প্রেমের তাজমহল_২ পর্ব-৩১+৩২+৩৩

0
16

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব৩১
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরিহিত এক রমণী শক্ত আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখেছে অর্ণবকে। আনায়া সেখানেই থমকে গেল। এক অপরিচিতা রমণী নিজের স্বামীকে আলিঙ্গন করছে খেয়াল হতেই আনায়ার শরীর জ্বলে উঠলো। ইচ্ছে করছে রমণীটিকে খু*ন করে ফেলতে। আনায়া সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে রইলো। র*ক্তিম দৃষ্টি স্থাপন করলো অর্ণবের ওপর। অর্ণব নিজেও বেক্কেল বনে গিয়েছে। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হুট্ করে এভাবে কেউ এসে ওকে জড়িয়ে ধরবে অর্ণব সেটা কল্পনায় ও আনেনি। আনায়ার দিকে খেয়াল করতেই হুস ফিরে পেল। রমণীটিকে নিজের থেকে এক জটকায় সরিয়ে দিলো। কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠলো,
“লাবণ্য, এগুলো কোন ধরণের অ*সভ্যতা? বড় ভাই হই আমি তোর ভুলে গেছিস? বড় ভাইয়ের সাথে এগুলো কেমন আচরণ? এখনো ছোটো নেই তু্ই। হুট্ হাট জড়িয়ে ধরা জিনিসটা আমার পছন্দ না। এরপর দেখলে মুখ নয় হাত চলবে”

অর্ণবের ফুপ্পি বললে উঠলো,
“অনেক দিন পর বোন ভাইকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরেছে এটা আর এমন কি?”

“কারো কাছে কিছু না হোক আমার কাছে অনেক কিছু। আমার এগুলো পছন্দ নয়। আর তোমার মেয়েকে বলো আবেগ সামলাতে নাহয় আমার রাগ ও এখনো দেখেনি”

অর্ণব পিছনে ফিরে আনায়ার হাত ধরে বাগানের দিকে এগিয়ে গেল। আনায়া এতক্ষন তাকিয়ে অর্ণবের রিয়েকশন দেখছিলো। অর্ণবদের বাড়ির এক পাশে বিশাল বাগান। বাগানে বউ ভাতের আয়োজন করা হয়েছে। আনায়ার সাজ কমপ্লিট না হওয়ায় অর্ণব বাগানে গেস্টদের এটেন্ড করছিলো। পার্টির কিছু লোক এসেছে সাথে কয়েকজন এমপি, মন্ত্রী। অর্ণব খুব কাছের ব্যাতিত কাউকে ইনভাইট করেনি। রাজনীতি আর পার্সোনাল জীবন একত্রিত করতে চায় না ও। সবার সাথে কুশল বিনিময় শেষে সবাই বউ দেখতে চাইছে। অর্ণব তাই বাড়িতে এসেছিলো আনায়াকে নিতে।

রুমে ঢুকে সাজ সজ্জায় মোড়ানো বউকে দেখে কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেল। অর্ণবের মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়েটার জন্মই হয়েছে ওকে থমকে দেওয়ার জন্য। প্রথম দিন দেখে থমকে গিয়েছিল। আজও তেমনি থমকে গেছে। যতো বার দেখে ততবারই থমকে যায়। কি এক আজব রোগে ধরলো ওকে! তবে অর্ণব চায় না এই রোগ থেকে পরিত্রান পেতে। বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
❝মায়াবতীকে দেখে থমকে যাওয়ার রোগ আমার আমৃত্যু রয়ে যাক❞

অর্ণব এগিয়ে গেল আনায়ার দিকে। ওর একটুও ইচ্ছে করছে না আনায়াকে সবার সামনে নিয়ে যেতে। ওর সুন্দরী বউয়ের দিকে কেউ নজর দিলে ওর যে কলিজা জ্বলবে। ছাড় খার হবে হৃদয়। অর্ণবের ইচ্ছে করছে আনায়াকে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখতে যেন কেউ দেখতে না পারে। আনায়া আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখছে। আয়নায় অর্ণবের প্রতিবিম্ব খেয়াল হতেই লাজুল হাসলো। অর্ণব ঝুঁকে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো আনায়ার ললাটে। আলতো ভাবে হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে এক ঝটকায় দাঁড় করিয়ে দিলো। কোমর জড়িয়ে ধরে নেশালো কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,
“তোমার মাঝে কি আছে বলতো? যা আমাকে বারবার তোমার কাছে টেনে নিয়ে আসে?”

আনায়ার কাছে উত্তর নেই। ও ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
“আমি কিভাবে বলবো?”

❝মায়া❞

“মানে?”

❝তোমার মায়া আমায় বারবার, শত বার, হাজার বার তোমার কাছে টেনে আনে❞

আনায়া অর্ণবের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মানুষটার এমপি না হয়ে কবি হওয়ার দরকার ছিলো। নেতাদের মুখে আর যাই হোক এতো মধুর কথা মানায় না। তবে অবাক কাণ্ড হলেও অর্ণব নামক পুরুষটার মুখে কেমন মানিয়ে যায়। অর্ণব আনায়ার হাত ধরে বলল,
“চলো, নিচে সবাই তোমার অপেক্ষায় বসে আছে”

দুজন একসাথে নিচে নামছে। অর্ণব আগে আনায়া পিছনে। দুই সিঁড়ি বাকি এমন সময় আনায়ার শাড়িতে পা আটকে গেল। অর্ণব এগিয়ে গেল। ও খেয়াল করেনি আনায়াকে। এমন সময় লাবণ্য এসে জড়িয়ে ধরলো অর্ণবকে।
———-

পুরো বউভাতের অনুষ্ঠানে আনায়া অর্ণবের সাথে কথা বলেনি। অর্ণব ব্যাস্ত থাকায় তেমন ভাবে জিজ্ঞেস করার সময় পায়নি। তবে বউ যে রেগে আছে এটা খেয়াল করতে একটুও ভুল হলো না। অর্ণব অপেক্ষায় আছে কখন বউকে একা পাবে।

অর্ষা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওর আসার ইচ্ছেই ছিলো না। কিন্তু না আসলে আনায়া রাগ করবে তাই আসা। এখন নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়েছে। তাপস ওখান দিয়েই যাচ্ছিলো। অর্ষা কে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গেল। দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কারো অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন? বয়ফ্রেন্ড আসবে নাকি?”

