প্রেমে পরা বারণ পর্ব-০৮

0
42

#প্রেমে_পরা_বারণ
পর্ব -৮
#Nosrat_Monisha

–তার কি মনে নেই? আমাদের বিয়ে হয়েছে, আমি তার হাজব্যান্ড হই।
অর্কর এই কথায় ডা.প্রীতির মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেলেও সে নির্বিকার রয়। কারণ এই মুহূর্তে তার যে কোন ভুল প্রতিক্রিয়া অর্ককে নিজের মনের ভাব প্রকাশের অন্তরায় হবে। শুধু তাই না অর্ক যদি একবার বুঝতে পারে সে নির্জনাকে নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে স্ত্রীরূপে মেনে নিচ্ছে তবে সে নিজেকে আবার গুটিয়ে নিবে।
অর্কর বিরতিহীন মুখ চলছে,
– এদিকে আরেক চিজ হলো আমার বাবা। এই লোকটার কোন কান্ড জ্ঞান নেই। ছেলে ছেলের বউয়ের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে, মানছি দোষ ছেলের কিন্তু তাই বলে ঘর আলাদা করার হুকুম দিয়ে দিবে? ছেলেকে হুকুম দিবে তার বউ যতদিন না ভালো হবে ততদিন তার সাথে দেখা করা যাবে না। আরে উনি কি আমাকে বিয়ে করিয়েছেন বউকে আলাদা ঘরে রাখার জন্য? এমনিতে এক ঘরে থাকলেই বউ সাথে ঘুমায় না, এখন ঘরও আলাদা করে দিয়েছে ভাল্লাগে না। ধুর!
বলেই অর্ক নিজের মতো ডা.প্রীতির ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ডা.প্রীতি মনে মনে বলে,
–যাক আমি নিশ্চিত হলাম । আমি এ বাড়িতে না থাকলেও তুমি এবার সুস্থ হয়ে উঠবে। সবাই ভাবে, জিনিসপত্র ভাঙলে,
গালি-গালাজ করলে কিংবা কাউকে অযথা মারতে গেলেই মানুষ মানসিক রুগি হয়। কিন্তু না, মনের ভেতরে কোন গোপন কথা কাউকে বলতে না পেরে গোমড়ে থাকা কিংবা চোখের সামনে কাউকে খুন হতে দেখে ট্রমায় চলে যাওয়াটাও মানসিক রোগ। তুমি এই রোগে আক্রান্ত অর্ক। তোমার রোগটা কতটা জটিল, সেটা আমি তোমার সাথে প্রথম সাক্ষাতেই বুঝতে পেরেছিলাম। তাইতো মি.অর্ণবের করা এতো অপমান সহ্য করে এখানে পরে আছি। কারণ আমি চলে গেলে হয়তোবা তুমি কোনদিন নিজের খোলশ ছেড়ে বের হবে না। আর যাস্ট কিছু দিন। তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া মাত্রই আমি এ বাড়ি ত্যাগ করবো।

অর্ক একপ্রকার ফুঁস ফুঁস করে বাইরে বের হয়ে যায়।
–একবার দেখে যাই ঘুমালো কি-না
বলে নির্জনার রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই আরশি তাকে মাঝপথে আটকে দিয়ে বলে,
–বাবা রেহানা আন্টিকে ভাবির সাথে থাকতে বলেছেন। তুমি এখন যেও না।
অর্ক মুখ গোমড়া করে নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে,
–শালা নিজের বাপই যখন শত্রুতা করে তখন বিচার দিবো কার কাছে?


