#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৫
তারা হীন আকাশ আজ চাঁদের দখলে। ভরাট হয়নি এখনও অথচ তার সৌন্দর্য যেনো চুয়ে চুয়ে পরছে। ঠান্ডা বাতাসে শরীর মন দুলিয়ে উঠে বারংবার। বাইরের সকল সৌন্দর্য যখন চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে তখন তাদের দাপট কমাতে দরজা,জানালা আটকে রেখেছে নব দম্পতি। রুদ্ধ আবদ্ধ রুমের মাঝে যখন গভীর প্রেম হয় তখন বাইরে থাকা নিশাচর পাখি ভয়ংকর সুর তুলে গান গায়। ঝিঁঝিঁ পোকার দল যেন আক্রমণ হানতে চায়। তাদের আলোয় আলোকিত করতে চায় অন্ধকার রুমটাকে যাতে প্রেমে ডুবন্ত জোড়াটা প্রেমসুধা পান করছে। তাদের মিষ্টি মধুর ক্ষণে ফুটে উঠে শালুক ফুল। লাজে যখন মরিমরি ভাব তখনই বেলাজা ফুলটা তার কিশোরী বদন দেখাতে ব্যাস্ত। একান্ত মানুষটার কাছে যতই নিজেকে খুইয়ে দিতে চাও না কেন তৃপ্তি তো শুধু তার সেই গভীর থেকেও গভীর প্রেমে।
দরজা খুলে এদিক ওদিক উঁকি দিলো মেহেদী। নিস্তব্ধ ড্রয়িং রুমে কেউ নেই। রুমে ঢুকে সোহা’র গায়ে হাত দিয়ে ডাকলো মেহেদী,
— সোহা? সোহা?
সোহা একটু তাকিয়ে আবার ঘুমাতে চাইলো কিন্তু মেহেদী ওকে সেই সুযোগ দিলো না। হাতটা ধরে উঠালো সন্তপর্ণে। সোহা’কে তুলতে তুলতে বললো,
— ফজর হলেই সবাই উঠা শুরু করবে সোহা। কাম ফাস্ট।
এমনি সময়ই সোহা কমন ওয়াশরুম ব্যবহার করে না আজ এহেন অবস্থায় তা যেন অতি অস্তির লাগলো সোহার নিকট। মেহেদী ওকে সোজা নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে দরজায় দাঁড়ালো। সময় কাটছে দ্রুত। মেহেদী বাইরে দাঁড়িয়েই হাসফাস করতে লাগলো। একদিকে সময় গড়াচ্ছে অপর দিকে আজান হলেই মা-বাবা উঠে যাবে। কি এক অবস্থা হবে তখন। সোহা বের হতেই মেহেদী সস্তির শ্বাস নিলো। সোহা’কে রুমে রেখেই তারাতাড়ি নিজে গোসল সারলো। কপাল ভালো বিধায় মেহেদীরও গোসল শেষ আর আজান হলো। রুমে গিয়ে দরজা লাগাতেই দেখলো এক কোণায় বসা সোহা। পরণে সাদা একটা কামিজ সেট। চুলে পেঁচিয়ে রাখা টাওয়াল দেখে মেহেদী বললো,
— চুল মুছে নাও সোহা৷ ঠান্ডা লাগবে।
চোখ তুলে তাকায় সোহা। মেহেদী’র কথা মতো চুল ছেড়ে দিয়ে বলে,
— আচ্ছা, আপনি একটা নতুন ফ্লাট নিতে পারবেন না মেহেদী?
মেহেদী’র মনে হলো বিয়ের পর ওর বায়না করলো একটা যা মেটানো অসম্ভব আপাতত। দুই পা এগিয়ে এসে বিছানায় বসলো মেহেদী। সোহা’র হাতটা ধরে নরম স্বরে বললো,
— এখন তো সম্ভব না সোহা। টাকায় পোষাবে না। এটার ভাড়াই তো অনেক।
সোহা যেন ভাবলো কিছু অতঃপর মুখ খুলে বললো,
— তাহলে এক কাজ করুন, আপনার মা-বাবাকে এই রুমে শিফট করে দিন।
মেহেদী সরাসরি নাকচ করে দিলো। একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— এটা কখনো ভাববে না সোহা। মা-বাবা বৃদ্ধ মানুষ। তোমাকে তো একটু আগেই বললাম আমি?
সোহা দেখলো হঠাৎ করেই কেমন রাগী কণ্ঠে কথা বলছে মেহেদী। পুরুষ বুঝি এমনই হয়? সোহা আস্তে করে সাইড হয়ে শুয়ে পরে। চোখ বুজে কাঁথা টানে গায়ে। সম্পূর্ণ অপরিচিত এক লোকের সাথে ওর বিয়ে হলো অতঃপর ঝট করেই সোহা আবেগপ্রবণ হয়ে পরে আর নিজের শক্ত খোলস ত্যাগ করে চলে আসে বছর বছর আগের নরম সোহায়। নিজেকে সমর্পণ করে মেহেদীর নিকট। যার ফলাফল সরুপ দেখলো সোহা।
মেহেদী তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। উঠে চলে গেলো নামাজে। একবার অবশ্য সোহা’কেও পড়তে বলে গেলো। সোহা শুনলো না।
মেহেদী ফিরে দেখলো যেমনকার সোহা তেমনই৷ মনে মনে অনুতপ্ত মেহেদী। লাইট না জ্বালিয়েই সোহা’র পেছনে গিয়ে শুয়ে পরে মেহেদী। সময় গড়ায়। আলগোছে সোহা’র কাঁথার ভিতর ঢুকে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় মেহেদী। আদর লাগিয়ে ডাকে,
— সোহা?
উত্তর আসে না অবশ্য। মেহেদী ওর কপালে চুমু দিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
— একটু সময় দাও। একটু মানিয়ে নাও।
সোহা প্রতিক্রিয়া দেখালো না৷ ও জানে এটাই ওর জীবন। নিজের মায়ের মতো দ্বিতীয় বিবাহ করে কাউকে অন্ধকারে রাখবে না সোহা। কখনোই না।
তাই তো মেহেদী’র ডাকে সাড়া দিয়েছিলো যা এখনও মেহেদী’র বুকে মাথা রেখে দিয়ে যাচ্ছে। আগাছাদের আজন্মকাল আগাছাই থাকা উচিত। সোহা মিথ্যার পেছনে ছুটেছিলো তাই তো হাতের মুঠো খালি তার যা আদৌ কখনো মেহেদী ভরকে কি না সন্দেহ।
__________________
এই পর্যন্ত তিনবার বমি করলো পৌষ। তৌসিফ ব্যাস্ত। পাগল পাগল হয়ে গেলো। শেষ দিকে যখন বমির মধ্যে লাল তরল দেখা গেলো তখন অতি রাগে সে যা নয় তা বলেই পৌষ’কে ধমকাতে লাগলো। একেকটা ধমক যেন ঘর কাঁপানো।
সকাল মাত্র সাতটা। বাইরে সমান তালে পাখিগুলো চেঁচাচ্ছে। পৌষ’র হাত-পা কাঁপছে সমানে। তৌসিফে’র এত রাগ দেখে রীতিমতো নিজেই অবাক হয়ে গেলো। ভয়ে যেন সামনেও যেতে চাইছে না। তৌসিফে’র চিৎকারে বুয়া গুলো সব দরজার বাইরে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর থেকে হঠাৎ কিছু ভাঙার শব্দ আসতেই মিনু ভয় পেয়ে গেলো। একবার ভাবলো হয়তো পৌষ’কে মা’রছে। গতরাত থেকে মিনু’র মনে পৌষ এক বিশেষ স্থান পেয়েছে। মিনু যখন ওর আপার জন্য কাঁদছিলো তখন মিনু’কে আগলে নিয়ে পৌষ সময় দিলো। এখন মিনু’র মন কাঁদছে পৌষ’র জন্য।
ওয়াশরুমের দরজা ধরেই দাঁড়িয়ে আছে পৌষ। ভেজা মুখটাতে চোখের পানি বুঝা যাচ্ছে না। তৌসিফ ওর বাহু টেনে ধরতেই অল্প স্বরে পৌষ বলে উঠলো,
— আহ! ছাড়ুন আমাকে।
তৌসিফ ওকে বিছানায় বসিয়ে রাগে হিসহিসিয়ে বললো,
— একটা কথা বললে জানে মেরে ফেলব।
পৌষ কাঁপে অল্প। ওর দূর্বল শরীরটা আঁকড়ে ধরে তৌসিফ’কে। রাগে ফুঁপিয়ে উঠে তৌসিফ। ধরে না পৌষ’কে। এই মেয়ে কথা শুনে না। যা মন চায় খায়। ঔষধের ঠিক ঠিকানা নেই। শুধু শুধু তৌসিফ কেন পাগল হবে?
পৌষ মৃদুস্বরে বললো,
— শুনুন কুট্টুসের আব্বু, আপনি আমাকে এত কেন বকছেন?
এত রাগের মধ্যে পৌষ’র কথায় ভ্রুঁ কুঁচকায় তৌসিফ। শীতল হয় বরফের মতো। জিজ্ঞেস করে,
— কে কুট্টুস?
— আমাদের না হওয়া বাবু।
— পিরিয়ড ঠিকঠাক আছে?
— হু।
— শিওর?
— হুম।
— কথা তো শুনো না আমার।
— এই যে শুনছি।
— পৌষরাত?
ডাকটা ভিন্ন শোনালো। পৌষ মাথা তুলে তাকাতেই তৌসিফ বললো,
— কিট আনাই একটা? টেস্ট করবে?
পৌষ অবাক স্বরে বললো,
— কোন দুঃখে?
— যদি হয়।
— কেন হবে?
— মানে কি কেন হবে? হতেই পারে।
— কোন সুযোগ নেই।
— সুযোগ নেই মানে? কি বলতে চাও? আমি পারি না?
পৌষ হেসে ফেললো। বললো,
— হতাশ হবেন তো।
— তবুও একবার দেখি।
তৌসিফ কাউকে কল দিলো কিট আনতে। পৌষ গা এলিয়ে দিলো। ওর শরীর খারাপ লাগছে। তখনই কল আসে তৌসিফে’র। তৌফিক কল করেছে। কথা বলতে বলতে বারান্দায় গেলো তৌসিফ। একদফা কথা কাটাকাটি হলো। রাগে যখন টবে লাত্থি দিয়ে ভেঙে ফেললো তখনই ছুটে এলো পৌষ। কিছু জিজ্ঞেস করার সাহসটুকু অবশ্য হলো না। ফাঁকা ঢোক গিললো একটা। শুধু শুনতে পেলো,
— ঐ জা***র তো আমাকে চিনে না। চাপা’তি দিয়ে বটি বটি করব ওকে।
ভয়ংকর সব কথা শুনে পৌষ’র গা গুলিয়ে উঠলো। তখনই তৌসিফ আরো কিছু জঘন্য উচ্চারণ করতেই সেখানেই গলগল করে ঢেলে দিলো পৌষ। তৌসিফ তখন ফোন রেখেছে। পৌষ’কে ধরতেই দূর্বল পৌষ বলতে লাগলো,
— ছাড়ুন আমাকে। ছাড়ুন। কাকে খু*ন করবেন আপনি? অ্যাই আপনি মানুষ মা’রেন? আমি গুলি দেখেছি আপনার কাছে। সত্যি বলুন। আপনি কি করেন?
