প্রেমহিল্লোল পর্ব-১৯+২০

0
25

#প্রেমহিল্লোল||১৯||
#তাসনীম_তামান্না

বিলুপ্ত ডাইনোসর এখন সকলের সামনে উপস্থিত হলে তারা বিস্মিত হয়ে ভয় পাবে ঠিকিই কিন্তু নড়তে পারবে না। তেমনই অবস্থা উপস্থিত সকলের কী করবে? কী বলবে? কেউ বুঝতে পারছে না। তিশা বেগম ও তুষার অবাক হয়ে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে। কুয়াশা আর আগের কুয়াশা নেই। আগের থেকে শুঁকিয়ে গেছে রূপের লাবন্য কমে গেছে। তাকে দেখে পুষ্টিহীন কিশোরী মনে হচ্ছে। কুশান হতভম্ব কাটিয়ে উঠে দ্রুত বোনকে ধরে হাসার চেষ্টা করে বলল “আরে তোমরা কখন আসলে? বসো। পাখি কুশুকে নিয়ে যাও।”

কুয়াশা বিরক্ত হয়ে দ্বিরুক্তি করে বলল
–কেনো? আমি কথা বলছি দেখছ না? এই তুষার বলুন আমাকে বিয়ে…

কুয়াশা তার কথা শেষ করতে পারলো না কুশান ধমকে উঠে বলল “কী বলেছি তোমাকে? যাও রুমে যাও। পাগলামির লিমিট ক্রস করছো।”

ভাইয়ের ধমকে কুশু কষ্ট পেয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলল “আবার আমাকে বকলে? আমি থাকব না এখানে! আমি চলে যাবো।”

পাখি আর তুতুল ওকে জোর করে রুমে নিয়ে গেলো। কুশান অপ্রস্তুত হয়ে বলল “আন্টি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না প্লিজ।”

তিশা বেগম হতভম্ব কাটিয়ে উঠে বলল “কুয়াশা কী হয়েছে? এমন অস্বাভাবিক ব্যবহার করছে কেনো?”

মেঘ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল “বসুন আম্মু, তুতুল আসছে।”

তিশা বেগম বসলেন না ছেলের দিকে তাকিয়ে রইল। তুষার এখনো ঘোরের মধ্যে থেকে বের হয়ে ছটফট মনে বলল “আমি ওকে বিয়ে করতে রাজি!”

কুশান শন্ত কণ্ঠে বলল “কুয়াশা পাগল হয়ে গেছে তুষার। কোনো পাগল মেয়েকে কেনো তুমি বিয়ে করবে?”

তিশা অবাক হয়ে বলল “এসব কী বলছ কুশান?”

–ঠিকি বলছি আন্টি। ওর মাথার ঠিক নাই।

–কিন্তু এসব কীভাবে হলো? তুতুলও এসব কিছু বলে নি।

–বাবা-মা চলে যাওয়াটা ও এখনো মেনে নিতে পারে নি। সারাক্ষণ বাবা-মা করতে থাকে একা একা কথা বলে। আজ ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম ওসেটাতে ক্ষেপে গিয়ে বাসা থেকে চলে যেতে চাইছিলো কিন্তু আপনাদেরকে দেখে ওসব কেনো বলল জানি না। আপনারা প্লিজ ওর কথা ধরবেন না।

–ভাইয়া আমার কুয়াশাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই। আমি ওকে আজ এখনি বিয়ে করতে রাজি।

–দেখো তুষার আবেগের বশে এসব বলছ চলার পথ এতোটাও সহজ নয়। এখন করুনা করে আমার বোনকে বিয়ে করতে চাইছ। পরে বিরক্ত হয়ে ডিভোর্স…

কুশানের কথা শেষ করতে দিলো না তুষার ও হাত ধরে কাতর গলায় বলল “আমি কুয়াশাকে ভালোবাসি। হুট করে জানি না ভালোবাসাটা হয়ে গেছিলো। সেই প্রেক্ষিতেই বাবা-মা প্রস্তাব রেখেছিলো কিন্তু আপনারা কেউ রাজি ছিলেন না বলে কেউ জোর করে নি। এখন কুয়াশা নিজেই যখন বলছে তখন একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন আমি কথা দিচ্ছি আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে ওকে ভালো রাখার চেষ্টা করবো। ওকে সুস্থ করে তুলব। একটা চান্স দিন প্লিজ”

