#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩২
খাওয়া দাওয়ার পাট চুকে যেতেই দেখা মিললো ভিন্ন দৃশ্যর। সামনেই ফাঁকা স্থান যেখানে দলে দলে দম্পতিরা কাপল ডান্সে ব্যস্ত। লাইভ মিউজিক বাঝছে পাশেই। তৌসিফ’রা আড্ডা দিচ্ছিলো এতক্ষণ। আড্ডার মাঝেই বারকয়েক ওর পেটে গুতা দিলো পৌষ। তৌসিফ তাকাতেই কেমন একটা মুখ করে। এর মানে অবশ্য তৌসিফ জানে। বাচ্চারা যেমন এক জায়গায় বেশিক্ষণ টিকে না তেমনই ওর পৌষরাত। তৌসিফ আদর করে করে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখছে ওকে। কিছুটা জাপানিজ ভাবে ডেকোর করাতে নিচেই গদিতে বসা ওরা। তৌসিফ হেলান দিয়ে বসে নিজের বাহুতে পৌষ’র মাথা নিলো হেলিয়ে। এদের আড্ডা চলছে জমকালো ভাবে। পৌষ নজর ঘুরালো। বারের ব্যবস্থা করা। কয়েকজন কি সুন্দর করে গিলছে শুধু। ঠোঁট উল্টায় পৌষ। আর কতক্ষণ?
এদের আড্ডায় ও মন বসছে না ওর। এদের কথা শুরু হয় বিয়ে দিয়ে শেষ হয় বাসর ঘরে এমন একটা অবস্থা। তৌসিফ বরাবর ই বন্ধুদের চোখ রাঙিয়ে রাঙিয়ে চুপ করাচ্ছে। পৌষ মনে মনে গা’লি দিলো, “শা’লা, একেকটা বুড়ো হয়ে ঝুনা হয়ে গেলো অথচ ভাবখানা এমন যে কচি কদু”।
হঠাৎ ই রওনাক হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তৌসিফে’র দিকে তাকিয়ে বললো,
— চল। ডান্স হোক একটা।
তৌসিফ কিন্তু না করলো না। তার শখ আছে বউ নিয়ে অনেক। আহ্লাদীপনা তার ভালোলাগে। বউ মানেই আদরী হবে। সোহাগী হবে। এদের পা থেকে মাথা পুরোটা থাকবে আহ্লাদে ভরপুর। এরা হবে মধু’র রস যা আহরন করবে তার একমাত্র পুরুষ মৌমাছি।
তৌসিফ পৌষ’র দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো বসা অবস্থায়। বাকি বন্ধুরা বউ নিয়ে ফ্লোরে ততক্ষণে। রওনাক জোর দিয়ে বললো,
— কাম ফাস্ট ম্যান।
পৌষ আড় চোখে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— আমি নাচব না। বউ নাচাতে এসেছেন আপনি?
তৌসিফ একটু থতমত খেলো। নিজেকে ধাতস্থ করে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
— ইটস নট লাইক দ্যাট হানি।
পৌষ চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো এক জোড়া চোখ খুব আশা ভরসা নিয়ে তাকিয়ে আছে। পৌষ ফাঁকা ঢোক গিললো। কিছু বলবে তার আগেই কোথা থেকে আরশি হাই হিলের ঠক ঠক আওয়াজ তুলে ওদের সম্মুখে এসে দাঁড়ালো। তৌসিফে’র দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে আবেদনীয় ভাবে বললো,
— মে আই?
হায় কপাল! শা*লী বলে কি? পৌষ’র জামাই’কে পৌষ’র ই চোখের সামনে আরেক মেয়ে বলে ” মে আই”? এই মেয়ের মুখ না খামচে দিবে পৌষ? পৌষ ছোঁ মে’রে উঠলো চিলের মতো। আরশির বাড়ানো হাতে এক চাপড় মে’রে তৌসিফে’র হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। মাড়ি শক্ত করে যেতে যেতে বললো,
— তোমার বাবা’র বয়সী এই ব্যাটা বুঝেছো? একদম তোমার চাচা’কে বিচার দিব৷ বলব আপনার ভাতিজী বিয়ে করার জন্য মুখিয়ে আছে। দেখবে কোন এক গাঞ্জা খোড় ধরে এখনই বিয়ে করিয়ে দিবে।
আরশি হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। ওর বোধগম্য হলো না কিছুই। তৌসিফ যেতে যেতেই পৌষ’কে বললো,
— কি দরকার ছিলো….
— ওওও তাই তো? কি দরকার ছিলো নাআআআ? কচি মেয়ে দেখলেই আপনার বুকের ভেতর তৈ তৈ করে?
— কি সব বলো তুমি হানি? আমার বউ ই তো কচি।
পরের টুকু কানে কানে বললো,
— আজ সাধু পুরুষ বলেই তুমি ফিটফাট আছো হানি। আমি অসাধু হলে আমার তোতাপাখি’র ত ত ত যে কোথায় যাবে তা ঢের জানা আছে আমার।
কথায় কথায় ওরা ডান্স ফ্লোরে চলে এলো। আশেপাশে সবাই হেলে দুলে নাচছে। পৌষ অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
— জামাই, নাচ তো আসে না আমার।
তৌসিফ এক টানে পৌষ’কে নিজের কাছে নিলো। এক হাতে কোমড়ে ধরে পৌষ’র হাত রাখলো নিজের বুকে। টিপটিপ শব্দ করছে পৌষ’র বুকে। তৌসিফ ফিসফিস করে বললো,
— আমাকে সারাক্ষণ ইশারায় নাচিয়ে এখন বলো তুমি নাচ পারো না?
গানের সুরে সুরে সকলে তখন নাচে বিভোর। হঠাৎ ই এনাউন্সমেন্ট হলো। এখন সকলে স্মাচ করবে। পৌষ আশেপাশে দেখে অবাক বনে গেলো। বেহায়া, বেশরম, নির্লজ্জ সবগুলো এখানে। একেকটা বুড়ো বুড়ি, যুবক যুবতীরা এমন ভাবে স্মাচ করছে।
তৌসিফ নেশালো চোখে তাকিয়ে রইলো। খুব ধীরে ধীরে সে মুখ এগিয়ে আনলো পৌষ’র কাছে। এক হাত পৌষ’র চুলের পেছনে দিয়ে হিজাব চেপে ধরে অতি যত্নে সে চুমু দিলো পৌষ’র থুতনিতে। পৌষ চোখ বুজে নিলো।
বলা হয় সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। পৌষ’র সাথে বোধহয় তাই হলো। সে হঠাৎ ই তৌসিফে’র ওষ্ঠাধরে নিজের ওষ্ঠাধর চেপে ধরলো। তৌসিফ অবাক বনে গেলো তবে নিজেও সায় জানালো। অনুভূতি তাদের আজ ভিন্ন। দু’জন ই প্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের মাঝে বাঁধা বলতেও কিছু নেই। স্বাধীন ভাবে দু’জন লেপ্টে গেলো একে অপরের সাথে।
বারে বসে আরশি দেখলো সবটা৷ কষ্টে তার চোখে পানি চলে এলো। তার কাছে তৌসিফ তালুকদার মানুষটা বেশ শখের ছিলো। সে খুব করে চেয়েছিলো তাকে। এখন পৌষ’কে দেখে যেন রাগ চেপে গেলো ওর মাথায়। ক্লাচ হাতড়ে একটা মেডিসিনের পাতা বের করলো। কিছু ক্যাশ ওয়েটারের হাতে দিয়ে গোপনে কিছু বলে আরশি সরে দাঁড়ালো। যেই আগুন তার বুকে জ্বলছে তার কিছুটা স্ফুলিঙ্গের শিকার নাহয় পৌষরাত তালুকদার ও হোক।
___________________
বন্ধুদের পাল্লায় পরে একে একে দুই প্যাক গিলে নিলো তৌসিফ। প্রায় সময়ই খাওয়া হয় তার। তবে পৌষ’কে বিয়ের পর গিলেছিলো একদিন। সেদিন টাই সে আঘাত করেছিলো পৌষ’কে। নেশা যদিও তার তত সহজে হয় না তবুও আজ দুই গ্লাসেই মাথা ব্যথা ভার হলো যেন৷ পৌষ গিয়েছে ওয়াশরুমে। সেই ফাঁকেই গিলেছে তৌসিফ। রওনাক আরেক গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— পৌষ আসতে আসতে গিলে ফেল।
তৌসিফ হেসে বললো,
— বউ ভয় পাই না আমি।
বলেই গিলে নিলো। প্রায় দশ মিনিট পর ও যখন পৌষ এলো না তখন তৌসিফ উঠে দাঁড়ালো। বউ কোথায় গেলো ওর? তৌসিফ লেডিস ওয়াশরুমের সামনে যেতেই দেখলো শাড়ী ঠিক করতে করতে পৌষ বেরিয়ে আসছে। তৌসিফ গিয়ে বাকিটা পথ বউকে ধরে নিয়ে এলো। ওর পা তখনই টলছে যদিও এটা হওয়ার কথা না। এত টুকুতে তো তৌসিফে’র গলা ই ভিজে না। “চ্যাহ” শব্দ করতেই পৌষ জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে?
