প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
৪৩.
যুথি আজকে হাতে নাতে ধরতে চায় ধ্রুব কে। কোথায় যায় মাঝরাতে উঠে আজকে জেনেই ছাড়বে যুথি। যুথি একটু পর পর ধ্রুবর রুমের দিকে নজর দিচ্ছে। আগামীকাল ওদের হলুদ সন্ধ্যা আজকে তাই বাসা ডেকোরেশন করা হয়েছে। এজন্য যুথি বাইরেও থাকতে পারছে না অন্যদিনের মতো অন্ধকার না বাসা। যুথি কে চিন্তিত মুখে বসে থাকতে দেখে ওর কাজিন ( ফুফাতো বোন)
ঘুমঘুম চোখে চেয়ে বলল,’ এখনো বসে আছিস কেন?’
‘ এমনিতেই তুই ঘুমা।’
মেয়েটা লাফিয়ে উঠে বলল,’ কিরে আমার ঘুমের জন্য এতো ব্যস্ত হচ্ছিস কেন বলতো। তুই কি ধ্রুব ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যাবি?’
যুথি ধমক দিয়ে বলল,’ ঘুমা তো। তোদের ধ্রুব ভাইয়ের আমার জন্য ভালোবাসা উতলে পড়ছে না যে ঘুম নষ্ট করে আমার সাথে প্রেমালাপ করতে আসবে।’
মেয়েটা শুয়ে পড়ল। যুথি বিরক্তিকর চোখে ওর দিকে নজর রেখে আস্তে করে দরজা খুলে উঁকি মারে। রাত তখন দুটো ধ্রুব এখনো রুম থেকে বের হয়নি আর এদিকে যুথি সি আইডির মতো ওর উপর নজর রাখছে। নজর রাখতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে উঠল। হামি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আজকে ধ্রুব বের হলো না তো নাকি বেরিয়ে গেছে ওর নজরে পরে নি?
যুথি ধ্রুবর রুমের সামনে এসে দাড়িয়ে আছে। ওর পা জোড়া কাঁপছে। বুকে ধকধক করছে। ধ্রুব যদি জানতে পারে ও এমন ভাবে ওর উপর নজর রাখছে কি করবে আল্লাহ পাক জানেন।
যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় করে যুথি ধ্রুবর রুমের দরজায় হাত দিল। দরজা খোলা পেয়ে তো চাঁদ হাতে পেল যেন। আস্তে করে দরজা খুলে নিঃশ্বাস আটকে রুমে ঢুকল। রুমে ঢুকে অন্ধকার কিছুই দেখছে না যেন। দরজা আগের মতোই চাপিয়ে দুই মিনিট অপেক্ষা করতেই ড্রিম লাইটের আলোটা অন্ধকারে স্পষ্ট হতে লাগল। ধ্রুব বিছানায় শুয়ে আছে ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে যত এগিয়ে আসছে যুথি বিছানার দিকে। যুথি ঢোক গিলে নিজের সন্দেহ ভাবছে ধ্রুব কে নিয়ে কি আমি বেশি ভাবছি? এজন্য হয়ত আমার ধারণা ভুল ছিল।
যুথি চলে আসার জন্য দরজার কাছে চলে এলো। তখনি খট করে বাইরে থেকে কে যেন দরজা খুলে ওর মতো চোর হয়ে রুমে প্রবেশ করল। আচমকা কারো রুমে আসায় ছিটকে উঠল যুথি গলা শুকিয়ে এলো ভয়ে। যুথি কোথায় পালাবে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল বেলকনিতে। বেলকনিতে ফ্লোর ঘেঁষে বসে পরল। ভয়ে ওর অন্তরাত্মা কাঁপছে। এতো রাতে ধ্রুবর রুমে কে ঢুকেছে?
ভয়ে ওর কপালে ঘাম ঝরতে শুরু করলো। যুথি মুখে হাত চেপে চুপ করে বসে আছে বেলকনিতে ফ্লোর ঘেঁষে।
যে রুমে ঢুকেছে সে রুমে ঢুকেই দরজা ভেতরে থেকে লক করে দিয়েছে। যুথি দরজা লক করার শব্দ পেতেই আঁতকে উঠে। এবার ও রুম থেকে বের হবে কীভাবে?