পাশ থেকে কারো গাঁ জ্বালানো কথা শুনে অর্ষা ফিরে তাকালো। তাপসকে দেখে চোখ ছোটো ছোটো হয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমার পিছনে লাগা ছাড়া আপনার কি কোনো কাজ নেই?”

তাপস দাঁত কেলিয়ে বলল,
“আছে তো”

“তাহলে গিয়ে সেটা করুন”

তাপস অবচেতন মনে বলল,
“সেটাই তো করছি?”

“কি?”

“এইযে আপনাকে জ্বা*লানো। সত্যি বলতে আপনাকে জ্বা*লাতে আমার বড্ড ভালো লাগে। আপনি যখন রেগে মেগে লাল হয়ে যান আপনাকে দেখতে একদম ধনী লঙ্কার মতো লাগে”

অর্ষা খেপে বলল,
“আমি ধনী লঙ্কা ? আমি ধনী লংকা হলে আপনি, আপনি কুমড়ো পটাশ”

তাপস তেতে উঠে বলল,
“এই মোটেও আমায় এই নামে ডাকবেন না। কি জ*ঘন্য লাগে শুনতে”

“আমি তো আপনাকে এই নামেই ডাকবো”

“একদম না”

অর্ষা আর তাপসের মাঝে ঝগড়া লেগে গেল। ঝগড়ার এক পর্যায়ে তাপস অর্ষার খুব কাছাকাছি এসে মৃদু কণ্ঠে বলল,
“সব সময় এমন ধনী লঙ্কা হয়েই থাকবেন। শান্ত চুপচাপ রূপে আপনাকে দেখতে বিশ্রী লাগে”

তাপস চলে গেল। অর্ষা ব্যাক্কেলের মতো তাপসের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
——-

বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে আনায়া আর অর্ণবকে আনায়াদের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। আসার পর থেকে সবাই আড্ডায় বসেছে। অর্ণবের সাথে জারিফ, অহনা, জিয়া ওরাও এসেছে। পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে বসেছে সবাই। সবার মাঝে আনায়া তেমন কথা বলছে না। চুপচাপ বসে আছে। নীলিমা জিজ্ঞেস করলে বলল,
“মাথা ধরেছে। তোমরা কথা বলো”

তাই কেউ ওকে তেমন জোরও করছে না। মিহি আর প্রিয়া অর্ণবের অবস্থা নাজেহাল করে তুলছে। দুটো শা*লী নয় যেন প্রশ্নের গোডাউন। একের পর এক জেরা করেই যাচ্ছে। এমন সময় আশালতা বেগম খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দিলেন। অর্ণব হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

খাওয়া শেষে আরেক দফা আড্ডা বসলো। আনায়া খাওয়া শেষে রুমে চলে এসেছে। অর্ণব আসতে চাইলেও মিহি আর প্রিয়া ওকে জোর কররে রেখে দিয়েছে। ওদিকে বউ রেগে ফায়ার হয়ে আছে আর এদিকে শা*লিকারা জ্বা*লিয়ে মারছে। অর্ণব বুদ্ধি করে বলল,
“এখন সবাই ঘুমাতে যাও। কালকে তোমাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে স্পেশাল ট্রিট আছে”

মিহি আর প্রিয়া লাফিয়ে উঠে বলল,
“থ্যাংক ইউ জিজু। ইউ আর বেস্ট জিজু”

সবাই যার যার রুমে চলে গেল। অর্ণবও উঠে হাঁটা দিলো রুমের দিকে। আনায়ার রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। বুকে ফুঁ দিয়ে বলল,
“বউকে ভয় পাওয়ার কি আছে? বউ আদর করার জিনিস, ভয় পাওয়ার না”

নিজেই নিজেকেই বুঝ দিয়ে রুমের দরজা খুলল। পুরো রুম অন্ধকার। ড্রিম লাইট জ্বালানো। অর্ণব নিঃশব্দে রুমে প্রবেশ করলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো রুমের কোথাও আনায়ার অস্তিত্ব নেই। তার মানে আনায়া ব্যালকনিতে বসে আছে। অর্ণব এগিয়ে গেল। আনায়া আনমনে ব্যালকনিতে বসে আছে। খোলা কেশগুচ্ছ হাওয়ার তালে তালে উড়ছে। অর্ণব আলগোছে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আনায়াকে। আনায়া আগেই অর্ণবের অস্তিত্ব টের পেয়েছে। ইচ্ছে করেই এতক্ষন না দেখার ভান ধরে বসে ছিলো। অর্ণব জড়িয়ে ধরতেই তেতে উঠে বলল,
“আমার কাছে এসেছেন কেন? কি যেন নাম মেয়েটার? ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। লাবণ্য নাকি তার কাছে যান”

অর্ণব আনায়াকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফেরালো।
“আমার এতো সুন্দরী বউ থাকতে আমি ওর কাছে যাব কেন? আমিতো শুধু আমার বউয়ের কাছে আসবো। ওই শা*কচু*ন্নির কাছে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না”

“তাহলে ও যখন জড়িয়ে ধরছিল তখন সাথে সাথে সরিয়ে দিলেন না কেন? অন্য মেয়ে কেন আপনাকে জড়িয়ে ধরবে? কেন?”

“বিশ্বাস করো আমি তখন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। যখনই খেয়াল হয়েছে সাথে সাথে ওকে সরিয়ে দিয়েছি”

আনায়া চুপ করে আছে। অর্ণব ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আর ইউ জেলাস?”

