#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব আটাশ
২৮.
‘আরে কি হলো বলবেন তো? এভাবে টেনে নিয়ে আসলেন কেন?’
ফায়াদ কোনো কথা বলছে না। অপরাজিতা বার বার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু কোনো জবাব পাচ্ছে না৷ অপরাজিতাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করলো। কোনো একটা শব্দ করছে না সে। অপরাজিতা অনেক বার জিজ্ঞেস করলো।কিন্তু জবাব না পাওয়ায় সেও গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।
ফায়াদ বিনা শব্দে শান্ত ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। বেশ অনেকটা সময় গাড়ি চালানোর পর গাড়ি এসে থামলো কোনো এক নির্জন জায়গায়।নির্জন বলতে ফাকা রাস্তা। রাস্তার এক সাইডে গাড়ি পার্ক করলো ফায়াদ।
গাড়ি থামিয়েই গাড়ির লাইট অফ করে দিয়ে সিটে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো চুপচাপ।যেন আশে পাশে সে বাদে কেউ নেই।
গাড়ি থামতেই অপরাজিতা আশে পাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছিল এখানে এসেছে কেন? তার উপর ফায়াদের লাইট অফ করে দেওয়ায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো সে। এমনিতেই বাহিরে অন্ধকার। গাড়িতেও লাইট অফ করে দিল। কি আজব!
অপরাজিতা ফায়াদকে ডেকে বলল,
‘এখানে কেন এসেছেন?’
জবাব এলো না কোনো। অপরাজিতা আবার জিজ্ঞেস করলো,
‘লাইট কেন অফ করলেন?’
তবুও জবাব এলো না।
‘কথা বলেন না কেন? আমি কি করসি?’
নাহ! কিছুই বলছে না। আচ্ছা মুশকিল তো!অপরাজিতা আবার বলল,
‘এভাবে টেনে নিয়ে আসলেন কেন? কথা বলছিলাম তো আমি।’
সাথে সাথে গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে গেল ফায়াদ। অপরাজিতা যেন আহাম্মক বনে গেল। হঠাৎ এমন করার কোনো মানে হয়?
অপরাজিতাও বের হলো গাড়ির দরজা খুলে। বের হয়ে দেখলো ফায়াদ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে ফায়াদের কাছে গেলেই ফায়াদ তার দিকে তাকালো শান্ত দৃষ্টিতে।সে দৃষ্টি দেখে অপরাজিতা বলল,
‘আমি কি করলাম!!’
ফায়াদ এবার মুখ খুলে বলল,
‘ওই লোকটা কে?’
‘আমাকে ক্যারাটে শিখিয়েছে তা তো বললামই।’
ফায়াদ ভ্রু কুচকে বলল,
‘তা আমিও শুনেছি। কিন্তু আমার ধারনা মতে সে তোমাকে পছন্দ করতো তাই না?’
অপরাজিতা কিছুটা ভেবে বলল,
‘হ্যা তা একটু করতো…ওয়েট আপনি জানলেন কিভাবে?’.
ফায়াদ বিরক্ত নিয়ে তাকালো।তার থেকে বিরক্তি এই মুহুর্তে কেউ নেই মনে হচ্ছে।ফায়াদ বিরক্ত নিয়ে বলল,
‘তার চাহনী দেখেই বুঝা যায়। তুমি তো ছিলে কথার ফুলঝুরি নিয়ে। বুঝবে কিভাবে! আরো বলো কথা বোকা কোথাকার! তাও আবার হেসে হেসে কথা বল!’
অপরাজিতা ফায়াদের কথা শুনে হা হয়ে গেলেও পরক্ষণেই তার মুখে চওড়া এক হাসি ফুটে। সে উৎফুল্ল হয়ে বলল,
‘আয়হায় আয়হায়!’
ফায়াদ কপালে ভাজ ফেলে রাগ দেখিয়ে হালকা ধমকে বলল,
‘কি হয়েছে!’
সাধারণত ফায়াদের রাগকে অপরাজিতার ভয় লাগে। বিনা কারনেই। কিন্তু আজ যেন ফায়াদের রাগ দেখে তার খুব মজা লাগছে। এ যেন মিষ্টি রাগ! খুবই মিষ্টি।
অপরাজিতা ফায়াদের গালে ছুয়ে বলল,
‘মি. ফায়াদ আহমেদ জেলাস?সিরিয়াসলি? ‘
ফায়াদ অপরাজিতা কথা শুনে খানিকটা বিব্রত হয়ে গাল থেকে হাত সরিয়ে বলল,
‘জেলাস! আমি?বাচ্চা মনে হয় আমাকে?’
