প্রেম প্রেম পায় পর্ব-৩৬+৩৭

0
446

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব ছত্রিশ

৩৬.
ধরনীর বুকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলো। বাস চলছে দ্রুত গতিয়ে। সকলে এটা ওটায় ব্যস্ত।ফায়াদ অপরাজিতার মা বাবা রা নিজেদের মধ্যে কথা বলায় ব্যস্ত।রিজু সামির দুজনে কলেজ লাইফ নিয়ে কথা বলছে।রাফিয়া তো দুই সিট পেয়ে আরামসে বসে মুভি দেখছে ফোনে। ফারাজ আপাতত চোখ বন্ধ করে সিটে গা এলিয়ে দিয়েছে। নীতি একটা গল্পের বই পড়ছে।বইটা তাকে ফারাজই দিয়েছে আপাতত সময় কাটিয়ে পড়ার জন্য।

আর এদিকে অপরাজিতা ফায়াদের সাথে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। ফায়াদ তাকে কতোবার বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু সে মানতে নারাজ। তখন ফায়াদ রাফিয়াকে মিথ্যা কেনো বলালো সেটা অপরাজিতা জানতে চাচ্ছে। কিন্তু ফায়াদ এখনি কিছু বলতে চায় না। তাই সে কথা ঘুড়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু মেয়েটা গাল ফুলিয়ে তার সাথে কোনো কথাই বলছে না৷ এই পর্যায়ে গিয়ে ফায়াদ পরাজয় স্বীকার করে বলল,
‘আচ্ছা শুনো৷বলছি’

অপরাজিতা তাড়াতাড়ি ফায়াদের দিকে ঘুড়ে উৎসুক চোখে তাকালো জানার জন্য। ফায়াদ শ্বাস ফেলে বলল,
‘আমি চাই ফারাজ আর নীতি একসাথে হোক। তাই’

অপরাজিতা অবাক হলো।সাথে খুশিও হলো। ফারাজের কথা বলেছে ফায়াদ তাকে। সেও চায় ফারাজ এগিয়ে যাক৷ কিন্তু এটা তার কাছে লুকানো কি আছে?সে জিজ্ঞেস করলো,
‘তো এটা আমাকে বললে কি হতো?’

ফায়াদ শান্ত দৃষ্টিতে বলল,
‘কি আর হতো তুমি ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানাতে।’

অপরাজিতা খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে বলল,
‘তা তো এখনো জানাবো।পাপা,মামনি শুনে খুশি হবে।’

বলে সে দাঁড়িয়ে যেতে নিলে ফায়াদ তাকে হাত ধরে বসালো।বলল,
‘এজন্যই বলি নি। একে তো নাচুনি বুড়ি তার উপর ঢোলের বারি! ওরা এখনো মিউচুয়াল পর্যায়ে যায় নি৷ সব ঠিক হোক আগে। তারপর’

অপরাজিতা গাল ফুলিয়ে সিটে বসে রইলো। ফায়াদ তাকে নাচুনি বুড়ি বলল।অপরাজিতাকে গাল ফুলাতে দেখে ফায়াদ বলল,
‘ভুল বলেছি? তুমি নাচো না?আমি তো জানতাম তুমি নৃত্য জানো।’

অপরাজিতা তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। বলল,
‘হয়েছে হয়েছে।’

বলে জানালার বাহিরে তাকালো। ফায়াদ অপরাজিতার কোমর চেপে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। সবাই নিজেদের সাথে ব্যস্ত তাই কেউ খেয়াল দিচ্ছে না। অপরাজিতা ফায়াদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘কি আজব! আপনাকে আমি ভদ্র ভাবতাম। আপনি ভরা বাসে কি শুরু করলেন?’

ফায়াদও অপরাজিতা মতো করে বলল,
‘তুমি আমার বউ তাই আজবের কিছু নাই। তুমি আমাকে ভদ্র না, নিরামিষ ভাবতে। বউয়ের কাছ থেকে এতো বড় অপবাদ আমি নিতে পারি না।আর ভরা বাসে কেউ খেয়াল দিচ্ছে না তাই তুমি ওসব চিন্তা না করে আসল কথায় আসো।’

অপরাজিতা আর ফায়াদ একে অপরের খুব কাছাকাছি বসে আছে। অপরাজিতা জানালার সাইডে বলে বাসের বাকিরা কেউ দেখলেও বুঝবে না। তারা ফিসফিস করে কথা বলছে।
অপরাজিতা জিজ্ঞেস করলো,
‘আসল কথা কি?’

ফায়াদ খোচা মেরে বলল,
‘ওই যে বলেছিলে বিয়ের পর প্রথম কোথাও যাচ্ছি আমরা।’

অপরাজিতার মনে পড়লো। মনে মনে নিজেকে বকা দিল। তারপর বলল,
‘কই না তো। ওটা আবার কী?’