আনায়া শক্ত কণ্ঠে বলল,
“অফ কোর্স জেলাস”

অর্ণব ভাবেনি আনায়া সরাসরি স্বীকার করবে। অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিলো। আনায়া মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ণব হুট্ করে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো আনায়াকে। আনায়া নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরলো। অর্ণব রুমের দিকে যেতে যেতে বলল,
“রুমে চলো। রাগ ভাঙানোর ব্যবস্থা করছি”

আনায়ার গালে রাগের বদলে লজ্জার লালিমা দেখা গেল। বেচারি লজ্জা পেয়েছে। অর্ণব রুমের দিকে এগিয়ে গেল।
——-

সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না বয়ে চলে নিজ গতিতে। মাঝে কেটে গেছে দু দুটো দিন। আনায়া দাঁড়িয়ে আছে অর্ণবের ব্যালকানিতে। মৃদু মন্দ শীতল হওয়া বইছে। শীতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অর্ণব বেরিয়েছে সেই সকালে। এখনো আসার নাম নেই। আজ সকালেই ওরা আনায়াদের বাড়ি থেকে এসেছে। অর্ণব ওকে নামিয়ে দিয়ে কাজ আছে বলে সেই যে গেছে এখনো আসেনি। দুপুরে খাওয়ার সময় আনায়া অপেক্ষা করতে চাইলেও মেহনাজ বেগম ওকে খেয়ে নিতে বলল। অর্ণবের আসার ঠিক ঠিকানা নেই। আনায়াকে জোর করে মেহনাজ বেগম আর অহনা খেতে বসিয়েছে। আনায়া ফোন হাতে নিয়ে ভাবনায় বসেছে। এক বার ভাবছে অর্ণবকে কল দিবে আবার ভাবছে থাক কাজ শেষ হলে তো আসবেই। দোনামনার মাঝে ফেঁসে গেছে বেচারি। অবশেষে সকল ভাবনা বাদ দিয়ে ডায়াল করলো অর্ণবের নাম্বারে। রিং হচ্ছে তবে রিসিভ হচ্ছে না। মিনিট যেতেই অর্ণবের গাড়ির হর্ণের শব্দ কানে এলো। আনায়া উঁকি দিয়ে দেখলো অর্ণবের গাড়ি গেট দিয়ে ঢুকছে। আনায়া নড়লো না। সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।

ক্লান্ত দেহ, অবশন্ন মনে ধুপ ধাপ পা ফেলে আসছে অর্ণব সাহেব। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। অর্ণবকে দেখে মনে হচ্ছে ও ঘাম দিয়ে গোসল সেরে এসেছে। অর্ণব রুমে এসেই হাঁক ছাড়লো,
“মায়াবতী কোথায় তুমি? রুমে এসো”

আনায়া ব্যালকনি থেকে রুমে এলো। কোমরে হাত রেখে সুধালো,
“কি হয়েছে? হাঁক ছেড়েছেন কেন?

“তোমার একমাত্র জামাই ঘেমে নেয়ে এসেছে সে খেয়াল আছে তোমার? কোথায় এসে জামাইয়ের সেবা করবে তা না করে উল্টো আমায় প্রশ্ন করছো?”

“আমার একমাত্র জামাইকে যখন ফোন দিয়েছিলাম তখন সে কি এমন রাজ কার্য করছিল? সে আমার ফোন ধরেনি তাই আমিও তার খেয়াল রাখতে পারবো না”

অর্ণব এগিয়ে গিয়ে আনায়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“তোমার জামাই তার বউয়ের কাছে তাড়াতাড়ি আসার জন্য উতলা হয়ে গিয়েছে। তাই তো ৩০ মিনিটের রাস্তা ১০ মিনিটে পার করেছে। ফোন অফ থাকায় শব্দ শুনতে পাইনি”

আনায়া অভিজ্ঞদের মতো করে বলল,
“বুঝলাম”

অর্ণব দুস্টু হেসে আনায়ার বেঁধে রাখা চুলগুলো খুলে ফেলল। হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিলো। ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলো সামনের চুল গুলো।
“আপনি আর কতো আমায় জ্বালাবেন বলুন?”

অর্ণব আনায়ার চোখে চোখ রেখে বলল,
❝এই দেহে প্রাণ থাকবে যতক্ষণ, আমি তোমায় জ্বালাবো ততক্ষণ❞

#চলবে?

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব৩২
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

ডিসেম্বরের শেষের দিকে। কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে চারপাশ। বিগত কয়েকদিন যাবত প্রচুর শীত পড়ছে। কুয়াশায় এ বাড়ি থেকে পাশের বাড়ি স্পষ্ট দেখার জো নেই। অর্ণব ঘুমের মাঝেও শক্ত আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখেছে আনায়াকে। আনায়া গুটি শুটি মেরে অর্ণবের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে। দুজনই ঘুমে বিভোর। বিছানার পাশে রাখা ঘড়ি বিকট শব্দে বেজে উঠলো। অর্ণবের ঘুম হালকা হয়ে এলো। ঘুমের ঘোরে হাতড়িয়ে এর্লাম বন্ধ করে দিলো। ধীরে ধীরে চোখ খুলল। চোখের সামনে মায়াবতীর মায়া মাখা মুখ খান দেখে অর্ণব মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। মেয়েটা গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে। আনায়াকে দেখতে একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে। স্নিগ্ধ, কোমল, মায়াবী মুখ খানা। সামনের চুল গুলো মুখের ওপর পড়ে থাকায় আনায়াকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে অর্ণবের নিকট। অর্ণব মনে মনে ভাবলো অবশেষে মেয়েটা ওর, শুধু মাত্র ওর। এই পিচ্চি মেয়েটাকে পাওয়ার জন্য কতো সাধনা, কতো অপেক্ষা, আরো কতো কিছু। কিন্তু আনায়া এর কিছুই জানে না। সবই ওর দৃষ্টির অগোচরে হয়েছে। অর্ণবের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। আজ মেয়েটা ওর চোখের সামনে, ওর অতি নিকটে। যার মুখ দেখে অর্ণবের দিন শুরু হয় তাকে নিয়েই অর্ণবের দিনের শেষ। সব কিছুতেই তার ছোঁয়া, তার অস্তিত্ব। অর্ণবের মন আনন্দিত হয়ে ওঠে। এখন ইচ্ছে করলেই মায়াবতীকে ছুঁয়ে দেওয়া যায়, ভালোবাসায় মুড়িয়ে ফেলা যায়। অর্ণবের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। আলতো করে আনায়ার কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। আনায়ার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেল।

আনায়া ঘুমিয়ে আছে। কানে কারো মৃদু কণ্ঠ ভেসে আসছে। কিন্তু ওর মোটেও উঠতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকতে। কিন্তু অপর পাশের মানুষটার ওর ঘুম ভালো লাগলো না।
“বউ, ও বউ ওঠো। কলেজ যেতে হবে তো! আজ না তোমার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার লাস্ট দিন?”

