প্রেম প্রেম পায় পর্ব-৩৮

0
480

#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব আটত্রিশ

৩৮.
দুপুর পর্যন্ত রেস্ট নিয়ে সকলে একদম ফুরফুরে। সবাই দুপুরের খাবারে একত্রিত হলো। রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিতে দিতে এবং খেতে খেতে তাদের সকলের বিকাল হয়ে গেল। বাহিরে একটু হাটাহাটি করে তারা সমুদ্রের দিকে রওনা হলো।
ফায়াদ বার বার অপরাজিতার দিকে খেয়াল রাখছে। যাতে তার কোনো সমস্যা না হয়। অপরাজিতা তা খেয়াল করে হাটতে হাটতে বলল,
‘বারবার তাকাচ্ছেন কেন?’

ফায়াদ জিজ্ঞেস করলো,
‘সমস্যা হচ্ছে কোনো?’

অপরাজিতা বুঝতে পেরে লজ্জা পেল। বলল,
‘না। তেমন সমস্যা হয় না। দ্বিতীয় দিন শুধু একটু প্রবলেম হয়। আপনি টেনশন করবেন না৷ আমি দৌড়াদৌড়ি করতে অভ্যস্ত।’

ফায়াদ ভ্রু কুচকে বলল,
‘তো তুমি কি এখানে দৌড়াদৌড়ি করতে চাচ্ছো?বাচ্চা নাকি?’

অপরাজিতা দুষ্ট হেসে বলল,
‘ওমা!জানেন না?প্রেমিক রা প্রেমিকাদের আদর করে বাবু ডাকে।’

‘ধুরু।এসব বলবা না। তুমি কি আমার প্রেমিকা নাকি?’

অপরাজিতা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘তো কি?’

‘বউ।আর হ্যা দৌড়াদৌড়ি করার দরকার নাই।’

হাটতে হাটতে সমুদ্রের কাছে পৌছালো তারা। সমুদ্র নজরে আসতেই অপরাজিতা সেদিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘মানতে পারলাম না। দুঃখিত জনাব!’

বলেই দৌড় দিল সমুদ্রের দিকে। বেশি জোরে দৌড়াচ্ছে না। তবে দৌড়াচ্ছে সে। ফায়াদ সেদিকে তাকিয়ে বার বার বলছে, ‘আরে আস্তে।’

বলে সে ও ছুটলো অপরাজিতার পিছনে।
রামিসা বেগম অপরাজিতাকে ছুটতে দেখে বলল,
‘আরে মেয়েটা কি বড় হবে না? এখনো ছোটাছুটি!’

তা শুনে আখি বেগম বললেন,
‘করুক! ভালো লাগে তো’

ফারদিন আহমেদ খোচা দিয়ে বললেন,
‘ভালো তো লাগবেই। এতো বড় হয়ে নিজেই তো এখনো ছোটাছুটি করো।’

আখি বেগম চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। তা দেখে সকলে হেসে দিল।
রাফিয়া অপরাজিতাকে দৌড়াতে দেখে রিজুকে বলল,
‘ভাইয়া চলো আমরাও খেলি।ধরো আমাকে’

বলে দৌড় দিল সে। রিজু হাটতে হাটতে বলল,
‘না আমার দৌড়াতে ইচ্ছা করছে না।’

রাফিয়া কিছুদূর গিয়ে পিছে ফিরে চিল্লিয়ে বলল,
‘ভাইয়ায়ায়া দৌড় দাও। জলদিইই’

রাফিয়াকে এতো খুশি দেখে সে না করতে পারছে না। তবে না না বলতে বলতেই ছুটলো রাফিয়ার পিছু। রাফিয়া প্রাণপণে ছুটছে। যেন ধরা সে খাবেই না। রিজু সামিরকে বলল,
‘ব্রো হেল্প মি। এই চুন্নিকে ধরো।’

দুজনে মিলে রাফিয়াকে ধরার চেষ্টা করছে। রাফিয়ার তো সেই মজা লাগছে। সে হাসছে আর ছুটছে।
এদের সবার ছোটাছুটি দেখে সকলে হাসাহাসি করছে।
ফারাজ নীতিকে বলল,
‘আপনি দৌড়াবেন না?’