ফায়াদ হাসলো। কোমরে চাপ প্রয়োগ করে কানের কাছে কন্ঠ আরেকটু নিচে নিয়ে বলল,
‘ওটা কি জানো না?ওটাকে হানিমুন বলে। যেখানে–‘

অপরাজিতা ফায়াদের মুখ চেপে ধরলো।ঢোক গিলে বলল,
‘ভুল হয়ে গিয়েছে।আর বলবো না এসব’

ফায়াদ অপরাজিতাকে ছেড়ে দিল। তার মুখে রাখা অপরাজিতার হাতে চুমু খেয়ে সিটে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
‘সেটা তোমার হয়েছে। আমার ভুল হয় না। যা করি একেবারে সঠিক টাই করি।’

অপরাজিতা ঢোক গিলল আবারো। পরবর্তী দিনগুলোর কথা ভেবে তার বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে।তারা এখন হাজবেন্ড ওয়াইভ। তারমানে! নাহ ভাবতে পারছে না অপরাজিতা।সে একবার ফায়াদের দিকে তাকিয়ে আবার বাহিরে তাকালো। কিছু হাওয়া খাওয়া যাক আপাতত।

রাতের ৮ টার পর রাফিয়া চিল্লাচিল্লি শুরু করলো। তার হঠাৎ চিল্লানিতে চমকে উঠেছে সবাই। রাফিয়া চিল্লাচ্ছে। তার নাকি বোরিং লাগছে।এভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ট্রিপ করে মানুষ?

রিজু জিজ্ঞেস করলো,
‘তো কি করবে?’

রাফিয়া সিট থেকে উঠলো। দাড়িয়ে ফারাজকে উদ্দেশ্য করে চিল্লিয়ে ডাকলো,
‘ফারাজ ভাই!! ‘

ফারাজ পিছে ঘুরেই ছিল। বলল
‘কি?’

রাফিয়া হাসি দিয়ে বলল,
‘শুরু করো রে ভাই। আর কতো চুপচাপ বসে থাকবা।’

ফারাজ হেসে সবার দিকে একবার তাকালো। তারপর রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘করবো?’

‘হুম হুম’

সামির জিজ্ঞেস করলো,
‘কি করবেন ভাইয়া?’

ফারাজ সিট থেকে বের হয়ে একেবারে পিছে গেল। একেবারে পিছনের সিটে কিছু জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। সেখান থেকে ফারাজ তার গীটার টা নিল। এতোক্ষনে সবার বোধগম্য হলো রাফিয়া কি করতে বলেছে। ফায়াদ তা দেখে মুচকি হাসলো। নীতি বই রেখে তাকিয়ে আছে।অপরাজিতাও উৎসুক মুখে তাকিয়ে আছে।
সুর উঠলো।সকলে আনন্দে চিৎকার করে উঠলো।হৈ-হুল্লোড় পড়ে গেল।

‘গাড়ি চলে না, চলে না
চলে না রে
গাড়ি চলে না ॥

চড়িয়া মানবগাড়ি
যাইতেছিলাম বন্ধুর বাড়ি
মধ্য পথে ঠেকলো গাড়ি
উপায়-বুদ্ধি মিলে না ॥

সকলে গলা মিলালো। ফারাজ ভীষণ মজা করে গাচ্ছে মাথা ঝাকিয়ে গাচ্ছে।নীতি হাসছে।

‘গাড়ি চলে না, চলে না
চলে না রে
গাড়ি চলে না ॥’

এতোটুকু গেতেই অপরাজিতা বলল,
‘গাড়ি চলছে দেবরজি। ভালোভাবে দেখুন!’

হাসলো ফারাজ তবে গিটারে হাত থামলো না। অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে গাওয়া শুরু করল,
‘আমায় টেনে নাও না
তোমার ওই স্বপ্নের ঠিকানায়
চল না হারিয়ে যায় আমরা
ভালোবাসারই হাওয়ায়
যাইমু লং ড্রাইবো
বাজাইমু বাংলা গান
তুমি আমি দুই জনে করবো কত ফান’

খিল খিল করে হেসে উঠলো অপরাজিতা।হাসতে হাসতে ফায়াদের গায়ে ঢোলে পড়লো।ফারাজ এতোটুকু গেয়ে থামতেই নীতি বলল,
‘তারপর?’

