প্রেমরোগ পর্ব-৩৩ এবং শেষ পর্ব

0
1111

#প্রেমরোগ-৩৩ [অন্তিমপাতা]
#তাসনিম_তামান্না

” কি হচ্ছে এখানে ”
কুয়াশার কম্পিত কণ্ঠ শুনে তুষার চমকে তাকালো। কুয়াশা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে মেয়েটা চোখ কোচলে কষ্ট করে তাকালো হাসার চেষ্টা করে বলল ” হেই ভাবি ”
কুয়াশা মেয়েটার মুখে ভাবি ডাক শুনে অবাক হয়ে গেলো। সেই সাথে সন্দেহ দৃষ্টিতে সবটা অবলোকন করলো। মেয়ের ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। কুয়াশার মাথায় একটা কথা আসলো যদি ওরা কি!স করে থাকে তাহলে লিপস্টিক এলোমেলো হয়ে থাকতো কিন্তু তেমন কিছু হয় নি। কুয়াশা হাফ ছেড়ে বাচলো। কুয়াশার ভাবনার মাঝে তুষার বলে উঠলো “তুমি এখানে? আসবে বলো নি তো ”
কুয়াশা শান্ত কণ্ঠে বলল ” না আসলে ভালো হতো তাই না ”
তুষার বলল ” এসে ভালোই করেছ। এই যে দেখছ ইনি (মেয়েটাকে দেখিয়ে বলল) আমাকে জ্বালিয়ে মা র ছে তোমার সাথে দেখা করবে বলে। আবার অফিস শেষে ওকেও বাসা নিয়ে যেতে পারছি না কি একটা জ্বালা ”
কুয়াশার কিছু বোধগম্য হচ্ছে না ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা চোখ কোচলাতে কোচলাতে পানি বের করে ফেলছে। তুষার সেটা দেখে বলল
” এই যা চোখে পানি দিয়ে আয় দেখ পাপড়ি চোখ থেকে বের হবে যদি বের না হয় তাহলে আমার কাছে আসিস না হয় অন্য কারোর কাছ থেকে বের করে নিস ”
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তুষার কুয়াশার হাতে খাবারের বক্স দেখে বলল
” আমার জন্য রান্না করে এনেছ? কি এনেছ? ”
কুয়াশা ধ্যন ভাংলো নিজেকে বকলো তুষার কে সন্দেহ করার জন্য।
” রসমালাই ”
” তুমি বানিয়েছ? ”
কুয়াশা ওপর নিচ মাথা নেড়ে বলল ” হ্যাঁ ফাস্ট টাইম করছি জানি না কেমন হয়েছে ”
” তুমি করেছ মানে দারুণ হবে ”
কুয়াশা হাসলো নিজের মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করছে। কুয়াশা বলল
” চলুন আজ বাইরে থেকে খেয়ে আছি ”
” বলছ? দাড়াও আগে বস পারমিশন দেয় কি না দেখি? ”
কথাটা বলে তুষার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। কুয়াশার মন টা কেমন খারাপ হয়ে গেলো।