আনায়া ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল,
“হু”

“তাহলে উঠে পড়ো”

“কিন্তু আমার তো উঠতে ইচ্ছে করছে না। আরো ঘুমাতে ইচ্ছে করছে”

অর্ণব কাছে এসে এক ঝটকায় আনায়াকে তুলে বুকের সাথে হেলান দিয়েছি বসিয়ে দিলো। আনায়া এখনো চোখ বুজে আছে। অর্ণব মৃদু কণ্ঠে বলল,
“চোখ খোলো বউ। দেরি হয়ে যাচ্ছে তো”

আনায়ার মেজাজ চোটে গেল। এই লোকটার কি ওর ঘুম সহ্য হচ্ছে না? আনায়া ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“কানের পাশে বউ বউ না করে বউকে একটু ঘুমাতেও তো দিতে পারেন? তা না করে ষাঁড়ের মতো কানের পাশে বউ বউ করছেন”

“ভার্সিটি থেকে এসে ঘুমিয়েও, এখন ওঠো”

অর্ণব পিছন থেকে সরে গেল। আনায়া পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকেই সামলে নিলো।

অর্ণব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। আনায়া বিছানার মাঝখানে বসে আছে। বসে বসে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ওর গুষ্টি উদ্ধার করছে। আনায়ার মোটেও কম্বল ছেড়ে উঠতেই ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে অর্ণবের চুল গুলো টেনে দিতে। ওর সাধের ঘুম! অর্ণব চুল আচড়াতে আচড়াতে বলল,
“আমাকে দেখার সময় পরেও পাবে। এখন ফ্রেশ হতে যাও”

আনায়া ভেংচি কেটে বলল,
“আপনাকে দেখতে আমার বয়েই গেছে”

বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেল। অর্ণব আনায়ার কাণ্ডে হেসে দিলো।
——

আনায়ার ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামলো। আনায়া নেমে পড়লো। সাথে অর্ণবও নামলো।
“অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া হলে বাড়িতে চলে যেও। আমার কাজ আছে,তাপস এসে তোমায় নিয়ে যাবে। নিজের খেয়াল রেখো”

আনায়া সায় জানিয়ে এগিয়ে গেল। অর্ণব ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। আনায়া যতক্ষণ না ভিতরে যাচ্ছে ততক্ষন ও এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে।

ভার্সিটির গেটের সামনে অর্ষা আনায়ার জন্য দারিয়ে আছে। তাপস গাড়িতে বসেই ওর দিকে তাকালো। ইদানিং চোখ গুলো বেহায়া হয়ে গেছে। একটুও ওর কথা শোনে না। আশেপাশে কেন যেন ধনী লঙ্কাকেই খুঁজে বেড়ায়। যার সাথে দুই মিনিটও ওর শান্তি মতো কথা হয়না বেহায়া মন কেন তাকে খুজবে? মনটা ওর নাকি অর্ষার? তাপস অনেক বার মন কে শাসিয়েছে। তবে শুনলে তো!

অর্ষার চোখ পড়লো তাপসের ওপর। ছেলেটাকে দেখেলেই ওর মেজাজ কেমন গরম হয়ে যায়। শান্ত শিষ্ট অর্ষা রণ মূর্তি ধারণ করে। এইযে ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে ঝগড়া করার মুড নিয়ে তাকিয়ে আছে। অর্ষা চোখ ছোটো ছোটো করে ওর দিকে তাকালো। চোখে চোখে দুজনের এক দফা ঝগড়া হয়ে গেল। নিঃশব্দে যু*দ্ধ যাকে বলে।

আনায়া অর্ষাকে ডাকছে তবে ও শুনছে না। আনায়া এবার হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“কিরে কি ভাবছিস?”

অর্ষা হুস ফিরে পেয়ে বলল,
“কি বললি?”

“বললাম কি ভাবছিস? ভিতরে যাবি না?”

“কিছু না চল”

আনায়া অর্ষা ভার্সিটির ভিতরে চলে গেল। অর্ণব গাড়িতে উঠে তাপসকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলল। ওরাও প্রস্থান করলো।

অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া শেষ হলে আনায়া, অর্ষা, রাইহা এর দিয়া মিলে ক্যাম্পাসের এক পাশটায় বসলো। অনেক দিন দেখা নেই সবার। রাইহা আফসোস করতে করতে বলল,
“আনায়া তু্ই আমার ক্রাশ কে নিয়ে গেলি। কিভাবে পারলি বল বান্ধবীর ক্রাশকে নিতে?”

“আমি তোর ক্রাশ কে নেই নি। তোর ক্রাশ আমায় নিয়ে গেছে”

পাশ থেকে দিয়া বলল,
“তোরা জানিস না অর্ণব ভাইয়া ওর কতো নাম্বার ক্রাশ? গুনে গুনে লিস্টে ২৬ তম অবস্থানে আছে”

“ক্রাশ তো ক্রাশ এখানে লিস্টের কি আছে? ওনাকে আগের দেখলে প্রথম ক্রাশটা ওনার ওপরই খেতাম। তবে আফসোস তাহাকে দেখার আগে ২৫ জন্ কে দেখে ফেলেছি”

আনায়া বলল,
“ক্রাশ কে এখন থেকে দুলাভাইয়ের চোখে দেখবি। ওটা আমার জামাই”

“আমার চরিত্র এতটাও খারাপ না যে বিবাহিত বেডার দিকে তাকাবো। বিয়ের আগে তাকিয়েছি এখন আর নজর দিবো না। তু্ই চিন্তা করিস না”

আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো চারজন। এর মাঝে দিয়ার ফোন এলো। ওকে জরুরি বাসায় যেতে বলছে। রাইহা আর দিয়ার বাসা কাছাকাছি হওয়ায়ও ওরা চলে গেল। আড্ডার পুরোটা সময় অর্ষা চুপ রইলো। আনায়া বিষয়টা খেয়াল করেছে। ওরা থাকায় কিছু বলেনি। অর্ষার কাঁধে হালকা চাপড় দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“চুপচাপ কেন?”