নীতি অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
‘না’

‘রেগে আছেন?’

নীতি একই ভাবে বলল,
‘আমি রাগবো কেন?’

‘আপনার মন দিয়ে মুড়ি খেয়েছি বলে’

বলে মুখ চেপে হাসতে লাগলো ফারাজ। নীতির আবার রাগ লাগলো। সে অন্যদিকে হাটা ধরতেই ফারাজ হাত ধরে আটকালো। তারপর এক কান ধরে বলল,
‘আচ্ছা স্যরি স্যরি।আর করবো না এমন’

নীতি সূচালো চোখে তাকালো। তা দেখে ফারাজ বলল,
‘সত্যি আর করবো না।’

নীতি মানলো। ফারাজ মজার মানুষ। তাই মজা করে। নীতি এগুলো আর গায়ে না নেওয়ার চেষ্টা করবে।
সবাই নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে।

অপরাজিতা খিল খিল করে হাসছে আর দৌড়াচ্ছে।
ফায়াদ গিয়ে অপরাজিতাকে পিছন থেকে টেনে ধরলো। তারা দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকটা দূরে চলে আসছে। ফায়াদ অপরাজিতাকে ধরে বলল,
‘ফাজিল মেয়ে!’

অপরাজিতা হাসতে হাসতে বলল,
‘আপনার বউ’

ফায়াদ বলল,
‘না’

‘তাহলে কি?’

‘আমার প্রেমিকা!’

শুনে আবার হাসছে অপরাজিতা।ফায়াদ অপরাজিতাকে নিয়ে সেখানেই বালুতে বসে পড়লো।ফায়াদের বুকে পিঠ থেকিয়ে বসে রইলো অপরাজিতা। হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে।
আশে পাশে অনেক মানুষ আছে তবে সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।
অনেকক্ষন নিরবে সমুদ্রের পানির দিকে তাকিয়ে রইলো তারা। নিরবতা ভেঙে অপরাজিতা বলল,
‘কতো সুন্দর! মন চায় এখানেই হারিয়ে যাই।’

ফায়াদ অপরাজিতাকে শক্ত করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আমাকে নিয়ে যেয়ো।’

‘কেন?’

‘তোমাকে ছাড়া একা বাঁচতে কষ্ট হবে।’

অপরাজিতা মাথা ঘুরিয়ে ফায়াদের দিকে তাকাল। ফায়াদের চোখ এখনো পানির দিকে। অপরাজিতার চোখ চিক চিক করে উঠলো। সে বুঝলো তার আবার কান্না আসছে।
তাই কথা ঘুরিয়ে বলল,
‘আমি সমুদ্রে নামতে পারবো না। এসে কি হলো এটা?’

ফায়াদ বাকা হেসে অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘শুধু সমুদ্র?আরো কত কিছুই পারবা না!’

অপরাজিতা ভ্রু কুচকে ভাবছে। আর আবার কি?ফায়াদ উঠে বলল,
‘আর ভাবা লাগবে না। চলো ফিরে যাই। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। বাকিদের কাছে যাই।’

তারা এসে দেখলো রাফিয়া, রিজু আর সামির কিছু নিয়ে হাসাহাসি করছে। ফারাজ আর নীতি কথা বলছে। বাবা মায়েরা নেই।
ফায়াদ এসে জিজ্ঞেস করলো,
‘মা বাবা কোথায়?’

ফারাজ বলল,
‘তারা হোটেল এ ফিরে গিয়েছে। ‘

ফায়াদ বলল,
‘ওহ। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমাদেরও ফেরা উচিৎ।’

সবাই হোটেল এর উদ্দেশ্যে হাটা ধরতেই নীতি বলল,
‘আমি আরেকটু থাকবো।’

ফায়াদ নীতির দিকে তাকিয়ে ফারাজকে বলল,
‘আচ্ছা থাকো। ফারাজও থাকবে তোমার সাথে। আর বাকিরা আমার সাথে হোটেল ফিরবে৷’

ফায়াদ বাকিদের নিয়ে চলে গেল। আশে পাশে মানুষ বেশি নেই। নীতি গিয়ে হাটু সমান পানিতে দাড়ালো। তার পড়নে জিন্স এবং কুর্তি। জিন্স ভিজে গেল।সামনে তাকিয়ে আছে নীতি।
ফারাজ গিয়ে নীতির পাশে দাড়ালো।

‘দারুন এক সন্ধ্যা তাই না?’