— কিছু না। বাসায় যাচ্ছি আমরা।
— বাঁচা গেলো। কি এক জায়গা ভালো লাগে না।
তৌসিফ রওনাকের কাছে গিয়েই বললো,
— চিকেল বল দিয়েছিস?
— গাড়িতে পাঠিয়েছি।
রওনাকের বউ সহ বাকিরা এসে পৌষ’কে বিদায় জানালো। কেউ কেউ আবার পৌষ’র কানে কানে পরামর্শ দিলো। আমলে নিলো না পৌষ। তৌসিফ বিদায় জানিয়ে গাড়িতে পৌষ’কে বসিয়ে বললো,
— দুই মিনিট বসো। আসছি।
পৌষ কিছু বলার আগেই তৌসিফ চলে গেল। ভেতরে ঢুকতেই রওনাক হাসি মুখে ইনটেক বোতল খুলে দিলো। দাঁড়িয়েই তা ঠোঁটে লাগালো তৌসিফ। বেশিক্ষণ লাগলো না। সে সাবার করে নিলো সবটা। রওনাক জিজ্ঞেস করলো,
— প্যাক করে দিব?
— ধুর শা’লা। এখন এসব খাই না আমি। বউ আছে না?
সবে মাত্র গিলা পাবকিল এই কথা বললে বুঝতে আর বাকি রয় না তাকে নেশা ধরেছে নাকি সে নেশাকে ধরেছে। টলতে টলতে বেরিয়ে এলো তৌসিফ। রওনাক দৌড়ে ওর পেছনে এলো। গাড়িতে তুলে দিতেই তৌসিফ বসলো পেছনে। রওনাক ই ওর ড্রাইভার আনিয়েছে। জানা আছে তৌসিফ তালুকদার এখন ড্রাইভিং করতে পারবে না। তবে এতটা ইফেক্ট ও পরার কথা ছিলো না।
মুখে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে পৌষ’র কাঁধে মাথা দিলো তৌসিফ। নাকে অল্প গন্ধ আসতেই পৌষ বলে উঠলো,
— কেমন একটা গন্ধ আসছে।
তৌসিফ মুখ খুলে বললো,
— নতুন পারফিউউমমম হানি।
তৌসিফে’র কথা বলার ধরণ দেখে পৌষ বুঝলো না কি হয়েছে তাই জিজ্ঞেস করলো,
— ঠিক আছেন?
তৌসিফ হঠাৎ ই শাড়ীর আঁচল সরিয়ে পেটে হাত দিলো। পৌষ’র কাঁধে মাথা রেখে বললো,
— মাই হানি, ক্যান আই হ্যাব সাম?
পৌষ তড়িৎ গতিতে তৌসিফে’র মুখের সামনে নাক নিয়ে বললো,
— ইয়াক। কিসের গন্ধ আসছে? এই, আপনি মদ খেয়েছেন নাকি?
তৌসিফ সটান হয়ে বাবু সেজে বসলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— আমি ওসব খাই না পৌষরাত।
#চলবে….
#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৩
[পর্বটা রোম্যান্সধর্মী]
একদম সঙ সেজে গাড়িতে বসে রইলো তৌসিফ। সেই যে চুপ করেছে আর কথা নেই। এদিকে গাড়ির এক কোণায় সেটিয়ে বসা পৌষ। ওর মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। এই লোক গলা অবদি মদ গিলে এখন বলছে সে নাকি ওসব খায় না। তাহলে গন্ধ আসে কোথা থেকে? এখন আবার ঢং দেখিয়ে চুপ করে আছে। এসব দেখে পৌষ অবশ্য একটু ভয়েও আছে। এসব মাতাল আতাল তার ভয় লাগে। এদের হুশ জ্ঞান থাকে না। বলা তো যায় না কখন কি করে বসে।
আচমকাই তৌসিফ ধপ করে মাথা রাখলো পৌষ’র কোলে। ভয়ে “ওমাগো” বলে উঠলেও সত্যি বলতে পৌষ ব্যথা ও পেয়েছে। এভাবে এতবড় ভারী মাথার ভারটা পুরো হুট করে কোলে রাখাতে এই ব্যথাটা পেয়েছে ও। তৌসিফ ওর কোলে মুখ গুজে দিয়েই বলে উঠলো,
— চুল টেনে দাও হানিইই।
নাহ্। কণ্ঠ বান্দার একদম ই স্বাভাবিক না৷ ভয়ে ভয়ে পৌষ ওর চুলে হাত রাখতেই খপ করে হাত ধরে আটকালো তৌসিফ। হঠাৎ এহেন কান্ডে পৌষ’র বুকটা ধরাস করে উঠে। তৌসিফ দুই পাটি দাঁত বের করে হেসে জিজ্ঞেস করলো,
— তোমার চোখ, মুখ এমন দেখায় কেন হানি? আর ইউ ড্রাঙ্ক?
হায় কপাল! কই যাবে এখন পৌষ? ও কি চলতি গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিবে নাকি মাটি ফাঁক করে ঢুকে যাবে? একূল ওকূল দুই কূল হাতরিয়ে উত্তর পায় না পৌষ। গলা পর্যন্ত নিজে গিলে সেই বান্দা এখন পৌষ’কে জিজ্ঞেস করে পৌষ গিলেছে কি না? এ ও হওয়ার ছিলো?
