#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব চল্লিশ (অন্তিম পর্ব)
৪০.
হাসপাতালে প্রচন্ড অস্থিরতা নিয়ে প্রবেশ করলো সবাই৷ অপরাজিতার যেন হাসপাতালে পৌছে পা চলতে চাচ্ছে না।অপরাজিতা নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে।সে পজিটিভ ভাবতে চাচ্ছে।কিন্তু ভয়েরা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরছে। সে একবার ফায়াদকে বলেছিল সে কখনো দুঃখ পায় নি৷ তবে কি এই দুঃখ অপেক্ষা করছিল তার জন্য?
অপরাজিতা, তার বাবা,এবং নীতি এসেছে হাসপাতালে। বাসায় মেহমান থাকার কারনে অপরাজিতার মা আসতে পারেন নি৷ রামিসা বেগম বাসায় বসে দোয়া করছে তার মেয়ের সাথে খারাপ কিছু যাতে না হয়। মা হয়ে এতোটুকু বুঝেছেন তিনি যে ফায়াদ নামক ছেলেটার মধ্যে অপরাজিতার সব।
নীতি ফারাজকে ফোন করলো জানার জন্য তারা কোথায়। কেবিন নাম্বার জেনে সে আসিফ ইসলাম এবং অপরাজিতাকে বলল। তারা হাটা শুরু করতেই দেখলো অপরাজিতা আসছে না। আসিফ ইসলাম অপরাজিতার পাশে এসে অপরাজিতার হাত ধরে নরম সুরে ডাকলো,
‘আম্মা?’
অপরাজিতা বাবার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে অনেক কষ্টে বলল,
‘ভয় লাগছে।’
আসিফ ইসলাম অভয় দিয়ে বললেন,
‘ফায়াদ ঠিক আছে। ভরসা রাখো। চলো।’
মেয়েকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন সাথে। কেবিনের সামনে যেতেই অপরাজিতার মনে হলো সে এখানেই অজ্ঞান হয়ে যাক। তার বিয়ে অথচ সে এই গভীর রাতে হাসপাতালে এসেছে এটা দেখার জন্য তার স্বামী ঠিক আছে কিনা? অপরাজিতা মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে প্রবেশ করলো।
কেবিনে প্রবেশ করতেই দেখা গেলো মাথায় ব্যান্ডেজ করা ফায়াদ বেডে বসে ফারাজকে ধমকাচ্ছে আর আরেক হাতে আখি বেগমকে জড়িয়ে আছে।তিনিও কাদছিলেন বোধ হয়। তবে এখন ঠিক আছেন। তাদের পাশে ফারদিন আহমেদ বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে দুই ভাইয়ের দিকে।
‘স্যরি তো ভাই! আমি প্যানিক হয়ে গিয়েছিলাম।’
‘শাট আপ তাই বলে তুই সবাইকে এভাবে বলবি?কি পরিমাণ টেনশন নিয়ে হাসপাতাল এসেছে তারা? রাস্তায় কিছু হয়ে গেলে? রাত দেখেছিস?’