নীতি পাশ ফিরে মুচকি হেসে বলল,
‘হুম’

‘নীতি?’

‘হুম?’

‘পরিবেশ টা খুব কাছে থেকে অনুভব করবেন?’

‘কিভাবে?’

ফারাজ দুহাত দুদিকে মেলে চোখ বন্ধ করলো। বলল,
‘এভাবে’

নীতিও করলো।দুহাত প্রসারিত করলো। চোখ বন্ধ করলো। আহ! এ যেন এক আলাদা দুনিয়া।এতো শান্তি কেন? মনে হচ্ছে হাওয়া তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। ভাবনায় ডুবে গেল সে। যে ভাবনায় বিরাজ করছে সে, তার অত্যন্ত প্রিয় কিছু মানুষ।মা,বাবা আর—ভেসে আসলো একজন সুদর্শন পুরুষের চেহারা!আর ফারাজ!’

ভাবতে ভাবতেই অনুভব করলো তার কাটা দিয়ে আটকে রাখা চুলের কাটা টা কেউ খুলে ফেলেছে। চুলগুলো মুহুর্তেই এলোমেলো হয়ে গেল বাতাসে।
নীতি পিছনে মাথা ঘুরাতে নিতেই অনুভব করলো দুটো বাহু তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিচ্ছে।
ফারাজ নীতির কাধে থুতনি রাখলো। নীতির কাছে স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। কি হচ্ছে? এই সুন্দর পরিবেশে হারিয়ে ভ্রম হচ্ছে না তো?
বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ শব্দ হচ্ছে। সে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিতেই ফারাজ ফিসফিস করে বলল,
‘হুশ! Feel it sweetheart and dive into your fantasy’

কিছু বলল না। এই মুহুর্ত টা তার কাছে ফ্যান্টাসিই লাগছে। চোখ বন্ধ করলো সে। এ কল্পনা কভু না ভাঙুক।
সমুদ্রের ঢেউ ক্ষণে ক্ষণে ভিজিয়ে দিচ্ছে দুজনের পা। উত্তাল ঢেউয়ের মন মাতানো হাওয়া ছুয়ে দিচ্ছে দুজন জড়িয়ে থাকা মানুষকে।

হোটেলের কাছাকাছি আসতেই ফায়াদ অপরাজিতাকে ডাকলো। অপরাজিতা এতোক্ষণ রিজু,সামির আর রাফিয়ার সাথে দুষ্টুমি করতে করতে হাটছিল।ডাক শুনে সবাই পিছু ঘুরলো। ফায়াদ সবাইকে ঘুরতে দেখে কেশে বলল,
‘তোমরা ভিতরে যাও। অপরাজিতার একটু কাজ আছে। ‘

রাফিয়া বলল,
‘বললেই পারো তোমার বউ লাগবে৷ ঘুরতে এসে কাজ কিসের আবার!’

উচ্চস্বরে হেসে দিল রিজু আর সামির। ফায়াদ রাফিয়াকে দৌড়ানি দিতে গেল। তার আগেই রাফিয়া দৌড়ে ভিতরে চলে গেল। তারপর রিজু আর সামিরও চলে গেল ভিতরে।

ফায়াদ অপরাজিতার হাত হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
‘চলো।’

‘কোথায়?’

অপরাজিতাকে নিয়ে ফায়াদ আসলো হোটেল এর পিছের সাইডে।সেখান দিয়ে সুন্দর একটা রাস্তা গিয়েছে৷ এখন রাস্তাটায় মানুষ নাই বললেই চলে৷ কিন্তু এতো সুন্দর রাস্তা দেখে মনে হচ্ছে রাত বাড়ার সাথে সাথে এখানে মানুষের আনাগোনাও বেড়ে যায়।

