প্রেয়সী পর্ব-৩২+৩৩

0
262

#প্রেয়সী 🤎(৩২)
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা

৬২.

—-” রাফিদ তোমার উপর দয়া দেখাচ্ছে নিধি! একটা অনাথ মেয়ের উপর দয়া দেখিয়ে মহান সাজছে রাফিদ। তুমি ওকে এখনও ভালো করে চিনতে পারোনি! আমি বলছি তোমায়, তুমি কখনও ওর সাথে সুখী হবেনা। কিছুদিন গেলেই তোমার উপর থেকে ওর সব দয়া চলে যাবে! তখন তোমার ফিরে আসার আর কোনো পথ থাকবেনা। জীবনটাকে ন-র-ক করে বাঁচতে হবে তোমাকে! আমি তোমার ভালো চাই! বড় বোনের মতো ছোট্ট একটা সাজেশন দেই, বিয়েটা তুমি করো না! ক্যানসেল করে দাও! বেটার হবে তুমি কেশবকে বিয়ে করে নাও। হি ইজ আ সাচ্চা গুডবয়। এন্ড হি লাভস ইউ সো মাচ! কেশব তোমায় রাজরানির মতো করে রাখবে। কি নেই ওর টাকা, পয়সা,বাড়ি-ঘর! ইভেন আমেরিকার মতো একটা দেশে সে নিজের ক্যারিয়ার গড়েছে। সুখই সুখ! তুমি সব পাবে নিধি! রাফিদের সাথে ন-র-কে পো-ড়া-র চেয়ে বুদ্ধিমতী মেয়ের মতো কেশবের হাত ধরো। সময় থাকতে বুঝতে চেষ্টা করো নিধি! আমি বলছি তোমায়, কেশবের থেকে স্বর্গ সুখ পাবে তুমি! আমার কথা শোনো নিধি, বিয়েটা ভে-ঙে দাও তুমি!”

—-” রাহিয়ানের সাথে বিয়ে করে আমার জীবন ন/র/কে পরিনত হলেও তাতে আপনার কি যায় আসে? হঠাৎ আপনি কেন আমাকে নিয়ে এতটা চিন্তিত?”

আমার প্রশ্নে কফির মগটা পাশে নামিয়ে রাখল অরিন আপু। চি/ন্তাক্লি/ষ্ট কন্ঠে বলল,

—-” কারন তুমিও একটা মেয়ে আর আমিও একটা মেয়ে! আর আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের কিছুতেই খারাপ চাইতে পারিনা!”

আমি হাসলাম। প্রথম চুমুকেই বুঝলাম কফির স্বাদটা বি-কৃ-ত। আমার সামনে বসে আমার হবু স্বামীর বি-রু-দ্ধে ভাষন দিয়ে চলা এই মানুষটার মতোই বি-কৃ-ত!

—-” হঠাৎ এতোটা ভালো চাওয়া কি সন্দেহজনক নয়?”

কফি খেতে নিয়ে এবার কেশে উঠল অরিন আপু। গলা খাঁকারি দিয়ে বার কয়েক ঢোক গিলল। সে তার লক্ষ স্থীর রেখে কথা বলতে পারছে না। তা তার মুখের ভাব ভঙ্গিতেই বোশ স্পষ্ট! উনি ভীষণ ক্ষে/পে আছে আমার উপর! কিন্তু এই মুহুর্তে উনি রা/গ দেখিয়ে নয় বরং ভালোবাসা দেখিয়ে কথা বলার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু উনি বারে বারে স্বভাবের কাছে হার মেনে যাচ্ছে! চেয়েও নিজের রা/গ/টা বারবার সংযত করতে ব্যার্থ হচ্ছে! কফির মগটা শক্ত করে চেপে ধরে মাথা নীচু করে নিজেকে শান্ত করছে অরিন আপু! আমি তার কান্ড দেখে না হেসে পারছি না! মানুষ সবসময় অযথাই অপকর্মে কেন সময় ব্যয় করে ভেবে পাইনা আমি! এই দুনিয়াতে ভালো কাজের তো অভাব নেই! তবে কেন তারা সেগুলো রেখে অযথাই এসবে সময় ন/ষ্ট করে বেড়ায়?

