#প্রেমের_মরা_জলে_ডুবে
#তানিয়া
পর্ব:২০
পুরো রুমে আবছা অন্ধকার। ড্রীম লাইটের আলোতে ঘরটা কেমন অদ্ভুত লাগছে।দরজা খুলে যেতেই একটা অবয়ব ঢুকলো।নিঃশব্দে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে।তিমির শুয়েছে বিছানার কানায় আর শুভা শুয়েছে দেয়াল পাশে।অবয়বটা পা টিপে টিপে তিমিরের পাশে গিয়ে বসলো।কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত তিমিরের দিকে। নিঃশ্বাসের শব্দ মুখে পড়তে তিমির ঢুলুঢুলু চোখ খুলে আর মুখের সামনে একটা ছায়া দেখে তিমির চিৎকার দিতে যায় আর তখনি মুখের ওপর হাত চাপা পড়লো।
তিমির চিল্লাবে না আমি শুভ্র? তোমাকে আসতে বলেছিলাম তুমি এলেনা কেনো?
ফিসফিস করে প্রশ্ন করলো শুভ্র।তিমির উ উ করছে কারণ শুভ্র তার মুখ চেপে ধরে তার কাছ থেকে উত্তর আশা করছে।শুভ্র হঠাৎ বুঝলো তিমিরের মুখ সে চেপে আছে। তাই মুখ থেকে হাত সরানোর আগে সে কানে ঠোঁট নিয়ে গেলো।
তিমির মুখ থেকে হাত সরাবো কিন্তু চিল্লাবে না।আর আমার সাথেই যাবে।
তিমির মাথা নাড়লো মানে হলো না।শুভ্র বুঝলো এভাবে তিমিরকে বশ করা যাবে না।তাই সে নিজের সাথে ছোট এক টুকরো রুমাল এনেছিল।সেটা দিয়ে ঠোঁট বন্ধ করে,পাজকোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।সোজা ছাদে এনে কোল থেকে নামালো তিমিরকে।তিমির হাত মুখ ছাড়া পেয়ে লম্বা দম নিলো।
কি সমস্যা আপনার,এমন ভূতের মতো রাত বিরাতে ঘুম থেকে তুলে এখানে কেনো আনলেন?
সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে সেটা বাঁকা করতে হয় আর তাই বাকা পথে তোমাকে আনতে হলো।তুমি এলে না কেনো?
হাত ভাজ করে প্রশ্ন করলো শুভ্র।
আপনি ডাকলেই বুঝি আসতে হবে?
মুখ ফিরে পাল্টা প্রশ্ন করলো তিমির। শুভ্র তিমিরের প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলো।কিছু না বলে তিমিরের হাতটা ধরে এগিয়ে গেলো দোলনার কাছে।তিমির কিছু না বলে চুপ করে বসে আরেকপাশে মুখ ঘুরালো।শুভ্র তিমিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তিমির মুখ ফেরাতে দেখলো শুভ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তিমিরের কেমন জানি লাগলো।এত কাছ থেকে এ পুরুষ কখনো তাকে এত গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখে নি।তিমির আনইজি ফিল করছে কারণ ঘুম ভাঙা চেহারা ্টা কেমন হয়ে আছে কে জানে তার মধ্যে এ পুরুষের দূরদর্শীতায় মনে হচ্ছে তিমিরের অন্তস্তলটা ভালো করে দেখে ফেলছে।তিমির একটু কুঁকড়ে বসলো।শুভ্র মিটি হাসি দিয়ে তিমিরের গা ঘেঁষে বসলো।
তুমি এমন কুঁকড়ে আছো কেনো,ভয় পাচ্ছো নাকি?তুমি তো আগে আমাকে ভয় পেতে না বরং কীভাবে আমার কাছে আসবে সে চেষ্টা করতে তাহলে এখন দূরে থাকো কেনো?