তৌসিফ উত্তর দিলো না। পৌষ ছটফট করে উঠলো। শক্ত করে ওকে ধরে বুয়াকে ডাকলো তৌসিফ। এক ডাকে হুরমুর করে তিনজন বুয়া ঢুকলো। তৌসিফ পাত্তা না দিয়ে বললো,
— রুম পরিষ্কার করো।
পৌষ নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। সরতে সরতে বললো,
— আমারটা আমিই পরিষ্কার করব।
তৌসিফ সরল দৃষ্টি ফেলে বললো,
— ওকে ফাইন।
পৌষ নিজেই সবটা পরিষ্কার করলো। বুকে হাত বেঁধে দেখলো তৌসিফ। বুয়াদের চলে যেতে বলতেই তারা চলে গেল। ছপাৎ করে শব্দ হতেই দৌড়ে ঢুকলো তৌসিফ ততক্ষণে চিৎ হয়ে ফ্লোরে পরেছে পৌষ।
#চলবে…..
#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৬
শীত শীত ভাব তবে ঠান্ডা নেই। সকাল থেকে রাত কুয়াশায় চারপাশ ঘেরা অথচ শীতের হদিস নেই। এমন আবহাওয়ায় তৌসিফের হাত ধরে অগাধ বিচরণ করতে মন চাইলো পৌষ’র। গাড়ীতে বসেই বাইরের আবহাওয়া দেখছে ও। এদিকে গাড়ি চলছে অতি দ্রুত বেগে। পৌষ’র জ্বর উঠেছে হঠাৎ। তৌসিফের বুকে মাথা দিয়ে চুপচাপ বাইরে দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত ও সাথে শুনতে ব্যস্ত গম্ভীর মানুষটার ঘনঘন ধুকপুক ধুকপুক শব্দ। চোখে মুখে বারবার আছড়ে পরছে তৌসিফে’র ফেলা গরম নিঃশ্বাস। লোকটা উদ্বীগ্ন হয়ে আছে। এই যে শরৎ এর কি সুন্দর বাতাস বইছে অথচ তৌসিফের খেয়াল নেই সেদিকে। আকাশটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে বহু কষ্টে কান্না চাপা রেখেছে। যেকোন সময় তার বাঁধভাঙা অশ্রুতে প্লাবিত হবে ধরণীর বুক।
আবহাওয়া আজ তৌসিফে’রই পক্ষে। তৌসিফে’র চোখ মুখেও একই ভাবে আঁধার ঘনিয়ে আছে। গাড়ির মধ্যেই কাঁপতে থাকা পৌষ’কে কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে বুকে নিয়েছে ও। তৌসিফে’র মনটা খুব করে কু ডাকছে। কেন যেন বারবার মনে হচ্ছে জ্বরটা সুবিধার না। চোখ বুজলো তৌসিফ। সকাল থেকে ঘটে যাওয়া প্রতিটি কথা যেন ওর মস্তিষ্কে একটু একটু করে পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
কত সুন্দর সকাল থেকে বাড়ী জুড়ে দৌড়ালো মেয়েটা। সাত সকালে বমি করার পরও তৌসিফের বারণ সত্ত্বে পৌষই ব্রেকফাস্ট বানালো। গতরাতেই নাকি ও নল্লি বসিয়েছিলো। আজ সকাল হতেই কাজের লোক থেকে বাইরে থেকে নান আনিয়ে ব্রেকফাস্টে সার্ভ করলো। মিনু’কে নিজে গিয়ে ডেকে বসালো ওদের সাথে। ঘ্রাণে তখন ক্ষুধা বেড়েছিলো তৌসিফে’র। পৌষ ওর প্লেটে বড় একটা নলি তুলে দিলো। নিজে বেড়ে বেড়ে খাওয়ালো। তখনও জ্বর নেই। শুধু খেতে খেতে পৌষ বললো,
— গলাটা জ্বলছে।
তৌসিফ অরেঞ্জ জুসটা এগিয়ে দিলো ওর দিকে৷ মুখে বললো,
— বমি করাতে হয়তো।
— হুম।
হুম বললেও জুস মুখে তুলে না পৌষ। তৌসিফ নিজেই ওর ঠোঁটের কাছে গ্লাসটা তুলে ধরে। এক চুমুক দিয়েই পৌষ বলে,
— উম, তেঁতো এটা।
কপালে ভাজ ফেলে তৌসিফ বলে,
— এটা তেঁতো? না খাওয়ার বাহানা তোমার হানি৷ শেষ করো। দেখি মুখ খুলো।
পৌষ খাবে না। জোর করেও যখন লাভ হলো না তখন তৌসিফ নিজে এক চুমুক খেলো। পৌষ’র দিকে তাকিয়ে বললো,
— নাও খেলাম আমি৷ কোন তেঁতো না এটা। পাঁচ বছর ধরে জুস খাচ্ছি এটা আমি কখনো তেঁতো লাগে নি।
অসহায় চোখে তাকালো পৌষ যা দেখে জোর করার সাহস পেলো না তৌসিফ। বউটার শরীর খারাপ। একটু একটু আবার আশা আছে তাদের। টেস্ট করাতে হবে। কিট আনিয়েছে তৌসিফ। কথাটা ভাবতেই ওর বুকটা কেমন দুরুদুরু করে। কেমন হাত-পা ঝিমঝিম লাগে। অসহ্য এক যন্ত্রণাময় অনুভূতি। তৌসিফের বহু বছরের শখ বাবা হাওয়া। বাচ্চাকাচ্চা তার কাছে অতি প্রিয়।
খেয়ে ওরা উঠতেই পৌষ বুয়াদের বুঝালো কি কি রান্না করতে হবে। পৌষ নিজে একপদ করবে। সবই ঠিক ছিলো তখনও। রুমে ঢুকতেই পৌষ দেখলো তৌসিফ মনোযোগ দিয়ে কিছু পরছে। গোলাপি আর সাদা রঙের কিছু তার কাছে। পৌষ দূর থেকে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো,
— কি এটা?
— গুড নিউজ।
থতমত খেয়ে গেলো পৌষ। দুই লাভ দিয়ে তৌসিফে’র কাছে এসে গলায় ঝুলে যেতেই তৌসিফ ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে এক হাতে। ব্যালেন্স পায় পৌষ। পিটপিট করে তৌসিফে’র চোখে তাকিয়ে বলে,
— আপনাকে সুন্দর লাগছে।
তৌসিফ গভীর দৃষ্টি ফেলে তাকালো। কণ্ঠে এক রাশ ভালোবাসা ঢেলে দিলো অবলীলায়। জানালো লহু স্বরে,
— তোমাকে সবসময় সুন্দর লাগে পৌষরাত৷ আমার তোতাপাখিটাকে আমার কাছে বেশ লাগে দেখতে। তোমার নাক, মুখ, গলা, কান সব ভালো লাগে। তোমার প্রতিটি কথা ভালো লাগে। এই যে গলায় ঝুলে আছো, বিশ্বাস করো হানি, আমার বুকের ভেতর সুখ লাগছে।
পৌষ তৌসিফে’র কাঁধে মুখ লুকালো। তৌসিফ ওর চুলের ভাজে হাত গলিয়ে দিলো। শান্ত স্বরে বললো,
— এখন চেক করবে?
— ভয় লাগে তো।
— কেন?
— যদি হয়ে যায়?
— হলে হবে। তুমি চাও না?
— আপনি যেটা চান আমিও সেটা চাই।
— তাহলে ভয় কেন হানি? বিশ্বাস নেই তোমার আমার উপর?
এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে মাথা তুললো পৌষ। তৌসিফে’র ওষ্ঠে নিজ থেকে ভালোবাসা দিলো এক রত্তি। বললো,
— আপনি জানেন পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। যার মা-বাবা নেই তার কেউ নেই সেই হিসেবে আমারও কিন্তু নেই। চাচারা ভালোবাসে। সবাই আদর করে। হেমু ভাই থেকে নিয়ে ছোট্ট ইনি, মিনিও আমাকে ভালোবাসে। আমিও ওদের ভালোবাসি। আমার ভাই-বোনদের ভালোবাসা স্বার্থহীন কিন্তু চাচাদের বুঝি না। আচ্ছা ইনি, মিনি বা পিহা যদি আমার জায়গায় হতো তাহলে কি এভাবে বানের জলে ভাসিয়ে দিতো? দিতো না। আমি কেন সবাই জানে দিতো না। শুধু মাত্র পৌষ এতিম বলে দিয়েছে। ভেবেছে বড়লোক মানুষ টাকা দিয়ে সুখী রাখবে আমাকে। এটা কিন্তু নিজেদের ক্ষেত্রে ভাবতো না। এখানে আপনি আমাকে যদি এতটা ভালো না বাসতেন তাহলে আজকের পৌষরাত এভাবে আপনার বুকে থাকতো না। ঠেলায় পরে সংসার ঠিকই করা হতো কিন্তু সুখ তো পেতাম না। আপনার ভালোবাসার কাছে আমর’রণ আমি কৃতজ্ঞ থাকব। আর আপনি কি না জিজ্ঞেস করলেন, বিশ্বাস করি কি না?
তৌসিফে’র মনে হলো ওর কণ্ঠনালী কেউ চেপে ধরেছে। পৌষ’র মনে অসংখ্য প্রশ্ন। যার উত্তর তৌসিফ এখন দিতে চায় না। শুধু মাত্র ওর চাচাদের এই সিদ্ধান্তের জন্য তৌসিফ এটাও চায় না পৌষ যাক ওই বাড়ী। চাচারা স্বার্থ তো দেখেছে। নিজেদের মেয়ে হলে অবশ্য দেখতো না কিন্তু এখানে সবচাইতে বড় হাত তো ছিলো তৌসিফে’র। ও জানে পৌষ এখন সত্যি মিথ্যা যাই জানুক না কেন তৌসিফ’কে ছাড়তে পারবে না। সেই ভয় তৌসিফ কোন কালেই পেতো না। মাঝপথে আদিত্য’র সাথে ঘটা ব্যাপারটা ওর আড়ালে ছিলো। তৌফিক যে কাজটা ইচ্ছে করে করেছে সেটাও জানে তৌসিফ। তবুও দাঁত চেপে হজম করেছে ব্যাপারটা।
তৌসিফ পৌষ’র কপালে কপাল ঠেকালো। বিমুগ্ধ চাহনি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আমাকে বিয়ে করে পস্তাচ্ছো না তো?
পৌষ ফিক করে হেসে ফেললো। ঘাড় নাড়িয়ে মাথা ঝাকালো। তৌসিফে’র গাল চেপে ধরে চটাস করে গালে চুমু দিয়ে বললো,
— পা*গলা কু*ত্তায় কামড়েছে আমাকে? না তো। তাহলে পস্তাব কেন? আমার জামাই হলো নাম্বা ওয়ান শাকিব খান, বলি না এটা আমি? বলুন? কেন বলি? কারণ আপনাকে ভালোবাসি।
— তাই বলে শাকিব খান?
— হ্যাঁ তো। কেন ভালো লাগে না?
— ওহহো পৌষরাত। ভালো উদাহরণ দিতে।
— ওমা কাকে টেনে আনব উদাহরণ দিতে? শাকিব খান খালি ছিলো তাই তাকে টেনে আনলাম।
— খালি ছিলো মানে?
