরে ধ্রুবর রুমের সামনে এসে দাড়াতেই দেখল ধ্রুবর জন্য করা চায়ের কাপ ও চা দুটোই ফ্লোরের পরে আছে। চারু মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যুথি ওর সামনে দিয়েই কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল রুম থেকে। চারু দরজা ধরেই বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না। চারু দরজা থেকে সরে আসতে যাবে ধ্রুব ওকে টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে দড়াম করে রুমের দরজা আটকে দেয়। চারু চোখ কপালে তুলে বলে,’ কি করছেন দরজা খুলুন।’
‘ চারু নিজেকে পাগল পাগল লাগছে এতো দূর্বল ফিল করছি আমি কিছু ভালো লাগছে না। ডক্টর বলেছেন মায়ের জন্য সামান্য দুশ্চিন্তা ও অনেক ভয়াবহ হবে। এতে মায়ের জান ও চলে যেতে পারে। আমি সাহস করে উঠতে পারছি না মায়ের সামনে আমাদের সম্পর্কে কথা বলতে ভয় লাগছে মা কীভাবে রিয়েক্ট করবে! যদি মায়ের কোন ক্ষতি হয়ে যায়? শুধুমাত্র এই ভয়ে আমি মুখ খুলতে পারছি না। তোমাকে সবার সামনে অপমানিত অসম্মানিত হতে আটকাতে পারছি না। তোমার ঢাল হতে পারছি না। আমি এখন কি করব তুমি প্লিজ আমাকে বলে দাও।’
চারু কে বিছানায় বসিয়ে ধ্রুব ওর পায়ের কাছে বসে পড়ল। চারু ধ্রুবর অসহায়ত্ব বুঝতে পারছে ওর চোখ জোড়া টলমল করে উঠল। ধ্রুবর কথায় গলে গেল একদম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে বসে আছে। চারু চায়না ওর জন্য ধ্রুবর মায়ের কিছু হোক। ওর নিজের মা বাবা নেই ও জানে বাবা মায়ের কষ্ট কি ও চায় না ওর জন্য ধ্রুবর মায়ের কোন প্রকার ক্ষতি হোক। তাহলে ও নিজেকে কোনভাবেই ক্ষমা করতে পারবে না।
চারু ধ্রুবর গাল স্পর্শ করে বলল,’ আপনার কিছুই করতে হবে না। আমি চাই না আমার জন্য আপনার মায়ের কোন ক্ষতি হোক।’
ধ্রুব চারুর হাত গালে চেপে ধরে বলল,’ কিন্তু বেশিদিন এই কথা আমি চেপে রাখব না। আমি শুধু একটা সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছি। তোমাকে সেই পর্যন্ত একটু ম্যানেজ করে নিতে হবে বাকিটা প্লিজ।’
‘ আমি নিজেকে সামলে রাখব এবং আপনার বলার অপেক্ষায় থাকব।’
ধ্রুব চারুর দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে নিল।
চারু উঠে দাঁড়াল বসা থেকে তারপর দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রুম থেকে বের হতেই ধ্রুবর মায়ের সামনে পড়ল। তিনি কপাল কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে।
চারু চোখের পানি হাতের‌ উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে বলল,’ আন্টি আপনি?’