“এমনি। তু্ই বল শশুর বাড়ি কেমন লাগছে? তোর শশুর শাশুড়ি, ননদ কেমন আছে?”

ননদ শব্দটা বলার সময় অর্ষার কণ্ঠস্বর কেমন হয়ে গেল। আনায়া সেটা খেয়াল করলো। হাসি মুখে বলল,
“শশুর বাড়ি বিন্দাস লাগছে। কিন্তু বরটাকে আজকের জন্য জ*ল্লাদ জ*ল্লাদ লাগছে”

“কেন? ভাইয়া কি করলো?”

“আর বলিস না। কি সুন্দর ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু বজ্জাত লোক আমায় টেনে তুলে দিলো”

“শুকরিয়া আদায় কর। অর্ণব ভাইয়া তোকে কিছু বলে না। আর আমার মা প্রতিদিন আমার কানের পাশে ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকে”

আনায়া ভেংচি কেটে বলল,
“শুকরিয়া না কঁচু”

আনায়া শীতের শুরুতেই অর্ণবকে বলে দিয়েছে এই ঠান্ডার মাঝে ও কোনো মতেই রেগুলার ভার্সিটিতে ক্লাস করবে না। এতো শীতে ভার্সিটি যাওয়ার প্ৰশ্নই আসে না। অর্ণব অমত করেনি। বলেছে,
“ভার্সিটিতে না যাও সমস্যা নেই। তবে বাসায় বসে পড়া কমপ্লিট করতে হবে। অ্যাসাইনমেন্ট বা প্রেজেন্টেশন থাকলে যেতে হবে। এটা নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না”

আনায়া অর্ণবের কথা মেনে নিয়েছে। আজকে অ্যাসাইনমেন্ট ছিলো বলেই ভার্সিটি আসা।

অর্ষা উঠে হাঁটা দিলো। ওর বসে থাকতে ভালো লাগছে না। ওর পিছু পিছু আনায়াও এলো। অর্ষাকে মন ম*রা দেখে বলল,
“দাঁড়া খুব শীঘ্রই তোর আর ভাইয়ার….”

বলতে গিয়ে থেমে গেল। খেয়াল হলো কি বলতে যাচ্ছিলো। অর্ষা আনায়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। আনায়া কথা ঘুরিয়ে বলল,
“আন্টি কে বলে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি। আমি মিঙ্গেল আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সিঙ্গেল থাকবে বিষয়টা মানা যাচ্ছে না”

অর্ষা কথার পৃষ্ঠে কিছু বলল না। মলিন চোখে তাকিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। আনায়া মনে মনে নিজেকে ‘শ’ খানেক গা*লি দিলো। আজও মনে পড়ে সেদিনকার কথা,

আনায়ারা ওদের বাড়িতে আসার পরের দিনের ঘটনা। বিকেল বেলা আনায়া অর্ষাকে ক্ষেপাছিলো। অর্ষা খেপে দিয়ে ওকে তাড়া করলে আনায়া উঠে দৌড়ে লাগায়। অর্ষাও ওর পিছনে আসছে। পুরো ড্রয়িংরুমে ছুটোছুটি করে আনায়া সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠা শুরু করলো। একেবারে ছাদে এসে থামলো। পিছনে ফিরে অর্ষা দিকে তাকিয়ে দেখলো অর্ষা খুবই কাছে। আনায়া ছাদের অন্য পাশে যেতে নিলো। সামনে গিয়ে দেখলো আবির আর অহনা। দুজন পাশাপাশি বসা। অহনা আবিরের কাঁধে মাথা রেখে আছে। দুজন কথা বলছে। আনায়া ওদের থেকে দূরে থাকায় ওদের কথা শুনতে পেল না। তবে ওদের মাঝে কি সম্পর্কিত কথা হতে আনায়ার বুঝতে দেরি হলো না। আবির হাত বাড়িয়ে অহনার চুল কানের পিছনে গুঁজে দিলো। অর্ষা ততক্ষনে আনায়ার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। আনায়া এক বার ওদের দিকে তো একবার অর্ষার দিকে তাকালো। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না। অর্ষা আনায়ার হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে এলো।

আনায়ার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা আর আনায়া। অর্ষা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে বোঝার উপায় নেই ওর মাঝে কি চলছে। আনায়া ওকে এতটা শান্ত দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“তু্ই এতো শান্ত আছিস কিভাবে? কিছু তো বল”

“অশান্ত হওয়ার কিছুই হয়নি। আর বলার মতোও কিছু নেই। মানুষ মানুষকে ভালোবাসতেই পারে”

আনায়া কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“তু্ই আগে থেকেই জানতি?”

“হ্যাঁ, জানতাম”

“আমায় বলিস নি কেন?”

“বলার মতো কিছুই নেই তাই”

“সত্যিই কি বলার মতো কিছুই নেই। এই জন্যই তু্ই এতদিন মুড অফ করে ছিলিস? কবে থেকে জানিস?”

“অনেক আগে থেকে”

অর্ষা আনায়াকে পর পর সব খুলে বলল। সব শোনার পর আনায়া বলল,
“তু্ই একা একাই কষ্ট পেয়ে গেলি আমায় একটু কিছু বললি না। এই আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড?”

অর্ষা আনায়াকে জড়িয়ে ধরলো। বলল,
“ওই মুহূর্তে তোকে বললে তু্ই মন খারাপ করতি তাই কিছু বলিনি। রাগ করিস না”

“দাঁড়া আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলছি”

“তু্ই আবির ভাইকে এই বিষয়ে কিছুই বলবি না”

“কেন?”

“আমি চাইনা উনি এই বিষয়ে জানুক। এখানে ওনার কোনো দোষ নেই। আমি উনাকে কখনো বলিনি। উনি কাউকে ভালোবাসতেই পারে। আর সব চেয়ে বড় কথা আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি। তাই চাই না এটা নিয়ে তু্ই আবির ভাইকে কিছু বল”

“সত্যিই কি সামলাতে পেরেছিস?”

