প্রেমে পরা বারণ পর্ব-৩৩

0
150

#প্রেমে_পরা_বারণ
#Nosrat_Monisha
পর্ব- ৩৩

নিজের নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়াতে গুম ও হত্যা মামলায় আটক বর্তমান সরকারের মন্ত্রী জাফর সিদ্দিকী। তাকে দল হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বেডরুমের দেয়ালে ঝুলন্ত হিতাচির ৮৫ ইঞ্চি টিভির স্ক্রিনে খবরটা ভেসে আসতেই রুহানের ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ফুটে উঠে। আরশির হাত থেকে পানির বোতালটা নিচে পরে যায়৷ তার বাবা যেমনাই হোক, নিজের বাবার প্রতি রাগ-ক্ষোভ, অভিমানের পাহাড় থাকলেও হৃদয়ে ভালোবাসাটা আগের মতোই রয়ে গেছে।
সেই রাতের পর রুহান ও আরশি একে অপরের সাথে কথা বলে না।
তবে এবার আরশি আর পারলো না। সে রুহানের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলে,
–এসব আপনি করেছেন তাই-না? কেন করছেন এমন? আমার পরিবার আপনার কি ক্ষতি করেছ?
নিজের কলার থেকে আরশির হাতটা সরিয়ে রুহান বলে,
–তোমার পরিবার আমার যা ক্ষতি করেছে সেটা কোনদিন পূরণ হওয়ার না। ওরা আমার ভালবাসা আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে।

প্রচন্ড ক্রোধে চিৎকার করে উঠে আরশি।
–আপনি একটা বদ্ধ উন্মাদ। নির্জনা আপনাকে ভালোবাসে না। এই সহজ কথাটা আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না।
আরশির গলায় এক হাতে চাপ দিয়ে কর্কশ কন্ঠে রুহান বলে,
–নির্জনার আমাকে ভালোবাসতেই হবে। ওর কাছে অন্যকোনো অপশন নেই, আমাকে ভালবাসা ছাড়া ।
–There is always an option.
বহুকষ্টে নিজেকে রুহানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কথাটা বলে আরশি। রুহান কিছু বলবে তার আগেই আরশি আবার বলে,
–আমার কাছেও অপশন আছে মি.খন্দকার। তাই ভালোয় ভালোয় বলছি নিজেকে শোধরান নয়তো আমি বাধ্য হবো সেই অপশন বেছে নিত।
যেহেতু রুহান আরশিকে ভালবাসে না তাই সে থাকলো কি চলে গেলো তাতে কিছুই যায় তাসে না রুহানের। তাই সে আরশির কথার কোন পাত্তা না দিয়েই বের হয়ে গেলো।


জাফর সিদ্দিকীর গ্রেফতারের পিছনে রুহানের হাত রয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত অর্ক, নির্জনা। তারা এক প্রকার হার স্বীকার করে নিয়েছে। কারণ যতই চেষ্টা করছে রুহান কোন না কোন পথ বের করছে তাদের পরাজিত করার।
–স্যার আর আরশিকে ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় হল তোমাদের জীবন থেকে আমার চলে যাওয়া।
অর্ক নিজেও জানে নির্জনা সঠিক কথা বলছে তবে সে হার মানতে রাজি নয়।
–আমি নতুন কিছু ভাবার চেষ্টা করছি। যাই হয়ে যাক, আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।
–কিন্তু অর্ক
নির্জনার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই পেছন থেকে অর্ণবের ভারী গলা ভেসে আসে,
–কে কোথায় যাচ্ছে?
–ভাইয়া!
অস্ফুট স্বরে অর্ক দৌড়ে এসে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে।
–আরে ছাড়ো৷ ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে তাও বাচ্চামো গেলো না। এখন বলো কি হয়েছে? হঠাৎ এতো ইমোশনাল হয়ে গেলে।
অর্ক কিছু বলার আগেই নির্জনা বলে,
–ভাইয়া রুহান বাবাকে অ্যারেস্ট করিয়েছে। সবকিছু আমার জন্য হচ্ছে। তাই আমি বলছিলাম যে আমি যদি চলে যাই..
অর্ণব অবাক হয়ে বলে,
–তোমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে বাবাকে রুহান নয় আমি অ্যারেস্ট করিয়েছে।
–তুমি?
–আপনি?
–কিন্তু কেন?
অর্ক আর নির্জনার একত্র এভাবে অবাক হয়ে প্রশ্ন করার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অর্ণব বলে,
–এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। বাবার বিরুদ্ধে আমি অনেক বড়ো প্রমাণ পেয়েছি । প্রীতির ভাইয়ের মতো অনেককেই বাবা লোক দিয়ে খুন করিয়েছে।
অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে নির্জনা। অন্যায় করলে কেউ যে নিজের বাবার সাথে এমন করতে পারে সেটা তার ধারণার বাইরে।
–তাই বলে নিজের বাবাকে?
নির্জনার কথায় অর্ণব আবারও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
–এরেস্ট না করালে বাবার অবস্থা আরও শোচনীয় হতো। হয়তো ক্ষিপ্ত জনতা বাবাকে মেরে ফেলতো। আমার সন্দেহ হচ্ছে রুহান বাবার বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ ডেলিবারেটলি মিডিয়ায় প্রচার করছে তাই বাবার জন্য এখন সবচেয়ে নিরাপদ জেলখানা। তাছাড়া ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বাবা এতো অন্যায় করেছে শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে। অর্ক তোমরা সাবধানে থাকবে। বাড়ির বাইরে গেলে গার্ড নিয়ে যাবে। আমি তমিজউদদীন খন্দকারকে আরশির নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে বলে দিয়েছি। বাবাকে না পেয়ে পাবলিক এখন আমাদের টার্গেট করতে পারে।


