#প্রেমমোহ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১৪
গাড়ি থেকে নামতেই আসু এবং নীলুর সাথে দেখা হয়ে গেল শুভ্রতার। সাকিব হঠাৎ করেই শুভ্রতার হাতে একটা কাগজ গুঁজে দিলো। শুভ্রতা সাকিবের এমন কাণ্ড দেখে চোখ বড় বড় করে আশে পাশে তাকালো। সেই সুযোগে সাকিব গাড়িতে উঠে গাড়ি ছেড়ে দিল। শুভ্রতা সেখানেই ঠাঁই মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। আসু শুভ্রতার সামনে গিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
–” এই চিঠি তোকে কেন দিল সাকিব? এইটাতো নীলুর চিঠি।”
আসুর কথা শোনে শুভ্রতা তাকালো নীলুর দিকে। বেচারি লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। শুভ্রতার মাথায় কিছু আসছে না। নীলু তো হিন্দু তাহলে ওদের প্রেম ভালোবাসা সম্ভব কিভাবে? তাহলে কি সাকিব এই কারণেই বারবার বলছে তাদের ভালোবাসা কেউ মানবে না? শুভ্রতা আর ভাবতে পারছে না সে কাগজ মেলিয়ে পড়তে লাগলো,
শুভ্রতা/ ছোট বোন,
প্রথমেই কানে ধরছি তোমার কাছ থেকে এত বড় সত্যতা আড়াল করার জন্য। যেদিন তোমাকে আমি প্রথম দেখেছি সেদিনই তুমি আমার মনে ছোট্ট বোনের অধিকার নিয়ে গেছো। তোমার প্রতি আমার ফিলিংস শুধু একজন ভাই ও বোনের যেমন থাকার কথা তেমনই। যখন শুনলাম তুমি পড়তে চাও তখন তো আমি খুশিতে প্রায় পাগল হবার উপক্রম। আম্মুকে বলে তোমাকে এই ভার্সিটি আমিই ভর্তি করিয়েছি কারণ নীলাভি এই ভার্সিটিতে আছে। আর তোমাদের ডিপার্টমেন্টও একই। জানো বোন, এই বাচ্চা মেয়েটাকে আমি চারটা বছর ধরে ভালোবাসি। সেও হয়তো আমায় ভালোবাসে কিন্তু আমাদের ভালোবাসার মাঝে দেওয়াল শুধু একটাই তা হলো ধর্ম। আম্মুকে একবার বলেছিলাম নীলুর কথা কিন্তু আম্মু সোজা সাপ্টা বলে দিয়েছে এই সম্পর্ক কিছুতেই হতে পারে না। তুমি তো জানো আমি কত পাগল আমার ভালোবাসার মানুষটির জন্য। এখন প্লিজ তুমি আমাকে সাহায্য করো যেকোনো উপায়ে আমার নীলুকে চাই। তোমাকে আম্মু ভীষণ ভালোবাসে প্লিজ তুমি আম্মুকে বুঝিয়ে বল।
ইতি তোমার লাজুক, অকেজো বড় ভাই।
চিঠিটা পড়ে শুভ্রতা কি করবে বুঝতে পারছে না। কিন্তু তাকে তো কিছু করতেই হবে। ভাবতে ভাবতে নীলুর দিকে তাকালো। নীলু অসহায়ের ভঙ্গীতে তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলল,
–” এখন আপাতত ক্লাসে চল। পরে ভেবে দেখছি আন্টিকে কিভাবে রাজি করানো যায়।”
নীলুর চোখে মুখে খুশির আভা। সে শুভ্রতার গলা জড়িয়ে ধরে দু’গালে চুমু দিয়ে বলল,
–” প্লিজ আমার লাইনটা ক্লিয়ার করে দে শুভ। তোর ওই অকর্মার ঢেঁকি ভাইয়াকে ভীষণ ভালোবাসি।”
–” আমার ভাই ভীষণ ভালো। খবরদার এইসব বলবি না।”
–” ঘোড়ার ডিম ভালো। জানিস এই জীবনে এখনও সামনাসামনি কথা বলেনি। এই ডিজিটাল যুগেও সে চিঠি আদান প্রদান করে। চিঠির মাধ্যমেই প্রেমের প্রস্তাব দেয় কিন্তু সরাসরি বললে নাকি তার লজ্জা লাগে। আচ্ছা তোর ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হলে ফুলসজ্জা রাতেও কি সে চিঠি আদান প্রদান করবে?”
