#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব_____১৯
বকুল ফুল, বকুল ফুল
সোনা দিয়া হাত কানও বান্ধাইলি
বকুল ফুল, বকুল ফুল
সোনা দিয়া হাত কানও বান্ধাইলি
শালুক ফুলের লাজ নাই
রাইতে শালুক ফোটে লো
রাইতে শালুক ফোটে
যার সনে যার ভালোবাসা
যার সনে যার ভালোবাসা
সেই তো মজা লুটে লো……………..
বাজারের এক দোকানে উচ্চ আওয়াজে মুখরিত হচ্ছে গানের ছন্দ। থমকে গেল শিমুলের পা জোড়া। নিশাত বিস্ময়কর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিনা বিলম্বে।
‘ কি হইলো?’
‘ সৌরভ ভাই আছেন দোকানে? ‘
নিশাতের বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ল নিমেষে। দু অধর নড়ল ক্ষীণ, ‘ আছে। ‘
শিমুল উল্টো ঘুরে দাঁড়ায়। ফের তার পানে তাকিয়ে বলে,
‘ তুই এখানে দাঁড়া নিশু। আমি সৌরভ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা কইরা আসি। ‘
‘ ভাইয়ের সাথে দেখা! কেন?’— অবাকমিশ্রিত কণ্ঠস্বর ওর। তৎপরে খেয়াল করে শিমুলের কপোলদ্বয় লালাভ। লাজুকতার ঠ্যালায় ফুলে উঠেছে গালের মাংস অল্প একটু। নিচু গলায় বলে উঠল,
‘ সৌরভ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে কারণ লাগবে? তোর থেকে অনুমতি নিতে হবে? সবসময় তোর সাথে কথা বলি,তাঁর সাথে হয় না। মামাতো ভাইয়ের সাথে কথা বলতে মন চাইব না?’
‘ এত বছরে এসে বলতে মন চাইল?’
কথাটা অত্যন্ত মৃদু কণ্ঠে বলে সে। শিমুল কিঞ্চিৎ চোখ পাকায়। বলল,
‘ প্রায়ই বলি আমি। তোকে দেখিয়ে বলি না আরকি! তোদের বাড়ির কারো সাথে কথা বলতে আবার স্পেশাল টিকেট লাগে। তোরার কাপড়ের ব্যবসা। সৌরভ ভাইরে বলমু আমাকে একটা ফকফকা সাদা দেইখা ওড়না আইনা দিতে। ‘
‘ ফুপিরে বললেই উপজেলা থেকে এনে দেয়। ‘
শিমুল মুখ লেটকিয়ে ফেলল। জানতে চায়,
‘ তুই কি চাইছিস তোদের দোকানের কাপড় না পড়ি?’
‘ না,এমনটা না। ভুল ভাবছিস৷ আসলে,,
‘ আসলে?’
নিশাত খুঁৎ খুঁৎ স্বরে উত্তর দিল,
‘ তোর সাথে ভাইয়া ঠিকঠাক কথা বলে না,রাগ দেখাবে। পরে মন খারাপ হবে তোর। এসব ভেবে বললাম। ‘
‘ ওহ! এই কথা! সৌরভ ভাইয়ের মেজাজ আমার জানা। চিল মাই লাভ। শুধু শুধু কথা বলে পাঁচ মিনিট নষ্ট করে ফেললি। স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে, এক দৌড়ে যাব আরেক দৌড়ে আসব। তুই ঠিক এখানটায় দাঁড়িয়ে থাক। ‘
‘ আমিও যাই?’
‘ না। তুই গেলে দেরি হবে। দৌড়াতে পারিস না তুই। দেখা যাবে আছাড় খেয়ে থুতুনি, গাল-টাল কেটে বসে আছিস। গত কয়েকদিন ধরে আবার আমার বড় ভাইয়ের জন্য বমি করতে করতে বড্ড নাজুক হয়ে গেছিস। কি এমন বমি করছিস যেই বমিতে আমি ফুপু হচ্ছি না? ‘
লজ্জার প্রভাবে শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত রক্ত হিম হয়ে এলো নিশাতের। জমে গেল কায়ার আংশিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। অপ্রস্তুত হলো বেশ। বলল,
‘ এসব কি বলছিস?’
শিমুল মজা পেল। তড়তড় করে বলে ওঠে,
‘ বমির কারণ অন্যরকম হলে মানতাম আমি। তুই বড় ভাইয়ার চিন্তায় কেন বমি করবি? বলছিস প্রেমে পড়িস নি। তাহলে কিসে পড়েছিস নিশু?’
নিশাত কোনোরকম ভনিতা ছাড়াই প্রতুত্তর করে,
‘ প্রহর ভাইয়ের মধ্যে ফেঁ–সে গিয়েছি। ‘
‘ ভাইয়াকে বলব তোকে মুক্তি দিতে?’