—-” কেশবের আগেও রাহিয়ান আপনার ফ্রেন্ড অরিন আপু। এ’কদিনে আমি উনাকে যতটা দেখেছি বা চিনেছি তার থেকেও অনেক বছর আগে থেকে আপনি উনাকে দেখে আসছেন। উনাকে খুব ভালো করেই চিনেন আপনি। তবে কেন হঠাৎ করে তার প্রতি এতো আ-ক্রো-শ? তার বি-রু-দ্ধে এই ষড়যন্ত্র! আচ্ছা এর মূল কারন কি আমি? দেওয়া নেওয়ার অফার চলছে নাকি?”

অরিন আপু চোখ মুখ শক্ত করে তাকাল! রা-গা-ন্বি-ত কন্ঠে বলে উঠল,

—-” ভালো কথা বলছি বুঝতে পারছো না তাই না? রাফিদের সাথে তোমার কিছুতেই যায় না! ওকে আমি ভালোবাসি! আর ওকে বিয়েও এই আমিই করবো। লুক এট ইউ এন্ড লুক এট মি নিধি! কোথায় সুন্দরীদের রানী আমি আর কোথায় কোন বনের কালো জ-ঙ্গ-লী-দের মতো দেখতে তোমায়! তুমি ভেবো দেখো, রাফিদের মতো এমন একজন ড্যাশিং ছেলে তোমার মতো একটা কালো মেয়েকে কেন বিয়ে করতে চাইবে? এখানে দয়া নয়তো কি? তোমার মা নেই, বাবা ছিলো সেও ম//রে ভূত হয়েছে! তোমার পরিবার বলতে কেউ নেই কিচ্ছু নেই!! তুমি অনাথ নিধি! তাই ও ওর পরিবারের চাপে পড়েই তোমায় দয়া করছে! বুঝতে পারছো না তুমি? নাকি বুঝতে চাইছো না? আরে বোকা মেয়ে রাফিদের মতো একটা ড্যাশিং, হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে আমার মতো সুন্দরী কাউকেই মানাবে নিধি! ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড! রাফিদ তোমায় ভালোবাসে না! কিন্তু কেশব তোমায় ভালোবাসে! রাফিদের সাথে বিয়ে করে তুমি কিছুই পাবেনা কিন্তু কেশবের সাথে বিয়ে করে তুমি সব পাবে সব!”

না দেখলেও বেশ বুঝতে পারছি আমার মুখ খানা শুঁকিয়ে শুঁকনো কাঠে পরিনত হয়েছে! অরিন আপুর কথা গুলো অবান্তর বলেও ভাসিয়ে দেওয়া যায় না! রাহিয়ান বিয়ে করলে অরিন আপুর মতো কোনো সুন্দরীকেই বিয়ে করা উচিৎ। কেননা কোন সুন্দরী মেয়েই উনার সাথে ম্যাচ করবে। আমার মতো কোনো শ্যামা মেয়ে উনার সাথে স্যুট করে না! কিছুতেই না! উনাকে বোঝাতে হবে। বলতে হবে, যদি উনি পরিবারের চাপে পড়ে আমার উপর দয়া দেখাতে চান তবে যেন সে কাজ হতে বিরত থাকেন! উনার কোনো দয়া ছাড়াও আমি টিকে থাকতে পারবো। কারন, অনাথ কেবল একমাত্র আমিই নই! যে কি না দমকা হাওয়া সইতে না পেরে মিলিয়ে যাবো। যে মানুষ গুলো জন্ম থেকেই অনাথ তারাও কিন্তু বেঁচে রয়। বেঁচে আছে! আমিও বেঁচে থাকব।

অরিন আপুর থেকে আর কোনো কথা শোনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই বলেই উঠে পড়লাম আমি। ক্যানটিনের মেইন গেট থেকে বের হতে হতে মাঠের দিকে চোখ পড়তেই দেখা মিলল রাহিয়ানের। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় আছেন। আমাকে যেন দেখতে না পান সেভাবে করেই সরে এলাম ওখান থেকে। সোজা ক্লাসে এসে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসতেই সামনে এসে দাঁড়ালো রাই। চোখে মুখে সন্দেহের ছাপ। মনে মনে নিশ্চয়ই তার অসংখ্য প্রশ্ন, কেন অরিন আপু আমাকে হঠাৎ আলাদা করে ডেকে নিয়ে গেলেন? কি কি বললেন? ওর প্রশ্ন গুলো থেকে বাঁচার ছলেই বলে উঠলাম আমি,

—-” বাসা থেকে কল এসেছে! খালামনি বাসায় ফিরতে বলল।”

রাই ভ্রু কুঁচকে বলল,

—-” ক্লাসের মাঝখান থেকে চলে যাবি? এটলিস্ট শেষ ক্লাসটা করে যা?”