‘ তুই ধ্রুবর রুমে কি করছিলি?’ তার কপাল কুঁচকে আছে।
চারু চমকে উঠল এখন কি বলবে? গলা শুকিয়ে এলো চারুর। ধ্রুব বেরিয়ে এসে বলল,’ কাজে এসেছিল আম্মু।’
চারু বোকা হয়ে তাকাল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ফ্লোরের কাচ দেখিয়ে দিল‌ নিজের মাকে।
চারুর থেকে মনোযোগ সরিয়ে ধ্রুবর মা ধ্রুব কে নিজের রুমে ডাকল। চারু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল ধ্রুব মাকে সরে যেতে দেখে বলল,’ সরি।’
চারু একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিচে চলে গেল।

ধ্রুবর চাচি আর ধ্রুবর মা একসাথে বসে ছিল। ধ্রুব গিয়ে দাড়াতেই ধ্রুবর মা নিজের কাছে বসালো ছেলেকে।
ধ্রুব আড়চোখে চাচির দিকে তাকিয়ে দেখল তার মুখে হাসির ঝিলিক। কোন তো প্লান করেছেন তিনি। নিশ্চিত ধ্রুব! কারণ ধ্রুব আর চারুর ব্যাপারে একমাত্র চাচি জানেন গতবার দাদির মৃত্যুর সময় তিনি ধ্রুবর সাথে চারু কে দেখছিল আর সেই থেকেই তিনি নারাজ ধ্রুবর উপর। এবার চারু কে বাসায় আনার পর থেকে চাচিকে রাগী দেখেছেন। ধ্রুব আশংকা করেছিল তিনি কোনো তো তামাশা করবেন কিন্তু তিনি নিরব রয়েছে ব্যাপারটা ধ্রুবর কাছে বিস্ময়কর। চাচি মায়ের সাথে বসে কোন তো প্লান করেছে নয়ত তার মুখে এমন হাসি থাকত না।
ধ্রুব বলল,’ আম্মু কিছু বলবে?’
‘ হ্যাঁ ধ্রুব আমরা ঠিক করেছি তোমার আর যুথির বিয়ের কাজ এগিয়ে আনব।’
মায়ের কথায় ধাক্কা খেলো ধ্রুব।
‘ তোমার বাবা আর চাচা দুজনে গতকাল রাতেই ঠিক করেছে সামনে মাসের চার তারিখে তোমাদের বিয়ে হবে।’
বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল ধ্রুব।
‘হোয়াট? চার তারিখ আসতে মাত্র নয় দিন বাকি আম্মু।’
‘ তো সমস্যা কোথায় শুভ কাজে দেরি করে লাভ কি?’ বলেই তিনি হাসলেন। ধ্রুবর চেয়াল শক্ত হয়ে এলো রাগে।
‘ কিন্তু আম্মু এতো জলদি করার কী দরকার আমি এখন বিয়ে করতে চাই না প্লিজ।’
‘ দুইদিন আগে পরে বিয়ে তো হবে এখন হলেই বা সমস্যা কি?’
ধ্রুব নিজের রুমে এসে হাঁসফাঁস করছে এখন কি করবে ও? সব কিছু এমন হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ডক্টরের কথায় মায়ের কথায় সায় দিচ্ছে কিন্তু বিয়ে তো ওর পক্ষে করা সম্ভব না।এখন একমাত্র যুথি এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে।
ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে যুথির কাছে গেল। নিচে চারু কে দেখল রুমের দিকে যাচ্ছে। চারু কে গেস্ট রুমে থাকতে দেওয়া নিয়ে কেউ কিছু না বললেও চাচি বলেছিল, একটা সামান্য মেড কে গেস্ট রুমে থাকতে দেওয়ার কি প্রয়োজন।
ধ্রুব কোনরকম সবাইকে ম্যানেজ করেছিল। চারু এই বিয়ের নিউজ পাওয়ার আগেই কিছু একটা করতে হবে। যুথি জানে আমি ওকে বিয়ে করতে চাই না ওকে বলতে হবে এসব বন্ধ করার কথা।
ধ্রুব যুথির রুমে নক করল,’ আসব?’
যুথি ফোন টিপছিল‌। ধ্রুব কে দেখে ফোন রেখে উঠে বসল,’আরে এতো ফর্মালিটি করার কি দরকার আসো না।’
ধ্রুব কে যুথি বসার ইঙ্গিত দিল ধ্রুব বসে বলল,’ বাসায় এসব কি চলছে দেখছিস?’
‘ কি চলছে?’ ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোটো ছোটো করে বলল যুথি।
‘ কেন তুই জানিস না?’
‘ হুঁ জানব না কেন আমার বিয়ে যে।’
যুথির কথায় ধ্রুবর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল যেন। ধ্রুব চোখে হতভম্ব হয়ে বলল,’ মানে তুই সব জেনেও চুপ করে আছিস?’