–তুমি আমার এই কথাটা শুধু শুনো। রাজি হয়ে যাও, আব্বা।
মাইমুনা খন্দকারের কথায় পূর্বের চেয়ে বেশি নিশ্চুপ হয়ে যায় রুহান।
নিজের ছেলেকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে মাইমুনা খন্দকার শুকনো ঢোক গিলে। কারণ তার ছেলের শান্তরূপ হলো ঝড়ের পূর্বভাস। তিনি ছেলেকে আবার বুঝানোর চেষ্টা করেন,
–কেউ তোমাকে ভালো না বাসলে জোর করা যায় না। তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো।

গম্ভীর কন্ঠে রুহান বলে,
–আমি বাবার সাথে কথা বলতে চাই।

মাইমুনা খন্দকার কথা না বাড়িয়ে একটা মেইডকে বললেন তার স্বামীকে ডেকে দিতে।
তমিজউদদীন খন্দকার রুহানের রুমে এলে রুহান বাবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মায়ের উদ্দেশ্য বলে,
–আমি বাবার সাথে একা কথা বলতে চাই।

ছেলের ভাব-গতিক ভালো ঠেকলো না মাইমুনা খন্দকারের। যদি কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে সেই ভয়ে তিনি দ্রুত প্রস্থান করেন।
–আমি আপনার শর্তে রাজি তবে আমারও একটা শর্ত আছে। One more time I want to face-off with her. (আর একবার আমি তার সাথে বোঝাপরা করতে চাই)। বলতে পারেন এটাই লাস্ট।
–তুমি মেয়েটার বা অন্য কারও ক্ষতি করবে না তার কি গ্যারান্টি আছে? আর যাকে বিয়ে করবে তাকে সুখে রাখবে তারই-বা কি গ্যারান্টি?
–কোন গ্যারান্টি নেই, তবে আপনি যদি চান আপনার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করার জন্য আমি রাজি হই, তবে আমাকে এই শিকল থেকে বের করে নির্জনার সাথে দেখা করতে দিতেই হবে।
অন্যথায় (বাঁকা হেসে বিছানার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে পায়ের দিকে ইশারা করে) আমি এ শিকলে সারাজীবন বন্দী থাকবো।
তমিজউদদীন খন্দকার এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন। ছেলের জেদ সর্ম্পকে তিনি অবগত। যা বলে তাই করে। তিনি ভেবেছিলেন দেশে এনে মায়ের দোহাই দিয়ে, ভালবাসা দেখিয়ে ছেলের মন গলাবেন কিন্তু কোথায় কি। ছেলে যে তাকেই ব্ল্যাকমেইল করছে।

বাবাকে চুপ থাকতে দেখে ঠোঁটের এককোণ প্রসারিত করে রুহান বলে,
–সময় নাও বাবা। ভেবে-চিন্তে তারপর ডিসিশন নাও।

তমিজউদদীন খন্দকার অবাক হয়ে রুহানের দিকে তাকিয়ে থাকেন। যে ছেলেকে কিছুক্ষণ আগে অসহায় মনে হচ্ছিলো এখনই সেই ছেলেকে অদ্ভুত ভয়ংকর লাগছে। এতোটা ভয়ংকর যে তিনি আর ছেলের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয় কোন কথা বলতে পারলেন না বরং অসহায় হয়ে রুম ত্যাগ করলেন।
তমিজউদদীন খন্দকার চলে যেতেই রুহান বিছানায় পিঠ লাগিয়ে গেজা দাঁতে বাঁকা হেসে বলে উঠে,
–বাবা আমার সাথে গেইম খেলে ভালো করো নি। বেস্ট সন হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার গেইম আর নির্জনার রিজেকশন আমাকে দিন দিন বেস্ট ভিলেন বানিয়ে দিয়েছে ।হা হা হা! নির্জনা সুইটহার্ট বি রেডি রুহান খন্দকার আসছে।