ফারাজ অপরাধী কণ্ঠে বলল,
‘তুই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তাই—-আই এম স্যরি’
ফায়াদ আবারো কিছু বলতে নিবে তার নজর গেল দরজার দিকে। অপরাজিতা এসেছে। অপরাজিতা চাহনী বলে দিচ্ছে তার জন্য এই মুহুর্ত গুলো কেমন ভয়ানক ছিল। ফায়াদকে তাকাতে দেখে অপরাজিতা সেখানে দাঁড়িয়ে মুখ ঢেকে কেদে দিল৷ ব্যাকুলভাবে কাদছে সে। ফায়াদের খুব অসহায় লাগছে৷ মেয়েটার কালকে এতো সুন্দর একটা দিন।এর আগে এমন কিছু ফেস করতে হচ্ছে।
সব এই গাধা ফারাজের জন্য। ডাক্তারের কথা না শুনেই সবাইকে কি জানিয়েছে কি জানি। ফায়াদ সবার সামনে অপরাজিতা কাছে যেতে পারছে না। যতই হোক মা বাবা উপস্থিত এখানে।
ফারদিন আহমেদ ছেলের চাহনী বুঝলেন। আখি বেগম বললেন,
‘বাহিরে চলো। তোমার নিশ্চয়ই মাথা ধরেছে। চা খাবো চলো। আসিফ ভাই আপনিও আসেন।বাহিরে কথা বলি।’
তাদের বের হতে দেখে নীতি ফারাজকে ইশারা করলো বাহিরে আসতে। একে একে সবাই রুম থেকে বের হতেই ফায়াদ বেড থেকে উঠে অপরাজিতা কাছে এসে সোজা তাকে বুকে জড়িয়ে নিল।
‘জান!জান আমার! কান্না করে না৷ দেখো আমি একদম ঠিক আছি। এইতো তোমার সামনে আছি।’
অপরাজিতা কান্না করতেই আছে। এতোক্ষণ খুব কষ্টে কান্না আটকে রেখেছিল বোঝাই যাচ্ছে। অপরাজিতা এমন কান্না দেখে ফায়াদের অসহ্য লাগছে।
‘স্টপ প্লিজ!’
অপরাজিতা কান্নারত কণ্ঠে বলল,
‘আমার কতো অসহায় লাগছিল জানেন? আমার লাগছিল আপনার কিছু হলে আমি বোধ হয় বাচবো না। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।’
ফায়াদ অপরাজিতাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘কিছু হয় নি তো। কিছুই হয় নি আমার। তবে তুমি যদি কান্না না থামাও অনেক কিছু হয়ে যাবে।’
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে কান্না থামলো অপরাজিতার। কিন্তু কান্নার রেশ এখনো কিছুটা রয়ে গিয়েছে। ফোপাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর৷
ফায়াদ অপরাজিতাকে বেডে নিয়ে বসালো। নিজেও তার পাশে বসলো।
অপরাজিতা মাথা তুলে তাকালো ফায়াদের মুখের দিকে। মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ বাধা।ব্যান্ডেজে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কিভাবে হয়েছে?’
ফায়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো।
ফায়াদ ফারাজ আগে প্রায়ই মাঝরাতের পর বাসার বাহিরে বের হতো। ঘুরাফেরা করতো আড্ডা মারতো। তাই ফারাজ বলছিল বউ পারমানেন্টলি আসার আগে একবার ঘুরা উচিত। ফায়াদও রাজি হয়ে গেল।
তারা বের হয়ে গেল লং ড্রাইভে।
ফায়াদ ড্রাইভ করছে। তার পাশেই বসেছে ফারাজ। দুজনে নানা গল্প করছে। অনেকদূর ড্রাইভিং করে যাওয়ার পর তারা একটা ব্রিজের সামনে গাড়ি থামিয়ে সেখানে নামলো। নিচে নদী বইছে। ব্রিজের রেলিং এ হেলান দিয়ে দুজনে পাশাপাশি দাড়ালো।
‘অনেক দিন পর ভাই!’
ফায়াদ মুচকি হেসে বলল,
‘হুম অনেকদিন পর। এভাবে বের হওয়া।’
ফারাজ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আই মিসড ইউ অল।ফাইনালি জীবনে সুখ নামক জিনিসটা আবার ফিরে এসেছে। আচ্ছা মাহিরা কি রাগ করবে আমি যে অন্য কারো মধ্যে সুখ খুজে নিয়েছি?’