নিশাত বিভোর হয়ে পড়েছিল। শিমুলের প্রশ্ন কানে যেতেই হৃদয়স্থল ধ্বক করে উঠল তড়িৎ গতিতে। বলল,
‘ মুক্তি চাই না আমি। ‘
অক্ষিকাঁচে ভেজা ভেজা ভাবের উপস্থিতি, নিস্তেজ গলা। শিমুল কথা কাটানোর নিমিত্তে বলল,
‘ যাব আর আসব। ‘
বাজারের পেছনের পথে নিশাতকে দাঁড় করিয়ে আসল ও। ঢিমেতালে হেঁটে দোকানের নিকটস্থে এসে মনে পড়ল দোকানে মামা আছে কিনা জেনে নেওয়াই হলো না। পরমুহূর্তে মনে হলো থাকলে নিশাত বাঁধা দিত। পায়ের ধূলি ফেলে অতি সাবধানতা অবলম্বন করে হাজির হলো দোকানের অভিমুখে। মুখে মাস্ক থাকায় তেমন একটা নজর ফেলে নি ওর মুখের ওপর লোকজন। ওই তো! সৌরভকে দেখা যাচ্ছে হিসাবের খাতা নিয়ে বসেছে সবে। মলিন চেহারা। চোখের নিম্নত্বকে অমানিশার বসবাস। বিষন্ন আদলে কৃষ্ণবর্ণ হাসছে যেন খিলখিল করে। হুট করে এমতাবস্থার কারণ জানা নেই তার। আগে কখনো এমন রূপে দেখতে পায় নি মানুষটাকে। সাদা রঙা চেহারাটার বি*শ্রী হাল। বিষাদের মেলা সমগ্র জুড়ে। আশ্চর্য ব্যাপার এসব অনুধাবন করতে এক রত্তিও কষ্টের সাথে সাক্ষাৎ করতে হচ্ছে না ওর। বুঝল,প্রেম গাঢ় হয়েছে। কিশোরী আত্মায় প্রেমের ছোঁয়া লেগেছে গভীরভাবে।
রক্তবর্ণ বৃষ্টির ফোঁটা দেখেছে কেউ কভু? দেখবে কেমন করে! এই বৃষ্টি ফোঁটা কেবল বক্ষপিঞ্জিরায় নেমে আসে। যেমনটা ঝরছে শিমুলের বুকের ভেতর। সৌরভ ভাইয়ের মন খারাপ, দুঃখ, কষ্ট, অশান্তি মানে তার মন খারাপ, দুঃখ, কষ্ট, অশান্তি সব। কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তখনও চায়ের দোকানে গানটা বাজছে। সৌরভ খেয়াল করল না। হিসেব কষতে মগ্ন তার চোখ, মন সব। ও আশেপাশে চক্ষু ফেলে চট করে দোকানের ভিতর ঢুকে গেল৷ গলা খাকারি দিল একটুখানি। লাভের চেয়ে বৈকি ক্ষতিই হলো। সৌরভ আরো নিমজ্জিত হলো খাতার পৃষ্ঠায়।
শিমুলের মনোক্ষুণ্ন হলো। সৌরভ ওর আসার আভাস পেয়েই মূলত এমন করছে। আজকে নতুন নয়। এটা নিত্যকার কান্ড। শুরুতে রা-গারাগি করত দেখলেই, গত মাস দু এক ধরে নিশ্চুপ থাকে,মুখ দিয়ে ভুল করেও শব্দ বের করে না। সৌরভের প্রতি প্রেমের কাঁচা অনুভূতি জন্মেছিল ওর বছর দুয়েক আগে। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে সেই সময়টায়। বুঝে উঠতে পারে নি ঠিকঠাক, প্রেম জেগে যায় অন্তরিন্দ্রিয়ে। সেই থেকে মানস্পটে বারংবার স্রেফ সৌরভের অবয়ব ভাসে। ক্ষুদ্র প্রাণে সাহসের অভাব ছিল খুব। যার ফলে অনুভূতি প্রকাশে অসফল হয়েছে বার কতক। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে হেরে গিয়ে,ক্লান্ত হয়ে একদিন সৌরভকে ভালোবাসি শব্দটা বলতে বাধ্য হয়। কিন্তু সেই ক্ষণেই সৌরভ চাপা গর্জন করে ওর উপর, অবহেলিত করে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ওর তৃষ্ণার্ত অনুভূতিগুলোকে। যা এখনও চলমান।
‘ সৌরভ ভাই?’
সৌরভ মাথা তুলল না। নিরব সে, ভাবে উদাসীন। শিমুল স্বভাবতই নরম মনের। সৌরভের প্রতি ভালোবাসা তাকে প্রতিদিন একটু একটু করে বে*হায়া,শক্ত করে তুলছে উপলব্ধি করতে পারছে সে। ডাকল পুনরায়,
‘ সৌরভ ভাই? কি সুন্দর গান বাজছে! শুনছেন? আপনি কবে বলবেন, শিমুল ফুল,শিমুল ফুল
হৃদয় কেন কাড়িলি,,,,,’
‘ তোকে আমি অগ্রাহ্য করছি,সেটা এখন মুখেও বলে দিতে হলো। এর থেকে বড় অপ*মান আর কি হয় শিমুল?’
