প্রেমহিল্লোল পর্ব-৩৩

0
135

#প্রেমহিল্লোল||৩৩||
#তাসনীম_তামান্না

জনজাট জীবনে বাইরে তপ্ত গরমে বৃষ্টি প্রশান্তি এনে দিয়েছে। জগৎ সংসারে বৃষ্টি যেনো একপ্রকার শান্তি এনে দিয়েছে। এসবে রিমার খেয়াল নেই তার মেজাজ তপ্ত হয়ে আছে। অনবরত পায়চারি করতে করতে রিমা রাজকে ক্লান্তহীন কল দিয়ে যাচ্ছে। ওদিকে রাজও কল ধরছে না। রিমা কল দিতে দিতে রাজকে পেলো ও ফোন ধরতেই রিমা চেচিয়ে বলল “এই কী প্রবলেম তোমার? আমার কল ধরছ না কেনো?”

রাজ ওর কথার উত্তর না দিয়ে বলল “তোমার কী প্রবলেম? এতোবার কল দিচ্ছ কেনো? কল ধরছি না মানে বুঝতে পারছ না বিজি আছি।”

রিমার রাগ বাড়লো বৈ কমল না। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল “কী এতো বিজি? তোমাকে একটা কাজ দিয়েছি সেটা এখনো করতে পারলে না আর কবে করবে? আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল তুমি একটা অকর্মার ঢেকি তোমার আশায় বসে থেকে কোনো লাভ নাই।”

–একদম বাজে কথা বলবে না। তুমি যেটা করতে বলেছ সেটা অলরেডি করা শেষ বাট…

–বাট বাট কী? এতো বাট কোথা থেকে? কাজটা শেষ যখন একশন নিচ্ছ না কেনো? ওরা দেশ ছেড়ে চলে গেলে তারপর একশন নিবে? বলদ!

–মুখ সামলে আমার সাথে দেখা করো ব্যপারটা তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। আজ বিকালে সে ঠিকানায় চলে এসো।

কথাটা বলে রাজ রিমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো। রিমা রাগে আর ফোন দিলো না। সামনাসামনি আজ মাথা ফাটিয়ে দিবে বলে মনে মনে ঠিক করে রাখলো।

—————

তুষার বাইরে গেছিলো কিছু কাজে কুয়াশাকে রেডি থাকতে বলে গেছে ও ফিরে রেডি হয়ে বসে আছে। এখনো তার হদিশ নেই। ও কয়েকবার কুয়াশাকে ডাকলো। কুয়াশা তখনকার নিজের কান্ডে নিজেই লজ্জা পেয়ে তুষারের সামনে আসতে চাইছিলো না কিন্তু ওর ষাঁড়ের মতো চেঁচাতে দেখে আসতে বাধ্য হলো। নিজের লজ্জা প্রকাশ করতে চাইলো না যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে অযথা রাগ বিরক্তি নিয়ে বলল “কী হয়েছে? গরু-ছাগলের মতো চিৎকার চেচামেচি করছেন কেনো?”

ওর কথা শুনে তুষার রেগে গেলো বলল “তুমি আমাকে ইনডিরেক্টলি গরু-ছাগল বলছো?”

–কোনো ডাউট আছে?

ও মাথা ঠান্ডা করে বলল “কয়টা বাজে দেখেছ? ও বাড়িতে যাবার ইচ্ছে না থাকলে বলে দাও। ওদের জানিয়ে দি আমরা যাচ্ছি না অযথা, ওদের অপেক্ষায় রেখে তো লাভ নেই।”

কুয়াশা চোখ বড়বড় করে বলল “না না যাবো যাবো। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন আমি এখনি আসছি।”

অতঃপর ঝড়েরবেগে সে তার কাজ করতে লাগলো। তুষার হতাশ হয়ে বিছানায় বসে ফোন টিপছে আর বউকে দেখছে। আধাঘন্টা পরে কুয়াশা রেডি হয়ে গেলো। তুষার বলল “আধাঘন্টা পাঁচ মিনিট? তুমি ম্যাথ সাবজেক্টে এতো খারাপ আগে জানতাম না তো! আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চা-কাচ্চার জীবন তো অন্ধকার।”

————–

কুয়াশা আজ অনেকগুলো দিন পরে নিজের ছোট থেকে বেড়ে ওঠা নীড়ে ফিরেছে। যেখানে তার প্রিয় ও কাছের মানুষদের সাথে বেড়ে ওঠা প্রতিটা কোণে স্পর্শ লেগে আছে, লক্ষ-কোটি সৃতি জড়িয়ে আছে। আপন মানুষগুলো সান্নিধ্যে এসে ও আবেগে অশ্রু ভাসালো। কুশ, শানকে জড়িয়ে ধরে এতো এতো আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো। পাখি বলল “এতো দেরি হলো কেনো তোমাদের? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি আর তোমরা!”