— বউ নাই একটাও। তাই সে ফ্রী।
তৌসিফ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বললো,
— তুমি এতো দুষ্ট হানি।
— মোটেও দুষ্ট না আমি।
— আচ্ছা, এবার বলো ভালোবাসো।
— হায় কপাল! ভালোবাসি এটা কেন বলব? আপনি হলেন আমার কলিজার টুকরো জামাই। ছাই দিয়ে কই মাছ ধরা গেলেও জামাই ধরা যায় না, আপনি আমার ধরা খাওয়া জামাই। জানের জান, পরাণের পরাণ। আমার কুতকুতু, লুতুলুতু,পুতুপুতু জামাই আপনি। এই দেখুন, আমার বুক ভরা কত্ত ভালোবাসা আপনাকে। সারাক্ষণ বুকটা শুধু তৌসিফ তালুকদার বলে ডাকতে থাকে। এই ধমকাই থামেই না।
একনাগাড়ে কথা গুলো বললো পৌষ। শুনলো তৌসিফ অতঃপর পৌষ’কে আস্তে করে বিছানায় নামিয়ে বললো,
— তোমার এত ভালোবাসা শুনে এখন ভালোবাসা পাচ্ছে আমার।
— ধুর মিয়া!
দরজা আটকে তৌসিফ জানালা আটকে দিলো। পৌষ উঠে দৌড় দেয়ার আগেই ধরা খেলো কারো হাতে। বন্ধ ঘরটা থেকে কুটকুট করে হাসির শব্দ আসছে। এই প্রথম সেই হাসির সাথে যোগ দিয়েছে পুরুষ স্বরে কারো হাসি। দুটো হাসির শব্দ এক হয়ে সারা ঘরে যেন প্রেম ছড়ালো। সুখী, সাচ্ছন্দ্যে থাকা এক দম্পতি। যাদের ঝুলিতে সুখের অন্ত নেই।
.
কিটটা এনে তৌসিফে’র হাতে দিয়ে বিরক্ত হয়ে বিছানায় বসলো পৌষ। এটা নিয়ে পরপর চারবার হলো। প্রথম বার দাগ উঠলেও আর উঠে নি। তৌসিফ চতুর্থটা দেখেও হতাশ হলো না। বান্দার ধৈর্য আছে বলতে হবে। পৌষ’র হাতে পঞ্চম বারের মতো কিট দিয়ে বললো,
— এটাই লাস্ট।
— প্রশ্নই উঠে না।
— প্লিজ হানি।
— একটুও না। পেটে আমার বাচ্চা নেই। শুধু মাত্র নারীভুরী আছে।
— আহা। একবার আর।
— মাফ করুন ভাই। দয়া করুন। বিরক্ত লাগছে তো।
— শেষ বার তো তোতাপাখি।
চোখে মুখে চরম কাতরতা দেখা গেলো তৌসিফে’র। পৌষ শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
— হিসু নেই পেটে আর। একদম খালি।
বলতে দেড়ী তৌসিফ ওর মুখ চেপে এক গ্লাস পানি গিলিয়ে দিলো। পাঁচ মিনিট থম ধরে বসে রইলো পৌষ। পানি খাওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছে ওর শরীর খারাপ লাগছে। তবুও তৌসিফে’র মন রাখতে ঢুকলো ওয়াশরুমে। পৌষ এবার নিজেও চাইলো যাতে পজিটিভ হয় কিন্তু আফসোস এবারেও ফলাফল শূন্য। পৌষ ভাবলো লোকটার কষ্ট। ফিরে এসে হতাশা ঢেলে দিলো তৌসিফে’র হাতে। তৌসিফে’র চোখ মুখ দেখে অবশ্য কিছু বুঝা যায় না৷ পৌষ ওর বুকে মাথা রেখে বলে,
— আল্লাহ দিলে হবে।
— হুম।
— কয়টা বাবু লাগবে আমাদের?
— চারটা।
— চারটা কম হলো তো?
— তাহলে তুমি বলো।
— টুইন করে তিনবারে হলে ছয়টা হবে। অনেকগুলো বাবু থাকলে আমি ওদের সাথে অনেক কথা বলতে পারব।
— হু।
তৌসিফে’র কপালে ভাজ দেখা গেলো। পৌষ’র কপালে হাত রাখতেই দেখলো অসম্ভব গরম হয়ে আছে। ওকে কিছু বলার আগেই চোখ, মুখ লাল করে বমি করে দিলো পৌষ।
__________________
ইমার্জেন্সি টেস্ট করিয়ে ডেঙ্গু ধরা পরলো। অবস্থা হঠাৎ করেই যেন বেশি খারাপ হয়ে গেলো। ভর্তি রাখা হলো পৌষ’কে। ওর কিছু মেডিক্যাল রিপোর্টের জন্য হেমন্তকে ফোন করে তৌসিফ তখনই শুনতে পায় শ্রেয়া পা পিছলে পরে গিয়েছে। পৌষ শুনেই ছটফট করে উঠলো। ফোন ধরছিলো জৈষ্ঠ্য। ও জানালো বাসায় কেউ নেই। অগত্যা চৈত্র আর জৈষ্ঠ্য রিপোর্ট খুঁজে নিয়ে আসছে। পৌষ’র বমি বেড়ে গেলো হঠাৎ। স্যালাইন দিতেই কেঁদে যাচ্ছে ও। কি থেকে কি হচ্ছে মাথায় ঢুকে না তৌসিফে’র। ও শুধু পৌষ’র হাত ধরলো। ভেজা চোখে দেখলো পৌষ’কে। ডাকলো করুন স্বরে,
— হানি?
— বাসায় যাব।
— হ্যাঁ যাব তো। আজ থাকতে হবে।
— না না প্লিজ আমাকে নিয়ে চলুন৷ ভালো লাগছে না।
কোনমতে কথাটুকু বলেই জ্ঞান হারালো পৌষ। তৌসিফ যেন দিকবিদিকশুন্য হলো। ডাক্তারদের দিকে হুরতার করাতে লাগলো। ওর চিল্লাপাল্লাতে অবশ্য ডক্টররা তারাহুরো করতে লাগলো।
চৈত্র আর জৈষ্ঠ্য ফাইল আনতেই না দেখানো হলো ডক্টরকে। এদিকে একাধারে তৌসিফে’র ফোন বেজে যাচ্ছে। রিসিভ করতেই কপাল কুঁচকে গেলো তৌসিফে’র। ওর জাহাজের সিপমেন্টে করে মাদকদ্রব্য পাচার হয়েছে। তৌসিফ যেন আকাশ থেকে পরলো। মামলা করা হ’য়েছে। এক নাম্বার আসামি স্বয়ং তৌসিফ তালুকদার।
ওপাশ থেকে সমান তালে বলে যাচ্ছে,
— ভাই আপনাকে লুকাতে হবে। অন্তত প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত।
— আমি হাসপাতালে।
— ভাই সময় নেই৷
তৌসিফ ফোন কাটলো। অন্যরা কল করছে ওকে। এক মুহুর্তে থমকে গেলো তৌসিফ। আগের হলে কথা ছিলো না কিন্তু এখন? এখন ওর একটা পৌষরাত আছে। চোখ বুজে নেয় তৌসিফ। ও জানে সরাসরি এরেস্ট হবে এখন। এই কাজ যেই করেছে বুঝে শুনে করেছে। দল করা ছেড়েছে ও বহু আগে। তাই সেই ক্ষমতা কোন ভাবেই দেখাতে চায় না তৌসিফ। হসপিটালে থাকা যাবেই না। এক মুহুর্তে সবটা পরিকল্পনা করে নেয় তৌসিফ। ডক্টরের কেবিনে ঢুকে সোজা জানায়,
— বাসায় ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করুন। নার্স সাথে পার্মানেন্ট দিন। কোন প্রকার ত্রুটি চাই না।
— জ্বি স্যার।
টাকা কথা বলে। এটা অবশ্য সত্যি। এই যে টাকা দিয়ে বউকে চিকিৎসা করাচ্ছে তৌসিফ। পৌষ শুধু বমি করছে আর তৌসিফ’কে চাইছে। কেন যে এত কাঁদছে তৌসিফ বুঝে উঠতে পারছে না। ওকে বুকে নিয়ে বসে আছে। ঐ দিকে সমান তালে ওর লোকজন পুলিশের দিকটা সামাল দিচ্ছে। তৌফিক আর তৌহিদ ও ব্যস্ত ভাইকে নিয়ে। তারা বারবার পালাতে বলছে কিন্তু তৌসিফ বউ ছেড়ে নড়বে না।
বুকে থাকা অর্ধচেতা পৌষ বলে উঠলো,
— পানি।
— হু? পানি?
তৌসিফ এটা বলেই পাশ থেকে গ্লাস ভর্তি পানি নিলো। পৌষ’র ঠোঁটে দিতেই পুরো গ্লাস খেলো ও। তৌসিফ জিজ্ঞেস করলো,
— আরেকটু খাবে?
— হু।
আরেক গ্লাসের অর্ধেক খেলো পৌষ। গলা শুকিয়ে কাঠ তৌসিফে’র। নিজে বাকিটুকু গিলে নিতেই পৌষ কাতরায় ওর বুকে। বসে পৌষ’কে বুকে নিয়ে চিৎকার করে নার্স’কে ডাকে তৌসিফ। নার্স দু’জন ছুটে আসে। পৌষ’কে ততক্ষণাৎ ইনজেকশন পুশ করা হলেই ও ঘুমিয়ে যায়।
তৌসিফ ওর কপালে চুমু খায়। গালে চুমু খায়। সকলের আড়ালে চোখ ছাপিয়ে দুই ফোটা পানি পরে। কানে মুখ লাগিয়ে বলে,
— তোমার তৌসিফ খারাপ কাজ করে নি পৌষরাত। আমার জান, আমার উপায় নেই এখন। আমি যদি না যাই তাহলে বাসায় চলে আসবে ওরা। তোমাকে তখন জঘন্য পরিস্থিতিতে পরতে হবে। ভরসা রেখো। আসব আমি৷ ফিরে আসব তোমার হয়ে। তোমার প্রেমসুধা পাওয়া আমার আজও বাকি।
তৌসিফ কালো হুডি লাগিয়ে বেরিয়ে গেলো। সময়টা তখন সন্ধ্যা। বাইরে তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো। তৌসিফে’র গাড়ি রওনা দিলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।
.
মাথায় এক ভোতা যন্ত্রণা নিয়ে চোখ খুলে পৌষ। এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজে তৌসিফ’কে। দূর্বল হয়ে ডাকেও দুইবার। সাড়া শব্দ নেই। নার্স দু’জন ওকে মেডিসিন দিতে চাইলেই পৌষ খিটমিট করে। কোনমতে উঠে দাঁড়ায়। টলতে টলতে মিনু’কে ডাক দিতে নিলেই মিনু’র চিৎকার শুনা যায়। ড্রয়িং রুমে তাকায় পৌষ। টিভিতে দেখা যাচ্ছে তৌসিফ’কে। পৌষ বুঝে না। হেডলাইনে উঠে আছে, “মাদকদ্রব্য পাচারে ধরা খেয়ে চট্টগ্রাম পালাতে গিয়ে আটক সাবেক মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তৌসিফ তালুকদার”।
পৌষ ঠিক এটাই দেখলো। সাংবাদিকও এটাই বলছে। মৌমাছির মতো তৌসিফে’র চারপাশে মানুষ যারা ওকে ছাড়বে না পুলিশের কাছে। হাতে হ্যান্ডকাফ তুলার সাহসও পুলিশের হয় নি। পৌষ সেই মানুষটার দিকে তাকিয়ে ঢলে পড়ে মাটিতে। তীব্র হাহাকার করে উঠে বুকটা। মাথাটা গিয়ে লাগলো ঠিক সেল্ফের কোণায়। র’ক্তের শ্রোত বইলো সেখান দিয়ে। অস্পষ্ট স্বরে শোনা যায়,
— আপনি কোথায়?