অপরাজিতা হেয়ালি করে বলল,
‘না! একদমই না’
অপরাজিতার হেয়ালি দেখে ফায়দের যেন আর বাধ রইলো না। আজব তো তার ভালোবাসার মানুষকে কেউ মুগ্ধ চোখে দেখলে তার ভালো লাগবে নাকি?রাগ নিয়ে সে অপরাজিতাকে গাড়ির সাথে চেপে ধরে বলল,
‘হ্যা জেলাস!অনেক বেশি জেলাস! তোমাকে মুগ্ধ নয়নে আমি দেখবো আর কেউ না।যখন তোমাকে দেখছিল তার চাহনী আমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল।সহ্য হচ্ছিল না।তুমি এতো হেসে হেসে কারো সাথে কথা বলবে না।’
গাড়ির সাথে চেপে ধরায় ফায়াদ অপরাজিতার খুব কাছে। ফায়াদ কথা গুলো বলছে রাগ নিয়ে। কিন্তু অপরাজিতার যেন এই রাগ দেখতে ভালোই লাগছে।রাগের মধ্যে ভালোবাসা ঝরছে।
ফায়াদ এতো কাছে দাঁড়িয়ে থাকায় অপরাজিতা একটু অন্যরকম লাগছিল।ভালোবাসার মানুষ তো! কাছে গেলে আরেকটু কাছে যেতে ইচ্ছে করে।
অপরাজিতা নিজেকে সামলে ফায়াদের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলার চেষ্টা করলো,
‘আমি তো এভাবেই কথা বলি সবার সাথে।’
ফায়াদ এবার অপরাজিতার দিকে আরেকটু ঝুকে বলল,
‘বলবে না আর!’
অপরাজিতা ফায়াদকে আরো ঝুকতে দেখে ঢোক গিলে বলল,
‘আ আচ্ছা বলবো না। আপনি সরুন!’
ফায়াদ অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে।তারপর অপরাজিতার অবস্থা বুঝতে পেরে বাকা হাসলো। বলল,
‘সরবো?’
অপরাজিতা আবারো শুকনো ঢোক গিলল।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
‘হ হুম’
ফায়াদ আরেকটু ঝুকলো এবার। অপরাজিতার যেন নিশ্বাস আটকে যাবার উপক্রম। সে হালকা চিতকার দিয়ে বলল,
‘পিছে সরতে বলেছি!’
ফায়াদ যেন ঘোরে চলে যাচ্ছে। সে আরেকটু ঝুকলো অপরাজিতার মুখের উপর। অপরাজিতা চুল গুলো গুছিয়ে দিয়ে থুতনি ধরে মুখটা উচু করে ধরলো। অপরাজিতা অনুভুতির প্রেরণায় চোখ বন্ধ করে ফেলল।কাপছে সে। ফায়াদ অপরাজিতার থুতনি উঁচু করে ধীরে ধিরে মাথা ঝুকিয়ে থুতনির নিচে গলায় বেশ সময় নিয়ে একটা চুমু খেল। অপরাজিতা কাপতে কাপতে ধীর স্বরে বাধা দিতে বলল,
‘ফা ফায়াদ দ’
ফায়াদ অপরাজিতা ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিল তাকে। অপরাজিতার চোখ এখনো বন্ধ। তা দেখে মুচকি হাসলো ফায়াদ। অপরাজিতার ঠোঁটে নিজের আঙুলের উপর আলতো করে চুমু খেল।অপরাজিতা লজ্জায় নুয়ে গেল। ফায়াদ অপরাজিতার মাথা টা নিজের বুকে চেপে ধরলো৷
বুকে মাথা রেখে অপরাজিতা যেন আটকে রাখা নিশ্বাস টা ছাড়লো।ফায়াদের পিঠে আলতো করে হাত রাখলো।তার মনে হচ্ছিল সে বুঝি অজ্ঞানই হয়ে যাবে। কি তীব্র সে অনুভূতি! প্রিয় মানুষের স্পর্শ এভাবে শিহরন দেয়! মারা’ত্মক!
ফায়াদের বুকের ভেতরের হৃদ্যযন্ত্রটির প্রবল বেগে ছুটার শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে।হুম! অপরাজিতার সান্নিধ্যে এসে ডাক্তার সাহেবের হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে।
ফায়াদ অপরাজিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘আমি হারিয়ে যাচ্ছি তোমাতে। গভীরভাবে হারিয়ে যাচ্ছি! ভালোবাসা এমন কেন?কাছে থাকলেও অস্থির লাগে। দূরে গেলেও অস্থির লাগে। বড়ই অদ্ভুত তার নিয়ম!’
