প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
984

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব_____৩৬

কুয়াশা ছড়ানো শীতকাল এসে প্রকৃতিতে হাজির। চারিপাশ ঘোলাটে চাদরে আবৃত। হেমন্ত পালিয়েছে শীতের প্রকোপে লেজ গুটিয়ে। বদলেছে প্রকৃতির রূপ,পরিবর্তন হয়েছে মানব জীবনের ছন্দ। আনন্দ ঝলমলিয়ে ধরা দিচ্ছে কারো মনের খাঁচায়, কারো মন অম্বরে আবার বিষাদেরা ওড়ছে পাখি হয়ে। মানুষের মন পাল্টেছে, জীবন পাল্টেছে। পাল্টে গেছে নিশাত, ঊষা, প্রত্যয় সকলের জীবন। এই যে ঊষার বিয়ে হয়ে গেছে দুই মাস, প্রহরের ইলেকশন দু’দিন পর, নিশাত ও শিমুলের দিনরাত কাটে পড়তে পড়তে। এ মাস বাদেই ফেব্রুয়ারিতে বিনা ডাকে উপস্থিত হবে ম্যাট্রিক পরীক্ষা। তারই প্রস্তুতিতে নিঃশ্বাস ফেলবার জো নেই নিশাত ও শিমুলের। দুই বান্ধবী একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও পায় না। অথচ ভালোবাসার মানুষের সাথে এক দন্ড কথা বলতে ভোলে না তারা। দুজনেই অনুরাগের অনলে দগ্ধ।

নিশাত ঘরের খিড়কির কপাটদ্বয় মেলে দাঁড়াল। হিমশীতল, মাতাল এক হাওয়া তার হাড়ে হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়ে গেল অবলীলায়। কাঁপা কাঁপা হাতে অনেক কষ্টেসৃষ্টে জানালা লাগিয়ে ঘরে আসল সে। পেছন ঘুরতেই মাকে দেখে অবাক হলো। অস্ফুটেস্বরে বলল, ” তুমি এখানে আম্মু? ”
হাতের দিকে ইশারা করে ফের সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে দেখল মাকে। রোকেয়া চকচকা গোলাকার পাত্রের উপর থেকে ঢাকনা সরিয়ে কণ্ঠে আদর মেখে বললেন,
” তোর ফুপুর সাথে কথা হইল। কইল,তোরে যাইতে। ভাপা পিঠা বানাইছি লইয়া যা। তোর আব্বা নামাজ পইড়া আইয়া ঘুমাইতাছে। জলদি ফিইরা আসিস। ”

নিশাতের মনের ময়ূরী পেখম মেলে নাচছে বেশ কতদিন ধরে। কেন যে,কীসের কারণে এটা অত নাচে! বিছানার ওপর থেকে মখমলের সোয়েটারটা গায়ে জড়িয়ে হেলেদুলে চলল সে স্মরণিকা নিবাসে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রহর ভাই তার ফোনের জবাব দিচ্ছে না। হয়তো ইলেকশন নিয়ে জোরদার ব্যস্ত। তার এ ক’দিনে মনে হলো রাজনীতিবিদ প্রেমিক হিসেবে নিরামিষ।

বাড়িতে ঢুকে নিশাত চিন্তিত হয়ে পড়ে এই সাতসকালে কেউ জেগে আছে কি-না! বাড়ির কাজের কর্মী সাহেলা খাতুন দরজা খুলে দিয়ে বলল,
” বও তুমি,ডাক্তার ম্যাডাম রুমে আছে,খবর দিতাছি। ”
” আচ্ছা। ”
বলতেই বলতেই আলতা ত্রস্ত পায়ে এলেন। হাতে তার একটা সিঁদুর লাল রঙের লেহেঙ্গা। বেশ ভারী মনে হচ্ছে। বুকে জড়িয়ে রেখে এগিয়ে আসলেন তিনি। সোফায় রেখে লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” যাক, আসলি তবে। গত দুই মাস ধরে এই বাড়িতে পা রাখিস নি। নে দেখ,তোর হবু বর গতকাল এনেছে এটা। বিয়ের সব প্রিপারেশন প্রায় শেষের পথে। আপাতত ভাইয়ার মাথা ঠান্ডা হবার অপেক্ষা করছি,তারপরই তোদের বাড়িতে যাব সরাসরি। ”

গোল গোল চোখে লেহেঙ্গার দিকে চেয়ে আছে নিশাত। ধরার সাহস পাচ্ছে না। বিয়ের শাড়ি,লেহেঙ্গা নিয়ে প্রতিটা মেয়ের স্বপ্নের শেষ থাকে না,তারও স্বপ্ন আছে। তার স্বপ্নের,কল্পনার অনুরূপই লেহেঙ্গাটা। চেয়ারম্যান ইলেকশন হারার পর থেকে আব্বার মনটা ভালো নেই। সর্বদা রে**গে থাকেন তিনি। এটা হবারই কথা ছিল। ফুপার নামডাক, আধিপত্য মহানন্দ গ্রামে ঢের। বড় বড় জায়গায় হাত আছে তাঁর। তাছাড়া উনার সব থেকে বড় শক্তি প্রহর ভাই। তৎক্ষনাৎ হবু বর কথাটা মনে হওয়া মাত্র জোরেশোরে ধাক্কা খেল সে। মিহি স্বরে জানতে চায়, ” প্রহর ভাই এসেছেন?”

” হ্যাঁ। রাতেই এলো বিয়ের লেহেঙ্গা, শাড়ি সব নিয়ে। রাত একটাই আমাকে জাগিয়ে বলল গয়না যেন আজকের মধ্যে চলে আসে। কালকেই যেন তোদের বাড়ি যাই। ঊষাদের বাড়িতে বলল, একেবারে ইলেকশনের পর বিয়ে করবে। কিন্তু গতরাতে এসেই তোরজোর শুরু করল। শপিংও সেরে ফেলল। আমার ছেলেটা এমন কেন রে মা! সবসময় মনে হতো তোকে খুব ভালোবাসে। যখন জিজ্ঞেস করতাম তোকে ভালোবাসে কি-না, তখন মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তনুজাকে বিয়ে করবে বলে ঘোষণা দিল। তনুজাকে মেনে নিলাম হুট করে ঊষার বিয়ের সময় এসে বলে তোকে বিয়ে করবে। এমন হলে শুধু শুধু তনুজার সাথে এনগেজমেন্টের কী দরকার ছিল?”

” তনুজাকে আমি আংটি পড়াই নি,পড়িয়েছি তোমার ভাইয়ের মেয়েকে। তনুজাকে আংটি পড়ানোর সময় আমার ইমারজেন্সি কাজের বাহানা দিয়ে তোমার হাতে আংটি গুঁজে দিয়ে বলেছিলাম তাকে পড়িয়ে দিও। মনে নেই? ”

নিশাতের পাশে বসে স্থির গলায় কথাগুলো বলল প্রহর। বক্রচাউনি নিক্ষেপ করল মেয়েটার মায়াবী গড়নে,চেহারায়। কেমন একটা ভয় থম থম করছে মুখশ্রীতে। প্রহর মজা পেল। বাঁকা হাসিতে মাখামাখি হয়ে গেল তার ঠোঁট দু’টো। মায়ের দিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকাল।

নিশাতের বুকের কোথাও ভয় ঘুর ঘুর করছে। গতরাতে যে লম্বা রচনা লিখেছিল ম্যাসেজে, মন বলছে সেটা গুরুতর প্রভাব পড়বে ওর ওপর। কি সাহস টা-ই না দেখাল সে! আর তনুজা নামটা শুনলে এখন আর মনের মণিকোঠায় বিষাদেরা বসত করে না, মেঘ জমে না,হৃদয় চিরে সূক্ষ্ম একটা যন্ত্রণা জল হয়ে নেমে আসে না চোখের কোল বেয়ে। এ দু মাসে অনেক! অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। তনুজার হুট করে তাদের জীবনে আসা,প্রহর ভাইয়ের তনুজার প্রতি মেকি আগ্রহ দেখানো সবই একটা রহস্য। এই সব সম্পর্কে অবগত সে। ঊষার বিয়ের পরদিন প্রহর ভাই সকল রহস্য পানির মতো স্বচ্ছ করে বুঝিয়ে দিয়েছে তাকে।
সেদিন, সেই মুহূর্তে নিশাত বুঝল,জানল রাজনৈতিক প্লাটফর্মটা মোটেও সহজ নয়। না জানি প্রহর ভাইকে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে অনিশ্চিত প্রাণ নিয়ে কত লড়তে হবে সমাজের জন্য, প্রিয় মানুষদের জন্য, দেশের জন্য! তার সম্পূর্ণ ভয়নামক কারণটার জন্য মূলত দায়ী প্রহর ভাই। নিশাত সুনিশ্চিত যে,প্রহর ভাই আজ ওকে ছাড়বে না। এক বুক সাহস নিয়ে বার্তা মাধ্যমে যেই যেই বাক্যগুলো লিখেছে সেগুলোর রফাদফা করবেই। নিশাত একটু সরে বসল। ভরসা নেই মানুষটার।