গিটার এখনো চলছে।সামির শুরু করলো চির চেনা কিছু লাইন,

‘হাসতে দেখো, গাইতে দেখো
অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো,
দেখো না কেউ হাসি শেষে নীরবতা।
হাসতে দেখো, গাইতে দেখো
অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো,
দেখো না কেউ হাসি শেষে নীরবতা।’

গিটারের সুর আরো জোড়ালো হলো।ফারাজ যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে সে গিটারে কতোটা পারদর্শী। হাতের সাথে সে নিজেও মেতে আছে গিটারে।সকলে একসাথে,

‘বোঝে না কেউ তো চিনলো না
খোঁজে না আমার কি ব্যথা,
চেনার মতো কেউ চিনলো না
এই আমাকে।’

রিজু এবার অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘সফ্ট কিছু শুনবো। অপরাজিতা ইটস ইউর টার্ন।’

সকলে অপরাজিতার দিকে তাকালো। অপরাজিতা তাতে একটু ভ্যাবাচেকা খেলেও নিজেকে সামলে নিল।

গিটারের সুর নরম হলো।তবে থামলো না। তা যেন অপরাজিতার কন্ঠের অপেক্ষা করছে। অপরাজিতা ফায়াদের দিকে তাকিয়ে শুরু করলো,
‘শীতল বাতাসে,দেখেছি তোমায়
মেঘ মিলনে চেয়ে রাগ করোনা
মন চায় তোমায় আজি রাতে

বৃষ্টি তো থেমেছে অনেক আগেই
ভিজেছি আমি একাই
আসতো যদি বিভীষিকা
খুঁজেও পেতেনা আমায়।
মেঘ মিলনে চেয়ে রাগ করোনা
মন চায় তোমায় আজি রাতে রাতে রাতে ।’

সকলে যেন গানে ডুবে গিয়েছে। গানটা মন শীতল করার মতো। সকলে অনুভুতি তে ডুবে যাওয়ার আগেই সামনে থেকে ভেসে আসলো,

‘বকুল ফুল বকুল ফুল
সোনা দিয়া হাত কানও বান্ধাইলি।
বকুল ফুল বকুল ফুল
সোনা দিয়া হাত কানও বান্ধাইলি।’

সকলে সামনে তাকালো। ফারদিন আহমেদ গেয়েছেন লাইনগুলো। হেসে উঠলো সকলে মিলে। গিটারের সুর আবার জোড়ালো হলো।সকলে গলা মিলালো,

‘শালুক ফুলের লাজ নাই
রাইতে শালুক ফোটে লো
রাইতে শালুক ফোটে।
শালুক ফুলের লাজ নাই
রাইতে শালুক ফোটে লো—‘

এভাবে চলতে থাকলো বেশ অনেকক্ষন।সকলে যেন পুরো বাসটা মাতিয়ে রেখেছে। ফারাজ শুধু মাত্র ফ্যামিলির জন্য এই বাসটা ভাড়া করেছে। বেশি বড় না। আবার ছোটও না। তাই নিজের মতো করে আনন্দে মশগুল থাকতে পারছে সবাই।

অবশেষে একটা সময় গানের আসর শেষ হলো। আনন্দ করতে করতেও ক্লান্তি আসে।সকলে যার যার সিটে বসলো। ফারাজ তার সিটে যেতেই দেখলো নীতি জানালার পাশে বসে পড়েছে।
ফারাজ তা দেখে নীতির সিটে বসে বলল,
‘জানালার পাশে না আমি ছিলাম?’

নীতি বলল,
‘না তো’

ফারাজ হেসে মাথা ঝাকিয়ে বলল,
‘আমার বিরোধিতা করছেন আজকাল!গ্রেট!’

নীতি মুচকি হাসলো।
রাফিয়া এতোক্ষন লাফিয়েছে। সে ভীষণ ক্লান্ত। এখন সিটে বসে গরমে লাগছে তার। জানালা পুরোটা খুলে দিল। বাতাসে মন জূড়িয়ে যাচ্ছে।

রিজু তার অবস্থা দেখে বলল,
‘কিরে বোরিং লাগে এখনো?’

রাফিয়া বলল,
‘ভাইয়া তুমি থামো তো!’

রিজু আর সামির হেসে দিল। রাফিয়া রিজুকে বলল,
‘পাইছো একটা বন্ধু।ইশ সামিয়া আসলে আমারো সঙ্গী থাকতো!’

রিজু চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। রাফিয়া শয়তানি হাসি দিল।
নাচানাচি করে রাফিয়ার ক্ষুদা লেগে গেছে। সে বলল,
‘ফারাজ ভাইয়া!! খাবার কি দিবা না?’

খাবারের ব্যবস্থা আগেই করেছে।রাতের খাবারটা গাড়িতে করবে আর সকালে সেখানে পৌছে করতে পারবে।আরো আগে খেয়ে ফেলা যেত।কিন্তু মজা মাস্তিতে ব্যস্ত থাকায় লেট আর কি।
সবাইকে সবার খাবার দেওয়া হলো। প্যাকেট বিরিয়ানি। বিরিয়ানির আবদার অপরাজিতার ছিল।

সকলে খাওয়া দাওয়া শুরু করলো। অপরাজিতা প্যাকেট খুলতে নিলেই ফায়াদ তা নিয়ে গেল। তা দেখে অপরাজিতা বলল,
‘আ? আমি খাবো না?’