শুভ্রতা এবং আসু চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রইল নীলুর দিকে। যেখানে তাদের সম্পর্কই মানা হচ্ছে না সেখানে বিয়ে তো বিলাসিতা কিন্তু এই মেয়ে ডাইরেক্ট ফুলসজ্জার দিকে চলে গেছে। আসু এবং শুভ্রতার বড় বড় চোখ দেখে নীলু বিরক্তি নিয়ে আবারো বলল,
–” আশ্চর্য । এতে অবাক হওয়ার কি আছে। জানিস প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে । স্বপ্ন পূরণ হোক আর না হোক স্বপ্ন দেখতে তো বারণ নেই। আমি তো এই লাজুক ছেলেটিকে নিয়ে রাতে দিনে সব সময় স্বপ্ন দেখি। খেতে বসলেও স্বপ্ন, পড়তে বসলেও স্বপ্ন , হাঁটতে থাকলেও স্বপ্ন।”
নীলুর কথার মাঝে কথা কেড়ে নিলো আসু। মুখ ভেংচি কেটে বলতে লাগলো,
–” বইন জানি, তুই গোছল করতে গেলেও স্বপ্ন দেখিস, এক নম্বর , দুই নম্বর করতে গেলেও স্বপ্ন দেখিস সো আর বলতে হবে না আমরা বুঝে গেছি।”
শুভ্রতা আসুর কথা শোনে জোরে জোরে হাসতে লাগলো। নীলু রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেল। পিছু পিছু আসু এবং শুভ্রতাও যেতে লাগলো।
দূর থেকে সন্দিহান নজরে শুভ্রতার হাসির দিকে তাকিয়ে আছে স্পন্দন। যে বুঝতে পারছে না শুভ্রতার হাসির কারণ। এইভাবে হাসতে সে কখনোই দেখে নাই শুভ্রতাকে। তবে হ্যাঁ সে শুভ্রতার হাতে একটি কাগজ দেখতে পেয়েছে। মাঝ রাস্তায় সবার সামনে এইভাবে হাসছে শুভ্রতা যা স্পন্দনের একটুও ভালো লাগেনি। সে চায় না শুভ্রতা অন্য কোনো ছেলের সামনে হাসুক। শুভ্রতা শুধু তার সামনে হাসবে। এখন তার ইচ্ছা করছে শুভ্রতার দুই ঠোঁটে স্কস্টিপ লাগিয়ে দিতে যেন আর হাসতে না পারে। নিজেকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে সামলিয়ে অন্তুকে ফোন দিল,
–” হ্যাঁ স্পন্দন বল?”
–” আজকে থেকে তুই শুধু শুভ্রতার দিকে নজর রাখবি। কোনো ছেলে যদি ওর আশে পাশে ঘুরে সোজা আমাকে জানাবি ওকে?”
মুখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল অন্তু,
–” কেনো রে? প্রেমে পড়ে গেছিস নাকি?”