আজ দুই দিন তেমন তুষারপাত নেই। রাতে যা একটু হয়। কুয়াশা আর তুষার নির্জনে বসে আছে। চারিদিক থেকে শীতল হওয়া বইছে। কিন্তু ওদের দেহ ছুঁতে পারছে না। তুষার তিপ্তি নিয়ে রসমালাই খাচ্ছে তাছাড়া আরো অনেক খাবার সাথে করে কিনে এনেছে। কুয়াশা বলল
” ঔ মেয়েটা কে বাঙালি ভাবি বলে ডাকছিল ”
” আমার ছোট বোনের মতোই এখানে আসার পর ওর সাথে আলাপ হয় তোমাকে দেখে নি ও দেশে ছিল। তাই দেশে আসার পর থেকে তুমি এসেছ জানতে পেরে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিল তোমাকে দেখবে বলে। দেখলে না কত এক্সাইটেড ছিল ”
” হুম ”
আবার ও নিরবতা চলল কিছুক্ষণ কুয়াশা হুট করে
বলল ” আপনার কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবো এবার আপনি না বলতে পারবেন না ”
তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল ” কী প্রশ্ন? ”
” আমাকে কেন সেদিন বিয়ে করেছিলে? ”
তুষার দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল ” এখনো তোমার এ প্রশ্নের ভুত মাথা থেকে যায় নি? ”
” প্লিজ বলো আজ না করো না ”
” আজ তোমার নিরাশ করবো না বলবো ”
কুয়াশার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তুষার সেটা দেখে বলতে শুরু করলো
” সময়টা তখন এমন শীতকাল তুমি ইন্টারে প্রথম এক্সাম শেষ করছ আমার ও তখন ইন্জিনিয়ারিং শেষ চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় এ্যাপলায় করছি। তুমি বাবার ফেন্ডের মেয়ে হবার সুবাদে তোমার সাথে হুটহাট দেখা হতো টুকটাক কথা হতো আমি তোমাকে সেভাবে কখনো খেয়াল করি নাই। হুট করে বাবা একদিন ফোন দিলো তখন আমি ফেন্ডের সাথে আড্ডা দিচ্ছি ফোন দিয়ে বলল ‘ আজ তোমার বিয়ে তারাতাড়ি বাড়ি আসো ‘
আমি আর্শ্চায্য হয়ে বললাম ‘ মানে কি সব বলছ? ‘
বাবা বলল ‘ বাড়িতে আসো বলছি ‘
আমি হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি পৌছালাম আসার সময় নানান ও জল্পনা কল্পনা করতে লাগলাম যে এগুলো মিথ্যা বাবা হয়ত মজা করছে। কিন্তু বাড়ি পৌঁছে বাবা আমাকে তোমাকে নিয়ে সব খুলে বললেন… ”
তুষার থামলো কুয়াশা অধৈর্য হয়ে বলল
” আমাকে নিয়ে কি বলল? থামলে কেনো বলো? ”
তুষার কুয়াশার অস্থিরতা দেখে হাসলো আবার বলতে শুরু করলো
” রামিশ আঙ্কেলকে তো চিনো না? ”
” হ্যাঁ আব্বুর বিসনেজ পার্টনার ছিল। কিন্তু পরে তো দুজন আলাদা হয়ে গেছিল হুট করে ”
” রামিশ আঙ্কেলের ছেলে রাজ তোমাকে পার্টিতে দেখে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু রাজ মেয়ে বা জ, ড্রা গ, ছিল। তোমার বাবাকে তোমার আর রাজের বিয়ে কথা বললে তোমার বাবা ভয় পেয়ে যায়। রাজ ছেলেটা ভালো না তোমার বাবা ইনফেক্ট আমরাও জানতাম। বিয়ের কথা উঠার সময় আমার আব্বু সেখানে ছিল। তোমার আব্বু তোমাকে ওখানে বিয়ে দিতে চাই না তাই বলেছিল ‘ আমার মেয়ে এখনো ছোট বিয়ের বয়স হয় নি। ‘
কিন্তু ওরা জোরাজোরি করতে লাগলো। আমার আব্বু না পেড়ে বলে ছিল ‘ আমার ছেলের সাথে কুয়াশার আকদ হয়ে আছে। সেখানে আবার বিয়ের কথা কেনো উঠছে? ‘
ওরা বিশ্বাস করে নি অনেক ঝামেলা করছিলো। তোমাকে তুলে নেওয়ার হু ম কি ও দিয়ে ছিল। আকদের পেপার দেখতে চেয়েছিল। তাই সেদিন রাতেই তোমার আর আমার বিয়ে হয়ে যায়। আমি অনেক রাগারাগি চেঁচামেচি করেছিলাম বিয়ে করবো না বলে কিন্তু লাভ হয় নি। বিয়ে পর তোমাকে দেখলেই আমার রাগ হতো তাই মিস বিহেভ করতাম। আস্তে আস্তে তোমাকে ভালোবেসে ফেলাম নিজেই জানি না। তোমার পাশে কোনো ছেলেকে সহ্য হতো না। আমি চাকরি পাওয়ার পর এখানে আসার পর থেকে তোমাকে প্রচন্ড মিস করতে লাগলাম। তখনি বুঝতে পারি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। ”
” শুধু শুধু আব্বু আম্মুকে ভুল বুঝেছিলাম। আগে এগুলো বললে কি হতো ”
” তুমি আতংক নিয়ে থাকতে সেটা কেউ চাই নি। তোমার আমার বিয়ে কাগজ দেখার পর ওরা আর তেমন ঝামেলা করে নি মেনে নিয়ে ছিল। তারপর ই দু’জন বিজনেস আলাদা করে নেয়। ”
কুয়াশা তুষারের বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বলল ” কখনো ছেড়ে যাবে না ”
” যাবো না। আর তোমাকেও কোথাও যেতে দিবো না ”
আবার ও নিরবতা কুয়াশা এবার তুষারের বুকে মুখ লুকিয়ে বলল ” তুমি বাবা হবে ”
তুষার থমকে যায় অনুভূতি গুলো শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে।বাবা হওয়ার সুখকর অনুভূতি বুঝি এমন?

