#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ছোয়ার সামনেই আদরের আঙুলে আংটি পড়িয়ে দিল আমান৷ ছোয়া আটকাতে চেয়েও আটকাতে পারল না। কিন্তু তার মন প্রচণ্ড রকম খারাপ হয়ে গেল৷ সে আর দাড়িয়ে এসব দেখতে পারল না৷ দ্রুত সিড়ি বেয়ে চলে উপরে গেল। কিন্তু সবাই আমান এবং আদরের আংটি বদল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ব্যাপারটা খেয়াল করল না।
ছোয়া ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে রইল। তার মন মেজাজ পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিল ছোয়া। অতঃপর ভাবল,
‘না এভাবে মন খারাপ করে থাকার কোন কারণ নেই। আমান ভাইয়ার সাথে আদরকে কত ভালো মানায়। আমি শুধু শুধু এত ভাবছি।’
ছোয়া বিভিন্নভাবে নিজেকে এসব বোঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু ফলাফল শূন্যই রয়ে গেল। তার মনের অনুভূতি গুলো কেমন এলোমেলোই রয়ে গেল। যা নিয়ে সে নিজেও সন্দীহান। তবে অনেক ভেবে ছোয়া সিদ্ধান্ত নিল,
‘যা হচ্ছে তা হোক। এসব নিয়ে ভাবার কোন মানে নেই। আমার একমাত্র লক্ষ্য পড়াশোনা করে বাবার স্বপ্ন পূরণ করা। অন্য আর কোন বিষয় নিয়ে আমি ভাববো না।’
অতঃপর ছোয়া স্বাভাবিক হয়ে নিচে নেমে এলো। সবার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছোয়া আসতেই মতিয়া বেগম তাকে বলে উঠলেন,
‘তুই এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন? আয় হাতে হাতে আমাদের সাহায্য কর।’
ছোয়া তার মায়ের কথা অনুযায়ী এগিয়ে গেল। খাবার বেড়ে দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করতে লাগল। আদরের প্লেটে খাবার দিতে গিয়ে আচমকা তার হাত থেকে তরকারি আদরের গ্রাউনে পড়ে যায়৷ শান্ত শিষ্ট আদর হঠাৎ তেতে উঠে বলে,
‘অন্ধ নাকি তুমি? চোখে দেখতে পারো না। আমার এত দামী গ্রাউনটা নষ্ট করে দিলে।’
ছোয়া বলল,
‘দুঃখিত। আমি খেয়াল করিনি।’
আদর ছোয়াকে আরো অনেক অপমানজনক কথা বলল। এমনকি তাকে আশ্রিতা পর্যন্ত বলল। ছোয়া আশা নিয়ে ছিল আমান তার পক্ষ নিয়ে কিছু বলবে কিন্তু আমান কিছুই বললো না। চুপচাপ খেতে লাগল। আমানের নিশ্চুপতা দেখে ছোয়ার মন খারাপ হয়ে গেল৷ জান্নাতুল খাতুনই ছোয়ার পক্ষ নিয়ে আদরকে বললেন,
‘মানুষ মাত্রই ভুল হয় আদর৷ এভাবে বলার তো কিছু নেই। আর ও এবাড়ির আশ্রিতা নয়৷ ও এই বাড়ির একজন সদস্য।’
জান্নাতুল খাতুনের কথায় আদর আর কিছু বলতে পারল না। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এলো৷ বদলে গেল শুধু ছোয়ার মানসিকতা। আব্দুল হোসেন একটু বাইরে গিয়েছিলেন৷ এইমাত্র এসে খেতে বসলেন৷ তাই সব কিছু তার অজানাই রইল। মতিয়া বেগম ছোয়ার কানে কানে বলল,
‘ঐ মাইয়াডা তো খুব বদ। তোরে এইভাবে কইল। সবার সামনে কিছু কইতেও পারলাম না।’
‘তোমায় কিছু বলতে হবে না আম্মু। আমি কিছু মনে করিনি।’
৩৭.
ছোয়া রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে৷ যা দেখে আলিয়া তার রুমে চলে আসল। ছোয়া রুমেই শুয়ে ছিল। আলিয়াকে দেখে উঠে বসে। আলিয়া ছোয়ার মন খারাপ দেখে বলে,
‘তুমি নিশ্চয়ই ঐ আদর আপুর জন্য মন খারাপ করে রেখেছ তাইনা আপুনি তাইনা? তোমার মন খারাপ করার দরকার নাই। আদর আপুকে উপর থেকে দেখে যতোই ভদ্র মনে হোক না কেন আসলে তো ও একদম সেরকম নয়। আমি কয়েকবার কথা বলেই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আম্মু ওকে ভাবি বলে পছন্দ করল তাই এখন আর কিছু করার নেই৷ তবে আমার কাছে যদি সুযোগ থাকত তাহলে আমি এই বিয়েটা কিছুতেই হতে দিতাম না। মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে আর দেখতে একটু সুন্দর জন্য কত অহংকার দেখায়!’