হাত দিয়ে ঠেলে সরালে চাইলো ওকে পৌষ তবে সম্ভব হলো না। এত বড় দামড়া লোকটাকে কিছুতেই সরানো গেলো না। পৌষ হতাশ! বড়ই হতাশ।
তৌসিফ কোলের মধ্যে ই মাথা দিয়ে গুতাগুতি শুরু করলো। এই জ্বালা কোথায় রাখা যায়? মূলত সে ঘুমাতে চাইছে এখানে কিন্তু জায়গা হচ্ছে না। পৌষ অল্প সল্প ব্যথা পেয়ে বলে উঠলো,
— আমি ব্যথা পাচ্ছি তো।
তৌসিফ ফটাক করে মাথা তুললো। বড় করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আমি কখন ব্যথা দিলাম? অ’শ্লীল হচ্ছো দিন দিন।
আকাশ থেকে যেন টুপ করে মাটিতে পরলো পৌষ। লজ্জায় ওর জান যায় যায় অবস্থা। ড্রাইভার যদিও সামনে তাকিয়ে কিন্তু কান তো গাড়ির ভেতরেই। এই লোক এমন ভাবে কথা বলবে কে বুঝেছে? পৌষ চুপ করে থাকাতে তৌসিফ ওর হাত ধরে টেনে নিজের কোলে তুলে ফেললো। পৌষ চমকালো। তাকে এই মাতাল লোক গাড়ি থেকেই না ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
কপাল ভালো বলে তা হলো না বরং পৌষ’কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো তৌসিফ। কানে ফিসফিস করে বললো,
— নৌকা চলছে হানি। নড়াচড়া করো না৷ পরে যাবে পানিতে।
তখনই গাড়িটা এক ঝাঁকি খেলো। সাথে সাথে হৈ হৈ করে উঠলো তৌসিফ। ভয়ে এবার পৌষ কেঁদে ফেলার উপক্রম যা তৌসিফে’র দ্বিতীয় কাজে পৌষ বাঁধ ধরে রাখতে পারলো না। গাড়ির সিটে দুই পা তুলে তাতে এখন বসিয়ে রেখেছে ওকে তৌসিফ। তার কথা এক, দাবি এক। বউ ডুবে যাবে। সিটের নিচে সব পানি। ড্রাইভারকে ধমক দিলো তৌসিফ,
— আস্তে নৌকা টানো মাঝি। বউ সহ এসেছি। ডুবে যাব তো।
ড্রাইভার পুরাতন লোক। ক থেকে চন্দ্রবিন্দু চাঁদ সবটাই তার জানা। তাই তো ততটা রিএক্ট সে দেখাচ্ছে না। আচমকাই পৌষ’র বোবাকান্না হু হু আঁকারে রুপ নিলো যখনই গলা ছেড়ে গান ধরলো তৌসিফ,
“বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না
বন্ধু তিনদিন!
গাঙ পাড় হইতে দুই আনা
ফিরা আইতে এক আনা
আইতে যাইতে তিন আনা
উসুল হইলো না
বন্ধু তিনদিন।
উহু বন্ধু দুই দিন
আহা বন্ধু একদিন”
আর গাইতে পারলো না বেচারা। নেশার তালে গাড়িকে নৌকা ভাবলেও বউকে কিন্তু সে ফুপাতো বোন ভাবতে পারে নি। বউকে বউ ই ভাবছে সে। কথায় বলে,”পা’গলের বুঝ ষোল আনা”। পৌষ’র বলতে মন চাইলো,”মাতালের বুঝ একশত আনা”।
বউয়ের কান্না দেখেই তৌসিফ তালুকদারের গলার সুর বদলে গেলো। পায়ের উপর বসিয়ে রাখা বউকে সে টেনে টুনে কোলের উপর নিলো। দুই চোখ মুছে দিতে দিতে বলে উঠলো আদুরে গলায়,
— আহা আহা আমার বউ কাঁদে কেন?
তৌসিফ’কে এত মাসের বিবাহিত জীবনে এহেন রুপে পৌষ দেখে নি। ভয়ে ওর আত্মা গলায় আটকে আসছে। কোনমতে শুধু বললো,
— আমি যাব না আপনার সাথে।
পৌষ ভাবলো ক্ষেপেই না যায় এই লোক কিন্তু কই ক্ষেপলো তো না উল্টো খিটখিট করে হাসতে লাগলো। পৌষ’র ভয় বাড়লো। ও কাঁদো কাঁদো গলায় ই ড্রাইভার’কে বলে উঠলো,
— ভাই আমাকে আমার বাসায় দিয়ে আসুন। আমি যাব না মাতাল খোড়ের সাথে।
হঠাৎ গাড়ি কাঁপিয়ে ধমক দিলো তৌসিফ। ছিটকে গেলো পৌষ। তৌসিফ দাঁত চেপে ধরে বললো,
— বেয়াদপ হচ্ছো দিন দিন তুমি। জামাই’কে মাতাল ডাকে কেউ? কে মাতাল? আমি কি মদ খেয়েছি যে মাতাল হব?
পৌষ থম ধরে গেলো। তৌসিফ রুপ বদলালো গিরগিটির মতো। সুর বদলে বউ’কে ধরে নরম হয়ে বললো,
— হানিই, ক্যান আই হ্যাব এ উম্মা?
পৌষ’র হঠাৎ ই যেন রাগ উঠে গেলো। তড়াক করে সরে গিয়ে বললো,
— নো উম্মা। সরুন সামনে থেকে। মুখে গন্ধ আপনার। খাচ্চড় লোক!
বাড়িতে চলে আসায় ডোর খুলে বেরিয়ে এলো পৌষ। পেছন থেকে সমান তালে তৌসিফ চিল্লিয়ে যাচ্ছে,
— বউ গেলো। আমার বউ গেলো পানিতে। বউ ডুবে গেলো আমার।
পৌষ পেছনে তাকালো না আর। সোজা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলো। ড্রাইভার ধরে ধরে তৌসিফ’কে বের করতেই তৌসিফ গমগমে স্বরে বললো,
— আমি পানিতেও হাটি, মাটিতে হাটি আমি কিন্তু বাতাসেও হাটি।
— জ্বি মামা।
— তোর মামি কই?
— ভেতরে গিয়েছেন।
— দেখলি আমাকে রেখে চলে গেলো।
পৌষ রুমে ঢুকার আগেই দেখলো সোহা বসা সোফায়। ওর দিকে না তাকিয়েই পৌষ রুমে ঢুকে জুতা আর হিজাব খুললো। হাতের চুড়ি গুলো খুলতেই পেট মুচড়ে উঠলো ওর। ওয়াশরুমে ঢুকে গলগলিয়ে বমি করে দিলো পৌষ। গাড়িতে এতক্ষণ যাবৎ বিশ্রি গন্ধের মধ্যে ছিলো ও। কতবার মুখের সামনে এসে কথা বলেছে তৌসিফ। এই গন্ধে নাড়ি ভুঁড়ি উল্টে আসছে যেন।
তৌসিফ’কে ড্রাইভার রুমে নিতে নিলেই সোহা আটকে দিলো। থমথমে গলায় বললো,
— সোফায় রেখে যান।
ড্রাইভার বলতে গিয়েও কিছু বললো না। সামান্য কর্মী সে। তৌসিফ’কে সোফায় রেখে যেতেই সোহা মেইন ডোর লক করে দিলো। তৌসিফে’র কাছে এসে গায়ে হাত দিতে নিলেই তৌসিফ সরিয়ে দিলো। নিভু নিভু চোখে বলে উঠলো,
— উপফ সোহা, রুমে যাও।
সোহা মুচকি হাসলো। সে বুঝে গেলো তৌসিফ তালুকদার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না তাই তাকে যেতে বলছে। এরমানে সে আজ ভালোই গিলেছে কারণ এক দুই বোতল দিয়ে তো গলা ভেজায় তৌসিফ। আজ যেহেতু টলছে এর মানে গিলেছে ভালোই। সোহা ওর পাশে বসতে বসতে বললো,
— তোমার বউ রুমে। দিয়ে আসব?