————–
‘তারা কোথায় যেতে পারে? ‘
ফারাজ হাসতে হাসতে বলল,
‘তা তো জানি না। তবে আমাদের গাড়ি টা নিয়ে গেল যে?’ এতো শপিং ব্যাগ নিয়ে যাওয়া টা কষ্ট।রিকশা ডাকেন তো।’
রিকশা করে তারা দুজন বাসায় চলে আসলো।আখি বেগম তাদের ফিরতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ফায়াদ কোথায়?’
ফারাজ কিছু বলার আগেই নীতি জবাব দিল,
‘অপরাজিতার সাথে আছে মণি। তাকে দিয়ে আসবে।’
ফারদিন আহমেদ নীতির কথা শুনে জিজ্ঞেস করলেন,
‘কোথায় গিয়েছে তারা?’
ফারাজ বলল,
‘এখন আমি যদি কিছু বলি তাহলে আম্মু আর নীতি বলবে আমি অসভ্য।’
ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘ওওওও আচ্ছা বুঝেছি।থাক থাক!’
উচ্চশব্দে হেসে দিল ফারাজ। হাসতে হাসতে রুমে চলে গেল সে।নীতি আগে উত্তর দিয়েছিল যাতে ফারাজ উলটা পালটা কিছু না বলে৷ লাভ কি হলো? ইনডিরেক্টলি বলেই দিল।আখি বেগম নীতিকে আস্তে করে বললেন,
‘লাভ নেই। সবগুলো একই।’
নীতি কপাল চাপড়ে গেল ফ্রেশ হতে।
ফায়াদ বাসায় ফিরতে মোটামুটি দেড়ি হলো। তার জন্য তাকে বাপ ভাইয়ের কাছে লেগ পুলিং এর স্বীকার হতে হয়েছে। সে আর কি করবে। বেচারা!
ডিনার শেষে সকলে যার যার রুমে চলে গেল। ফায়াদের চোখে তখনও অপরাজিতার সে কাপাকাপা মুখ ভাসছিল। মেয়েটা ভয় পাচ্ছিল তাকে। বেসামাল হয়ে গেলে সামাল দেওয়ার ভয় পাচ্ছিল।
ভেবে হেসে দিল ফায়াদ। ফায়াদ নিজেকে সামলে নিতে জানে।৷ প্রেমিকা বলে সামলে নিচ্ছে।তবে স্ত্রী হলে সামলাতে পারবে? মেয়েটাকি জাদু করে দিল তাকে?
মোবাইল বাজলো। মিষ্টি কণ্ঠ ভেসে আসলো,
‘আসসালামুআলাইকুম’
ফায়াদ জবাব দিল,
‘ওয়ালাইকুমুসসালাম’
অপরাজিতা লাজুক স্বরে বলল,
‘আমি সাজুগুজু করেছি এখন।’
ফায়াদ জিজ্ঞাসু ভাবে বলল,
‘হুম?’
অপরাজিতা আবারো একই ভাবে বলল,
‘আপনি একটু মনের চোখ দিয়ে দেখে বলেন তো কেমন লাগছে আমাকে?’
নিশব্দে হেসে দিল ফায়াদ। অপরাজিতা বুঝতে পারলো ফায়াদ হাসছে।সেও হাসছে। কারন সে এর আগেও একবার ফায়াদকে একথা বলেছিল জ্বালাতন করার জন্য। সেদিন ফায়াদ ফোন কেটে দিয়েছিল।
ফায়াদ হাসি থামিয়ে বলল,
‘পুচকি ফুলের মতো লাগছে’
অপরাজিতা এবার মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
‘এইহ!!’
ফায়াদ শব্দ করে হাসলো। অপরাজিতা গাল ফুলিয়ে বলল,
‘আপনি আমার কি নাম ছড়াচ্ছেন বলেন তো?আপনার বাসার সবাই আমাকে এটা বলে সুযোগ পেলেই’
ফায়াদ হাসতে হাসতে বলল,
‘আমি ছড়াই নি। রাফিয়া ছড়িয়েছে।’
‘সে কিভাবে জানলো?’
ফায়াদ একটু থেমে বলল,
‘আসলে আমার ফোনে থেকে। তোমার নাম্বার এটা দিয়ে সেভ করা।’
অপরাজিতা কপাল চাপড়ালো। বলল,
‘মানুষ দেয় প্রেয়সী, প্রিয়তমা, ভালোবাসা, সে, জান, প্রাণ, কলিজা! আর আপনি?’