কটুক্তি মেশানো বাক্য সুড়সুড় করে শিমুলের শ্রবণপথে এলো। চোখ দু’টো পরিপূর্ণ হলো অশ্রুতে। গলায় দলা পাকানো কান্নাটুকু ঢোক গিলে বলল,
‘ অবহেলার পরিমাণ হিসেবে করে রাখছি,ভালোবাসাতে পরিণত করব বলে। যত অবহেলা করবেন, একদিন ততটুকুই ভালোবাসবেন আমাকে। সেকারণে আপনি বেশি বেশি অবহেলা করলে আমারই লাভ। বেশি বেশি ভালোবাসা পাব। ‘
সৌরভ ভারী শব্দে হিসেবের খাতাটা বন্ধ করে। বাজারে বহু লোকের সমাগম। চেয়ারম্যান বাড়ির মেয়ে শিমুল। দু বাড়ির শত্রু*তার খবর এ গ্রামের কাকপক্ষী অব্দি পৌঁছানো। ভরা আসরে সামান্য রাগও বড় ধরনের সিন ক্রিয়েট করবে। সুতরাং শান্ত কণ্ঠে বলতে লাগল,
‘ তুই ছোট শিমুল। আমার বোন হোস তুই। আমার বয়স দেখেছিস? তোর আর আমার বয়সের পার্থক্য অনেক। আর দুই বাড়ির খবর তোর অজানা নয়। আমাদের সম্পর্ক কেউ মেনে নিবে না। একটা সম্পর্কে ভালোবাসা দরকার। মেইন বিষয় হলো আমি তোকে ভালোবেসে পুরোনো ক্ষ*ত তাজা করতে পারব না। তোর আমার সম্পর্ক দু বাড়ির মানুষের হৃদয়ে ক্ষ*ত করবে। প্রেম অপছন্দ বাবার। প্রেম যেখানে আছে,পুরো দুনিয়া তার বিপক্ষে চলে গেলেও সে প্রেম মানবে না। তার জ্বলন্ত উদাহরণ নিরু ফুপ্পি,রবিন কাকা। ‘
এটুকু বলতেই সৌরভের নাসারন্ধ্র হতে গরম গরম নিঃশ্বাস উন্মুক্ত হয় বাহিরে। তার মাথায় হুট করে উড়ে এসে জুড়ে বসল নিজের অসমাপ্ত সম্পর্ক, প্রেমের কথা। চোখ বুঁজে ফেলল ভেতরকার ব্যথায়। শিমুল স্পষ্টত দেখল। তার কথার তোয়াক্কা না করে একের পর এক প্রশ্ন করে অনর্গল,
‘ কতটুকু বড় হলে আমায় ভালোবাসবেন? মামুকে রাজি করাতে পারলে আমাকে আপনার মনে জায়গা দিবেন? ভালোবাসবেন আমাকে? আচ্ছা ভালোবাসতে হবে না,হৃদয়ে জায়গা দিয়েন। আপনি শুধু জায়গা দিবেন,সেখানে বাগান করে ফুল ফোঁটানোর দায়িত্ব আমার।’
সৌরভ হাসল। হাসির মধ্যে শিমুলের জন্য অপ*মান যোগ করা। তীরের ন্যায় বিঁধছে হাসিটা ওর অন্তস্তলে।
‘ এসব প্রেম বাক্য কোথায় শিখলি? স্কুলে? ইউটিউবে? নাকি প্রেমের কোচিংয়ে?’
শিমুলের সাদামাটা জবাব,’ আপনার কাছ থেকে। ‘
সৌরভ ভুরু কুঁচকালো। বিদ্রুপের কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
‘ আমার থেকে?’
ঠোঁটদ্বয় আলগা হয় শিমুলের। অধরকোল জুড়ে স্থান পায় ম্লান হাসি। আয়েশি ভঙ্গিতে বলে,
‘ জি। আপনাকে ভালোবেসেছি বলেই আমার মধ্যে কবি কবি ভাব আসছে সৌরভ ভাই। প্রেম মানুষকে কবি,কাব্যিক, ঔপন্যাসিক বানায়। আমি কি হয়েছি জানেন? আপনার প্রেমে পড়ে আমি হয়েছি “বিরহিণী”। ‘
সৌরভ তব্দা খেয়ে গেল। রক্ত টগবগ করে উঠল। কথাগুলো কান দিয়ে এসে সোজা গাঁথল হৃদয়ে। আজ প্রথম শিমুলের কথা এমনভাবে ছুঁয়ে দিল তার তনুমন,হিয়া। বয়স কত মেয়েটার! নিশাতের সমান না? পাগ**লকরা শব্দাংশ শিখল কোথায়? প্রেম কি সব বয়সের মানুষকে এতটা শক্ত করে তুলে? পরিস্থিতি সামলাতে কর্কশ গলায় বলে উঠল,
‘ এখান থেকে যাবি তুই? কতবার বলব দোকানে আসবি না শিমুল? বিরক্ত হোস না তুই?’
