#প্রেমরোগ-৩১
#তাসনিম_তামান্না
ছুটির দিন হওয়ায় সকালে খাওয়া দাওয়া শেষে মেঘ, কুশান দুইভাই মিলে কুশ আর শানের সাথে খেলায় মেতে আছে। পাখি আর তুতুল দুপুরের রান্না দিকটা সামলাচ্ছে। মেঘা নিচে এসে সবটা দেখে কুশান আর মেঘের সামনে গিয়ে অপরাধির ন্যায় মাথা নত করে বলল
” ভাইয়া তোমাদের সাথে কিছু কথা ছিল ”
কুশান বলল ” কি বল ”
“ভাবিপু তোমরাও আসো ”
পাখি তুতুল আসলো। মেঘা আমতা আমতা করছে দেখে মেঘ বলল
” এভাবে মাথা নিচু করে আছিস কেনো? কি অকাজ করেছিস আবার? ”
মেঘের কথার প্রতিত্তর করলো না মেঘা। তুতুল মেঘার অবস্থা দেখে বুঝতে সময় লাগলো না কি ব্যাপারে কথা বলবে। মেঘ তাড়া দিয়ে বলল
” এতো সময় লাগছে কেন? বললে বল না বললে ফুট এখান থেকে ”
কুশান ধমকে উঠে বলল ” মেঘ ওকে সময় দে। সিরিয়াস কিছু বলতে চাইছে। মেঘা বনু তুই বল কি হয়েছে? কোনো প্রবলেমে পড়েছিস? ”
মেঘা শুকনো ঢোক গিলে বলল ” ন…না ”
কুশান চুপ থেকে বলল ” তাহলে কি নির্দ্বিধায় বল ”
মেঘা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে একদমে বলল
” ভাইয়া আমি রিদ কে ভালোবাসি বিয়ে করতে চাই”
থমথমে পরিবেশ আরও থমথমে হয়ে গেলো। সকলে বিস্ময়কর ভাবে তাকিয়ে আছে মেঘার দিকে। মেঘা চোখ খুলে সকলকে একবার দেখে নিয়ে বলল
” আমি সত্যি ওনাকে ভালোবাসি আর তোমাদের কেউ। ওনাকে ছাড়া কেউ কে বিয়ে করতে পারবো না। তোমাদের যদি আপত্তি থাকে। তাহলে আমাকে কখনো অন্য ছেলের সাথে বিয়ে করতে ফোর্স করতে পারবে না। ”
মেঘ গম্ভীর কন্ঠে বলল
” কোন রিদ? ”
মেঘা কেঁপে উঠল বলল
” তোমার বন্ধু ”
পাখি সহজসরল ভাবে সোজাসাপটা উত্তর দিলো
” বাহ। ভালো তো রিদ ছেলেও যতদূর দেখছি ভালো কি অমাইক ব্যবহার। আর চেনা পরিচিত। এমন ছেলেও খুঁজে পাওয়া দূঃকর কি বলো? ”
কুশান চুপ ছিল। পাখির কথায় মেঘের দিকে তাকালো মেঘ আগে থেকেই তাকিয়ে ছিলো দু’জন চোখে চোখে আশাস দিলো। কুশান গলা ঝেড়ে বলল
” রিদ কে আসতে বল ”
মেঘা ভয় পেয়ে বলল ” ভাইয়া ওনাকে কি দরকার ”
কুশান গম্ভীর কন্ঠে বলল
” ভাই হিসেবে আমাদের দায়িত্ব বোনকে সুপাত্রের হাতে তুলে দেয়া। রিদ ও লাক্ষে একটা পাওয়া যায়। রিদ যদি রাজি থাকে তোমাকে সুখী রাখতে পারে তাহলে আমাদের বাঁধা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাই সব ঠিক থাকলে দুই হাত এক করে দিতে চাই। কি বলো তোমরা? তোমাদের মতামত দাও ”
মেঘার চোখ খুশিতে ঝলমলে করে উঠASHO’
কলে মত দিলো। মেঘা খুশির আবেগে কেঁদে ফেলো।
মেঘ বিরক্ত হয়ে বলল ” কাদচ্ছিস কেনো? ”
তুতুল বলল ” আনন্দের কান্না ও তুমি বুঝবে না ”
মেঘ খোঁচা মে রে বলল ” তা এতো আনন্দ কিসে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে তাই? ”
মেঘা এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো। বলল
” তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না। বিয়ে ও করবো না ”
সকলে মুখ টিপে হাসলো। মেঘা রাগে দুঃখে গজগজ করতে করতে ওপরে যেতে যেতে বলল
” তোমরা কেউ ভালো না। সবাই প চা ”
——————————————-
প্রেম বসন্ত এসেছে কুয়াশা তুষারের ছোট সংসারে। কুয়াশা তুষারের কথা ভেবে আজ সারাদিন মুচকি মুচকি হেসেছে। এ যেনো এক নব অনুভূতি। কুয়াশা সারাদিনের সকল কাজ শেষ করে তুষারের কাছে ফোন অফ। কুয়াশার মন খারাপ হলো। পরক্ষণে নিজেকে বুঝালো হয়ত ফোনে চার্জ নাই। তারপর মেঘার কাছে ফোন দিলো। সকলে মেনে নিয়েছে শুনে খুশির অন্ত রইলো না। দুই বোনে অনেক দিন পর প্রাণ খুলে হাসতে হাসতে কথা বলল। জীবনের সব বাঁধা বিপত্তি কেটে গেছে। আবার না জানি কোন ঝড় এসে সবটা লন্ডভন্ড করে দিয়ে চলে যায়।