কয়েকদিন ধরেই চারুর শরীর খারাপ লাগছে। চারুর শরীর খারাপ লাগছে শুনে ধ্রুব বলেছিল ওকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু চারু ধ্রুবর কথায় রাজি হয়নি। সামান্য একটা মেড হয়ে এই বাসায় আছে চারু এখন বাড়ির মালিক যদি মেড নিয়ে হসপিটালে যায় কেমন দেখা যায় এসব বলে ধ্রুবর মাথা গরম করে দিয়েছে চারু। এজন্য ধ্রুব আজ সকাল থেকে চারুর উপর রাগে ফায়ার হয়ে আছে। সারাদিন চারুর সাথে কথা বলেনি এবং খাবার অব্দি খায়নি।
চারু কিচেনে আলাদা করে রেখেছিল ধ্রুবর খাবার। ধ্রুবর জন্য এখন খাবার নিয়েই রুমে এসেছে। রাগ করে তো আজ ওর সাথে দেখা করতেও যায়নি রাতে।
রাগ ওর দেখানো উচিত সেখানে রাগ প্রতিমুহূর্তে ওকেই সহ্য করতে হচ্ছে। চারু ট্রি টেবিলের উপর প্লেট রেখে টেবিল লাইট জ্বালিয়ে দেয়। ধ্রুব কাত হয়ে শুয়ে আছে ঘুমের মধ্যে ও যেন তার মুখে অভিমান ফুটে উঠেছে। চারু ধ্রুবর মাথার এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। ধ্রুব ঘুমের ঘোরে নড়েচড়ে উঠে। চারু আলতো স্বরে ডেকে উঠে ধ্রুব বলে।
ধ্রুব উঠছে না কয়েকবার ডাকার পর ও উঠে না চারুর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করে। চারু ধ্রুবর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফুঁ দিয়ে বসে।
ধ্রুব হুরমুর করে তক্ষুনি উঠে বসে।
চারু ধ্রুবর এক্সপ্রেশন দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। ধ্রুব চারু কে দেখে শান্ত হয়।
তারপর গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,’ তুমি এখানে কি করছো?’
চারু ঠোঁট উল্টে বলে,’ কেন আপনার বেডরুমে আমার আসা বারণ নাকি?’
‘ কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবে না। কি জন্য আমার ঘুম ভাঙাতে এসেছো বলো?’ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল ধ্রুব।
ধ্রুব রাগ দেখে চারু ওর গাল টেনে ধরে বলল,’ ওলে বাবা আপনি তো একদম ছোটো বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে অভিমান করেছেন।
আচ্ছা সরি আমার উপর রাগ করে নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছেন? আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি চুপচাপ খেয়ে নিন।’
‘ আমার খিদে নাই। আমি এখন ঘুমাব।’
‘ আগে খাবার শেষ করেন এরপর ঘুম।’
ধ্রুব নড়ছে না জেদ করে বসে আছে। চারু নিজের হাতে খাবার তুলে বলল,’ বললেই হয় আমার হাতে খেতে চাচ্ছেন।’
ধ্রুব আর চারুকে এই অবস্থায় দেখে বেলকনিতে থেকে যুথির চোখ চড়কগাছ। জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে ওদের এতো ক্লোজ দেখে ওর চোখ জোড়া বিষ্ময় এ বড়ো বড়ো হয়ে এলো। মুখ ছেপে ধরে বিস্মিত চোখে চেয়ে আছে।
ধ্রুব চারুর হাতে কি অবলীলায় খেয়ে নিচ্ছে। এসব কি ও স্বপ্ন দেখছে?
এটা স্বপ্ন ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারেনা। চারু মানে ওদের বাসার কাজের বুয়া তার সাথে ধ্রুব এতো ক্লোজ। মাথা ভনভন করছে যুথির। যুথি ঠাস করে ফ্লোরে পরে গেল। মাথা চেপে ধরল উত্তেজনায়।
খেতে খেতে চারু ধ্রুবর অভিমান ভেঙে দিয়েছে। হাত ধুয়ে এসে চারু বলল,’ এবার ঘুমান আমি যাই।’
চারু চলে যাওয়ার কথা বলতেই ধ্রুব ওর হাত চেপে ধরে। চারু কপাল কুঁচকে বলে,’ কি হলো?’
ধ্রুব অনুরোধ কন্ঠে বলল,’ যেও না।’
চারু হাত মুচড়ামুচড়ি করে বলল,’ দেখুন আজ বাসায় অনেক মানুষ এখানে থাকা রিস্ক যদি বাসার কেউ দেখে সর্বনাশ হবে।’
ধ্রুব বলল,’ হোক সর্বনাশ। তবুও তোমাকে এখানে থাকতে হবে।’
বলেই ধ্রুব চারু কে হেঁচকা টানে নিজের বুকের উপর ফেলে দিল। চারু মৃদু চিৎকার করে উঠল।
ধ্রুব চারু কে জড়িয়ে ধরে বলল,’ আই লাভ ইউ।’
চারু লাজুক হাসি দিতেই যুথির চিৎকার ভেসে এলো।
ধ্রুব আর চারু দুজনেই আঁতকে উঠল। যুথি বেলকনিতে থেকে দপাদপ করে বেরিয়ে এলো। চারু ভয়ে ধ্রুবর বুকের উপর থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে বসল। ভয়ে ওর সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে। আতঙ্কিত চোখে যুথির দিকে তাকিয়ে ভাবছে উনি এখানে কি করছে?
ধ্রুবর চোখে রক্ত জমে উঠেছে সুন্দর মুহুর্ত নষ্ট করার জন্য এই আপদ কোথা থেকে উদয় হলো?
‘ তুই এখানে কি করছিস?’
খ্যাপে উঠল ধ্রুব। জ্বলন্ত চোখে ধ্রুব উঠে দাঁড়াল। রুমের লাইট অন করে বলল,’ এ্যান্সার মি।’
যুথি চিৎকার করে উঠল,’ আগে তোমরা দুজনে আমার প্রশ্নের জবাব দাও। এই মেড তোমার রুমে এতো রাতে কি করছে? তোমরা কি করছিলে এক সাথে?’