গুটি গুটি পায়ে খানিক দূরত্ব মিটিয়ে নেয় শিমুল। টেবিলের উপর থাকা সৌরভের হাত টা নিয়ে নিজের করপুটে বেঁধে নেওয়ার প্রয়াস চালায়। সৌরভ স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। কিন্তু মেয়েটার আকুতিভরা কণ্ঠ সরিয়ে আনতে দেয় না হাতটা। চেপে ধরে ক্রন্দনমিশ্রিত স্বরে অনুরোধ করতে থাকে নরম কণ্ঠস্বরের অধিকারীণি,
‘ আমার কল কাটবেন না সৌরভ ভাই। আমার কতটা কষ্ট হয় আমি হয়ত আপনাকে বুঝাতে,বলতে পারি না। আপনার গলাটা শুনলে মনে হয় আমার মতো শান্তি কারো জীবনে নেই। একটু কথা বললে কী হয়? কল ধরলে কখনো দোকানে আসব না। ‘
সৌরভ ফ্যাসাদে পড়ে গিয়ে সম্মতি দিল,’ ধরব। ‘
নিশাতের পা ধরে এসেছে। উঁকি দিয়ে দেখল শিমুল আসছে। বড় বড় পা চালাচ্ছে। দূর হতে মেয়েটার ফুলো ফুলো আঁখি জোড়া অত্যন্ত চিন্তায় ফেলল ওকে। কেন যেন লাগছে শিমুল কিছু লুকাচ্ছে তার কাছ থেকে। বিরাট কিছু।
_______________________________
দিনের প্রাতঃকালে মজুমদার বাড়ির দুয়ারে ২০ প্যাকেট মিষ্টি দেখে পিংকির বাবা আনোয়ার চমকে উঠলেন। ভয়ে অন্তরআত্মা ছোট্ট হয়ে গেল তাঁর। ভূতে চরম বিশ্বাসী তিনি। ছোটবেলায় একবার ভরদুপুরে আম পাড়তে গিয়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে টানা তিন দিন ভাঙা পা নিয়ে হাসপাতালে কাটিয়েছেন। গ্রামবাসী বললেন,জ্বী-নে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল। সেই থেকে তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হলেই ভাবেন জ্বী-নে করেছে। মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে উল্টো ঘুরে দৌড় লাগালেন বাড়ির ভিতরে। একে একে সবাইকে ডেকে তুললেন। তার একটাই বাক্য-‘ জ্বী-নে মিষ্টি রাইখ্যা গেছে। ‘ পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল এ কথা। মজুমদার বাড়ির মানুষের সাথে গ্রামের অর্ধেক মানুষও হাজির। সকলে তারস্বরে অনবরত বলতে লাগে–‘ জ্বীন আইছে,মজুমদার বাড়িতে জ্বীন আইছে মিষ্টি লইয়া। ‘
টুনির আম্মা মিষ্টির প্যাকেটের উপর সাদা স্কচটেপ দিয়ে লাগানো কাগজটা দেখে বলল,’ এইডা কি রোকেয়া বু?’
সবাই হামলে পড়ল কাগজটা দেখতে। আনোয়ার ভ*য়ের দাপটে গেইটের কোণায় চিপকে বসে আছেন। ধারে কাছে আসছেন না। পিংকির হাসবেন্ড কারিম কাগজের লেখাগুলো পড়ল কিছুটা উচ্চস্বরে, ‘ মিষ্টিগুলো আমার নিশুর জন্য। তোকে কবে আমার রাণী বানিয়ে নিয়ে যাব নিশু? মিষ্টি খেয়ে তোর বুদ্ধি হলে, আমায় একটু ধার দিস তো। ‘
পড়া শেষ না হতেই পাশ থেকে এক অর্ধবয়স্ক মহিলা চিল্লালেন,’ ও নিশুর আম্মা। জ্বী-নের রাজা আইছে গো তোমাগো দুয়ারে। তোমার নিশুরে নিতে আইছে। নজর দিছে হেতাইনের ওপর। ‘
নিশাত বাকরুদ্ধ। জ্বী””ন নিতে এসেছে ওকে?নাকি মানুষের কারসাজি?