ফায়াদ বলল,
‘না। সে রাগ করবে না। বরং খুশ হবে যে তুই তোর জীবনটাকে তাকে মনে করে নিঃস্ব করে দিস নি৷ কারন তুই জানিস মাহিরা তোকে কতোটা ভালোবাসতো। সে তোর সুখ চাইতো।’
ফারাজ হাসি মুখে বলল,
‘হুম সুখ চাইতো।কিন্তু নিজে হলো না আমার সুখের কারন। ডুবিয়ে দিয়ে গেল দুঃখের সাগরে। আই মিস হার ব্যাডলি।’
মুখে হাসি থাকলেও চোখের কার্নিশ দিয়ে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। ফারাজ আবার বললো,
‘আমি কি নীতি কে ঠকাচ্ছি মাহিরাকে মিস করে?’
ফায়াদ বলল,
‘নাহ বরং তুই মিস না করলে মনে করতাম তুই মাহিরাকে কখনো ভালোইবাসিস নি। মাহিরা ইজ ইউর পাস্ট। ইটস ওকে টু মিস হার।বাট নেভার নেগলেক্ট নীতি’
‘হুম’
ফারাজ নিজেকে সামলে এবার বলল,
‘তুই বল তোর ফুলকে কিভাবে ভালোবাসলি?আমার ভালোবাসা সব তোর সামনেই হওয়া। তোর কাহিনি জানা হলো না’
ফায়াদ মাথা চুলকে বলল,
‘তাকে ভালোবাসবো না বলে নিজেকে কতো শাসিয়েছি!কিন্তু সে এমন একজন যাকে আমি ভালো না বেসে থাকতে পারি নি। তুই জানিস আমি সব সময় একটা ম্যাচুর মেয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম কিন্তু দেখ তার বাচ্চামো ছাড়া দিনই পূরণ হয় না আমার’
ফারাজ হাসতে হাসতে বলল,
‘ইউ আরে ম্যাডলি ইন লাভ!’
‘ইয়েস আই এম!’
তারা বেশ অনেক্ষণ কথা বলছিল।হঠাৎই দেখলো কিছু কালো পোশাক পড়া লোক তাদের ঘেরাও দিয়ে ফেলেছে। সম্ভবত ছিন্তাইকারী হতে পারে।তাদের কাছে অস্ত্র ছিল। তারা ফায়াদ ফারাজের কাছে সব চাচ্ছিল। ফারাজের তো মাথা গরম হয়ে গিয়েছে। মারামারি করার জন্য যেন তার হাত চুলকাচ্ছিল। কিন্তু ফায়াদ উল্টো পালটা কিছু করতে নিষেধ করছে।
এই লোকগুলো অনেক অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছিল।ফারাজের ফোন টা নিয়ে যায় তারা। ফায়াদের ফোন চাওয়ার জন্য ফায়াদের গায়ে ধাক্কা মারে। তাতে মাথায় রক্ত চড়ে যায় ফারাজের। সে লোকটার মুখে ঘুষি মেরে দেয়। এভাবে করে মারামারি লেগে যায়। ফায়াদ চেষ্টা করছে এদের একটু দুর্বল করেই এখান থেকে বের হয়ে যাবে। কিন্তু তার আগেই একজন ফায়াদকে ফারাজ মনে করে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আঘাতটা জোরেই দিয়েছে। মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। ফারাজ তা দেখে লোকটাকে ইচ্ছেমতো মেরে গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিল।
পথিমধ্যে ফায়াদের জ্ঞান হারিয়েছিল যার কারনে ফারাজ খুব ঘাবড়ে গিয়েছিল। তার কাছে তো ফোন ছিল না তাই ফায়াদের ফোন দিয়ে সবাইকে ফোন দিয়েছিল।
পুরোটা শুনে অপরাজিতা থম মেরে আছে। কত বড় বিপদ হয়েছিল তাদের। কি দরকার ছিল এতো রাত করে বাহিরে বের হওয়ার। অপরাজিতাকে কিছু বলতে না দেখে ফায়াদ অপরাজিতার হাত দুটো ধরে বলল,
‘আমি ঠিক আছি। শুধু মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছি।’
‘এটা সামান্য?আমার জান বের হয়ে যাচ্ছে আপনাকে এই অবস্থায় দেখে।’
‘আচ্ছা স্যরি।এখন তো আছি ভালো। কাল না আমাদের বিয়ে? এখনই এতো কেদে ফেললে কাল কাদবে কিভাবে? ‘
