প্রেমের তাজমহল_২ পর্ব-২২+২৩+২৪

0
25

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব২২
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

রাতের আকাশে থালার ন্যায় পূর্ণ চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় আলোকিত চারপাশ। রাতের সকল আঁধার কে নিমিষেই দূরে ঠেলে দিয়েছে চাঁদের ঝলমলে আলো। মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। সামনাসামনি বসে আছে নব দম্পতি। দুজনের মাঝেই নীরবতা। একজন লজ্জায় ও সংকোচে চুপ মেরে আছে তো অপর জন তার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটাকে মন ভরে দেখার মাঝে ডুবে আছে। অর্ণবের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওর মায়াবতী একান্ত ওর। আনায়া অর্ণবকে এক ঘরে রেখে গিয়েছে মিনিট দশেক হবে। আনায়া ‘কবুল’ বলার পর সেই যে মুখ নামিয়েছে এখনো মুখ তোলেনি। অর্ষা আর মিহি এসে দুজনকে আনায়ার ঘরে দিয়ে গেছে। যেন দুজন আলাদা করে কথা বলতে পারে। হুট্ করেই তো বিয়ে টা হয়ে গেল। যেটার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না। আনায়া মাথা নিচু করে বসে আছে। অর্ণব আনায়ার থুতনিতে হাত রেখে মুখ ওপরে তুলল। আনায়া চোখ তুলে চাইলো অর্ণবের পানে। মানুষটার চোখে এক সমুদ্র নেশা দেখতে পাচ্ছে ও। দ্রুতই চোখ নামিয়ে নিল। ওই চোখে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে আনায়ার ধ্বংস নিশ্চিত। সমুদ্রের ন্যায় গভীর অর্ণবের চোখ জোড়া। আনায়া তাকালে নিজেকে হারিয়ে ফেলবে নিমিষেই। অর্ণব এগিয়ে গেল আনায়ার দিকে। আলতো করে চুমু এঁকে দিলো নিজের সদ্য বিবাহিতা অর্ধাঙ্গিনীর ললাটে। আনায়া চোখ বুজে অর্ণবের স্পর্শ অনুভব করলো। অর্ণব মৃদু স্বরে বলল,
“আমার বউ”

আনায়ার মনের মাঝে অদ্ভুত অনুভূতি হলো। কেমন সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে। বারবার কানে শব্দ দুটো প্রতিধ্বনি হতে লাগলো। কতটা ভালোবাসা মিশানো শব্দ দুটিতে। দুজনের চোখে চোখ পড়লো। না চাইতেও আনায়ার দৃষ্টি আটকে গেল নেশালো সেই চোখ জোড়ায়। দুজনেই যেন পলক ফেলতে ভুলে গেছে। চোখে চোখে বিনিময় হচ্ছে হাজারো না বলা কথা। এর মাঝেই দরজায় ঠক ঠক শব্দ হলো। দুজনের ধ্যান ভঙ্গ হলো। আনায়া একবার অর্ণবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কে?”

ওপাশ থেকে মিহির কণ্ঠ ভেসে এলো,
“আপু তোমাদের নিচে ডাকছে”

“ঠিক আছে তুই যা আমরা আসছি”

মিহি চলে গেল। আনায়া মিহি স্বরে বলল,
“চলুন”

আনায়া উঠে দাঁড়ালো। শাড়ি ঠিক করছে। কুচি গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। অর্ণব কোনো কথা না বলে হাঁটু মুড়ে নিচে বসে পড়লো। আলতো হাতে কুচি গুলো ঠিক করে দিলো। অর্ণবের এই ছোটো ছোটো কেয়ার গুলো আনায়ার বড্ড ভালো লাগে। এইযে মানুষটাকে মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই সে বুঝে যায়। প্রতি টা মেয়েই এমন একজন জীবন সঙ্গী চায়। যে তাঁদের মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই বুঝে যাবে। আনায়ার নিজেকে ভাগ্যবতী অনুভব হলো। অর্ণব কুচি ঠিক করে উঠে দাঁড়ালো। আনায়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে সবাই। যে যার মতো গল্প করছে। আনায়া অর্ণব কে নামতে দেখে মিহি বলে উঠলো,
“ওইতো আপু আর জিজু এসে গেছে”