‘ তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না‌। আমার বিয়ে আমি জানব না। কালকে থেকেই তো আমি শপিং শুরু করে দেব। কত এক্সাইটেড আমি জানো? বিয়ে নিয়ে কত প্লান বিয়ের খবর পেয়েই তো আমি হোস্টেল থেকে বাড়ি এসেছি।’
‘ তোর মাথা ঠিক আছে তো? তুই এই বিয়ে নিয়ে এতো লাফালাফি করছিস কীভাবে? তুই জানিস না আমি এই বিয়ে নিয়ে হ্যাপি না। তুই এখনি এই বিয়েতে রাজি না বলবি। যা।’
‘ তোমার মাথা ঠিক আছে? আমি কেন এই কথা বলব। যেখানে আমি রাজি আছি।’
‘ সব জানার পর ও তুই রাজি আছিস বলছিস?’
‘ দেখো বিয়ের আগেই অনেকেই রিলেশন করে এরমানে এই না এই সামান্য কারণে আমি বিয়ে ভেঙ্গে দেব। আমার কোন সমস্যা নেই তুমি অন্য কাউকে পছন্দ করো।’
‘ দেখ তুই কিন্তু আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছিস।’
‘ উফ যাও তো আমার মুড খারাপ করোনা। আমি বিয়ের লেহেঙ্গা চুজ করব অনলাইনে।’
ধ্রুব দেয়ালে লাথি মেরে বেরিয়ে এলো যুথির রুমে থেকে। যুথির কথায় রাগে শরীর কাঁপছে ধ্রুবর। রুমে এসে নিজের মাথার চুল খামচে ধরল শক্ত করে।
#চলবে….

প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
৪২.

মায়ের আদেশে যুথি এবং পিনাক কে সাথে নিয়ে শপিং মলে যেতে হচ্ছে ধ্রুবর। ধ্রুব মায়ের সামনে বলে উঠল,’ আম্মু চারু কে আমাদের সাথে নিয়ে যাই?’
ধ্রুবর মা কপাল কুঁচকে বললেন,’ ওকে নিয়ে কি করবি?’
ধ্রুব এক পলক চারুর দিকে চেয়ে বলল,’ বিয়ের শপিং তো কম না সেসব বহন করার জন্য ও একজন দরকার।’
চারু বিস্মিত হয়ে তাকাল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। চারু রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এতো দিন বাসায় কাজের লোক বানিয়ে রেখেছিল এখন বাইরেও নিয়ে যাবে ওকে পেয়েছে কি ধ্রুব? খেলার পুতুল যেমন খুশি তেমন নাচাবে। আর নিজেও তো পাগলের মতো ওর ইশারায় নাচছে।
চারু রাগে ফুঁসফুস করছে না কিছু বলতে পারছে আর না দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে। ধ্রুব চারুর দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলল। চারু রক্তিম চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব ততক্ষণে নিজের মাকে রাজি করিয়ে নিয়েছে চারু কে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
পারমিশন পেয়ে তো ধ্রুব সেই খুশি চারুর এক বিন্দু ও ওদের সাথে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। ধ্রুব ওর সামনে বিয়ের তোরজোর করছে আর ওকে সব হজম করতে হচ্ছে কপালে কি ওর সতীন লেখা আছে?
চারুর শরীর জ্বলে যাচ্ছে রাগে। ধ্রুবর সাথে এক মিনিট আলাদা কথা বলার সুযোগ পেলে ও দেখিয়ে দিবে ও কি জিনিস। চারু চুপ করে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো পিনাক আর যুথি বের হয়নি।
ধ্রুব গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে চারু কে সামনের দরজা খুলে বলল,’ ভেতরে আসো।’
চারু পিছনের দরজা খোলার চেষ্টা করে বলল,’ আমি পেছনে‌ বসবো ওখানে বসার অধিকার যুথি আপুর।’
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে বলল,’ তোমার মাথা ঠিক আছে? আমার পাশে যুথির বসার অধিকার কে বলেছে তোমায়?’