ফায়াদ কথা ঘুরাতে চাইলো। অপরাজিতা বলল,
‘কাদবো না’
‘আচ্ছা তাহলে হাসো এখন একটু। হাসো তো।’
অপরাজিতা ফায়াদের বলার ভঙ্গিমায় হালকা হাসলো৷
তারপর ভোর এর আগে দিয়ে সবাই সবার বাসায় চলে গেল। সকাল হলেই আবার বিয়ের তোড়জোড়।দিন গড়ালো।বিয়েটা সুন্দর ভাবে হয়ে গিয়েছে দুই ভাইয়ের।
অপরাজিতা বলেছিল সে কান্না করবে না অথচ বিদায়ের বেলা তার কান্না দেখে সকলে কান্না করছে।বিয়ে করে নিজের পরিবার ছেড়ে নতুন একটা পরিবারে যাওয়া প্রত্যেক মেয়ের জন্য কঠিন এক ব্যাপার। নতুন এক জীবন যেখানে নতুন সব মানুষ। মানুষগুলো ভালো হলে জীবন সহজ৷ আর মানুষ গুলো নিষ্ঠুর হলে মেয়েদের জীবন নরক৷ সেদিক থেকে অপরাজিতা ভাগ্যবতী।
নতুন বউদের নিয়ে সে কি মাতামাতি আখি বেগমের।তিনি তো মানুষকে বলে বেড়াচ্ছেন তার দুই মেয়ে নিয়ে এসেছেন তিনি। বর্তমানে নতুন দুই জামাই বউ সোফার রুমে বসে আছে। আখি বেগম দুই বউকে একের পর এক গিফ্ট দিয়েই যাচ্ছেন শাড়ি গহনা৷ আরো নানা জিনিশ।
ফায়াদ আর ফারাজ শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। এক পর্যায়ে ফারাজ বলে উঠলো,
‘বিয়ে তো আমরাও করেছি৷ আমাদেরও কিছু দাও’
ফারদিন আহমেদ পাশ থেকে বলল,
‘বউ দিয়েছি তো!’
ফায়াদ হাই তুলে বলল,
‘দিলা আর কই সে তো নিজেই খুজে নিয়েছি?’
হেসে উঠলো অপরাজিতা আর নীতি। অপরাজিতা নীতিকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন আখি বেগম। তারপর তাদের বললেন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে। রুম তাদেরকে রাফিয়া দেখিয়ে দিয়েছে।
তাদেরকে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে আখি বেগম নিজের ছেলেদের পাশে বসে মাথায় হাত বুলালেন। বললেন,
‘একটা মেয়ে বিয়ে করে নিজের স্বামীর হাত ধরে সব ছেড়ে চলে আসে। স্বামীই তাদের সবচেয়ে বড় সাপোর্ট। তাদেরকে কখনো কষ্ট দিস না বাবা।তুই স্বামী তাই বলে এটা ভাববি না যে তোর ক্ষমতা বেশি। তারা তোদের অর্ধাঙ্গিনী অর্থাৎ অর্ধেক অংশ। জীবনে যে পরিস্থিতিই আসুক তাদেরকে কখনো অবহেলা করবি না। স্বামী ভালো হলে একটা মেয়ের পুরো জীবন সুখে কাটে। তোদের বাবা আমাকে কখনো কোনো কিছু নিয়ে একটা খোটা বা কখনো গায়ে হাত তুলে নি৷ ভুল হলে বুঝিয়েছে কিন্তু মাথা গরম করে ধমকায় নি৷ তোরা আশা করি ভালো স্বামী হবি এবং ভবিষ্যতে একজন ভালো বাবা হবি।ঠিক আছে?নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা আমার বাচ্চারা।’
বলে দাঁড়িয়ে দুইছেলের কপাল স্নেহের চুম্বন একে দিলেন।আখি বেগমের চোখের কার্নিশ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। কে বলেছে বিয়ের সময় শুধু মেয়ের মায়েরা কাদে? ছেলের মা ও কাদে। তাদের ছেলে কতো বড় হয়ে গিয়েছে সেটা অনুধাবন করতে গিয়ে তাদেরও কান্না আসে।
ফায়াদ এবং ফারাজ উঠে মাকে জড়িয়ে ধরলো। ফারদিন আহমেদও এসে তাদের একসাথে ধরলো। ইশ পরিবার হলে এমনই হওয়া উচিত।কারো নজর না লাগুক!