ধ্রুব দরজা খুলে বলল,’ চুপচাপ রুম থেকে বের হ।’
‘ আমি বের হবো না। আমি তো সত্য না জেনে কোথাও যাব না। সব জেনে বাসার সবাইকে এখনি সব খুলে বলব তুমি বাড়ির কাজের মেয়ের সাথে ছিহ আমার বলতেও ঘৃণা লাগছে।’
যুথি ধ্রুবর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চারুর দিকে তাকাতেই ওর রাগ বেড়ে গেল। চিৎকার করে চারু কে বলল,’ বাড়ির মালকিন হতে চাস তাই না? এজন্য বাড়ির মালিকের দিকে নজর দিছিস।’
চারুর থেকে সরে ধ্রুব কে বলল,’ ধ্রুব ও না হয় লোভে পরে তোমায় ফাঁসিয়েছে কিন্তু তুমি ওর মতো একটা মেয়ের সাথে এসব ছিহ? আগামীকাল আমাদের হলুদ সন্ধ্যা আর তুমি আজ এই মেয়েটার সাথে এক রুমে এক বিছানায়। আমি এখনি সবাইকে সব খোলে বলব এই মেয়েটার তারপর কি হাল হয় আমি দেখব।’
যুথি রাগে কটমট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। চারু ধ্রুবর হাত ধরে বলল,’ কি হলো আপনি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন যান যুথি আপু কে থামান। আমি যে কেন এসেছিলাম এখানে সব আমার জন্য হয়েছে। সবাই সব সত্যি যেনে গেলে কি হবে? বাসায় এতো আত্মীয় স্বজন সবার সামনে তামাশা হবে।’
ধ্রুব চারুর চোখের পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ধ্রুব যুথির সামনে দাঁড়িয়ে বলল,’ কিরে এখনো সবাইকে জানাসনি? এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
‘ তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।’
‘ আমার জন্য? কেন তুই কি বাসায় সব জানাবি না?’
‘ জানাব তার আগে একটা উত্তর চাই।’
‘ তোকে আমি কোন উত্তর দেব না তুই সবাই কে সব বলে দে প্লিজ। আমি ও চাই সবাই সব জেনে যাক। কিন্তু বিলিভ কর আমি চারু আর আমার সম্পর্কের কথা কাউকে জানাতে পারছি না। তুই বলে ব্যাপারটা সহজ করে দে।’
‘ মানে?’ বিস্মিত হয়ে বলল যুথি।
‘ সবাই সব জানতে পারলে আমাদের বিয়েটা আটকাতে আমাকে আর এক্সটা কষ্ট করতে হবে না। এমনিতেই এই বিয়ের নাটক বন্ধ হয়ে যাবে। লাভ তো আমার ই হবে।’
ধ্রুব হাসতে হাসতে চলে গেল। যুথি ধ্রুবর দিকে চেয়ে ফ্লোরে লাথি মারলো। ধ্রুব দরজা আটকে দিল যুথির সামনেই ভেতরে চারু রয়ে গেল দেখে যুথি রেগে কী করবে না পেয়ে নিজের চুল খামচে ধরল।
#চলবে…..
#প্রেমনেশা
#নন্দিনী_নীলা
৪৪.
চারু আর ঘুমাতে পারল না সারারাত গেস্ট রুমে ভয়ে ভীত হয়ে পায়চারী করল। ধ্রুব একবার ওর দরজায় কড়া নেড়েছিল চারু দরজা খুলেনি। ধ্রুব চারুর জেদ দেখে ফিরে গিয়েছে। সকালে চারু আবার কড়া নাড়ার শব্দ পায়। চারু ভাবে ধ্রুব তাই প্রথম সাড়া শব্দ করেনা। কিন্তু বাইরে থেকে যুথি আপুর শব্দ পেয়ে চারু তড়িগড়ি করে দরজা খুলে দেয়। চারু দরজা খুলতেই যুথি সোজা রুমে প্রবেশ করে।
যুথি বিছানায় বসে চারু কে দেখছে আপাদমস্তক মাথা থেকে পা পর্যন্ত। চারু কপাল কুঁচকে যুথির দিকে তাকিয়ে আছে। যুথি চারু কে বলল,’ তুমি কে বলোতো?’
চারু চমকে উঠল। ঢোক গিলে বলল,’ মানে?’
‘ মানে তুমি কি আসলেই মেড নাকি অন্য কোন পরিচয় আছে তোমার।’ সন্দেহ চোখে চেয়ে আছে যুথি। চারু শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করতে লাগল। ধ্রুব কী যুথি আপু কে বলে দিয়েছে ওদের বিয়ের কথা? মাথা নিচু করে চারু ঘনঘন পলক ফেলছে। যুথি বলল,’ তুমি তো জানো ধ্রুবর সাথে আমার বিয়ে আজ আমাদের হলুদ।’
চারু বলল,’ হ্যাঁ জানি।’
যুথি উঠে এসে চারুর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বলল,’ জানো তাহলে কোন সাহসে তুমি রাতের অন্ধকারে ধ্রুবর রুমে গিয়েছিলে?’