রুহানের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় তমিজউদদীন খন্দকার। জাফর সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে রুহানের পদক্ষেপের প্রভাব পরেছে তাদের ব্যবসায়।
“খুনি মন্ত্রী জাফর সিদ্দিকী খন্দকারদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়”
এই একটা শিরোনামে হঠাৎই শেয়ারের দরপতন হয়।
কিন্তু বাবার চড় কিংবা শেয়ারের দরপতনের খবরের চেয়ে যে খবরে বেশি অবাক হয় রুহান তা হলো জাফর সিদ্দিকীকে তার লোক নয় বরং অর্ণব অ্যারেস্ট করিয়েছে।
রাগে ফুঁস ফুঁস করছেন তমিজউদদীন খন্দকার।
–সেলফ ডেস্ট্রাকশনের আইডল হলে তুমি। কান খুলে শুনে রাখো, আবার যদি তুমি কোন গাধার মতো কাজ করো তবে আমি আমার স্থাবর -অস্থাবর সকল সম্পত্তি তোমার ওয়াইফ আরশির নামে লিখে দিবো। এরপর ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে ঝুলিয়ে তুমি নির্জনা নির্জনা করো।


তমিজউদদীন খন্দকার এক কথার মানুষ নিজের বাবার ভয়ে কিছুটা দমে আছে রুহান। এরই মধ্যে খন্দকার বাড়িতে হঠাৎই খুশির হাওয়া। আরশি সন্তানসম্ভবা।
কথায় বলে আসলের চেয়ে সুদ দামি, তাই তো ইদানিং মাইমুনা খন্দকারও ছেলের বউকে চোখে হারান। আরশি ভাবছে বাচ্চাটা এলে রুহান ভালো হয়ে যাবে।
কিন্তু রুহান এসব নিয়ে নির্বিকার। সন্তান নিয়ে সে খুশি নয় আবার দুঃখও পাচ্ছে না কারণ আল্লাহ তো তাকে কম দেন নি। একটা প্রাণ এলে ক্ষতি কি? তবে অনাগত সন্তানের জন্য আরশিকে ভালবাসা কিংবা বিয়েটা মেনে নেওয়ার কথা ভুলেও কল্পনা করছে না সে বরংদিন দিন নির্জনাকে নিজের করে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাটা তার মধ্যে আরো তীব্র হচ্ছে।

ইদানিং নির্জনাকে নিজের করে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি নিজের অনাগত সন্তানের সুরক্ষা নিয়েও বেশ চিন্তিত রুহান। ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে জাফর সিদ্দিকীর করা বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের প্রমান সোস্যাল মিডিয়ায় ঘুরঘুর করছে। তাকে মন্ত্রীপদ থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হলেও ব্যাপারটা থেমে থাকেনি। বরং প্রতিনিয়ত জাফর সিদ্দিকীর পরিবারের উপর হামলার চেষ্টা হচ্ছে, অর্ককে ভয় দেখানোর জন্য সেসব হামলার মদদ একটা সময় রুহান নিজেই দিয়েছে। ইতিমধ্যে অর্ণবের উপর কয়েকদফা হামলা হয়ে গেছে। অর্ক সব সময় মিডিয়ার আড়ালে থাকার কারণে সে এবং নির্জনা দুজনেই এখন সেইফজোনে।
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে আরশির বিপদ বেড়ে চলেছে। ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার সময় গাড়িতে হামলা কিংবা খাবারে বিষক্রিয়া খুব নিত্যকার ঘটনা। কাজের লোকদের বরখাস্ত করে বিশেষ লাভ হচ্ছে না। খন্দকারদের বিশ্বস্ত নিরাপত্তা মাধ্যম এসব হামলার কারণ হিসেবে বলেছে, যেহেতু তিন সন্তানের মধ্যে আরশি জাফর সিদ্দিকীর প্রিয় তাই হামলাকারীদের মূল টার্গেট এখন আরশি৷ এসব নিয়ে ইদানিং দুশ্চিন্তার শেষ নেই রুহানের। তাই বাবার সাথে পরামর্শ করে আরশির জন্য বডিগার্ডের ব্যবস্থা করেছে।
আরশি ওয়াশরুম থেকে বমি করে বের হতেই রুহান বলে,
–একটু বাইরে চলো।
পাল্টা প্রশ্ন করার শক্তি বা মানসিকতা কোনটাই আরশির নেই। তাই চুপচাপ দরজার বাইরে বের হতেই সে অতি পরিচিত একটা চেহারার সম্মুখীন হয়।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মাহেরকে দেখিয়ে রুহান আরশিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–You know each other, right? তাই ইন্ট্রোডাকশনে না গিয়ে কাজের কথা বলি। আরশি মি. হুদা আজ থেকে তোমার বডিগার্ডের দায়িত্ব পালন করবেন।

–চলবে?