আলতা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,” প্রহর তুই লেহেঙ্গা নিয়ে আসলি,মেয়েটার পছন্দ হলো কি-না কে জানে! নাহলে পাল্টিয়ে আনবি। দেখে নিক ও আগে ভালো করে। আমি নাস্তা বানিয়ে ফেলি নিশুটা খেয়ে যাবে। কতদিন পর আসল আমার মেয়েটা। ”

প্রহর হাতে একটা ভাপা পিঠা তুলে নিয়ে বলল,” মামী পাঠিয়েছে?”
” হ্যাঁ। নিশু নিয়ে এলো। ”
” আচ্ছা তুমি যাও মা। নিশুর জন্য ওর পছন্দের নুডলস বানিয়ে নিয়ে আসো। বিয়ের পর তো সে রাঁধবে, তার আগে শ্বাশুড়ির হাতের খাবারের স্বাদ নিক। ”
” বললেই হলো? ও এখনো ছোট,রাঁধবে কী? আমিই রেঁধে খাওয়াব আমার মেয়েকে। ”

প্রহর সোজা নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্টত কড়া কণ্ঠে বলে উঠল,” শোন,একদমই কাজ না শিখে এ বাড়িতে আসবি না। বাসায় গিয়ে মাছ,মুুরগি সব কা**টা শিখবি,রান্না শিখবি। নিজেকে প্রিন্সেস কিংবা সিন্ড্রেলা ভাবার ভুল করবি না। বিয়ের পর আমার হাতের উত্তম-মধ্যম খেলে এসব একেবার ছুটে যাবে। আবার ভাবিস না এসব কাজের ভয়ে বিয়ে বসবি না। প্রেম করেছিস, বিয়ে তোর বসতেই হবে। বুঝেছিস?”

নিশাত দ্রুত দ্রুত হ্যাঁ বলল। আলতা মুখে হাত রেখে হাসি লুকানোর চেষ্টা করে ধম***কালেন ছেলেকে,” এসব কী প্রহর! তোর সামনে তোর মা দাঁড়িয়ে আছে,মায়ের সামনে তোর ছোট হবু বউকে থ্রে**ট দিতে লজ্জা করে না?”

প্রহর ঠোঁটে দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে বলল,” ছোট থেকেই দিচ্ছি মা। বাচ্চা মানুষ, শা**সন না করলে আদরে বাদর হয়ে যাবে। ”

নিশাত বিস্ফোরিত চোখে চাইল প্রহরের দিক। কোথায় ছোট সে! ওর বয়সী মেয়েরা বিয়ে করে সংসার করছে। তারই ছোট্টবেলার খেলার সাথী এক মেয়ের দেড় মাসের একটা বাচ্চা আছে। প্রহর ভাই কোন যুক্তিতে বাচ্চা বলে তাকে! বাচ্চা না,কিশোরী সে।

আলতা ছেলে ও ভাইঝিকে রেখে রান্নাঘরে চলে গেলেন। সুযোগ পেয়ে লুফে নিল প্রহর। একটানে নিশাতের কব্জিতে শক্তপোক্ত হাতের থাবা বসিয়ে দিয়ে সে কঠিন কণ্ঠে আদেশ করে,
” রুমে চল তুই। মাকে বলেকয়ে আনিয়েছি তোকে। ভোর থেকে অপেক্ষা করছি তোর জন্য। ”
নিশাত বহু কষ্টে নিজেকে রক্ষা করার জন্য শক্ত হলো। বাঁধা দিয়ে বলল, ” আম্মু বলেছে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে। ”
সামনের মানুষটা ঘাড় ঘুরিয়ে হৃদয় কেমন করা হাসি হেসে বলল,” পাঁচ মিনিটে কি খুব বেশি দেরি হবে তোর?”
“না। “– মিইয়ে কণ্ঠে জবাব দিল সে।

প্রহর টেনে ওকে রুমে নিয়ে এসে দরজা আঁটকে দিল। থতমত হাল নিশাতের। নিজের করা কর্মের জন্য ভুলের মাশুল গুণতে হবে তার। কি দরকার ছিল ওসব বলার! কেন যে অন্তরে ভালোবাসা ঢলে ঢলে পড়ছে? সব ভালোবাসার দো**ষ। এই ভালোবাসা জানে প্রহর ভাই তাকে কতটা ভালোবাসে,সে কতটা ভালোবাসে প্রহর ভাইকে। তাহলে শুধু শুধু একটুখানি ব্যস্ততার ফলে সৃষ্ট দূরত্বে কি ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটে? ভালোবাসা কখনো নিঃশেষ হয় না,প্রকাশের সকল রাস্তা বন্ধ হলেও ভালোবাসা চিরকাল সজীব রয়ে যায়,থেকে যায় ভিতরে,সযত্নে, গোপনে।

শরীর গুটিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা নিশাতের দিকে তাকিয়ে প্রহর অদ্ভুত ভঙ্গিতে নিঃশব্দে হাসল। ইদানীং তার হাসির রোগ হয়েছে বলা যায়। এই লম্বা, চিকন দেহের হলুদিয়া মেয়েটাকে দেখলেই তার এমনতর অবস্থা হয়। এক পশলা বৃষ্টি নেমে আসে ঝমঝমিয়ে হৃদয় জমিনে,ভিজিয়ে দেয় সকল চিন্তা, হতাশা,কষ্টকে,মনপ্রাণ করে তোলে সুখময়। পৃথিবীর সবার কাছে শান্তির মতো অমূল্য জিনিসটা খোঁজে পাওয়া দুষ্কর, যার কাছেই মিলে সে আমাদের প্রিয়জন,ভালোবাসার মানুষ। প্রহরের শান্তি, ভালো লাগার,হৃদয়ভূমির একমাত্র মালকিন সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা। নিশাতকে একটু বিব্রত করে দিতে সে গমগমে সুর তুলল,
” তুই কি বলেছিস, আমি নিরামিষ? রাজনৈতিক প্রেমিক নামেই নিরামিষ? ”
” আমার ভুল হয়েছে, ক্ষমা করে দাও প্রহর ভাই।”
নিশাতের গলাটা করুণ শোনাল। প্রহর দমল না৷ ওর কোমরে বা হাতটা সা””পের মতো পেঁচিয়ে কাছে টেনে নিয়ে চেপে ধরল বুকের সাথে। নিশাত চমকালো,হতবিহ্বল হয়ে পড়ল সে। বুকের গহনে বাজতে শুরু করে তানপুরা। অদৃশ্য সেতারের শব্দে মাথা ভার ভার হয়ে এলো তার। এত! এত কাছে কখনো আসে নি সে। এই বুকে ছুঁয়ে দেখে নি হাত। এক অপরিচিত,অচেনা নেশায় ডুবে গিয়ে ধীরে ধীরে হাতটা রাখল সে শক্ত বক্ষে। কি অস্থির নেশা! হরমোনের অনিয়ন্ত্রণ ক্রিয়াকলাপে চিত্ত সামলাতে অপারগ সে। দুলতে লাগল সমস্ত কায়া। কুচকুচে কালো মণির চোখ দুটো ওর দিকে তাকিয়ে মাদকময় স্বরে বলে উঠল,

” আর কি বলেছিস, কল ধরছি না বলে শা**স্তি হিসেবে বিয়েতে না করে দিবি? এত সাহস তোর? দেশের সেবায় মনস্থির করেছি বলে ক্ষমতা দরকার, কিন্তু আমার সুস্থ থাকার জন্য তোকে দরকার। বেঁচে থাকতে চাই বলেই,তোকে চাই আমরণ। ”

নিশাত মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে কথাগুলো। এমন কখনো হয় নি তার। প্রহর ভাইয়ের সান্নিধ্য চঞ্চল করে তোলছে তাকে।মন চাইছে ছুঁয়ে দিতে নড়বড় করা ওই অধরদ্বয়, মোলায়েম হাতে স্পর্শ করতে শ্যামবরণ পুরুষের অমসৃণ গাল।

প্রহর বলতে বলতে থেমে গেল। চোখে পড়ল,ভালোবাসা,ভালোবাসা পাবার আকুতি,নেশাতুর চাহনি। সে বিশদ কণ্ঠে কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল,

” আমি যদি তোকে আমার কালচে ঠোঁট দুটো দিয়ে একটা চুমু খাই,তোর কি খারাপ লাগবে নিশু?”

নিশাত বিস্ময়ে, বেসামাল হয়ে ঝাপটে ধরল প্রহরকে। লজ্জিত কণ্ঠে শুধালো,

” হ্যাঁ, ভীষণ খারাপ লাগবে। ”

প্রহর এবার কোমরে দুই হাত দিয়ে ধরে শরীরটা আরেকটু আগলে নিয়ে দুষ্টমি করে জিজ্ঞেস করল,

” কেন খারাপ লাগবে তোর? আমার ঠোঁট কালো বলে?”