ফারাজ রুমে প্রবেশ করতেই দেখলো নীতি ঘুমে ঢুলছে।
‘এ কি আপনি ঘুমাচ্ছেন?’
নীতি জেগে গিয়ে বলল,
‘না। এমনি চোখ লেগে আসছিল।’
‘আচ্ছা ঘুমোন।’
দুজনে শুয়ে পড়লো। শুয়ে পড়ার পর আর ঘুম আসছে না নীতির।সে অন্ধকারে তাকিয়ে রইলো কিন্তু কোনো কথা বলছে না৷
‘নীতি ঘুমিয়েছেন?’
নীতি নড়েচড়ে উঠে বলল,
‘না’
ফারাজ নীতির দিকে পাশ ফিরে বলল,
‘আমি বাবা হতে চাই নীতি৷ ‘
এভাবে সোজা কথা শুনে নীতির লজ্জা লাগলো।সে কিছু বলল না। ফারাজ আবার বলল,
‘আপনি কি মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত নীতি? আপনি রাজি না থাকলে—-‘
নীতি ফারাজের মুখে হাত দিয়ে চুপ করিয়ে দিল৷ আস্তে করে লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল,
‘আ আমি রাজি।’
ফারাজ মুচকি হাসলো। মুচকি হেসে কাছে টেনে নিল প্রিয়তমাকে। হারিয়ে গেল ভালোবাসার অতল গহবরে তারা।
ফায়াদ রুমে ঢুকতেই দেখে অপরাজিতা একটা জরজেটের পাতলা শাড়ি পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে। লিপস্টিক লাগাচ্ছে।ফায়াদকে রুমে প্রবেশ করতে দেখেই রহস্যময় হাসি দিল। ফায়াদ বোঝার চেষ্টা করছে সেই হাসির কারন। ফায়াদ কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেল। আগে ফ্রেশ হওয়া দরকার।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই রুমে গান বেজে উঠলো।রোমান্টিক একটা গানের টিউন বাজছে। ফায়াদ মাথা মুছতে মুছতে সামনে কদম বাড়াতেই অপরাজিতা পেছন থেকে ঝাপ্টে ধরলো ফায়াদকে।
অপরাজিতা ফায়াদের সামনে এসে হাত থেকে তোয়ালে টা নিয়ে ছুড়ে ফেলল।তারপর ফায়াদকে হাত ধরে রুমের মাঝে নিয়ে দাড় করিয়ে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ক্যান আই হ্যাভ এ ড্যান্স স্যার?’
ফায়াদ হেসে দিল। সে ডিরেক্ট কোমর টেনে অপরাজিতাকে কাছে টেনে বলল,
‘অফ কোর্স ম্যাম। আই এম অল ইউরস। ‘
দুজনে গানের তালে তালে নাচছে। চোখে চোখ রেখে ডুবে আছে একে অপরের মাঝে। রুম জুড়ে গানের লাইন ভাসছে। তার তালে তালে প্রেমে ভাসছে প্রেমিকজুগল।
‘Chalte chalte ye puch lena
Humse kitni mohabbat hai haan
Jaana chahe pr jaan lena..
Humko teri zarurat hai haan..