ফায়াদ একটা প্যাকেট খুলতে খুলতে বলল,
‘বেশি বুঝো কেন?আমি খাইয়ে দিচ্ছি। হাতে মাখানোর দরকার নেই।’

অপরাজিতা তা শুনে বলল,
‘ওহ আমি ভাবলাম–‘

বলতে পারলো না। খাবার ঠুসে দিয়েছে ফায়াদ অপরাজিতার মুখে। গাল ফুলিয়ে খাবার চিবুচ্ছে সে।
ফায়াদ অপরাজিতাকেও খাওয়াচ্ছে আবার নিজেও খাচ্ছে। অপরাজিতা প্রথমে গাল ফুলিয়ে রাখলেও তার অনেক সুখ সুখ লাগছে।

নীতি কেন যেন পিছে ঘুরেছিল। ফায়াদ আর অপরাজিতার দৃশ্য চোখে পড়লে তড়িৎ গতিতে সামনে ঘুরে গেল। তা দেখে ফারাজ আড়চোখে দেখলো পিছে। বিষয় বুঝতে পেরে মিটমিট হাসলো। নীতিকে বলল,
‘লজ্জা পেলেন?’

নীতি অস্বীকার করলো,
‘নাহ কিসের জন্য?’

ফারাজ বলল,
‘থাক লজ্জা পেতে হবেনা। আপনি চাইলে আমিও আপনাকে খাইয়ে দিতে পারি।’

নীতি চোখ বড় বড় করে তাকালো। তা দেখে ফারাজ হেসে দিল। বলল,
‘কিডিং কিডিং’

নীতি খাবারের দিকে তাকাতেই ফারাজ আবার বলল,
‘তবে আপনি চাইলে সত্যি–‘

নীতি চোখ গরম করে তাকালো। ফারাজ হাসতে হাসতে খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল। নীতি ভাবছে ফারাজ আজকাল এমন অন্য সুরে গান গাইছে কেন?লাগে যেন ফ্লার্ট করে।আগে তো করতো না।নাকি নীতির মনের ভুল?’

সকলের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই যার যার সিটে গা এলিয়ে দিল। বাসের লাইট অফ করে দেওয়া হলো। এখন যা আবছা আলো আছে তা বাহিরে থেকে আসছে।সারা বাস জুড়ে নিশব্দতা। মাঝে মাঝে ভেসে আসছে ফিসফিস কথা বার্তা।বাসে যেন এক আলাদা শান্তি বিরাজ করছে।
রিজু জানালার পাশে বসে বাতাস খেতে খেতে ঘুমিয়ে গিয়েছে। সামির তার মোবাইলে লুডু খেলছে। রাফিয়া তা দেখে বলল,
‘লুডু খেলেন?’

‘হুম’

‘আমিও খেলবো।’

সামির মাথা তুলে তাকালো।যার সাথে খেলছিল তার টা কেটে দিয়েছে। বলল,
‘আচ্ছা ইনভাইট দিচ্ছি।’

দুজন দুজনকে ফেসবুকে অ্যাড করে লুডু ইনভাইটেশন পাঠিয়ে খেলতে লাগলো। তার সাথে নানা চ্যাটিং তো আছেই। কারন এখন কথা বললে বাকিদের ঘুম নষ্ট হবে। দুজনেই দুজনকে হারানোর চেষ্টা করছে। তা নিয়ে যে যে যার সিটে বসে নিশব্দে হাসছে।এখন দেখা যাক। কে হারে?

নীতি জানালার বাহিরে তাকিয়ে ছিল। ফারাজ নীতিকে বাহু ধরে খানিক নিজের কাছে আনলো। নীতি চমকে উঠে কিছু বলতে নিলে ফারাজ ইশারায় চুপ থাকতে বলল।তারপর মোবাইলে একটা মুভি চালু করে ইয়ারফোন লাগিয়ে একটা নীতির কানে আরেকটা নিজের কানে দিয়ে নীতির কানের কাছে ঝুকে ফিসফিস করে বলল,
‘মুভি দেখেন আমার সাথে। একা দেখতে ভালো লাগে না।’

ফিসফস কন্ঠে নীতির শিহরণ বয়ে গেল। নিজেকে বেশি কিছু ভাবার সুযোগ দিল না। সে ফারাজের হাতের মোবাইলে মনোযোগ দিল। ফারাজ তা দেখে মুচকি হাসলো। আর মাত্র কিছুদিন!

