প্রেমময়ী তুমি পর্ব-৩৪+৩৫

0
524

#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_৩৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

“গিফট’স গুলো সাদমান তোমার জন্য পাঠিয়েছে! আমাদের সাথে সে আসতে পারেনি কিছু ব্যস্ততার কারণে৷ তাই শুভেচ্ছা হিসেবে এই গিফট’স গুলো তার তরফ থেকে তোমার জন্য পাঠানো! পছন্দ হয়েছে তো গিফট’স গুলো?”

নাক-মুখ কুঁচকালো চাঁদ। দৃষ্টিতে তার দুর্দান্ত অবুঝ ভাব! ভ্রু যুগল সংকুচিত করল চাঁদ। নির্লিপ্ত গলায় নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“সিরিয়াসলি? সাদমান ভাই আমার জন্য গিফট’স পাঠিয়েছে?”

সুঠাম বুকের পাঁজরে হাত গুজল নূর। বৃদ্ধা আঙুল দ্বারা নাক ঘঁষলো। ভাবলেশহীন গলায় বলল,,

“ইয়াহ্। অ্যানি ডাউট’স?”

“ইয়াহ্ অফকোর্স। ডাউট তো হবেই! সাদমান ভাই হঠাৎ আমার জন্য গিফট’স পাঠাবেন কেন?”

নূর মনে মনে শ্লেষাত্মক হাসল! উপরে উপরে তৎপর ভাব ফুটিয়ে বলল,,

“আশ্চর্য। সাদমান তোমার জন্য গিফট’স পাঠাবে না তো কার জন্য পাঠাবে? হাজার হোক সাদমান তো তোমার আশিক হয় তাই না?”

চাঁদ ভড়কালো। বিস্ময়াত্নক দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো৷ সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“আশিক হয় মানে? কী বলছেন আপনি এসব?”

নূর বিষয়টাকে সূক্ষ্মভাবে এড়িয়ে গেলো! বুকের পাঁজর থেকে হাত জোড়া নামিয়ে নিলো। সরু দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। কিয়ৎক্ষণ একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হেয়ালি গলায় বলল,,

“এসব ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা! তুমি চাইলে তোমার ডাউট’স গুলো সাদমানকে কল করে ক্লিয়ার করতে পারো! আমাকে জেরা করে কোনো লাভ নেই।”

চাঁদের মন পরীক্ষা করতে চাইল নূর! আদোতে চাঁদ সাদমানের সাথে যোগাযোগ করতে চায় কিনা তা কনফার্ম করতে চাইল। যদি সাদমানের প্রতি চাঁদের কোনো ইন্টারেস্ট থাকে তাহলে সে অবশ্যই সাদমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে। আর যদি না থাকে তাহলে তো নূর জিতেই গেল তার চ্যালেঞ্জে! শরীরের সমস্ত শক্তি ছেড়ে নূর ড্রয়িংরুমের সোফায় হেলান দিয়ে বসল। চুলগুলো টেনে ধরে দরজায় নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা চাঁদের দিকে ধারালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! তৎক্ষণাৎ চাঁদ শুড়শুড়িয়ে হেঁটে নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

“আমি আপনার একটা কথাও বিশ্বাস করিনা বুঝেছেন? আপনারা আগা গোড়া পুরোটাই ভণ্ডামি!”

“এই ভণ্ড ছেলেটাকেই তোমার সহ্য করতে হবে বুঝলা? আর এই ছেলটাকেই শেষ পর্যন্ত তোমার বিশ্বাস করতে হবে।”

নূরের কথায় চাঁদ পাত্তা দিলো না। দ্রুত পায়ে হেঁটে জায়মার রুমের দিকে অগ্রসর হলো। সামনে থাকা টি-টেবিলটার উপর পা রেখে নূর টিভির রিমোটটা হাতে তুলে নিলো। টিভিতে স্পোর্টস চ্যানেলটা চালু করে রিমোটটা মাথার পেছনে রাখল। স্বাভাবিক গলায় চাঁদকে লক্ষ্য করে বলল,,

“জায়মার কাছে গিয়ে কোনো লাভ নেই বুঝলা? জায়মা এই সম্পর্কে তোমাকে কিছু বলতে পারবেনা। আমার পাশে বসো। আমি তোমাকে সব ডিটেলসে বলছি!”

চাঁদ পিছু ঘুরে তাকালো। রূঢ় গলায় বলল,,

“আপনার পাশে বসার থেকে ডাস্টবিনের একটা কোণায় ভালো!”

তাৎক্ষণিক নূর আরাম ছেড়ে সোজা হয়ে বসে পড়ল! মৃদু আওয়াজে বলল,,

“কী বললা তুমি? আমি কি ডাস্টবিনের চেয়েও নোংরা?”

“তা নয়তো কী? আসার পর থেকেই আমার সাথে নোংরামি করে চলছেন! নিজে নোংরামি করে আবার সেই নোংরামির দোষগুলো আমার ঘাড়েও চাপাচ্ছেন। চালাকের শেষ সীমানা আপনি!”

“কানটা ধরে এনে এখন আমার মাথা টিপাব। তখন বুঝবা ঠেলা! ভদ্র ভাষায় কথা বলছি তো তাই গাঁয়ে লাগছেনা।”

“এটাকে ভদ্র ভাষা বলে হ্যাঁ? কান ধরে টেনে এনে মাথা টিপানোকে ভদ্র ভাষা বলে?”

“তোমার জন্য এটাই ভদ্র ভাষা! ভালো কথার মানুষ না তুমি!”

“আমি এক্ষণি গিয়ে খালামনির কাছে বিচার দিব! আপনি সবসময় আমার সাথে এমন করেন। কারণ ছাড়াও এমন করেন। কারণ থাকলেও এমন করেন।”

মুখ ফুলিয়ে চাঁদ পিছু ঘুরলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে দরজার কাছে এগিয়ে যেতেই নূর দৌঁড়ে এসে পেছন থেকে চাঁদকে টাইট করে আঁকড়ে ধরল! তীক্ষ্ণ গলায় বলল,,

“এই সামান্য বিষয়টা নিয়েও আম্মুকে বিচার দেওয়া লাগে? আমি তোমাকে মারছি না কাটছি কোনটা?”

চাঁদ ছটফট করে উঠল নূরের বলিষ্ঠ গাঁ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। নিরুপায় হয়ে হাত-পা ছুড়াছুড়ি করতে লাগল সে। নূর কিছুতেই চাঁদকে ছাড়ল না। আরও শক্তভাবে চাঁদকে আঁকড়ে ধরল।বুকের সাথে চাঁদের পিঠের অংশটা চেপে ধরল। চাঁদের বর্তমান হাঁসফাঁস অবস্থা দেখে নূর মনে মনে বাঁকা হাসল। নিমগ্ন হয়ে চাঁদের সর্বাঙ্গকে ফিল করতে লাগল! শেষ পর্যায়ে এসে অতিষ্ট হয়ে উঠল চাঁদ। নূরকে থ্রেড দিয়ে তেজী গলায় বলল,,

“আমি কিন্তু এখন চিৎকার করব নূর ভাইয়া।”

“করো! আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার!”