— আই উইল ম্যানেজ।
— সে তোমাকে ধোঁকা দিলো অথচ তুুমি তার কাছেই যাবে?
“ধোঁকা” শব্দটা কানে বিঁধলো যেন তৌসিফে’র। মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলো,
— পিয়ু?
সোহা মুচকি হাসলো। মাথা নেড়ে বলে উঠলো,
— তোমার পিয়ু তোমার রুমে।
— কখন এসেছে?
— জানি না তো। তোমার অপেক্ষা করছে। যাও।
তৌসিফে’র চোখ দুটো জ্বলে উঠলো। রাগে দপদপয়িয়ে উঠলো মস্তিষ্ক। উঠে যেতে লাগলো টলমলে পায়ে। এদিকে সোহা হাটা দিলো নিজের রুমে। তার কাজ শেষ। আজ ঐ মেয়ে বুঝবে তৌসিফ কে।
রুমে ঢুকতেই তৌসিফ দেখলো কালো শাড়ী পরা কেউ ওর বিছানায় উল্টো দিকে ফিরে আছে। তৌসিফে’র কানে বাজছে “পিয়ু”। বিকৃত মস্তিষ্ক তখন ততসব বুঝে না। আচমকা গিয়ে পেছন থেকে চুলের মুঠি চেপে ধরতেই পৌষ চিৎকার করে উঠলো। তৌসিফ ছাড়লো না। চুল ছেড়ে গলায় চেপে ধরে বলে উঠলো,
— কেন এসেছিস এখানে?
পৌষ’র চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এলো। মনে হচ্ছে শ্বাসরোধ হয়ে মা’রা যাবে এখনই। তৌফিক আরেকটু চেপে ধরে বলে উঠলো,
— ***** কেন এসেছিস এতবছর পর? আমার পৌষরাত কোথায়? ওকে কি করেছিস? আমার সুন্দর সংসার ভাঙতে এসেছিস তুই? জানে মে’রে ফেলব!
পৌষে’র মুখ লাল হয়ে এলো। তৌসিফের হাতের উপর দিয়ে হাত দিয়ে সরাতে চাইলো। পুরুষ শক্তির সাথে পারলো না। কোনমতে শুরু বললো,
— আআআমি প..পৌষরাত।
তৌসিফে’র চাপ বাড়লো। ছটফটিয়ে উঠলো পৌষরাত। চাপা স্বরে গুঙিয়ে উঠে পৌষ। তৌসিফে’র হাত ঢিল ছাড়তেই পৌষ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো,
— আমি আমি আপ..নার পৌষরাত। এ..
এই যে আমি।
তৌসিফ পুণরায় একবার গলা চেপে ধরেই ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেতেই এই রুম থেকে দৌড়ে যেতে নিলো পৌষ। শাড়ীতে পা বেঝে একদম ড্রেসিং টেবিলের কোণায় লাগলো কপালটা। জান বাঁচাতে উঠেই দৌড়ে পাশের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো পৌষ। লক করে ই বিছানার পাশে থাকা পানি খেয়ে নিলো। গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। এখনও তার দম আটকে আসছে।
_____________________
প্রায় দুই ঘন্টা পার হলো। রাত গভীর থেকেও গভীর হচ্ছে। বিছানায় এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে তৌসিফ। তার পরণের জুতাটা অব্দি খোলা হয় নি। ধীরে ধীরে তার চোখের পাপড়ি নড়াচড়া শুরু করলো। চোখ খুলেই তৌসিফ নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করলো। আস্তে ধীরে মনে পরলো কিছু। উঠে দাঁড়ালো ও রয়ে সয়ে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো রুম ফাঁকা। পৌষ নেই। তৌসিফ চালাক মানুষ। ও সহজেই বুঝে গেলো ওর ড্রিঙ্ক স্পয়েল করা হয়েছে। উঠে সোজা ফ্রিজের কাছে গিয়ে দুটো লেবু নিলো ও৷ কিচেন ঢুকে কেটে নিলো গোল গোল করে। পা দুটো তখনও টলছে যেন। মুখে লেবু দিয়েই কপাল কুঁচকে নিলো তৌসিফ। শক্ত চোয়ালে চিরবির করে উঠে ওর মস্তিষ্ক। ওর ড্রিঙ্ক স্পাইক করার সাহস কার আছে তা দেখে নিবে তৌসিফ। এক বোতলে ওর নেশা হয় না কখনো।
লেবু খেয়ে ভালো মতো কুলি করলো ও। মুখে আরেক স্লাইস লেবু দিয়ে পাশের রুমে গেলো ও। জানা কথা এখানেই আছে পৌষ। বউ’কে যে ও আঘাত করেছে তা কিন্তু তার মনে নেই। তৌসিফ অবশ্য কিছুটা বিরক্ত ও। ওর মনে হচ্ছে আবছা আবছা ও স্বপ্নে পিয়াসী’কে দেখেছে। আঘাত ও করেছে এমন মনে হচ্ছে। প্রাক্তন মনে রাখার মানুষ ও তৌসিফ না।
দরজা লক দেখে অবলীলায় চাবি দিয়ে খুলে নিলো তৌসিফ। পায়ের জুতা, মুজা খুলে সোজা বিছানায় গেলো ও। কাঁদতে কাঁদতে যে তার বউ ঘুমিয়েছে তা অজানা তার কাছে। আবছা আলো রুমে আসছে বারান্দা থেকে। এলোমেলো শাড়ীতে তার শয্যায় তার একান্ত নারী। তৌসিফ ঝুঁকল। চুমু দিলো কপালে। এক গালে হাত রেখে গলায় চুমু দিতেই পৌষ নড়েচড়ে উঠলো। তৌসিফ আজ যেন পুণরায় একবার পৌষ’কে চাইলো। ওর দেহ, মন খুব করে টানছে। চোখ বুজে শ্বাস নিলো তৌসিফ। এক হাত শাড়ীতে দিতেই ঘুমের মধ্যে লাফিয়ে উঠে পৌষ। তৌসিফ’কে দেখেই ওর ভয় বেড়ো গেলো। বড়বড় চোখে তাকিয়ে পৌষ বলে উঠলো ভীতু করে,
— আ..আমি পৌষরাত। পৌষ আমি। আমি পিয়ু না।
তৌসিফে’র ভ্রূদ্বয় কুঁচকে গেলো সহসা। গম্ভীর কণ্ঠে ডাকলো,
— হানিই?
এই একটা ডাক। একটা ডাক পৌষে’র কলিজা ঠান্ডা করে দিলো। হাউমাউ করে কেঁদে এতক্ষণ ভয় পাওয়া তৌসিফ’কেই জড়িয়ে ধরলো পৌষ। তৌসিফ ভরকে গেলো। দুই হাতে বুকে জড়িয়ে ধরলো পৌষ’কে। অবাক কণ্ঠে বলে উঠলো,
— কি হয়েছে আমার তোতাপাখির?