সকাল থেকে অর্ক খরগোশের মতো জাফর সিদ্দিকী পিছন পিছন লাফিয়ে বেড়াচ্ছে । মূলত রাতে নির্জনার চিন্তায় অত্যাধিক অস্থিরতার ফলে তার ঘুম হয় নি। ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে রাতে শুধু জানলা দিয়ে নির্জনাকে কয়েকবার দেখে চলে এসেছে। কিন্তু সে যখনই গিয়েছে তখন নির্জনা ওষুধের কড়া ডোজে ঘুমে কাতর ছিলো।
সুতরাং সকাল সকাল সে ঘুম থেকে উঠে নির্জনার সাথে দেখা করার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠে। অর্ক ভেবেছিলো রাতে তার বাবা এমনি কথাগুলো বলেছেন। কিন্তু তিনি যে এভাবে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন তা সে বুঝতে পারে নি। তাই সে সকালে নির্জনার রুমে যাবে তখনই তাকে দরজার বাইরে এক মেইড আটকে দিয়ে বলে,
–বড় স্যার না করে দিয়েছে আপনাকে ভিতরে যেতে দিতে।
তখন থেকেই সে বাবার পিছনে এ ঘর ও ঘর ঘুরে যাচ্ছে। কিন্তু একদিকে নির্জনা অসুস্থ অন্যদিকে সামনে ইলেকশন তাই জাফর সিদ্দিকী মিনিস্ট্রির সব কাজ বাড়ি থেকে করবেন বলে পার্টির লোকদের বাড়িতে ডেকে নেয়। তাই অর্ককে তিনি তেমন একটা খেয়াল করতে পারছেন না।


–মি.অর্ণব সিদ্দিকী আমাকে ডেকেছেন?
অর্ণব ডা. প্রীতির দিকে একটা চেক এগিয়ে দিয়ে বলে,
–এখানে আপনার সব পাওনা আছে। যা কন্ট্রাক্ট হয়েছিলো তার পুরোটাই আছে যদি আরও কিছু লাগে বলুন।
ভ্রু কুঁচকে ডা.প্রীতি বলে,
–মানে কিসের পাওনা?
নির্লিপ্ত গলায় অর্ণব বলে,
–অর্কের চিকিৎসার জন্য যে টাকা কন্ট্রাক্ট হয়েছিলো সেটা।
–অর্ক এখনো সুস্থ হয় নি মি.অর্ণব।
–সেটা নিয়ে আপনার মাথা ঘামাতে হবে না, আমি বুঝে নিবো। আপনার এখানে আর কোন প্রয়োজন নেই।
ডা.প্রীতির এই সময়ে মাথা গরম করে চিল্লাপাল্লা করতে খুব ইচ্ছে করলেও সে তা না করে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,
– কন্ট্রাক্ট পেপারে স্পষ্ট লেখা আছে, আমি যখন মনে করবো অর্কর চিকিৎসা শেষ, ঠিক তখন আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। কেউ আমাকে আমার পেশেন্টের চিকিৎসা করা থেকে আটকাতে পারবে না যদি তার চেষ্টা করে তবে তার যথাযোগ্য কারণ দেখাতে হবে। তো মি.অর্ণব আপনার কাছে কি কারণ আছে?
–গতকালের ঘটনা যথেষ্ট নয়?
–গতকালের ঘটনাটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। আপনি নিজেও জানেন এটা কোন সট্রং রিজন না, আমাকে এ বাড়ি থেকে বের করার জন্য।
–এটাই পারফেক্ট রিজন। আপনি আজই বের হয়ে যাবেন।
বলেই চোখ বড় করে দাঁত কটমট করে ধমকে উঠে অর্ণব।

ডা.প্রীতি পাঁচ ফুট এক ইঞ্চির ছিপছিপে গড়নের চশমা পরা একটা অতি সাধারণ দেখতে মেয়ে, কিন্তু তারপরও পাঁচ ফুট এগারো উচচ্চতার বডিবিল্ডারের মতো দেখতে অর্ণবের ধমক খেয়ে সে বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। বরং সে কৃত্রিম হাসিটা আরও প্রশস্ত করে বলে,
–আপনি কেন আপনার বাবা চাইলেও আমাকে এবাড়ি থেকে বের করতে পারবে না। তাই আপাদত নিজের চেক সামলে রাখুন ভাববেন না, আমি যাওয়ার আগে অবশ্যই নিয়ে যাবো। আফটার অল ইটস মাই মানি।
এরপর সে সেখান থেকে চলে যায়।
ডা.প্রীতি বের হয়ে যেতে রুমে থাকা কাঁচের ফ্লাওয়ার বাজটা ছুঁড়ে ফেলে অর্ণব বলে,
–আমাকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলে, আমাকে কন্ট্রাক্ট শেখায়, হাউ ডেয়ার সি!

–চলবে?