অপরাজিতা অনেকক্ষণ হাটার পর বলল,
‘আমি আর হাটতে পারতেছি না৷ ‘

ফায়াদ অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে তাকে কোলে তুলে নিল৷ তাকে কোলে নিয়েই হাটা স্টার্ট করলো। হুট করে কোলে তুলে নেওয়াতে চমকে উঠলো অপরাজিতা।

‘আরে আরে’

‘চুপ’

চুপ করে গেল অপরাজিতা।কিছুক্ষণ পর অনুভব করলো তার খুব ভালো লাগছে৷ সে মাথা ঠেকিয়ে দিল ফায়াদের বুকে৷ চোখ বন্ধ করলো৷ মনে হচ্ছে হাওয়ায় ভাসছে সে৷ ফায়াদ মুচকি হাসলো৷ বেশ অনেকদূর হাটার পর তারা একটা জায়গায় এলো।
অপরাজিতাকে নিচে বসিয়ে দিল সে। জায়গায়টা সমুদ্রের অন্য সাইড। এখান থেকে রাতের ভিউ খুব সুন্দর দেখা যায়৷ অপরাজিতা সমুদ্র দেখে হা হয়ে আছে। সমুদ্রের পানিতে বিভিন্ন ধরনের আলো দেখতে পাচ্ছে মনে হচ্ছে তার। ফায়াদ অপরাজিতার রিয়েকশন দেখে হেসে তার পাশে বালিতে বসে পড়লো।

‘এতো সুন্দর কেন?’

‘আল্লাহর সৃষ্টি তাই’

‘আপনি এখানে আগে এসেছেন তাই না?’

‘হুম’

অপরাজিতা আবার সমুদ্রের পানির দিকে তাকালো।আবেগে আপ্লূত হয়ে বলল,
‘আমি অনেক সৌভাগ্যবতী’

ফায়াদ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো অপরাজিতার দিকে।
অপরাজিতা ফায়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কখনো দুঃখের সম্মুখীন হই নি। যা চেয়েছি তা পেয়েছি৷ তাই মাঝে মধ্যে ভয় লাগে না জানি কোন বড় দুঃখ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

ফায়াদ অপরাজিতাকে বুকে জড়িয়ে নিল। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘তোমার সকল দুঃখ আমার হোক।’

অপরাজিতা ফায়াদের পিঠ জড়িয়ে বলল,
‘কোনো দুঃখ আমাদের আলাদা না করুক।আল্লাহ আমাদের একসাথে রাখুক সকল পরিস্থিতিতে’

ফারাজ আর নীতি হোটেল এর পথে ফিরার সময় কেউ কারো সাথে অতিরিক্ত কোনো কথা বলে নি৷ দুজনেই অনুভূতির সাগরে ডুবছিল। নীতি ভাবছে ফারাজ যা করলো তা কি ছিল? মুহুর্তের মোহ? নাকি শুধু তাকে পরিবেশ উপভোগ করানোর জন্য?
ফারাজ ভাবছে আজ কতোদিন পর কাউকে নিজের করে লাগছে।
নীতি কোনো কথা না বলে চলে গেল তার রুমে। ফারাজও মাথা চুলকে চলে গেল তার রুমে৷
প্রেম প্রেম অনুভূতি দারুন তো!

—————–

পরবর্তী দুদিন তারা এদিক সেদিক ঘুরে কাটালো৷ ফ্যামিলির সবাই মিলে দারুন এক সময় কাটাচ্ছে৷ ফায়াদ অপরাজিতার বিয়ের পরবর্তী সময় হওয়ায় তারা দারুন প্রেমে ডুবে আছে। কিন্তু বেচারা প্রেম টাকে আরেকটু এগোতে পারছে না একটা কারনে৷ তাই হানিমুনের পার্ট টা শেষ করতে পারছে না৷
আর এদিকে নীতির প্রতি ফারাজের কেয়ারিং বেড়ে গিয়েছে। নীতির সব কিছুতে তার তদারকি। প্রায় সময় ফ্লার্টও করে। কিছু বিষয় সকলের চোখে পড়লেও কেউ তাদের কিছু বলছে না৷ কিন্তু নীতি লজ্জা পায়। সে ভেবে পায় না ফারাজের হলো কি?
রাফিয়া আর সামিরের বন্ধুত্ব হয়েছে। তারা অনেকটা সময় মোবাইলে একে অপরের সাথে চ্যাটিং এ ব্যস্ত থাকে।