পৌষ কথা বলতে পারলো না। তৌসিফ ওর মাথায় হাত বুলালো। শাড়ীর আঁচল তখন অবহেলায় পরে। পৌষ তৌসিফে’র গলায় মুখ গুজে কেঁদে উঠলো শব্দ করে। তৌসিফ বুঝলো হয়তো পৌষ এই প্রথম ওকে এমন দেখে ভয় পেয়েছে। আদুরে গলায় তৌসিফ বলে উঠলো,
— হানি, আ’ম সরি। আমার ড্রিঙ্ক কেউ স্পাইক করেছে। আ’ম সরি জান।
পৌষ তৌসিফে’র গালে হাত রাখলো। পাশের গালটা ভরে আদরের সহিত এলোমেলো চুমু দিতে দিতে বললো,
— আমাকে ভুলে গেলেন কিভাবে আপনি? কিভাবে ভুলে গেলেন? বলুন৷ কথা বলুন।
তৌসিফ বুঝলো না। হঠাৎ ওর হাতে চিটচিট করতেই লাইট অন করে ও। ওমনিই আঁতকে উঠে তৌসিফ। পৌষ’র কপাল কেটে সাইড থেকে র’ক্ত বের হচ্ছে। এবার পায় কে তৌসিফ’কে। “আলু ঝালু ব্যাঙের খালু” তার মাথা গেলো খারাপ হয়ে। এন্টিসেপ্টিক দিয়ে কপালে ছোট্ট পট্টি লাগিয়ে ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— কাটলো কিভাবে?
পৌষ চুপ করে রইলো। তৌসিফ ওকে কাছে টানলো। কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— কথা বলো পৌষরাত।
চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি পরতেই তৌসিফ এবার ওর থুতনিতে চুমু দিলো। গালে হাত রাখতেই পৌষ বলে উঠলো,
— আমাকে কিভাবে ভুলে গেলেন আপনি?
তৌসিফ বুঝলো না কিছুই। ওর অবুঝ চাহনি দেখে পৌষ নরম স্বরে বললো,
— আমাকে পিয়ু পিয়ু বলে গলায় চেপে ধরেছিলেন আপনি।
তৌসিফে’র টনক নড়লো হঠাৎ। গলায় তাকাতেই দেখলো স্পষ্ট লাল আঙুলের ছাপ। ফাঁকা ঢোক গিললো তৌসিফ। কি বলবে ও? যেটা স্বপ্ন ভেবেছিলো সেটা ও বাস্তবে করেছে তা ও কি না ওর কলিজার টুকরোটার সাথে?
পৌষ বেহায়ার মতো তৌসিফে’র গলা জড়িয়ে ধরলো। ভালোবাসা না পাওয়া এতিম মেয়েটা আজ আত্মসম্মান ভুলে গেলো। অনুনয় করে বললো,
— আমাকে আর ভুলবেন না হ্যাঁ? আমি কোথায় যাব? আপনি না বলেছিলেন আমাকে ভালোবাসেন? বলুন?
পৌষ চুমু দিলো তৌসিফে’র হাতের উল্টো পিঠে। পুণরায় বললো,
— যে জিনিস আমাকে ভুলিয়ে দেয় সে জিনিস না খেলে কি খুব ক্ষতি হবে?
তৌসিফ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বসে রইলো ওভাবেই। সময় অতিক্রম হতেই শুনা গেলো এক তৃষ্ণার্ত প্রেমিক কণ্ঠ,
— পৌষরাত।
অন্তঃপুরে তখন ধকধক শব্দ। পৌষ উত্তর করে,
— হু।
— আমাকে মাফ করে দাও।
— আচ্ছা।
ওকে বুকে জড়িয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো তৌসিফ। সারামুখে চুমু দিয়ে বলে,
— আজ তোমাকে পেতে মন চাইছে হানি।
— আজ না৷
— তুমি বলেছিলো যেদিন চাইব সেদিন ই…
— বলেছিলাম৷ আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হন।
— আমি সুস্থ আছি তো।
বলেই তৌসিফ দু’জনে কথা আটকে দিলো নিজ উপায়ে। পৌষ ছটফট করতেই ছাড়া হলো। তৌসিফ হাজার অনুনয় করেও কাজ হলো না আজ। পৌষ অনুমতি দিলো না। হতাশার শ্বাস ফেলে তৌসিফ বললো,
— ক্ষুধা লেগেছে তোমার নিশ্চিত?
— হু।
— চলো।
পৌষ উঠতেই ওর শাড়ীর আঁচলটা কাঁধে তুলে দিলো তৌসিফ। কিচেনে ঢুকতেই দেখলো চিকেন বলের প্যাকেট টা রাখা। তৌসিফ সেগুলো প্লেটে তুলে ওভেনে দিলো। গরম করে পৌষ’র সামনে এনে রেখে বললো,
— কাল আবার আনিয়ে দিব নে। সবগুলো খেয়ে নাও।
পৌষ ক্ষুধার চোটে মুখে দিলো। রাতেই ওর ক্ষুধা পায় শুধু। পৌষ তৌসিফে’র মুখে ও দিলো অবশ্য। এতগুলো খাওয়া সম্ভব না৷ দু’জন খেতেই আচমকা পৌষ’কে পাজা কোলে তুলে তৌসিফ। পৌষ গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো৷ দু’জনের মাঝে আর কথা হলো না। অতি যত্নে ওকে ওদের রুমের বিছানায় রাখলো তৌসিফ। দরজা লক করে এসির টেমপারেচার কমিয়ে গায়ে থাকা সাদা শার্টটা খুলে ছুঁড়ে মা’রলো অজানা উদ্দেশ্যে। পৌষ’র কাছে আসতেই পৌষ’র বুকটা টিপটিপ করতে লাগলো।
সময়টা বর্ষাকাল। বাইরে হঠাৎ ই বৃষ্টি শুরু হলো। উত্থাল পাত্থাল আবহাওয়ায় বদ্ধ ঘরে সূচনা হলো এক নতুন অধ্যায়ের। পৌষ’র শাড়ীর আঁচলটা স্থানচ্যুত হলো সেই কখন। গভীর রাতে আশপাশ একদম ই নীরব। তপ্ত শ্বাস ফেলে অস্থির তৌসিফ। পৌষ’র কপালের ছোট্ট পট্টিটা খুলে পরতেই কপাল থেকে র’ক্ত গড়িয়ে পরলো। পৌষ পাশ থেকে হাতড়ে বালিশ পেয়ে তাতেই কপাল মুছলো ও। এদিকে তৌসিফ হুশ হারা। ওর উন্মাদনায় পৌষ যেন মা’রা যাচ্ছে। পৌষ নিজের সবটা উজার করে দিলো। ওর প্রেমে হাবুডুবু খেলো তৌসিফ। পৌষ’র সেই প্রেমসুধা পানে অস্থির তৌসিফ। এদিকে তৌসিফে’র উৎপীড়নে পৌষ হারিয়ে গেলো যেন গহীনে। সেখানে তার নিস্তার নেই। তৌসিফ ছাড়া তার কোন গন্তব্য নেই। পৌষ’র শুরু এবং সমাপ্তি দুটোই যেন তৌসিফ যার আদরে সোহাগে ভেসে যায় পৌষ অতলে গহ্বরে। রাত যেন শেষ হয় না সেই সাথে শেষ হয় না তৌসিফে’র ভালোবাসা। দুটো দেহ এক আজ এই গভীর রাতে তাদের প্রেমের সাক্ষী রাইলো ঠান্ডা বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি।
শেষ রাতে তৌসিফ ক্লান্ত হলো বটে। পৌষ’কে টেনে বুকে জড়িয়ে নিতেই পৌষ ভাঙা গলায় নাক টেনে বললো,
— এএএই মামাতো ভাই……
বাকিটা বলার আগেই ওর মুখ বন্ধ করে তৌসিফ। ভারী শ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো,
— এর জন্য তুমি দায়ী হানি।
#চলবে…….