নিশাত অবাক হয়ে হড়বড়িয়ে উত্তর দেয়,

” তুমি কালো নও,শ্যামলা। ”

” তাহলে চুমু খেলে কী সমস্যা? ”

” আমার মনে হচ্ছে চুমুতে আমার জ্বর উঠবে। ”

বুকে মুখ গুজেই আস্তে করে লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে কথাটা বলল নিশাত। আসলেই, চুমুর কথা শোনে তার শরীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। মনে হচ্ছে পুরোনো রোগটা ধরা দিবে,অকস্মাৎ জ্ঞান হারানোর অসুখ। চুমু খেতে গিয়ে সে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছে এটা বলে সারাজীবন পচাবে প্রহর ভাই।

প্রহর ওর মুখটা তুলে ধরে ঠোঁটজোড়া খুব কাছে নিয়ে গেল। উম্মাদ প্রেমিকের মতো ধৈর্য্য হারিয়ে অসহিষ্ণু গলায় বলল,

” স্বপ্নে তোকে শত,হাজার,লাখ বার চুমু খেয়েছি নিশু। বাস্তবে একবার আমার ঠোঁট তোর নরম ঠোঁটে ছুঁয়ে দিলে খুব বেশি অ**পরাধ হয়ে যাবে কি? তোর জ্বর আসলে আমি ডাক্তার ডাকব,প্রমিস। একটা চুমু খাই? ”

ভেতরে সামাল সামাল রব উঠল। কিন্তু নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হয় কিশোরী, আবেগি নিশাত। প্রহরের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বুঁজে বাচ্চাদের ন্যায় বলে বসল,

” আমি যদি বেহুঁশ হই, সামলে নিও। ”

মিলে গেল দুইজোড়া অধর। কতক্ষণ ছিল তাহাদের মিল সেটা অজানা। তবে নিশাতের সমস্ত মনে ছড়িয়ে পড়ে কস্তুরির সুবাস। তার প্রথম প্রেম,তার প্রিয় মানুষের প্রথম ছোঁয়া। স্মৃতির এলবামে যত্ন করে রেখে দিবে সে এটা। বৃদ্ধবয়সে কোনো একদিন বসন্তের প্রেমে মগ্ন হয়ে কিংবা বারান্দায় বসে ঝুম বৃষ্টি দেখতে দেখতে সে উপভোগ করবে পুনরায় মহূর্তটুকু।
_________________________________

স্ত্রীর গায়ে ৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে প্রথমার হাত তুললেন রফিক আজম। রাগে গা রি রি করছে তার। থা**প্পড় দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি। চোয়াল শক্ত করে গর্জে উঠলেন,

” তুমি এরকম কইরা আমার বিশ্বাস ভাঙবা, কোনোদিন ভাবি নাই সৌরভের আম্মা। মেয়েটারে নিয়া আমার মেলা স্বপ্ন আছিল,সব শেষ কইরা দিলা। সব তোমাদের মিলিত কাজ। আমার মেয়েরে এই ভুলের পথ,খারাপ পথ থাইকা সরাইয়া আনমু আমি। রান্না করো গিয়ে, অতিথি দুপুরেই আইব। ”

#চলবে,,,!

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব_____৩৭

ভালোবাসার প্রদীপ যখন নিভু নিভু থাকে,বুকের ভেতর তখন ধিকিধিকি আগুন জ্বলে। চাতকের মতো পথ চেয়ে থাকে তপ্ত হৃদয় শীতল বায়ুর। সেই হিম শীতল, মন ভালো করে দেওয়া বাতাস পাওয়ার লোভে লোভাতুর হয়ে মানব মন দ্রোহ, কষ্ট, যন্ত্রণা সব সহ্য করে,এড়িয়ে ছুটতে থাকে পুরো দমে। মৃন্ময়ীও ছুটছে বেয়ারা হয়ে। সে দুঃখ প্রকাশ করতে পারে না,শেখেনি। পারবে কীভাবে? এ ব্যস্ত নগরীতে পা ফেলার আগে কোনো মনোবেদনা তার মনকে ছুঁয়ে দেয় নি, কাঁদায় নি রাতের পর রাত। এ শহর, এই নগরীর জঘন্য, মুখোশধারী কিছু মানুষ তার জীবনের রংধনুর সাত রং কেঁড়ে নিয়েছে, উপহার স্বরূপ দিয়েছে সাদাকালো, বর্ণহীন একটা জীবন। তার সমস্ত দেহ, মস্তিষ্ক, অন্তর বিদ্রোহ করেছে একযোগে ভালোবাসাকে ঝাপটে ধরতে, পারে নি সে। হেরেছে, বার বার গুমরে মরে**ছে বাস্তবতার কাছে। তার নিভু নিভু অনুরাগের প্রদীপটা হেলাফেলায় নিভে গেছে চিরতরে, জ্বলবে না আর কোনোদিন। আজ সে রিক্ত,শূণ্য। সে জানত, যেচে আসা ভালোবাসাকে তার হারাতে হবে, তবুও কেন এত কাঁদছে ভেতরটা? বহু সাধনা,কষ্ট সহ্য করে যে শক্ত আবরণটা তৈরি করেছে, তা সরিয়ে নরম রূপটা কাউকেই দেখাতে চায় না ও। সে বুঝল,জানল,ভালোবাসার মতোন রঙ,ঢং তার জন্য নয়, সে তো কেবল হারাতেই জানে। কেউ কখনো জানবেও না প্রথম ভালোবাসা হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া মৃন্ময়ী নতুন করে প্রেম সমুদ্রে ডুব দিয়েছিল, ওঠে নি আর।
গোলগাল চেহারার মেয়েটাকে এগিয়ে আসতে দেখে সে তড়িঘড়ি করে দীর্ঘ শ্বাস টেনে নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করল। তার বুকের গহীনে যে ধ্বংস যজ্ঞ চলছে কাউকে টের পেতে দেবে না ও। মেয়েটার সাথে আজ ওর দ্বিতীয় দেখা। অল্প টুকু সরে গিয়ে মেয়েটাকে বসার জায়গা করে দিয়ে ঝরঝরে কণ্ঠে, হাসি-হাসি মুখে বলল,

” বসুন আপু৷ ক্লাস শেষ আপনাদের? ”
” না। দেখলেন,নিজেও ক্লাস মিস করলাম, আপনাকেও করালাম। ”
তীব্র আফসোস নিয়ে বলল ঊষা। বসতে বসতে সে আরও বলল,
” প্রত্যয় ভাইয়া দেখা করেছে আপনার সাথে? ”

প্রশ্নটা শুনে মৃন্ময়ীর নিষ্ঠু**র মনটা হু হু করে কেঁদে উঠল। কান্নাবিন্দু মুক্ত হতে চাইল সুন্দর দুটি চোখ ছাপিয়ে। কিন্তু মৃন্ময়ী দেবে না। দুর্বলতা মানায় না তার। জটিল এ ভুবনে পাথরের মতো শক্ত রূপটাই টিকে থাকার জন্য সঠিক, যৌক্তিক। সে খুব আস্তে করে বলল,
” না। ”
ঊষা কপালে ভাঁজ ফেলে,চক্ষুদ্বয় সরু করে প্রশ্ন করল,
” কবে থেকে আর দেখা হয় নি আপনাদের? ”

দুই মাস আগে একবার ভার্সিটিতে ঢুকার সময় গেইটের সামনে মুখোমুখি হয়েছিল প্রত্যয়ের। লোকটা মৃন্ময়ীকে এক পলক দেখে নিয়ে চট করে নজর সরিয়ে চলে গেল অতি সন্তর্পণে। মৃন্ময়ী বার বার পেছনে ঘাড় ফিরিয়ে চেয়েছে, ফিরেও দেখে নি লোকটা একটাবার। বিস্ময়ে কাজল ও তিমুর মুখ হা হয়ে গিয়েছিল। তারা দুজন হতভম্ব স্বরে ওকে প্রশ্ন করেছিল,
” মৃন্ময়ী এটা প্রত্যয় ভাই না? তোকে এড়িয়ে গেল নাকি রে? আমাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না। যেই ছেলে মেঘ বাদলা,রাত-ভোর, অপ**মান পরোয়া না করে তোর পেছনে পড়ে থাকত,সে কি-না তোকে ইগনোর করল! কী হয়েছে রে? আবার খারাপ কিছু বলেছিস? ”
মৃন্ময়ী সজোড়ে মাথা নেড়ে জবাবে বলেছিল,” কিছু বলি নি। উনাকে এ কয়দিন দেখিই নি৷ কি জানি কী হলো!”