চাঁদ জোরে চিৎকার করতে গিয়েও থেমে গেল! রাগী মুখমণ্ডলে বাঁকা হাসির ছাপ ফুটিয়ে তুলল। শয়তানি বুদ্ধি মাথায় এঁটে কুটুস করে নূরের বাঁ হাতে কামড় বসিয়ে দিলো! সঙ্গে সঙ্গেই নূর ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠল। হাতের শক্ত বাঁধনটা ছেড়ে দিলো। ব্যথাযুক্ত ডান হাতটায় তাকালো। হাতে বসে গেল চার চারটে দাঁতের দাগ! চোখ লাল নূর চাঁদের দিকে তাকালো। নূরের প্রতিক্রিয়া দেখে ভয়ে ঘাবড়ে উঠল চাঁদ! এক দৌঁড়ে পিছু ঘুরে জায়মার রুমে আশ্রয় নিলো! নূর রাগে গজগজ করে চাঁদের যাওয়ার পথে তাকালো। হাতটা খানিক ঝেড়ে তটস্থ গলায় বলল,,

“জংলী কোথাকার! একবার সামনে পাই তোমায়, এই কামড়ের শোধ আমি কড়ায় গণ্ডায় নিব। নূর কী জিনিস তুমি হারে হারে টের পাবে।”

বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে জায়মা। শরীরটা তার বড্ড ক্লান্ত। এরমধ্যেই রুমে হঠাৎ চাঁদের আগমন ঘটল। পায়ে হাঁটার শব্দ পেয়ে জায়মা শোয়া থেকে ওঠে বসল। চাঁদের ভয়ার্ত মুখমণ্ডলের দিকে তাকিয়ে ভ্রু যুগল কুঁচকালো। জিজ্ঞাসু গলায় বলল,,

“কী রে? কী হয়েছে? তোকে এমন ভয়ার্ত দেখাচ্ছে কেন?”

নিমিষেই চাঁদের ভয় উবে গেল। রাগে গটগট করে এসে জায়মার পাশে এসে বসল। জায়মার চোখে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,

“নূরের বাচ্চা নূর আমার সাথে ফান করছে। তার যন্ত্রণায় আমি অতিষ্ট হয়ে উঠেছি! এখন আমি কী করব বল?”

“মানে? বুঝলাম না কিছু?”

“বুঝবি কীভাবে? তুই তো এক নম্বরের গাঁধি! মাথায় ঘিলু আছে নাকি তোর?”

“শোন চাঁদ, আমাকে অযথা না রাগিয়ে সোজা পয়েন্টে আয়। সবকিছু ক্লিয়ারলি খুলে না বললে আমি বুঝব কীভাবে?”

“আগে বল গিফট’স গুলো কে পাঠিয়েছে?”

“কোন গিফট’স? কীসের গিফট’স?”

“গাজরা আর ডেইরি মিল্ক।”

“এহ্। আমি কীভাবে জানব তোকে গিফট’স পাঠিয়েছে কে।”

“নূরের বাচ্চা নূর বলছে সাদমান ভাই নাকি আমার জন্য এসব পাঠিয়েছে!”

লোভে জায়মার জিহ্বা লকলক করে উঠল! চোখ জোড়া লাল হয়ে উঠল। লোভাতুর গলায় বলল,,

“আচ্ছা যেই পাঠাক। ডেইরি মিল্কটা কিন্তু আমাকে ফেলে তুই খেয়ে ফেলিস না! যদি খাস তবে কিন্তু তোর পেটে ডায়রিয়া হবে! তুই কিন্তু জানিস ডেইরি মিল্ক আমার কতোটা প্রিয়।”

দাঁতে দাঁত চাপল চাঁদ। এদিক-ওদিক তাকিয়ে বিছানার উপর থেকে একটা বালিশ হাতে তুলে নিলো। মুখমণ্ডলে রাগান্বিত ছাপ ফুটিয়ে জায়মার গাঁয়ে বালিশটা ছুড়ে মারল! তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় বলল,,

“আমি আছি আমার জ্বালায়। আর তুই আছিস ডেইরি মিল্ক খাওনের ধান্দায়? এই তুই আমার বোন নাকি শত্রু হ্যাঁ? কেমন মাটি দিয়ে তোর তৈরি?”

জায়মা খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠল! ব্যগ্র গলায় বলল,,

“আরেহ্ রাগছিস কেন? তোর জন্য এই গিফট’স গুলো যেই পাঠাক না কেন তোর খাওয়ার জন্যই তো এসব পাঠিয়েছে নাকি? সো এসব নিয়ে এতো ভেবেচিন্তে কী লাভ বল? ভালোবাসে পাঠিয়েছে তো গ্রহণ করে নে। আমরা না হয় খেয়ে-দেয়ে তার জন্য বড়ো করে একটা মোনাজাত ধরব! আল্লাহ্ যেনো তাকে এমন আরো গিফট’স পাঠানোর তৌফিক দান করে সেই দো’আ করব।”

রাগে গাঁ রি রি করে উঠল চাঁদের। তাৎক্ষণিক সে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে প্রস্থান নিতে নিতে বলল,,

“তুই আর যাস আমার রুমে। যেকোনো ব্যাপারে আমার থেকে হেল্প নিতে যাস তুই। তোর দফারফা যদি আমি না করি তো আমার নামও চাঁদ নয়।”

রুম থেকে প্রস্থান নিলো চাঁদ। জায়মা জিভ কাটল। তড়িৎ বেগে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। চাঁদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলল,,

“এই চাঁদ শোন? আমি তো এতক্ষণ মজা করছিলাম তোর সাথে। কেন সবকিছু এতো সিরিয়াসলি নিস বল তো?”

কে শুনে কার কথা? চাঁদ তো অগ্নিশর্মা হয়ে নূরকে ধরার প্রয়াসে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ড্রয়িংরুমে আসা মাত্রই চাঁদ পুরো ড্রয়িংরুমটা ফাঁকা দেখল। নূরের অস্তিত্ব কোথাও খুঁজে পেলনা। গোল গোল দৃষ্টিতে চাঁদ পুরো রুমটায় চোখ বুলালো। নূরকে কোথায় দেখতে না পেয়ে চাঁদ গলা ছেড়ে হাঁক ছাড়ল। সায়মা আহমেদকে লক্ষ্য করে বলল,,

“খালামনিনিনি নূর ভাইয়াকে কোথাও দেখেছ?”

সায়মা আহমেদ রান্নাঘর থেকে জবাব নিলেন। কফিটা একটা মগে ঢেলে উদগ্রীব গলায় বললেন,,

“কেন? নূর কী এখানে নেই?”