আজ চতুর্থ দিন৷ আজও একজায়গায় গিয়েছিল তারা। এখন ডিনার করে বসেছে একসাথে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবে তাই।বড়রা অবশ্য এখানেই নেই৷ তারা বিশ্রাম নিতে ইচ্ছুক।অপরাজিতা তো খেলতেই চাচ্ছিল না এই খেলা। তার মতবাদ হচ্ছে এই খেল খেলা মানে নিজের মাথায় নিজে বাশ মারা।
ফারাজ বললো,
‘এতো ভয় পান কেন? বয়ফ্রেন্ড কি আরেকটা ছিল নাকি? ‘

অপরাজিতা তড়িঘড়ি করে বলল,
‘আরে না না, ছি ছি। সেরকম কিছু না।’

রিজু বলল,
‘তাহলে খেলতে কি সমস্যা?’

বলে মিটমিট করে হাসলো সে। অপরাজিতা চোখ৷ কটমট করে তাকালো।
বোতল ঘুরানো হলো৷ প্রথমে আসলো সামিরের টার্ন।তাকে জিজ্ঞেস করা হলো,
‘ট্রুথ নাকি ডেয়ার?’

‘ট্র—-ডেয়ার!’

বলার সময় অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে দেখলো অপরাজিতা শয়তানি হাসি হাসছে। নিশ্চয়ই কোনো ফালতু প্রশ্ন করবে। তাই ডেয়ার নিল। এখানে আর কি করাবে!

ফায়াদ বলল,
‘ডেয়ার কে দিবে?’

রাফিয়া বলল,
‘আমি দিব’

সবাই উৎসুক হয়ে তাকালো ডেয়ার শুনার জন্য।রাফিয়া বলল,
‘আমি জানি সামির ভাইয়ের একটা জিএফ আছে।’

‘একটা??’

বলেই অপরাজিতা হাসতে শুরু করল। রাফিয়া জিজ্ঞেস করলো,
‘একটা না?’

সামির বলল,
‘আরে একটা একটাই!’

রাফিয়া চোখ ছোট করে বলল,
‘আচ্ছা ডেয়ার হচ্ছে আপনি আপনার জিএফ কে কল করে বলেন আপনার অন্য কাউকে ভালো লেগেছে।’

সামির ভাব নিয়ে বলল,
‘এটা কোনো ব্যাপার হলো?এখনি করে দিচ্ছি। সে বিশ্বাসই করবে না এটা। আমাকে এতো ভালোবাসে।’

সে কল দিল। একটা মেয়ে কল ধরলো। ফোন লাউডস্পিকার এ দেওয়া।সামির কেশে বলল,
‘হ্যা বাবু তোমাকে একটা কথা বলার ছিল!’

বাবু শুনে সবাই মুখ চেপে হেসে দিল।
ফোনের অপর পাশের মেয়েটা ন্যাকামি করে বলল,
‘হ্যা বাবু বলো’

সামির বলল,
‘আসলে হয়েছে কি! আমি অনেকদিন থেকেই বলতে চাচ্ছিলাম। আমার না! আমার আরেকটা মেয়েকে অনেক পছন্দ হয়েছে। তাকে বোধহয় ভালোবেসে ফেলেছি।’

সামির এমন ভাবে বলছে যেন কথাটা সত্য।কথা শুনে ফোনের অপর পাশের মেয়েটা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। তুই ওই মেয়ে নিয়েই থাক।এজন্যই আমি আগে থেকেই রোহান এর প্রপোজাল এক্সেপ্ট করে ফেলছি। সে অনেক কেয়ারিং আমার প্রতি।তোমার মতো নয়। তুমি আমাকে আর কল দিবে না। আই হ্যাভ এ বয়ফ্রেন্ড। বাই!’

বলেই কলটা কেটে দিল। আর সবাই উচ্চস্বরে হেসে দিল। বলেছিল বিশ্বাস করবে না৷ অথচ বেচারার ব্রেকাপই হয়ে গেল।আহারে! ট্রাজেডি।

আবার ঘুরানো হলো।এবার রাফিয়ার পালা। রাফিয়া আগেই ট্রুথ নিল।

নীতি জিজ্ঞেস করলো,
‘ক্রাশ কে?’