সেদিন মৃন্ময়ী হতবাক হয়েছিল। মানুষের আচরণ এত জলদি পাল্টায়! তারপর মৃন্ময়ীর মনে পড়ল, অনিশ্চিত পৃথিবীতে নিশ্চিত কিছুই নয়, আর মানুষের আচরণ তো প্রকৃতির মতোই রূপ পরিবর্তনে দক্ষ। সে ঊষাকে সিধেসাধা কণ্ঠে বলল,

” আপনার বিয়ের আগের রাতে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন না? তার একদিন আগে ভার্সিটিতে দেখেছিলাম, তবে দেখাটা অবশ্য ভুলবশতই হয়েছিল। ”

ঊষার বিস্ময়ের শেষ নেই। প্রত্যয় কি পাল্টে গেছে সত্যিই? ভালোবাসার রং বদলায়? ভালোবাসার নিয়ম হলো ভালোবেসে যেতে হবে আমরণ,চিরকাল। তাহলে পাল্টালো কেমন করে? প্রত্যয়ের প্রতি অভিমানটা আরও কঠিনভাবে জমে গেল মনিকোঠায়। মোহের নেশায় আসক্ত হয়ে একটা মেয়ের পিছু ঘুর ঘুর করা, তাকে স্পর্শ করা, বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো একেবারেই অনুচিত। আজ সে স্বচ্ছভাবে মৃন্ময়ীর মতামত জানতে এলো,খোঁজ নিল প্রত্যয়ের অনুভূতির। এতে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে তার। সে একটু মন খারাপ করে জিজ্ঞেস করল,

” আমার বিয়ের দিন আপনাকে আসতে বলেছিলাম। আপনি কেন আসেন নি? আপনি আসলে হয়ত ঘটনাটা অন্যরকম হত, প্রত্যয় ভাইকে গ্রহণ করে নিলে আপনাদের দুজনের জীবনটা সুন্দর হত। ”

মৃন্ময়ীর ওষ্ঠযুগলে স্মিত হাসি নিরবে,নিঃশব্দে খেলছে। ঊষাকে চমকে দিয়ে বলল,
” কাকে গ্রহণ করার কথা বলছেন? আমাকে ভালোবাসলে, আপনি তার সহধর্মিণী হতেন না৷ আপনাকে ভালোবাসত বলেই বোধ হয় তার জেদ আমাকে কাবু করতে পারে নি। বিয়ের জন্য কংগ্রাচুলেশনস। ”

” আমি ভাইয়াকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। বিয়ের পরের দিনই আমি বাড়ি ছেড়েছি,ফ্রেন্ড এর বাসায় উঠেছি৷ দুইটা মাসে একবারও বাবাকে দেখতে যাই নি। ”
মৃন্ময়ী বিস্ফোরিত নেত্রে চেয়ে বলল, ” কেন করেছেন এমনটা? ”
” ভাইয়া অপ**রাধ করেছে, তার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি কবুল বলতে বাধ্য হয়েছি বাবার মুখ দেখে, কাকিমণির অশ্রুসজল চোখ দেখে, প্রহর ভাইয়ার কথায়। দায়বদ্ধতার সংসার আমি কেন করব? ”

” ভালোবাসেন বলে কি রাজি হোন নি? জানেন, আমার বুঝার ক্ষমতাটা একটু বেশিই। আমি মানুষের ভালোবাসা ধরতে পারি। কে আমাকে ভালোবাসে, কে বাসে না খুব করে বুঝি। সেদিন রাত্তিরে প্রথম দেখায়,আপনার কথায় আমি বুঝে গিয়েছিলাম প্রত্যয় ভাইয়ার জন্য আপনি ঠিক কতটা ভালোবাসা হৃদয়ে লুকিয়ে রেখেছেন। আমরা প্রতিটা মানুষ ভুল করি, মাঝে মাঝে আবেগকে-জেদকে বলি ভালোবাসা, আর ভালোবাসাকে আবেগ, মোহ বলে দূরে ঠেলে দিই। হ্যাঁ, উনি অপ**রাধ করেছেন, জেদকে প্রেম দাবি করে আমাকে চেয়েছেন, ভেবেছে আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। কিন্তু দেখেন আমার প্রত্যাখানে দিব্যি শ্বাস নিচ্ছে, কিন্তু আপনাকে হারানোর ভয়ে চিরতরে নিজের নামে লিখে নিয়েছে। আমি কখনোই উনার জেদকেও আপন করতে পারতাম না,আমার সেই সাধ্য নেই আপু, আমি এসেছিলাম শুধুই উনাকে পোড়াতে। আমার জীবনের ধ্রুব সত্য হলো আমি একজন বিধবা মেয়ে। ”

কথাটা নিজেকে পরিপাটি করে শক্ত মনে,দৃঢ় কণ্ঠে বলে ফেলল মৃন্ময়ী। ঊষার মনে হলো কোথায় বো**মা বিস্ফো**রণ ঘটেছে। অবিশ্বাস্য গলায় জোরেশোরেই উচ্চারণ করল,
” কী বলছেন?”
কিন্তু মৃন্ময়ী অত্যধিক ঠান্ডাভাবে আরও চমক দিয়ে বলল,
” শুধু তা নয়। আমার চার বছরের একটা ছেলে আছে আপু। আমার জীবনের কঠোর বাস্তবতা একদিন আপনাকে বলব। হাতে সময় কম। শহর ছাড়ার বন্দোবস্ত করছি। যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার সাথে একবার দেখা করে যাব। ডিভোর্স শব্দটা আর উচ্চারণ করবেন না। তাকে তার ভুল বুঝতে দিন, শাস্তি দিন, তবুও ছেড়ে যাবেন না। যারা পা**প করে,ভুল করে তাদের আমরা নিচু করলে তারা কি নিজের ভুলটা বুঝতে পারে? পারে না,বরং সেই মানুষটার পাশে থেকে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিতে হয় সে পাপ করে**ছিল,ভুলের আগুনে হয়েছিল দগ্ধ।

মৃন্ময়ী পার্ক থেকে বেরিয়ে যায়,চলে যায় রহস্য রেখে। ঊষার নিকট এই মেয়েটাকে আরও রহস্যময় লাগছে। মেয়েটার চোখে প্রত্যয়ের জন্য শ্রদ্ধা দেখেছে স্পষ্ট। কত পজিটিভ চিন্তাধারা মেয়েটার! কষ্টের ছাপ লেগেছিল চোখে মুখে। প্রত্যয় ভাই কি কখনো জানবে যাকে আশ্রয় দিয়েছিল জেদের বশীভূত মনে, তার জীবনের সত্যটা?

ঊষা আবার তাড়াহুড়ো করে পা চালাল। আরও একটা ক্লাস আছে ওর। শীতের ঘন কুয়াশা পালিয়েছে মধ্য দুপুরে। তেজহীন রোদ উঁকিঝুকি মা**রছে এদিক সেদিক। বারোটা বাজে। ক্লাসের পর সোজা হলে যাবে ও। বাবাকে দেখা হয় না কতদিন। বাড়ি গেলেই প্রত্যয়ের চোখে ধরা পড়বে। আশ্চর্য হলেও সত্য দুইটা মাসে প্রথমবার বাহিরে এসেছে ও। হল থেকে ক্লাস,ক্লাস থেকে হল এটাই তার গন্তব্য। বাবা ও প্রহর ভাই ছাড়া কারো কল রিসিভ করে না। প্রত্যয়ের নাম্বারটা বিয়ের রাতেই ঠাঁই পেয়েছে ব্লক লিস্টে। কেন জানে না,প্রত্যয়কে কোনোভাবেই ক্ষমা করতে পারছে না ও। বার বার মনে হচ্ছে লোকটা অন্যা**য় করেছে ওর সাথে, মৃন্ময়ীর সাথে। বার কয়েক মেডিক্যাল কলেজের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল প্রত্যয়,ভিন্ন নাম্বার থেকে কল দিয়েছে। কিন্তু ঊষা রেসপন্স করে নি, তার আসার খবরটা ওর বন্ধু-বান্ধবই দিত। বেশ লুকিয়ে চু**রিয়ে থাকে সে নিজের স্বামীর কাছ থেকে। তবে এখন বেরিয়েই মনে হলো চরম ভুল করে ফেলেছে। সমুখের লম্বাদেহী, এলোমেলো চুলের পুরুষকে দেখে বুক ধড়ফড় করতে লাগল। ভাবল,মুখ ওড়না দিয়ে ঢেকে কেটে পড়বে,হইল কই? ঠিক ঠিক সেই পুরুষের কাছে ধরা খেয়ে গেল।

মনের মানুষকে চেনার,তার উপস্থিতি টের পাওয়া,তাকে অনুভব করার এক অন্যরকম অদ্ভুত শক্তি থাকে প্রতিটা প্রেমে মত্ত মানুষের। ঊষা যতই মুখ ঢাকুক, নিজেকে আড়াল করুক ঠিক ঠিক প্রত্যয় পেয়ে গেল তাকে,টের পেল তার অস্তিত্ব। পাশ দিয়ে যাবার সময়টায় ওর ওড়নার একটুখানি অংশ পেছন থেকে টেনে ধরল প্রত্যয়। গম্ভীর গলায়,অভিমান জমা কণ্ঠে আদেশ করল,
” গাড়িতে গিয়ে বোস। ”
ঊষা আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কেউ ওদের দিক চেয়ে আছে কি-না। না, কেউ দেখছে না। সে না ঘুরেই কলেজের গেইটের দিক দৃষ্টি রেখে কঠিন মুখে বলল,
” ওড়না ছেড়ে দাও। পাবলিক প্লেসে অস***ভ্যতামি কেন করছো?”
প্রত্যয়ের মেজাজ চড়ে গেল। রাগ টগবগ করছে সমস্ত শরীরে। বিয়ের পর পরই বাড়ি ছেড়েছে মেয়েটা,যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। তার সাথে ক্লিয়ার কথা পর্যন্ত বলছে না,বলার সুযোগটাও দিচ্ছে না। অনেক সহ্য করেছে সে। সে মানে এবং জানে বড়সড় অন্যা**য়ে লিপ্ত সে, তাহলে কি কথা বলার সুযোগটুকু দেবে না? জানতে চাইবে না তার কথাগুলো? রাগত্ব স্বরে বলল,
” তুই আমার স্ত্রী। তোর সাথে অস**ভ্যতা কেন করব? তোর ওড়না ধরার পুরো অধিকার আমার আছে। ”
ঊষা এবার ঘুরল, তেজী দৃষ্টিজোড়া সরাসরি ডুবিয়ে দিল প্রত্যয়ের চোখের চাহনিতে। কণ্ঠ অল্প শীতল, মিশে আছে একটুখানি যন্ত্রণার ছাপ,
” আমাকে স্পর্শ করার লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছ বলে, আমার মতামতের বিরুদ্ধে ছুঁয়ে দিবে? হাত দিয়ে ছোঁয়ার আগে,মন দিয়ে ছুঁয়ে দিতে হয় ভাইয়া, মনের মিলন ঘটাতে হয়। ”