শরৎটা তাদের ভালো গেলো না। তীব্র প্রেমের পাতা ঝরলো। সুখের মাঝে কালো একটা দাগ পরলো। যেই দাগ থেকে এত সুন্দর চাঁদ মুক্তি পেলো না সেই দাগ বুঝি তৌসিফ-পৌষ’কে ছাড়ে? অসীম প্রেমে তো জ্বালা হবেই। পৌষ’র কপালে সুখগুলোর বড়ই দাপট। মন চাইলে থাকবে নাহলে নাই। সুখেরা এখন ছুটিতে। তারা পৌষ’র আঁচলে আসবে না৷ ধরা দিবে না এই ছটফটে আদর পা*গল মেয়েটাকে।
“আপনাকে চেয়েছিলাম আমি এক কুয়াশাজড়ানো ভোরে, তীব্র রোদের খরখরে তাপে, শরৎ কালের সেই বাতাসে যা বিষাদ উঁড়িয়ে আনে। আপনার প্রেমে আজও উন্মুখ হয়ে আছি। সেই প্রেমসুধা একবার পানে যে প্রশান্তি নেই। দেখা আবার হোক৷ মিলন আবার ঘটুক। হয় এপারে নাহয় ওপারে। আরেকটি বার প্রেমসুধা পান করা হোক। হাতে হাত রেখে অতলে হারিয়ে যাওয়া হোক”
#প্রথম_পরিচ্ছেদের_সমাপ্তি
#প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৭
“মৃ’ত্যু এসেও যখন আসে না তখন মানুষ তড়পায়। ছটফট করে। শ্বাসরুদ্ধকর স্বপ্নের মতো লাগে সবটা। ঘোলাটে, আবছা কুয়াশায় জড়ানো। চারপাশে তখন ঘোর কালো মেঘ যার আড়ালে লুকিয়ে সূর্য। তার দেখা মিলে না। চোখের পানি তখন হার মানে। পরিস্থিতি শুকিয়ে দেয় চক্ষুদ্বয়। দয়ামায়া দেখায় না কেউ। কালো স্তর যখন চোখের নিচে জমা হয় তখন আকাশ পানে দৃষ্টি দেয় মানবী। তার ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।”
টানা তিনদিন পাড় হলো। পৌষ’র মুখটা চুপসানো। বিধ্বস্ত এক অবস্থা যাকে দেখার কেউ নেই। যেই পৌষ’কে সামান্য কষ্টে দেখলে তৌসিফের বুকের ভেতর থাকা হৃদপিণ্ডটা থমকাতো সেই পৌষ’র করুন এক অবস্থা। প্রথম দিন চেতনা হারিয়ে পরে থাকলেও জ্ঞান ফেরা মাত্র পৌষ পাগলের মতো আচরণ শুরু করলো। দৌড়ে সব ভুলে আগে গিয়েছিলো তৌফিক তালুকদারের কাছে। কঠোর অথবা তুচ্ছ কিছু একটা তো ছিলো যা তৌসিফ তালুকদার দেখালো। বুয়া দিয়ে বের করে দিলো পৌষ’কে। অপমানটা চরম মাত্রার অথচ স্বামী সোহাগির মন মানে না। সে দরজায় ক্রমাগত ধাক্কা দেয়। বেশখানিকটা সময় পর তৌফিকের বউ দরজা খুলে। পৌষ’কে ভেতর নিয়ে বসাতেই পৌষ খপ করে তার হাতটা ধরে। বিনয়ের সাথে বলে,
— উনি কিছু করেননি। কিচ্ছু করেন নি। আমি জানি। দয়া করে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করুন না।
ঝুমঝুম করে কেঁদে ফেলে পৌষ। তৌফিকের বউ ততটা গায়ে মাখে না। হাত ছাড়িয়ে একটা নাম্বার দিয়ে বলে,
— এটা ডিআইজির নাম্বার। যোগাযোগ করে দেখো। তৌসিফ টাকার বান্ডিল কোথায় রাখে তা নিশ্চিত তোমার জানা।
পৌষ এতকিছু বুঝলো না। উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে বললো,
— আমি যাব?
— সম্পূর্ণ ভাবে তোমার ইচ্ছে।
পৌষ এক ধ্যানে নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে এলো। নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে ঢুলুঢুলু পায়ে বোরকা পরতেই নার্স সহ বুয়া এগিয়ে এলো। পৌষ’কে উদ্দেশ্য করে কেউ কিছু বলার সাহস পেলো না। ওরা বাঁধা দিতে আসলেই গরম চোখ দিয়ে তাকালো পৌষ। আলমারি খুলে মাঝের ড্রয়ারটা থেকে দুটো টাকার বান্ডিল নিলো পৌষ। ব্যাগে ভরে বেরিয়ে এলো ফ্ল্যাট থেকে। ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি বের করে তাতে বসেই ফোন লাগালো সেই নাম্বারে। রিসিভ হতেই যেন পৌষ’র ভাষা ফুরিয়ে এলো। কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। শুধু নিজের পরিচয়ে বলেছিলো, “পৌষরাত তালুকদার, ওয়াইফ অফ তৌসিফ তালুকদার”।
জীবনে প্রথম পৌষ জেলখানায় পা রেখেছিলো। অসুস্থ শরীরটা তখন ভেঙে আসতে চায়। চারপাশে এত এত পুলিশ দেখে গা কেমন ভয়ে ছমছম করে। পৌষ শক্ত রয়। একজনকে সাহস করে জিজ্ঞেস করতেই তারা ডিআইজির রুম দেখালো। পৌষ দেখলো ও ভেতরে ঢুকে নিজের পরিচয় দিতেই সবাই অদ্ভুত চোখে তাকালো। সম্মান সহিত ওকে বসতে দেয়া হয়। ডিআইজি জিজ্ঞেস করলেন,
— ম্যাম আপনি আসার কারণ জানতে পারি?
পৌষ ঢোক গিলে। উত্তর করে,
— আমার স্বামী…
আর বলতে পারে না৷ কণ্ঠনালী চেপে আসে। ডিআইজি নিজেই বললেন,
— ম্যাম আপনাকে অসুস্থ দেখাচ্ছে। পানিটা নিন।
পৌষ নিলো না। ব্যাগ থেকে টাকার বান্ডিল দুটো বের করে টেবিলে রেখে বললো,
— আরো লাগলে আরো দিব। শুধু ওনাকে এনে দিন। আমি দেখব একটু।
ডিআইজির ঘাম ছুটার অবস্থা। ঢোক গিলে বললো,
— ম্যাম, স্যার এখানে নেই।
— আমি দেখব বললাম তো।
— বুঝার চেষ্টা করুন…
— টাকা কি আরো লাগে? আমি তো জানি না। আপনি বলুন। কত টাকা লাগবে?
ডিআইজি মাথা নিচু করে কিছু ভাবলেন অতঃপর বললেন,
— ম্যাম আপনি বাসায় যান।
— আমি ওনার সাথে দেখা করতে চাই। কথা কেন বুঝতে চাইছেন না?
— স্যার এখানে নেই….
— তো কোথায়? মিথ্যা কেন বলছেন?
— ম্যাম, স্যার সত্যিই নেই। ওনাকে এখানে রাখার সাধ্য কার আছে?
— খবরে সরাসরি প্রচারটা নিশ্চিত মিথ্যা নয়।
ডিআইডির কপালে ঘাম জমা হলো। টিস্যু দিয়ে তা মুছে নিলেন অবলীলায়। বললেন,
— ঐ পর্যন্তই ছিলেন স্যার এখানে….
— কোথায় আছে সেটাই বলুন। দয়া করে বলুন।
পৌষ অস্থির হয়ে উঠলো। এই দফায় মেয়েটা হাত জোর করে কেঁদেই ফেলল। ডিআইজি বিব্রত। মুখটা দেখেই তা বুঝা যাচ্ছে। তিনি পৌষ’কে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতেও পারছেন না। অনুমতি নেই৷ ফোনটা তুলে ডায়াল করে শুধু বললেন,
— ম্যাম এসেছেন। বোঝানো যাচ্ছে না।
ওপর পাশ থেকে কিছু বলতেই ডিআইজি সস্তির শ্বাস ফেললেন। হাসি মুখে জানালেন,
— ম্যাম আপনি বাসায় যান। স্যার যোগাযোগ করবেন আপনার সাথে।
পৌষ বোকা চোখে তাকালো। উঠতে উঠতে আবারও বললো,
— টাকা কি কারো লাগে দেখা করতে?
ডিআইজির এবার মায়াই লাগলো। তার মেয়ের থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের বড় হবে পৌষ। নিজের মেয়ের মতোই লাগলো তার কাছে। এতটুকু মেয়ে যে এসবে কোনদিনে জড়ায় নি তা আচরণেই বুঝা যাচ্ছে। ডিআইজি উঠে দাঁড়ালেন। টাকার বান্ডিল দুটো পৌষ’কে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
— দেখা করতে বান্ডিল প্রয়োজন হয় না। বাসায় যাও বাবা।
পৌষ বিমূর্ত রূপে বেরিয়ে এলো৷ গাড়িতে উঠে কিছুক্ষণ গেটের দিকে তাকিয়ে রইলো। এখানেই শেষ বার তৌসিফ ছিলো। পৌষ দেখেছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে পৌষ। কার কাছে যাবে ও?
হঠাৎই মনে পরে হেমন্তের কথা। শ্রেয়ার খবর ওর জানা নেই। বুকটা খামচে উঠলো হঠাৎ। শ্রেয়া আছাড় খেয়েছে এটা আবছা শুনেছে পৌষ। গাড়ি থামতেই পৌষ নামলো। শরীর চলে না তখন। একজন বুয়া ধরে রুমে নিয়ে আসতেই পৌষ দেখলো হেমন্ত বসা ওখানে। ভাইকে দেখা মাত্র হু হু করে কেঁদে ফেলে পৌষ। হেমন্ত উঠে এসে ধরে বসালো ওকে। পৌষ কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,
— হেমু ভাই, ওনাকে পাচ্ছি না আমি। কোথায় গেলো? আমাকে কেউ সাহায্য করছে না হেমু ভাই। কেউ করছে না।
— কাঁদে না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
পৌষ খাটে মাথা এলিয়ে দিলো। ভাঙা গলায় বললো,
— ভাবী….
— তিন দিন হলো অবস্থা খারাপ ছিলো। আজ সকাল থেকে কিছুটা ভালো। ছেলে হয়েছে পৌষ।
পৌষ চোখ তুলে তাকালো। খুশির এই খবরে পৌষ হয়তো দৌড়ে ছুটতো কিন্তু পরিস্থিতি ওকে ভেঙেছে এবার খুব দারুণ ভাবে। হেমন্ত পৌষ’র মাথায় হাত রেখে বললো,
— বাসায় নিতে এসেছি তোকে।
— আমি যাব না।
— পা’গলামো করবি না পৌষ। এখানে কেউ নেই তোকে দেখার।
— আমার সংসার ছেড়ে আমি কিছুতেই যাব না। উনি এসে খালি বাসা পেলে…
— মাথা গেছে তোর। তৌসিফ এখন আসবে না।
— আমি যাব না।
— কে দেখবে তোকে?