‘ বলতে হবে কেন? কার অধিকার কতটা সেটা তো স্পষ্টই আছে।’ চারুর মুখে অভিমানের ছাপ।
ধ্রুব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’ তুমি অন্তত আমার দিকটা বোঝার চেষ্টা করো!’
‘ বুঝতে বুঝতে আমাকে সতীন সহ্য করতে বলছেন? ছেলে মানুষ এমনি একজন দিয়ে এদের হয়না। আরেকটা সুন্দরী ব‌উ পাওয়ার লোভ সামলাতে পারেন না। সহ্য করতে গিয়ে আমাকে সতীন সহ্য করতে হচ্ছে আপনি পারবেন আমার পাশে আরেকটা ছেলেকে সহ্য করতে?’
ধ্রুব কিছু বলতে যাবে পিনাক আর যুথি চলে এসেছে তখন। যুথি এসেই ধ্রুব পাশের সিটটা দখল করে নিলো। ধ্রুব কিছু বলার সুযোগ টা অব্দি পেল না। ধ্রুব রাগান্বিত চোখে চারুর দিকে চেয়ে পেছনের লক খুলে দিল। পিনাক আর চারু পেছনে ছিটে উঠে বসল।
চারু চুপ করে পেছনে বসে আছে। ধ্রুব রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে চারু সামনে না বসায়। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না।
আর পেছনে বসে চারু দিন গুনছে এই বাসায় আসার দুই মাস হয়ে গেল এখনো ধ্রুব কিছুই বলতে পারল না।
এখন আবার ওর সামনেই নিজের কাজিন কে বিয়ের শপিং করতে নিয়ে যাচ্ছে ওর বুকের ভেতরটা কেমন ফেটে যাচ্ছে ধ্রুব যদি বুঝতো‌।
চারুর চোখ জলে ভরে উঠছে। সবার অগোচরে তা মুছেও নিচ্ছে।
কারো চোখে এই অশ্রু ধরা না পড়লেও ধ্রুবর চোখে ঠিকি ধরা পড়েছে। চারুর চোখে জল দেখে ধ্রুবর রাগ গলে গেল। বুকে চিনচিনে ব্যথা শুরু হলো। ধ্রুব লুকিং গ্লাসে বারবার চারুর মুখটা দেখছিল। সেটা ধরে ফেলল চট করেই পিনাক। পিনাকের নজর এড়িয়ে গেল না। পিনাক দেখল লুকিং গ্লাসে চারু কে দেখছে ধ্রুব। কথাটা মা কে জানাতেই হবে। মনে মনে ছক কষে নিলো পিনাক।
শপিং মলে এসেই ধ্রুব কার থামাতেই সবাই বেরিয়ে পড়ল।
ধ্রুব যুথি কে বলল,’ তোরা ভেতরে যা আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।’
যুথি পিনাক কে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। চারু কি করবে বুঝতে না পেরে সেখানে স্থির দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব গাড়ি পার্কিং করে এসে চারু কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। ধ্রুব এগিয়ে এসে চারুর হাত ধরল শক্ত করে।
চারু টেনে হাত ছাড়িয়ে নিতে চেয়ে বলল,’ হাত ধরছেন কেন আপনার হবুব‌উ দেখলে কেলেঙ্কারি হবে।’
ধ্রুব হাত ছাড়ল না। হাত ধরেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো।
চারু হাত মুচড়ামুচড়ি করে শান্ত হয়ে গেল। ধ্রুব বলল,’ আমি কাউকে ভয় পাই না।’
চারু শব্দ করে হেসে উঠল,’ ভয় পান না আপনি?’