“নেই তো খালামনি।”

“যাহ্ আমাকে যে বলল কফি করতে। ছেলেটা এখন আবার কোথায় চলে গেল?”

রাগে চাঁদ সজোরে পা ঝাড়ল! বিরক্তিমাখা গলায় বলল,,

“ধ্যাত। মাতালটা একটা ক্রিঞ্জ-ই!”

জায়মাদের ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে চাঁদ দুতলায় চলে এলো। ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই সাবরিনা আবরারকে সে ডাইনিং টেবিলে দেখতে পেল। ভাত মেখে উনি চাঁদের জন্য প্রায় অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছেন। চাঁদকে এক ঝলক দেখামাত্রই উনি মৃদু হাসলেন। নমনীয় গলায় বললেন,,

“আয় খাবারটা আগে খেয়ে নে।”

চাঁদ হাসিমুখে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। চেয়ার টেনে সাবরিনা আবরারের পাশের চেয়ারটায় বসল। মিষ্টি হেসে সাবরিনা আবরার চাঁদের মুখে লোকমা তুলে দিলেন। প্রথম লোকমাটা মুখে নিয়ে চাঁদ তৃপ্তির স্বরে বলল,,

“উমমম খালামনি। অনেকদিন পর তোমার হাতের খাবারের স্বাদ পেলাম।”

“পরীক্ষার পর বেড়াতে যাবি আমাদের বাসায়? তাহলে কিন্তু রোজ রোজ আমার হাতের খাবার খেতে পারবি।”

চাঁদ মাথাটা নুইয়ে নিলো। বিষন্ন গলায় বলল,,

“উঁহু! তোমার ছেলে আমাকে খুব জ্বালায় খালামনি!”

“কে? নূর?”

“হুম! সারাক্ষণ শুধু পায়তারা করে। ভালো লাগেনা আমার এসব।”

“কী পায়তারা করে শুনি?”

“তোমাকে বললে তুমি বিশ্বাস করবেনা!”

”একবার বলে তো দেখ।”

চাঁদ অভয় পেল। মিনমিনে গলায় বলল,,

“তোমার ছেলে আমার কানের কাছে এসে….

আর কিছু বলতে পারলনা চাঁদ। নূরের আবির্ভাব ঘটল তার পাশে! সময় ব্যয় না করে নূর চাঁদের মাথায় আস্তে করে একটা গাড্ডা মারল। মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,

“ইশশ। একটুও কমনসেন্স নেই এই মেয়েটার। কোথায় কী বলতে হয় এটাও এখনও অবধি শিখে নি। মায়ের কাছে তো এখনই সব বলে দিচ্ছিল! ছেলের আদর-ভালোবাসার কথা সব তার মায়ের কাছে বলে দিচ্ছিল। বুদ্ধি সুদ্ধি নেই নাকি এই মেয়েটার মাথায়? শুধু কি কামড়ানোর বুদ্ধিটাই হয়েছে?”

চাঁদ মাথায় হাত দিয়ে নির্বোধ দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। বিস্ময়াহত গলায় বলল,,

“মারলেন কেন হ্যাঁ? কী করেছি আমি?”

নূর গলা ঝাঁড়লো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার ডান হাতের কামড়টার দিকে ইশারা করল। বুঝাতে চাইল কামড়ের শোধ নিচ্ছে সে! চাঁদ বাঁকা হাসল৷ এক চোখ মেরে ইশারায় বলল,,

“বেশ হয়েছে! নেক্সট টাইম করবেন আমার সাথে এমন?”

নূর চোখ বড়ো করে চাঁদের দিকে তাকালো। চাঁদ ইশারায় নূরকে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকাতে বলল। চাঁদের ইশারাকে অনুসরণ করে নূর ক্ষিপ্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা সাবরিনা আবরারের দিকে তাকালো। অমনি সে শুকনো ঢোক গিলল। নরম গলায় বলল,,

“আরেহ্ মা। চাঁদ তো আমার কাজিন হয় তাইনা? তাই মাঝে মধ্যে একটু আধটু দুষ্টুমি হয়ে যায় আর কী। এরজন্য তোমার কাছে বিচার দেওয়া লাগবে হ্যাঁ? আমি কি বাইরের কেউ?”

সাবরিনা আবরার স্পষ্ট প্রতিবাদ জানালেন। কঠিন গলায় বললেন,,

“না। তুই আমার মেয়ের গাঁয়ে হাত তুলতে পারবিনা! আমার সামনে তো ভুলেও না।”

নূর মাথা চুলকালো। বিড়বিড় করে বলল,,

“তোমার মেয়ে মনে হয় বুঝে কোনটা আদর আর কোনটা মার! আদরটাকেই মার হিসেবে প্রেজেন্ট করে।”

চাঁদের দিকে একবার তীক্ষ্ণ চাহনিতে চেয়ে নূর জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। যেতে যেতে বলল,,

“মা আমি একটু আসছি।”

“আরেহ্ শোন? কোথায় যাচ্ছিস?”

“নিচে আয়মনের কাছে।”

“মাহিন কই? আসার পর থেকে তো ছেলেটাকে দেখলাম না।”

“মাহিনও নিচে আছে মা।”

নূর প্রস্থান নিলো। সাবরিনা আবরার হাসিমুখে আবারও চাঁদের মুখে লোকমা তুলে দিলেন। চাঁদ মনম’রা হয়ে লোকমাটা চিবুলো। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“আচ্ছা খালামনি নীড় ভাইয়া আসেনি?”

“এসেছে তো। সোহানীর রুমে।”

“তাহলে কী এবার সত্যি সত্যিই তোমরা আমার আপুকে তুলে নিয়ে যাবে?”

“এমনি এমনি থোরাই না নিয়ে যাব আমরা তোর আপুকে। বিশাল বড়ো বিয়ের অনুষ্ঠান করে এরপর তোর আপুকে তুলে নিয়ে যাব।”

চাঁদ মাথাটা নুইয়ে নিলো! ব্যথীত গলায় বলল,,

“খুব মিস করব আপুকে।”

,
,

সোহানী এখনও ওয়াশরুমের দরজা আটকে পড়ে আছে! নীড়ের ভয় কাটিয়ে সে কিছুতেই যেনো দরজা খুলে বের হতে পারছেনা। ভেতরে ভেতরে ছটফট করছে। এই বদ্ধ রুমে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মনে মনে নীড়কে হাজারটা গালি দিচ্ছে। গাঁয়ের শার্ট খুলে নীড় বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। ক্ষণে ক্ষণে ওয়াশরুমের দরজায় সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। সোহানীর বের হওয়ার অপেক্ষা করছে সে। চূড়ান্ত একটা শাস্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করার পর নীড় এই পর্যায়ে এসে বড্ড অধৈর্য হয়ে উঠল। রাগে গটগট করে শোয়া থেকে ওঠে বসল। তড়িৎ বেগে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। দ্রুত পায়ে হেঁটে ওয়াশরুমের দরজায় টোকা মারল। ঝাঁঝালো গলায় বলল,,

“এই সোহানী দরজাটা খোলো।”

সোহানী থতমত খেয়ে উঠল! সর্বাঙ্গ তার কেঁপে উঠল। দুড়ুদুড়ু বুকে সে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। কম্পিত গলায় বলল,,

“আপনি আগে রুম থেকে বের হোন! এরপর আমি বের হচ্ছি।”

“কী বললা তুমি? আমি রুম থেকে বের হওয়ার জন্য এই বাড়িতে এসেছি?”