— উনি আমার যত্নে কখনোই কমতি রাখে নি ভাই। এবারেও রাখে নি।
হাজার জোর করেও পৌষ’কে নিতে পারে না হেমন্ত। পৌষ ঠাই বসে রয়।
হেমন্ত হাল ছেড়ে প্রস্থান করতেই পৌষ ফোনটা হাতে তুলে। তৌসিফের ফোনে কল লাগায়। রিসিভ হয় না। ওপাশ থেকে আসে তিক্ত কথা, “এই মুহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না”।
হা করে শ্বাস টানে পৌষ। উঠে আলমারি খুলে। পরিপাটি করে সাজানো তৌসিফের কাপড় গুলো। পৌষ’র সাথে এ নিয়ে কম তো ঝগরা লাগে না। মানুষটা এত পরিপাটি আর পৌষ হলো অগোছালো। কাপড়ের উপর মাথা রাখে পৌষ। ওর মনে হয় তৌসিফের বুকে মাথাটা রাখা। পৌষ নাক টানে। ফিসফিস করে বলে,
— জলদি চলে আসুন না। আপনার তোতাপাখির অনেক কষ্ট হচ্ছে।
মাথাটা ঘুরাতেই পৌষ বিছানায় যেতে চায়। আফসোস যাওয়ার সময়টা সে পায় না। দুই কদম বাড়াতেই ক্লান্ত শরীর হেলে পরে। নার্স সহ বুয়া তারাতাড়ি ধরে বিছানায় উঠালো ওকে। মিনু কপালে হাত দিয়ে দেখলো।
সকালেও সোহা ফোন দিয়ে খবর নিয়েছে। মিনু সবটা বলে নি৷ যতটুকু জানে ততটুকুই বলেছে। পৌষ’র গুঙিয়ে উঠায় মিনুর চোখে পানি জমে। তারও মামার জন্য কষ্ট হচ্ছে।
.
পৃথিবীর ক্রুরতম ক্ষণ হলো অপেক্ষা। কাটে না। বিরহের এই সময়টা যেন আরো বিষাক্ত। বিষে ভরা বানে পৌষ ভেঙে চুরমার হলো। নীল ব্যথায় তার চোখ, মুখের রুপ লাবন্য ফিকে পরলো। আজ সূর্য উঠেছে। কুয়াশার আড়ালে উঁকি দিলো মাত্র। পৌষ বারান্দায় বসে আছে। সারাটা রাত এখানেই ছিলো সে। হাত-পা হিম ধরে গেছে। গেট দিয়ে তখন কালো রঙের একটা গাড়ি ঢুকেছে। পৌষ তাকিয়ে দেখলো। সে শুধু দেখেই গেলো। পেছনে দুটো সাদা গাড়িও ঢুকেছে। কলিং বেল বাজতেই হয়তো বুয়া খুলেছে। মিনুর গলা শুনলো পৌষ সেই সাথে শুনলো অতি পরিচিত প্রিয় কণ্ঠ। সেই কণ্ঠ শুরুতেই ” পৌষরাত” বলে ডাকলো। পৌষ উঠবে কিন্তু কিভাবে? ওর হাত-পা নড়ছে না৷ পৌষ’কে না পেয়ে হয়তো মানুষটা খুঁজেই চলেছে। তার ডাক শোনা যাচ্ছে। আচ্ছা, পৌষ উঠবে কিভাবে? মানুষটা তো ডাকছে তাকে। উঠার শক্তি বিলীন। হাত বাড়িয়ে রেলিং ধরে পৌষ। না উঠলে যদি না পেয়ে মানবটি চলে যায়?
পৌষ’র পা ঝিনঝিন করে উঠে। এক পা দুই পা করে বেরিয়ে আসে রুমে। রুমে তখন স্বয়ং তৌসিফ ঢুকেছে। পৌষ থমকে গেলো। ওর সম্মুখে আজ ঠিক আটদিন পর তৌসিফ। পৌষ মনোযোগ দিয়ে তাকে দেখলো। দাঁড়ি গুলো একটু বেড়েছে। তার ঠোঁটের সাইডে কাটা আর গালে একটা আঁচড়। পৌষ’কে দেখে তৌসিফের বুক জ্বলে উঠে। হাহাকার করে হৃদপিণ্ডটা। এটা পৌষ না। তৌসিফ মানে ও অসুস্থ বউ রেখে গিয়েছে যার চোখ, মুখ শুকিয়ে ছিলো কিন্তু এহেন রুপে তো তৌসিফ রেখে যায় নি। না খাওয়া, না ঘুম শুধু ছিলো তীব্র অপেক্ষা। প্রেম জিনিসটাই খারাপ। এটা ভোগায়। ভুগতে ভুগতে মৃত্যু দুয়ারে আসে মানুষ তবুও যেন প্রেম তারা ভুলে না। এটা যে ভুলা দায়। তৌসিফে’র চোখের কোণে পানি জমতেই ও ডাকলো,
— পৌষরাত।
দুই এক পা করে এগিয়ে এলো পৌষ। তৌসিফের গালে নিজের হাতটা রেখে উত্তর দিলো,
— হু।
তৌসিফ খেই হারালো। কথা বলতে পারলো না৷ পৌষ গাল দুটো হাতিয়ে পুরোটা মুখ হাতালো। গলা, বুক সবটা হাতিয়ে নিশ্চিত হলো এটাই তার তৌসিফ। অতঃপর? অতঃপর একজন অপেক্ষারত স্ত্রী স্বামীর হাত টেনে ধরলো। দরজা লাগিয়ে দিলো তড়িৎ বেগে। পৌষ’র ভেতরের দাবানো চঞ্চলতা হুরহুর করে বেড়ে গেলো। তৌসিফ’কে বসালো বিছানায়। গায়ের শার্টের বোতাম গুলো খুলে বুক পিঠ দেখলো। পিঠে বুকে শুধু আচড়। পৌষ’র মনে হচ্ছে উসপিস করা মানুষটার গোসল দরকার। তৌসিফ’কে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে বসিয়ে কোনরূপ বাক্য ব্যায় না করে পৌষ ওর গায়ে পানি ঢাকলো। তৌসিফের কোন খেয়াল নেই। সে শুধু পৌষ’র কাঁপা হাতটা দেখছে। মাথাটা টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে পৌষ বলতে লাগলো,
— প-পিঠে আঁচড় লেগেছে। মলম লাগাতে হবে। উঠুন। চলুন।
খাটে বসিয়ে তৌসিফে’র গালে, পিঠে, বুকে মলম লাগালো পৌষ। টাউজারটা হাঁটু পর্যন্ত তুলতেই পায়ে একটা ক্ষত দেখলো। ঢোক গিললো পৌষ। আলতো করে ছুঁয়ে দিলো সেখানে। তৌসিফ’কে বসিয়ে দেয়াল ধরে ধরে বাইরে চলে গেলো ও। ফিরে এলো মিনিটের ব্যবধানে। হাতে খাবারের প্লেট। নিজে তৌসিফে’র মুখে তুলে খাওয়াতে খাওয়াতে ভাঙা গলায় ফ্যাচফ্যাচ করে বলতে লাগলো,
— গরুর ভুনা করে দিব রাতে ঠিক আছে? কি দিয়ে খাবেন? নাকি হাসের মাংস খাবেন? চালের রুটি করব?
তৌসিফ কথা বলে না। এমনকি ও যে পৌষ’কে খেতে বলবে তাও বলতে পারছে না। এই কঙ্কালের মতো মেয়েটা কিভাবে তার তোতাপাখি হতে পারে। ওর সুন্দর চুলগুলো এভাবে জটলা কিভাবে পাকাতে পারে। কিভাবে উজ্জ্বল ভরা মুখটার চাপা ভাঙতে পারে। সুস্পষ্ট ভাবে কিভাবে দেহটা কাঁপতে পারে। কেউ কি তার পৌষ’কে একটু মুখে তুলে খাওয়ালো না। কেউ কি তাকে জোর করে মাথায় তেলও দিতো না। কেউ কি একটু যত্ন করে এক গ্লাস পানিও দিতো না। তৌসিফের এত টাকার মূল্য কোথায় তাহলে। টাকার তার এতই টান যে ওর তোতাপাখিটার গাল দুটো শীতে ফেটে আছে। ঠোঁট ফেটে ফেটে শুষ্ক হয়ে আছে। টাকা দিয়ে তবে সুখ কেনা যায় না। তৌসিফ মানুষ কিনে রেখেছিলো যারা কেনার মতোই আচরণ করেছে। কেউ আগ বাড়িয়ে বাড়তি যত্ন করে নি। তৌসিফের মন চাইলো নিজের বুকটা নিজেই ঝাজড়া করে দিতে।
পৌষ পানির গ্লাসটা তৌসিফে’র মুখের সামনে ধরলো। দুই হাত দিয়ে গ্লাসটা ধরেছে। কম্পমান হাতটা দেখে তৌসিফ। পানি খেতেই ওর মুখ মুছিয়ে দিয়ে পৌষ সব রেখে আসে। বিছানায় পা উঠিয়ে বসে। তৌসিফের খালি গায়ে হাত বুলায় আরেকবার। খুঁটে খুঁটে দেখে আর ব্যাথা আছে কি না। তৌসিফকে শুয়িয়ে দিয়ে পায়ে যত্ন করে তেল লাগালো পৌষ। পা দুটো শুকিয়ে আছে। এত সুন্দর মানুষ যে নিজের যত্নে কখনো ত্রুটি রাখে না তার যত্নহীনা পা দেখে পৌষ’র খারাপ লাগলো। আস্তে ধীরে তৌসিফে’র বুকে আসে ও৷ মাথাটা বুকে রেখে আলতো ঠোঁট ছোঁয়ায় সেই বুকে। দুই হাত জড়িয়ে ধরে সময়, কাল, পাত্র আর নিজের অবস্থা ভুলে গগন কাঁপিয়ে কাঁদে পৌষ। ওর কান্না শুনা যায় পুরো তালুকদার বাড়ীতে। দরজার বাইরে বুয়ারা জমা হয়ছে হয়তো। এতদিন পর মেয়েটা কাঁদছে। সব ভুলে কাঁদছে। তৌসিফ শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো ওকে। ওর বুকটা ছটফট করছে। গলাটা যেন কেউ চেপে ধরেছে নাহয় কেন কথা বলতে পারছে না তৌসিফ?
#চলবে….
#প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৮
তৌসিফ থম ধরে রইলো। ঘন্টা খানিক হলো ওর বুকের ভেতর ছোট্ট পাখিটা ঘুমাচ্ছে। তৌসিফে’র বুকটা এখনও শান্ত হয় নি। সমানতালে এটা শব্দ করেই যাচ্ছে। তৌসিফে’র দম আটকে আসতে চায়। যতক্ষণ চিৎকার করে পৌষ কেঁদেছে ঠিক ততক্ষণ ও এক প্রকার দম আটকে ছিলো। কণ্ঠনালী রোধ হয়ে ছিলো। ভেতরে ছাইচাপা আগুন যেন এখনই বেরিয়ে আসতে চায়। ছারখার করে দিতে চায় চারপাশ। নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হয়। জঘন্য এক অপরাধী যে কি না তার অসুস্থ বউ’কে রেখে গিয়েছে। তৌসিফ যদি একটা বার টের পেতো একটা সপ্তাহ ধরে ওর আদরের মানুষটা এভাবে তড়পাচ্ছে তাহলে বুঝি তৌসিফ যোগাযোগ না করে?