ছেলের অসহায় কণ্ঠের কথা শুনে তিশা বেগম ও কুশানের দিকে তাকিয়ে বলল “আমি ছেলের বউ নয় নিজের মেয়ে নিয়ে যেতে চাই। ছেলে কুয়াশাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না। কী করব বলো তো ছেলেকে নিয়ে আমার টেনশন হয়। বিয়েতে না করে দেওয়ার পর আমি আমার ছেলেকে দেখেছি কেমন জেনো হয়ে গেছে। কুয়াশাকে সবটা দিয়ে ভালো রাখার চেষ্টা করবো আমরা।”

কুশান হাসফাস করতে লাগলো এমন ভাবে বলছে যে সরাসরি না করতে পারছে না বলল “আন্টি আমাকে কয়েকটা দিন সময় দিন আমি, আমি ভেবে জানাব।”

তিশা বেগম হেসে বলল “ঠিক আছে আমি কিন্তু না শুনতে চাই না বলে দিলাম।”

কুশান বলল “আপনারা বসুন তুতুলকে ডেকে দিচ্ছি।”

তুষার সে-সব কথায় কান দিচ্ছে না কুয়াশা তাকে বিয়ে করতে চেয়েছে সে শুধু সেখানে আঁটকে আছে। হুট করে তুষার আবদার করে বসলো

–আমি কী কুয়াশার সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।

উপস্থিত সকলে তুষারের দিকে তাকিয়ে রইল। তুষার অপ্রস্তুত হয়ে গেলো কেশে বলল “ভাইয়া আপনি পারমিশন দিলে তবেই বলবো।”

তিশা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে হতাশ হলেন সুখে নাকি দুঃখে বোধ বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে বোধহয়। কুশান যে পারমিশন দিবে না সেটা তিনি ধরে নিয়ে ছিলো। কুশান শান্ত কণ্ঠে বলল “আসো আমার সাথে।”

কুশানের পিছনে পিছনে তুষার কুয়াশার রুমে গেলো। কুয়াশা তখনো পাখি আর তুতুলের সাথে জেদ ধরে যাচ্ছে নিচে যাবে বলে। তুষারকে দেখে ও শান্ত হলো। কুশান বলল “পাখি তুতুল আন্টিরা আসছে নাস্তার ব্যবস্থা করো কুয়াশাকে দেখে রাখছি।”

তুষারকে কুয়াশার রুমে দেখে তুতুল আর পাখি অবাক হলে-ও কোনো প্রশ্ন করলো না নিচে চলে গেলো। ওরা চলে গেলে কুশান বলল “তুমি সামলাতে পারবে? বাড়াবাড়ি করলে ডাক দিও। আসছি।”

কুয়াশা ভাইয়ের যাওয়া দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলল “ও কী বলল? আমি? আমি বাড়াবাড়ি করি? ও আমাকে এমন বলতে পারলো?”

তুষার নিমিষে শুকানো মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল “কে কী বলল?”

কুয়াশা ফুঁসে উঠে বলল
–এই যে ভাইয়া বলে গেলো… আপনি শুনেন নি? আমাকে বলল আমি বাড়াবাড়ি করি?

তুষার এক অচেনা কুয়াশার দিকে তাকিয়ে রইল তার মধ্যে কী যেনো খুঁজছে তাকে বোঝার চেষ্টা করে স্মিত হেসে বলল
–উহুম, মশা! সন্ধ্যার হয়ে গেছে মশা বাড়াবাড়ি করলে ডাকতে বলেছে। সবাই মিলে মশা মারবো।

কুশান দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো বোনের কথার প্রেক্ষিতে তুষারের জবাব শোনার আশায় ওর উত্তর শুনে ও না হেসে পারলো না দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কুশ, শান কী করছে সেটা দেখতে গেলো। বাচ্চা দু’টো ভয়ে ভয়ে আছে।

তুষারের কথায় কুয়াশা রাগ নিভে যায়।
–আমাকে বললে আমিও মারতে পারি

–আচ্ছা তাই!