চারুর কথা আটকে গেল। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে যুথি সাহস পেল।
‘ কথা বলছো না কেন? একটা পরপুরুষের রুমে এতো রাতে যেতে লজ্জা করেনি? টাকার জন্য তোমাদের মতো গরীব ছোটো লোক মেয়ে কি করতে পারে আমি খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু ভেবো না ধ্রুব তোমার মতো মেয়েকে কখনো ভালোবাসবে। তোমাদের মতো মেয়েরা শুধু বিছানা অব্দি যেতে পারবে ঘরের বউ হবার অধিকার পাবে না। কাল ধ্রুবর সাথে আমার বিয়ে হবে আমি এতো বোকা না তোমাদের একসাথে দেখে সিনক্রিয়েট করে বিয়ে বন্ধ করব।’
যুথি রাগী গলায় বলল,’ লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি আজকের পর ধ্রুবর আশেপাশে তোকে দেখলে আমি তোকে খুন করে ফেলব।’
যুথি হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। চারু বিস্মিত নয়নে যুথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। চারু ড্রয়িংরুমে আসতেই যুথির মা চারু কে চায়ের অর্ডার করল। আর বাজখাঁই গলায় বললেন,’ এতো বেলা অব্দি যদি পরে পরে একটা কাজের মেয়ে ঘুমায় তাহলে বাসার কাজ করবে কে? আজকে বাড়িতে অনুষ্ঠান আজকেই এতো লেট যা তাড়াতাড়ি চা করে আন।’
ধমক সুরে বলে উঠলেন তিনি।
চারু নিঃশব্দে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল। সামনে পড়ল যুথি যুথির ঠোঁটে কুটিল হাঁসি ও ইশারায় ওর জায়গাটা দেখিয়ে দিচ্ছে। চারু মাথা নিচু করে কিচেনে এসে দাঁড়িয়ে আছে একটুও চা করতে ইচ্ছে করছে না। সবকিছু ছেড়েছুড়ে কোন এক দিক চলে যেতে ইচ্ছে করছে। চারু গরম পানি বসিয়ে চিন্তায় ডুবে গিয়েছিল এদিকে পানি গরম হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।
চারু কারো ধাক্কায় সজাগ হলো তাড়াতাড়ি চুলা অফ করে দিল।
চারু সবাইকে চা পরিবেশন করে চলে আসছিল যুথি ওকে কফির অর্ডার করল। তাও একটা না কয়েকটা।
চারু দাঁতে দাঁত চেপে কফি করে নিয়ে এলো। কিন্তু ড্রয়িংরুম এ কেউ নেই সবাই উপরে ধ্রুবর রুমে জানালো পিনাক। চারু কফি নিয়ে ধ্রুবর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ভেতরে উঁকি মেরে ওর চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল। কারণ ধ্রুবর গা ঘেঁষে বসে আছে যুথি। একটু পর পর ধ্রুবর গায়ের উপর ঢলে পড়ছে। আর ধ্রুব সেদিকে পাত্তা দিচ্ছে না কি যেন কথা বলছে আর হাসছে। পাঁচ সাতজন বসে কিছু নিয়ে কথা বলছে আর হাসছে। চারু চোখমুখ শক্ত করে রুমে প্রবেশ করতেই যুথি আরো ধ্রুবর দিকে চেপে এলো। চারু স্পষ্ট বুঝতে পারছে এই মেয়ে ওকে দেখানোর জন্য এসব করছে। চারু সবাইকে কফি দিচ্ছে।
হঠাৎ একটা ছেলে কফি নেওয়ার সময় ইচ্ছে করে চারুর হাত চেপে ধরল। চারু চমকে ছেলেটার দিকে তাকাতেই রাগে ওর কপাল কুঁচকে এলো। ছেলেটা উদ্দেশ বুজে রাগে লাল হয়ে উঠল চারুর মুখমণ্ডল।
চারু কফি ছেলেটার উরুর উপর ঢেলে দিতেই ছেলেটা চিৎকার করে উঠল আর চারুর হাত ছেড়ে দিল। চারু আর কাউকে কফি না দিয়েই রাগে গজগজ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ওর চোখ জ্বলে উঠছে ধ্রুবর সামনে একটা ছেলে ওর সাথে অসভ্যতামি করল আর ধ্রুব খেয়াল ই করল না এই বুঝি ওর ভালোবাসা? চারুর চোখ বেঁয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল।
চারু কফি মাত্র দুইজন কে দিয়েছে আর কাউকে না দিয়ে উল্টো একজনের গায়ে কফি ফেলে চলে যাওয়ার রেগে আগুন হয়ে গেল যুথি।
যুথি রেগে চারুর পেছনে যেতে নিবে ধ্রুব ওর হাত ধরে আটকে দিল। যুথি বিমূঢ় হয়ে তাকাল ধ্রুবর দিকে।
ধ্রুব যুথি কে আটকে আচমকা সেই ছেলেটার নাক বরাবর ঘুসি মেরে বসল। এমনিতেই ছেলেটা গরম কফি উরুর উপর পরায় লাফাচ্ছিল হঠাৎ ধ্রুবর আক্রমণ এ ছেলেটা হতভম্ব হয়ে গেল। ধ্রুব একেরপর এক ঘুসি মারছে সবাই হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। সবাই এসে ধ্রুব কে টেনে সরাতেই ছেলেটা বলল,’ অদ্ভুত ধ্রুব তুই হঠাৎ আমায় মারছিস কেন?’