টেনে পৌষ’কে নিজের আরো কাছে নেয় তৌসিফ। কপালে আস্তে করে একটা চুমু খায়। রুগ্ন দেহের মেয়েটাকে এই মুহুর্তে বাজে দেখাচ্ছে। ভীষণ বাজে। ঠিক ততটা বাজে যতটা বাজে হলে তৌসিফ মিলাতে পারে না পূর্বের পৌষ’র সাথে। ঠিক ততটাই বাজে যতটা বাজে দেখায় একজন হেরে যাওয়া প্রেমিকাকে।
তৌসিফ আস্তে করে চোখ বুজলো। ওর ঘুম প্রয়োজন। ঠান্ডা মাথায় কিছু কাজ তার এখনও করতে হবে। যার জন্য তৌসিফে’র এই দিন দেখতে হলো তার ব্যবস্থা করতে হবে। তৌসিফ উশুল করা জানে। সে সমতায় বিশ্বাসী। তাকে কেউ ইট ছুঁড়লে তৌসিফ যে পাটকেলের বর্ষণ ঘটাবে এটাও সকলের বুঝা উচিত ছিলো।
মিথ্যা এই মামলার সঠিক তথ্য আজই সব খোলাসা হয়েছে। এতক্ষণে হয়তো শিরোনাম দেখাচ্ছে। রাজনীতি তৌসিফ করতো বহু আগে। বাবা-চাচার জের ধরেই করা হয়েছিলো। উচ্চপদস্থ হয়ে যথেষ্ট সম্মান কামিয়েছিলো তৌসিফ। সকল দলবল, পদবি তৌসিফ ছুঁড়ে ফেলেছিলো বাবার এক বাক্যে। নিজের ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছিলো। আজকের এই ঠাট বাট তো এত বছরের ছোট্ট একটা পুরষ্কার মাত্র।
আজও হয়তো ফিরা হতো না যদিও না তিন দিন আগে পৌষ ওমন পা’গল হয়ে ছুটলো। শুধু মাত্র ওর জন্য কাজ দ্রুততার সাথে সেরেছে তৌসিফ। কঠোর ভাবে বিধিনিষেধ জারি করতেই এত দ্রুত ফলাফল এলো।
বুকের মাঝে আরেকটু গুটিয়ে গেলো পৌষ। তৌফিক ওকে সহ নিজেকে ঢেকে নিলো। ঠান্ডা পরছে। নভেম্বর মাসে রাত নামলেই ঠান্ডা নামে কিন্তু আজ এখনই ভালো ঠান্ডা। চোখ বুজে কল্পনা করে তৌসিফ।
বিস্তর এক বেলাভূমির মাঝে সে পৌষ’র পিছনে ছুটছে। খিলখিল করা হাসির শব্দে তৌসিফে’র ধ্যান ভটকায়। সে দেখে ছোট্ট একটা পরী তার কাছে আসছে। তৌসিফের কাছে আসার পূর্বেই সে ধপ করে পরে যায়। কেঁদে উঠে উচ্চস্বরে। তৌসিফে’র হৃদকম্পন থামে। বৃষ্টি নামে প্রচুর বেগে। তৌসিফ দৌড়ে যায়৷ বাচ্চাটাকে বুকে তুলে আদর করে। ছোট্ট পরীটা তখন আদো বুলিতে ডাকে, “বাব্বাহ”।
তৌসিফ হাসে। ঝলমলে এক হাসি। বাচ্চাটাকে চুমুতে সিক্ত করতেই সে হাসে। তৌসিফ দেখলো পৌষ সমুদ্রের মাঝে যাচ্ছে। তার চোখ মুখ ভেজা। কেঁদে নাক লাল করেছে। হলুদ শাড়ীতে লাল রঙের পার। তৌসিফ ডেকে উঠলো,
— পৌষরাত, হানি যেয়ো না।
পৌষ পিছন ঘুরে। অভিমানী কণ্ঠে বলে,
— আমাকে আপনি ভালোবাসেন না।
— এই যেয়ো না। কথা শুনো…ডুবে যাবে।
রুগ্ন দেহের পৌষ তখন হাসে। আচমকা এক জোয়ার আসে। ভেসে যায় পৌষ। হলুদ শারীর আঁচল ভাসে পানিতে। তৌসিফ থম ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কোলের বাচ্চাটা তখন ডাকে,
— মাম্মাহ।
তৌসিফ চমকায়৷ ফলস্বরূপ বাচ্চাটা মাটিতে পরে কাঁদায় মাখামাখি হয়ে গেলো। তৌসিফ ওকে তুলতে নিলেই পৌষ’র কান্না…….
দরদর করে ঘামতে ঘামতে মুচড়ে উঠে তৌসিফ। হা করে শ্বাস টানে। গলা শুকিয়ে গেছে তার। বহু কষ্ট এক ঢোক গিলে ওর বুকের ভেতর পৌষ’কে দেখে ও। হ্যাঁ, এই তো। তার ঐ রুগ্ন দেহের মাঝে ভঙ্গুর চেহারা। তৌসিফ মানতে পারে না। একদমই না।
আস্তে করে হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস নিলো। এক পলকে সবটা গলায় ঢেলে আস্তে ধীরে উঠে গেলো। প্রায় তিনঘণ্টা যাবৎ ঘুমাচ্ছে সে। পৌষ হয়তো আরো ঘুমাবে।
তৌসিফ উঠে বাইরে গেলো। বুয়ারা তখন কেউ নেই সেখানে। তৌসিফ গলা ছেড়ে ডাকতেই লাইন ধরে তিনজন বুয়া দৌড়ে এলো। মিনুও বাদ গেলো না। নার্সটা দাঁড়িয়ে আছে এক কোণায়। তৌসিফ ধমকে জিজ্ঞেস করলো,
— ওর এই অবস্থা কেন?
কেউ উত্তর দিলো না৷ তৌসিফ চোয়াল শক্ত করে বললো,
— আজ এই মুহুর্তে আমার বাড়ী ছাড়বি সবকটা। জানে মা’রব তোদের আমি। কু*ত্তার বাচ্চারা টাকা গিলাই নি তোদের? ওর খেয়াল রাখিস নি কেন? লাখ লাখ টাকা তোদের মুখের উপর মে’রে গেলাম ফল কই? ওর চুল আঁচড়ে দিস নি কেন? ওকে খাওয়াস নি কেন? ওর মুখের এই অবস্থা কেন? নিজেরা গিলেছিস শুধু……..
বুয়ারা ভয়ে কাঁপছে কাঁপছে অবস্থা। তৌসিফ জানে, টাকা দিয়ে সবটা হয় না৷ কিছুই হয় না৷ এত টাকা দিয়ে লোক রাখার পরও কতটা আনাদর, কতটা অবহেলা। তৌসিফে’র মন চাইলো কারো খু’ন করতে। তার মস্তিষ্ক তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই পৌষ’কে দেখেই ওর নিজেকে খু’ন করতে মন চায়।
.
হালকা হালকা শব্দ পেয়ে চোখ মেলে পৌষ। নিজেকে বিছানায় একা আবিষ্কার করেই ওর হৃদপিন্ড চিলিক দিয়ে উঠে। হুর মুড়িয়ে উঠে বসে বিছানায়। তৌসিফ নেই তাহলে কি স্বপ্ন দেখলো ও? ঐ লোক কোথায়? পৌষ’র মাথা এলোমেলো হলো৷ চিৎকার করে ডাকতে লাগলো,
— এই আপনি কোথায়? কোথায় আপনি? এখানে আসুন…….! কোথায় গেলেন?
পৌষ’র কান্নায় ভেজা চিৎকারে দৌড়ে রুমে ঢুকে তৌসিফ। পৌষ ওকে দেখেই বিছানা থেকে নামতে নেয় হুরমুর করে। হাত-পা এলোমেলো হয়ে পরতে নিলেই আগলে ধরলো তৌসিফ। পৌষ ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে শক্ত হাতে। নাক টানে। গুঙিয়ে উঠে অদ্ভুত স্বরে। তৌসিফ ওর মাথা চেপে ধরে। খুবই হালকা স্বরে আদর মেখে শুধু বলে,
— আ….আমি আছি।
— কই… কই ছিলেন আপনি? আমি খুঁজেছি।
— একটু বাইরে….
— কেন কেন? বিছানায় কেন ছিলেন না? আপনি কেন চলে যান?
— হানি, প্লিজ….
— কোন প্লিজ না৷ তুই আমাকে ছেড়ে দে। আমি থাকব না এখানে। ছাড়াছাড়ি হবে। আজকেই হবে। আমাকে মে’রে ফেলতে চায়। সবাই মা’রতে চায়। আপনার ফাঁ’সি হবে আমি দেখেছি…..জেলে নিবে আপনাকে…..
বাকিটা বলার আগেই পৌষ টলে গেলো। তৌসিফ হতবাক, বিমূর্ত হয়ে রইলো। আচ্ছা, একটা মানুষ আটদিনের ব্যবধানে কতটা শোকাহত হয়? ঠিক কতটা শোকাহত হলে সে এমন পা’গলামি করে? তৌসিফ বুঝে উঠতে পারে না৷ তার ভাষা ফুরিয়ে আসে। সে কথা বলার খেই হারায়।
পৌষ’কে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে এই প্রথম তৌসিফ কাঁদলো। কাঁদলো ভালোবাসার শোকে। প্রেমের দুরস্ত অবস্থা দেখে। তার দুই চোখ দিয়ে গুনে গুনে চার পাঁচ ফোঁটা পানি পরলো যা ছিলো রাগের বশে আসা। তৌসিফ ধ্বংস করতে চাইলো। ওর ভালোবাসার মানুষটাকে কষ্ট দেয়া প্রতিটা মানুষকে।
_________________
ভাই এসেছে শুনা মাত্র তায়েফা ছুটে এসেছে। সে দেশে ছিলো না। ল্যান্ড করেই এখানে ছুটে এসেছে। তৌসিফ তখন পৌষ’র মাথায় পানি দিচ্ছে। হঠাৎ ই জ্বর উঠেছে। পৌষ চোখ মেলে বললো,
— কটা বাজে?
— বারোটা?
— দুপুর?
— না রাত।
— আমি উঠব৷
— কেন? শুয়ে থাকো পৌষরাত।
— উহু।
তোয়ালে দিয়ে ওর চুল পেঁচিয়ে দিলো তৌসিফ। উঠে বসতেই তৌসিফ কপালে হাত দিয়ে দেখলো। হালকা উষ্ণ এখনও। তৌসিফ ওকে ধরে বললো,
— মেডিসিন নিতে হবে তোতাপাখি।
— আসছি একটু।
— কি কাজ?