ফায়াদ এবার শান্ত কণ্ঠে কৌতুক করে বলল,
‘তুমি ছিলে তখন ছোট আর কি দিব! তখন তো কলিজা ফুস্ ফুস ছিলে না।’
অপরাজিতা বলল,
‘তাহলে এখন চেঞ্জ করেন?’
‘কি দিব? লজ্জাবতী?’
অপরাজিতা জিজ্ঞাসা করলো,
‘আমি আবার লজ্জাবতী কবে হলাম?’
ফায়াদ দুষ্টুমি করে বলল,
‘কেন? মনে নেই? আজ —‘
অপরাজিতা সেই মুহুর্ত মনে করেই যেন আবার লজ্জা পেয়ে গেল। লজ্জা ঢাকতে চেয়ে বলল,
‘উফফ! আপনি-‘
ফায়াদ হাসলো। বলল,
‘আবার লজ্জা পাচ্ছো! ‘
‘মোটেই না’
ফায়াদ ডাকলো,
‘অপরাজিতা’
‘হুম’
‘ তুমি যখন আমার নাম ধরে ডাকলে এতো মধুর কেন শুনালো বলো তো?আরেকবার ডাকবে?’
অপরাজিতা লজ্জা পেয়ে বলল,
‘না’
ফায়াদ আর জোর করলো। এভাবে নানা কথা বলতে লাগলো তারা। কতোক্ষণ কথা বলবে কে জানে? অনুভূতির তো আর শেষ নেই।
ঘুম আসছিল না তাই ফারাজ আজ ছাদে গেল গিটার নিয়ে। ছাদে পৌছাতেই ফারাজ অন্ধকারে এক নারী মুর্তি দেখে ভরকে গেল কিছুক্ষণের জন্য। সামনে এগুতেই বুঝলো সেটা নীতি।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘এতো রাতে এখানে কি?’
নীতি হঠাৎ কারো আওয়াজ শুনে চিৎকার করে উঠলো। ফারাজ বলল,
‘আমি আমি’
ফারাজকে দেখে বুকে হাত চেপে স্বস্থি পেল সে। তারপর রাগ দেখিয়ে বললেন,
‘এভাবে কেউ কথা বলে?’
ফারাজ নিচে দেওয়াল ঘেঁষে বসতে বসতে বলল,
‘কিভাবে বলে?’
নীতি জবাব না দিয়ে তাকিয়ে রইলো ফারাজের দিকে৷ ফারাজ আবার জিজ্ঞেস করলো,
‘বললেননা তো কি করছিলেন?’
‘ঘুম আসছিল না।’
ফারাজ বলল,
‘ওহ’
নীতি এবার ফারাজের পাশে বসে বলল,
‘আমিও শুনবো।গান।’
ফারাজ কিছু বলল না। সুর তোলার বন্দোবস্ত করছে। নীতি হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
‘তার নাম কি? ইউর ওয়াইফ!’
ফারাজ এর হাত থেমে গেল কিছুক্ষণ এর জন্য। তারপর বলল,
‘মাহিয়া’
বলে সুর তুলতে শুরু করলো সে। অন্ধকারে নিস্তব্ধতা ভেদ করে বেজে উঠছে গিটারের সুর৷ ফারাজের নজর গিটারের দিকে। নীতির নজর ফারাজের দিকে৷ নীতি বুকে এক সূক্ষ্ম ব্যাথার উপস্থিতি পেল৷দিনে দিনে তা যেন একটু একটু করে বাড়ে। নীতি জানে সে ব্যথার কারন। শুধু বলতে চায় না৷
সুর পুরোপুরি আয়ত্তে আসলে ফারাজ দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বাজাতে থাকে সে সুর। প্রতিটি ছন্দ যেন হৃদয়ে তীরের মতো বিধছে। একজনের হারোনোর কারনে। আরেকজনের হারানোর ভয়ে৷ নীতি ঘোরের মাঝে ফারাজের কাধে মাথা রাখলো।তাতে ফারাজের হাত থামে নি। বাধা দেয় নি সে৷ মূলত সে বাধা দেওয়ায় অবস্থায় নেই এখন। তার বিচরণ এখন পুরোনো স্মৃতিতে।নীতির চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে অবিরাম। ফারাজের কাধ ভিজে যাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল নেই তার। সে তো তার মধ্যে নেই৷ থাকলে হয়তো দেখতো কারো না বলা যন্ত্রণা।
‘অনেক পথের পথিক আমি, ক্লান্ত সর্বশেষ
তোমার পথের ঠিকানা খুঁজে আমি আজ অবশেষ
তুমি আমার প্রথম ও শেষ জীবনের ভালোবাসা
তোমার মাঝে তাইতো আমার জীবনের শত আশা
কখনও ভাবিনি চলে যাবে তুমি
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনও বুঝিনি ফিরে আসবে না
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে..’