অপরাজিতা ফায়াদের বুকে মাথা রেখে বাহিরে তাকিয়ে ফিসফিস করে নানা ধরনের কথা বলছে। ফায়াদ শুনছে।এই কথা শুনার জন্যই তো এই মেয়েকে নিজের জীবনে জড়ানো। এর কথা না শুনলে যেন ফায়াদের খালি খালি লাগে।বিগত কয়েক বছর ধরে অপরাজিতা ফায়াদের সাথে এতো কথা বলেছে। হয় ফোনে নাহয় হাসপাতালে এসে। তবুও বলেছে। এখন যেন এই কণ্ঠ শুনা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

অপরাজিতা এক পর্যায়ে বলল,
‘কিছু বলছেন না কেন?’

ফায়াদ মাথায় চুমু খেয়ে বলল,
‘শুনছি ফুল’

অপরাজিতা বুক থেকে মাথা তুলে বলল,
‘আপনি আমাকে ফুল ডাকেন কেন?’

অপরাজিতা বুক থেকে মাথা তুলাতে বিরক্ত হলো ফায়াদ। সে আবার অপরাজিতাকে বুকে টেনে বলল,
‘উঠবে না।’
তারপর বলল,
‘ফুল ডাকি কারন তুমি ফুল। আমার পুচকি ফুল। আলাদা কোনো সাহিত্যিক কারনে ডাকি না। মন চায় তাই ডাকি।’

অপরাজিতা বুকে চিমটি কেটে বলল,
‘হ্যা এজন্য এখন আপনার পরিবারের সবাই সুযোগ পেলেই পুচকি ফুল ডাকে।’

ফায়াদ হাসলো। অপরাজিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ঘুমাও।’

আর কথা বলল না অপরাজিতা।বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটু মাথা উঠিয়ে দেখলো ফায়াদের চোখ বন্ধ। সে আবার মাথা নামিয়ে ফায়াদের ট্রিম করা দাড়িওয়ালা থুতনির নিচে গলায় চুমু খেল। একবার চুমু খেয়ে মন ভরলো না। দ্বিতীয় বার আবার চুমু খেল। তারপর বুকে মাথা রেখে আস্তে করে বলল,
‘ভালোবাসি অনেক বেশি’

ফায়াদ চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় বলে উঠলো,
‘আমার এখন অন্যরকম লাগছে।’

ফায়াদের কণ্ঠ শুনে চমকে লজ্জা পেল অপরাজিতা।ইশ!সে ভেবেছিল ফায়াদ ঘুমে। এবার আর মুখই তুলল না। চোখ খিচে বন্ধ করে ফায়াদের বুকে পড়ে রইলো। ফায়াদ নিশব্দে হেসে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বিরবির করে বলল,
‘আমিও ভালোবাসি অনেক বেশি। আমার ফুল। ভালোবাসার পুচকি ফুল।’

(চলবে)

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব সাইত্রিশ

৩৭.
সকালের আলো ফুটতে শুরু করলো। আর কিছু ঘন্টার মধ্যে তারা পৌঁছে যাবে।চারপাশে আবছা আবছা আলো ফুটছে।ফায়াদের ঘুমটা ভেঙে গেল৷ ঘুম ভাংতেই দেখলো অপরাজিতা গুটিসুটি মেরে তার বুকের মাঝে ঘুমাচ্ছে। দেখে মুচকি হাসলো সে। বাহিরে তাকিয়ে দেখলো ভোর। বাসের সবাই ঘুমাচ্ছে। ঘুমানোর আগে সবাই জানালা অফ করে দিয়েছিল বাসের। ফায়াদ জাগনা পেতেই হাত বাড়িয়ে পাশের জানালা টা একটু খুলতে চাইলো। ভোরের বাতাস উপভোগ করতে চাইছে সে। হাত বাড়িয়ে জানালা হালকা খুলতেই অপরাজিতা নড়েচড়ে উঠলো। বাতাস গায়ে লাগতেই ফায়াদের আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলো৷ আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ফায়াদ তাকে৷ গায়ের চাদর টা আরেকটু ভালোভাবে জড়িয়ে দিল।
অপরাজিতা বেশ কিছুক্ষন নড়েচড়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলল।প্রথমে বুঝতে একটু সময় লেগেছে সে কোথায়। পরে মনে পড়লো।এটাও বুঝলো সে কারো বুকের উষ্ণতায় মেখে আছে। মানুষটা কে সে জানে৷ আর তা জানে বলেই তার অধর কোণে হাসি ফুটে উঠলো।
এরকম একটা সকালই তো সে কল্পনা করতো। যেখানে চোখ খুলেই ভালোবাসার মানুষের মুখ দেখা যাবে।

অপরাজিতা আস্তে করে মাথাটা উচিয়ে দেখলো ফায়াদ তাকে আঁকড়ে ধরে বাহিরে তাকিয়ে আছে। সে ফায়াদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ ফায়াদ বলল,
‘সুপ্রভাত’

অথচ ফায়াদের চোখ তখনো বাহিরের দিকে। অপরাজিতা ভ্রু কুচকে ঘুমঘুম কন্ঠে ধীর স্বরে বলল,
‘কিভাবে বুঝলেন জেগে গিয়েছি?’