কুয়াশা তুষারের কাছে সন্ধ্যার দিকে আবার ফোন দিলো ফোন তখনো অফ। তুষারকে ফোনে না পেয়ে কুয়াশার মনে ভয় ডুকলো। কুয়াশার কাছে তুষারের এমন কোনো কলিগের নম্বর ও নেই যে তুষারের খোঁজ নিবে। কুয়াশা কেমন অস্থির অস্থির লাগছে রাত ১০ বেজে গেলো তবুও তুষারের সারাদিনে খোঁজ নাই। কুয়াশা শেষ গিয়ে নাকের পানি চোখের পানি এক করে বাচ্চাদের মতো করে কেঁদে দিলো। হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠ এসে বাড়ি খেলো কুয়াশা চমকপ তাকাতেই তুষার কে দেখতে পেলো। দিকবিদিকশুন্য হয়ে দৌড়ে গিয়ে তুষার কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল
” আপনি আপনি সত্যি এসেছে? জানেন আমি কত ভয় পেয়েছি? ফোন অফ কেনো আপনার? ”
” আচ্ছা সরি কান্না থামাও ”
কুয়াশা তুষারকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুখ মুছে বলল
” আপনি কখন এসেছেন? বললেন নি তো আজই চলে আসবে? ”
” এসেছি তুমি যখন সাওয়ার নিচ্ছিলে তখন ”
কুয়াশার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম অবাক হয়ে বলল ” কী?… আপনি কীভাবে বাসা ডুকলেন? আর এতোক্ষণ লুকিয়ে ছিলেন কেনো? ”
” ডুবলি কেট চাবি আছে ভুলে গেছ। বাই দ্যা ওয়ে এখন এতো বকবক না করে এই শাড়িটা পড়ে নাও ”
কথা বলতে বলতে তুষার কুয়াশার দিকে প্যাকেট এগিয়ে দিলো। কুয়াশা প্যাকেট টা নিয়ে বলল
” এই রাতের বেলা শাড়ি কেনো পড়বো? ”
তুষার রেগে বলল
” আজব পড়তে বলছি পড়বা প্রশ্ন করে মা থা খাচ্ছ কেনো? ”
কুয়াশা লাল টকটকে শাড়ি পড়ে আসলো। এসে দেখলো তুষারও লাল পাঞ্জাবি পড়েছে। কুয়াশা কিছু বুঝতে পারছে না তুষার কি করতে চাইছে।
” আপনি কি করতে চাইছেন বলুন তো ”
” এতো পকপক করবে না চুপ থাকো। আর আমি যা করছি করতে দাও ”
তুষার কুয়াশাকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে গলায় লাভ সেডের লকেট পড়িয়ে দিলো। ঠোঁটে গড় লাল রঙের লিপস্টিক ব্যাস।
” এবার ছাদে চলো ”
কুয়াশা ভ্রু কুঁচকে গেলো ছাদে যাবে কেনো? এই ঠান্ডায়? কুয়াশা কৌতুহল বশত ছাদে চলে গেলো তুষারে পিছনে পিছনে প্রশ্ন করলে ধমকের ওপরে রাখছে তাই আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না। ছাদের মাঝখানে মমবাতি দিয়ে লাভ সেডের লেখা ‘HAPPY ANNIVERSARY’ তার নিচে ‘TUSHIR + KUYASA’ লেখা গোলাপের পাপড়ি লাল সাদা রংয়ের বেলুন টেবিল চেয়ার দিয়ে চারিদিকে সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। কুয়াশা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো সবটা তারপর তুষারের দিকে ছলছল চোখে তাকালো তুষার হাঁটু গেড়ে বসে ডায়মন্ডের আংটি এগিয়ে দিয়ে বলল ” উইল ইউ বি মাই বেবিস মম? ”
কুয়াশা লজ্জা পেলো অনুভূতি গুলো জড়োসড়ো হতে লাগলো। কাঁপা হাতটা এগিয়ে দিলো তুষারের দিকে। তুষার মুচকি হেসে আংটিটা পড়িয়ে দিলো। দু’জনে কেক কেটে দুজন কে খাইয়ে দিলো। কুয়াশা বলল
” একটু দাঁড়ান এখানে আমি এখনি আসছি ”
” কোথায় যাচ্ছো? ”
” আসছি ”
কুয়াশা কথাটা বলে শাড়ির কুঁচি ধরে দৌড়ে নিচে এসে অনেক খুঁজে বক্সটা পেলো। আবারও দৌড়ে ওপরে চলে এসে তুষারের দিকে বক্সটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল ” খুলে দেখুন ”
তুষার বক্সটা খুলে দেখলো। একটা ব্রান্ডের ওয়াচ অবাক হয়ে কুয়াশা দিকে তাকিয়ে বলল ” এটা কখন কিনলে ”
” বাংলাদেশে থাকতে কিনেছিলাম। কিন্তু আপনাকে কখনো দেওয়া হয় নি ভয় লাগতো। ভাগিস আজ এটা ছিল নাহলে আপনাকে কি দিতাম ”
তুষার হেসে ফেলো হাসি বন্ধ করে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল
” তোমাকে দিতে? কি দিবে না? ”
কুয়াশা তুষারের কথার মর্মার্থ বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আজ সব কিছু দূরে ঠেলে দুই অনুভূতিরা এক হলো। ভালোবাসারা পরিপূর্ণ রূপ পেলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