–হুম!

তুষার ধীরস্থির ভাবে বলল
–তুমি আমাকে বিয়ে করবে?

কুয়াশা নিঃসংকোচ উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলল “হ্যাঁ, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না?”

ওর মধ্যে বাচ্চাসুলভ সহজসরল আচরণ দেখে তুষার বলল “তুমি রাজি থাকলে আমি ও রাজী। কিন্তু তুমি আমাকে কেনো বিয়ে করবে?”

কুয়াশা চুপ করে রইল। তুষার আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইল উত্তরের আসায়। ও উত্তর দিতে সময় নিলো বলল “বাবা আপনার সাথে বিয়ের কথা বলেছিলো সে জন্য!”

তুষারের সেদিনের হসপিটালের কথা মনে পড়লো বিস্ময় নিয়ে বলল “তুমি কীভাবে জানলে?”

–আমি জেনেছি। আমি সব জানি।

তুষার তাকিয়ে থেকে বলল “নিজের ইচ্ছেতে করছ না বাবার ইচ্ছেতে করছো?”

–আমারও ইচ্ছে। বাবার ইচ্ছেই আমার ইচ্ছে।

——–

সেদিন রাতে তিশা বেগম আর তুষার চলে গেলে। কুশান নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা গ্রোস্থ হচ্ছে। পাখি ওর চিন্তিত মুখ দেখে বলল “দেখো আমার মনে হয় তুষারের সাথে কুয়াশার বিয়েটা দেওয়া উচিৎ। কুশু ওখানে ভালো থাকবে ও বাড়ির সবাই ভালো।”

–কিন্তু কুশু নিজে এখন সুস্থ নয় এই সময় বিয়ে? সুস্থ হওয়ার পর যদি ওর মত বদলে যায়।।

–হবে না কেননা ও এতোটাও অসুস্থ নয়। ও মাঝেমধ্যে সুস্থ আচারণ করছে। ও নিজের ইচ্ছেতে বিয়েতে মত ও দিয়েছে। তাছাড়া আমার মনে হয় ওর জায়গা বদলের দরকার। সারাদিন বাসায় থাকে বাবা-মা’র সৃতি ওকে পোড়ায়। সংসার করতে করতে সঠিক হয়ে যাবে।

কুশান তখনও বসে রইলো আসলে কী করা উচিৎ ওর? তুষার ও ওর পরিবার কুয়াশার ওপরে বিরক্ত হয়ে গেলে। ও কিছু ভাবে পারছে না সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এক বেড়াজালে আঁটকে পড়েছে বেড়নোর উপায় নেই।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#প্রেমহিল্লোল||২০||
#তাসনীম_তামান্না

আজ শুক্রবার আকাশ রোদ বৃষ্টির খেলায় মেতেছে। কখনো কালো মেঘ জমাটবদ্ধ হয়ে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামছে, তো কখনো রোদের দেখা মিলছে। চৌধুরী বাড়িতে আজ অনেকগুলো দিন পর উৎস মুখর হয়ে উঠেছে। পাখি, তুতুল, পাখির মা রান্না ঘরে ব্যস্ত। কুশ, শান ছুটোছুটি করছে। কুয়াশার কাছে মেঘা, অনু, ইশা ওকে সাজিয়ে দিচ্ছে। আর হাসিমজায় মেতে আছে। কুয়াশা কিছু বলছে না চুপচাপ অনুভূতিহীন হয়ে বসে আছে। ওকে যা বলা হচ্ছে ও চুপচাপ পুতুলের মতো তা পালন করছে। অনু বলল “কী রে এতো ভদ্র হয়ে গেলি যে কথায় বলছিস না।”

–নতুন বউদের এতো কথা বলতে নেই জানিস না নাকি তোরা!

ওরা সকলে সুর টেনে ‘ওওওওহোওওও’ বলে উঠলো। কুয়াশা লজ্জা পেলও কটাপ রাগ দেখিয়ে বলল “তোরা এমন করছিস কেনো? যেটা সত্যি সেটাই তো বলছি। সব কিছুতেই নেগেটিভলি!”