(চলবে)
#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব ঊনত্রিশ
২৯.
সকালের আলো ফুটতে শুরু করলেই নীতির ঘুম ভেঙে যায়। মাথা উঠাতে গিয়েই ঘাড়ে দারুন ব্যথা অনুভব করলো।ব্যথার কারনে মুখ দিয়ে আহ জাতীয় আওয়াজ বের হয়ে এলো। আওয়াজ শুনে ফারাজের ঘুম ভেঙে গেল। পাশে তাকিয়ে দেখলো নীতি জেগে গিয়েছে। হাই তুলে কাধ ডলতে ডলতে বলল,
‘ঘুম ভাংলো?’
নীতি চমকে তাকালো ফারাজের দিকে। ঘুমের ঘোরে থাকায় সে খেয়ালও করে নি কোথায় আছে। নীতিকে চমকে যেতে দেখে ফারাজ বলল,
‘কাল এখানেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। আপনার জন্যও আমিও আর নামতে পারি নি।’
নীতি লজ্জিত বোধ করলো। কি একটা ব্যপার হয়ে গেল এটা? কেউ জানলে তো খারাপ ভাববে। তাড়াতাড়ি এখান থেকে নামতে হবে৷ এটা ভেবে সে তাড়াতাড়ি করে দাঁড়িয়ে গেল। ফারাজের দিকে এক পলক তাকিয়ে স্যরি বলে নিচের দিকে দৌড়। ফারাজ নীতির কান্ড দেখে অবাক হলো না। সে জানত এমনি কিছু করবে নীতি।
ফারাজ এর মধ্যে কোনো তাড়া নেই। সে বসে বসে সকালের রঙবদল দেখছে। ভোরের বাতাস! ইশ এরকম স্নিগ্ধ মুহুর্ত আর কি আছে?
কাল রাতে ফারাজ যখন থামে তখন সে বুঝতে পারে নীতি তার কাধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। নীতিকে জাগাতে গিয়েও জাগাতে পারে নি। বসে থাকতে থাকতে সেও যে কখন ঘুমিয়ে গেল।
নীতি রুমে এসে টেনশন এ পড়ে গেল। ফারাজ তাকে কি ভাববে?যদি তাকে গায়ে পড়া ভাবে? সে তো ইচ্ছা করে কিছু করে নি। ভাবতে গিয়ে তার কান্না চলে আসলো।
সকালে নাস্তা করার সময় নীতিকে দেখে ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘রাতে ঘুমাও নি মামুনি?’
প্রশ্নে অপ্রস্তুত বোধব করলো নীতি। নীতি কি বলবে ভাবতে লাগলো। মূলত সে ফারাজের সাথে সারা রাত ছাদে ছিল ব্যাপার টা তাকে বেশ ডিস্টার্ব করে দিচ্ছে।
নীতি কিছু বলবে ভাবতে ভাবতেই ফারাজ বলল,
‘বাবা নীতিকে কিছু কাজ দিয়েছিলাম তাই করছিল বোধ হয়।’
ফারদিন আহমেদ খেতে খেতে ছেলেকে হালকা ধমকে বললেন,
‘বাড়িতে আবার কাজ দিস কেন ফা’জিল।রেস্ট ও নিতে দিস না মেয়েটাকে।’
ফারাজ নীতিকে বলল,
‘নীতি আজ আপনার অফিসে যেতে হবে না। বাসায় ঘুমোন।আপনার ঘুম হয় নি বোঝা যাচ্ছে।’
নীতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারাজ খাওয়া শেষ করে বের হয়ে গেল। নীতি ভাবছে ফারাজ কি তার উপর রাগ করেছে। তাকে খারাপ ভাবছে না তো?
ফায়াদ নীতিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
‘নীতি তোমার কি দুর্বল লাগছে?’
নীতি মিথ্যা বলল না। তার আসলেই কেমন যেন দুর্বল ও অস্থির লাগছে।
আখি বেগম নীতির পাশে ছিল তাই ফায়াদ তার মা কে বলল,
‘মা একটু দেখো তো ওর জ্বর আছে নাকি?’