‘ দেখো ওটা আমার দূর্বলতা ভীরুতা না। আম্মু অসুস্থ না থাকলে আমি এসব একটুও সহ্য করতাম না‌ কিন্তু তুমি নিশ্চিন্তে থাকো বিয়ের আগেই আমি সব ঠিক করে নেব।’

ধ্রুব চারু কে নিয়ে অন্য দিকে এসেছে। চারুর চোখজোড়া শুধু যুথি কে খুঁজছে কোনদিক দিয়ে ওদের এই অবস্থায় দেখে নিবে সেই ভয়ে আছে চারু। ধ্রুব চারু কে তাকাতাকি করতে দেখে বলল,’ তোমাকে নিয়ে মার্কেটে এসেছি তুমি জিনিস না দেখে কাকে খুঁজছো?’
চারু বলল,’ দয়া করে হাত ছাড়ুন। যেহেতু সত্য জানাতে ভয় পান তাহলে এখন আর হাত ধরে সাহস দেখাতে হবে না। হাত ছাড়ুন যুথি আপু দেখলে তামাশা হবে।’
‘ এসব বাদ দাও তো এই ড্রেসটা দেখো।’
ধ্রুব চারু কে একটা অফ হোয়াইট কালারের লেহেঙ্গা দেখালো। ওরনাটা রেড কালার এতো সুন্দর এক পলকেই চারু দারুণ লাগল। ধ্রুব ওরনা এনে চারুর মাথায় ধরে বলল,’ বিউটিফুল।’
চারু লাজুক হেঁসে লেহেঙ্গার কাছে এসে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখছে। হঠাৎ ওর নজরে পরল প্রাইজ সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে উঠল। ড্রেসটা সুন্দর তাই বলে এই ড্রেস এতো দাম? চারু ঝটপট হাত গুটিয়ে নিল। এদিকে ধ্রুব ড্রেস প্যাক করে দিতে বলেছে। চারু ধ্রুবর হাত টেনে ধরল।
ধ্রুব বলল,’ কি হয়েছে টানাটানি করছো কেন?’
‘ চলুন এখান থেকে।’ চারুর কথায় কপাল কুঁচকে ফেলল ধ্রুব।
‘ হোয়াটস হাপেন্ড?’
চারু বলল,’ যুথি আপুরা আমাদের হয়ত খুঁজছে চলুন তাদের কাছে যাই।’
ধ্রুব চেয়াল শক্ত করে বলল,’ ওরা ওদের মতো শপিং করতে থাকুক। দেখো আমার মেজাজটা খুব ভালো আছে প্লিজ এটা আর খারাপ করো না।’
ধ্রুবকে কাউন্টারে গিয়ে লেহেঙ্গার বিল প্রে করার জন্য ক্রেডিট কার্ড করতে দেখে চারু চিৎকার করে উঠল,’ আপনার মাথা গেছে? ওতো দামী ড্রেস নিচ্ছেন কেন? চলুন এখানে থেকে।’
ধ্রুব কে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিল চারু। ধ্রুব চারু কে ধমক দিয়ে বিল প্রে করে ব্যাগ নিয়ে নিল। চারু ধমক খেয়ে ধ্রুব কে রেখেই মল থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। চারু বেরিয়ে দেখে পিনাক আর যুথি দুজনে এদিকে আসছে। ওকে দেখেই এগিয়ে আসতে আসতে বলল ও এখানে কি করছে?
চারু হকচকিয়ে গেল। ধ্রুব তখনি ব্যাগ হাতে বেরিয়ে আসে। ধ্রুব তখনো যুথি আর পিনাক কে দেখে নি। চারুর দিকে ওরা দুজনে এগিয়ে আসছে। ধ্রুব বেরিয়ে চারুর সামনে এসে দাড়ালো।
চারুর হাত ধরে বলল,’ রাগ করছো কেন জান? বিয়ের পর তোমাকে এখনো কিছুই কিনে দিতে পারিনি। এই প্রথম কিছু দিচ্ছি এখানে প্রাইজ ইম্পর্ট্যান্ট না। তুমি আমার ভালোবাসাটা দেখছো না?’