তখন আপনি দূরে ছিলেন বলেই কিন্তু আপনার কাছে আসার ইচ্ছে ছিল, এখন তো আপনি নিজেই আমাকে বলেছেন আমাকে নিয়ে আপনার মনে কিছু নেই, জোর করে তো আর মনের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করা যায় না তাই এবার নিজেকে বুঝিয়েছি আপনি যেমন চাইবেন তেমন হবে।আপনার অনিচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি আপনাকে আর বিরক্ত করবো না।আর এখন যখন আপনার মনমতো করছি তাহলে আপনিই বা আমার সাথে ভিন্ন আচরণ কেনো করছেন?
কি রকম ভিন্ন একটু বলো তো?
প্রশ্ন করে ঠোঁট টিপে হাসলো শুভ্র কারণ তিমির তাকে কি মিন করছে সেটা শুভ্র জানে আর বিরক্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো তিমির কারণ শুভ্র তার মুখ থেকে কি শুনতে চাইছে সেটা তিমির জানে কিন্তু হঠাৎ এ কথাটা মুখ থেকে বের হওয়ায় লজ্জা পেলো সে।
কি হলো তিমির বলো কেমন আচরণ করলাম যার জন্য তোমার এত রাগ?আচ্ছা বাদ দাও বলতে হবে না।আজ তোমাকে এখানে কেনো আনলাম জানো চাদ দেখার জন্য। যদিও আজ পূর্ণিমা না তবুও দেখো কত সুন্দর চাঁদ উঠেছে।তাছাড়া বাইরের আবাহাওয়াটা আজ খুব শীতল যা উপভোগ্য। আমি আগে থেকে এ দিনটা ঠিক করে রেখেছিলাম ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে এমন একটা সময় কাটাবো কিন্তু তুমি তো এলেনা অগত্যা আমাকে গিয়ে এত কসরত করতে হলো।আমার কাধটা ব্যাথা করছে তিমির,তোমার এত ওজন কেনো?খাওয়াদাওয়া তো তেমন করো না তাহলে এত ওজন বাড়লো কীভাবে??
শুভ্র কথাগুলো বলতে বলতে নিজের হ্হাত দিয়ে কাঁধের অংশটা ম্যাসেজ করছে।তিমির নাক ফুলিয়ে শুভ্রর কথা শুনছে।ঠিকই কথার মধ্য দিয়ে অপমান করলে শুভ্র। গাল ফুলিয়ে অন্য ্দিকে তাকালো।নজর এড়ালো না শুভ্রর।
তিমির এত রাগ কীসের একবার বলবে?আমার মনে হচ্ছে তুমি সেদিনের বলা কথা নিয়ে আমার ওপর রাগ করে আছো।আচ্ছা যাও সরি কিন্তু ওসব তো মিথ্যা না।তুমি আমার থেকে যদি মিথ্যা কথা শুনে পরে কষ্ট পেতে তাহলে কি ভালো হতো,তাই আগে থেকে সবটা জানিয়ে দিলাম।এখন মনে হচ্ছে ভুল হয়েছে তোমাকে সব জানানো ঠিক হয়নি।আমি না জেনে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।
আপনি যা করেছেন ঠিক করেছেন।আসলে আমার ভাগ্যটা এমনি।কারো কাছ থেকে ভালেবাসা পাওয়ার মতো কপাল নিয়ে আমি জন্মায় নি তাই তো মায়ের ভালোবাসা পেলাম না,বাবার ভালোবাসা টুকুও আড়ালে নিলে সামান্য কপালে জুটলো আর এখন…(দীর্ঘশ্বাস)
তিমির তুমি এতটা ছোট করে কথা বলো না নিজেকে নিয়ে। আমি বুঝি নি আমার কথাগুলো তোমাকে এতটা হার্ট করবে তাহলে আমি বলতাম না।যাই হোক যা হয়েছে হয়েছে আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি দ্বিতীয় কাউকে নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না, আল্লাহ যখন তোমাকে আমার কপালে রেখেছেন তবে তুমিই থাকো আমার জীবনে।তবে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যদি তোমার আপত্তি না থাকে তবে সেটা করতে চাই।
তিমির শুভ্রর দিকে প্রশ্ন চক্ষু নিয়ে তাকালো।শুভ্র হেসে তিমিরের কাছাকাছি এসে জানালো,
তিমির আমি তোমাকে আবারও বিয়ে করতে চাই। এবার কোনো লুকোচুরি করে নয়,আড়ালে আবডালে রেখে নয়,একদম প্রকাশ্যে সবাইকে জানিয়ে, আনন্দের সহিত তোমার সাথে নতুন সম্পর্কে জড়াতে চাই। তিমির আমি তোমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিচ্ছি তুমি কি সেটা গ্রহণ করবে?উইল ইউ মেরি মি?