#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৪
ভোর কেটেছে সেই কখন অথচ ঘুম ভাঙে নি চড়ুই যুগলের। বাইরের চড়ুই গুলো কিন্তু বারান্দায় হাজির। তারা নিজেদের শব্দে কিচিরমিচির করছে। এক ফালি রোদ পর্দা ভেদ করে রুমে উঁকি দিলো। রুমের ভেতরটা একদম ঠান্ডা। কনকনে ঠান্ডা বললেও ভুল হবে না বোধহয়। তৌসিফ তালুকদার এভাবেই ঘুমায়।রুম সাইবেরিয়া বানিয়ে সে গায়ে কম্ফোটার নিয়ে ঘুমায়। মাঝে মধ্যে খালি গায়েই শুয়ে থাকে। আজকের বিছানার দৃশ্যটা অবশ্য ভিন্ন। দুটো কম্ফোটার দিয়ে ঢাকা দু’জন। আপাত মস্তক ঢাকা পৌষ’র। তার অস্তিত্ব বুঝা দায়। সে যেন এখানে নেই। তৌসিফে’র মাথাটা শুধু দেখা যাচ্ছে। তার বুকের একদম মধ্যিখানে পৌষ’র মাথাটা নেয়া। কোনমতে ফাঁকফোকর দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে ও। তৌসিফে’র ঘুমের মাঝে পরন্ত নিঃশ্বাস গুলো উষ্ণতা ছড়াচ্ছে রৌদ্রোজ্জ্বল বেলায় পৌষ’র মুখে। আদরে পৌষ গুটিয়ে যায়। তার ক্লান্ত দেহে ঘুম আজ খুব করে হানা দিয়েছে। সবার আগে অবশ্য ঘুম তৌসিফে’র ই ভাঙলো। মর্নিং ওয়াকে যাওয়াটা তার স্বভাব। জিম মিস দেয়া হয় না সচরাচর। একটা লাইফ স্টাইল আছে তৌসিফ তালুকদারের। এখন তো দায়িত্ব যেন আরো বাড়লো। গতরাতে চড়ুই পাখি আটকেছে সে খাঁচায়। তার হৃদ কুঠুরিতে করা ছোট্ট এক সোনার খাঁচা যাতে ধরে বেঁধে সে বন্দী করেছে এক পাখি। সেই পাখি বড়ই রঙিন। প্রতিনিয়ত তৌসিফ’কে কাল সাত রঙের দেখা দিয়েছে। জমিয়ে রাখা সকল ভালোবাসা এলোমেলো ভাবে বিলিয়ে দিতে উৎসাহিত করেছে। তৌসিফ পা’গল বনে গিয়েছিলো। উন্মাদের মতো আচরণ করেছে সে। পৌষ আস্কারা দিয়েছে অবশ্য।
তৌসিফ কিন্তু অবাক ও হয়েছে। তার বউটা এতটা সাপোর্ট তাকে দিবে তা ইহকালে সে ভাবে নি কিন্তু সে এটাও মানে তার বউটা ঠিক নেই। রাত থেকেই কিছুটা অসুস্থ বটে। এমন তাগড়া জোয়ান পুরুষ সামলানো তার জন্য কষ্টসাধ্য। তৌসিফ সেটা জানে এবং বুঝে তবুও কিভাবে জানি অবুঝ বনে গেলো। এতদিনের জমিয়ে রাখা প্রেম সে উথলে দিয়েছিলো। পৌষ একেবারে জন্য ও বাঁধা দেয় নি। তৌসিফের ভাবতেই অবাক লাগে যেন।
চোখ খুললো তৌসিফ পুরোপুরি ভাবে। অনুভব হচ্ছে বুকের মধ্যে থাকা ঘুমন্ত পাখিটাকে। সে একদম গুটিয়ে আছে। সকালেই তো ঘুমালো পাখিটা। তৌসিফ ছাড় দেয়ার মানুষ না৷ সে ছাড় দেয় ও নি। সবটুকু প্রেমসুধা সে পান করেছে। চোখ খুলেই মুচকি হাসলো তৌসিফ। হাজার হোক জোয়ান পুরুষ সে। তার চাহিদা ছিলো। পৌষ’কে পেতে কতবার যে মরিয়া হয়ে উঠতো কিন্তু পাওয়া হতো না। আজ যেন সে তার সবটুকু সুখ পেলো। মাথাটা ভেতরে ঢুকিয়ে পৌষ’র কপালে চুমু দিলো একটা। বউ তার গভীর ঘুমে মগ্ন। তৌসিফ গভীর ভাবে নিজের মাঝে লেপ্টে নিলো ওকে। হঠাৎ ই খেয়াল বউটার শরীর গরম। হাত বাড়িয়ে এসির রিমোট নিয়ে টেমপার বাড়িয়ে দিলো ও। গায়ে হাতড়ে দেখলো শরীরটাও অল্প গরম। ভোরে গোসল করাতেই কি এমন হলো? তৌসিফে’র মাথায় কিন্তু চিন্তা ঢুকে গেলো। বউয়ের শরীর খারাপ থাকা যাবে না। বউ থাকবে ফিটফাট। ল্যাদানো বউ হলে তো হবে না।
তৌসিফ আস্তে করে ডাকলো,
— পৌষরাত?
উত্তর এলো না। আসবে কিভাবে তৌসিফ ডেকেছেই অনেক ধীরে। ঠোঁট কামড়ে আবার ডাকলো ও,
— হানিই। ওয়েক আপ না প্লিজ। খেতে হবে তো। মেডিসিন নিতে হবে। জ্বর আসছে।
পৌষ বুকে ঘাঁটি বেঁধে মুখ দিয়ে ঘঁষে সেখানেই সেটিয়ে রইলো। তৌসিফে’র মায়া হলো বটে কিন্তু তুলতে তো হবে তাই আস্তে করে মুখটা নামিয়ে গলায় ছোট্ট একটা কামড় বসালো। ঘুমের মাঝেই কেঁদে উঠলো পৌষ। তার চোখ খুলছে না। টেনে চোখ মেলার আগেই গলায় অজস্র চুমু বসলো। কানে শব্দ এলো,
— সরি সরি হানি।
চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়ালো। পৌষ চোখ খুলতেই দেখা মিললো তৌসিফের। একদম কাছাকাছি তার। হঠাৎ ই লজ্জা এসে ভীর জমালো ওর মাঝে। গত রাতের কথা স্মরণে আসতেই যেন লজ্জায় ম’রে যেতে মন চাইলো পৌষ’র। বালিশে মুখ গুজে দিতেই ওর পিঠে মাথা রাখলো তৌসিফ। ঘাড়ে হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বললো,
— উঠবে না হানি? খাওয়া দরকার তোমার।
পৌষ মুখে শব্দ করে,
— উহুম।
— কোন উহুম না পৌষরাত। উঠো। কাম ফাস্ট।
বলেই দুই হাতে টেনে তুললো ওকে। পৌষ’র পরণে তৌসিফের ই এক শার্ট। তখন তারাহুরোয় তৌসিফ ই পরিয়েছিলো। শীতে কাঁপছিলো পৌষ। তাই তো বউকে এত উষ্ণতায় বুকে পুরে রেখেছিলো ও।
গলার দিকে দুটো বোতাম খোলা। একদম পাক্কা ছ্যাঁচড়ার ন্যায় উঁকি দিলো তৌসিফ। পৌষ দুই হাতে চেপে ধরলো সেখানে। তৌসিফ হাত টেনে সরাতে চাইলেও পৌষ দিবে না। তৌসিফ বারবার বলছে,
— হানি দেখাও। আমি ই তো। আহ্হা তোতা পাখি না তুমি আমার?