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব____২০
একে একে গুঞ্জনে সমগ্র মহানন্দ গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল মিষ্টির কথা। মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে,” মজুমদার বাড়ির মাইয়ারে জ্বিনে নিতে আইছে মিষ্টি সমেত।” এরকম কুসংস্কারে রফিক আজম ক্ষেপে আছেন। কে না কে মিষ্টি পাঠিয়ে ফাতরামি করছে অথচ গায়ের লোকজন উদ্ভট কথা প্রচারণা করে বেড়াচ্ছে। নিশাতকে কঠিন পর্যবেক্ষণে রেখেছেন রোকেয়া। তাঁর মতে,নিশাত কোথাও না কোথাও কোনো কু-কর্ম ঘটিয়ে এসেছে নয়ত প্রেম করছে। নইলে এমন করে কে লিখবে! বাদ বাকি মানুষ ক্ষণিকের জন্য বিশ্বাস করলেও তিনি স্বামীর মতোই এসব আজব কান্ডে বিশ্বাসী নন। সবাইকে রুম থেকে বের করে দিয়ে জেরায় ফেললেন তিনি মেয়েকে,
” বল,মিষ্টি কে পাঠিয়েছে? কোনো ছেলের সাথে চক্কর কাটছিস না তো?”
দো-ষে, বিনা দো*ষে মায়ের এমন কঠোর ব্যবহার ভালো লাগে না নিশাতের। ব্যাপক পী-ড়াদায়ক মনে হয়। মা থাকবে কোমল, মায়ের কণ্ঠ হবে মমতায়ভরা। তার মা এমন কেন? কথায় কথায় কর্কশ আচরণ কেন করতে হবে? সর্বদা সন্দিগ্ধ কেন থাকতে হবে? চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিস্পৃহ গলায় বলল,
” আমি জানিনা আম্মু। তুমি যা বলছো এসবে আমি নেই। ”
রোকেয়া চিন্তিত বেশ মেয়েকে নিয়ে। তর্জনী তুলে বললেন,
” তুই না জানলে তোর নাম কিরে? এখন সবাই তোর নামে কথা ছড়াচ্ছে। এমনিতেই ভ্যাবলা তুই। এখন একথা রটল,আরেক ঘরে কীভাবে দিমু তোরে? কোন ঘরের লোক বিয়াশাদী করিয়ে নিবে? ”
নিশাত ভেবলে উঠল। অন্য ঘর মানে! ফুপুর ঘর ছাড়া ওর পা অন্য কোনো ঘরে এ জীবন থাকতে ফেলবে না সে। অত্যন্ত আবেগি ও। ফলপ্রসূ ছিঁচকাদুনে বিষয়টা তার স্বভাবজাত। চোখের কোটরে অশ্রু জমতে দেরি হলো না খুব একটা।
রোকেয়া চড় মা*রতে উদ্যত হয়েও নিজেকে দমালেন। এটা পা*গলা ঘোড়ার মতোন দাপাদাপি করার সময় নয়। নাজুক হয়ে আওড়ালেন,
” তুই সত্যি বলছিস?”
মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বুঝালো নিশাত। রোকেয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তবুও মন ঠান্ডা করতে পারলেন না। পিংকির শ্বশুর বাড়ি থেকে আসার পর পরই নিশাতের মধ্যে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন উনি। খেতে দিলে খায় না,মনমরা হয়ে থাকে, মনোযোগ কম সবকিছুতে, ভাবে উদাসীন। এসব নিঃসন্দেহে কু ইঙ্গিত করছে। কোনোমতে মেট্রিকের গন্ডিটা পেরিয়ে যাক নিশাত। ততদিনে নজরে নজরে রাখতে হবে। এমনিতেই গ্রামে এখনও মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার রীতি প্রচলিত। কোনো মেয়ে কলেজে পড়তে গেলেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা,কিছু কিছু মহিলারা ফুসুরফাসুর করে ‘ মেয়ের মেলা বয়স। নিশ্চিত এ কারণেই বিয়ে হয় না। ‘ নিজের ভোলাভালা মেয়েটাকে নিয়ে কোনো হেয় মেনে নিতে পারবেন না তিনি। মজুমদার বাড়ির মেয়েদের একটা সম্মান আছে। মাথা উঁচু করে বড় বাড়িতে মেয়েকে বউ সাজিয়ে পাঠাবেন।