“তো কেন এসেছেন? আমার মধ্যে তো আপনার এলার্জি আছে না?”

“এলার্জি আমার মধ্যে আছে নাকি তোমার মধ্যে আছে হ্যাঁ? দরজা আটকে কে পড়ে আছে? আমি না তুমি?”

“আগে আপনি রুম থেকে বের হোন। এরপর আমি বের হচ্ছি।”

“আগে তুমি ওয়াশরুম থেকে বের হও এরপর আমি রুম থেকে বের হচ্ছি!”

“না আপনি আগে।”

“না তুমি আগে।”

সোহানী হাত-পা ছুড়ে অসহ্য গলায় বলল,,

“আপনাকে আগে বের হতে বলেছি। প্লিজ নীড় ভাইয়া আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করুন।”

“কী বললা তুমি? নীড় ভাইয়া? আমি এখনও তোমার নীড় ভাইয়া হই?”

সোহানী প্রসঙ্গ পাল্টে নিলো। তিক্ত গলায় বলল,,

“যান না আপনি। প্লিজ যান। এখানে আমার অস্বস্তি হচ্ছে। শাড়ি ছাড়াও আপনার সামনে আসতে পারছিনা।”

নীড় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। ওয়াশরুমের দরজায় সজোরে এক লাথ মারল। মৃদু চিৎকার করে বলল,,

“আজ তোর বের হতে হবেনা। তুই এখানেই থাক!”

তুখার রাগ দেখিয়ে নীড় গাঁয়ের শার্টটা পড়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলো। নীড়ের রোষপূর্ণ কথা শুনে সোহানী হুড়মুড়িয়ে দরজা খুলে বের হয়ে এলো। রুদ্ধকর শ্বাস ছেড়ে রুমে প্রবেশ করল। অস্থির দৃষ্টিতে পুরো রুমে সে চোখ বুলিয়ে নীড়ের হারিয়ে যাওয়া দেখল! বিদঘুটে শ্বাস ছেড়ে সোহানী কপাল চাপড়ালো। তাড়াহুড়ো করে শাড়িটা গাঁয়ে জড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নিজেই নিজের উপর রাগ ঝেড়ে বলল,,

“ধ্যাত। নিজের ন্যাকামির জন্যই আজ লোকটাকে হারাতে হলো! কী দরকার ছিল আগ বাড়িয়ে এতো ন্যাকামি করার হ্যাঁ? ঠিক জায়গায় তো ন্যাকামি করতে পারিস না। বেহুদা জায়গায় এসেছিস ন্যাকামি করতে!”

,
,

নূর, আয়মন এবং মাহিন বাড়ির পাশের ছোট্টো একটি টং দোকানে বসে আছে। তিনজনই খুব আত্মতৃপ্তির সহিত সিগারেট ফুঁকছে। আয়েসের চরম সীমানায় আছে তারা। আশেপাশে কোনো দিকে হেল-দুল নেই তাদের। একে-অপরের সাথে কথাবার্তাও পর্যায় বলছে না। অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পর নূর নীরবতা ভাঙল। নাক থেকে ধোঁয়া বের করল। নিরাগ গলায় বলল,,

“ধ্যাত সাদমানকে সাথে নিয়ে এলে ভালো হতো। চারজনে আসরটা বেশ তেমন জমতো।

নূরের কথায় মাহিন টক্কর দিলো! ব্যগ্র হেসে হেয়ালি গলায় বলল,,

“কেন? তোকে বাঁশ দেওয়ার জন্য?”

পাশ থেকে আয়মন ভ্রু যুগল কুঁচকে মাহিনের দিকে তাকালো। উদগ্রীব গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কেন? ঝগড়া হইছে নাকি দুজনের মধ্যে?”

মাহিন ভ্রু উঁচিয়ে নূরের দিকে তাকালো। জিজ্ঞাসু গলায় বলল,,

“কী? বলব নাকি?”

নূর বিশৃঙ্খল শ্বাস ছাড়ল। আয়মনের দিকে তৎপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কোনোরূপ ভনিতা ছাড়াই সোজা সাপটা গলায় বলল,,

“দেখ আয়মন তোকে আমার একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করার আছে। আমি এবং সাদমান দুজনই চাঁদকে ভালোবাসি! আমি চাইনা চাঁদ এবং আমার মাঝখানে সাদমান আসুক।”

নূর তার অভিব্যক্তি শেষ করতেই আয়মন শার্টের হাতা ফোল্ড করে নূরের সামনে থেকে সরে গেল! একপ্রকার দৌঁড়ে সে সামনের ফ্লেক্সিলোড দোকানের দিকে অগ্রসর হলো। পেছন ফিরে মৃদু চিৎকার করে নূর এবং মাহিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“মেয়েটাকে খুঁজে পেয়েছি, আয় তোরা। আজ আমি তাকে কিছুতেই ছাড়বনা!”

#চলবে…?

#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_৩৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

“মেয়েটাকে খুঁজে পেয়েছি, আয় তোরা। আজ আমি তাকে কিছুতেই ছাড়বনা!”

নূর এবং মাহিন তাজ্জব বনে গেল। হঠকারি দৃষ্টিতে পিছু ঘুরে আয়মনের দিকে তাকালো। কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই আয়মন হনহন করে ফ্লেক্সিলোড দোকানটায় ঢুকে পড়ল। শুরু হয়ে গেল হুলুস্থুল কাণ্ড! তাশফিয়া তার দুঃসম্পর্কের কাজিনের বাড়িতে এসেছিল কিছুক্ষণ আগে। কোনো একটা জরুরি কাজে। বাড়ি ফেরার পথে তার হঠাৎ মনে হলো তার ফোনে রিচার্জ করানোটা দরকার। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে-ই এই ফ্লেক্সিলোড দোকানে তার প্রবেশ করা। আর এরমধ্যেই ঘটে গেল এই মহা কাণ্ড! যার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলনা তাশফিয়া।

তুখোর রাগান্বিত ভাব নিয়ে আয়মন এক পা দু’পা করে তাশফিয়ার দিকে এগুতে লাগল! আয়মনের রাগমিশ্রিত রক্তিম চক্ষুজোড়া দেখে তাশফিয়ার বুকটা সাংঘাতিকভাবে কেঁপে উঠল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার কাজিনের ডান হাতটা শক্তপোক্তভাবে আকঁড়ে ধরল। এক পা দু পা করে পেছনের দিকে পিছাতে লাগল! বারে বারে চোখের পলক ফেলে আয়মনের দিকে তাকাতে লাগল। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসলো। তাশফিয়ার এহেন ভীতু রূপ দেখে আয়মন বাঁকা হাসল। নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস বেড়ে গেল। ব্যগ্র গলায় বলল,,