অর্ষা ঢোক গিললো। ও ভালো করেই জানে ও সবার সামনে মিথ্যা বলতে পারলেও আনায়ার সামনে বলতে পরবে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“চিন্তা করিস না। সামলাতে না পারলেও ইন-শা-আল্লাহ খুব শীঘ্রই সামলে নিবো”

আনায়া অর্ষাকে জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে প্রার্থনা করলো যেন অর্ষা জীবনে এমন কেউ আসুক যে ওকে অনেক ভালোবাসবে। ওকে আগলে রাখবে।
——-

আনায়ার ভাবনার মাঝে ওর ফোন বেজে উঠলো। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো অর্ণব কল দিয়েছে। আনায়ার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে অর্ণব বলে উঠলো,
“কোথায় তুমি? অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া হয়েছে?”

“হ্যাঁ”

“তাহলে বাহিরে আসো”

আনায়া অর্ষা বেরিয়ে এলো। বাহিরে এসে দেখলো অর্ণব গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আনায়া সোজা ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি না একটু আগে গেলেন? আবার চলে এলেন যে?”

“বউকে মিস করছিলাম। তাই চলে এলাম”

“সারাদিন বউ বউ করলে হবে? কাজ কর্ম সব তো লাটে উঠে যাবে”

“যা যেদিক যাওয়ার যাক। শুধু বউ থাকলেই হবে”

আনায়ার নিজেকে বড্ড ভাগ্যবতী মনে হলো। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। হুট্ করে মনে প্রশ্ন জাগলো “ওর কপালে এতো সুখ সহ্য হবে তো?”

#চলবে?

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব৩৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

গোধূলি বিকেলে সূর্য অস্ত যাচ্ছে পশ্চিমে। আকাশ লাল আভায় সেজে উঠেছে আপন সাজে। নদীর পানিতে দৃশ্যটা বড়ই সুন্দর লাগছে। এক অনন্য সৌন্দর্য। আনায়া অর্ণবের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। একসাথে সূর্য অস্ত যাওয়া দেখছে। চারপাশে মানুষ নেই বললেই চলে। কয়েক দিন যাবত ব্যাস্ততায় বউকে সময়ই দেওয়া হচ্ছে না। তাই টুপ্ করে এক প্রকার কিডন্যাপ করে বউকে নিয়ে এসেছে। আনায়াকে নিয়ে আসার ঘটনা মনে করে অর্ণব হেসে উঠলো।

বিগত কয়েকদিন যাবত অর্ণব খুবই ব্যাস্ত। বাড়ি আসে রাত করে চলে যায় খুবই ভোরে। আনায়া জেগে থাকতে চাইলে অর্ণব বারণ করেছে। তাও আনায়া একদিন জেগেছিলো তাই অর্ণব গম্ভীর কণ্ঠে বলেছিলো,
“এরপর যেন রাত জাগতে না দেখি। পড়ে শরীর খারাপ করবে”

“আরে সমস্যা হবে না। আমার অভ্যাস আছে”

“আমি বলেছি ঘুমিয়ে যাবে মানে ঘুমিয়ে যাবে”

আনায়া সেদিন গাল ফুলিয়ে ছিলো। অর্ণব ভালোবেসে রাগ ভাঙিয়েছে। সেদিনের পর আনায়া ঘুমিয়ে যেত। অর্ণব সারাদিন শেষে রুমে এসে দেখতো ড্রিম লাইটের আলোয় তার মায়াবতীর মুখ জ্বল জ্বল করছে। ক্লান্ত শরীরে পোশাক পরিবর্তন না করেই বসে পড়তো মায়াবতীকে দেখার তৃষ্ণা মেটাতে। মেয়েটাকে না দেখলে ওর বুকটা কেমন খাঁ খাঁ করে। যেমন খরায় মানুষ বৃষ্টির অপেক্ষা করে ঠিক তেমন। এই মেয়েটার মাঝে ওর সকল সুখ, আনন্দ, ভালোবাসা বিরাজ করে। অর্ণবের সকল ক্লান্তি এক লহমায় কেটে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে আনায়াকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে যায়।

আনায়া রাত বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে অর্ণবের। অর্ণব না এলে ঘুমিয়ে যায়। সাহেবের বারণ আছে যে। এসে জেগে থাকতে দেখলে রাগ করে বসে থাকবে। আনায়া রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বড্ড আকাঙ্খা নিয়ে ঘুমায় এই বুঝি ঘুম ভেঙে নিজেকে অর্ণবের বুকে আবিষ্কার করবে। কিন্তু ওকে বারবার হতাশ হতে হয়। ওর ঘুম ভাঙতে ভাঙতে ততক্ষনে অর্ণব চলে যায়। আনায়া প্রতিদিন ঘুম ভেঙ্গে বিষন্ন মনে বসে থাকে। পড়াশোনা, মেহনাজ বেগমের সাথে রান্নাঘরে টুকটাক কাজ, আর অহনার সাথে গল্প করেই ওর দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে। এভাবে চলল সপ্তাহ খানেক। আনায়ার মন মেজাজ খারাপ কিছুই ভালো লাগছে না। সব সময় কেমন বিষন্ন লাগে, বিষাদ লাগে সব। অবশেষে আনায়া সিদ্ধান্ত নিলো। ওকেই কিছু একটা করতে হবে। ভাবনায় বসলো কি করা যায়? অনেক ক্ষণ ভাবার পর উপায় পেতেই কুটিল হাসলো। বিড়বিড় করে বলল,
“মিস্টার অর্ণব আপনার বড্ড ব্যাস্ততা তাই না? আপনার ব্যাস্ততা যদি আমি না ছুটিয়েছি তাহলে আমিও মিসেস অর্ণব নই”
——

ঘড়িতে রাত বারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট। অর্ণব ক্লান্ত শরীরে রুমের দরজা ঢেলে ভিতরে ঢুকলো। পাঞ্জাবীর বোতাম খুলতে খুলতে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। তবে বিছানার সামনে যেয়ে ভ্রু কুঁচকে এলো। পুরো বিছানা ফাঁকা। ওয়াশরুমে উঁকি দিলো। ওয়াশরুম ফাঁকা, সেখানে কেউ নেই। ছুটলো ব্যালকনিতে। আনায়া মাঝে মাঝে ব্যালকনিতে থাকা কাউচে ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু আজ সেখানেও কেউ নেই। অর্ণব বিচলিত হলো। এতো রাতে বউ গেল কই? মাথায় এলো অহনার কথা। ওর সাথে রাগ করে আবার অহনার সাথে ঘুমায়নি তো? ড্রেস চেঞ্জ না করেই অহনার রুমের সামনে গেল। দরজায় টোকা দিচ্ছে। সেকেন্ড দুই পর অহনা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে বলল,
“কি হয়েছে? এতো রাতে ডাকছো কেন?”