বসা ছেড়ে হাঁটু গেড়ে তিমিরের সামনে একটা আংটি এগিয়ে গিয়ে প্রপোজ করলো শুভ্র।শুভ্র যে এমন কোনো অফার বা সারপ্রাইজ দিবে তিমির বিন্দু মাত্র ভাবে নি।শুভ্র র এমন ভঙ্গিতে প্রপোজ পেয়ে তিমির হু হু করে কেঁদে উঠলো।একটু আগে যে কপালকে সে দুঃখ ভেবে কষ্ট পাচ্ছিল সে কপালে যে এত সুখ ছিল তিমির কল্পনাও করেনি।শুভ্র বুঝলো তিমির বিস্ময়ে তার প্রপোজের ভঙ্গি ্মাটা এখনো বুঝতে পারেনি।তাই নিজেই তিমিরের কোলে রাখা হাতটা তুলে নিয়ে আঙুলে আংটি পরিয়ে দিলো।হাতে চুমু দিয়ে বুকের বা পাশে রেখে বললো,
তিমির এ জায়গাটা ভুল করে একজনকে দিয়েছিলাম কিন্তু সে মূল্য দেয় নি, তুমি কি এ জায়গাটা পূর্ণ করে আমার পূর্বের কষ্ট গুলোকে সারিয়ে দিতে পারবে?
তিমির নিজের অনুভূতিটা বোঝানোর আর কোনো ভাষা পেলো না।যদি তার পক্ষে সম্ভব হতো তাহলে হয়তো এ পুরুষকে নিজের জীবনটাই উৎসর্গ করে বোঝাতো কতটা ভালোবাসে সে শুভ্রকে!এতদিন তার মনে জমে থাকা ছোট ছোট অভিমানের পাহাড় গুলো শুভ্রর প্রপোজে নিমিষে ভেঙে গেলো।তিমির শুভ্রর বুকের ডান পাশে মাথা রেখে বা পাশে হাত দিয়ে বুঝিয়ে দিলো এ বুকের সব কষ্ট সে গ্রাস করে নিবে তবুও শুভ্রকে আর আঘাত পেতে দিবে না।
ভোররাত পর্যন্ত দুজনে ছাদে বসে ছিল।শুভ্র দুজনে নিশ্চুপ ছিল ঠিকই তবে হৃদয়ে হৃদয় হাজারো না বলা কথোপকথন চলছিল।আযান পড়ার পর দুজনে একসাথে রুমে এসে নামাজ শেষ করে।তিমির শুভার রুমে যাওয়ার জন্য আগালে শুভ্র তিমিরের হাতটান দেয়।তিমির পেছনে তাকিয়ে মুচকি হাসে সে হাসিতে যোগ দেয় শুভ্র।
সকালে ঘুমটা একটু দেরীতে ভাঙলো।আর ঘুম ভাঙতে দেখে শুভা পুরো তৈরি হয়ে আছে। আয়নায় দাঁড়িয়ে হিজাব ঠিক করছে।শুভাকে দেখে তিমির রাগ দেখালো।
কিরে শুভা এত সকাল হলো অথচ আমাকে ডাকলি না?