পৌষ কথা না বলে তৌসিফ’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠতে নিলেই ধপ করে বসে পরলো। পেছন থেকে তৌসিফ ধরে উষ্ণ গলায় বলে উঠলো,
— ঠিক আছো?
পৌষ কথা বলে না। সেই গতরাত থেকে চলছে এটা। কথা সে বলছেই না। তৌসিফ পেছন থেকে ওকে আলিঙ্গন করলো। মাথায় চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— খারাপ লাগছে?
পৌষ মাথা নামালো। তার খারাপ লাগছে না কিন্তু কেমন লাগছে তাও জানা নেই ওর। এলোমেলো এক অনুভূতি। মা নেই। কোন কাছের বান্ধবী নেই। না আছে বড় কোন বোন। অনেক কিছুই তার অজানা যার সরাসরি দেখা সে গতরাত পেয়েছে। তৌসিফ তাকে যথাযথ সাপোর্ট দিয়ে সামলেছে কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পরে বুঝা আর পূর্ব জ্ঞান থাকা দুটোই ভিন্ন জিনিস।
পৌষ শ্বাস ফেললো। তৌসিফ ওকে ছেড়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পৌষ’র মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে বললো,
— তাকাও আমার দিকে।
নজর তুলেও নামিয়ে ফেলা হলো। তৌসিফ বললো আদর লাগিয়ে,
— কি সমস্যা হচ্ছে আমাকে বলো পৌষরাত।
পৌষ’র চোখ ভিজে গেলো। তৌসিফ বুঝে। পৌষ’র মাথায় হাত রেখেই বলে,
— যাকে ভালোবাসি তার সবটা আমার নখদর্পনে পৌষরাত। আমার জানা আছে তোমার কি সমস্যা হতে পারে। সে অনুযায়ী সবটা সামলেছি। এখন কথা বলো তুমি। আমাকে জানাও কি সমস্যা হচ্ছে এখন? নাকি আমার ভালোবাসা সেই বিশ্বাসটুকু অর্জন করতে ব্যর্থ?
পৌষ আচমকাই তৌসিফে’র কোমড় জড়িয়ে ধরে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে মিনমিন করে জানায়,
— ব্যথা হচ্ছে।
তৌসিফ ঢোক গিললো। পৌষ’র মাথাটা জড়িয়ে রাখলো কিছুক্ষণ অতঃপর মাথা তুলে চোখ মুছে পাজা কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিতে নিতে বললো,
— আজই ঠিক হয়ে যাবে। আগে ফ্রেশ হও।
.
আজ বুয়াদের হাতের নাস্তাই কপালে জুটলো। তৌসিফে’র বউ রান্নার সময় পায় নি। না সে পারতো। রুমে নাস্তা এলো দুজনের। তৌসিফ মুখে তুলে খাওয়ালো পৌষ’কে। সমস্যা একটাই রাত ভরে যার ক্ষুদ্র লাগে দিন ভর তার খাওয়া নিয়ে সমস্যা।
পৌষ’কে খায়িয়ে মেডিসিন দিলো তৌসিফ। কফি হাতে বারান্দায় দাঁড়াতেই পুকুরে নজর গেল। কচুরিপানা জমেছে অনেক। পানি দেখা যাচ্ছে না। পরিষ্কার করাতে হবে। পৌষ’র অনেক ইচ্ছে এখানে থাকা নৌকায় এই ছোট্ট পুকুর ঘুরবে ও। বউয়ের কোন ইচ্ছে অবশ্য তৌসিফ অপূর্ণ রাখবে না। ফোন হাতে তুলেই আগে পুকুর পরিষ্কারের আদেশ দিল ও।
পরবর্তী কলটা করলো রুমে ঢুকে।
পৌষ তৌসিফে’র আরেকটা ফোন ঘাটছিলো। হঠাৎ কথায় চমকালো ও। তৌসিফ গম্ভীর কণ্ঠে কাউকে বলছে,
— ওকে যেভাবেই হোক রাজি করাও। প্রয়োজনে কপালে পি*স্তল ধরো। সোহার বিয়ে এই মাসেই হবে। আমার সংসারে অশান্তি লাগানো ছুটাচ্ছি আমি। শুধু মাত্র কাল ভালো কিছু হয়েছে নাহয় আমি দেখতাম তৌসিফ তালুকদার কি জিনিস।
#চলবে……
#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৪(সারপ্রাইজ পর্ব)
বালিশে র’ক্ত দেখে চমকালো তৌসিফ। হঠাৎ ই মনে পরলো রাতের কথা। বউটার কপাল কেটে গিয়েছিলো। ভোরে যদিও পুণরায় তাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে তাও একবার ডাক্তার দেখাতে হবে। গলার দাগ গুলো ও লাল হয়ে আছে। তৌসিফ নিজেই বালিশের কভার খুললো। পৌষ বারান্দায় বসে আছে। তোতাপাখি কথা কয় না। তৌসিফে’র বুকটা কেমন জানি লাগে। লজ্জায় নাকি অন্য কিছু? তৌসিফ রুমে থেকেই উচ্চস্বরে ডাকলো,
— বুয়া? বুয়া?
মিনিটের মাথায় বুয়া আসতেই তৌসিফ বললো,
— চাদর পাল্টে দাও। রুম পরিষ্কার করো। ফাস্ট। আর হ্যাঁ, সাদা আর ভায়োলেন্ট কালারের মিক্স চাদরটা বিছাবে।
বুয়া মাথা নাড়লো। তৌসিফ এক পলক দেখলো বারান্দায়। পৌষ ঐ পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছে। পুকুর কচুরিপানায় ভর্তি। তাতেই পা ডুবিয়ে দুটো ছাগল আর একটা গরু খাচ্ছে কিছু। পাশেই পালে হয়তো কেউ। ছুটে এখানে এসেছে। এমনি সময় হলে হয়তো তৌসিফ লোক পাঠাতো কিন্তু এই মুহুর্তে পাঠালো না পৌষ দেখছে বলে।
তৌসিফ চলে গেল সেখান থেকে। পা বাড়ালো বাইরের দিকে। ড্রয়িং রুমে সোফায় বসলো আয়েসি ভঙ্গিতে। গম্ভীর কণ্ঠে ডাকলো,
— সোহা?
তৌসিফে’র এই ডাকের গুঞ্জন যেন চারদিকে ছড়িয়ে পরলো। মিনু কিচেনে ছিলো। ওখানেই চমকে উঠলো ও। হঠাৎ এভাবে আপা’কে ডাকলো কেন? খারাপ কিছু কি ঘটলো?