“তোর ভাবি কই?”

“কেন রুমে নেই?”

“থাকলে তোকে জিজ্ঞেস করতাম?”

“থেকেই বা কি করবে তুমি তাকে সময় দেও?”

“মানে?”

“আমি জানি না। এই তুমি যাও তো। আমার ঘুম পাচ্ছে”

“তোর ঘুমের গুষ্টি কিলাই। আমি বউ পাচ্ছি না আর তু্ই আছিস তোর ঘুম নিয়ে? বল আনায়া কোথায়?”

“আমি জানি না”

“বল নাহয় আমি তোকে ঘুমাতে দিবো না”

“ভাবি তার বাবার বাড়ি চলে গেছে। যার কাছে তার জন্য সময় নেই, ভাবি তার সাথে থাকবে না”

অর্ণব দরজা ছেড়ে দিলো। ধীর পায়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেল। পকেট থেকে ফোন বের করলো আনায়াকে কল করার জন্য। মেয়েটার এতো সাহস ওকে না বলেই চলে গেল? ওকে একবার বলার প্রয়োজন বোধ করলো না? আনায়ার নাম্বার ডায়াল করতে যেতে যেয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো প্রায় ১ টার মতো বেজে গেছে। এতো রাতে মেয়েটা নিশ্চই ঘুমিয়ে গেছে। তাই কল করতে যেয়েও থেমে গেল। ফোন রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল।

অপর দিকে আনায়া নিজের ব্যালকনিতে বসে আছে। অপেক্ষা করছে অর্ণব কখন ফোন দিবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো। এতক্ষনে তো অর্ণবের বাড়িতে আসার কথা। ও যে বাড়িতে নেই এটাও জানার কথা। ও বাড়িতে নেই জেনেও মানুষটা ওকে একটা কল দিলো না? মনে মনে বড্ড অভিমান হলো। কল দিবে না, কথা বলবে না ব*জ্জাত লোকটার সাথে। হুহ! থাক সে তার মতো ব্যাস্ত। রাগে, জিদে ব্যালকনিতেই ঘুমিয়ে গেল।

অর্ণব বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। কিন্তু ঘুম আসার নাম নেই। সব কেমন হাহাকার ময় লাগছে। বুকটা ফাঁকা পড়ে আছে। খুব করে আনায়ার অভাব অনুভব করছে। মনে মনে ভাবলো আজকের রাতটা কোনো মতে পার হোক। কাল সোজা শশুর বাড়ি যেয়ে উঠবে। বউ ছাড়া কেমন এতিম এতিম ফিল হচ্ছে। চারপাশে সব বিষাদ বিষাদ।

পরের দিনও অর্ণবের ব্যস্ততায় কাটলো। সারাদিনে কয়েক বার আনায়াকে ফোন করেছে তবে কল রিসিভ হয়নি। অর্ণবের বুঝতে দেরি হলো না বউ বড্ড খেপেছে। মনে মনে ফন্দি আঁটতে বসলো বউয়ের রাগ কিভাবে ভাঙ্গানো যায়! ভাবনা শেষে তাপসকে কিছু এটা বলে মুচকি হাসলো। এবার দেখবে কিভাবে বউ রাগ করে থাকে!

রাত তখন ১২ টা বাজে। আনায়ার বাড়িতে এসে কলিং বেল দিলো। নীলিমা দরজা খুলে দিলো। অর্ণবকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাইয়া এতো রাতে?”

“আর বলবেন না। আপনার ননোদিনী রেগে আছে তাই এই রাতে না আসলেই নয়”

“আমিও খেয়াল করেছি কাল এসে থেকে আনায়ার মুড অফ। জিজ্ঞেস করলে বলল এমনি। ভাইয়া হাত মুখ ধুয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি”

“আমি খেয়ে এসেছি ভাবি আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আপনি একটু ওয়েট করুণ আমি আসছি”

অর্ণব সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে গেল। আনায়ার রুমের সামনে যেয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করলো। ভাগ্যে ভালো থাকায় দরজা খোলা ছিলো। ভিতরে প্রবেশ করতেই অর্ণবের চোখ আটকে গেল তার মায়াবতীর পানে। এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। আনায়ার ঘুমানোর ধরনে অর্ণব হেসে দিলো। গোটা একটা দিন একটা রাত কেটেছে এই মুখটা না দেখে। এতক্ষনের তৃষ্ণা সবে মিটলো। এগিয়ে গিয়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো আনায়ার কপালে। অতঃপর আলতো করে আনায়াকে কোলে তুলে নিলো। নিঃশব্দে এগিয়ে গেল যেন আনায়ার ঘুম না ভাঙে।

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখলো সোফায় বসে নীলিমা ঝিমোচ্ছে। অর্ণব মৃদু কণ্ঠে ডেকে বলল,
“ভাবি দরজা আটকে দেন”

“এতো রাতে মিয়া বিবি কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”

“বউ রাগ করছে। তার রাগ ভাঙাতে নিয়ে যাচ্ছি”

“সাবধানে যাবেন। বেস্ট অফ লাক”

অর্ণব আনায়াকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। ড্রাইভিং সিটের পাশের শীতে ওকে বসিয়ে দিয়ে নিজে যেয়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে। আনায়ার মাথায় টেনে নিয়ে কাঁধে রাখলো। অতঃপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
——-

আঁধারে মোড়া কক্ষে বসে প্রতি হিংসার অনলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে কেউ। মস্তিষ্কে কোষছে প্রতি*শো*ধের ছক। হাসতে হাসতে বলল,
“অর্ণব সিকদার খুব শীঘ্রই তোর ধ্বংস হবে। আমি তোকে প্রাণে মারবো না তবে তোর প্রাণ ভোমরা কেড়ে নিবো। বেঁচে থেকেও ম*রার মতো বাঁচবি তু্ই। তিলে তিলে ধ্বংস হবি তু্ই, ধ্বংস!”