ফালতু কথা বলিস না।তোকে ডাকতে ডাকতে আমার গলার নালি ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম। যেভাবে ভোস-ভোস করে ঘুমাচ্ছিস মনে হচ্ছিল কতরাত না ঘুমিয়ে ছিলি।সবে তো একরাত ঘুমাস নি তাতেই তোর এ অবস্থা যদি রাতের পর রাত নির্ঘুম হতো তখন কি করতি?
তিমির হাই তুলছিল শুভার কথা শুনে হাই মাঝপথে থামিয়ে চোখ বড় করে শুভার দিকে তাকালো।
কি বলতে চাস শুভা?
গতকাল কখন ফিরলি রুমে?
তুই কি করে জানলি আমি রুমে ছিলাম না?
তুই আমার সাথে আমার রুমে ঘুমাস অথচ আমি জানবো না তুই কখন কোথায় যাস? যাই হোক আমার ভাইয়ের এত শক্তি জানতাম না যদি না তোকে কোলে করে নিয়ে যেত?
বদমায়েশ মেয়ে তার মানে না ঘুমিয়ে তুই এসব করছিস?
বা রে কৃষ্ণ করলে লীলা আর আমরা করলে চরিত্র ঢিলা।আমার রুমে থেকে তোমরা রাধা কৃষ্ণের মতো প্রেম করবে, আমার ঘুমের বারোটা বাজাবে আর আমি বললে বদমায়েশি হয়ে যায়। সকলা বেলা ঝগড়া করিস না।তাড়াতাড়ি উঠে তৈরি হয়ে নে,আমি গেলাম পড়াগুলো ধরতে পারলে তুই পাবি।ওকে বাই!
শুভা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো তিমির মুখ ভেংচি দিয়ে বিছানা ছাড়লো।শাওয়ার নিয়ে এসে নিজেও কলেজে চলে গেলো।
পুরো বাড়িতে মরিচ বাতি দিয়ে ঝলমল করে সাজানো হয়েছে। এভাবে পূর্বেও সাজানো হয়েছিল বাড়িটা কিন্তু শেষ দিকে বিষাদ ছিল এখন সেটা নেই কারণ যাদের উদ্দেশ্যে সাজানো হয়েছে তারা পরস্পরকে এখন আর চোখে হারাতে পারে না।
শুভ্র তিমিরের সাথে নিজের বিয়ের কথাটা বাবা মাকে জানালে তারাও সম্মতি দেয়।কারণ যতই হোক প্রথম বিয়েটা এমন নাটকীয়ভাবে ঘটেছিল যে সেটা নিয়ে সবাই ছিল উদ্বিগ্ন আর রাগান্বিত। এখন অবশ্য সেসব কথা কেউ মনে করতে চায় না।
বিয়ে উপলক্ষে তিমির বাবার বাড়িতে উঠে এসেছে। কারণ শুভ্র চায় বিয়ে যদি হতে হয় তবে নিয়ম মেনে হবে সবটা।তিমিরও আপত্তি করলো না।বাবার বাড়িতে এসে অনেকদিন পর নিজেরও খারাপ লাগলো।মনটা খারাপ হলো যখন তুরফার রুমটা তালাবদ্ধ দেখলো।যেমনি কাজ তুরফা করুক এটা মানতে হবে যে শুভ্র ্কে পাওয়ার পেছনে তুরফার অবদান রয়েছে। তিমির চাইলো তার এ বিয়েতে তুরফা থাকুক কিন্তু তুরফার নাম শুনে গালমন্দ করলেন শান্তা। এক কথা তার,যে মেয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে রেখে চলে যায় তাকে সে আর দেখতে চায় না।তিমিরও কিছু বলতে পারে না।যদিও তুরফা দেশে থাকলে হয়তো শান্তাকে রাজি করানো যেত কিন্তু তুরফা আর রাশেদ দুজনে এখন বাইরে চলে গেছে স্কলারশিপ নিয়ে তাই চাইলেও তাদের সাথে যোগাযোগ সম্ভব না।
অপেক্ষা শেষ করে তিমির আর শুভ্রর বিয়েটা সম্পন্ন হলো।এবার না ছিল ভয় না ছিল ধরা পড়ার আতঙ্ক। দুজনকে পাশাপাশি বসিয়ে সকলের সামনে বিয়ে পড়িয়ে আবদ্ধ করা হলো দুটো দূরত্ব থাকা মানুষ এবং তাদের মনকে।
ফুলসজ্জার ঘরটা সাজালো শুভা নীল সহ বেশ কয়েকজন বন্ধু বান্ধব । সকলে বেরিয়ে যেতে নীল শুভাকে টেনে দরজা আটকালো।
কি করছো কি, এক্ষুণি ভাই ভাবি চলে আসবে ছাড়ো?