“খুব ভয় হচ্ছে না? খুব ভয়? হয়তো ভাবছ কীভাবে এই জ’মটার সাথে আবারও দেখা হয়ে গেল? এর থেকে এবার বাঁচার উপায় কী? তবে শুনো? আজ আমার হাত থেকে তোমার কোনো রেহাই নেই! আমি যা চাইব আজ ঠিক তাই হবে। আমার ইচ্ছেতেই সব হবে।”

ভয়ে তাশফিয়ার চোখে জল জমে এলো! গলা কাঁপতে আরম্ভ করল। শরীরটা তার বিশৃঙ্খলভাবে নড়তে শুরু করল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাজিনের হাতটা সে আরও শক্তভাবে আঁকড়ে ধরল। মুখভর্তি চিপস থাকার দরুন তার কাজিন মুখ খুলে কিচ্ছুটি বলতে পারছেনা! তাশফিয়ার সাথে কম্পিটিশন করে সে দশ টাকার ডং ডং চিপসটা একত্রে মুখে পুরে নিয়েছিল! যার দরুন সে মুখে এখনো চিপসের ফ্যাক্টরি তৈরি করে রেখেছে! না পারছে গিলতে না পারছে উগলাতে! শুধু চোখ লাল করে তার ভেতরের মনোভাব আয়মনের চোখের দিকে তাকিয়ে উগলে দিচ্ছে। তাশফিয়ার ভীতিকর অবস্থা দেখে আয়মন বেশ মজা পাচ্ছে। ঠোঁটের কোণে পৈশাচিক হাসি ফুটিয়ে তুলেছে। এগুতে এগুতে তাশফিয়ার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি দেখে দোকানী আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালেন উনি। নরম গলায় আয়মনকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,

“ভাই? এখানে কী হচ্ছে একটু বলবেন? আমার কাস্টামারের সাথে আপনি এমন রাফ বিহেভ করছেন কেন?”

আয়মন দৃষ্টি ঘুরিয়ে গরম চোখে দোকানীর দিকে তাকালো। চোয়াল শক্ত করে কর্কশ গলায় বলল,,

“তুই চুপ থাক। একদম চুপ থাক। দরদ দেখাতে হলে নিজের পরিবারের উপর দরদ দেখা! বাইরের কারো প্রতি নয়। মা-বাপকে ছেড়ে তো বউ নিয়ে ভালোই সংসার করছিস। মা-বাপের খোঁজ রাখছিস? তারা কী খাচ্ছে না খাচ্ছে কোনো খবর রাখছিস? আইছে আবার কাস্টমারের প্রতি দরদ দেখাতে।”

দোকানী চুপ হয়ে গেল! মাথা নুইয়ে চেয়ারে বসে পড়ল। আয়মনের বলা সত্য কথাগুলো তার কাছে চিরতার মতো তিতকুটে মনে হলো! রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ জমাতে লাগল। নূর এবং মাহিন দৌঁড়ে এলো দোকানের ভেতরে। আয়মনের আক্রোশিত রূপ দেখে তারা দুজন-ই ভড়কালো। দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে আয়মনের দু’পাশে দাঁড়ালো। আয়মন ঘাড়ের রগ টান টান করল। ডান হাতটা উঠিয়ে তাশফিয়ার গালে চড় দিতে গিয়ে বলল,,

“জাস্ট একটা চড় ওকে? জাস্ট একটা। এই চড়টার জন্যই আমি এতগুলো মাস ধরে অপেক্ষা করছিলাম! খুব জঘন্যভাবে অপেক্ষা করছিলাম।রাস্তাঘাটে অকারণে ছেলেদের ফাঁসানোর জন্য এই চড়টা আপনার সত্যিই প্রাপ্য।”

তাশফিয়া ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। ভয়ার্ত চোখে আয়মনের দিকে তাকালো। অস্পষ্ট গলায় বলল,,

“প্লিজ না ভাইয়া। আমাকে মারবেননা প্লিজ। আমি আর কখনও কোনোদিন আপনার সাথে বেয়াদবি করবনা। আমার খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ভাইয়া! ভয় পেলে আমার শ্বাস দ্বিগুন বেড়ে যায়। এবারের জন্য আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ ভাইয়া।”

আয়মনের মধ্যে একটুও মায়াবোধ জন্ম নিলো না! সে প্রতিশোধ নেওয়ার নেশায় উদ্দত হয়ে উঠল। মনুষ্যত্ববোধ এই মুহূর্তে সে পুরোদমে জলাঞ্জলি দিলো। নূর এবং মাহিনের চোখে বিষয়টা এই পর্যায়ে এসে খুব বাঁধল! ইশারায় তারা দুজন আয়মনকে থামানোর সিদ্ধান্ত নিলো। একমত হয়ে তারা আয়মনকে থামাতে যেতেই হঠাৎ অকল্পনীয়ভাবে মাহিনের গালে পড়ল এক কড়া চড়! সঙ্গে সঙ্গেই গরম পরিবেশ বিস্ময়ে ঘনীভূত হয়ে উঠল। উপস্থিত সবার তৎপর দৃষ্টি পড়ল আঘাতপ্রাপ্ত মাহিনের দিকে। গালে হাত দিয়ে মাহিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। সবকিছু তার ঘোরের মতো আউলিয়ে গেল! তাকে চড় মারা ব্যক্তিটির দিকে অতি আগ্রহের দৃষ্টিতে তাকালো। অমনি তাশফিয়ার কাজিন “তিথী” রাগে ফোঁস করে মাহিনের দিকে তাঁকালো। কোমরে দু’হাত গুজে মাহিনের মুখোমুখি দাঁড়ালো। ঝাঁঝালো গলায় মাহিনকে বলল,,

“এই আপনারা ছেলেমানুষ নাকি অন্যকিছু? আপনাদের চোখের সামনে একটা মেয়েকে এভাবে টর্চার করা হচ্ছে, রীতিমতো তাকে থ্রেড দেওয়া হচ্ছে আর আপনারা কোনো প্রতিবাদ না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছেন? কেমন পুরুষ মানুষ আপনারা হ্যাঁ?”