কিশোরী বয়সের প্রেমে কাজ করে একরকম উন্মাদনা। বুনো মাতাল গন্ধ বহে চারিধারে। মনে গাংচিল উড়ে বেড়ায়। চোখ -কান উন্মুখ হয়ে থাকে কাঙ্ক্ষিত জনকে এক পলক দেখবার জন্য, তার হৃদয় নিংড়ে তোলা কণ্ঠস্বর একটুখানি শুনবার তরে। মধ্যম আকৃতির কক্ষে জানালার পর্দাগুলো সকালের স্নিগ্ধ পবনে পতপত করে উড়ছে। মস্তিষ্কে অজানা রুমঝুম শব্দ বাজছে নিশাতের। সমস্ত আবেগ জমে জমে বুক ভার ভার লাগছে। চিন্তাগ্রস্ত মন। সেই কাগজের লেখাটা সে দেখেছে। প্রথমত অবলীলায় ভেবেছিল এ কান্ড প্রহর ভাইয়ের,আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লেখাগুলো দেখে সারা দেহে শুরু হলো বিছুটির জ্বলন৷ প্রহর ভাইয়ের আগের লেখার সঙ্গে এটার কোনো মিল নেই। তাহলে কে পাঠাতে পারে এসব? মানুষটা প্রহর ভাই কেন হয় না? তাকে এমন করে রাণী বানাবে বলে চমকে দিলেই তো পারত! ওর বুক শুকিয়ে যে মরুভূমি হয়ে আছে সেই খবর কী প্রহরের কাছে পৌঁছায় না? সতেরো বছর বয়সী ম্যাড়মেড়ে নিশাত প্রহর নামক বাজে লোককে ভালোবেসে একটা মধুর ভুল করে ফেলেছে সেটা জানবে সে? জানবে না হয়ত। কারণ ভীতু নিশাতের এত সাহস হয় নি। অপরদিকে যার প্রেমে বিরহিণী ঘুঘু সে, তার দিক থেকে অনুভূতিশূণ্য। সে মজেছে অন্য নারীতে। কী যেন নাম তার! মন জোরেশোরে উচ্চারণ করল,” তনুজা। ” আবারও! আবারও অদ্ভুত জ্বলুনি টের পেল নিশাত বুকের গোপন কুঠুরিতে।
____________________________
উপন্যাসপ্রেমী মৃন্ময়ী আজ হুমায়ূন আহমেদের ‘ মৃন্ময়ী ‘ বইটা কিনতে নীলক্ষেতে এলো। ক্লাস শেষ করে একাই এসেছে। পরিচিত দোকান। প্রতিদিন একটা বুড়ো লোক থাকলেও আজ একটা বয়স এগারো কি বারো হবে এমনতর একটা মলিন চেহারার ছেলে বই বিক্রি করছে। ছেলেটাকে দেখে কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল তার। অজস্র মায়াভরপুর কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
” কীসে পড়ো তুমি?”
ছেলেটার ঈষৎ কালো বর্ণ বদনে ছমছমে ভাব। কীসের এত ভয় ভেবে পেল না মৃন্ময়ী। ঝলমলে চক্ষু দৃষ্টি মেলে ধরল। বলল,
” বলবে না?”
ছেলেটা তরতর গলায় জানালো,
” সিক্সে পড়ি আপু। ”
কৌতূহল দমাতে অকৃতকার্য হয়ে মৃন্ময়ীর অভ্যন্তর চিত্তের শব্দগুচ্ছ ফের প্রশ্নে পরিণত হলো,
” এখানে কাজ করো?”
” হু। আমার দাদার দোকান। ”
মৃন্ময়ী কী ভাবল কে জানে! তবে একটার জায়গায় আজ দু’টো বই কিনল সে। দোকান থেকে বের হবার আগে ছেলেটার হাতে আলাদা করে পঞ্চাশ টাকা গুঁজে দিয়ে নরম কণ্ঠে বলল,
” এটা তোমার। কিছু কিনে খেও। আমি মাঝে মাঝেই আসব তোমার সাথে দেখা করতে। ”
ফিরে আসার পথেও বার কয়েক ঘাড় বাঁকিয়ে ছেলেটাকে দেখল মৃন্ময়ী। বুক চিরে দীর্ঘ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছড়িয়ে পড়ল বসুধাতে। এই পার্থিব জীবনে ও কি অপার্থিব এক পরম প্রাপ্তির যোগ্য ছিল না? ওর সাথেই কেন এমন হলো? এত বিষাদময় কেন ওর এই জীবনটা? একটু সুন্দর, একটু সুখময়,একটু জাদুময়ও হতে পারত। হতে পারত সে কোনো মুক্ত বিহঙ্গ, যেখানে পিছুটান তাকে ছুঁতে পারত না,কোনো সমাজ ওর পথের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াত না। কেবলই উড়ার জন্য বিশালাকার আসমান থাকত তার। না জীবন এতটা আমোদে কারোই হতে পারে না৷ সামান্য আনন্দ, অল্পস্বল্প দুঃখ মিলিয়েই রচিত হয় জীবনের ক্ষুদ্র গল্প।