অনু হেসে হেসে বলল “বিয়েতে চুপ থাকতে হয় আর বাসরঘরে কী করতে হয় সব জানিস তো?”

ইশা আচমকা বলল “জানবে না কেনো তোমরা তো এসবে ট্রেনিং প্রাপ্ত।”

কুয়াশা লজ্জায় লাল নীল হতে লাগলো। ইশার কথায় অনু রেগে গিয়ে বলল “কী বলতে চাইছো তুমি? আমরা ১০/১২টা বিয়ে করেছি। বাসর করেছি?”

ইশা দাঁত দিয়ে জিব্হা কেটে বলল “ছি! ছি! কী বলো। আমি বোঝাতে চেয়েছি এসব ব্যপারে তোমাদের প্রচুর জ্ঞান আছে।”

মেঘা বলল “থাক থাক হয়েছে। তুমি যে ঈশানের সাথে প্রেম করে ঝুনু হয়ে গেলো সেটা আমরা বুঝতে পেরেছি এবার তোমাদেরকেও বিয়ে দিতে হবে ইনডিরেক্টলি এটাই বোঝাতে চেয়েছ তো!”

–এটা কখন বোঝালাম? তোমার অমন খচ্চর বন্ধুকে বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে।

কুয়াশা বিরক্ত হয়ে বলল “উফফ থামবি তোরা। সবসময় ঝগড়া। ঝগরুটের দল।”

অনু ওর গাল টিপে দিয়ে বলল “নিজে তো খুব ভদ্র।”

ওদের কথার মাঝে পাখি এলো। কুয়াশার সাদা লেহেঙ্গা সাথে সিলভার কালারের জুয়েলারি লাইট ব্রাইডাল সাঁজে ওকে অপরূপা লাগছে ওকে দেখার সাথে সাথে পাখির মুখ দিয়ে বের হয়ে এলো “মাশা-আল্লাহ! কী মিষ্টি লাগছে তোকে কারোর নজর না লাগুক।”

মেঘা মুখ চেপে হেসে বলল “কারোর নজর না লাগলেও তুষার ভাইয়ার নজর ঠিকিই লেগে যাবে।”

কথাটা শুনে সকলে একযোগে হেসে উঠলো। নিচ থেকে কুশান পাখিকে চেচিয়ে ডেকে বলল “পাখি, কই তোমরা? ওরা কাছাকাছি এসে গেছে ওদের আসতে আর বেশি সময় লাগবে না। ওকে বরণ করে নাও।”

পাখি ওদেরকে তাড়া দিয়ে বলল “আরে আয় তোরা কত কাজ বলতো চল চল।”

সকলে নিমিষে চলে গেলো। কুয়াশা একা বসে রইলো। দেওয়ালে টানানো ফ্যামিলি ফটো টার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে ওটা হাতে নিয়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “তোমরা খুব খারাপ। আমাকে একা রেখে চলে গেছো। আমার এমন বিশেষ দিনেও তোমরা থাকলে না। আমার বুঝি কষ্ট হচ্ছে না?”
কুয়াশা ফুপিয়ে উঠলো অভিযোগের সুর তুলে বলল “তোমরা তো বড় ভাইয়া, ছোট ভাইয়া, মেঘা সবার বিয়েতেই ছিলে আমার বেলাতে নেই কেনো? আমি এতো আনলাকি। আমি খুব খারাপ কেনো যে তোমাদের অবাধ্য হয়েছিলাম। নাহলে আমার বিয়েতেও তোমরা থাকতে। বাবা তুমি খুশি তো আমার তুষারের সাথেই বিয়ে হচ্ছে। তুমি না তুষারকে পছন্দ করো বলো তুমি খুশি তো?”