সঙ্গে সঙ্গেই আয়মন হাতটা নামিয়ে নিলো। শুকনো ঢোক গিলে তিথীর দিকে তাকালো। একজনের চড় খাওয়া দেখে আরেকজন শিক্ষা পেয়ে গেল! বোধ-বুদ্ধি সব ফিরে পেল। জ্ঞানের চোখ খুলে গেল। নূর চোয়াল শক্ত করল। অকারণে মাহিনকে চড় খেতে দেখে রাগে তার ঘাড়ের রগ টান টান হয়ে উঠল। প্রখর তেজী ভাব নিয়ে সে ঘুরে এসে মাহিনের পাশে দাঁড়ালো। তিথীর দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এক্সকিউজ মি। উইদাউট অ্যানি রিজন আপনি আমার ভাইয়ের গাঁয়ে হাত তুললেন কোন সাহসে হ্যাঁ? আমার ভাই কী অন্যায় করেছিল আপনার সাথে? আপনাকে মেরেছে, কেটেছে নাকি ধরেছে কোনটা?”

তিথী ঝাড়ি দিয়ে বসল নূরকে! ঝগড়ুটে গলায় বলল,,

“আমার সাথে কিছু করেনি। তবে আমার বোনের সাথে করেছে। একটা মেয়ের সাথে সে এবং আপনি দুজনই অন্যায় করেছেন। যে মেয়েটা আপনাদের মা কিংবা বোনের মতো। এতক্ষণ তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেশ মজা নিচ্ছিলেন। কাছ থেকে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের অসম্মান দেখছিলেন। তার উপর করা টর্চার দেখছিলেন। এখন যখন সেই চড়টা নিজের টুইনের গালে এসে পড়েছে তখন খুব ক্ষমতা দেখাতে এসেছেন না? এতো দাপট কোথা থেকে এলো এখন হ্যাঁ? দেশে কি মানবতা নেই নাকি? আশেপাশের মানুষদের প্রতি কী আপনাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? কোনো কর্তব্য নেই? কেবলমাত্র নিজেদের কাছের মানুষদের উপরই সব দায়-দায়িত্ব সীমাবদ্ধ?”

নূর অগ্নিশর্মা হয়ে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

“আমার ফ্রেন্ড এমনি এমনি আপনার বোনকে অসম্মান করেনি বুঝেছেন? আপনার বোন সেদিন কী করেছিল জানেন? কিছু না বুঝে শুনেই আমার ফ্রেন্ডের গালে চড় মেরে বসেছিল। তাও আবার ভরা পাবলিক প্লেসে। নেহাত আমার ফ্রেন্ড ভালো মানুষ ছিল বলে সেদিন আপনার বোনকে এমনি এমনি ছেড়ে দিয়েছিল। আমরাও বিষয়টাকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। এখন তো দেখছি আপনিও আপনার বোনের মতো। কিছু যাচাই-বাছাই না করেই হুজুগে বকছেন!”

মাহিন নিস্তব্ধ, নির্বিকার এবং নির্লিপ্ত। তার মুখ থেকে আপাতত কোনো কথাই বের হচ্ছেনা! মুখমণ্ডলে বিরাজমান বিস্ময়তার ছাপ মিইয়ে মুগ্ধতার ছাপ ফুটে উঠেছে! অপলক দৃষ্টিতে একপ্রকার দ্বিধাহীনভাবে সে তিথীকে পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রত্যক্ষণ করছে। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠেছে এক মোহিত হাসির রেখা। তিথীর কথার মায়ায় জড়িয়ে পড়েছে সে! তিথীর চোখের গভীরতায় নিজেকে হারিয়ে বসেছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তার হৃদয়হরণ করা মেয়েটিকে সে চোখে চোখে হারাচ্ছে। বুকের ভেতর কিছু একটা বেজে যাওয়ার শব্দ পাচ্ছে। আশেপাশটা তার কাছে ঘোলাটে হয়ে আসছে। গাঢ় গভীর এক ঘোরে তলিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে নূর এবং তিথীর মাঝে তুখার ফাইট চলছে! দুজন দুজনকে কথার জালে নাজেহাল করে তুলছে। এই সুযোগে তাশফিয়া চাঁদের নাম্বারে মেসেজ সেন্ড করে দিলো! পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার জন্য চাঁদকে তাড়াতাড়ি এখানে আসতে বলল। চাঁদ মাত্র বই-খাতা নিয়ে ক্লান্ত শরীরে পড়ার টেবিলে বসেছিল। তাশফিয়ার মেসেজ পাওয়া মাত্রই সে বাড়ির টপস আর প্লাজু পড়ে ফ্লেক্সিলোড দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। রাগে-দুঃখে তার শরীর কাঁপতে লাগল।

নূরের ঝগড়া করা দেখে আয়মন পুরোনো সাহস ফেরত পেল। কিছু একটার আভাস পেয়ে তৎক্ষনাৎ তাশফিয়ার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো! রক্তিম দৃষ্টিতে তাশফিয়ার দিকে তাকালো। ভ্রু যুগল উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কাকে মেসেজ করছিলে হ্যাঁ? এলাকার ভাই-ব্রাদারদের? আমাদের সাথে গুণ্ডামি করার জন্য?”

তাশফিয়া ভয়ার্ত শ্বাস ছাড়ল। প্রকাণ্ড দৃষ্টিতে আয়মনের দিকে তাকালো। ভীরু গলায় বলল,,

“না ভাইয়া৷ আমাদের তো কোনো ভাই-ব্রাদার নেই। আমরা আপনাদের গুণ্ডাও পুষিনা!”

“কী বললা? আমরা গুণ্ডা পুষি হ্যাঁ? আমাদের দেখতে কি এমন মনে হয়?”

“তাশফিয়া থতমত খেলো! বার বার চোখের পলক ফেলে ভীতিকর গলায় বলল,,

“কোথায় বললাম আমি এসব ভাইয়া? আপনিই তো বলছিলেন….”

এরমধ্যেই উপস্থিত সবার মাঝে চাঁদের আবির্ভাব ঘটল। দোকানে এতক্ষণে ভীড়-ভাট্টা জমে গেল। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রং দেখতে ব্যস্ত। নিজেদের মধ্যে নানান জল্পনা-কল্পনা কষছে উদ্দত। ভীড় ঠেলে চাঁদ হাঁপাতে হাঁপাতে দোকানে প্রবেশ করল। তর্ক করতে থাকা নূর এবং তিথীর পাশাপাশি দাঁড়ালো। তারা দুজন ঝগড়ায় এতোটাই মনযোগী যে চাঁদের উপস্থিতি তারা টের পেলনা! মাহিন আপাতত এই জগতে নেই! সে রঙ্গিন ফানুস নিয়ে উড়ছে অন্য এক জগতে। যে জগতের কর্তী একমাত্র তিথী! তিথী ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।

চাঁদকে দেখে তাশফিয়া সাহস পেল। স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে অসহায় দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। আয়মন ভ্রু উঁচিয়ে চাঁদের দিকে কৌতূহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী রে? তুই এখানে কী করছিস?”

চোখ বুজে চাঁদ মৃদু চিৎকার করে উঠল! হাত দুটো মুষ্টিমেয় করল। তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় আয়মনকে লক্ষ্য করে বলল,,

“ভাইয়া তুমি চুপ করো প্লিজ। এই মুহূর্তে তোমাকে ভাইয়া বলে ডাকতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে!”