সবার দৃষ্টি ওদের ওপর এসে পড়লো। আনায়া কিছুটা বিব্রত বোধ করলো। অর্ণবের হাতের ভাঁজ থেকে হাত ছাড়াতে চাইলো। কিন্তু এই বজ্জাত লোক ছাড়লে তো! আনায়া হাত মোচড়া মুচড়ি করায় অর্ণব হাত আরো শক্ত করে ধরলো। আনায়া অসহায় দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকালো। অর্ণব সেটা পাত্তা দিলে তো! সে দিব্বি আছে নিজের মুডে। সবাই খেতে বসেছে। আনায়া অর্ণব পাশাপাশি বসে। আশালতা বেগম এক মাত্র মেয়ের জামাইয়ের আদর যত্নে কোনো ত্রুটি রাখছে না। একের পর এক খাবার তুলে দিচ্ছে প্লেটে। অর্ণবের অবস্থা নাজেহাল। বেচারা এক বেলায় শশুর বাড়ির খাবার নামক অত্যাচারে ক্লান্ত। এক দিনে খাইয়েই ওকে মোটা বানিয়ে দিবে। অর্ণব আশালতা বেগম কে মানা করছে।
“আন্টি আর দিয়েন না। আমি এতটা খেতে পারবো না। পরে দেখা যাবে খাবার নষ্ট হবে”

তবে উনি শুনলে তো! আশালতা বেগম বললেন,
“আস্তে আস্তে খাও”

পাশ থেকে আবির বলল,
“জামাই আদর করছে আদর খা এতো বেশি কথা বলছিস কেন? আমার কপালে যে কবে তোর মতো জামাই আদর জুটবে আল্লাহ মালুম”

আবির সামনে বসা অহনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথা শেষের কথা গুলো বলল। অহনা রাগী চোখে তাকালো আবিরের দিকে। আবির শুকনো ঢোক গিললো। ওর খেয়ালই ছিলো না এখানে অহনাও আছে। তাহলে ভুলেও এ কথা বলতো না। অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তুই শা*লা সিঙ্গেলই ম*রবি। বন্ধু হয়ে বন্ধুকে সাপোর্ট করার বদলে বাঁশ দিচ্ছিস?”

আবির বিড়বিড় করে বলল,
“আমি সিঙ্গেল ম*রলে তোর বোন বিয়ের আগেই বিধবা হবে”

“কি বললি?”

“কিছু না। তুই চুপচাপ খা”

খাওয়ার সময় আর কোনো কথা হলো না। খাওয়া শেষে সবাই বসলো ড্রয়িং রুমে। সবাই টুক টাক কথা বলছে। ইমতিয়াজ সাহেব বললেন,
“ভাই সাহেব আমরা চাচ্ছিলাম বউমা কে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি?”

“দেখুন ভাই আমার এক মাত্র আদরের মেয়ে হুট্ করে এভাবে বিয়ে হয়ে যাবে কখনো ভাবিনি। আত্মীয়-স্বজন কেউ বিয়ের বেপারে জানে না। এই অবস্থায় মেয়েটাকে কিভাবে তুলে দেই বলেন?”

ইমতিয়াজ সাহেব কিছুক্ষন ভাবলেন। অতঃপর বললেন,
“তাহলে আগামী শুক্রবার আয়োজন করে ওদের চার হাত এক করে দেই। কি বলেন?”

“হ্যাঁ, এটা করা যেতেই পারে”

দুই পরিবার বসে বিয়ের আলোচনা করছে। কি কি আয়োজন করবে ইত্যাদি বিষয়ে। আনায়ার রুমে গল্পের আসর বসেছে। নীলিমা, অহনা, অর্ষা, মিহি সবাই এসে বসেছে। একেক জন আনায়াকে এটা ওটা বলে লজ্জা দিচ্ছে। আনায়া বেচারি লজ্জায় গাল লাল করে বসে আছে। বিশেষ করে নীলিমা আর অর্ষা ওকে বেশি লজ্জা দিচ্ছে। অহনা বলল,
“এই তোমরা আমার ভাবিকে এতো লজ্জা দিও না। দেখছো না বেচারি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে”

কে শোনে কার কথা? ওরা থামলে তবে তো! এর মাঝে আগমন ঘটলো অর্ণবের। অর্ণবকে দেখে ওদের ঠোঁটের কোণের মুচকি হাসি আরো বৃদ্ধি হলো। নীলিমা দুস্টুমি করে বলল,
“কি বর মশাই বউয়ের কাছে চলে এসেছেন? বউ ছাড়া মন টিকছে না বুঝি?”

“কিভাবে টিকবে বলুন ভাবি? দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র সদ্য বিয়ে করা বউ আমার তাকে ছাড়া মন কি টিকে?”

“আহারে, বেচারা বর মশাই”

ওদের এরূপ বেলাজ মার্কা কথা বার্তায় আনায়া লজ্জায় লাল হচ্ছে। নীলিমা সবাইকে বলল,
“এই চলো সবাই। নব দম্পতিকে একটু প্রেম করার সময় দেও। নাহয় বেচারা এমপি মশাই আমাদের নামে কেস ঠুকে দিবে”

অর্ষা তাল দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ চলো চলো”

ওরা চলে যেতে নিবে পিছন থেকে অর্ণব বলল,
“অহনা তোকে নিচে ডাকছে”

অর্ণব আনায়াকে রেখে সবাই চলে গেল। আনায়া মুখ নিচু করে বসে আছে। এই অসভ্য এমপি আবার কি বেফাঁস কথা বলবে কে জানে? অর্ণব এগিয়ে এলো আনায়ার দিকে। এক টানে আনায়াকে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। হুট্ করে হাতে টান পড়ায় আনায়া নিজের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য অর্ণবের কাঁধ আঁকড়ে ধরলো। অর্ণব আনায়ার কোমরে হাত রেখে আরেকটু কাছে নিয়ে এলো। অতঃপর ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
“বলেছিলে না আমার মতো অ*সভ্য এমপিকে বিয়ে করবে না এখন অনুভূতি কেমন মিসেস?”