ভাবনার চোরাবালিতে ডুবে যাওয়া মৃন্ময়ী খেয়ালই করে নি বাস্তবতা ঠিক কতটা নি*ষ্ঠুর। টায়ারের কর্কশ শব্দে বুক ধড়ফড় করে উঠল ওর। দিশা হারিয়ে ফেলল। কব্জিতে অনুভব করল আচমকা শক্ত টান। বুকে ঝাপটে ধরেছে কেউ ওর দেহখানি। এতটাই কঠিন বাধঁন যেন একটু ছাড়া পেলেই কায়া গলে যাবে মোমের ন্যায়। অদেখা ব্যক্তির বা পাশের হৃদযন্ত্রের দামামা শব্দ ওর কানে ঢুকছে প্রবল বেগে। পুরো শরীর ঠকঠক কাঁপছে, ভূমিকম্প হচ্ছে তীব্র। চেনা, অপছন্দের একটা সুর বাজল কর্ণ পাতায়,
” ঠিক আছো তুমি? ”
ঝট করে সরে আসল সে। অক্ষি দর্পণে ভেসে উঠল প্রত্যয়ের ফ্যাকাসে মুখ। তাতে ভীষণ ভয়ের উপস্থিতি। চুল গুলো বড্ড এলোমেলো। চমকপ্রদ দৃষ্টিটা জলদি নত হয়ে গেল। উল্টো ঘুরে হাঁটতে শুরু করল ও। প্রত্যয়ের মেজাজ খিটমিটে হয়ে গেল নিমিষেই। পিছন থেকে হাত টেনে ধরল। ক্রোধান্বিত কণ্ঠস্বর,
” সমস্যা কী তোমার? একটু আগে ম*রেই যাচ্ছিলে। এখন আবার ভাব দেখাচ্ছ। কথাও বলছো না। ”
” আমার সমস্যা আপনিই। ”
গলার শান্ত স্বর প্রত্যয়ের মাথায় ভোঁতা যন্ত্রণার সৃষ্ট করল। আর পারছে না সে। ক্রমে ক্রমে হাঁপিয়ে উঠছে। কঠিন বরফ গলে,শক্ত মাটির উঁচু হয়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ও ধ্বসে পড়ে একটা সময়। তাহলে এ তো শুধুই একটা মেয়ে। প্রতিটা মেয়ের মধ্যে নরম স্বভাব থাকেই। তাহলে মৃন্ময়ীর সেই নম্রতার সাক্ষাৎ কেন পাচ্ছে না সে! দৃঢ়ভাবে বলল,
” আমার সাথে চলো। তোমার সাথে কথা আছে আমার। ”
” আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। ছাড়ুন আমাকে। আর সমস্যা তৈরি করবেন না আমার জন্য। ”
প্রত্যয় ছাড়ার বদলে আরো খানিকটা চাপ দিয়ে ধরল হাতটা। নিরব একটা জায়গায় নিয়ে আসল। বুকের খুব কাছে এনে মৃন্ময়ীর মায়ামিশ্রিত চেহারার দিকে তাকাল। ঘন পল্লব জোড়া কাঁপছে,রা-গের চোটে নাকের ডগা লাল হয়ে উঠেছে। লজ্জার শ্রী পর্যন্ত নেই, লাল বর্ণ অরুণ রা*গে চাপা পড়ে গেছে হয়ত। ব্যথা লাগবে ভেবে হাতটা ছেড়ে দিয়ে বিষন্ন হয়ে প্রশ্ন করল,
” আমি তোমার জন্য কী কী সমস্যা তৈরি করেছি?”
মৃন্ময়ী অঘোষিত ক্ষোভে ফেটে পড়ল। দ্রুত কম্পান্বিত দু হাতে প্রত্যয়ের শার্টের কলার টেনে ধরে। প্রলাপ করতে থাকে,
” আপনিই আমার জীবনের সবথেকে বড় সমস্যা। আগে এত বাঁধা, সমস্যা ছিল না। আমি ভালো ছিলাম। ভালো না থাকলেও একটু চিন্তামুক্ত ছিলাম। কিন্তু আপনি এসে আমার বহু কষ্টে সাজানো ছক নষ্ট করে ফেললেন।আমার জীবনের ছক পাল্টে দিলেন। আপনাকে আমি ক্ষমা করব না,কখনো না। আমাকে এমন সমস্যায় আপনি ফেলেছেন যেখান থেকে পরিত্রাণের উপায় রাখেন নি। সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে আমার। ”
দলা পাকানো কান্নার বল মৃন্ময়ীর কণ্ঠনালি চেপে ধরল। শব্দাংশ উচ্চারণ করার শক্তি হারিয়ে ফেলল। অস্থিরভাব কমে এলো। প্রত্যয় আলতো করে ছুঁয়ে দিল ওর নাকের ডগা বহুদিনের শুষ্ক ওষ্ঠযুগল দ্বারা। ঝাঁকিয়ে উঠল ও। ছিটকে দূরে সরে গেল। তাকাল র*ক্তিম দৃষ্টে।
প্রত্যয় নির্বিঘ্নে বলল,” তোমার জীবনের প্রতিটা সমস্যার সমাধান এভাবেই আমি আদরে সমাধান করে দেবো। যেভাবে এখন কমিয়ে দিলাম তোমার ভিতরের অস্থিরতা। সমস্যা যদি আমি হই? সমাধান আমাকেই বানাও। ”
মৃন্ময়ী তিক্ত মুখে বলে উঠল,” আজ আপনি প্রমাণ করে দিলেন আপনি একটা অস—ভ্য লোক। ”
সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যয় স্মিত হাসল। উত্তম স্বীকারোক্তি কণ্ঠে, ” সে আর নতুন কী!”