আমি শুঁকনো হাসি দিয়ে বললাম,

—-” না রে। রিম্মি আপু আর আসিফ ভাইয়ার দাওয়াত আজ আমাদের বাড়িতে। বিয়ের পর এই প্রথম কাপল হয়ে আসছেন আমাদের বাড়িতে। কত আয়োজন আছে। তাছাড়া বউমনি একা একা কয়দিকে দেখবে বল? তুই বরং ক্লাস শেষ করে সোজা বাসায় ফের। ফিরে টেক্সট করে জানাস ঠিক মতো পৌঁছেছিস কি না! আমি জলদি করে যাই কেমন?”

—-” ভাইয়া যাবে না? ভাইয়া কোথায়?”

আমি থমকে দাঁড়ালাম! গলার কাছে অভিমান গুলো দলা পাকিয়ে আসতেই ঢোক গিলে বললাম,

—-” দেখলাম ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে তাই আর ডাকি নি। সমস্যা নেই,আমি একাই ফিরতে পারব।”

—-” তোর মুখটা ওমন শুঁকনো লাগছে কেন রে? কেউ কিছু বলেছে?”

আমি জোরপূর্বক হাসতে লাগলাম। কথায় কথায় রাই ঠিকই পেটের কথা মুখে এনে ছাড়বে। তাই রাইকে তাড়া দিয়ে বললাম,

—-” ক্ষিদে পেয়েছে তাই ওমন লাগছে। তুই থাক আমি আসছি।”

—-” খেয়ে যা কিছু!”

—-” বাসায় খাবারের তোড়জোড় চলছে। এখানে খেলে বাসায় গিয়ে আর কিছু খাওয়া হবে না। যা দেখে উনিও রা-গ-বে-ন আর খালামনিও রা-গ-বে। আসছি রে।”

—-” সাবধানে যাস।”

রাইয়ের শেষ কথাটা কানে আসতেই জড়ানো গলায় ফের ঢোক গিললাম। নিজেকে আজ বড় অসহায় লাগছে। অরিন আপুর কথা গুলো বড্ড ভাবাচ্ছে। সত্যিই তো আমি অনাথ! মা নেই, বাবাও নেই! সবাই চলে গিয়েছে আমায় অনাথ করে। আচ্ছা অনাথরা বড্ড অসহায় হয় তাই না? সবার দয়া নিয়েই তাদের গোটা জীবনটা পার করে দিতে হয়। আমিও কি তার ব্যাতিক্রম? এই যে চারপাশে এতো এতো মানুষ আমায় এতো ভালাবাসে এগুলা কি সত্যিই ভালোবাসা? নাকি দয়া? কি করে বুঝবো? কাকে জিজ্ঞেস করবো? কার থেকে জানবো সবাই কি আদৌও আমাকে ভালোবাসে নাকি সবটাই দয়া করে!

বাসায় ঢুকতেই বড় খালামনিকে রান্নাঘরে দেখতে পেলাম! রান্নাবান্না হচ্ছে বোধহয় রিম্মি আপুদের জন্য। আমাকে শুঁকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই মিষ্টি করে হাসল সে। পরক্ষণেই আবারও হাসির সমাপ্তি ঘটিয়ে মন খারাপ সুরে বলল,

—-” মুখটা ওমন শুঁকনো কেন আমার মায়ের? মন খারাপ মা?”

বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠল খালামনির স্নেহভরা কন্ঠে। মুহুর্তেই গলায় চিনচিনে ব্যা-থা আরম্ভ হলো। কান্না আসছে খুব। কিন্তু এই মুহুর্তে আমি কাঁদতে চাইছিনা! আমাকে একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গ্যাসের পাওয়ার একদম অল্প করে কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে আমার দিকে এগিয়ে এলো খালামনি। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আহ্লাদী গলায় বলল,

—-” সকালে খেয়ে বের হলি না কেন মা? দেখ মুখটা কেমন শুঁকিয়ে আছে? ক্ষিদে পেয়েছে খুব তাইনা? আয়। এখানে বস আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি। খেয়ে নিবি। আয় জলদি আয়।”

খালামনি দ্রুতপায়ে এগোলেও আমি ধীরেসুস্থে এগোলাম ডাইনিং টেবিলের কাছে। চেয়ারে বসতে বসতে ততক্ষণে খালামনি প্লেট ভর্তি খিচুড়ি নিয়ে হাজির হলো। আমার সামনে প্লেট রেখে গ্লাসে জল ভর্তি করে আমার সামনে রেখে আমার পাশের চেয়ারটা টেনে বসল।

—-” রাহিয়ান ভাইয়ার মতো এমন সুদর্শন একজন ছেলের সাথে আমার মতো মেয়েকে মানায় না! তুমি আমাদের বিয়েটা দিওনা খালামনি! তুমি চাইলেই তোমার ছেলের জন্য রাজকন্যা নিয়ে আসতে পারবে!”

আমার কথা শুনে খালামনি থমকে গেল। আমাকে সামনে বসিয়ে খাওয়ানোর উৎসাহটুকু তার মুহূর্তেই মিলিয়ে গেলো! চোখে মুখে ভর করল এক আকাশ কালো মেঘ! খালামনির কালো মুখটা দেখে আমার ভেতরটাও কেঁপে উঠল! আমি আর বসে থাকতে পারলাম না মানুষ টার সামনে! চেয়ার ঠেলে বের হয়ে দৌড়ে চলে এলাম নিজের রুমে। ভেতরটা ক্রমশই ডুকরে উঠছে কান্নায়! কান্না গুলো আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়েও কোনো লাভ হলো না! বিছানার পাশে ধপ করে বসে পড়েই হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগলাম!

অরিন আপু রাহিয়ান কে ভালোবাসে সে কথা কি রাহিয়ান জানেন? হয়তো জানেন। হয়তো সেও তাকেই ভালোবাসে! কেবল আমার জন্যই প্রকাশ করতে পারেনি! অরিন আপুর সাথে উনাকে সত্যি ভীষণ মানাবে! ওমন রাজপুত্রের মতো দেখতে ছেলের সাথে কি আমার মতো কালো মেয়ে মানায়? ঠিকই বলেছে অরিন আপু। আমায় দেখতে কোনো বনের জঙ্গলীদের মতোই লাগে। আমিও বোকার মতো কত স্বপ্ন দেখেছি উনার সাথে! একবারও বুঝতে চাইনি মানুষ আজও সৌন্দর্যের পূজারী!

বিছানার চাদর খামচে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছি। অভিমানটা আজ নিজের উপর নয় বাবার উপর হচ্ছে! বাবা যদি আজ আমার সাথে থাকতো তাহলে হয়তো, আমায় কখনও এই কথা শুনতে হতো না! কিন্তু যা শুনতে পারবো না তাই-ই তো লোকজন বলা বলি করবে। নিধি অনাথ! অনাথ বলে সবাই দয়া দেখাতে আসবে! নাহ্ আমি কারোর দয়া নিবো না! আমার কারোর দয়ার দরকার নেই! আমি চলে যাবো নিজের বাড়িতে। ওখানে গিয়ে বাবা আর মায়ের ছবি আগলেই বাকি জীবন পার করব। কখনও কারোর দয়া আমি চাই না! কারোর দয়ার প্রয়োজন নেই আমার।

৬৩.