প্রত্যয় আহত হলো কথার ধাঁচে। এই ঊষাকে ও চেনে না। এমন করে তার সাথে কথা বলে নি কখনোই। ওড়না ছাড়ল না তবুও। বরঞ্চ আরেকটু টেনে ধরে লহু স্বরে বলে উঠল,
” এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা যাবে না। আমার সাথে চল। ”

ঊষা একরোখা জেদ ধরে বসল সে যাবেই না। বাধ্য হয়ে প্রত্যয় টানাহেঁচড়া করে গাড়িতে তুললো তাকে। তন্মধ্যে এক ছেলে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে বসে,” আপনি উনার সাথে জোরাজুরি করছেন কেন?” প্রত্যয়ের জবাব ছিল বিশদ, কণ্ঠ ছিল ধারালো,” বউ অভিমান করে পালিয়ে এসেছে, মান ভাঙিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। ”

ছেলেটা দাঁড়িয়ে গেল থতমত খেয়ে। একবার তাকাল ঊষার দিক,ঊষা মুখ ফিরিয়ে চুপটি করে আছে। যা বুঝার বুঝে গেল ছেলেটা। প্রত্যয় গাড়ি ছুটিয়ে কোলাহলের স্থান ত্যাগ করে একটা নির্জন জায়গায় এসে ব্রেক কষল। কোথাও কেউ নেই, একেবারেই নিশ্চুপ একটা জায়গা। গাড়ি থেকে নেমে সে তার হৃদয়ের রাণীকে টেনে বের করল। সোজাসাপ্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে মা**রল ঊষার পানে,

” কী সমস্যা তোর? বড় বাবা,ভাই, মা সবাই চাইছে তুই বাড়ি ফিরে যা। কারো সাথেই ঠিকঠাক কথা বলছিস না। তাছাড়া আমি তোর হাসবেন্ড ঊষা, কীভাবে পারছিস আমাকে ছেড়ে এভাবে থাকতে?”
” নাটকীয় বিয়ে নিয়ে এত কীসের অধিকার দেখাচ্ছ তুমি?”

প্রত্যয় ওর দুই হাত ধরে কাছে নিয়ে আসল৷ বন্দী করে ফেলল তার ভোরের পাখিকে বক্ষপিঞ্জিরায়। পিঠে হাত রেখে বুকের সাথে লাগিয়ে গালে গাল ঘষে ধীরভাবে,সুমধুর সুরে বলল,

” বিয়ে কীভাবে করেছি সেটা বড় কথা না, গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো তুই আমার বউ। প্রত্যয় এহসানের বউ হয়ে তুই খুব ঘাড়***ত্যাড়া হয়ে গেছিস ঊষা। ”

ঊষা প্রত্যয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি লুকিয়ে শ্লেষের গলায় বলে উঠল,

” সঙ্গ দোষে স্বভাব নষ্ট। তাই ঘাড়**ত্যাড়ার বউ ঘাড়**ত্যাড়া হবে এটাই নিয়ম। ”

” এই নিয়ম তুই বানিয়েছিস? ”

” পৃথিবীর সকল নিয়ম বানাতে হয় না। কিছু কিছু নিয়ম আপনাআপনি চলে আসে, আমরা কেবল সেগুলো সাদরে গ্রহণ করি। ”

প্রত্যয়ের সম্পূর্ণ চাহনি আঁটকে আছে মায়াবী গড়নের মায়াবতীর মুখশ্রীর অপার সৌন্দর্যে। অপরূপা তার কাছ থেকে আড়ালে ছিল মাসের পর মাস, ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে তাকে। ঊষাকে হারানোর ভয়ে সুপ্ত প্রেমের গর্জনে কেঁপে ওঠেছিল তার মন-প্রাণ-অন্তর। জোরদার হরতাল চলছিল হৃদয় পথে। সে তার করা সকল অন্যা**য়, অবিচার,সবকিছু বক্ষস্থলে থাকা মেয়েটাকে বলতে চায়। অতঃপর যদি গ্রহণ করতে হয় তাকে শা**স্তিসরূপ আবারও দূরত্ব, মাথা পেতে মেনে নিবে সে। তবুও পারবে না মায়াবী রূপের বউটাকে হারাতে।
__________________________

সত্যি সত্যি বাড়িতে এসে জ্বরের উত্তাপে পুড়ছে নিশাতের শীর্ণ কায়া। চোখের মণি রক্তাভ। ফরসা চেহারাটা টমেটোর মতো টকটকে লাল আবিরে মাখোমাখো। তাতে ওর কোনো চিন্তা নেই। এমনকি উত্তাপ ওকে কাবু করতে পারছে না। তার মনের কাননে লাল-নীল প্রজাপতি তিড়িংবিড়িং করে ওড়ছে, দিগন্তে জুড়ে রংধনুর মেলা। স্মরণিকা নিবাস থেকে কীভাবে বেরিয়ে এসে পৌঁছাল মজুমদার বাড়িতে সে জানে না। মনে হলো অদৃশ্য এক শক্তি টেনে টেনে এনে দাঁড় করিয়েছে মজুমদার বাড়ির চৌকাঠে। লজ্জার রাজ্যে হারিয়ে গিয়ে কোন পথে হেঁটে এসেছে তা-ও খেয়ালে নেই। মস্তিষ্ক, মন, দেহ সব কেবল বারংবার ওকে নিয়ে যাচ্ছে চুম্ব–নরত মুহূর্তে, অক্ষিকাচে ভেসে ভেসে ওঠছে মাদ–কময় দৃশ্যখানি।

কিশোরী মন আজ বড়ই চঞ্চল। নিশাতের মন চাইছে ডানা মেলে ওড়তে, খুব করে সাজতে, কাউকে কানে কানে ফিসফিস করে বলতে,” জানো, আমার ভালোবাসার মানুষটার চুমু মধুর মতো মিষ্টি, তার ছোঁয়া ফুলের মতোই পবিত্র। ” হ্যাঁ, নিশাত অনুধাবন করেছে সেই পবিত্র ভালোবাসা, অঙ্গে মাখিয়েছে শুদ্ধ ছোঁয়া। জ্বর টর কে সে আর তোয়াক্কা করে না। লক্ষাধিক বার জ্বর এলেও প্রহর ভাইয়ের সান্নিধ্য হাতছাড়া করবে না সে, জ্বরে কাতর হয়ে মানুষটার বুকে পড়ে থাকবে। ফুপি বলেছে বিকেলেই আসবে ওদের বাড়িতে। সেকারণে নিশাত বাম হাত ভরে মেহেদি পড়ল, প্রহর ভাইয়ের দেওয়া হলুদ শাড়িটা নামিয়ে রাখল আলমারি থেকে। এটা পড়বে আজ প্রহর ভাই আর ফুপি ওকে দেখতে আসলে। শাড়িটা তনুজার ওপর রাগ দেখিয়ে পড়ে নি ঊষার হলুদের রাত্রিরে। আকস্মিক মনে পড়ল রোকেয়া রুমে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ওকে। দ্রুত দ্রুত মায়ের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে হাঁক ছাড়ল,

” আম্মু ডাকছিলে?”
রোকেয়া স্বামীকে কলম এগিয়ে দিতে দিতে জবাব দিলেন,
” হ, তোর আব্বা ডাকছেন তোরে। ঘরে আয়। ”