————————
আজ রিদ মেঘার বিয়ে। ধুমধামে বিয়ে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। ঈশান আর উমাও এসেছে বিয়েতে দুজনের পরিবার ওদের বিয়ে মেনে নিয়েছে এখন সুখেই আছে। অনু আর রাহুলেরও শুধু আকদ হয়ে আছে বিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়ে কিছু দিনের মধ্যে। ৫ বন্ধু মিলে কত দিন পর দেখা গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসার সময় হয়ে উঠে নি বিয়ে বাড়িতে। ইশ সময়ের সাথে সাথে কত কিছু ই না বদলে যায়। আগে ৫ ফেন্ড দেখা না হলে আড্ডা না দিলে মন খারাপ থাকতো আর আজ পাঁচ জনের পথ আলাদা।
কুয়াশার প্রেগন্যান্সির ৭ মাস চলছে। তুষার বা বাসার কেউই কুয়াশাকে কোনো কাজে হাত লাগাতে দিচ্ছে না। কুয়াশাকে শুয়ে বসে দিন কাটাতে হচ্ছে। কুয়াশা জেদ করেই আজ লাল শাড়ি পড়ে স্টেজের সামনে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। তুষার পাশে বসে সেটা খেয়াল করে বলল
” কি হয়েছে? আমি কি তোমাকে কিছু বলছি বা বকছি? এভাবে বসে আছো কোনো? ”
” তোমাকে এতো সুন্দর হতে কে বলেছে? ”
তুষার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো কুয়াশার দিকে। কুয়াশা আবার বলল ” সব মেয়েরা কেমন করে তাকিয়ে আছে ”
তুষার বিরক্ত হয়ে বলল
” পাগল তুমি? ”
” আজ আমাকে বাজে দেখতে হয়ে গেছি। মোটা হয়ে গেছি বলে তুমি আবার বিয়ে করবে ”
” কুয়াশা আমার হাতে এখন মা র খেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে তোমার? ”
কুয়াশা আবারও মুখ গোমড়া করে রইলো। তুষার কুয়াশাকে টেনে বুকে এনে বলল
” আমি এক নারীতে আসক্ত পুরুষ অন্য নারীরে দেখা তো দূর মাথাতেও আনি না। ”
কুয়াশার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

~”এখনো মনে সোহাগ জাগে,
আমি প্রেমরোগে শায়িত হই রোজ,
শহরের অলিতে-গলিতে প্রেমরোগনামক বি ষা ক্ত বি ষ ক্রিয়ায় ছেয়ে গেছে
এই প্রেমরোগ থেকে না তুমি কখনো নিস্তার পাবে আর না আমি
তাই তো এর নাম ‘প্রেমরোগ'”~

~ সমাপ্ত ~

[আসসালামু আলাইকুম। পুরো গল্পটা কেমন লাগলো জানাবেন। ]