#প্রেমরোগ-১০ (বোনাস)
#তাসনিম_তামান্না
” আপনি স্মো’ক করেন? ”
তুষারের ভ্রু কুঁচকে গেলো কুয়াশার কথার প্রতিত্তর না করে নিজেই প্রশ্ন করলো ” তুমি এতো রাতে ছাদে কি করো? ভয় লাগে না? ”
” জানি না ”
” সেটা জানবে কিভাবে তুমি তো গাধী ”
কুয়াশা চট করে রেগে গেলো ” হ্যাঁ আমি গাধী তো একটা মানুষ কে বিয়ে করতেন গাধীকে কেনো বিয়ে করলেন? ”
তুষার চুপ থেকে সুখটান দিতে লাগলো। কুয়াশার রাগের মাত্রা বাড়তে লাগলো।
” আমি আপনার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করছি উত্তর দিন ”
” উওর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না ”
এতোক্ষণ শীতল হওয়া ফুলের সুবাস ছিলো। তুষার সিগারেট খেয়ে বায়ু দূষিত করে দিয়েছে সিগারেটে ধোঁয়া। আগে কম থাকলেও তার তীব্রতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুয়াশার তুষারের হাত থেকে সিগারেট টা টান দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। অন্ধকারে সোডিয়ামের আবছা আলোয় কুয়াশার মুখ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কুয়াশা সেটা বুঝতে পেরে বলল
” স্মোক আমার পছন্দ না ”
তুষার গলায় অবাকের রেস টেনে বলল
” তো আমি কি করবো? ”
কুয়াশা দৃঢ় কন্ঠে অধিকারবোধ এনে বলল
” আপনি খাবেন না ”
তুষার অবাকের শীর্ষে চলে গেছে চোখ কপালে তুলে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল ” কি বললে আবার বলল ”
কুয়াশা বিরক্তি নিয়ে বলল ” সিগারেট খাওয়া আমার পছন্দ না তাই আপনি খাবেন না ”
” তুমি পছন্দ করো না তা আমার কি? আমার সিগারেট খাওয়ার সাথে তোমার পছন্দ অপছন্দের কি আছে? ”
কুয়াশা তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলল
” হ্যাঁ সেই তো আপনার কিছু ই না। সব কিছু আপনার মর্জি মতো হবে আপনি যা করবে সব ঠিক আর বাকিরা যা করবে সব ভুল ”
তুষার ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে বলল
” হুম সেটাই ”
কুয়াশার রাগে দুঃখের কান্না পেলো কঠিন কন্ঠে বলল ” হ্যাঁ সব ঠিকি ছিলো কিন্তু আমাকে বিয়ে করাটা আপনার ভুল ছিল। জেদের বশে বাজি ধরে না আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন ”
” বাজি ধরে বিয়ে করেছি মানে? এসব আজেবাজে কথা কে বলেছে তোমাকে ”
” হ্যাঁ আমি জানি। ”
” ভুল জানো ”
” নিজেকে আপনি পন্ডিত ভাবেন? আমি জানি ছুটির দিনে ফেন্ডদের সাথে ধরতেন। আর সেদিন আপনি হুট করে এসে বাবাকে কিসব বলিয়ে রাজি করিয়ে বিয়ে করে নিলেন আমাকে একটা বার জিজ্ঞাসা করেছিলেন? আমি কি চাই? আমার মতামত কি? আপনারা কেউ প্রয়োজন বোধ করেন নি। ”
” ওহ এসব তোমাকে মেঘ বলেছে তাই না? আমি ই ওকে এসব বলতে বলেছিলাম তুমি পাগলামি করছিলে বলে ”
” আমাকে অবুঝ বাচ্চা মনে হয় আপনারা যখন যে যা বলবেন আমি বিলিভ করে নিবো? ”
” কুয়াশা নিচে যাও ৫ বছর আগের কথা এখন কেনো উঠছে? কেনো অতীত ঘাটছ? ”
” আমার সব প্রশ্নের উত্তর চাই কেনো আপনি আমাকে বিয়ে করলেন? বাবা কেনো সেদিন আপনার সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজি হলো? কি হয়েছিলো? এর একটা প্রশ্নের উত্তর না নিয়ে আজ আমি কোথাও যাবো না ”
তুষার কুয়াশাকে ধমক দিয়ে বলল
” এসব পোকা কে নাড়া দিলো? এসব করতে ছাদে আসছ? যাও নিচে যাও ”
কুয়াশা ছাদের কিনারায় চলে যেতে যেতে বলল
” আজ যদি আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর না দেন তাহলে আমি এখান থেকে লাফ দিবো ”
তুষার ভয় পেয়ে গেলো দৌড়ে কুয়াশার কাছে যেতে নিলে কুয়াশা বলে উঠলো ” একদম কাছে আসবেন না আমি কিন্তু জাম্প করবো ”
তুষার শান্ত কন্ঠে বলল ” আচ্ছা সবটা বলবো এদিকে আসো বসে ঠান্ডা মাথায় কথা বলি ”