–” প্রেম আর আমি? দুইটা একত্রে যায় না অন্তু। আসলে শুভ্রতা আমার ওনলি ওয়ান চাচাতো বোন তাই ওর উপরে নজর রাখছি, এক্সট্রা কেয়ার করছি হাজার হোক চাচাতো বোন। চাচ্চু আমার সাথে যা করেছে তার শাস্তি তো বেচারি মেয়েটার উপরে দিতে পারি না। তো রাখছি বায়।”
স্পন্দন ফোন কেটে দিয়ে গাড়ি নিয়ে অফিসে চলে গেলো। অন্যদিকে অন্তু মুচকি হেসে আবারো তার কাজে মনোযোগ দিল।
ক্লাসের বলা স্যারদের লেকচার কিছুই শুভ্রতার মাথায় আসছে না। ওর একটাই চিন্তা কিভাবে নীলু ও সাকিবকে এক করতে পারবে। যেহেতু সে নতুন তার উপর এত বড় দায়িত্ব। আন্টি কি মেনে নিবে এইসব? যেখানে ছেলেকেই বারণ করে দিয়েছে। মাথা ধরে যাচ্ছে তার। প্রেম ভালোবাসা যে এতটা ভেজাল, ফরমালিন যুক্ত জানলে কিছুতেই এত বড় দায়ভার নিত না। হঠাৎ তার মাথায় স্পন্দনের কথা আসলো। কিন্তু স্পন্দন যে ধরনের ছেলে কিছুতেই তার সাথে একমত হবে না। ভাবনা চিন্তায় এতটাই ব্যস্ত যে স্যার যে তার সামনে সেদিকে কোনো খেয়ালেই তার নেই।
–” শুভ্রতা! এই শুভ্রতা? আজব তো কথা কেন বলছেন না? স্পন্দন তো বলেনি মেয়েটা কানে শোনে না , কথা বলতে পারে না। আজকেই শয়তানটাকে ইচ্ছা মত ধোলাই দিবো।”
স্পন্দনের নাম শোনে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসলো শুভ্রতা। সামনে স্যারকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে চুপ বনে গেলো। আসু তো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আসুর তাকানো দেখে অন্তু কথা না বাড়িয়ে আবার পড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। নীলু তখন শুভ্রতার কানে ফিসফিস করে বলল,
–” চুপ থাক। স্যার জানবে তুই কানে শুনিস না। এই আসুর না হওয়া প্রেমিক ভীষণ রাগী। জন্মের পর মনে হয় শালার মুখে নিমপাতা দেওয়া হয়েছিল। মধু দিলে কথা মধুর মতোই হতো।”
আসু রাগী কণ্ঠে বলল,
–” ও একদম অমন না। পাঁচটা বছর ধরে চিনি জানি। ভাইয়ার খুব ভালো বন্ধু। আমাদের বাসায় তো প্রাই যেত। ভীষণ দুষ্টু এবং চঞ্চল ছিলেন উনি কিন্তু হঠাৎ করেই এমন ভিলেন মার্কা স্টাইল কেন নিলেন কে জানে। এমন স্টাইল তো শুধু স্পন্দন ভাইয়ার। আমার জীবনেও কখনো তাকে দুষ্টুমি করতে দেখেনি। গোমড়া মুখ লোক ছিলেন। দেখতে ভালো কিন্তু গম্ভীর থাকার কারণে প্রেমে পড়িনি।”
শুভ্রতা যেন এদের কথা শোনে আকাশ থেকে পড়ছে। স্পন্দনকে কিভাবে চিনে ওরা। জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকাতেই নীলু ভাব নিয়ে বলল,
–” তোকে বুঝিয়ে বলছি, আসুর বড় ভাইয়ের নাম আশিক, তো আশিক ভাইয়া, আমাদের অন্তু স্যার এবং স্পন্দন নামের লোকটি ওরা তিনজন একত্রে পড়াশোনা করতো। ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তবে তাদের দলে শুনেছি আরো অনেকজন ছিল কিন্তু এই তিনজন ছিল নামকরা বন্ধু। আশিক ভাইয়ের খাতিরে স্পন্দন ভাইয়া এবং অন্তু স্যার প্রায় যেতেন আসুদের বাসায়। আসু প্রথম স্পন্দন ভাইয়াকে প্রপোজ করছিল। যেদিন প্রপোজ করছিল সেদিন দু’গালে চারটা থাপ্পড় মেরেছিল স্পন্দন ভাইয়া। সেই কারণেই আসু স্পন্দন নামক মানুষটির থেকে দূরে থাকে আর এখন তো অন্তু স্যারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।”
শুভ্রতা চোখ দুটো বড় বড় করে ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দিয়ে বলল,
–” নীলু, সাকিব ভাইয়ের ছোট ভাই কিন্তু স্পন্দন।”
–” কিঃ?”
–” হুম। এই খচ্চর, জল্লাদ লোকটা ভীষণ খারাপ। আমাকে তো দেখতেই পারে না দু’চোখে। শালা এক নম্বরের খাটাস।”
–” আপনারা তিনজন দাঁড়ান। অনেক্ষন ধরে ফলো করছি। ভাবছিলাম মাঝের মেয়েটা বোবা কিন্তু এখন দেখি মুখে খুব জোর। আজ আপনাদের ভয়ানক শাস্তি আছে। দাঁড়ান তাড়াতাড়ি।”
অন্তুর ধমক খেয়ে নীলু, আসু এবং শুভ্রতা দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে বলছে,
–” যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।”
চলবে,
বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। রি-চেইক করা হয়নি।