আনায়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“বজ্জাত এমপি কপালে থাকলে আর কি করার আছে বলুন? সবাই আমার পোড়া কপাল”

আনায়া আফসোসের সুরে কথা গুলো বলল। বেচারিকে দেখে মনে হচ্ছে তার আফসোসের শেষ নেই।
“পোড়া কপাল না, বলো সৌভাগ্য”

আনায়া কথার পৃষ্ঠে কিছু বলল না। সত্যি টা তো ও জানে। অর্ণব আনায়ার গালে হাত রেখে আদুরে ভঙ্গিতে বলল,
“নিজের খেয়াল রাখবে, সাবধানে থেকো। এই কয়েক দিন ভার্সিটি যাওয়ার দরকার নেই। আর যদি একান্ত বেশি দরকার পড়ে তাহলে আমায় বলবে আমি দিয়ে আসবো”

আনায়া মাথা নেড়ে সায় জানালো। অর্ণব এগিয়ে আলতো করে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো আনায়ার কপালে। সরে এসে বলল,
“আসি”

অর্ণবের সাথে আনায়াও নিচে নামলো। অর্ণবদের পরিবারের সবাই চলে যাবে। সবাই বিদায় নিচ্ছে আনায়াদের কাছ থেকে। এমন সময় অহনা বায়না ধরলো সে আজ যাবে না। এখানেই থাকবে, আনায়ার সাথে। মেহনাজ বেগম বললেন,
“কিন্তু কাল তোমার কলেজ আছে তো”

“একদিন কলেজ না গেলে কিছু হবে না আম্মু”

“পরে এক সময় এসে থাকবে। আজ চলো, কলেজ মিস দেওয়ার দরকার নেই”

অহনা আনায়ার পাশে দাঁড়িয়ে ওকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ভাবি তুমি কিছু বলো না। আমি আজ যাবো না”

“আন্টি ও আজ এখানে থাক”

নতুন বউমার আবদার ফেললেন না মেহনাজ বেগম। অর্ণব পাশ থেকে বলল,
“ঠিক আছে অহনা থাক। আমি এসে কাল ওকে নিয়ে যাবো”

অর্ণবরা চলে যাচ্ছে। ওদের এগিয়ে দিতে সবাই এসেছে। সাথে আনায়া ও এসেছে। অর্ণব সবার দৃষ্টির আড়ালে টুপ্ করে চোখ টিপ দিলো। অতঃপর হাসতে হাসতে চলে গেল। আনায়া বিড়বিড় করে বলল,
“অ*সভ্য পুরুষ”

#চলবে?

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব২৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

❝অক্টোবরের বিষন্ন রাতের মৃদু ঠান্ডা বাতাসটা মনে করিয়ে দেয়, এক জীবনে মানুষের সবকিছু পেতে হয় না❞

অক্টোবরের শেষের দিক। গভীর রাত্রি। বইছে মৃদু মন্দ ঠান্ডা বাতাস। হালকা শীত শীত অনুভূত হচ্ছে। অর্ষা বিষন্ন মনে পা দুলিয়ে বসে আছে আনায়াদের ছাদের রেলিংয়ের ওপর। চোখের চাহনি মলিন। অর্ষার চোখ দিয়ে ঝরছে অঝোর ধারায় অশ্রু। অর্ষা তবুও কেমন অনুভূতি শুন্যের মতো এক ধ্যানে বসে আছে। ওকে দেখে মনে হবে ওকে বোধ হয় জিন ভুতে ধরেছে। অর্ষার বুক ভারী হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে তবে সে সুযোগ যে নেই। তাই নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।

একটু আগের ঘটনা,
অর্ণবরা চলে গেলে আনায়া, অর্ষা, মিহি, নীলিমা, অহনা সবাই মিলে ফের আড্ডায় বসেছে। ওদের গল্প আজ শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না। প্রথম প্রথম অহনা একটু লজ্জা পেলেও এখন মিশে গেছে সবার সাথে। মন খুলে আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডার মাঝে নীলিমার ডাক পড়লো। নাদিরা কান্না করছে। আয়ান অফিসের কিছু কাজ করছে। তাই নীলিমা মেয়েকে ঘুম পাড়াতে চলে গেল। আনায়ার শরীর টাও ক্লান্ত লাগছে। আজকে পুরো দিনে ওর ওপর দিয়ে যেই ঝড় ঝাপ্টা গেছে ক্লান্তি আসাটা স্বাভাবিক। আনায়া হাই তুলতে তুলতে বলল,
“তোরাও ঘুমাতে যা, আমিও ঘুমাবো”