— রাত হলো। খাবেন না আপনি। ঝটপট হাতে ডিমের কোর্মা করে দিব৷ ঝাল দিয়ে একদম আর শুধু ডাল…কোন বায়না না আর। আমার মাথা ঘুরছে।
— একদমই না পৌষরাত।
— দুইদম তাহলে৷ আমি কতদিন আপনাকে রান্না করে খাইয়াই না৷ আমার বুকটা খা খা করছিলো।
এই ধরুন তো, ছাই উঠতে পারছি না৷
তৌসিফ ধরে তুললো। বুয়াকে ডিম সিদ্ধ দিতে বলে পিয়াজ, মরিচ কাটতে বললো পৌষ। ভয়ে ভয়ে বুয়ারা তাই করলো। তৌসিফ তাদের তাড়িয়েছে। এখনও যায় নি তারা। নার্স বেচারি ভয়ংকর ফ্যাসাদে পরেছে। যাবে না থাকবে বুঝতে পারছে না সে।
পৌষ’কে রান্না করছে আর তৌসিফ দাঁড়িয়ে আছে। এই দৃশ্য বিরল। সুঠাম দেহটায় মাথা এলিয়ে হেলান দিয়ে খুন্তি নাড়াচ্ছে পৌষরাত।
তায়েফা ঢুকেই ডেকে উঠলো,
— তুসু….
তৌসিফ তাকালো। এই তো তাকে স্বার্থহীনা ভালোবাসার আরেক মানুষ।
তায়েফা ভাইকে জড়িয়ে ধরে। পৌষ’র মাথায় হাত দিয়ে রাগী কণ্ঠে বলে,
— কত কল দিলাম তোকে… এই পৌষ সোনা তোর কি হয়েছে?
পৌষ’কে দেখে চকমকানোরই কথা। তার হালতই ওমন৷ তৌসিফ চোখের ইশারায় বোনকে থামালো। খেতে বসে পৌষই জিজ্ঞেস করলো,
— আপনাকে মে’রেছে?
— না তো।
— মিথ্যা বলে আপা। ওনার শরীর ভরা দাগ।
— মিথ্যা বলব আমি? কার এত বড় হাত?
— তাহলে ওগুলো কি চুম্মাইসে আপনাকে?
— ছিঃ পৌষরাত। কেমন ভাষা এসব। গাড়ির কাঁচের সাথে আঁচড় লেগেছে।
তায়েফা অবাক হলো। বললো,
— কি বলিস?
— জেল থেকে গাড়িতে তুলা মাত্রই নীরব সড়কে এসে পুলিশ গাড়ি থামায়৷ ওখানে আমার লোক ছিলো। ওরা কাঁচ ভেঙে বের করলো আমাকে। তখনই আঁচড় লেগেছে। পায়েরটা পেয়েছি চারদিন আগে।
পৌষ অবাক হলো। তৌসিফ নিজেই বললো,
— পুলিশ তো এমনিতেই ছাড়ত না৷ তাই সাজানো নাটক তারাই করল। এখন প্রমাণিত হয়েছে তাই ঝামেলা নেই।
পৌষ’র পেট মুচড়ে উঠে৷ খেতে পারে না আর। তায়েফা এখানেই রইলো আজ। পৌষ মুখে খাবার তুলতে না পারায় স্যালাইন দেয়া হলো। তৌসিফ ওর মাথায় হাত বুলালো। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
— আজ আরাম করে নাও। কাল থেকে ডিউটি শুরু তোমার হানি৷ অনেক জ্বালাচ্ছো আজকাল। কোথায় আমায় আদর করবে তা না তুমি আমার সেবা খাচ্ছো।
#চলবে…..
#প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৯
বাইরে আলো ফুটেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাখির কলকাকলি। তৌসিফ উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেই ফজর পড়ে পৌষ’র স্যালাইন খুলে ঘুমালো ও। মাথাটা ভো ভো করছিলো যেন। ক্যানোল খুলতে গিয়ে এই ভোরে ভালোই হ্যাসেল হলো। পৌষ খুলতে দিবে না। ব্যথায় হাত ফুলে উঠেছে। নার্স ভয়ে ভয়ে পাইপ ধরার আগেই পৌষ চিৎকার করে উঠে। এদিকে তৌসিফ চোখ গরম করে বউ ধরে আছে। তায়েফাও ছুটে এসেছে। ঘন্টা তিন এক আগে কি এক ঘটনাই না ঘটে গেলো। কত কষ্টে ঘুমালো পৌষ অতঃপর বিদায় নিলো তায়েফা। তৌসিফ তখন থেকেই দরজা লক করে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। পৌষ’কে যে বুকে নিবে সেই সুযোগটা ছিলো না। হাত ফুলে তার ব্যাঙ হয়ে আছে। তৌসিফ হতাশ! বড়ই হতাশ। দুধের স্বাদ সে ঘোলেও মিটাতে পারছে না। কলিযুগ চলমান বোধহয়।
দরজায় অতি ক্ষীণ শব্দ হচ্ছে। যেই নক করছে সে খুব ভয়ে ভয়েই করছে কাজটা। পৌষ সজাগ হলো। চোখ দুটো যেন কাঠাল গাছের আঠা দিয়ে লেগে আছে। খোলা বড় দায়। পৌষ টেনে খুললো৷ উঠে বসে ক্লান্ত অনুভব করলো। জামাটা কাঁধের উপর টেনে গায়ে ওরনা দিতে গিয়ে দেখলো ওরা তৌসিফের মুখের উপর। বউয়ের ঘ্রাণ নিতে বেচারা এই পাঁয়তারা গ্রহণ করেছিলো।
পৌষ তা গায়ে দিয়ে উঠে গেলো৷ দরজা খুলতেই দেখা মিললো নার্সটির। সে পৌষ’কে দেখে ভেতরে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। পৌষ না বুঝে প্রশ্ন করলো,
— কিছু খুঁজছেন?
নার্সটি চমকালো। উত্তরে বললো,
— ইয়ে মানে…. আপনার খালি পেটে ঔষধ ছিলো ম্যাম।
— ওহ।
ছোট্ট উত্তর দিলো পৌষ অতঃপর বললো,
— মুখ ধুঁয়ে আসছি। যান।
— স্যার….
তাকে শেষ করতে না দিয়ে পৌষ বললো,
— উনি ঘুমাচ্ছেন। যান আপনি।
— না মানে ম্যাম….
— আজব তো! বললাম না ঘুমাচ্ছেন। তার সাথে কিসের কাজ আপনার। যান আপনি।
আচমকা পৌষ ধমকে উঠতেই নার্স তড়িঘড়ি করে চলে গেলো। জামাই নিয়ে পৌষ বড় সেনসিটিভ। এতটা সেনসেটিভ সে কিছু নিয়ে না। জামাই তার কলিজার টুকরো। কলিজার ভিতর আদর যত্নে তাকে পুষে রাখে পৌষ। তার বিয়োগ শোকে আজও পৌষ সুচের খোঁচা খাচ্ছে। এদিকে যদি ঘরের ভিতর ছুঁকছুঁক করা মেয়ে মানুষ থাকে তাহলে কি সহ্য হয়?
মুখ, হাত ধুঁয়ে পৌষ বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে ফর্সা সেই পুরুষ কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতেও ভুলে নি ও।
আজ নিজ হাতে নাস্তা বানাবে পৌষ। তার জামাই উঠে নিশ্চিত খুশি হবে। এর অবশ্য একটা কারণ আছে। হেমু ভাইয়ের ছেলে হয়েছে। শ্রেয়া’র শরীর অসুস্থ তাকে দেখতে যাবে পৌষ। একটু থাকার বায়নাও করবে। আগেই জামাইকে আদর যত্ন করলে এতে সুবিধা হয়। না করতে সে বার দুই ভাববে।
___________________
কাক ডাকা ভোরে উঠেছে সোহা। রুটি গুলো ভাজতে আজ দেড়ী হয়েছে তার। মেহেদী বেরিয়ে যাবে। তাকে না খায়িয়ে পাঠালে সোহা’রই খারাপ লাগবে। গতকাল না খেয়েই ছুটেছে মানুষটা। সোহা’র খারাপ লেগেছে। সেই খারাপ লাগাটা বেড়েছে যখন শাশুড়ীও নারাজ হয়ে কথা বলে নি। দশ, পনেরো দিনের সংসার। সোহা সামাল দিয়ে উঠতে পারছে না। হোঁচট খাচ্ছে বারবার। কোথায় কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আচ্ছা, গতকাল দেড়ীটা কার জন্য হলো? মেহেদী যদি সকাল সকাল পাগলামি না করতো তাহলে তো দেড়ীটা হতো না। এই কথা সোহা’র মন চাইলো শাশুড়ীর মুখের উপর বলে দিতে কিন্তু আফসোস শুধু মাত্র মেহেদীর কথা ভেবে সে কথাটা বলে নি। মানুষরা বাসর রাতেই তাকে বলেছে মা-বাবার সাথে যাতে সোহা ভালো আচরণ করে। এর বাইরে সহ্য করবে না মেহেদী। সোহা’র চোখ ভিজে উঠে। আলু ভাজিটা প্লেটে বেরে দৌড়ে ছুটে আসে টেবিলে। চারজন বসার মতো ছোট্ট একটা কাঠের টেবিল। সোহা চারটা রুটি রেখেই দৌড়ে গেলো মেহেদী’কে ডাকতে। মেহেদী তখন তারাহুরো করে টাই বাঁধছে। সোহা এগিয়ে এসে ব্যাগ গুছিয়ে দিলো। মেহেদী টেনে ওর কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— আজ তারাতাড়ি ফিরব। শুনো নীল শাড়ীটা যে দিলাম না পরসু ওটা পরবে। চুল যেন ছেড়ে রেখো না। আজ বোনাস পাব। সেটা দিয়ে শুধু ঘুরব আমরা। তোমায় নিয়ে আজ প্রেমপ্রেম খেলা খেলব। সারারাত রাস্তায় হাঁটব। তোমায় আজ অনেক ভালোবাসব।
সোহা’র ক্লান্তি হারিয়ে গেলো। চোখ দুটো খুশিতে ছলছল করে উঠলো। এই সংসারটায় টাকার সংকট হলেও মেহেদী থেকে ভালোবাসার সংকট এখনও দেখি নি সোহা।
মেহেদী চলে গেলো দ্রুত পায়ে। সোহা ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে রান্নাঘরে গেলো। ঝটপট হাতে নাস্তা বানিয়ে টেবিলে রাখতেই ওর শশুর এলো। মাত্রই হেঁটে এসেছেন উনি। রোজ সকালেই যান। ডায়াবেটিসের সমস্যা। লোকটা ভালো। সোহা’কে আদর করে। “মা” বলে ডাকে। সোহা অবশ্য বাবা’র ভালোবাসা পায় নি কখনো।
পানিটা টেবিলে রাখতে রাখতে সোহা বললো,
— বাবা, চা দিব এখন?
— না মা। আলুভাজিই খাব আগে।
সোহা ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে বলার চেষ্টা করলো,
— আপনি আলু খেয়েছেন শুনলে…..