ফায়াদ এবার বাহির থেকে চোখ সরিয়ে অপরাজিতার দিকে তাকালো। কপালে ঠোঁট ছুয়ে বলল,
‘আমার বুকে ঘুমিয়ে আছো। আমি বুঝবো না বলছো?’

কুচকানো ভ্রু সোজা হলো অপরাজিতার।মুখে ফুটলো মিষ্টি হাসি। ফায়াদের বুকে হাত রেখে বলল,
‘জায়গা টায় এতো শান্তি কেন?’

ফায়াদ অপরাজিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘নিজের জিনিসে শান্তি ই থাকে।’

অপরাজিতা ফায়াদের বুকের কাছের টিশার্ট খামছে ধরে ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,
‘হুহ আমার জিনিস!’

হাসলো ফায়াদ। অপরাজিতা আবার চোখ বন্ধ করলো। আবারো ঘুমের রাজ্যে পারি দিচ্ছে সে। ফায়াদ অপরাজিতাকে আগলে রেখে আকাশের রঙ বদল দেখছে। আজকের সকালটা একটু বেশিই সুন্দর ঠেকছে।নাকি প্রিয় মানুষ বুকে আছে বলে সুন্দর লাগছে!

ধীরে ধীরে ভোর কেটে সকাল হলো। সকলে জাগছে একে একে। বাকিদের মধ্যে রাফিয়া আগে জাগলো। সে উঠে বাকিদের দেখতে লাগলো নিরবে। পাশে তাকাতেই চোখ গেল ফায়াদ আর অপরাজিতার দিকে। ফায়াদ অপরাজিতাকে ধরে রেখেছে আর অপরাজিতা ফায়াদের বুকে ঘুমাচ্ছে। দৃশ্যটা রাফিয়ার খুব কিউট লাগলো। সে ফোনে নিশব্দে একটা ছবি তুলল তাদের দুজনের। তারা টেরই পেল না। কারন ফায়াদের ধ্যান তো প্রকৃতি দেখা তে। বাসে চোখ বুলাতেই আরেকটা দৃশ্য তার মনে ধরলো।
তা হলো ফায়াদের এক সিট সামনে ফারাজের দিকে। ফারাজ ঘুমাচ্ছে নীতির কাধে মাথা রেখে। নীতির মাথা ফারাজ এর মাথার সাথে হেলানো। দুজনকে এভাবে দেখা হয় নি কখনো। খুবই সুন্দর লাগছে একসাথে।রাফিয়া এখন বুঝতে পেরেছে ফায়াদ কেন নীতিকে তার সাথে বসতে নিষেধ করেছে।ব্যাপারটা মন্দ নয়,বরং দারুন!
রাফিয়া ফারাজ নীতির এই দৃশ্যটিও ক্যামেরা বন্ধী করলো।

বাস এসে থামলো একটা হোটেল এর সামনে। সবাই একে একে নামলো।যে যার যার রুমে যাচ্ছে। সবাই রুমে গিয়ে আরামে একটু ঘুমাতে চায় আগে। তারপর নাস্তা। ফারাজ, রিজু এবং সামির একই রুমে।নীতি ও রাফিয়া একই রুমে। ফায়াদ আর অপরাজিতা যেহেতু এখন বিবাহিত তাই তাদের এক রুমে দেওয়া হলো। তা নিয়ে অপরাজিতার লজ্জার শেষ নেই। আর মা বাবা দের জন্য তো আলাদা রুম আছেই।

নীতি বাস থেকে নামার পর থেকে লজ্জায় ফারাজের দিকে তাকাচ্ছে না। সে আর ফারাজ ঘুমের মধ্যে খুব কাছাকাছি ছিল। এটা তার জন্য কল্পনার মতো। ফারাজ তাকে কি ভাবছে কে জানে? আচ্ছা ফারাজ কি তাকে গায়ে পড়া ভাববে? এই টেনশন আর লজ্জায় নীতির দেওয়ালে মাথা ঠুকাতে ইচ্ছে করছে।
রাফিয়া বাস থেকে নেমেই রুম জেনে রুমে দৌড় দিয়েছে। সারা রাত বসে থেকে তার নাকি আর চলতে ইচ্ছে করছে না। হোটেল টা ফারাজের এক ফ্রেন্ড এর। তাই আয়োজন বা কিছুতে তেমন সমস্যা হয় নি। তাদের সবার রুম একই দিকে। নীতি রুমে ঢুকতে নিতে ফারাজ পিছু ডাকলো। ডাক শুনে নীতির মন চাইলো দৌড়ে রুমে ঢুকে যেতে। কিন্তু সে তা পারবে না। তাই পিছু ঘুরলো। ফারাজ তার কাছে এসে বলল,
‘কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবেন। একদম লজ্জা পাবেন না।’

লজ্জার কথা শুনে নীতির লজ্জা লাগছে। সে মিন মিন করে বলল,
‘আমি লজ্জা পাই না।’

ফারাজ বাকা হাসলো।টিটকারি মেরে বলল,
‘রাতে ঘুম কেমন হলো?’