আনায়া আর অহনা ওর রুমে ঘুমাবে। অর্ষা মিহির সাথে ঘুমাবে। এমনি সময় অর্ষা এ বাড়িতে থাকলে আনায়ার সাথেই ঘুমায় তবে আজকে অহনা আবদার করছে সে তার ভাবির সাথে ঘুমাবে তাই অর্ষা মিহির সাথে ঘুমাবে। ওদের ঘুমাতে যাওয়ার কথা বলে আনায়া ওয়াশরুমে গেল। এমন সময় আনায়ার ফোন বেজে উঠলো। অর্ষা আর মিহি যেতে গিয়েও ফিরে এলো। এতো রাতে নিশ্চই অর্ণব ফোন দিয়েছে। ওদের মাথায় দুস্টু বুদ্ধি ভর করলো। মিহি ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে অর্ণব মিষ্টি কণ্ঠে সুধালো,
“মিসেস অর্ণব কি করছো?”

“আপনার মিসেস বসে বসে আপনার কথা ভাবছে। সে আপনাকে বড্ড মিস করছে”

অর্ণব উৎফুল্ল মনে সুধালো,
“তাই! তাহলে চলে আসি?”

মিহি থত মত খেয়ে গেল। এখন অর্ণব এলে কিভাবে সামলাবে?
“আসা লাগবে না। এমনি ঠিক আছে”

অর্ণব হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বলল,
“এমপি সাহেবের শা*লিকারা যে তাকে এতটা মিস করে সেটা তো জানতাম না। তা শা*লিকা কি ভেবেছো আমি বুঝতে পারবো না? এমপি কি এমনি এমনি হয়েছি বলো?”

মিহি ধরা পরে যাওয়ায় জিভে কামড় দিলো। পাশ থেকে অর্ষা বলল,
“ধরা পড়ে গেলাম”

“তোমরা কি ভেবেছো আমি বুঝতে পারবো না? তোমরা বলে এতো মিষ্টি করে কথা বলছো। তোমাদের বোন হলে মিষ্টি মিষ্টি কথার বদলে এতক্ষনে কয়বার ঝাড়ি খাওয়া হয়ে যেত আমার”

পাশ থেকে অহনা বলল,
“আমি কিন্তু ভাবিকে বলে দিবো ভাইয়া যা যা বলেছো”

“তুই আমার বোন না শত্রু?”

অহনা দাঁত কেলিয়ে বলল,
“শত্রু”

“এমন করে না বনু। তোর ভাইয়ের সংসার শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। এই জীবনে আর তোর ফুপ্পি ডাক শোনা হবে না। একটু দয়া কর তোর এই ভাইটার ওপর”

“ঠিক আছে যাও বলবো না। কিন্তু তোমার জন্য না আমার কিউট ভাবির জন্য”

অর্ণব জোর বাঁচা বেঁচে গেল। জিজ্ঞেস করলো,
“আনায়া কোথায়?”

মিহি জবাব দিলো,
“আপনার মিসেস ওয়াশরুমে”

“ভালোই হয়েছে। এই সুযোগে আমার কিউট কিউট শা*লিকাদের সাথে একটু কথা বলে নেই”

এর মাঝে আনায়া বের হলো। ওরা ফোনে কথা বলতে থাকায় আনায়াকে খেয়াল করেনি। মিহি বলল,
“হয়েছে জিজু আর ঢং করতে হবে না। আপু সামনে থাকলে আমাদের তো চিনেনই না। মনে হয় আমরা মঙ্গল গ্রহের প্রাণী”

“তোমরা মঙ্গল গ্রহের প্রাণী হবে কেন তোমরা আমার কিউট কিউট শা*লীকা”

আনায়া বিছানায় এসে বসলো। ওকে দেখে সবাই ওর দিকে তাকালো। মিহি হেহে করে হেসে বলল,
“আপু জিজু ফোন দিয়েছে নেও কথা বলো”

“যাদের সাথে কথা বলতে ফোন দিয়েছে তাঁদের সাথেই বলতে বল। আমি তো তাকে তার শা*লিকাদের সাথে কথা বলতে দেই না। তাই এখন যতো পারে বলতে বল। আমি কিছু বলবো না”

অর্ণব শুকনো ঢোক গিললো। কথার ধরণেই বোঝা যাচ্ছে বউ তার খেপেছে। খেপলে খেপুক অর্ণব ভয় পায় নাকি তাকে? বাচ্চা একটা মেয়ে। অর্ণব মনে মনে নিজেই নিজেক প্রশ্ন করলো। সত্যি বলতে সব পুরুষই তাঁদের বউকে ভয় পায়।
“তোদের কথা শেষ হলে লাইট অফ করে দিয়ে যাস। আমি ঘুমালাম”