আয়মন বিস্ফোরক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। ঘটনার আকস্মিকতায় সে নিজেকে ধাতস্থ করার জন্য বড়ো বড়ো শ্বাস ছাড়ল। নূর এবং তিথী ঝগড়া থামিয়ে তাৎক্ষণিক মাথা ঘুরিয়ে চাঁদের দিকে তাকালো। মাহিন মাত্র ঘোর থেকে বের হয়ে এলো! তৎপর দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। চাঁদের কথায় আয়মন বেশ আঘাত পেল! আহত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কী বললি তুই? আমাকে ভাই বলে ডাকতে তোর ঘৃণা হচ্ছে?”

চাঁদ চোখ মেলে তেজস্ক্রিয় দৃষ্টিতে আয়মনের দিকে তাকালো। বিদ্বেষি গলায় বলল,,

“হ্যাঁ ঘৃণা হচ্ছে। তোমাকে ভাই বলে ডাকতে আমার ঘৃণা হচ্ছে! কী ড্রামা শুরু করেছ তুমি হ্যাঁ? লোকজন হাসাচ্ছ? এই যে এতোগুলা লোকজন আশেপাশে দাঁড়িয়ে তোমাদের দেখে দেখে মজা নিচ্ছে খুব ভালো লাগছে, না? আমার ফ্রেন্ডকে যে সবাই খারাপ ভাবছে তোমার খুব মজা লাগছে, না? তাদের সম্পর্কে যে সবার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তোমার খুব আনন্দ হচ্ছে? তোমাকে আমি বার বার করে বলছিনা? তাশফিয়া আমার ফ্রেন্ড হয়? এইবারের মতো তাকে ক্ষমা করে দাও? শুনছ তুমি আমার কথা? কেন তুমি আমার ফ্রেন্ডের কাছে আমাকে এভাবে ছোটো করলা ভাইয়া? কেন তুমি আমার ভাই হয়ে নিজেকে এতোটা ছোটো করলা বলো? এখন যে তোমাকে ঘিরে আমার ফ্রেন্ডসদের মনে খারাপ ধারণার সৃষ্টি হইছে আমার কষ্ট হচ্ছেনা এতে? আমি তো তোমাকে সবসময় উপরে রাখি ভাইয়া। আমার ভাইয়ার মতো মহান ভাই পৃথিবীতে আর দুটো হয়না বলে জনে জনে বলে বেড়াই। দিলে তো আমার সেই অহংকার ভেঙে ভাইয়া! শান্তি পেয়েছ তো তুমি এবার হ্যাঁ? শান্তি পেয়েছ?”

লজ্জায় আয়মন মাথায় নুইয়ে নিলো। রাগের মাথায় এতোটা সিনক্রিয়েট করা তার উচিৎ হয়নি বলে নিজেকে দোষারোপ করতে লাগল! নিজের ভুল সে বুঝতে পারল। অজানা কারণে চাঁদের প্রতি তার অভিমানও জন্ম নিলো! ফোনটা তাশফিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আয়মন পিছু ঘুরে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! একটিবারের জন্যও আর পিছু ঘুরে তাকালো না। তাশফিয়া নির্বাক দৃষ্টিতে আয়মনের যাওয়ার পথে তাকালো। আয়মনের প্রতি জমতে থাকা ক্ষোভ ভুলে সে অস্থির হয়ে উঠল! ভগ্ন দৃষ্টিতে আয়মনের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। কোথাও না কোথাও নিজেকেও দোষী ভাবতে আরম্ভ করল। আয়মনের হেরে যাওয়া দেখে পাশ থেকে তিথী বাঁকা হাসল। চাঁদকে ইন্ধন যুগিয়ে একমত হয়ে বলল,,

“একদম ঠিক করেছ চাঁদ! উচিৎ কথাগুলোই তাকে বলেছ তুমি। আমি তো খুব খুশি হয়েছি তোমার সাহসিকতা দেখে। এমনকি তোমার প্রতি মুগ্ধও হয়েছি।”

চাঁদ মাথা নুইয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলো! আয়মনকে ছোটো বড়ো কথাগুলো শুনিয়ে তার ভিতরটাও ছ্যাঁত করে জ্বলে উঠল। অপারগ হয়েই তাকে কথাগুলো বলতে হয়েছিল। নয়তো তার ফ্রেন্ডের সাথে অন্যায় করা হতো। দুইদিক ব্যালেন্স করতে গিয়ে সে নিজেকেও অজান্তে কষ্ট দিলো। মাহিন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। তিথীর মায়া কাটিয়ে সে আয়মনের পিছু ছুটল। উচ্চ আওয়াজে আয়মনকে ডাকতে লাগল। কারো কোনো কথাই আয়মন কানে তুললনা! বিমূর্ষ মন নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। নূর এবার গর্জে উঠল। শার্টের কলারটা পেছনের দিকে এলিয়ে চাঁদের দিকে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কড়া গলায় বলল,,

“ফ্রেন্ডকে খুব জাস্টিস দিতে আসছ না? অনেক বড়ো বিচারক হয়ে গেছ? এবার কাইন্ডলি আমার বিচারটা করে দাও প্লিজ। তোমার ফ্রেন্ড আমার ভাই মাহিনের গাঁয়ে হাত তুলেছে! যেখানে আমার ভাইয়ের কোনো অন্যায়-ই ছিলনা। সে এই ঝামেলার সাথেও ছিলনা আর পাছেও ছিলনা। তাহলে তার দোষটা এখানে কোথায় ছিল? কেন তোমার ফ্রেন্ড আমার ভাইয়ের গাঁয়ে হাত তুলল?”

চাঁদ ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু বলার পূর্বেই তিথী নূরের মুখের কথা টেনে নিলো। একগুঁয়ে গলায় বলল,,

“শুনুন। আমি যাকে সামনে পেয়েছি ঠিক তাকেই মেরেছি! আপনি আমার সামনে থাকলে হয়তো চড়টা আপনার গালেই পড়ত! ভাগ্যক্রমে চড়টা আপনার ভাইয়ের গালে পড়ে গিয়েছে। ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন ভাইয়া চড়টা কিন্তু আমি এমনি এমনি আপনার ভাইয়ের গালে মারিনি। আপনাদের দুই ভাইয়ের সামনেই কিন্তু চাঁদের ভাই রীতিমতো আমার কাজিনকে হিউমিলেইট করছিল। আর আপনারা পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রঙ দেখছিলেন। বিষয়টা আমার খুব খারাপ লেগেছিল। তাই বাধ্য হয়েই চড়টা মারতে হলো।”