চারু চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে যুথির দিকে। যুথি আর পিনাক ওদের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। চারু কথা বলছে না দেখে ধ্রুব ধমক দেওয়ার জন্য সরি বলতে লাগল। চারু ঢোক গিলে ধ্রুবকে ইশারা করল থামতে। ধ্রুব ওর ইশারা বুঝতে না পেরে বলল,’ কি হয়েছে পেছনে ইশারা করছো কেন?’
চারু বলল,’ যুথি আপু।’
ধ্রুব যুথির দিকে তাকাতেই যুথির চোখে পানি দেখতে পেল। যুথি আরো দুই কদম এগিয়ে এসে বলল,’ ধ্রুব তোমার এই মেয়েটার সাথে কি সম্পর্ক?’
ধ্রুব কিছু বলতে যাবে চারু বলে উঠল,’ আপু আপনার জন্য স্যার এত্ত সুন্দর একটা ড্রেস নিয়েছে দেখেন।’
বলেই‌ ধ্রুবর হাত থেকে এক টানে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যুথির হাতে ধরিয়ে দিল।
যুথি হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চারু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। ধ্রুব পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চারু এসব কি বলছে।

যুথি সন্দিহান চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে।
চারু আবার বলল,’ দেখুন না।’
যুথি ব্যাগ খুলে হালকা করে দেখল।
যুথি বলল,’ এটা তুমি আমার জন্য নিয়েছো?’
বিস্মিত কন্ঠে বলল যুথি। যুথি জানে ধ্রুব এই বিয়েতে হ্যাপি না তাহলে এসব কি?
যুথি হোয়াইট কালার পছন্দ করে না তাই লেহেঙ্গাটা ওর পছন্দ হলো না।
ও লেহেঙ্গার ব্যাগ চারুর হাতে দিয়ে বলল,’ এটা আমার লাগবে না। আগে বলো ধ্রুব তোমাকে সরি বলছিল কেন? কি সম্পর্ক তোমাদের মধ্যে?’
চারু বলল,’ আমাকে না তো আপনাদের অপেক্ষায় রেখে এসেছে এজন্য আপনাকে কীভাবে সরি বলবে সেটাই বলছিলেন তিনি।’
চারুর কথায় চমকে উঠল ধ্রুব রাগী চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে ধ্রুব। এদিকে একের পর এক চমক লাগছে যুথি। যুথি ধ্রুবর হাত ধরে বলল,’ চলো আবার যাই নতুন করে পছন্দ করে দিবে আমার ড্রেস।’
ধ্রুব হাত ছাড়িয়ে বলল,’ পিনাক আছে তো তোর সাথে ওকে নিয়ে যা।’
যুথি বলল,’ আমি কি তোমার পছন্দ করা ড্রেস নেই নি বলে রাগ করলে?’
‘ নেসনি বলেই রাগ করিনি।’
যুথি কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বুঝা চেষ্টা করছে ধ্রুবর ইঙ্গিত।

রাত তখন বারোটার কাছাকাছি। যুথি ছাদে গিয়েছিল এতো সময় ভূতের মতো ছাদে একা দাঁড়িয়ে ছিল। ইচ্ছে ছিল জ্যোৎস্না ভরা রাতে ছাদে বসে ধ্রুবর সাথে এক কাপ কফি খাওয়ার কিন্তু ধ্রুব বরাবরের মতোই ওকে তুচ্ছ করে দিয়েছে।
যে মেয়ের জন্য ধ্রুব ওকে প্রতিনিয়ত অবজ্ঞা অবহেলা করছে একবার ওই মেয়েকে দেখতে চায় যুথি। কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে যে এতো কিছুর পর ও ধ্রুবর মনে জায়গা করতে পারছে না যুথি।
যুথি ধ্রুবর কথা ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল তখন। হঠাৎ যুথির শিরদাঁড়া সোজা হয়ে গেল। একটা ছায়া পড়েছে। যুথি অন্ধকারে ভালো করে খেয়াল করে দেখল ধ্রুবর ছায়া। চমকে উঠল যুথি এতো রাতে ধ্রুব চোরের মতো কোথায় যাচ্ছে? যুথি সাথে সাথেই নিজেকে বুঝ দিল ধ্রুব ফ্রেন্ড ক্লাব নিয়ে পরে থাকার ছেলে। আগেও এমন লুকিয়ে যাওয়া আসা করেছে‌। ধ্রুব দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিল যুথি। যুথি নিজের মন কে বুঝ দিলেও নিজেকে শান্ত করতে পারছে না রুমে এসেও শান্তি লাগছে না।
যুথি সারারাত ছটফট করে ঘুমাতে পারল না। ভোরে সবার আগে উঠে বের হলো রুম থেকে ধ্রুবর রুমে খোঁজ নিতে ধ্রুব কি রাতে বাসায় ফিরেছে? নাকি ফেরেনি। যুথি দেখল কেউ উঠেনি কিন্তু বড়ো চাচি উঠে গেছে তার রুমে লাইট জ্বলছে। যুথি ধ্রুবর রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব কী ভেতরে আছে?