তুষার বলল “কী করবো ভাবীপু আপনার ননদকে রেডি হয়ে থাকতে বললাম এসে দেখি রেডি হয় নি। তার ওপরে রাস্তায় যা জ্যাম।”

কুয়াশা তুষারের এহেন কথায় ও প্রতিত্তোর করল না। ভাইয়ের দুই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো। কুশান বলল “কী রে বাবুইপাখি? কাঁদছিস কেনো? এতো কাঁদলে হয়?”

–আমি চলে গেলে সবাই আমাকে ভুলে যাবে তাই না?

মেঘ মজা করে বলল “অবশ্যই তোকে মনে রাখার কী আছে? তোর সাথে তো আমাদের কোনো লেনদেন নেই। সম্পত্তি ছিলো সেটাও ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়েছে।”

–আমি কখনো বলেছি আমার সম্পত্তি লাগবে? বার বার কেনো একই কথা বলিস ভাইয়া? আমি এসব কিছু চাই না যা আছে আমি এগুলো কুশ, শান আর তোর ফ্রিউচার বাচ্চাকাচ্চাদের নামে লিখে দিবো।

তুতুল মেঘের ওপরে রেগে বলল “মেঘ কী শুরু করেছ তুমি? কুয়াশা তোমার ভাই তোমাকে খেপাতে এসব বলছে ওর কথায় কান দিও না।”

মেঘ হাসতে হাসতে বলল “বলদেরা এসব বুঝবে না।”

পাখি বলল “হয়েছে ওপরে যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।”

–মেঘা কোথায়? ও আসে নি?

–হ্যাঁ এসেছে তোদের আসতে দেরি হচ্ছে বলে ও আর রিদ বের হলো কী জেনো কাজে।

কুয়াশা আর তুষার ওপরে গেলো ফ্রেশ হতে। কুয়াশা তুষারের ট্রাউজার আর টি-শার্ট বের করে দিলো। নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিলো।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া হাসিমাজার মাঝে কুয়াশা আর মেঘা একটু সময় বের করে ছাদে গেলো তখন সন্ধ্যার আগমুহূর্ত মেঘা হুট করে প্রশ্ন করলো “কেমন আছিস?”

কুয়াশা মজা পেলো হাসতে হাসতে বলল “এতোক্ষণ পর এই প্রশ্ন তোর মাথা কী গেছে?”

মেঘা ওর দিকে তাকিয়ে থেকে হালকা হেসে বলল
–আমি তোর সংসার জীবনের কথা বলছি মানিয়ে নিতে পেরেছিস?

কুয়াশার হাসি থেমে গেলো। মেঘা আবারও বলল “তুই জেদে পড়ে তুষার ভাইকে বিয়ে করেছিস আমি জানি মন থেকে কী মেনে নিতে পেরেছিস?”

কুয়াশা কিছুক্ষণ চুপ থাকে আকাশে খন্ড খন্ড মেঘেদের আনাগোনার দিকে তাকিয়ে বলল “জানিস, তুষারকে কী ভেবে বিয়ে করেছিলাম? বাবা চেয়েছিলো তাই। মনে মধ্যে ঘুরতো তুষার যেমনই হোক আমি মানিয়ে নিবো বাট হি ইজ সাসচা জেন্টালম্যান আই মিন হি ইজ পারফেক্ট ফর এভরিথিং এ্যাজ এ্যা সন, এ্যাজ এ্যা ব্রাদার, এজ এ্যা হাসবেন্ড। বাট আই থ্রট, হি ইজ ডিজার্ভ বেটার নট মি।”

মেঘা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ওর দিকে অস্ফুটস্বরে বলল “তুই প্রেমে পড়ে গেছিস?”

কুয়াশা চমকে উঠে ওর কথা উড়িয়ে দেওয়ার মতো করে বলল “আরেহ, দূর কী সব বলিস! কদিনে কী কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে?”

মেঘা হাসলো হাসতে হাসতে বলল “তুই আসলেই বুদ্ধু প্রেমে পড়েছিস ভালোবাসতেও শুরু করেছিস। বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কে সৃষ্টিকর্তা রহমত দেন। এই দেখ আগে তুই আমাদেরকে ছেড়ে দূরে যেতে হবে বলে ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাইছিলি না। ভাইয়া তো বলল এখন তুই ভাইয়া চলে যাবে শুনে তুই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলি।”

বলেই মিটমিট করে হাসতে লাগলো। কুয়াশার রাগ হলো সব কথা বলে দিয়েছে শয়তান লোকটা। কিন্তু রাগ ভাঁটা পড়ে গেলো ভাবনায় ও কী সত্যি তুষারকে ভালোবেসে ফেলেছে? এতো তাড়াতাড়ি ভালোবেসে ফেলা যায়? কীভাবে সম্ভব? কিন্তু এটা সত্যি তুষারের চলে যাবার কথা শুনে ও মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগছিলো কিছু ভালো লাগছিলো না। কান্না পাচ্ছিলো। এটা কী ভালোবাসা?

চলবে ইনশাআল্লাহ