ছোয়া আলিয়াকে উদ্দ্যেশ্যে করে বলে,
‘এমন বলো না। কারো নামে গিবত করা ঠিক নয়। যে যেমনই হোক সেটা নিয়ে বলে আমাদের কি? তোমার আম্মু আর ভাইয়ার যখন কোন অসুবিধা নেই ওকে নিয়ে তাহলে এসব বলে কোন লাভ নেই।’
আলিয়া চুপ হয়ে যায়। অতঃপর বলে, ‘তুমি রাতে খাচ্ছ না কেন আপুনি? তোমার কি ক্ষুধা পায়নি বলো? ‘
ছোয়া বলে,
‘আমার শরীর বেশি ভালো নেই। আমার খেতে ইচ্ছাই করছে না।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আমি যাই। তুমি নিজের খেয়াল রেখো। কাল সকাল সকাল উঠে ব্রেকফাস্ট করে নিও। নাহলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।’
‘ঠিক আছে, এই নিয়ে চিন্তা করো না। আমি খেয়ে নেবো।’
৩৮.
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই ছোয়া বেরিয়ে পড়েছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এখন আবার নতুন দামে তার পড়াশোনা শুরু করার পালা। ভার্সিটি গিয়েই সবার আগে দেখা করল নাদিয়ার সাথে। অনেকদিন পর দুই বান্ধবীর মধ্যে দেখা হওয়ার পর তারা দুজন অনেক সুন্দর মুহূর্ত ভাগ করে নিল। নাদিয়া উদ্দেশ্য করে বলল,
‘বল ছুটি কেমন কাটালি? আমার তো দিনগুলো বেশ ভালোই গেল।’
ছোয়া মৃদু হেসে বলে,
‘আমারও মোটামুটি ভালই গেল। সামনে তো আরো অনেক ভালো কিছু হতে চলেছে। আমান ভাইয়ার বিয়ে।’
কথাটা বলতে গিয়ে ছোয়ার মুখটা কিরকম শুকিয়ে গেল। নাদিয়া না লক্ষ্য করে বলল,
‘কোন কারনে কি তোর মন খারাপ ছোয়া? তোর মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?’
ছোয়া কি বলবে কিছু ভেবে পায় না। তার ইচ্ছা করছিল নাদিয়ার সাথে তার মনের অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে কিন্তু সে অপারগ থাকে। এর মধ্যে তাদের ভার্সিটির ক্লাসের টাইম হয়ে যাওয়ায় তারা দুজনেই ক্যান্টিন থেকে উঠে ক্লাসে যায়। কয়েকটা ক্লাস করে ছোয়া বিরক্ত হয়ে যায়। তার মন পড়াশোনায় একদম বসে না। ছোয়ার এই অন্যমনস্কতা লক্ষ্য করে নাদিয়া। অতঃপর ছোয়াকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘তোর কি ভালো লাগছে না? তাহলে তোকে আর ক্লাস করতে হবে না। বাড়ি চলে যা তুই।’
ছোয়া কয়েকটা ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরে এলো। বাড়িতে এসে সোজা ছাদে চলে গেল। ছাদে গিয়ে ছোয়া দেখা পেল আমানের। আমানকে ছাদে দেখে ছোয়া ছাদ থেকে নেমে আসার চেষ্টা করল, তখনই হঠাৎ আমান এসে ছোয়ার হাত ধরল। ছোয়া কিছু বলতে চাইছিল এমন সময় আমান ছোয়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘অনেক হয়েছে আর না। দুই মিনিট একটু চুপ থাক। আমি অনেক ধৈর্য ধরেছি কিন্তু আর পারব না। আমি আজ নিজের মনের অনুভূতি সম্পর্কে তোকে জানাতে চাই। আমি তোকে ভালোবাসি ছোয়া। আমি জানি, তুই একইরকম অনুভব করিস না। তাই আমি নিজেকে গুটিয়ে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারছি না। তুই আমার কথা একটু ভেবে দেখিস। তোকে কিছু সময় দিলাম ভাবার। তুই একটু ভেবে দেখ কি করবি৷ তবে যাই উত্তর দিবি একটু ভেবে দিস। কারণ তোর এই উত্তর উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’
উক্ত কথাগুলো বলে আর সময় ব্যয় না করে আমান ছাদ থেকে নেমে গেলো। এদিকে ছোয়া পড়ে গেল ভাবনায়। আমানের কথাগুলো তাকে ফেলে দিয়েছে মহা বিড়ম্বনায়। একেই তো সে নিজের মনের অনুভূতি নিয়ে সন্দীহান ছিল এখন আমানের এই স্বীকারোক্তির পর তার মনের অস্থিরতা সপ্ত আসমানে উঠে গেল। ছোয়া নিজের মস্তিষ্কের এবং মনের সাথে এক কঠিন লড়াইয়ে নামল যেন। কি উত্তর দেবে এই ভাবনাই চলতে লাগল তার মনে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