———-

তুষারের সাথে ওর কাজিন আর ফেন্ডরা এসেছে। কুশান ওদের বিয়েটা ধুমধামে দিতে চাইলেও তুষার জানালো এখন এভাবে বিয়ে করার সময় নয় কুয়াশা অসুস্থ তার ওপরে শোক কাটিয়ে উঠছে এর মধ্যে লোকজন জানিয়ে বিয়ে করাটা দৃষ্টি কটু দেখায়। কুশান ওর সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছিল কেননা ও নিজেও জানে এখন ধুমধামে বিয়ে দিলে এর কত খারাপ দিক বের হতে পারে। কুয়াশাও মেনে নিয়েছে। তাই কাছের কয়েকজন নিয়েই বিয়ে সম্পন্ন হবে। তুষাররা আসলে ওরা কয়েকজন মিলে গেট ধরে টাকা আদায় করলো। নাস্তা শেষ করে বিয়ে পড়ানো শুরু হলো।

কুয়াশাকে তখন সবাই ঘিরে ধরে রেখেছে কাজী বার বার কবুল বলতে তাড়া দিচ্ছে। ও নার্ভাসনেসে এদিক ওদিক তাকিয়ে ভরসায় স্থান খুঁজতে ব্যস্ত। কুশান এসে ওর পাশে বসে বলল “কী সমস্যা কবুল বলছিস না কেনো?”

কুয়াশা ভাইয়ের বুকে মুখ চেপে ঝরঝর করে কেঁদে দিল। চারিদিকে গুনগুন থেমে গেলো। কুশান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “কী হয়েছে? আমি আছি সবসময় তোর সাথে।”

–ভাইয়া তুমি কী আমার জন্য কষ্ট পেয়েছ? তুমি কী এ বিয়েতে খুশি নও?

–এসব কে বললো? তুষারের মতো ভালো ছেলে খুঁজে পাবি? দেখবি খুব সুখী হবি তোরা। এখন না কেঁদে বিয়ে সম্পন্ন কর বাবুইপাখি।

কুয়াশা কবুল বলছে না শুনে তুষার অস্থির হয়ে পায়চারি করছিলো কাজীসহ অন্যরা থমথমে মুখে ফিরে আসলে। তুষার এগিয়ে গিয়ে অস্থির হয়ে বলল “কী হয়েছে ওর? ও ঠিক আছে তো?”

কুশান ভ্রু কুঁচকে বলল “ঠিক আছে। কিন্তু তুমি নতুন জামাই হয়ে তিড়িং বিড়িং করে লাফালাফি করছো কেনো?”

তুষার লজ্জা পেয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো সকলে এটা নিয়ে হাসাহাসি খোঁচাখুঁচি করলেও তুষার গায়ে মাখলো না কুয়াশা যে কবুল বলেছে এটাতে শান্তি পেয়েছে।

তুষার আর কুয়াশাকে পাশাপাশি বসিয়ে আয়না দেখানো হলো তুষার আয়নার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল কুয়াশা লজ্জা রাঙা হয়ে আছে সকলে টিটরাকি মেরে এটা ওটা বলছে সে-সব আদেও তুষারের কানে যাচ্ছে কীনা বোঝা যাচ্ছে না। তুষারকে জিজ্ঞেসা করা হলো আয়নায় কী দেখতে পাচ্ছে? তুষার উত্তর দিলো “প্রেমহিল্লোল!”
সকলে হৈহৈ চৈচৈ করে উঠলো। কুয়াশাকেও একই প্রশ্ন করা হলে সে লজ্জায় রাঙা হয়ে উত্তর দিলো “পরিপূর্ণ!”

তুষারের ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো। সকল রিচুয়াল শেষে খাওয়া দাওয়া পাঠ আসলো। সেখানেও বর-কণে দুজন দুজনকে খাইয়ে দিলো।

তুতুল সবটা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলো। পাখি ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল “কী হয়েছে তোর?”

তুতুল চমকে গিয়ে বলল “আমার আবার কী হবে?”

–তুই কী তুষার কুয়াশার বিয়েতে খুশি নস?

তুতুল থতমত খেয়ে বলল “এমন কিছু না শুধু ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। ওরা সারাজীবন একসাথে কাটাক এটাই চাই তবে কুয়াশা যদি পরে মত পালটে ফেলে তখন কী হবে?”

পাখি আশ্বাস দিয়ে বলল “এমন কিছু হবে না দেখিস। এসব কিছু ভেবে মন খারাপ করলে হবে? ভবিষ্যত ভাবতে বসলে বর্তমান উপভোগ করতে পারবি না।”

চলবে ইনশাআল্লাহ