নীতির কপালে গালে হাত দিয়ে দেখলেন আসলেই নীতির গায়ে জ্বর জ্বর।তিনি নীতিকে তাড়াতাড়ি ওষুধ খাইয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলেন ঘুমানোর জন্য।
ফায়াদ হাসপাতালের জন্য বের হতেই তার অপরাজিতার কথা মনে পড়লো। প্রতিদিন সে আগেই বের হয়। আজ একটু লেট এ বের হয়েছে। ভাবলো লেট যখন হয়েছেই গিয়ে অপরাজিতাকে চমকে দিবে।এই টাইমে অপরাজিতার ক্লাস হয়। হয়তো সেও রাস্তায় এখন।
গাড়ি ঘুরিয়ে অপরাজিতার কোচিং এর রাস্তায় গেল। সেখানে গিয়ে ফায়াদ নিজেই চমকে গেল। অপরাজিতা পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে কোচিং এর রাস্তার সাইডে। কাউকে সে সাহায্য ও করতে দিচ্ছে না। রাগে ফুসছে সে। ফায়াদ তাড়াতাড়ি বের হয়ে অপরাজিতা কাছে গেল।
‘এসব কি?’
ফায়াদকে দেখে অপরাজিতা খানিকটা অবাক হলো।ফায়াদের এখন এখানে থাকার কথা না। সে দাড়াতে গিয়েও ঠাস করে বসে পড়লো ব্যথার কারনে। ফায়াদ এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে দাড়া করালো তাকে। গাড়িতে বসিয়ে হাসপাতালেই নিয়ে গেল।
পা চেক করিয়ে নিজের চ্যাম্বারে আরেকটি চেয়ারে তার পাশে বসিয়ে রাখলো। পায়ে মোচড় খেয়েছে পড়ে গিয়ে।
ফায়াদ জিজ্ঞেস করলো,
‘কিভাবে হলো?’
রাগ টা আবার চড়ে বসলো অপরাজিতার মাথায়। ফোসফোস করে বলল,
‘কতগুলো ফাজিল ছেলে বাইক চালিয়ে এমন ভাবে আসছিল যে আমি রাস্তার যে পাশে ছিলাম হুট করে সেখানে এসে পড়ছে। সরতে গিয়ে পড়ে গিয়েছি। তারা হাসতে হাসতে চলে গেছে আমি পড়ে গিয়েছি দেখে।’
ফায়াদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।
‘তুমি রাস্তার সাইডেই ছিলে তো?’
ফায়াদ রেগে যাচ্ছে।
অপরাজিতা বলল,
‘হুম’
ফায়াদ বহু কসরত করে নিজেকে শান্ত করলো। এখন তো ছেলেগুলো আর পাবে না সে। শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ ছেলেগুলো থেকে সাবধান।নেক্সট টাইম এদের বাইক চোখে পড়লে আগে থেকে কেয়ারফুল থাকবে।’
‘জি’
ফায়াদ এবার স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘বই খাতা আছে না সাথে?’
‘হুম’
‘বের করে পড়া শুরু করো’
‘কি??’
চিৎকার করে উঠলো অপরাজিতার।
ফায়াদ স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘হ্যা পড়তে বসো। এখানেই পড়ো। আজ তো আর ক্লাসে যেতে পারছো না। পরে আমি দিয়ে আসবো।’
অপরাজিতা নাটকিয় ভাবে বলল,
‘কুচ ভি! আমি পড়বো না এখন।’
ফায়াদ মুচকি হেসে বলল,
‘আর ১০ দিন পর রেসাল্ট না?দেখবো তো কি করো’
অপরাজিতার রেজাল্টের কথা শুনেই কলিজার পানি শুকিয়ে গেল।রেজাল্ট খারাপ হলে সে খুব মন খারাপ করবে কারন সে অনেক পড়েছে।
আর কথা না বলে বই বের করে পড়তে লাগলো। ফায়াদও তার কাজ করছে। রোগী দেখছে।
বেশ অনেকটা রোগী দেখার পর ফায়াদ অপরাজিতাকে বলল,
‘মেডিক্যাল এর জন্য প্রস্তুতি নাও নি কেন?’
অপরাজিতা বই থেকে মাথা তুলে টেবিলে ভর করে গালে হাত দিয়ে বলল,
‘আপনি ডাক্তার তো।’
‘তো?’
অপরাজিতা ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
‘দুজনেই ডাক্তার হলে সংসার ভেসে যাবে। সারাদিন হাসপাতালেই থাকলে আপনারে দেখবো কখন!’
ফায়াদ মাথায় হাত দিয়ে বলল,
‘এটা কোনো কারন হলো?’