কুয়াশার চোখ ঝলমলে করে উঠলো তুষারের কথা সত্যি ভেবে কাছে আসলো তুষার ঠাস করে কুয়াশার গালে চ-ড় মেরে দিলো। কুয়াশা হতভম্ব হয়ে গালে হাত দিয়ে তুষারের দিকে তাকালো। তুষার কুয়াশাকে বুকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিলো। কুয়াশা তুষারের হৃৎস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর তুষার কুয়াশা কে ছেড়ে দূরত্ব নিয়ে দাড়িয়ে বলল
” বেশি বুঝে গেছিস না তুই? খুব বাড় বেরেছে তোর? নাটক দেখে এসব নাটকবাজী শিখেছিস? ”
তুষার রাগে রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। কুয়াশার চোখ ফেটে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তুষার আবারও বলল
” এই কিছু বললেই চোখ দিয়ে ওনার পানি পড়ে। দিস ইজ টু মার্চ। ডিজগাস্টিং একটা। যা আমার সামনে থেকে যা না হলে আমি যা কিছু করে ফেলবো ”
কুয়াশা গেলো না ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো একটা কথা জিজ্ঞেসা করেছে সোজাসাপটা উত্তর দিয়ে দিলেই লেটা চুকে যায়। তা-না এভাবে লোহার হাতের চ-ড় খেয়ে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। তুষার কুয়াশা কে যেতে না দেখে বলল
” কি হলো যাচ্ছিস না কেনো? ম’রার খুব শখ তোর? চল তোকে কষ্ট করে ম-রতে হবে না আজ আমি ই তোকে ছাদ থেকে ফে-লে দিবো। তারপর নিজে ম-রবো ”
তুষার কুয়াশার বাহু চেপে ছাদের কিনারায় নিয়ে যেতে লাগলো। কুয়াশা কেঁদে হাত ছাড়াতে চাইলো। কান্নারত গলায় বলল
” ছেড়ে দিন প্লিজ আমি আর কখনো এমন করবো না। আমি তো শুধু সত্যি টা জানতে চেয়ে ছিলাম ”
তুষার থেকে গেলো বলল
” তুই যে দিন নিজে ইচ্ছে তে আমার কাছে আসবি সে দিন আমি তোকে নিজে সব টা বলবো। আঙ্কেল বলতে চাই ছিলো কিন্তু আমি ই বলতে বারণ করছি। আর হ্যাঁ তোর ভালোর জন্য সেদিন তোকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে ছিলো ”
তুষার থেমে আবার ও বলল ” নিচে যা-ও। তোমাকে দেখলেই মেজাজ গরম হচ্ছে। আরো কয় টা চ-ড় মা-রলে শান্তি লাগতো ”
কুয়াশা তেজি কন্ঠে বলল
” তো মা-রুন না মে-রে ফেলুন ”
” তোকে মে-রে ফেলায় উচিত বাচিয়ে রেখে কি হবে? ”
কুয়াশা রেগে হাত ঝাড়ি মেরে ছাড়িয়ে চলে গেলো। তুষার কুয়াশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাথার চুল খামছে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস চালাতে লাগলো। নিজে নিজে বলল
” কেনো আমাকে একটু বুঝিস না তুই? সবসময় আমাকে রাগাস। ঠিক ভাবে কথা বলতে গেলে উলটো পালটা কথা বলে রাগিয়ে দিস। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হবে কি ভাবে? ৫টা বছরেও স্বাভাবিক হলো না আমি দূরে থেকেছি না-হয় তুই। অর্নাস এর এক্সাম শেষ হলে আঙ্কেলে বলতে হবে কুয়াশাকে আমি নিজের সাথে নিয়ে যেতে চাই ”
কুয়াশা রুমে এসে দরাম করে দরজা লাগিয়ে মেঘা চমকে উঠে কুয়াশার দিকে তাকালো। কুয়াশাকে দেখেই বুঝে গেলো স্বাভাবিক নয়। কুয়াশা চোখমুখে পানি দিয়ে এসে শুয়ে পড়লো মেঘার সাথে একটা কথাও বলল না। মেঘারও নিরব দর্শনকের ভূমিকা পালন করে সবটা দেখলো। কুয়াশা কে শুয়ে পড়তে দেখে কিছু ক্ষণ পর বলল
” কি হয়েছে বনু? কাঁদছিস কেনো? ”
কুয়াশা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল
” মন চাইছে তাই এখন দেখছি নিজের মতো কাদাও যাবে না। সবার মন মতো চলতে হবে আমাকে? আমাকে মানুষ মনে হয় না? আমি কি মানুষ না? আমার মন নেই? আমার কষ্ট হয় না? কষ্ট তোদের এককার হয়? ”
মেঘা বুঝলো কুয়াশা খেপে আছে। এখন কিছু না বলায় শ্রেয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