রোকেয়া শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখের একপাশ ঢেকে রেখেছেন। অবাকই হলো নিশাত। মা কখনোই এরকম করে মাথায় ঘোমটা টানেন না। চমকপ্রদ চাউনি সমেত ঘরে ঢুকল ও। তক্ষুণি বাবার গাম্ভীর্যের ভাষা শুনতে পায়,
” এদিকে আসেন আম্মাজান। ”
গম্ভীর কণ্ঠস্বর,অথচ কি আদুরে! গটগট পায়ে আব্বার সামনে গিয়ে সালাম দিল। ভারী নম্র কণ্ঠে উত্তর দেয়,
” জি,আব্বা। ”
মেয়ের কোমল হাতটা ধরে পাশে বসালেন রফিক আজম। মেহেদী রাঙা হাত দেখে প্রশংসা করলেন খুব,
” সুন্দর হইছে আম্মা। তা আপনার পড়াশোনা কেমন চলতেছে?”
” ভালো আব্বা। “- বিনয়ী কণ্ঠ নিশাতের।
” আব্বা আপনারে ভালোবাসি এটা মানেন?”
” আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাতে সন্দেহ নেই। ”
একটুখানি গলা ঝাড়লেন রফিক আজম। গম্ভীরতা বজায় রেখেই বলতে লাগলেন,
” কিন্তু আপনি যে আব্বার মুখে চুনকালি মাখতে চাইতেছেন আম্মা, আদর করে বড় করার এই ফলাফল দিতেছেন? ”

নিশাত আঁতকে উঠল। সে আগের চেয়ে কিছু বুঝদার হয়েছে, এখন আর অতটাও বোকা না যে আব্বার কথা ধাঁচ বুঝবে না। কু ডাকছে তার মন। মায়ের দিকে বক্র চাউনি নিক্ষেপ করল সঙ্গে সঙ্গে। চক্ষে পড়ল মায়ের কাতর দৃষ্টি। বুঝার বাকি রইল না কোনো বিপদ আসছে ধেয়ে তার জীবনে। সে মৌন হয়েই রইল।

” রুমে গিয়ে তৈরি হয়ে নেবেন। আপনার মোবাইল নিয়ে নিছি আমি। বোকা আপনি আম্মা। পা**পে জড়িয়ে গেছেন। প্রেম জীবন নষ্ট ছাড়া কিছুই করে না। আপনের কাকারে দেখেন না, বিয়ে করে নাই এখনও? মজনু হইছে সে প্রেমে পইড়া। নষ্ট করছে জীবনটা। আপনের আব্বা আপনের জীবন নষ্ট করতে দিব না, সঠিক পথ দেখানোর দায়িত্ব আমার। সুন্দর কইরা রেডি হইবেন, পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে আপনারে। যান,এখন। ”

এক লহমায় নিশাতের সব আনন্দ, খুশি,সুখ পাখি হয়ে দূর আকাশে ওড়ে গেল৷ মৃত্তিকায় বসবাসরত নিশাতের সাধ্য হলো না আকাশ ছোঁয়ার। রক্ষা করতে পারল না ও নিজের সুখগুলোকে। বুঝার বাকি আর কিচ্ছুই নেই যে আব্বা তার এবং প্রহর ভাইয়ের প্রেম টের পেয়ে গেছেন। পা ভেঙে আসছে তার৷ নেতিয়ে পড়েছে সমস্ত দেহ। ভুর ভুর করে জ্বরটাও বেড়ে গেল।

রোকেয়া মেয়ের এমতাবস্থা পরখ করে পিছু পিছু ছুটে এলেন। কোনোমতে জড়িয়ে ধরে নিয়ে এলেন রুমে। নিশাত সমগ্র পৃথিবী ভুলে মা’কে ঝাপটে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। শ্রাবণে ধারা অঝোরে ঝরতে থাকে নেত্রযুগল ছাপিয়ে। অস্পষ্ট স্বরে বার বার উচ্চারণ করতে থাকে,

” আ,,,,আম্মহ,প্রহর ভাইকে খবর দাও। আব্বা যা বলে করেই ছাড়ে। উনি ছাড়া আব্বারে কেউ আটকাতে পারব না। ”

“কেমনে দিমু রে মা? তোর আব্বা বাড়ির সবার মোবাইল নিয়ে গেছে। সবাই তোর আর প্রহরের কথা জানে এখন। সৌরভও নাই,সে তো গত রাইতে ব্যবসার কাজে শহরে গেল। তুই পালাতে পারবি নিশু? আজই তোর বিয়ে হয়ে যাইব, আমি যতদূর জানি। তোর আব্বা দরকার পড়লে তোরে কাট**ব, তবুও প্রহরের হইতে দিব না রে মা। ”

#চলবে,,,,!
( ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৩৮

নিশাত মায়ের কথা কানে তুলল না। এত বড় অন্যায় কর্মকাণ্ড সে করতে পারবে না। প্রহর ভাইকে যেমন সমস্ত মন দিয়ে অপরিসীম ভালোবাসে,তেমনই বাবার প্রতি ভালোবাসার স্তূপটা বেশ উঁচু। কি করে পারবে সে ভালোবাসার পাহাড়টা ভেঙে বাবাকে অসীম দুঃখ উপহার দিতে? বাবা কি তার কাছে অসম্মান, যন্ত্রণা, অপ**মান এসবই পাওনা? তার এক কর্মে মানুষ আঙুল তুলবে বাবার দিকে,উপহাস করে বেড়াবে সুসন্তান গড়তে পারেনি রফিক আজম। সন্তান হয়ে তা মেনে নিয়ে কী পরে সুখী হবে সে প্রহর ভাইয়ের সাথে। প্রকৃতি ছাড় দেয়,ছেড়ে দেয় না। বাবার পাশপাশি মানুষজন তর্জনী তোলবে আলতা ফুপির দিক। মুখে মুখে বলবে যেমন ফুপু তেমন ভাইঝি, একই পথে হাঁটছে। এত এত তিরস্কার মাথায় নিয়ে কীভাবে পৃথিবীতে খুশি থাকবে সে?

এই গ্রামের মানুষগুলো সমালোচনা করতে বেশ ওস্তাদ। মানুষের মনে খুবই সূক্ষ্মভাবে কষ্টের হূল ফুটিয়ে দেয় তারা। বয়সে সপ্তদশী নিশাতের মনে হঠাৎ করেই উদয় হলো বুঝের দ্বিগুণ ক্ষমতা। বর্তমান যন্ত্রণা,জটিল পরিস্থিতি, ভালোবাসার মানুষের থেকে বিচ্ছেদের বেদনা তাকে খুব করে উপলব্ধি করিয়ে দিতে সক্ষম হলো যে, পালিয়ে যাওয়া কোনো সমাধান নয়,বরং অসম্মানজনক কাজ। মাকে উপেক্ষা করে বসার ঘরে ছুটে এলো সে। রফিক আজম থমথমে মুখে বসে ছিলেন বেতের মোড়ায়। মেজো ভাই আনোয়ারের সঙ্গে আসন্ন মেহমান নিয়ে টুকিটাকি কথা সারছিলেন। ছোট ফুপু, পিংকির মা ঘর গুছাতে মগ্ন বিষন্ন মনে। রবিন বড় ভাইয়ের আদেশে আজ স্কুল কামাই করেছে। মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে ভাইয়ের সমুখে। সবাইকে চমকে দিয়ে নিশাত এক অদ্ভুত, অপ্রস্তুত কান্ড করে বসল। ঢলে পড়ল তার আব্বার পায়ের কাছে,ভেঙে পড়ল ঝরঝরে কান্নায়। নরম কণ্ঠে তার বড্ড আকুতি, মিনতি,

” আমাকে বিয়ে দেবেন না আব্বা, আমি ম**রে যাব। প্রহর ভাইকে ছাড়া কষ্ট হবে আমার। দয়া করেন আমার ওপর। বিয়ে দেবেন না। ”

রোকেয়া মেয়ের পিছন পিছন ছুটে এলেন হন্তদন্ত পায়ে। তাকে ধরতে গেলে রফিক আজম হাত তোলে বাঁধা দিলেন। প্রচন্ড গম্ভীর মুখাবয়ব চোখের তারায় ভেসে ওঠতেই মেয়ের জন্য করুণ দৃষ্টি নিয়ে চাইলেন স্বামীর দিকে। চোখ যেন স্পষ্ট বলছে, মেয়েটার আকুতি মেনে নেন। তিনি ভালো করে জানেন বিচ্ছেদে কেবল তাঁর কোমল মনের মেয়েটা কষ্ট পাবে তা নয়, শক্ত, দৃঢ় মনের ছেলেটাও ভেঙে গুড়িয়ে যাবে। তার মেয়ের চেয়েও যে ছেলেটার ভালোবাসা সীমা ছাড়িয়ে পাগলপ্রায়। এমন ভালোবাসার মধ্যে দূরত্ব এলে দুইটা জীবনই নষ্ট হবে সেটা কি কঠিন মনের পুরুষটা বুঝতে পারছেন না? এত নিষ্ঠু**র কেন এই লোক?