‘জি!আমি লেকচারার হতে চাই’
ফায়াদ বাহবা দিয়ে বলল,
‘উমম গুড চয়েস।’
অপরাজিতা চমৎকার এক হাসি দিল।
ফায়াদ এবার জিজ্ঞেস করলো,
‘তুমি তখন কাউকে ধরতে দিচ্ছিলে না কেন?সাহায্য করতে দিচ্ছিলে না কাউকেই।’
অপরাজিতা গাল ফুলিয়ে বলল,
‘মেজাজ খারাপ লাগছিল। ছেলেগুলোকে সামনে পেলে হাড্ডি ভে’ঙে হাতে ধরায় দিতাম।’
ফায়াদ চোখ বড় বড় করে বলল,
‘আমার সামনে তো খুব ভদ্র সাজো!’
অপরাজিতা দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘আমি তো ভদ্রই’
ফায়াদ মাথা নেড়ে বলল,
‘হুম খুব! তো আমাকে সাহায্য করতে বাধা দাও নি কেন?’
অপরাজিতা এবার নাটক শুরু করলো,
‘আপনি হচ্ছেন আমার প্রাণপ্রিয় প্রণয় পুরুষ যাহাকে আমি বহুত বহুত পেয়ার —‘
ফায়াদ অপরাজিতার গাল টেনে বলল,
‘হয়েছে হয়েছে।পড়েন!’
খিলখিল করে হাসলো অপরাজিতা। ফায়াদ দেখলো তা মন দিয়ে।
দুপুরবেলা নীতির ঘুম ভেঙে গেল। জ্বর বাড়ছে। কিন্তু তাকে কাবু করতে পারে নি এখনো। নীতির কিছুই ভালো লাগছে না। ফারাজ আজ একটু অন্যরকম ছিল তার সাথে। কারন কি?না! এভাবে সে থাকতে পারবে না। তার এখনি যেতে হবে ফারাজের কাছে।
দুর্বল শরীর নিয়েই রেডি হলো সে।রুম থেকে বের হতেই আখি বেগম প্রশ্ন করলেন,
‘এ কি কোথায় যাচ্ছো?’
‘অফিসে মণি।’
‘কিন্তু কেন? তোমাকে দেখে তো বেশি সুস্থ মনে হচ্ছে না।’
নীতি ব্যাকুল ভাবে বলল,
‘একটু কাজ আছে মণি। আমাকে যেতে হবে।’
বলে সে অপেক্ষা করলো না। বের হয়ে গেল। আখি বেগম পিছু ডেকেছিলেন কিন্তু শোনে নি মেয়েটা।
আখি বেগমের টেনশন লাগলো। তিনি ফারাজকে ফোন করে জানিয়ে দিলেন।
নীতি অফিসে পৌছাতেই সোজা ফারাজের কেবিনে চলে গেল। সে যেহেতু ফারাজের অ্যাসিস্ট্যান্ট তাই কেউ কিছু ভাবলো না। কেবিনে প্রবেশ করতেই দেখলো ফারাজ একজন ক্লাইন্ট এর সাথে কথা বলছে। নীতিকে দেখে ফারাজ কিছু বলল না। নীতিও কিছু বলল না।দাঁড়িয়ে রইলো কথা শেষ হওয়ার।
কথা শেষ হতে ক্লাইন্ট রুম থেকে বের হলো।ফারাজ চেয়ার থেকে উঠে নীতির সামনে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
‘আপনি অসুস্থ হয়েও অফিসে এসেছেন কেন?’
‘আপনি আমাকে খারাপ ভাবছেন?’
নীতি একটা ব্যপারে ভয় পাচ্ছে। সে জানে না সেটা হয়েছে কিনা। ফারাজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘খারাপ কেন ভাববো?’
নীতিব অসহায় ভাবে বলল,
‘আপনি আমার সাথে আই কন্টাক্ট স্কিপ করে কথা বলছেন।’
ফারাজ এবার স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘আপনি ভুল ভাবছেন।বাসায় যান আমি ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি।’
নীতি ব্যাকুলভাবে বলল,
‘স্যার প্লিজ!’
ফারাজ নীতির এই অবস্থা দেখে আর লুকাতে চাইলো না। সে নীতির মুখপানে তাকালো। তারপর বলল,
‘আপনি কাল ঘুমের ঘোরে কথা বলছিলেন জানেন?কি বলেছিলেন জানেন?’
নীতির চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। এই ভয়টাই সে পাচ্ছিল। সে হয়তো জানে সে কি বলতে পারে। কিন্তু সে তো বলতে চায় নি কখনো। এভাবে তো কখনোই নয়। ফারাজ কি তাকে এখন দূরে সরিয়ে রাখবে? আগের মতো কথা বলবে না?