তৌসিফ সিনা টানটান করে বসা। সোহা টিপটিপ করা বুক নিয়ে সম্মুখে হাজির হতেই তৌসিফের উদ্দেশ্যে বলতে চাইলো,
— ডেকে…
আর কিছু বলার আগেই ধমকে তৌসিফ জানালো,
— আগামী কাল তৈরী থাকবে। মেহেদী আসবে। আগামী কাল ই কাবিন হবে। আর হ্যাঁ, আগামী কাল ই তুলে নিয়ে যাবে। ওখানেই থাকবে তুমি। আর এটা ভেবো না সৎ বলে আমি অবহেলা করছি। ধুমধাম করেই অনুষ্ঠান করব। আপাতত মেহেদীর পরিবার তোমাকে তুলে নিতে চাইছে।
ডাহা মিথ্যা। মেহেদী’র মতো ভদ্রলোকের কপালে শুধু ব’ন্দুক ঠেকানো বাকি ছিলো। তৌসিফ নিজে লোক পাঠিয়ে তাকে জানিয়েছে। জানিয়েছে বললেও পাপ হবে। এককথায় মহা পাপ কারণ তৌসিফ মানুষ দিয়ে ধমকে ধামকে মেহেদীকে বলেছে সে যাতে তৌসিফে’র কাছে প্রস্তাব রাখে। এর অবশ্য কারণ আছে, তৌসিফ তালুকদার মাথা নুয়াবার নয়। শিরদাঁড়া উঁচু করে চলার মানুষ সে।
সোহা আশ্চর্য হলো। এটা তো হওয়ার কথা না। ও তো এমন কিছু ভাবে নি। গতরাতে তাহলে কি হলো? সোহা তো কান্নার শব্দ ও শুনেছিলো পৌষ’র। প্রতিবাদ করে উঠে সোহা,
— আমার অনুমতি ছাড়া…..
এক কথায় ওকে থামিয়ে দিলো তৌসিফ,
— হয় বিয়ে করে স্বসম্মানে বের হবে নাহয় আজীবনকার মতো তালুকদার বাড়ী ছাড়বে। চয়েজ ইজ ইওর্স।
থমকে গেলো সোহা। চোখ দুটো টলমল করে উঠলো। হাত দুটো মুঠ করে কিছু বলতে গিয়েও তৌসিফে’র দিকে তাকিয়ে আর বলা হলো না৷ সাহস ই হলো না। তৌসিফ উঠে দাঁড়ালো। এক বান্ডল সোহা’র পাশে রেখে বললো,
— শপিং এ যাও। ডু হোয়াট এভার ইউ ওয়ান্ট টু ডু। টাকা কম পরলে আমাকে জানাবে। আর তোমার পোশাক মেহেদীর পরিবার ই নিয়ে আসবে কাল। টুকটাক যা লাগবে তুমি নিয়ে আসো।
সোহা থমকে রইলো। তৌসিফ যেতে নিয়েও ফিরে এলো। থমথমে গলায় বললো,
— ধন্যবাদ।
সোহা চমকালো। চোখ তুলে তাকাতেই তৌসিফে’র চোখের রহস্যময় হাসিটা ওর দৃষ্টিতে বিঁধলো। ঠিক যেন কোন সূক্ষ্ম সূঁচ। অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব হলো ওর। এটা তো চায় নি সোহা।
.
রুমে ঢুকা মাত্র ই ফটফটা, গোছালো রুম পেলো তৌসিফ। সব একদম টিপটপ করে রাখা তবুও যেন কিছু নেই আর তা হলো তৌসিফে’র বউ। পরণে থাকা শার্ট টার বোতম গুলো খুলতে খুলতে তৌসিফ বারান্দায় হাটা দিলো। তার তোতাপাখি আছে সেখানে। যেতেই দেখা মিললো তার কাঙ্খিত নারীর। উদাস ভঙ্গিতে সে তাকিয়ে আকাশ পানে। তৌসিফ এগিয়ে গেলো।
সময়টা সকাল এগারোটার মতো। তৌসিফ ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পৌষ ক্ষুদ্র শ্বাস ফেললো। তৌসিফ বুঝলো অবশ্য। সামনে গিয়ে বসলো। সময় দিলো। সবসময় কথা মানুষ যদি হঠাৎ এমন চুপ করে যায় তখন তা মানাটা কষ্টের। তৌসিফ তবুও ধৈর্য ধারণ করলো। সময় পেরুলো কিছুটা। চোখ তুলে তাকালো পৌষ। তার একদম সামনেই বসা তৌসিফ তালুকদার। পরণে থাকা শার্টটার ও বোতাম গুলো খোলা। উদাম বুকটায় লোমগুলো উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে।
তৌসিফ দুই হাত মেলে বুকে আহবান জানালো। আহ্বানে সাড়া দিতে অবশ্য দেড়ী হলো না। নিজেও দুই হাত বাড়িয়ে তৌসিফে’র বুকে নিজেকে সপে দিলো। লেপ্টে গেলো নিবিড় ভাবে। দুই হাতে পিঠ জড়িয়ে রাখলো। তৌসিফ ওকে আরেকটু বুকে জড়ালো। মাথায় চুমু দিয়ে আদর লাগিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— এখনও খারাপ লাগছে?
— একটু একটু।
— আসো গোসল করিয়ে দেই।
— উমম। পরে।
— কত পরে?
— অনেকক্ষণ।
— এতক্ষণ কি করবে?
— এভাবে থাকব।
— এভাবে তো থাকা যায় না হানি।
হঠাৎ এহেন কথায় বোকা বনে গেলো পৌষ। না বুঝে বুকেই মুখ ঘঁষে জিজ্ঞেস করলো,
— কেন?
তৌসিফ ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো,
— কারণ…. কারণ…
আর বলতে পারলো না। পৌষ’র মুখটা তুলে কারণ দেখিয়ে দিলো। পৌষ পুণরায় মুখ গুজলো তৌসিফে’র গলায়৷ বললো ফিসফিস করে,
— পঁচা জামাই।
— মধু বউ।
— হুউম।
— তাহলে মধু দাও।
— নেই।
— আমি খুঁজে নিব।
— লাগবে না খোঁজা। এভাবে থাকব তো আমি।
বুকের মধ্যে ঘাপটি দিয়ে রইলো পৌষ। তৌসিফ অনুভব করলো। পৌষ’র গালে হাত দিয়ে চুমু দিয়ে বলে উঠলো,
— একটা সারপ্রাইজ আছে হানি।
— হুম।
— জিজ্ঞেস করো কি?
— কি?
— আচ্ছা মুখে না বলি? কাল সরাসরি দেখাই।
— আচ্ছা।
তৌসিফ বুঝলো পৌষ’র উঠার কোন সৎ ইচ্ছে নেই তাই ওকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উঠে দাঁড়ালো তৌসিফ। পৌষ মৃদু চেঁচিয়ে বললো,
— যাব না।
— ইটস শাওয়ার টাইম হানি।
— নো।
— ইয়েস।
তৌসিফ ওকে নামাতেই পৌষ বললো,
— আচ্ছা গোসল করছি। আপনি বের হন।
কথাটা শুনেই যেন আকাশ থেকে পরলো তৌসিফ। আশ্চর্য গলায় প্রশ্ন করলো,
— কেন?
— কেন মানে? আপনার সামনে গোসল করব নাকি?
— অবশ্য ই।
— কিহ্! পা’গল লোক। বের হন।
— আজব! কি লুকাচ্ছো তুমি হানি? দেয়ার ইজ নাথিং হিডেন নাও। ইটস অল এক্সপোজ নাও।
লজ্জায় হা হয়ে গেলো পৌষ। সেই সুযোগ বুঝে তৌসিফ দরজা আটকে দিলো। তাদের সুখের অধ্যায় তো মাত্র শুরু।
#চলবে….