” আবেগের বশীভূত হয়ে আব্বার পায়ে পড়ে গেলেন ওই বেয়া**দবটার জন্য? পা ছাড়েন, আপনি পা–পে জড়াইছেন,বেয়াদ–বটার লগে ঘুইরা বেড়াইছেন, এখন আপনার শুদ্ধ হবার পালা। ”

ইস্পাতের মতো কঠিন মুখোভঙ্গির দিকে নির্নিমেষ চেয়ে রবিনের অন্তঃপুরে বিদ্রুপের হাসি ছড়িয়ে পড়ল। তার অতি শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের নামে অভিমান জমা আছে তার হৃদয়ের সবচেয়ে গভীরে অন্ততকাল ধরে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি সে শুনে এসেছে, তার পরিবারে ঘটতে দেখছেও অহরহ। আলতা বু এর সাথে, নিজের সাথে, অবশেষে এখন ভাতিজির সাথে প্রেমের কারণে অমন অবিচার দেখে ভীষণ প্রতিবাদী হতে মন চাইছে তার। এই ইট পাথরের তৈরি ভিটেতে সে অন্য সকল মানুষের মতোই নিঃশ্বাস ফেলছে। সবার ভিতরে একটা হাসিখুশি ভাব সর্বদা থাকলেও,প্রিয়তমা নিরুকে হারিয়ে ক্ষণে ক্ষণে, বছরের পর বছর তার কষ্ট জর্জরিত হৃদয়ে দুঃখের তরঙ্গ বয়ে চলেছে অবলীলায়। সে জানে,অনুভব করে প্রিয় মানুষকে হারিয়ে কেমন বিষাদ নিয়ে বাঁচতে হয়, হয়ে যেতে হয় জী*বন্মৃত। অনেক কাল পর মুখ খুলে চলে গেল বাবার মতো সেই শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

” নিশু সত্যিই প্রহরকে ভালোবাসে বলে মনে হচ্ছে ভাইজান। আবেগ বলে মনে হয় না, আপনি আলতাবু রে খবর দিয়ে ওদের বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেন। ”

রফিক আজমের মণিজোড়া লালের আস্তরণে ছেয়ে গেল। রক্তিম চাহনিতে ঝলসে দিতে উদ্যত হলেন ছোট ভাইকে। তাঁর গর্জনে কেঁপে উঠল যেন মজুমদার বাড়ির ইট,পাথর,মানুষের হৃদপিণ্ড।

” তোমার সাহস কী করে হইল এসব বলার? নিজের কুকর্ম ভুলে গেলা? ”

রবিন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না। নিরুর মৃ**ত্যুর জন্য নিজের সাথে সাথে বড় ভাইকে দায়ী করে সে। আজও চোখের আয়নায় সেই সুন্দর রমণীর চেহারাটা ভেসে ওঠে। রাতের আঁধারে গুমরে ম**রে সে সন্তানকে এই ধরণীর আলো দেখাতে না পেরে। আজ যদি সামনে বসা নির্দয় মনের লোকটা তার ভাই না হতো,তবে নিজ হাতে খু***ন করে নিজেকে খু***নী দাবি করতে গলা কাঁপত না। সে কাঠ কাঠ গলায় দুঃসাহস করে মুখের ওপর বলে উঠল,

” আমি কোনো কুকর্ম করি নি। কেউ না জানুক,আপনি জানতেন নিরুকে আমি আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে কাজী অফিসে বিয়ে করেছি। নিরু আমার স্ত্রী ছিল, আপনি আমার স্ত্রী,সন্তানের খু***নী। এখন নিজের মেয়েটাকে মা**রতে চাইতেছেন। সেদিন সালিসে আপনি আমারে মুখ খুলতে দেন নি নিজে গলায় ফাঁ***সি দিবেন এই হুমকি দিয়ে। উজ্জ্বল ভাই আপনার বাল্যকালের বন্ধু ছিলেন। আপনি ছোট থেকেই হিংসা করতেন মানুষটারে। সেই অমায়িক, ভালো মনের মানুষটা আপনেরে বন্ধু ভাবলেও আপনি ছিলেন উনার মিত্র রূপে শত্রু। উজ্জ্বল ভাই ক্লাসে ফার্স্ট হইতেন, আপনি পড়ে থাকতেন পেছনে এসব আপনার সহ্য হইত না৷ তিনি বিত্তশালী পরিবারের মানুষ এটাও আপনার অপছন্দ ছিল। আলতাবু রে যখন উজ্জ্বল ভাই ভালোবাসেন বলে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন সেদিন আপনি আপনার আসল রূপ দেখাইলেন। বললেন,কোনোদিন উনার কাছে বু রে বিয়ে দিবেন না। আলতাবু রে ব্যবহার করে আপনি উজ্জ্বল ভাইরে একদিক থেকে নিঃস্ব করতে চাইছিলেন। আপনি ভালো করে জানেন ভালোবাসা ছাড়া মানুষ কতটা নিঃস্ব হয়ে যায়। আলতাবু আপনার কান্ডে বাধ্য হয়ে পালিয়ে গেল। আপনার সব হিংসা, শত্রু**তা ওই বাড়ির সাথেই। ওই বাড়ির মেয়েটাকে ভালোবেসেছি এটাও আপনার চোখে দোষ ছিল, নিরুকে চিরতরে মে**রে ফেললেন, আর আমাকে অর্ধ**মৃত বানিয়ে রাখলেন। নিশুর অপ**রাধ সে ওই বাড়িরই ছেলে প্রহরকে ভালোবাসে,অন্য কাউকে ভালোবাসলে মেয়েটার আজ এত কষ্ট পেতে হতো না,ভালোবাসার জন্য ভিক্ষা চাওয়া লাগত না ওর। এ বাড়ির প্রতিটা মানুষ আপনাকে সম্মান করে বলে দমে ছিল,আনুগত্য করে চলেছে। দেখি নিশুর জীবনে আপনি আপনার মর্জি কীভাবে চালান, আমি নিজে প্রহরকে ফোন দিয়ে বলব নিশুকে নিয়ে যেতে। ”

একটানে দীর্ঘদিনের চাপা কষ্ট মুক্ত করে দিয়ে জীবনে প্রথমবার অসম্মানের দৃষ্টিতে তাকাল ভাইয়ের দিকে। বড় বড় পদলি ফেলে বসার ঘর ত্যাগ করে রবিন বাহিরে চলে গেল। নিশাতের সমগ্র অস্তিত্ব জানল চাচার নিরবতার প্রাচীরের আড়ালে সন্তর্পণে লুকিয়ে রাখা বেদনার কাহিনী, আব্বার নির্দয়তার গল্প। কান্নায় ওর বুক ফেটে যাচ্ছে। বড় বড় চোখ দুটি ভেসে যাচ্ছে শ্রাবণের বৃষ্টিতে। ফের,ফের সে অনুনয়ের সুরে বলল,

” আপনি বলেছেন ভালোবাসা পা**প,সেই পা**পে আমি পা**পী হয়ে থাকতে চাই। শাস্তি দিন,কিন্তু আমাকে ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে চিরকাল মর**ণযন্ত্রণা নিয়ে বাঁচতে বলবেন না। আমি তিলে তিলে মর**তে চাই না আব্বা। প্রহর ভাইয়ের সাথে ভালো থাকতে চাই। আমাকে আর ওই মানুষটারে আপনি শেষ করে দিয়েন না। ”

ছোট ভাইয়ের বেয়াদবি, ঘৃ***ণা, মেয়ের পা**গলের মতো প্রলাপ কিছুই রফিক আজমের অহংকারের উঁচু ইমারত টলাতে পারল না। তিনি কড়া কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলেন,

” রোকেয়া! মেহমান গ্রামে ঢুকে পড়ছে,মাইয়ারে নিয়ে সাজাও। আজ এই বাড়িতে বিয়ে না হলে প্রলয় হইব। আমার আত্মসম্মানে আঘাত করলে আমি কাউরেই চিনি না। যদি স্বামী, সংসার হারাইতে না চাও নিয়ে রেডি করো ওরে।”

নিশাত অভিমান ভরা জলে টইটুম্বুর দৃষ্টিজোড়া আব্বার দিকে ছুঁড়ে মা”রল। আব্বার কথার ধাঁচে তার বুঝতে বাকি নেই যে মা তার পক্ষপাতিত্ব করলে উনার সংসারে ভয়ংকর ঝড় উঠবে। ছি! আব্বা কেমন করে এমন হুমকি দিতে পারে? রুমে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন রোকেয়া। আশ্বাস দিলেন প্রহর আসবে। সে যেহেতু গ্রামে আছে কোনো না কোনোভাবে বিয়ের কথা তার কানে যাবেই।

কলিজা রঙের বেনারসিটা অ**জগর সা**পের ন্যায় নিশাতের শীর্ণ কায়া পেঁচিয়ে রেখেছে। অশ্রুসিক্ত চোখে কাজল,ঠোঁটে খয়েরী কালার লিপস্টিক, অতীব ছোট্ট একটা গোলাকার কালো টিপ কপালের সামান্যটুকু জায়গা দখল করে রেখেছে। মেহমান আসায় আব্বার আদেশে নিচে নিয়ে আসা হলো তাকে। জড় পদার্থের মতোই একটা জায়গায় আঁটকে ছিল তার পা দুটো। মনে হচ্ছিল পেরেক গেঁথে লাগিয়ে দিয়েছে কেউ মেঝেতে। রোকেয়া অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেয়েকে ধরে এনে সোফায় বসিয়ে দিল। অধোমুখী নিশাতকে বলা হলো মুখশ্রী তোলে বসতে। কথামোতাবেক তাকাল সে, চমকে গেল। মস্তিষ্ক জোরেশোরেই বলল পাত্র রূপে বসে থাকা সামনের ছেলেটাকে চেনে সে। দেখেছিল এই গ্রামেই, প্রহরের এনগেজমেন্টের সময়টায়। ওই যে তাকে স্মরণিকা নিবাসের পথের কথা জিজ্ঞেস করেছিল, শেষে বা**জে,অদ্ভুত মন্তব্যও করতে ভোলে নি। এক দৃষ্টে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকল ও। হঠাৎ করে লাজলজ্জা বোধহয় ছেলেটা ভুলেই গিয়েছিল,সরাসরি রফিক আজমকে প্রস্তাব দিলেন,