বি*কৃত স্বরে হেসে উঠলো। আমি মানুষটা। পুরো ঘর কেঁপে উঠলো বি*কৃত শব্দে।
——-

সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে আনায়া নিজেকে কারো শক্ত আলিঙ্গনে আবিষ্কার করলো। তবে বিচলিত হলো না। নাকে পরিচিত ঘ্রান অনুভব হলো। আলিঙ্গনে আবদ্ধ করা মানুষটা যে ওর বড্ড চেনা। আশেপাশে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে এলো। ও তো ওর রুমে ছিলো তাহলে এখানে এলো কিভাবে? পাশ ফিরে অর্ণবের দিকে তাকালো। নিশ্চই এসব এই বজ্জাত লোকটার কাজ। তা ছাড়া আর কার কাজ হবে এটা? আনায়ার ইচ্ছে করলো অর্ণবের চুল টেনে দিতে। হাত বাড়িয়েও হাত গুটিয়ে নিলো। নিশ্চই মানুষটা অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে। এখন ডাকা ঠিক হবে না। আনায়া অর্ণবের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে ফের ঘুমিয়ে পড়লো।

অর্ণবের ঘুম ভাঙলো বেলা করে। বাহুডোরে মায়াবতীকে দেখে এক লহমায় মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। কোমল কণ্ঠে ডাকতে শুরু করলো,
“বউ ওঠো, সকাল হয়ে গেছে”

আনায়া চোখ কচলে উঠে বসলো। অর্ণবের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বিছানা থেকে নামতে নিলে অর্ণব আনায়ার ওড়নার কোনা টেনে ধরলো। আনায়া প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
“এখনো রাগ করে থাকবে? কথা বলবে না?”

“ব্যাস্ত মানুষের সময় আছে নাকি আমার কথা শোনার?”

অর্ণব এক টানে আনায়াকে কোলে বসিয়ে দিলো। কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“বউ চাইলে আদর দিয়ে রাগ ভাঙিয়ে দিতে পারি। আজ পুরো দিন বউয়ের নামে লিখে দিলাম”

অর্ণবের কথায় আনায়ার গাল লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। আস্তে করে অর্ণবের কাঁধে চাপর দিয়ে বলল,
“অ*সভ্য লোক”

“শুধু তোমার জন্য”

আনায়া লজ্জা পেয়ে অর্ণবের বুকে মুখ গুঁজে দিলো। অর্ণব উচ্চ স্বরে হেসে দিলো। মস্তিষ্কে দুস্টু বুদ্ধিরা নাড়া দিয়ে উঠলো। অর্ণব আনায়াকে জ্বালাতে বলল,
“আমার কথায় লজ্জা পেয়ে আমার বুকেই মুখ গুজছো? বাহ্ ইন্টারেস্টটিং তো!”
——-

পুরো রিসোর্ট জুড়ে অর্ণব আনায়া আর স্টাফ রা ছাড়া কেউ নেই। অর্ণব পুরো রিসোর্ট বুক করেছে। রিসোর্টের এক পাশে নদী আছে। আনায়া অর্ণব সেখানে বসেই গোধূলি বিকেলের সৌন্দর্য বিলাস করছে। হুট্ করে দুস্টু বুদ্ধি মাথায় চেপে বসলো। আনায়া অর্ণবের চুল ধরে টান দিলো। অতঃপর ছুট লাগালো। অর্ণবও ছুটলো আনায়ার পিছু পিছু। পুরো জায়গাটা জুড়ে দুজন দৌড়া দৌড়ি করছে। এক পর্যায়ে অর্ণব আনায়াকে ধরে ফেলল। নিজের সাথে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
“এবার কোথায় পালাবে?”

আনায়া পা উঁচু করলো। টুপ্ করে চুমু বসিয়ে দিলো অর্ণবের গালে। অর্ণব ভ্যাবা চেকা খেয়ে গেল। ও ভাবেনি আনায়া এভাবে হুট্ করে চুমু দিয়ে বসবে। নিজের অবাকতা কাটিয়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো আনায়ার কপালে আর গালে। এগিয়ে গেল আনায়ার গোলাপি রঙা অধরের পানে। আনায়া আটকে দিলো। অর্ণব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আনায়া ওর ভ্রু কুচকানোর ধরণ দেখে বলল,
“ইহা আপনার বেড রুম নহে অ*সভ্য পুরুষ। সো কন্ট্রোল ইওর সেল্ফ”

আনায়ার বলার ধরনে অর্ণব হেসে দিলো। ওর হাসি যেন থামার নামই নিচ্ছে না। আনায়া গাল ফুলালো।
—–

গাছে গাছে শিউলি ফুল ফুটেছে। শিউলি ফুলের ঘ্রানে মো মো করছে চারপাশ। আনায়া শিউলি ফুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর থেকে কিছুটা দূরত্বে অর্ণব গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শিউলি ফুল গাছটা উঁচু হওয়ায় আনায়া ডাল নাগাল পাচ্ছে না। পা উঁচু করে ধরার চেষ্টা করছে তাও হচ্ছে না। এবার লাফ দিয়ে চেষ্টা করলো। অর্ণব আনায়ার কাণ্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে। আনায়ার ইচ্ছে করছে অর্ণবকে উল্টো করে গাছে লটকিয়ে রাখতে। বজ্জাত লোকটা দেখছে তাও এগিয়ে এসে ফুল পেরে দিচ্ছে না। আনায়া রেগে মেগে অর্ণবের দিকে এগিয়ে যেতে নিলো। এমন সময় গু*লির শব্দ ভেসে এলো। আনায়া লুটিয়ে পড়তে নিলো। মুহূর্তের ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেল!

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)