উহু ছাড়বো না।এত সুন্দর ঘরটা দেখেই তো আমার তোমাকে বিয়ে করে ফুলসজ্জা করার স্বাদ জেগেছে।
ঢং করো না তো।এমন কথা মুখ দিয়ে আসতে একটুও আটকালো না
না কারণ তুমি তো আমার হাফ বউ ফুল বউ হলে তো আরো অনেক কথা বলে ফেলতে পারতাম।চলো না লুকিয়ে ফুল বউটা করে ফেলি
শুভা মুখ খুলে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই দরজাটা খুলে গেলো। তিমির দরজা খুলতে দুজনে ছিটকে দুদিকে চলে গেলো।তিমির কোমড়ে হাত দিয়ে দুজনের দিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে।
এখানে কি হচ্ছে শুনি, আমার ঘর সাজাতে এসেছে কি নিজেরাই কাজ সেরে নিচ্ছো?
তিমিরের কথায় দুজনে লজ্জা পেলো।নীল মাথা চুলকে বেরিয়ে গেলো।শুভা নিচের দিকে তাকিয়ে আঁকিবুঁকি করছে পা দিয়ে।তিমির শাড়িটা ভালোমতো ধরে এগোলো।
কি হে ননদী,পেটে পেটে তো খুব শয়তানি দেখে তো লাগে ভাজা ফিশ উল্টাতেই জানিস না?
শোন তোর থেকেও কম আছি।এভাবে বললি কেনো বেচারা লজ্জা পেলো?
তা কিভাবে বলবো?দরজা বন্ধ করে দুজনে যেভাবে কাছাকাছি ছিলি ভাবলাম না জানি কি করে ফেললি।আর কেমন ননদ রে তুই আমাকে যে তোর এ ঘরে আনতে হবে তা ভুলে গেছিস।কষ্ট করে একাই হেঁটে আসতে হলো?
কেনো অপেক্ষা করতে পারলি না আমার জন্য, এত তাড়া কীসের?
হু অপেক্ষা করলে বাসি ফুলে ফুলসজ্জা হতো আরকি তাই চলেই এলাম
চোখ টিপ্পনী দিয়ে শুভাকে জানালো তিমির।শুভা লজ্জিত বিরক্ত নিয়ে বের হতে তিমির শুধালো,
শোন তোর ভাইকে পাঠিয়ে দে তাড়াতাড়ি আমি অপেক্ষা করছি বলিস?
এত নির্লজ্জ কেনো তুই একটু তো শরম রাখ।না জানি কি হবে আজ ভাইয়ার?
এত জেনে লাভ নেই। শরম রাখলে আজ এ দিনটা আমার হতো না।মাঝে মধ্যে পিরিতের জন্য বেশরম হতে হয় বুঝলি?