” আংকেল,আমি কি আপনার মেয়ের সাথে আলাদা করে কথা বলতে পারি? ”

নিশাতের আব্বা চমৎকার হাসিতে মাখোমাখো হয়ে অনুমতি দিলেন,

” অবশ্যই। ”

মনে মনে তিনি একটু দ্বিধায় আছেন, নিশাত যদি আজেবাজে কিছু বলে ছেলেটাকে। তবে তিনি প্রহরের সাথে প্রেমের কথা নিয়ে বিয়েতে কোনো ভেজাল হবে এটা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। প্রেমের কাহিনীটুকুর হদিস মেয়ের হবু জামাই-ই দিয়েছে। ছেলেটা কয়েকটা ছবি নিয়ে একদিন উনার দোকানে হাজির হয়। দোকানের সম্মুখে,মাঝ বাজারে অকস্মাৎ গাড়ি থামতেই অনেক অনেক উৎসুক চোখ, জনতা তাকিয়ে দেখতে শুরু করে। দুই দিন আগের কথা, মধ্য দুপুর ছিল। কড়া রোদে ঝিমিয়ে পড়েছে দোকানিরা। অসময়ে গ্রামে নতুন মুখকে এগিয়ে আসতে দেখে কিছুটা বিচলিত হলেন তিনি। লম্বা,চওড়া,সুন্দর ছেলেটাকে উনার কাছে রাজপুত্রের থেকে কম মনে হলো না। আরো বেশি মুগ্ধ হলেন মোহনীয় কণ্ঠের সালাম শুনে। এত আদব, কায়দা পালন করে, হাসিমুখে দাঁড়ানো ছেলেটাকে তিনি অগ্রাহ্য করতে পারলেন না। সালামের জবাব দিতেই ছেলেটা স্পষ্ট গলায় নিজের পরিচয় দিল। চিনতে দেরি কিংবা সংশয় কোনোটাই হলো না উনার। স্বল্প সময়ে পরিচিত ছেলেটা কিছু ছবি দেখালো নিজের মোবাইলে। ক্যামেরায় বন্দী ছিল লাল,নীল,হলুদ ফেরিলাইটের আলোতে হাতে হাত ধরে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখে ভালোবাসা বিনিময় করা নিশাত এবং প্রহর। ঠিক সেই মুহূর্তে মেয়েকে গলা টি**পে হ**ত্যা করতে মনস্পৃহা জাগলেও দমে গেলেন। আদরের মেয়ের কি ক্ষতি করা যায়? বরঞ্চ উনি ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিলেন ভালোবাসা নামক গাছটাকে শেকড়সহ উপরে ফেলে দেওয়ার।
* * *

” চেনো তুমি আমাকে?”
নিশাত মেপে মেপে তিন হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে ঠাঁই। তেজী,সোনালি রোদের ভীষণ দুস্থিতি আজ। মধ্যাহ্নেই কুয়াশার রাজত্ব চারিধারে। পুকুরের অপর পাশ থেকে ধেয়ে এসে সিক্ত ভেজা হাওয়া নিশাতের শরীরে কাঁপুনি তুলল। ঠকঠক কাঁপতে শুরু করল সে। গায়ে কোনো সোয়েটার, চাদর কিছুই নেই। নিশাত জলের পানিতে শাড়ি পরিহিতা একজন নারীর অর্থ্যাৎ নিজের প্রতিবিম্ব দেখছে। ঠান্ডায়, অস্পষ্ট স্বরে উত্তর দিল,
” চিনি। আপনি একজন রাজনীতিবিদ এবং মডেল। ”
” নামটা জানো?”
” জানি,সমীরণ। ”
সমীরণ মৃদু হাসল। এক হাত দুরত্ব নিঃশেষ করে দিয়ে আরেকটু কাছে চলে আসে নিশাতের। নিশাত অবাক হলো। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল সে। সমীরণ থেমে গিয়ে শীতল গলায় বলল,
” একটু পরেই আমার বউ হবে তুমি। আমাকে পছন্দ হয়েছে তোমার?”
নিশাতের চরিত্রে নেই কারো সাথে ব**দ,খারাপ ব্যবহার করার অভদ্র অভ্যেস। যথাসম্ভব উচ্ছ্বসিত রাগটা দমিয়ে, কণ্ঠ খাদে নামিয়ে মনের কথাগুলো ব্যক্ত করে,

” আমি একজনকে ভালোবাসি। আপনাকে বিয়ে অথবা পছন্দ কোনোটাই সম্ভব না। আপনি প্লিজ চলে যান। ”

” কাকে ভালোবাসো? তোমার ফুপাতো ভাই,নেতাসাহেব প্রহরকে?”

নিশাত বিস্ফোরিত চক্ষুদ্বয় সোজা সমীরণের মুখের ওপর নিবদ্ধ করল। তনুজার ভাই হওয়ায় প্রহরের নামটা কোনোক্রমেই উচ্চারণ করতে চায় নি ও। কিন্তু এ মুহূর্তে তার মন বলছে সমীরণ একটা ধুরন্ধর চালাক ব্যক্তি। সবকিছু জেনেশুনেই এখানে পা বাড়িয়েছে। সমীরণ তার দিকে আরও কয়েক পা এগিয়ে এসে নিঃশ্বাসের কাছাকাছি উপস্থিত হলো। তপ্ত নিঃশ্বাস নিশাতের আরক্ত চেহারায় লেপ্টে যাচ্ছে সেকেন্ডে সেকেন্ডে, লম্বায় মানুষটা বেশি হবার দরুণ তার উত্তপ্ত নিশ্বাস আঁছড়ে পড়ছে বক্ষস্থলে।

নিশাতের গলা তরলশূণ্য,শুকিয়ে কাঠ। মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত পথিক মনে হচ্ছে তার নিজেকে। বুকে হাত দিয়ে পেছন দিকে ঠেলে দিতে চাইলে খপ করে মুঠোবন্দি করে ফেলে সমীরণ হাতটা। বাঁকা হেসে শুধালো,

” তোমার আমাকেই বিয়ে করতে হবে পুচকি। তোমার প্রহর ভাই, জান আসবে না তোমাকে রাজকুমার সেজে নিয়ে যেতে। তাই আমার সাথে পাল্লা নেবার সাহস দেখিয়ো না। ”

নিশাত বিশ্বাসের সাথে জবাব দিল,” প্রহর ভাই আসবে। ”

হো হো করে হেসে উঠল সমীরণ। পুকুরের পানিতে শব্দ হলো। হতে পারে মাছগুলো তার রাক্ষসের ন্যায় হাসিতে বিরক্ত হয়ে গভীরে চলে গিয়েছে।

” নেতাসাহেব আসবেন না। পার্টিতে দ্বন্দ্ব লেগেছে। ভোটের দুই দিন আগে মা**রামা*রি, বুঝোই তো? তিনি থামাতে ছুটে গিয়েছেন। কীভাবে আসবে? আর মিনিট কয়েক পরই বিয়ে। যতক্ষণে তোমার প্রহর ভাই আসবে ততক্ষণে তুমি আমার বউ হয়ে যাবে। ”

পুরো পৃথিবী দুলে উঠল নিশাতের। শরীরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভয়ের হানা। আঁখি উপচে জল নেমে এসেছে। ভীষণ বড় বড় অশ্রু ফোঁটা। সমীরণ কৌতুকপূর্ণ স্বরে বলে,

” বাহ! তোমার চোখের জল ভীষণ সুন্দর। কেঁদো না, আমি তোমাকে তোমার প্রহর ভাইয়ের থেকেও বেশি আদর করব। ”

নিশাত রাগে,দুঃখে,ঘৃণা**য়,ক্ষোভে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিল, ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল সমীরণকে। সমীরণ মজা পেল এমন ভঙ্গিতে মিটিমিটি হেসে এগিয়ে এসে ওর কোমর আঁকড়ে ধরে ফিসফিস করে বলল,

” শুনো মেয়ে, হার কোনো মানুষেরই পছন্দ না। রাজনৈতিক প্লাটফর্মে প্রহর এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমার সবসময়ই তার শক্ত,দাপুটে মনের আড়ালে যে দুর্বলতা লুকিয়ে আছে সেটা দরকার ছিল। সে তোমাকে খুব যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু আমি ঠিকই জানলাম তার পৃথিবী উজাড় হয়ে যাবে তোমাকে হারালে। তার পৃথিবীকেই যদি আমি আমার দখলে নিয়ে নিই,সে বাঁচবে কেমন করে? তোমাকে আমি সারাজীবন নিজের করে রাখব,শুধুমাত্র তার আত্মার মৃ**ত্যু ঘটাতে। ”

#চলবে,,,
( ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)