আনায়া চাদর গাঁয়ে টেনে উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো। মিহি কলে থাকা অর্ণব কে বলল,
“জিজু আপনার বউ খেপেছে। এখন রাখি। নাহয় আমাদের কপালেও দুঃখ আছে”

মিহি কল কেটে দিলো। অতঃপর মিহি আর অর্ষা চলে গেল ঘুমাতে। অহনা লাইট নিভিয়ে আনায়ার পাশে শুয়ে পড়লো।

অর্ষা ঘুমিয়ে আছে। হটাৎ করে ওর ঘুম ভেঙ্গে গেছে। দুম করে উঠে বসলো। কেমন দম বন্ধ দম বন্ধ অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে বাজে স্বপ্ন দেখেছে। গাঁ বেয়ে ঘাম ঝরছে। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেছে। গলা শুকিয়ে আসছে। অর্ষার প্রচুর পানির পিপাসা পেয়েছে। পাশের টেবিলে জগ রাখা। অর্ষা নেমে জগ হাতে নিলে। খেয়াল করলো জগে পানি নেই। অগত্যা ওকে নিচে নামতে হবে পানি খেতে। আনায়াদের বাড়িতে প্রায় ওর যাতায়াত থাকায় কোথায় কি আছে সবটাই অর্ষার জানা। পানি খেয়ে অর্ষা ফিরে এলো। আনায়ার রুমের পরের রুমটা মিহির। আনায়ার রুম ডিঙিয়ে যেতে নিলে চোখ পড়লো আনায়ার রুমের দরজায়। দরজার হাট করে খোলা। ওরা চলে আসার পর অহনা তো দরজা আটকেই ঘুমিয়েছিলো। তবে! অর্ষা এগিয়ে গিয়ে দেখলো বিছানার এক পাশে গায়ে চাদর জড়িয়ে একজন শুয়ে আছে। অর্ষা ওয়াশরুমে উঁকি দিলো। না সেখানেও কেউ নেই। তবে কি আনায়া অর্ণবের সাথে প্রেম করতে ছাদে গিয়েছে? অর্ষা মনে মনে দুস্টু বুদ্ধি আটলো। আজকে দুজন কে কোনো মতেই শান্তিতে প্রেম করতে দিবে না। অর্ষা এসব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠছিলো। ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে আনায়াকে খুঁজছে। আচমকা অর্ষার চোখ আটকালো একটু দূরে ছাদের রেলিংয়ে বসা আবির আর অহনার দিকে। অহনা আবিরের কাঁধে মাথা রেখে আছে। অহনা কি যেন বলছে আবির মন দিয়ে ওর বক বক শুনছে।আবিরের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মুচকি হাসি। অর্ষার বুঝতে দেরি হলো না ওদের মাঝে কি সম্পর্ক। অর্ষা সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ওর পা যেন মাটির সাথে চিপকে গেছে। ওর এতদিনের ভালোবাসার মানুষটা কিনা অন্য কাউকে ভালোবাসে। এই জন্যই কি আবিরের ওর প্রতি এতো অবহেলা? আবির অহনাকে ভালোবাসে? কতদিনের সম্পর্কে ওদের? অর্ষা যে এতো দিন ধরে ভালোবাসে সেটা কি ওর আবির ভাইয়ের চোখে পরে না। আবির হাত বাড়িয়ে অহনার সামনে আসা চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। দুজনের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে হাসি। আবির অহনা রেলিং থেকে নামলো। আবির অহনার গালে হাত রেখে আদুরে ভঙ্গীতে বলল,
“এখন অনেক রাত হয়েছে। ঘুমাতে যাও”

অহনা হুট্ করে আবিরকে জড়িয়ে ধরলো। হুট্ করে এভাবে জড়িয়ে ধরায় আবির ভরকে গেল। তবে মুহূর্তের মাঝে নিজেকে সামলে নিলো। নিজেও অহনাকে আবেশে জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ দুজনের মাঝে নীরবতা। অহনা মুখ তুলে বলল,
“ভালোবাসি”

আবির অহনার সামনে আসা চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল,
“ভালোবাসি প্রিয়তমা”

দুজনের মুখেই লেগে আছে মিষ্টি হাসি। ওপর দিকে অর্ষার বুকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। প্রণয়ের দহন যাকে বলে। অর্ষা নিজেকে সামলাতে পারছে না। ওর সমস্ত দুনিয়া কেমন ঘুরছে। আবির অহনা হাতে হাত রেখে ছাদের দরজার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে অর্ষা এক পাশে লুকিয়ে পড়লো। আবির অহনা নেমে চলে গেল। অর্ষার পা আর চলছে না। সকল অনুভূতি মরে গেছে। অনুভূতি শুন্যের ন্যায় এগিয়ে গেল রেলিংয়ের দিকে। উঠে বসলো সেখানে। এক মুহূর্তের জন্য ওর মনে হলো এই পৃথিবী মিথ্যা, মিথ্যা সকল ভালোবাসা, সকল অঙ্গীকার। অর্ষা কান্না করছে নিঃশব্দে। কান্না করতে করতে বলল,
“কেন আমায় ভালোবাসলেন না আবির ভাই? আমায় ভালোবাসলে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত কি? দুনিয়া উল্টো যেত নাকি সূর্য পশ্চিম দিকে উঠতো, নাকি সমুদ্রের ঢেউ উল্টো দিকে বইতে শুরু করতো? এমন কিছুই হতো না। তবুও কেন আপনি আমায় ভালোবাসলেন না? আপনি কেন আমার চোখে চোখ রাখলেন না? আমার হৃদয়ে থাকা আপনার জন্য ভালোবাসা গুলো দেখলেন না? কেন? আবির ভাই কেন?”