ধ্রুব কিছু বলতে যাবে ওর ফ্রেন্ডস সার্কেলের সবাই এসে উপস্থিত হয় রুমে। এতোক্ষণ যারা রুমে ছিল সবাই ধ্রুব ছোটো বড়ো কাজিন ছিল।
ধ্রুবর ফ্রেন্ডস দেখে যুথি সবাইকে নিয়ে চলে গেল রুম থেকে।
ধ্রুব রুমে এসেই সবাই ওকে জেঁকে ধরল,’ এসব কি হচ্ছে ধ্রুব তুই যুথি কে বিয়ে করছিস?’
আরেকজন বলল,’ তুই তো চারুর কে বাসায় নিয়ে এসেছিলি ওকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেস নাই?’
ধ্রুব বলল,’ নাহ।’
‘সত্যি করে বলতো এসব কি করছিস? তুই চারুকে ভালোবাসিস এসব বলে কত যুদ্ধ করলি এখন যুথি কে বিয়ে করছিস! চারু এসব দেখেও নিশ্চুপ কেন? আমাদের মাথায় তো কিছুই ঠুকছে না।’
ধ্রুব নিজেও নিরব হয়ে বসে রইল ওরা কপাল কুঁচকে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব বলল,’ যা হচ্ছে হতে দে।’
সবাই বিস্মিত নয়নে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুবর কাঁধে হাত রেখে বলল,’ তুই সত্যি কি চারু কে ভালোবাসিস? আমার তো এখন সন্দেহ হচ্ছে।’
ধ্রুব চোখ লাল করে বলল,: আমার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ করবি না।’
‘রাগ তো দেখাচ্ছি আমাদের সাথে অথচ যেখানে কথা বলা দরকার সেখানে তুই নিশ্চুপ কেন?’
চারু কে একটার পর একটা কাজ দিয়ে চলেছে যুথি। মনের যত রাগ ক্ষোভ আছে সব একসাথে জড়ো করে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। চারু যুথির এতো অর্ডার দেখে বুঝেছে এই কাজের মাধ্যমে তার রাগ বের করছে।
যুথির ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ড এসেছে তাদের নিয়ে যুথি ড্রয়িংরুম এ বসে ছিল তারপর নিজের রুমে গিয়েছে যাওয়ার আগে হালকা চা নাস্তা দিতে বলেছে রুমে। আর এই নাস্তার দায়িত্ব দিয়েছে চারু কে। চারু কেই যেতে হবে চা নাস্তা নিয়ে।
চারু নাস্তা নিয়ে যাচ্ছিল যুথির রুমে। তখন ধ্রুব নিজের রুমে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত। চারু ট্রে নিয়ে ধ্রুবর রুম ক্রস করছিল ধ্রুব নজরে পরে যায় চারুকে। চারু কে দেখেই ধ্রুব শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে তড়িগড়ি করে বাইরে আসে।
চারুর সামনে এসে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,’ কোথায় যাও?’
‘ আপনার উডবি ওয়াইফের ফরমাইশ পূরণ করতে যাই। দেখুন।’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল চারু।
ধ্রুব চারুর হাত থেকে ট্রে নিয়ে নিজের রুমে হাঁটা ধরল। চারু চমকে উঠে বলল,’ এদিকে যাচ্ছেন কেন?’
‘ চুপচাপ আমার সাথে আসো। যুথির কোন অর্ডার পালন করার দরকার নাই।’
এক হাতে ট্রে ও আরেক হাতে চারুর হাত ধরে টেনে ধ্রুব নিজের রুমে এলো। চারু কে দেখে সবাই ভাবি বলে চিৎকার করে উঠল। ওর খোঁজখবর নিতে লাগল।
যুথি চারু কে আসতে না দেখে নিচে এলো খোঁজ নিতে কিন্তু চারু কোথাও নেই এদিকে ধ্রুবর রুমের দরজা ভেতরে থেকে লক যুথির গলা শুকিয়ে এলো চারু আর ধ্রুব রুমের ভেতরে নয়তো?
যুথি ধ্রুবর রুমের দরজায় হাত রাখল থাপ্পড় দিতে লাগল পরপর।
কিন্তু সাড়া শব্দ নেই। পেছনে থেকে যুথিকে ডাকল ধ্রুবর ফ্রেন্ডস রা। যুথি কপাল কুঁচকে তাকাল সবাইকে বাইরে দেখে বলল,’ ধ্রুব কোথায়?’
‘ধ্রুব তো বাইরে তোমাদের হলুদের প্যান্ডেল সাজাচ্ছে।’
যুথি অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল,’ কিহ?’