নীতি ফারাজের দিকে চোখ বড় করে তাকালো। তারপর রুমে ঢুকে গেল। দরজা আটকানোর আগে ফারাজের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘খুবই বাজে।’

তারপর ঠাস করে দরজা টা বন্ধ করে দিল। ফারাজ কানে হাত দিয়ে হেসে ফেলল।নিজেকে নিজে বলল,
‘কিন্তু আমার খুব ভালো হয়েছে।অনেক দিন পরর’

নীতির ফোনে ম্যাসেজ পাঠালো,
‘নীতি আপনি বড্ড অবাধ্য হচ্ছেন!এভাবে দরজা লাগায়?’

যার যার নাস্তা তার তার রুমে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারন জার্নি করে সকলে খুব ক্লান্ত। তাই সিদ্ধান্ত নিল দুপুর পর্যন্ত সবাই নিজেদের রুমে থাকবে রেস্ট করবে।

খাবার আসার পর সেই কখন থেকে ডাকছে ফায়াদ অপরাজিতাকে। কিন্তু তার কোনো খবরই নেই৷ ঘুমে মশগুল। ফায়াদ বলছে খেয়ে আবার ঘুমাতে কিন্তু অপরাজিতার কানে তা ঢুকছেই না। ফায়াদ এবার সিরিয়াস ভাবে বলল,
‘তুমি উঠবে নাকি তোমাকে নিজের পদ্ধতিতে তে উঠাবো?’

অপরাজিতা পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। ফায়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। গিয়ে অপরাজিতাকে চট করে কোলে তুলে নিল। তাতেও অপরাজিতার তেমন হেলদোল হলো না। সে ফায়াদের গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর হালকা আওয়াজে বলল,
‘আমার না পেট ব্যথা করছে’

ফায়াদ ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘বাহানা বানাচ্ছো? খাওয়া দাওয়া করলে ব্যথা চলে যাবে।’

ওয়াশরুমে গিয়ে ফায়াদ অপরাজিতাকে নামিয়ে দিল। দাড়া করিয়ে দিয়েই অপরাজিতাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিল।হঠাৎ ভিজে যাওয়ায় অপরাজিতা হকচকিয়ে উঠলো। ফায়াদের দিকে তাকিয়ে অসহায় ভঙ্গি করে বলল,
‘সিরিয়াসলি?’

ফায়াদ পাত্তা দিল না। বের হয়ে যেতে যেতে বলল,
‘একেবারে গোসল সেড়ে বের হও। ফ্রেশ লাগবে৷’

ফায়াদ যেতেই অপরাজিতা ফায়াদকে মনে মনে বকা শুরু করলো। এখন আর কি করবে। ভিজে তো গেলোই।
শাওয়ার নিতে নিতেই অপরাজিতা বুঝলো তার কিছু হয়ে গিয়েছে। সে এবার সত্যিই অসহায় বোধ করলো।এখনি হতে হলো?কেন?

অপরাজিতা ফায়াদকে ডাকছে।ফায়াদ অপরাজিতার লাগেজ বের করে কাপড় এগিয়ে দিল দরজার ফাকা দিয়ে। অপরাজিতা কাপড় হাতে নিয়ে দরজা দিয়ে মাথা বের করে আস্তে করে বলল,
‘আরেকটা জিনিস লাগবে’

ফায়াদ বলল,
‘কি?’

অপরাজিতা ইতস্তত করছে।কিভাবে বলবে সে? অপরাজিতাকে ভাবতে দেখে ফায়াদ বলল,
‘বলবে তো?’

অপরাজিতা আমতা আমতা করে বলল,
‘আসলে আমার হয়েছে।মানে আর কি! ওই যে প্রতি মাসে মেয়েদের–‘

পুরোটা শেষ করতে হলো না।ফায়াদ কোনো রিয়েকশন না দিয়ে বলল,
‘বুঝেছি। কোথায় আছে বলো।’

অপরাজিতা বলল।ফায়াদ দিল বের করে তার প্রয়োজনীয় জিনিস।অপরাজিতার খুব লজ্জা লাগছে। এখনই কেন হলো। ঘুরতে এসেও নিজস্ব বাধা!!

ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ফায়াদ অপরাজিতাকে খেতে ডাকলো। চুপচাপ খেয়ে নিল সে। খাওয়া শেষে ফায়াদ জিজ্ঞেস করলো,
‘পেট ব্যাথা আছে?’

‘অল্প’

‘আচ্ছা রেস্ট করো। ঘুমাতে চাইলে ঘুমাতে পারো এখন।’

অপরাজিতা বিছানায় বসে বিছানা খুটাতে খুটাতে বলল,
‘আপনি বুঝলেন কিভাবে?’

‘কি?’

‘এই যে আমার যে–‘

ফায়াদ তার পরনের টিশার্ট খুলে পাতলা একটা টিশার্ট পড়তে পড়তে অপরাজিতার পানে তাকিয়ে বলল,
‘আমি ডক্টর ভুলে যাচ্ছো?’

অপরাজিতা জিবে কামড় দিল।আসলেই তো। তার জামাই তো ডক্টর।
ফায়াদ অপরাজিতাকে বলল,
‘শুয়ে পড়ো।’

‘আপনি কি করবেন?’

ফায়াদ বিছানায় এগিয়ে এসে অপরাজিতার পাশে শুয়ে পড়লো।অপরাজিতাকে টেনে বুকের মাঝে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
‘তোমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাবো।’

নীতির এখন আর ঘুম আসছে না। তাই সে বের হলো হোটেল টা ঘুরে দেখতে। হোটেল এর একসাইডে থেকে সমুদ্র দেখা যায়। নীতি বাগানের দিকে গেল। সেখানে যেতেই চোখে পড়লো ফারাজকে।
ফারাজ দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে।নীতি জানে ফারাজ সিগারেট খায় মাঝেমধ্যেই। তাই সে অবাক হলো না। নীতি গিয়ে ফারাজের পাশে দাড়ালো।
ফারাজ নীতিকে দেখে সিগারেট লুকালো না। সে নীতিকে একটি হাসি উপহার দিল। নীতিও তা সাদরে গ্রহণ করলো।

‘ঘুমোন নি?’

‘ঘুম আসছে না ‘

‘কেন? আপনার না বাজে ঘুম হয়েছে?’

নীতি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।ফারাজ তা দেখে হেসে বলল,
‘আচ্ছা থাক ঘুমাতে হবে না।আমাকে সঙ্গ দিন’

‘না’

‘কেন?’

‘আপনি অপরাধী’

ফারাজ অবাক হয়ে বলল,
‘কি করেছি?’

নীতি হাত ভাজ করে বলল,
‘এতো সুন্দর একটা জায়গার বায়ু দূষণ করছেন’

ফারাজ হাতের সিগারেট এর দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। তারপর সেটা ফেলে দিয়ে বলল,
‘আচ্ছা ফেলে দিয়েছি।এখন কি ম্যাডাম আমাকে কোম্পানি দিবেন?’

ফারাজের বলার ভঙ্গিতে হেসে দিল নীতি। মাথা দুলিয়ে বলল,
‘হুম’

ফারাজ আর নীতি হাটছে। হাটতে হাটতে নীতি বলল,
‘জায়গা টা খুব সুন্দর’

‘সমুদ্র আরো সুন্দর।’

‘তাই?’

‘তবে!’

‘তবে?’

ফারাজ রহস্যময় হেসে বলল,
‘থাক জানতে হবে না।’

নীতির কৌতুহল লাগছে। সে বলল,
‘বলেন’

ফারাজ ত্যাড়ামি করে বলল,
‘না’

‘বলবেন না?’

‘না’

নীতির বিরক্ত লাগলো। উল্টো পথে হাটা শুরু করে বলল,
‘দিব না কোম্পানি।থাকেন একা!’

ফারাজ পিছু ডেকে চিল্লিয়ে বলল,
‘আরে এটা রেখে যাচ্ছেন কেন?’

নীতি হাটা থামিয়ে পিছু ফিরে বলল,
‘কি?’

ফারাজ দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘আপনার মন’

নীতি এবার সত্যি ভীষণ বিরক্ত হলো। লোকটা তাকে এভাবে বিরক্ত করছে কেন? আগে তো এমন করতো না। তাকে বিব্রত করে কি মজা পায়!সে রাগে বলল,
‘মুড়ি খান সেটা দিয়ে।’

বলে হনহনিয়ে হেটে হোটেলের ভিতর চলে গেল। ফারাজ উচ্চ স্বরে হাসছে। এই মেয়ে রাগও দেখায় আজকাল! ইন্টারেস্টিং! তার থেকেও ইইন্টারেস্টিং হচ্ছে মন দিয়ে মুড়ি।হুম!! ট্রাই করতে হবে ফারাজের।সে হেসে শিস বাজাতে বাজাতে আরো সামনে এগিয়ে গেল।

(চলবে)