কথা গুলো বলতে বলতে অর্ষা শব্দ করে কেঁদে ফেলল। ওর কান্না থামার নাম নেই। অবিরাম কেঁদেই চলেছে। কাঁদতে কাঁদততে ওর অবস্থা নাজেহাল। দম আটকে আসছে। নিজেকে পা*গল পা*গল লাগছে। সত্যি বলতে অর্ষা তো পা*গলই। ওর আবির ভাইয়ের প্রেমে পা*গল। এতদিন যাকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবাসলো শেষে কিনা তাকে অন্য রমণীর সাথে দেখতে হবে সেটা অর্ষা এ জীবনেও ভাবেনি। ওর মনে হচ্ছে ওর দুনিয়াই কেমন পাল্টে গেছে। নিজেকে উন্মাদ উন্মাদ লাগছে। নিজেকে ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে। অর্ষা পাগলের মতো ব্যবহার করছে। কোনো মতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। বিড়বিড় করে বলল,
❝খোদা তুমি না বানালে রূপবতী, না বানালে গুণবতী, আর না বানালে ভাগ্যবতী❞

#চলবে?

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব২৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

সকালের মিষ্টি আলো জানালার পর্দা ভেদ করে চোখে পড়তেই আনায়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। নিজের ওপর কারো বাহুর অস্তিত্ব অনুভব করলো। পাশ ফিরে দেখলো অহনা ওর গাঁয়ের ওপর হাত পা তুলে দিয়ে শুয়ে আছে। অহনা কে দেখতে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। যদিও মেয়েটা বাচ্চাই তো। সবে মাত্র ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। আনায়ার খুবই শখ ছিলো ওর কিউট একটা ছোটো বোন থাকবে। যার সাথে ম্যাচিং করে ও ড্রেস পড়বে। দুজনের ম্যাচিং ম্যাচিং হবে সব কিছু। কিন্তু পোড়া কপাল ওর কোনো ছোটো ভাই বোন নেই। ও নিজেই দুই ভাইয়ের আদরের। মিহি ছোটো হলেও মিহি নিজের পছন্দে পড়তে বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করে। আনায়া অহনার দিকে তাকিয়ে ভাবলো এবার বুঝি ওর শখ পূরণ হবে। অহনা গভীর ঘুমে বিভোর। মেয়েটার বেবি হেয়ার গুলো মুখে ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আনায়া আলতো হাতে সেগুলো সরিয়ে দিলো। অতঃপর অহনার গাল টেনে আদর করে দিলো। নিজের কাজে আনায়া নিজেই হেসে উঠলো। অহনা মেয়েটা একেবারে কিউটের ডিব্বা যাকে বলে। আনায়া গাঁয়ের ওপর থেকে অহনার হাত, পা সরিয়ে ওর গাঁয়ে চাদর টেনে দিলো। বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেল।

সবাই সকালের নাস্তা করতে বসেছে। আবির, আয়ান, আশরাফ সাহেব আগেই খেয়ে অফিসে চলে গেছেন। টেবিলে মিহি, অহনা, নীলিমা, আনায়া। আনায়া খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাবি অর্ষা কোথায়? ওকে দেখছি না যে”

“কাল রাতের পর ওকে আমি দেখিনি”

পাশ থেকে মিহি বলল,
“সকালে ঘুম থেকে উঠে অর্ষা আপুকে আমার পাশে পাইনি। উঠে দেখি বিছানার অপর পাশ ফাঁকা। আমি ভেবেছি অর্ষা আপু হয়তো উঠে নিচে এসেছে”

আনায়া কপাল কুচকে বলল,
“তাহলে মেয়েটা গেল কই?”

নীলিমা বলল,
“হয়তো বাড়ি চলে গেছে”

আনায়া আনমনে বলে উঠলো,
“আমাকে না বলেই চলে গেল!”