ফারাজ কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
‘মারাত্নক সাজ দিয়েছো।স্লিভলেস ব্লাউজ,পাতলা শাড়ি!পাগল করে দিচ্ছো তো’
অপরাজিতা গালে হাত বুলিয়ে বলল,
‘তাই!’
ফায়াদ বাকা হাসলো।কোমরে চাপ প্রয়োগ করে বলল,
‘হুম তাই’
Ke ghoon ghoont krke
Khud ko pee rahe hain hum
Tumko kya batayein
Kaise jee rahe hain hum
Gum se ho chuke hain ab
Tasalliyon me hum..
Sach hai ye haan magar
কোমর জড়িয়ে নাচতে নাচতে উন্মুক্ত গলায় মুখ গুজে দিল ফায়াদ।আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল অপরাজিতা।
Tumse mohabbat hai haan..
Tumse mohabbat hai haan..
Bas Tumse Haan, Tumse hi haan..
Tumse mohabbat hai haan..’
কোলে তুলে নিল অপরাজিতাকে৷ বিছানায় শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দিল।
অপরাজিতা দুষ্টুমি করে বলল,
‘মাথায় ব্যথা না আপনার?’
ফায়াদ বাকা হেসে বলল,
‘শুধু মাত্র মাথায় ব্যথা!’
‘অ/সভ্য পুরুষ!’
‘তাই?’
বলে অপরাজিতার অনেক কাছে চলে এলো ফায়াদ। অপরাজিতা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। ফায়াদ বলল,
‘দম আটকে আসছে? হেল্প করবো?’
বলে অধরে অধর মিলিয়ে দিল। শিউরে উঠলো অপরাজিতা। এই ছিল হেল্প করার নমুনা?ভালোবাসায় কেটে গেলো পুরো রাত।
এইতো শুরু অপরাজিতার সংসার জীবন৷ পড়াশোনাও করছে পাশাপাশি। নীতি অফিস আবার সংসার দুটোই করছে। শাশুড়ী এবং দুই পুত্রবধু মিলে সুন্দরভাবেই সামলাচ্ছে পুরো সংসারটাকে। তারা যেন তিন বান্ধবী৷ দুনিয়ার যত আজগুবি কথাবার্তা তা এই তিনজনের আড্ডায় গেলে শোনা যায়। মাঝে মধ্যে এদের কথা শুনে হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায় পুরুষদের৷
সুন্দর ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দর এই পরিবারটা।
সময় থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে ৫ মাস পার হয়ে গেল। একদিন অফিস থেকে এসেই ফারাজ নীতি খবর দিল নতুন অতিথি আসবে। খুশির বন্যা বয়ে গেল।সবার আনন্দের শেষ নেই। নীতি লজ্জা পাচ্ছে। নীতিকে তো ফারাজ পারে না মাথায় তুলে নাচে।
অপরাজিতা ঘোষণা দিয়ে দিল তার নীতির ছেলে চাই।যাতে তার মেয়ে হলে বিয়ে দিতে পারে। এটা নিয়েও অনেক মজা মাস্তি হলো। তবে কিভাবে কিভাবে যেন আল্লাহ অপরাজিতার মনের আশা টা পূরণ করে দিল। নয়মাস পর নীতির এক ফুটফুটে ছেলে বাবু হলো। অপরাজিতা তো খুশিতে বাড়ি মাথায় করে ফেলল
যে তার মেয়ের জামাই হয়েছে।
ফারাজ নীতির কপালে চুমু খেয়ে বলল,
‘থ্যাংক ইউ!’