নূর দাঁতে দাঁত চাপল। তটস্থ গলায় বলল,,

“শুনুন? আমরা আয়মনকে থামাতেই যাচ্ছিলাম। এর আগেই আপনি হাইপার হয়ে আমার ভাইয়ের উপর এ্যাটাক করে বসলেন। আপনাদের মেয়েদের এই একটা স্বভাব৷ কথার আগেই লাফান বেশি। রিডিকিউলাস।”

নূরের কথায় চাঁদ টক্কর দিলো! রাগান্বিত দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। খড়খড়ে গলায় বলল,,

“ভাইয়ের গালে চড়টা পড়াতে খুব টক্কর দিতে এসেছেন তাইনা? গাঁ টা ছ্যাঁত করে জ্বলে উঠেছে? যখন আপনার সামনে আমার আয়মন ভাইয়াকে তাশফিয়া চড় মেরেছিল তখন তো আমার ভাইয়ার হয়ে প্রোটেস্ট করতে আসেননি! তাশফিয়ার ভুল ধারণাটাও ভেঙে দেননি। নিজে দোষ করে আমার ভাইয়ার উপরে দোষটা খুব নিঁখুতভাবে চাপিয়ে দিয়েছিলেন। দূর থেকে দাঁড়িয়ে রঙ দেখছিলেন। এতো বড়ো ঝগড়া বাঁধিয়ে এখন এসেছেন এলেম দেখাতে হ্যাঁ? আপনার একটু ভুলের জন্যই আজ এতকিছু ঘটছে। একে-অপরের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে।”

“প্রোটেস্ট করা বলতে কী বুঝাচ্ছ তুমি হ্যাঁ? ঐদিন আয়মনের হয়ে প্রোটেস্ট করার মানেই তো ছিল তোমার ফ্রেন্ডের গালে ঠাস ঠাস করে চড় মারা! তখন ব্যাপারটা কী হয়ে দাঁড়াতো হ্যাঁ? খুশি হতে হাজারটা মানুষের সামনে তোমার ফ্রেন্ডকে চড়ালে? তখন তো সেই তুমিই বলতে হ্যাঁ আপনি আমার ফ্রেন্ডের গাঁয়ে হাত তুললেন কেন? কেন তাকে মার-ধর করলেন? কী দোষ করেছিল সে? দেশে কী আইন-কানুন নেই? ভুলবশত একটা চড়-ই তো মেরেছে। এরচেয়ে বিশাল কিছু তো করেনি! আরে এখানে মূলত দোষটা তো হলো তোমার ফ্রেন্ড তাশফিয়ার। সে কেন ঐদিন না বুঝে শুনে একটা ছেলের গালে চড় দিয়েছিল হ্যাঁ? এত সাহস তার কোথা থেকে আসে? যেখানে ছেলেটার কোনো দোষই ছিলনা। রাস্তা-ঘাট একটা পাবলিক প্লেস। এখানে হাজার রকমের মানুষ থাকবে। প্রত্যেকেরই নিজেদের মতো করে চলাফেরা করার অধিকার আছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি বা আমার ফ্রেন্ড’সরা মিলে গান গাইতেই পারি। আমাদের ইচ্ছেমতো চলতেই পারি। তার মানে এই নয় যে, তোমার ফ্রেন্ডকে দেখে আমি বা আমরা গান গেয়েছিলাম। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে টিজ করেছিলাম। সে কেন ঐদিন বিষয়টা নিজের গাঁয়ে মাখালো হ্যাঁ? এবার ঠাণ্ডা মাথায় বিচার করে বলো এখানে দোষটা কার? মূল দোষী কে?”

তাশফিয়া মাথা নুইয়ে নিলো। পাশ থেকে তিথী গরম দৃষ্টিতে তাশফিয়ার দিকে তাকালো। চাঁদ সরু দৃষ্টিতে নূরের রূঢ় মখমণ্ডলে তাকালো। তাশফিয়া তার ভুল স্বীকার করল। নিচু গলায় নূরকে বলল,,

“সরি ভাইয়া। ভুলটা আসলে ঐদিন আমারই ছিল! আমি না বুঝে শুনেই ঐদিন অভার রিয়েক্ট করে ফেলেছিলাম। আয়মন ভাইয়াকে চড় মারাটা আমার সাঁধেনি। নেক্সটে আর কখনও আয়মন ভাইয়ার সাথে দেখা হলে আমি ক্ষমা চেয়ে নিব। আর আপনিও আমাকে ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ।”

তিথীর হাত ধরে তাশফিয়া জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। তিথী পিছু ঘুরে নূরের দিকে অপরাধী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল৷ ক্ষীণ গলায় বলল,,

“আমিও সরি ভাইয়া। না বুঝেই আপনার ভাইয়ার গাঁয়ে হাত তুলেছি। আমার তরফ থেকে উনাকে একবার সরি বলে দিবেন প্লিজ।”

নূর হেয় হাসলো। জবাবে কিছু বললনা। তাশফিয়া এবং তিথী রিকশা করে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। তাশফিয়ার যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চাঁদ হনহনিয়ে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। দোকানে ভীড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনদের দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল নূর৷ ধমকের স্বরে বলল,,

“কী? সিনেমার স্যুটিং দেখছেন এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে? নায়ক-নায়িকার রোমান্টিক সিন চলছে?”

সবাই চোখ নামিয়ে নিলো। হুড়মুড়িয়ে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। নূর রাগ ঝেড়ে চাঁদকে অনুসরণ করে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। বাড়ির আঙ্গিনায় এসে নূর পেছন থেকে চাঁদকে উচ্চস্বরে ডেকে উঠল। বদরাগী গলায় বলল,,

“এই চাঁদ শোনো? তোমার গাঁয়ের ওড়না কই? খবরটা পেয়ে তো ঝড়ের বেগে ছুটে গেলা ফ্রেন্ডের হয়ে প্রোটেস্ট করতে! নিজেকে তো দেশের প্রতিবাদী মন্ত্রী ভাবতে শুরু করেছ! যার নিজের শরীরের দিকে খেয়াল নাই সে আবার যায় ফ্রেন্ডের হয়ে প্রতিবাদ করতে।”

চাঁদ থমকালো। পিছু ঘুরে নূরের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে নূরের দিকে তেড়ে এলো। কোমরে হাত গুজে তীক্ষ্ণ গলায় বলল,,

“আপনাকে এতোদিকে তাকাতে কে বলছে হ্যাঁ? নজর এতো খারাপ কেন আপনার? আমি ওড়না পড়ি বা না পড়ি এটা আমার পার্সোনাল ব্যাপার। এই নিয়ে আপনাকে এত কথা বলা লাগবে কেন হ্যাঁ?”

“আলবাত লাগবে। তোমার প্রতিটা বিষয় নিয়েই আমার কথা বলা লাগবে। কিছুদিন পর যখন আমার ঘাড়ে উঠবা তখন তো এমনিতেও আমার কাছে তোমার হাজারটা জবাবদিহি করতে হবে! তাই আগে থেকে প্র্যাক্টিস করে রাখা ভালো না?”

#চলবে…?