রাফিয়া লাজুক মুখে বলল,
‘কলেজের সিনিয়র ভাইয়া’

তা শুনে সামির ভেঙচি কাটলো।
আবার ঘুরানো হলো বোতল। অপরাজিতার পালা। সে ডেয়ার নিল। ফারাজ দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘চাচু হতে চাই’

অপরাজিতা তো লজ্জায় লাল! ফায়াদ ধুম করে এক কিল বসালো ফারাজের পিঠে। ফারাজ ব্যথায় ককিয়ে উঠলো।
‘আচ্ছা আচ্ছা অন্য টা দিচ্ছি।’

রিজু বলল,
‘একটা গান শুনা। কিন্তু গান টা হবে খুবই থার্ড ক্লাস একটা গান!’

রাফিয়া দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘হিরো আলমের🐸’

অপরাজিতা কে সবাই বলল গাইতে।তারপর অপরাজিতা আর কি করবে!গাইলো।
‘বেবি কাম কাম
কাম টু মি’

তারপর আবার বোতল ঘুরানো হলো আবার সামির৷ এভাবে অনেক রাউন্ড চলল। এবার এলো ফারাজের টার্ন। ফারাজ ট্রুথ নিল।
অপরাজিতা বলল,
‘আমি জিজ্ঞেস করব’

ফারাজ বলল,
‘জি করুন’

অপরাজিতা উত্তর জানা প্রশ্নই করলো,
‘মনের ঘরে কেউ উকি দেয়?কাউকে দেখলে প্রেমের আহবান জানায় মন আজকাল?’

অপরাজিতার প্রশ্ন শুনে ফায়াদ হেসে দিল৷ অপরাজিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘তুমি শুধরাবা না।’

ফারাজও প্রশ্ন শুনে হাসলো। বলল,
‘হুম দেয় তো।’

অপরাজিতা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘কে সে?’

ফারাজ নীতির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এইতো আশে পাশেই আছে’

সবাই একসুরে বলল,
‘ওওওওওও’

নীতি দাঁড়িয়ে গেল। বলল,
‘আমি আর খেলবো না। আসি’

নীতি চলে যেতেই খেলা আর জমলো না।সবাই এক এক করে উঠে গেল। রাতও অনেক হয়েছে।তারা বাহিরে বসে খেলছিল।সবাই চলে গেলে রয়ে গেল শুধু ফায়াদ ফারাজ৷ ফায়াদ ফারাজের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘বিয়ে খেতে চাই’

ফারাজ বলল,
‘চাচু হতে চাই’

ফায়াদ হেসে বলল,
‘শা/লা ভালো হবি না?আমার বউকে লজ্জায় ফেলে দিলি।’

ফারাজ উচ্চস্বরে হাসছে। হাসি থামিয়ে বলল,
‘ভাই! ‘

‘হুম’

ফারাজ ফায়াদকে জড়িয়ে ধরলো।বলল,
‘পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ’

ফায়াদ ফারাজের পিঠ চাপড়ে দিল।
ফায়াদ ফারাজ কিছুক্ষণ কথা বলে ফায়াদ গেল অপরাজিতার জন্য একটা কেক আনতে। মেয়েটা কেক খেতে চেয়েছিল।
ফারাজ রুমে যেতে নিলেই তার ফোনে ম্যাসেজ আসলো,
‘ছাদে আসুন।’

ফারাজ মুচকি হেসে ছাদে রওনা দিল। ছাদে গিয়ে দেখলো নীতি দাড়িয়ে আছে রেলিঙের কিনারে।সমুদ্র দেখছে সে।
ফারাজ গিয়ে পাশে দাড়ালো। নীতি ফারাজের দিকে না তাকিয়েই বলল,
‘এমন করছেন কেন?’

ফারাজ নীতির মুখপানে চেয়ে বলল,
‘কেমন?’