নীতি ফারাজের হাত ধরে বলল,
‘থ্যাংক ইউ তো আমার বলা উচিত। আমাকে এতো সুন্দর লাইফ দেওয়ার জন্য।’
ফারাজ মুচকি হেসে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায়৷ করলো মনে মনে।
নীতির ছেলের এখন ১ বছর৷ বাচ্চা টা কি সুন্দর বাড়িটা মাতিয়ে রাখে।
রাতের বেলা অপরাজিতা ফায়াদের কাছে অভিযোগ করে বলল,
‘আমারো বাবু লাগবে।’
ফায়াদ বলল,
‘তুমিই তো বাবু দেড়িতে নিতে চেয়েছিলে।’
অপরাজিতা গাল ফুলিয়ে বলল,
‘এখন তো বলছি লাগবে।’
ফায়াদ বাকা হেসে বলল,
‘তুমি বলবে আর আমি মানবো না এটা কি হয়?’
তার সাত/আট মাস পর খবর এলো অপরাজিতা প্রেগন্যান্ট। অপরাজিতা যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। টেনশনে লাগছিল তার বাবু আসে না কেন৷ তার টেনশন দেখে ফায়াদ হাসতো আর বলতো ‘আরে ধৈর্য্য ধরবা তো।’
আরো একবার বাড়িতে খুশির জোয়ার বয়ে গেল৷ ফারাজ মিষ্টি এনে এলাকায় বিলাচ্ছে আর বলছে, ‘আমার ছেলের বউ হবে’
সবাই খুশিতে বাকবাকুম। তাদের বাড়িটা এবার বাচ্চা দিয়ে পূর্ণ হলো।
অপরাজিতার এখন ৭ মাস চলছে। তার পেটটা উচু হয়েছে। আগে থেকে মোটা হয়েছে সে। দেখতে ভীষণ আদুরে লাগে।এখন আর দৌড়াদৌড়ি করতে পারে না৷তা নিয়ে ভীষণ মন খারাপ তার। আস্তে আস্তে হাটতে গিয়ে মনে হয় এক রুম থেকে আরেক রুম যেতেই দিন পার হয়ে যাবে।
আজ ফায়াদ বাসায় এসেই দেখে অপরাজিতা আয়নায় নিজেকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। সে কিছু বলল না। এই সময়ে মেয়েদের কতো কিছু যে করতে ইচ্ছে করে!এই পুরো প্রেগন্যান্সির সময় অপরাজিতা সবাইকে জ্বালিয়েছে। কাউকে ছাড় দেয় নি৷ এটা চাই ওটা চাই। কেউ কিছু বলে না তাকে৷ ফায়াদ হাসি মুখে সব করেছে৷
ফায়াদ ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে অপরাজিতা এখনো আয়নায় নিজেকে দেখছে। ফায়াদকে বের হতে দেখে অপরাজিতা বলল,
‘হুম!’
‘কি?’
‘আমি খুব অসুন্দর হয়ে গিয়েছি তাই না?’
ফায়াদ একথা শুনে জোরে হেসে দিল। তাকে হাসতে দেখে অপরাজিতা গাল ফুলিয়ে বলল,
‘হাসছেন?তারমানে সত্যি বাজে হয়ে গিয়েছি!’
ফায়াদ অনেক কষ্ট করে হাসি থামালো।অপরাজিতা কান্না কান্না ভাব নিয়ে এখনো আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। ফায়াদ গিয়ে অপরাজিতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পেটে হাত রাখলো।গালে চুমু খেয়ে বলল,
‘কে বলেছে অসুন্দর লাগে?’
‘আপনি হাসলেন কেন?’
‘তুমি উল্টো পালটা কথা বললে তো হাসবোই’
‘তাহলে বলেন কেমন লাগে?’
ফায়াদ অপরাজিতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গালে হাত দিয়ে বলল,
‘ভীষণ আদুরে লাগে। দেখলেই শুধু প্রেম প্রম পায়।’
‘সত্যি?’
‘একদম’
অপরাজিতা হেসে দিয়ে বুকে মাথা রাখলো। ইশ কি শান্তি!মানুষটা এভাবেই তাকে আজীবন ভালোবেসে যাক।প্রেম প্রেম অনুভূতি থেকে যাক শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।
(সমাপ্ত)