যুথি ধ্রুবর রুম ছেড়ে বাইরে পা বাড়াল। সত্য মিথ্যা যাচাই করতে। এইদিকে ধ্রুবর বন্ধুরা দরজায় টোকা দিয়ে বলল,’ দোস্ত প্রেম শেষ করে তাড়াতাড়ি বের হও যুথি সিআইডি হয়ে ফিরে এলো বলে।’
চারু ধ্রুব রুমে চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব ওকে টেনে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে ওর মাথায় হলুদ দুপাট্টা ঘোমটা টেনৈ দিয়ে দিল পেছনে থেকে। চারু মুখের আনন্দের কোন ছাপ নেয়। ধ্রুব পেছনে থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে চারুর কাঁধে একটা চুমু খেয়ে বলল,’ আমাদের তো হলুদ হয়নি আজকে আমাদের হলুদ হবে।’
চারু মাথা থেকে ওড়না ফেলে ধ্রুবর দিকে ফিরে চোখে চোখ রেখে সিরিয়াস কন্ঠে বলল,’ আপনি সত্যি করে বলুন তো কি চান?’
ধ্রুব চারুর কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল,’ আমি শুধু তোমাকে চাই।’
চারু ধ্রুবর হাত সরিয়ে দিয়ে নিজেকে ধ্রুবর থেকে ছাড়িয়ে বলল,’ শুধু আমাকে চাইলে এই বিয়েতে আপনি এতো ঠান্ডা থাকতে পারতেন না।’
ধ্রুব বলল,’ আজকের রাতেই আমি আম্মুকে সব জানব। আমার সব প্ল্যান করা শেষ।’
‘ তারমানে আপনার আর যুথি আপুর হলুদ হবে?’
‘ তোমার কি আমার উপর বিশ্বাস নেই?’
‘ আমার বিশ্বাস এর সুযোগ নিয়ে কত কিছুই তো করছেন? কিন্তু আপনি আজ কিছু না করলে আমাকে কাল সকালে এই বাসায় পাবেন না। মনে রাখবেন একবার এই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে আমি মরে গেলেও এই বাসায় এবং আপনার জীবনে ফিরে আসব না। আমি এতো দয়ালু না যে নিজের স্বামীর ভাগ কাউকে দেব এবং সতীনের সংসার করব।’
চলবে…..
#প্রেমনেশা
#নন্দিনী_নীলা
৪৫.
বাগানে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। যুথি পার্লার থেকে রেডি হয়ে এসেছে। আসার পর থেকেই বিভিন্ন ভাবে পোজ দিয়েই চলেছে। বাগানে সবাই আছে নেই শুধু ধ্রুব। চারু নিজেও বাগানেই আছে। ওকে একটার পর একটা কাজ দিচ্ছে যুথির মা। সেগুলো করতে করতেই নাজেহাল অবস্থা। চারু একবার বাসার ভেতরে গিয়ে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করতে চাইছে কারণ ধ্রুব ওকে বলেছে এখন ও মাকে সব জানাবে। ভেতরে কি হচ্ছে সেই নিয়ে চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছে চারু। চারু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে উঠছে।
চারু বারবার ওড়নার কোনা দিয়ে কপাল গাল মুছে নিচ্ছিল। চারু বাসার ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দেখল ধ্রুব সাদা পাঞ্জাবি পরে এগিয়ে আসছে ওর হাত ধরে আছে মা। চারু পা থামিয়ে সরে দাঁড়াল। ধ্রুব মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে না ধ্রুব কিছু জানাতে পেরেছে। তাহলে কি ধ্রুব এখনো কিছুই জানায় নি। চারু চোখমুখ কঠিন করে ফেলল। পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল একই স্থানে। ধ্রুব মা ধ্রুব কে আর যুথি কে স্টেজে পাশাপাশি বসিয়ে নিজে সবার আগে দুজনের গায়ে হলুদ ছুঁইয়ে নিল। তারপর দুজনকেই মিষ্টি খাইয়ে দিল। চারুর চোখজোড়া টলমল করে উঠল। ধ্রুবর নজর ওর দিকে আছে নাকি জানা নেই কিন্তু চারু পলক ফেলতে পারছে না। তারমানে ধ্রুব এই বিয়েটা করবে। চারু না দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না এখানে থেকে চলে যেতে পারছে। ওর পা জোড়া এখানেই আটকে পরেছে। বুকের ভেতর দহন যন্ত্রণায় পেটে যাচ্ছে ধ্রুব কিভাবে পারছে এসব করতে। তারমানে স্পষ্ট ধ্রুব ওকে ঠকিয়েছে। ওকে দেখানো প্রত্যেকটা ওয়াদা ধ্রুব মিথ্যা নিয়েছে। এই বাসায় ওকে বউ করতে না কাজের বুয়া করতে নিয়ে এসেছিল ও কি বোকা ওই প্রতারকের কথায় বিলিভ করে দিনের পর দিন আশার আলো দেখেছে