শুভা একগাল হেসে চলে গেলো ভাইকে ডাকতে।আসলে ভাইকে ডাকতে তারই লজ্জা করছে তাই সে নিচে গিয়ে সবার সাথে বসলো।শুভ্র নীল কথা বলছে, শুভা নীলের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিমির আয়নার সামনে গিয়ে কতক্ষণ নিজেকে দেখলো, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখা যাকে বলে।অনেক্ক্ষণ হলো শুভাকে বলেছে শুভ্রর কথা নিশ্চয়ই এ বাঁদরি জানায় নি।মনে মনে বকাঝকা দিলো,সামনে পেলে কে*লাবে।
শুভ্র রুমে আসতেই দেখে তিমির বিছানায় বসে ফুল নিয়ে খেলছে।শুভ্র তিমিরের দিকে একবার তাকিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে হতাঘড়ি খুলতে লাগলো।তিমির প্রথম চাহনিতে একবার হাসি দিলো শুভ্র রেসপন্স করলো না। তিমির শুভ্রর কাজ দেখে ভ্রু ভাজ করলো।
নতুন বউ রেখে যে এতক্ষণ বাইরে ছিলেন একটুও ভয় হলো না
ভয় হবে কেনো?আমি কি অন্য পাঁচ ্টা পুরুষের মতো নাকি যে বিয়ে করে বিয়ের রাত থেকে বউ পাগল হবো?
সেটা আপনি কোনেদিনও হবেন না?(মনে মনে।)আরে দূর সে কথা কে তুললো, বললাম এত রাত অবধি বউকে একা রেখেছেন যদি ঘুমিয়ে পড়তো তাহলে তো আর….
কথাটা শেষ করে লজ্জিত ভাব নিয়ে হেসে মাথা নুয়ালো।শুভ্র সরু চোখে তিমিরকে দেখে একটা টাউজার আর টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।।তিমির ভাবলো শুভ্র তাকে দেখছে কিন্তু ওয়াশরুমের দরজার আওয়াজে বুঝলো শুভ্র চলে গেছে।বিড়বিড় করে তাকিয়ে রইলো কখন দরজা খুলবে।দরজা খুললো ঠিকই শুভ্র টাওয়াল নিয়ে মুখ মুছে বললো,
তিমির অনেক রাত হয়েছে আর কোনো কথা না এসব বস্তা শিকল খুলে এসে ঘুমিয়ে পড়ো?
ঘুমিয়ে পড়ো মানে আরকিছু হবে না?
কি হবে?
শুভ্র প্রশ্ন করলো তিমিরকে।তিমির রাগে চোখ মুখ কুঁচকালো।
কি হবে মানে বুঝতে পারছেন না আজ আমাদের ফুলসজ্জা।বাকিরা যা করে আমরাও তা করবো।
বাকিরা কি করে সেটা দেখার বিষয় না বিষয় হলো কিছুদিন পর তোমার প্রি টেস্ট তারপর বোর্ড পরীক্ষা। তাই এখন আপাতত সব বন্ধ। এখন কোনো দুষ্টমি করবে না।যা হওয়ার পরে হবে।
তিমির হিসাব কষলো,১৪ দিন পর প্রি টেস্ট তারও তিনমাসের মাথায় ফাইলাম আর তিমিরকে ততদিন অপেক্ষা করতে হবে।অসম্ভব তিমির এটা মানবে না।
আপনার মাথা ঠিক আছে পরীক্ষা সে কখন আর তারপর যা হওয়ার হবে।আমি তিনমাস তো দূর থাক তিন মিনিটও দেরী করতে চাই না।তা এতই যখন দূরে রাখার শখ বিয়েটাও তিনমাস পর করলে পারতেন।বিয়ে যখন আজ করেছেন ফুলসজ্জা টাও আজ হবে।আমি ওসব মানি না,পরীক্ষা বারবার আসবে কিন্তু এ মধুর রাত আর আসবে না।আমি কিচ্ছু বুঝি না ব্যস.?