ঊষা এ পথেই যাচ্ছিল। দূর হতে ওদের দেখে রিকশা থামাতে বলে। মূহুর্তটা বেশ নজর কাড়ে ওর। ছিদ্র করে বক্ষস্থল। ক্ষ*ত হয় কিন্তু কেউ দেখে না। বরঞ্চ অধরে ফুটিয়ে তুলে মেকি হাসি। ভাগ্য কেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওদের কাছে এনে থামায় ওকে? ভালোবাসা পেতে হলে নিজেকে হারাতে হবে,হারাতে হবে নিজস্ব অভ্যেস। তবে যেই ভালোবাসা লিখা হয় নি আমার নামে তার ধোঁয়াতে কেন পথ হারাব?- মনে মনে এটাই আওড়ালো ঊষা।
.
.
.
বিকেলের কোমল রোদ মজুমদার বাড়ির আঙিনায় এসে পড়ছে। সকাল থেকে খুব ঝড়ঝাপটা গেল। পুরুষলোক কেউই আজ দোকানে যায় নি। নিশাতকে রোকেয়া বাদে কারোরই কিচ্ছুটি জিজ্ঞেস করবার সাহস হয় নি। বাড়ির বড় কর্তা রফিক আজমকে সবাই ভয় পান তেমনটা না,পারতপক্ষে মান্য করেন ঢের। মেয়ের দোষ তিনি কোথাও খুঁজে পান না। সব দোষ তো ওই অস**ভ্য লোকের যে কিনা মিষ্টি পাঠিয়েছে। অপরাহ্নে পরিস্থিতি শীতল হয়ে এলেও গেইটেরর সামনে গাড়ির হর্নের উচ্চ শব্দে গরম গরম হয়ে উঠে পরিবেশ। রফিক আজম লুঙ্গি সামলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। আব্বার পেছন পেছন এলো সৌরভ। হঠাৎ কে এমন বেয়া*দবি করছে বাড়ির গেইটের সামনে? গেইট খুলতেই রফিক আজমের মুখে আঁধার নামল। রুষ্ট হলেন তিনি। হরহামেশাই ভারিক্কি গলায় বললেন,
” সবসময় তোমার গন্তব্য এই বাড়ির চৌকাঠে আইসা থামে ক্যান? ”
প্রহর প্রচ্ছন্ন স্বরে জবাব দেয়,
” খাজানা এ বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছি। খাজানার টানে এখানে না আসলে কোথায় যাব?”
সৌরভ পেছন থেকে তেতে উঠে,
” ইয়ার্কি মা*রতে এসেছিস এখানে?”
চোখ থেকে কালো চশমাটা খুলে হাতে নিল প্রহর। চুলে ব্যাকব্রাশ করতে করতে স্বহাস্য কণ্ঠে বলে উঠল,
” না। দাওয়াত দিতে। ”
” কীসের দাওয়াত? ”
” মামার বাড়িতে এসে চৌকাঠে দাঁড়িয়েই দাওয়াত দিতে হবে?”
রফিক আজম এত বছর যাবত যেই শাসন, নির্দিষ্ট গন্ডি কায়েম রেখেছিলেন এ বাড়িতে,আজ তা স্বয়ং ভঙ্গ করে সৌরভকে আদেশ করলেন,
” ভেতরে নিয়ে আয়। গেইটে দাঁড়িয়ে ঝামেলা করলে বাড়ির সম্মান থাকব না। ভুলে গেলে হবে না,তাদের মতো অভদ্র আমরা না। ”
প্রহর ভেতরে ঢুকে সৌরভের গা ঘেঁষে দাঁড়াল। ঠোঁটের কোণে সুপ্ত হাসি এঁকে ক্ষীণ স্বরে বলল,
” তোদের ভদ্র হতে দেখে নিজেকে আরো অভদ্র বানিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ”
কটমট চোখে চাইল সৌরভ। কপালের রগ ফুলেফেঁপে উঠল রা–গের দাপটে। প্রহর চোখে চশমাটা পড়ে সহজাত হাসি মুখে লেপ্টে রেখে বলে,
” কিপ ইট আপ। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। ”
প্রহরের আসার খবর নিশাতের কর্ণধারে পৌঁছাতে বিলম্ব হলো না। বেতাল অবস্থা তার। এক মাস পর মানস্পটে নিখুঁতরূপে বসবাসকারী মানুষটাকে দেখবে সে। কতকাল দহন স্পর্শ সহ্য করেছে খরখরে দাঁড়িতে শোভায়িত শ্যামবর্ণ চেহারাটা দেখবে বলে। দূর থেকেই আদ্রতায় ভরিয়ে তুলবে অন্তঃকরণ। এত এত দেখবার উতলায় মেয়েটা নিজেকে পরিপাটি করতে ভুলে গেল। লজ্জাবনত চেহারাখানা এক হাত ঘোমটায় আড়াল করে উন্মাতাল হয়ে নিচে এসে হাজির৷ ব্যাপারটা পিংকির গাঢ় নজরে বিঁধল খুব গভীরভাবে।
#চলবে~
( ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন।)