চারুর সব কিছু এলোমেলো হয়ে আসছে। চারুর এখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কি করবে ও এখন ও যদি এখন চিৎকার করে সব সত্যি জানিয়ে দেয় কেউ কি ওর সঙ্গ দিবে? ধ্রুব যদি ওর সাথে সমস্ত সম্পর্ক অস্বীকার করে। চারু আর কিছুই ভাবতে পারছে না। নিজেকে ওর পাগল পাগল লাগছে দ্বিতীয় বার ধ্রুবর কথায় রাজি হয়ে খুব বড়ো অন্যায় করে ফেলেছে ও এখন কি করবে কোথায় যাবে। পেছনে থেকে কেউ হঠাৎ ওকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে বলল,’ রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে আছো কেন সরো যত্তসব।’
ধাক্কা কতোটা জোরে ছিল চারু জানে না কিন্তু ও ভেতরে থেকে খুব দূর্বল ও ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছিল। চারু হেলে গেল না শুধু নিচে পরে গেল মেয়েটা সেদিকে খেয়াল না করেই চলে গেল। এইদিকে চারু নিচে পরেই অজ্ঞান হয়ে যায়। প্রিয় মানুষ কে আরেকজনের সাথে থেকে ও নিজের অনুভূতি কোনভাবেই সামলাতে পারছে না। চারু নিচে পরে অজ্ঞান হয়ে গেছে এইদিকে ওর দিকে কারো খেয়াল নেই। সবাই বর বউ কে নিয়ে নাচানাচি মাতামাতি করছে।
যুথি আর ধ্রুব কে হলুদ দেওয়া শেষ হলে বাকিরা হলুদ নিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে লাগে। ধ্রুব মায়ের দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছে। কিন্তু তিনি নিরব ওকে যেন পাত্তাই দিচ্ছে না। ধ্রুব এদিকে ওদিকে পলক ফেলে চারু কে খুঁজছে খুব কষ্ট পেয়েছে চারু একটু আগেও তো ওই দূরে দাঁড়িয়ে ছলছল চোখ এ ওর দিকে চেয়ে ছিল হঠাৎ কোথায় গেল। ধ্রুবর বুকের ভেতরটা আনচান আনচান করছে। ধ্রুব হাঁসফাঁস করে চট করেই উঠে দাঁড়াল ধ্রুব কে উঠে দাঁড়াতে দেখেই ওর মা ধ্রুবর হাত শক্ত করে চেপে ধরল। ধ্রুব অসহায় মুখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’ আম্মু প্লিজ যেতে দাও। চারু খুব কষ্ট পেয়েছে আমার ওর কাছে যাওয়া দরকার।’
ধ্রুবর মা ধ্রুবর হাত শক্ত করে ধরে টেনে বসিয়ে বলল,’ তোমাকে কি বলেছি আমি? অনুষ্ঠানে কোন সিনক্রিয়েট করবে না।’
‘ তোমার কথায় শুধুমাত্র আমি এখানে এসে বসেছি নয়ত কেউ আমায় এখানে বসাতে পারত না।’
বলেই ধ্রুব মায়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। ধ্রুব নিজের মাকে সব জানিয়ে দিয়েছে কিন্তু তিনি সব জানার পর ও কেমন নিস্তব্ধ কোন রিয়েকশন নেই উল্টো ওকে আদেশ দিয়েছে হলুদ সন্ধ্যা যেন নষ্ট না হয়। কি আজব এসব কী হচ্ছে ও তো ভেবেছিল সব জানার পর মা অনেক রিয়েক্ট করবে কিন্তু এ তো শান্ত আর শুধু কী শান্ত ওকে কিছুই বলল না উল্টো সব জানার পর ও ওকে যুথির সাথে হলুদে বসতে বাধ্য করল। চারু হয়ত ওকে ভুল বুঝেছে ও হয়ত ভেবেছে আমি কিছুই জানায় নি। ধ্রুব নাচ পেরিয়ে বের হতেই পারছে না। নাচের মাঝখানে এসে ঝামেলায় পরেছে এখন সবাই ওকে নিয়ে নাচতে শুরু করে দিয়েছে।
ধ্রুব রাগে মন চাচ্ছে সব কটাকে ধরে আঁচড়াতে কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে সবটা সহ্য করতে হচ্ছে। ধ্রুব অনেক কষ্টে ভীড় ঠেলে বের হতেই ধ্রুবর এক কাজিন চিৎকার করে উঠে। তার চিৎকার এ সবাই হইহুল্ল থামিয়ে দেয়। ধ্রুব নিজেও চমকে উঠে কি হয়েছে ভেবে। এমন জোরে চিৎকার দিয়েছে সবাই ভয় পেয়ে যায়।
ধ্রুব এগিয়ে এসে কাজিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ কি হয়েছে এমন জোরে চিৎকার করেছিস কেন?’
একজন এসে বলল,’ এই ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিস তোরে সাপে কাটলো নাতো..!’