দুটানা মনে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল।
যুথি ভেতরে ঢুকে হতাশ হলো ধ্রুব রুমের ভেতরে নেই বিছানা ফাঁকা। ধ্রুবর রুমের সেন্ডেল ও নেই ধ্রুব কি বাসার সেন্ডেল পরেই বের হয়েছে?
কিছুটা খটকা লাগছে যুথির কাছে সব কিছু।
যুথি নানান চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছিল হঠাৎ তখনি পেছনে থেকে রাগান্বিত স্বরে ধ্রুবর আওয়াজ ভেসে আসে।
যুথি ছিটকে পিছু ঘুরে তাকাতেই ধ্রুব কে রাতের থ্রি কোয়ার্টার ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরা অবস্থায় দেখে কপাল কুঁচকে নেয়। ধ্রুব চোখে মুখে ঘুমঘুম ছাপ স্পষ্ট সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেছে বুঝা যাচ্ছে।
যুথির বিমূঢ় হয়ে ধ্রুবর পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। পায়ে সেন্ডেল এই বেশে ধ্রুব কোথা থেকে এলো? ধ্রুব তো রাতে এই রুমে ছিল না ও নিজে ধ্রুব কে বাইরে যেতে দেখেছে। এই অবস্থায় ধ্রুব বাইরে গিয়েছিল বিলিভ করতে পারছে না যুথি।
‘ কি হয়েছে এতো সকালে তুই আমার রুমে কি করছিস?’
বলতে বলতে ধ্রুব বিছানার শুয়ে পড়ল।
যুথি কিছু বলতে যাবে ধ্রুব বলল,’ খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? পারমিশন ছাড়া আমার রুমে আসতে বারণ করেছি না তোকে?’
‘ পারমিশন দেওয়ার জন্য তুমি রুমে ছিলে না।’
‘ তুই কি নিশ্চিত আমি তোকে পারমিশন দিতাম। এখন যা তোর সাথে বেহুদা কথা বলার সময় নেই।’
যুথি বলল,’ তুমি রাতে কোথায় ছিলে?’
‘ তোকে আমার কৈফিয়ত দিতে হবে?’
‘ আমি জাস্ট জানতে চাইছি তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না তুমি বাইরে গিয়েছিলে। তাহলে রাতে চোরের মতো কোথায় গিয়েছিলে?’
‘ আমার পার্সোনাল বিষয়ে কথা বলার সাহস কোথায় পাস তুই?’
‘ আমি তোমার ওয়াইফ হবো দুই দিন পর আর তুমি এখন আমাকে আমার অধিকার দেখাচ্ছ?’
‘ হবি‌ এখনো হোস নাই তাই অগ্রীম অধিকার ফলাতে আসবি না।’
যুথি রাগে কটমট করে চলে গেল রুম থেকে। কোন তো ঘাপলা আছে রাতে ধ্রুব কোথায় গিয়েছিল। এটাতো ওকে জানতেই হবে। ইশ কেন যে তখন একটু খেয়াল করে দেখলাম না। নিজের বোকামি তে নিজের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে এখন।

#চলবে……