বাকিটা বলার আগেই ওর শাশুড়ী এগিয়ে এলো। বসতে বসতে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— খেতে চাইছে খাক। ডায়াবেটিস বাড়ুক একবার।
শশুর বউয়ের কথা শুনলো না। মুখে রুটি পুরতে পুরতে সোহা’কেও বসতে বললো। সোহা শাশুড়ীকে রুটি দিয়ে নিজে গিয়ে চা এনে অতঃপর বসলো। শাশুড়ীর মুখ গম্ভীর। তার ভাবসাব বুঝে না সোহা।
_____________________
তায়েফা বাইরে এসেই জোরে এক ধমক লাগালো পৌষ’কে। আচমকা ধমকে যেন পৌষ’র বুকটা এখনও লাগাচ্ছে। এরা ভাই-বোনগুলো এমন কেন পৌষ বুঝে না। ধমকে অবশ্য ভয় পেয়েছে। তায়েফা’কে দেখে এই মুহুর্তে তার ভালোই ভয় লাগছে। শাশুড়ী ছাড়া সংসার পৌষ’র ননাস তো আগেই। না জানি পৌষ তোর কপাল পুড়লো। জামাইকে ভুলিয়ে ভালিয়ে সিংহ থেকে বিড়াল বানালেও ননাস পোষ মানাবে কিভাবে? পৌষ’র জানা নেই। ওর মনে হচ্ছে তায়েফা এসেই ওর চুল টেনে ধরবে। পিঠে চার পাঁচটা পরতেও পারে। তায়েফা এসেই পৌষ’র হাত ধরে বের করলো রান্নাঘর থেকে। রাগী কণ্ঠে ধমকালো,
— কি করছিলি ওখানে? এই তোর লজ্জা নেই। রাতভর কাঁতরেছিস জ্বরে। উঠেই আবার এখানে এসেছিস!
পৌষ মাথা নিচু করে রাখলো৷ তায়েফা বুঝলো হয়তো ধমকটা বেশিই জোড়ে ছিলো। আস্তে করে পৌষ’র হাত ধরে সোফায় বসিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বললো,
— সোনা, তুই অসুস্থ। এসব করতে কেন এসেছিস? বুয়া আছে তো।
— উনি আমার রান্না পছন্দ করে আপা।
— তোর উনি তোর রান্না থেকে বেশি তোকে পছন্দ করে পা’গল। তোকে অসুস্থ দেখে ও নিজেই ভেঙে গিয়েছে। শক্ত মনের ভাইটা আমার একদম বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ওর সাথে সাথে থাক। ভালো লাগবে দু’জনেরই।
— তার মন ভালো করতেই তো রান্না করছিলাম।
মিনমিন করে কথাটা বলে পৌষ। সেই মুহুর্তেই ডাক এলো তৌসিফে’র। পৌষ ঝট করে উঠলো। অনুমতি নেয়ার ভঙ্গিতে বললো,
— আপা, যাই?
— যাহ।
তায়েফা হেসে ফেললো। দুই জামাই-বউই পা’গল। একটা কঠিন শিলাকে পৌষ কিভাবে এতটা নরম বানালো তা ঠিক ঠাওর করতে পারে না তায়েফা। সে মন থেকে দোয়া করে তার এই ভাইটা সুখী হোক।
পৌষ দেখলো বিছানায় শুয়ে শুয়েই তৌসিফ ডাকাডাকি করছে। কপাল কুঁচকে পৌষ জিজ্ঞেস করলো,
— কেন ডাকলেন?
তৌসিফ উল্টো ছিলো। সে সোজা হয়ে শুয়ে বললো,
— কাছে এসো।
— একদমই না। উঠুন।
— তুমি বাইরে কি করছো?
— ট্যাডাং ট্যাডাং করে নাচছিলাম। আপনিও আসুন। একসাথে নাচি।
বলেই হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পৌষ। তৌসিফ ওর হাত ধরে কাছাকাছি আনে। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,
— আমার ঘুম হারাম করে তুমি ভালোই আনন্দে আছো।
— কই?
— দেখতে পাচ্ছি।
— কানা আপনি।
— তাই নাকি?
— হু।
তৌসিফ আরেকটু দূরত্ব ঘোচাতেই পৌষ মুখ সরালো। পিতপিত করে বললো,
— খাচ্চর ব্যাটা! নো ব্রাশ, নো উম্মা!
— ইয়েস উম্মা।
— ইয়েস ব্রাশ।
— ফাস্ট উম্মা।
লাভ অবশ্য হলো না। পৌষ উঠে দাঁড়ালো। রুমের পর্দা গুলো মেলে দিয়ে বললো,
— শুনুন না।
— বলুন না হানি।
— আজ না….
— আজ কি?
— বাইরে যাব।
— কারণ?
— হেমু ভাইর ছেলে হলো তো। ভাবীও অসুস্থ। আমি দেখতে যাব।
— একা যাওয়া নিষেধ।
— একা কেন যাব আমি? জামাই নিয়ে যাব। আপনিও চলুন।
— সমস্যা আছে একটা।
পৌষ ত্যাড়া চোখে তাকিয়ে বললো,
— এখানে আবার কিসের সমস্যা?
— ওবাড়ী ঢুকলেই তুমি বেরুতে চাও না। খুবই বিরক্ত লাগে।
পৌষ বিড়াল পায়ে এগিয়ে এলো। পেশি বহুল বাগুতে মাথাটা এলিয়ে পৌষ বললো,
— প্লিজ যাব। সত্যি বলছি বায়না করব না।
তৌসিফ ওর মাথায় হাত রাখে। অসন্তোষ গলায় বলে,
— এই চুলগুলো আমার ভীষণ পছন্দের। তুমি জানো। আমার অনুপস্থিতিতে তাদের যত্ন নিলে না।
— ভালো লাগে না।
তৌসিফ উঠে গিয়ে তেলের বোতল নিলো। বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। কিছুক্ষণ পরই ফিরলো গরম তেলের বাটি নিয়ে। পৌষ’কে অবাক করে দিয়ে ওর চুলে তেল লাগালো তৌসিফ। নিজ হাতে অতি যত্ন সহকারে কাজটা করে তৌসিফ। আগা থেকে আঁচড়ে দেয় আলতো হাতে। একটা চুল উঠলেও যেন তার কলিজায় লাগে।
তায়েফা দরজায় নক করতেই তৌসিফ বলে উঠলো,
— আপা? গুড মর্নিং। ভেতরে এসো না।
তায়েফা রুমে ঢুকলো। আগে এই রুমটায় ঢুকার অনুমতি থাকতো না। পিয়াসী পছন্দ করতো না একদমই। তায়েফা দেখলো পৌষ ঠোঁট উল্টে আছে। তায়েফা বসতে বসতে প্রশ্ন করলো,
— কি হয়েছে? মুখটা চোখা কেন?
— তেল ভালো লাগে না আপা।
পৌষ উত্তর দিলো। তৌসিফ চপচপা করে তেল দিয়ে বললো,
— চুলগুলো আঠা আঠা হয়ে জট পাকিয়ে আছে।
— তাতে কি? সাধু বাবা হয়ে যেতাম আমি।
মাথায় একটা চাটি পরতেই পৌষ চুপ রইলো। তায়েফা মনে মনে হাসলো। তৌসিফ বউয়ের দুষ্টামিতে এতটা শান্ত থাকে। মানা যায় এসব?
তৌসিফ উঠে বাথরুমে যেতে যেতে বললো,
— দুপুরে শ্যাম্পু করে দিব। একটু সুস্থ হও। স্যালোন যাওয়া দরকার আমার সাথে তোমারও।
পৌষ মুখ ভেঙালো। ওসব স্যালোন ফ্যালোন তার সাথে যায় না। এসব মূলত পৌষ ততটা কোনদিনই পছন্দ করে নি। তাই তো উল্টো এক ব্যাপার ঘটলো। তার কপালে জামাই জুটলো একদম টিপটপ ধরনের।
তায়েফা উঠতে উঠতে বললো,
— বাইরে বসছি। আয় দু’জন।
— বসুন না আপা।
— আড্ডা দিব তো। সারাদিন আছে।
পৌষ মাথা নাড়ে। তৌসিফ সবেই উদাম গায়ে বের হলো ওমনই দেখা গেলো দরজায় হাজির নার্স। পৌষ’র নজর পরতে দেড়ী কিন্তু হামলে তৌসিফে’র উপর পরতে দেড়ী হলো না। নিজের ফিনফিনে শরীরটা দিয়ে সুঠাম দেহের তৌসিফ’কে ঢাকতে ঢাকতে বললো,
— কি চাই?
বেশ খ্যাকিয়েই বলেছে পৌষ। নার্সটি লজ্জায় লাল হওয়ার ভান ধরেছে। পৌষ’র গা, পিত্তি জ্বলে উঠে। চোখ, মুখ খিঁচে বলে উঠে,
— বেহায়া, নিলাজ, ফুটা চোখের নার্স। কি চাই! যান এখান থেকে। বাড়ীর বাইরে যাবেন একদম। আমার জামাই এর দিকে নজর দিবেন না। লজ্জা লাগে না?
নার্সটি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। মাথা নামিয়ে নিতেই পৌষ পুণরায় বলে উঠলো,
— যান!
তৌসিফ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে। গম্ভীর কণ্ঠে নার্সকে বলে,
— বাইরে অপেক্ষা করুন। আসছি আমি।
নার্স যেতেই পৌষ’র মুখ ছাড়ে ও। পৌষ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
— এটাকে বিদায় করুন। আমি সুস্থ। শা*লী! কত্ত বড় কলিজা আমার জামাইকে নজর দেয়। আজ তো বৃহস্পতিবার, আসুন তো শুকনো মরিচ পুড়ে দেই। নজর লাগলো বলে।
তৌসিফে’র ঠোঁট চওড়া হলো। এক হাতে পৌষ’কে বুকে টেনে হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
— ওহহো আমার তোতাপাখি, তুমি কত কথা বলো।
তৌসিফের হাসির দাপটে চোখে পানি চলে এলো। পৌষ বুকে মুখ গুজে মিনমিন করে বললো,
— ওকে তাড়িয়ে দিন। বদ নজরে দেখে আপনাকে। আমার সহ্য হয় না।
— আচ্ছা।
— সত্যি তো।
— তিন সত্যি।
.
বিকেল নাগাদ বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সোহা। শাড়ীটা বের করেছে। একটু পরই তৈরি হবে ও। চোখ বুজে কল্পনা করে ও। ভাবছে মেহেদী’কে আজ আবদার ধরে জানাবে মিনুর কথা। ছোট্ট মিনু তার হৃদয়ের অনেকটা জুড়ে। কতটুকুই বা খায় ও। এখানে থাকবে ওর আপার কাছে। পেলেপুষে বড় করলো সোহা।
উঠে শাড়ীটা হাতে নিতেই চিৎকার শোনা গেলো। দৌড়ে এসে সোহা হা হয়ে গেলো। বাথরুমে পা পিছলে শাশুড়ী পরে আছে৷ সোহা বাড়ীতে এখন একা। টেনে তুলতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন উনি।
সোহা কোনমতে তাকে নিয়ে ছুটলো পাশের ক্লিনিকে।
খবর পেয়ে দৌড়ে মেহেদী আর ওর বাবা এলো। ভালোই চোট পেয়েছেন উনি। হাতে মেহেদীর বোনাসের টাকা। মায়ের ঔষধ আর ভিজিটে সবটা চলে গেলো। সবটা অবশ্য না। হাজার টাকা আছে এখনও। মধ্যবিত্তদের এমন হুটহাট খরচ এলে খেই হারাতেই হয়। তারা মানিয়ে চলা জানে। ছোট থেকে শিখে এসেছে।
সোহা মেহেদীর দিকেই তাকিয়ে রইলো। আজ না ঘুরতে যাওয়ার কথা? তাদের প্রেম করার কথা? আচ্ছা, সোহা কি স্বার্থপর হচ্ছে নাকি তার চাওয়াটা ভুল?
#চলবে…..