তিমির অনেক কথা বলে ফেলেছো।আমি যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছি এবার ঘুমাও।
শুভ্র চোখ রাঙিয়ে শুয়ে পড়লো।আলো জ্বলছে যেন তিমির ফ্রেশ হয়ে নিতে পারে।কিন্তু তিমির সেটা করলো না শুভ্রর চোখ রাঙানো দেখে তার চোখে পানি জমলো।সে অতটুকুতে শুয়ে পড়লো।চোখের পানি না মুছে ঝরতে দিলো।আর বিড়বিড় করে কথা বলতে লাগলো,
নিকুচি করেছে পরীক্ষার। তো এতই যখন পরীক্ষার টেনশন ছিল বিয়েটা না করতো।যেভাবে শুভার সাথে ছিলাম ওভাবে থাকতাম।অযথা এত নাটক করলো কেনো শুনি?আমাকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করে এখন পরীক্ষার দোহাই দিচ্ছে। যেন পরীক্ষা আমার না ওনার।দূর কোন বলদের বুদ্ধি নিয়ে যে বিয়েটা আবারও করতে গেলাম।এক পুরুষ ্কে দুইবার বিয়ে করলাম অথচ একবার কারেক্ট সময়ে ফুলসজ্জা করতে পারলাম না।এ মশকরা বিয়ের দরকারটা কি ছিলো শুনি?
তিমির কাঁদতে কাঁদতে মনে মুখে এসব কথা আওড়াচ্ছ। পাশ ফিরতে দেখে শুভ্র পিঠ পাশ রেখে মুখটা ওপাশ নিয়ে ঘুমোচ্ছে। ঘুমন্ত শুভ্রকে দেখে তিমিরের কান্নার বেগ বাড়লো।এ পুরুষ কখনো তার মনের অস্থিরতা বুঝবে না,বুঝবে না কতশত অপেক্ষা ছিল এ রাতের।শুভ্র কখনো ভালোবাসা নিয়ে প্রথম তার দিকে আগায় নি তিমিরকে আগাতে হয়েছে তাই ভাবলো এ রাতেও তাকেই নিজ থেকে রেসপন্স করতে হবে নাহলে সামনের তিনমাস কখন যে তিন যুগে পরিণত হবে তিমির জানে না।সময়ের হিসাব কষতে গিয়ে তিমিরের মাথা ঘুরে উঠলো।এ মানুষটাকে পাওয়ার তীব্র বাসনা তাকে মরিয়া করে তুলেছে।এভাবে পাশাপাশি শুয়ে থেকে বিরহ নিয়ে রাত কাটার চেয়ে হাজারটা কটু কথা আর আঘাত নিয়ে ভালোবাসাটা আদায় করা শ্রেয়।তিমির আর শুয়ে থাকলো না উঠে বসে শুভ্রকে একটান দিয়ে নিজের দিকে ফেরালো।তিমিরের এহেন কান্ডে শুভ্র চমকে উঠলো।শুভ্র ঝাটকি দিবে তার আগেই তিমির শুভ্রর দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে শুভ্রর ঠোঁটে ঠোঁট বসালো।শুভ্র চোখ বড় করে উপলব্ধি করলো তিমিরের রাগের মাত্রা।এও বুঝলো আজ আর তিমিরকে দমিয়ে রাখা যাবে না।কারণ সম্পর্কটা আজ শুধু একপক্ষীয় নয়, সম্মতি ক্রমে এক হয়েছে দুজনি তাই বাধা নিষেধাজ্ঞা কোনোটায় আর পরোয়া করবে না তিমির।শুভ্র ঠোঁট জোড়া অন্যের আয়ত্তে থাকলে সেটার হাসি সে মনের মধ্যে ধারণ করেছে।হাতর আঙুল নিয়ে গেলো তিমিরের চুলের ভাঁজে সে নিজেও ঝাপ দিলো প্রেম সাগরে যে প্রেমে আজ তিমির তাকে আহ্বান করেছে!!!!!
,
,
,
চলবে…….