“আরে এতো ভেবো না। ওর যখন ইচ্ছে হবে হুট্ করে চলে আসবে দেখো”

আনায়া ভাবনা বাদ দিয়ে খাবার খাওয়ায় মন দিলো। খাওয়া শেষে মিহি, আনায়া, অহনা গল্প করতে বসলো। নীলিমা চলে গেল রান্না ঘরে।

বিকেলে অর্ণব এসেছে অহনাকে নিতে। ড্রয়িং রুমে বসে আবিরের সাথে কথা বলছে। নীলিমা নাস্তা এনে দিলো। খানিক সময় বাদে অহনা নেমে এলো। আবির তাকিয়ে আছে প্রিয়তমার পানে। কিউট বাচ্চা একটা মেয়ে। পৃথিবীতে এতো এতো মেয়ে থাকতে শেষে কিনা ও এই বাচ্চা মেয়েটার প্রেমে পড়লো? আবিরের ভাবনার মাঝে অহনা এসে অর্ণবের পাশে বসে বলল,
“ভাইয়া আমি এসে গেছি। চলো”

অর্ণব সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই একটু বস। আমি আবিরের সাথে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছি। কথা শেষ হলে যাবো”

অহনা চুপচাপ বসে পড়লো। অর্ণব কথা বলছে আর বারবার আড়চোখে সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু যার দর্শন পাওয়ার জন্য উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে সে আশেপাশেও নেই। অর্ণব অহনাকে বলল,
“তোর ভাবিকে ডেকে নিয়ে আয়। বলবি জরুরি কথা আছে”

অহনা চলে গেল। আবির জিজ্ঞেস করলো,
“আবার ঝগড়া করেছিস দুজন?”

“ঝগড়া করার অপশন রাখে তোর বোন? কিছু বলার আগেই তো রেগে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে”

“এই মোটেও আমার বোনের দোষ দিবি না। তুই কিছু না করলে আমার বোন খামোখা রাগ দেখানোর মেয়ে না। সত্যি করে বল কি অকাম কুকাম করেছিস? ”

অর্ণব ধুম করে আবিরের পিঠে ঘুসি দিলো। ফুসে উঠে বলল,
“তোর আমাকে দেখে মনে হয় আমার চরিত্র খারাপ?”

আবির পিঠ ডলতে ডলতে বলল,,
“তেমন টা না। কিন্তু তুই যদি কিছু না করিস তাহলে বনু রাগ করবে কেন?”

অর্ণব হতাশ কণ্ঠে বলল,
“শোন তবে কাহিনী….”

অর্ণব আবিরকে পুরো ঘটনা খুলে বলল। আবিরও ওর সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
“ভাই মেয়ে মানুষ মানেই প্যারা। একটু থেকে একটু হলেই গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। এদিকে আমাদের জান যায় তাঁদের মানাতে মানাতে”

“ঠিক বলেছিস”

ওদের কথার মাঝে অহনা নেমে এলো। অহনাকে একা নেমে আসতে দেখে অর্ণব শুধলো,
“আসেনি?”

“না, আসবে না বলেছে”

“বলেছিস জরুরি কথা আছে?”

“হ্যাঁ। ভাবি বলেছে তোমার কিউট কিউট শা*লিকাদের বলতে। ভাবি তাঁদের থেকে শুনে নিবে”

অর্ণব হতাশ, পুরাই হতাশ। এই মেযেকে নিয়ে যে ও যাবে কোথায়? কিছু বলার আগেই গাল ফুলায়। অর্ণব করুণ চোখে আবিরের দিকে তাকালো। এর মানে, “ভাই তুই একমাত্র ভরসা”। আবির ডোন্ট কেয়ার ভঙ্গি করে বলল,
“আমার কিছুই করার নেই। তোর বউ তুই সামলা”

নীলিমা আশালতা বেগম রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। আশালতা বেগম বললেন,
“এখনই চলে যাবে বাবা?”

অর্ণব বিনম্র কণ্ঠে বলল,
“জি আন্টি”

“থেকে গেলেও পারো”

“অন্য কোনো দিন এসে থাকবো। আজকে আসি”

অর্ণব অহনা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। সিঁড়ির ওপর থেকে উঁকি দিয়ে আনায়া এতক্ষন সবই দেখছিলো। ইচ্ছে করেই অর্ণবের সামনে যায়নি। যাবেই বা কেন? অভিমান হয়েছে ওর। তবে অর্ণবের হতাশ মুখটা দেখে আনায়া মিটিমিটি হাসছিলো। আরো করো বউকে নিয়ে মজা! আনায়া হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেল।
——

সারাদিন বাসায় বসে মা আর ভাবির সাথে রান্না ঘরে কেটেছে আনায়ার। আশালতা বেগম মেয়েকে ধরে ধরে রান্না শিখাচ্ছেন। দুদিন পড়ে মেয়ে তার শশুর বাড়ি যাবে। সেখানে রান্না বান্না কিছু না পারলে তার নাক কাঁটা যাবে। যদিও মেহনাজ বেগম কুচুটে শাশুড়িদের মতো না তবুও মেয়েদের সব কাজ জানা থাকা ভালো। পুরো একটা দিন রান্না ঘরে কাটিয়ে আনায়ার বেহাল অবস্থা। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। রুমে এসে কোনোদিকে না তাকিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ছুটলো। এখন গোসল না করলেই নয়। আনায়া বেরিয়ে চুল মুছছে এমন সময় ফোন হাতে নীলিমা রুমে ঢুকলো।
“তাড়াতাড়ি রেডি হও”