নীতি নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। হুট করে একা লাগছে তার। মনে হচ্ছে এবার বোধ হয় সত্যিই একা হয়ে যাবে সে।
ফারাজ আর কিছু বলবে তার আগেই নীতি বের হয়ে গেল। ফারাজ সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নীতি ম্যাচুর মেয়ে।সে আশা করে নীতি উলটা পালটা কিছু করবে না।
নীতি অফিস থেকে সোজা বাসায় আসলো। এসেই রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল।আখি বেগম ডাকতেই সে বলল,
‘মণি আমি একটু ঘুমাবো। পড়ে দরজা খুলে দিব।’
আখি বেগম সেটা ফারাজকে জানাতেই ফারাজ বলল টেনশন নিতে না। আখি বেগম ভাবলেন হয়তো মেয়েটার তার পরিবারের কথা মনে পড়ছে।
সন্ধ্যা বেলা নীতি দরজা খুলে দিয়েছিল।আখি বেগম রুমে ঢুকে বুঝলেন খুব জ্বর এসেছে মেয়েটার। পট্টি দিয়ে দিলেন বেশ কিছুক্ষন নীতির সাথে বসে ছিলেন তিনি। যত্ন পেয়ে নীতি আখি বেগমের কোলে মাথা দিয়ে শুলো। আখি বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে নীতির। নীতির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সে থেমে থেমে বলল,
‘আমার কেউ নেই কেনো মণি? আমি এতো একা কেন?’
আখি বেগমের কলিজায় বিধলো কথাটা। সে নীতিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আছি তো মা।আমরা আছি তোমার জন্য।তুমি আমার মেয়ে না?’
নীতি আখি বেগমকে আরেকটু শক্ত করে ধরলো৷ আখি বেগম ধীরে ধীরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন৷ আবার ঘুমিয়ে গিয়েছে সে। ফায়াদ তাকে চেক করে ওষুধ দিয়েছে। অপরাজিতা ফোন এ জানতে পেরে আসতে চায় কিন্তু ফায়াদ মানা করে। যেহেতু রাত হয়ে গিয়েছে। অপরাজিতা জিদ করছিল বলে ধমকও খেয়েছে। শেষে রাগ করে অপরাজিতা ফোনই কেটে দিয়েছে।
ফারাজ বাসায় এসেছে বেশ লেট করে৷ বাসায় এসে নীতির অবস্থা জেনে খুব খারাপ লাগলো। সবাই যখন যার যার রুমে তখন ফারাজ আস্তে ধীরে নীতির রুমে আসে। একদিনেই শুকিয়ে গিয়েছে নীতি।ফারাজের খুব মায়া লাগলো। সে বেশ অনেকটা সময় নীতির পাশে বসে ছিল।
নিজের রুমে যাওয়ার জন্য উঠতেই নীতি ধীর স্বরে ডাক দিল,
‘ফারাজ’
ফারাজ পিছু ঘুরলো। এই প্রথম মেয়েটা তাকে নাম ধরে ডেকেছে। সুস্থ অবস্থায় থাকলে কি ডাকতো?
নীতি বলল,
‘আমার কথা শুনুন প্লিজ!’
ফারাজ আবার বসলো। আস্বস্ত করে বলল,
‘শুনছি।’
নীতি ফারাজের দিকে তাকিয়ে আবার কেদে উঠলো । সে দুর্বল কণ্ঠে ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলল,
‘আপনি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না।আমি আপনাকে কখনোই বলতাম না। আমার কেউ নেই ফারাজ। আপনি আমাকে বাচিয়েছিলেন, আপনি পাশে ছিলেন বলে বেচে আছি। নাহয় আমার আকড়ে ধরে বাচার মতো কেউ নেই। আপনি আমার সাথে দূরের মানুষের মতো কথা বলবেন না প্লিজ।আমার খুব খারাপ লাগছে।আমি অনুভুতি লুকিয়ে রাখতে পারবো তবে আপনার থেকে দূরে একা বাচতে পারবো না। প্লিজ!’
ফারাজ শুনলো সব। সে শান্তভাবে বলল,
‘ঘুমোন নীতি। আপনার অনেক জ্বর।ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবেন’
নীতি আবার বলতে চাইলো,
‘আপনি আপনি’
ফারাজ থামিয়ে দিল।
‘উহু কথা নয়’
মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। নীতি বিরবির করতে করতে আবার তলিয়ে গেল ঘুমে। ফারাজ দরজা ভিরিয়ে দিয়ে বের হয়ে এলো রুম থেকে। জীবন তাকে কোথায় নিয়ে যাবে জানে না সে। তবে বড্ড ক্লান্ত সে। হয়তো নীতি মেয়েটাও তাই।
(চলবে)