ভীতু মুখ করে বলল আরেকজন।
ধ্রুব এগিয়ে এলো মেয়েটার কাছাকাছি তখনি ওর নজর গেল নিচে উপুড় হয়ে করে থাকা চারুর দিকে। চারু কে ঘাসের উপর উপুড় হয়ে পরে থাকতে দেখে ধ্রুবর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যেন। ধ্রুব হতবিহ্বল চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে। আরো কয়েকজন এগিয়ে এসেছিল তারা চারু কে দেখে বলল,’ আরে এই মেয়েটার কি হয়েছে? এভাবে পরে আছে কেন? একটু আগেও না দেখলাম এখানে দাঁড়িয়ে ছিল।’
যে মেয়েটা চারু কে ধাক্কা দিয়েছিল তার নাম নদী মেয়েটা ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে। ওর ধাক্কা খেয়ে মেয়েটা মরে টরে গেল নাকি? নদী শুকনো ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে চোরের মতো মুখ করে। এদিকে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ধ্রুব চারু কে বুকে জড়িয়ে নিল হাঁটু গেড়ে। চারু কে উতলা হতে দেখে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে গেল। সবাই কানাঘুষা করতে লাগল সামান্য একটা মেড এর জন্য ধ্রুব কেন এতো অস্থির হচ্ছে। ধ্রুব অস্থিরতা দেখে কেউ এগিয়ে না এলোও ধ্রুবর ফ্রেন্ডস রা এগিয়ে এলো আর চারু কে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার পরামর্শ দিল। ধ্রুবর তখন কারো দিকে চেয়ে দেখার টাইম নেই ধ্রুব চারু কে পাঁজাকোলা করে দৌড় বেরিয়ে গেল। এইদিকে যুথি চোখ মুখ শক্ত করে ধ্রুবর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। ধ্রুবর মা ছেলেকে আটকাতে এসেও আটকানোর সুযোগ পেল না।
ধ্রুব অস্থির হয়ে পায়চারী করছে। চারু কে দেখছে ডক্টর। চারুর মুখটা দেখলেই অপরাধে জর্জরিত হয়ে পড়ছে ধ্রুব। ধ্রুবর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ভয়ে। ধ্রুব ভয়ে রুমে ঢুকতে পারছে না। ধ্রুবর ফ্রেন্ড এসে ওকে জোর করে ভেতরে নিয়ে এলো। ডক্টর কয়েকটা রক্ত পরীক্ষা দিল চারুর। ধ্রুব ডক্টর কে জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না কি হয়েছে চারুর। চারুর এই অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী মনে করছে শুধু ওকে যুথির সাথে হলুদে বসতে দেখেই এই অবস্থা হয়েছে চারুর এই কষ্ট ও সহ্য করতে পারেনি হয়ত।
ধ্রুবর চারুর পাশে বসে আছে চারুর জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু চারু ওর সাথে কথা বলছে না। ঘাড় অন্য দিকে ঘুরিয়ে রেখেছে। ধ্রুব কীভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না। চারুর সামনে তাই মুখ বন্ধ করে বসে আছে।
নার্স এসে খবর দিল ডক্টর ডাকছে। রিপোর্ট হয়ত তৈরি হয়ে গেছে। ধ্রুব উঠে দাঁড়াল ফের আবার বসে চট করেই চারুর হাত টেনে ধরল। চারু ঝামটা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিল।
ধ্রুব অসহায় কন্ঠে বলল,’ চারু আমি আম্মুকে সব জানিয়ে দিয়েছি। বিলিভ করো।’
চারু রাগান্বিত চোখে তাকাল ধ্রুবর দিকে তারপর বলল,’ মিথ্যে কথা কেন বলছেন?’
‘ আমি মিথ্যে কেন বলব?’
‘ আপনি আন্টি কে সব জানালে সে আপনাকে যুথি আপুর সাথে হলুদে বসাবে কেন?’ রেগে বলল চারু।
‘ সেটা আমিও জানি না চারু। আম্মু সব জানার পর একটুও অবাক হয়নি। আমাকে আমাদের বিষয় কোন কথাই জিজ্ঞেস করেনি। আম্মু এমন ভাবে কথাটা ইগনোর করল যেন তিনি কিছুই শুনে নি। তারপর আমাকে বললেন আমি যেন চুপচাপ এখন বাইরে হলুদে এ্যাটেন্ট করি।’
চারু বিশ্বাস করল কিনা ধ্রুবর কথা ধ্রুব জানে না ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চারুর রুম থেকে বেরিয়ে ডক্টরের সাথে কথা বলতে গেল তার কেবিনে।
ডক্টর সাহানা ধ্রুব কে চেয়ারে বসার জন্য বললেন। ধ্রুব কাঁচুমাচু মুখে বসে আছে চারুর কি হয়েছে সেই ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে আসছে। ধ্রুবর গালে তখনো হলুদে লেগে আছে ডক্টর সেদিকে কপাল কুঁচকে চেয়ে ধ্রুব কে জিজ্ঞেস করলেন,’ পেশেন্টের সাথে আপনার সম্পর্ক কি?’
ধ্রুব ডক্টর সাহানার চাহনি দেখে ইতস্তত বোধ করতে লাগল। দেখতে পেল টেবিলের এক পাশে টিস্যু বক্স রাখা ধ্রুব চট করেই টিস্যু নিয়ে গাল মুছে নিল।
তারপর উত্তর দিল,’ জি চারু আমার ওয়াইফ।’
ধ্রুবর কথা শুনে ডক্টর সাহানা খুশি হলো বোধহয় তিনি গম্ভীর মুখটায় হাসি এনে বলল,’ অভিনন্দন আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট।’
#চলবে….