নীতি এবার ফারাজের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বলল,
‘আপন আমার সাথে এমন করছেন কেন?এসব ইঙ্গিত, ইশারা,ফ্লার্ট কেন করছেন?কেন আমাকে ভাবতে বাধ্য করেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন! আমি তো বলেছিলামই আমি অনুভূতি ব্যক্ত করব না। তাহলে আমার অনুভূতি নিয়ে কেন খেলছেন?আমার—‘

আর বলতে পারলো না। তার অধোর মিলে গিয়েছে ফারাজের অধোরে।ফারাজ তাদের মধ্যের দূরত্ব কমিয়ে ফেলল। নীতি চমকিত, শিহরিত। এটা তার কল্পনার বাহিরে। কি হচ্ছে তার সাথে?
ফারাজ ছাড়লো নীতিকে। কপালের চুল গুছিয়ে দিতে দিতে স্বাভাবিকভাবে বলল,
‘ স্যরি কন্ট্রোল করতে পারলাম না।আমি একটু অসভ্য গোছের জানেনই তো!বড্ড কথা বলেন আপনি!এত কিছু বুঝলেন আর এটা বুঝলেন না যে আমি আপনাকে আমার জীবনে চাচ্ছি! উল্টো বলছেন খেলছি অনুভুতি নিয়ে? খেলছি না নীতি। আপনার অনুভূতি গুলো নিজের করে চাচ্ছি।আপনাকে চাচ্ছি।দেওয়া যাবে কি?আপনাকে?’

শেষ কথাটা ভীষণ আবদার করে বলল।নীতি একটা শব্দও বলতে পারছে না।তার মাথা ভনভন করে ঘুরছে। এটা কি কল্পনা তার?
নীতি কান্না করে দিয়ে রাগ দেখিয়ে বলল,
‘মজা করছেন?’

ফারাজ নীতিকে বুকে জড়িয়ে বলল,
‘ভীষণ সিরিয়াস ভাবে বলছি মিস নীতি।আই ফেল ইন লাভ এগেইন!’

নীতি ফারাজের বুকে ব্যাকুল ভাবে কাদছে।ফারাজ কাদতে দিচ্ছে।এটাই যেন হয় শেষ কান্না।

ফায়াদ কেক নিয়ে রুমে ঢুকেই দেখলো অপরাজিতা শাড়ি পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বিছানার মাঝে বসে আছে।ফায়াদ কেক টা টেবিলে রেখেই অপরাজিতার দিকে এগিয়ে বলল,
‘এসব কি?’

অপরাজিতা লাজুক স্বরে বলল,
‘আগে ঘোমটা তুলুন’

ফায়াদ ঘোমটা তুলে বলল,
‘মাশাল্লাহ!’

অপরাজিতা খিলখিল করে হেসে দিল। সেই হাসির দিকে তাকিয়ে ফায়াদের নেশা ধরে যাচ্ছে। সে অন্যদিকে চোখ সরিয়ে বলল,
‘এখন বলো এসব কি?’

‘হানিমুন!’

‘কিন্তু তোমার তো!’

অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে দেখলো অপরাজিতা লাজুক হাসছে।সে সুর টেনে বলল,
‘তারমানে তুমি—-‘

অপরাজিতা এগিয়ে এসে ফায়াদের অধোরে অধোর মিলিয়ে দিল। অপরাজিতা কাপছে।অপরাজিতা পড়ে যেতে নিলে ধরে ফেলল ফায়াদ। সামলে নিল সে। অপরাজিতা নিজে এগিয়ে আসবে ভাবতে পারে নি সে।
একে অপরকে ছেড়ে জোরে শ্বাস নিচ্ছে তারা।অপরাজিতা চোখ তুলে তাকাতে পারছে না লজ্জায়। ফায়াদ অপরাজিতার উত্তর জানা স্বত্তেও আবার জিজ্ঞেস করলো,
‘কি চাই?’

অপরাজিতা ফায়াদের বুকের শার্ট খামচে ধরে বলল,
‘আপনাকে’

আর কথা বলার সুযোগ দিল না সে। রুমের লাইট অফ হয়ে গেল। ভালোবাসায় ডুবে গেল দুটো প্রাণ। অন্ধকার রুমে ভেসে বেড়াচ্ছে কিছু ভালোবাসা মিশ্রিত পাগলামি। শিহরন! মারাত্মক শিহরণ!

(চলবে)