আনায়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কেন? কোথাও যাওয়ার আছে? আমি যেতে পারবো না। আমার ক্লান্ত লাগছে”

“অর্ণবদের বাড়ি থেকে ফোন এসেছে একটু পর অর্ণব আসবে আমাদের শপিংয়ের জন্য নিতে। বিয়ের তো বেশি দিন দেরি নেই। হাতে গোনা ৫ দিন। আজই সব কেনা কাটা করতে হবে”

আনায়া ধপাস করে বিছানায় বসে বলল,
“আমি যাবো না। তোমরা যাও”

“তোমার জিনিস কে কিনবে?”

“তুমি পছন্দ করে নিয়ে এসো তাহলেই হবে”

“আমি বাবা পারবো না। ওঠো, উঠে রেডি হও”

অগত্যা আনায়াকে উঠতেই হলো। একসেট কাপড় নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে গেল। অর্ণব বাড়ির সামনে এসে হর্ন দিলে সবাই একে একে নেমে পড়লো। নীলিমা, মিহি , আশালতা বেগম পিছনে বসেছেন। আনায়া বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি ড্রাইভ করছে অর্ণব। আনায়া অর্ণবের পাশে বসবে না তাই বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। নীলিমা বলল,
“আনায়া উঠছো না কেন? তাড়াতাড়ি ওঠো আমাদের দেরি হয়ে যাবে”

আনায়া মুখ ফুলিয়ে উঠে বসলো। একবারের জন্যও অর্ণবের দিকে তাকালো না। তাকাবে না তার দিকে। পুরো রাস্তা নীলিমা আর মিহি বক বক করছিলো। আনায়া একটা কথাও বলেনি। শপিং মলের সামনে গাড়ি থামতেই আনায়া সবার আগে নেমে পড়লো। অর্ণবের পরিবার আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আনায়া নেমে হাসি মুখে তাঁদের সাথে কুশল বিনিময় করলো। অতঃপর সবাই মিলে শপিং মলের ভিতরে ঢুকল। যে যার মতো কেনা কাটা করছে। আনায়া বিভিন্ন দোকান ঘুরছে কিন্তু ওর কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। শাড়ি, লেহেঙ্গা কিছুই না। আনায়া মুখ বেজার করে মিহির হাত ধরে আনমনে ঘুরছে। হটাৎ মিহি হাত ছেড়ে দিলো। আবার মুহূর্তের মাঝেই হাত ধরলো। আনায়ার সেদিকে খেয়াল নেই। ও আনমনে ঘুরে ঘুরে দেখছে। আচমকা খেয়াল হলো ওর হাতের মাঝের হাত টা কোনো মেয়ের না। পুরুষের হাতের মতো শক্ত। মিহির হাত তো এতটা শক্ত হওয়ার কথা না? পাশ থেকে কেউ জিজ্ঞেস করলো,
“কিছু পছন্দ হচ্ছে না?”

আনায়া আনমনে জবাব দিলো,
“না”

তড়িৎ গতিতে আনায়ার খেয়াল হলো কণ্ঠ টাও পুরুষালি কণ্ঠ। পাশ ফিরে তাকালো। দেখলো অর্ণব ওর সাথে দাঁড়িয়ে। আনায়া কে নিজের দিকে তাকাতে দেখে মুচকি হাসলো অর্ণব। আনায়া মোচড়া মুচরি করে হাত ছাড়াতে চাইলো। অর্ণবের শক্তির সাথে পারলে তবে তো? অর্ণব আরো শক্ত করে হাত ধরলো। ফিসফিস করে সুধালো,
“সাপের মতো মোচড়া মুচরি করছো কেন?”

“আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন?”

“আমার কবুল বলা কমাত্র বউয়ের হাত আমি ধরবো না তো কে ধরবে?”

“কারোই ধরা লাগবে না। আপনি আমার সামনে থেকে যান তো”

“কোথায় যাবো?”

“কেন? আপনার কিউট কিউট শা*লিকাদের কাছে”

“আমি আমার বউকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাবো না”

আনায়া জোর করে অর্ণবের হাতের ভাজ থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চাইছে। অর্ণব চোখ রাঙিয়ে তাকালো আনায়ার দিকে। আনায়া পাত্তা দিলে তো! অর্ণব ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল,
“আর একবার মোচড়া মুচরি করলে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিয়ে চলে যাবো। কোথায় যাবো কেউ জানবে না। শুধু তুমি আর আমি থাকব সেখানে। যাবো দুজন তবে ফিরবো তিনজন হয়ে। ভালো হবে না বলো?”

#চলবে?