দুপুর ৩টা। মাথার উপর কাঠফাটা রোদ। গা পোড়ানো গরম। ছাদের মধ্যে পায়চারি করছি বাসার সবার নজর এড়াতে। সবাই যখন যে যার রুমে প্রবেশ করবে আমিও সুযোগ বুঝে ব্যাগপত্র নিয়ে বের হয়ে যাবো। রিম্মি আপুরা এসেছেন সাড়ে বারোটার দিকেই। আমি কেবল একবারই গিয়েছি তাদের সামনে! তারপর থেকেই নিজের রুমে আছি। তাদের খাওয়া দাওয়া এতক্ষণে হয়ত কমপ্লিট হয়ে গেছে। রাহিয়ান এখনও বাসায় ফেরেননি। এই সুযোগ! আল্লাহ্ রক্ষা করলে উনার সামনে পড়তে হবে না। দোয়াদরুদ পড়তে পড়তে নিজের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলাম। ছাদের সিঁড়ি বারোটা। গুনে গুনে পাঁচ টা সিঁড়ি পেরোতেই মনে হলো শূন্যে ভেসে উঠলাম।

আঁ-ত-কে উঠে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে পায়ের নীচে জমিন খোঁজার বৃথা চেষ্টা চালালাম। পেলাম না তো কিছুই উল্টে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে কারোর পেছনে ছুটতে লাগলাম যেন। ভ-য়ে সারা শরীরে কাটা দিয়ে উঠছে বার-বার। সামনের মানুষটার মুখটা দেখার জন্য সেকেন্ডের চেয়েও কম সময় মিলছে না আমার! এমন গাঁজাখুরি কাজকারবার রাহিয়ান ছাড়া কারোর করার কথা নয়! বুঝলাম বাবা সবাই দয়া করছে, কিন্তু এটাকে কেমন দয়া বলে? আমি তো বলব উনি জীবনকালে এই পো-ড়া-মু-খী-কে দয়া বাদে সবই করেছেন!

টানতে টানতে নিজের রুমে এনেই ক্ষান্ত হলেন উনি। ঠিক ক্ষান্ত হলেন না! আরও বাকি আছে, আমাকে ছুঁড়ে ফেললেন বিছানার উপর! অতঃপর রা-গে দিশেহারা হয়ে দরজা লক করে দিলেন। আজ আমার একেবারে বাঁচার আশা শূন্য! রা-গে উনার মাথার প্রত্যেক টা চুল কাটা কাটা হয়ে আছে। কপালের দুই পাশের রগ গুলো মোটা হয়ে ফুলে উঠেছে। চোখের মধ্যে র-ক্ত যেন টগবগ করছে। লালচে চোখ জোড়া সূর্যের তেজকেও হার মানাবে। পুরো মুখ-মন্ডলে রা-গে কঠিন আকার ধারন করেছে! হাত জোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছেন। দৃষ্টি কঠিন ভাবে আমাতেই নিবদ্ধ। চড় থাপ্পড় খাওয়ার অনেক চান্স আছে। যেভাবে রে-গে আছেন তাতে গলা চে-পে মে-রে দিতেও সময় বেশি লাগবেনা বলেই মনে হচ্ছে। ভেতরটা খুব তেজে ছটফট করছে আমার। আমার সাথে কোনো অনাচার তো নিশ্চিত ঘটবে আজ!

আমি দু’হাতে ভর করে উঠতে নিলেই ঝড়ের বেগে এসে উনি আমাকে বিছানাতেই চেপে ধরলেন তিনি। ভ-য়ে আমার আত্মা ছোটাছুটি করছে বেরিয়ে আসবে বলে। উনি রা-গ-কে সংযত করতে পারছেন না! রা-গা-ন্বি-ত স্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন উনি,

—-” আমার থেকেও ভালো ছেলে পেয়েছিস তাই তো? আর সেই ভালো ছেলেটা কে? কেশব! মাকে বলছিস তোমার ছেলের জন্য চাইলেই রাজকন্যা নিয়ে আসতে পারবে! আমার যদি মায়ের খোঁজা রাজকন্যাই লাগত তবে আমি তোকে কেন ভালোবাসলাম? তোর সাথে কেন ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখলাম? কেন আমার জন্য ম-রে যাওয়া মেয়েগুলোকে আমি আপন করলাম না? বল? কেন করলাম না? এই আজকের দিনটার জন্য? আজকের দিনটা দেখার জন্য, তোর জন্য আমি এতো ম-রি হু? এতো ভালাবাসার পরও যদি শুনতে হয় আমার জন্য তোকে নয় যেন কোনো সো কল্ড রাজকন্যা দেখতে মেয়েকে নিয়ে আসা হয় বিয়ে করানোর জন্য তবে তোর জন্য এতো ম-রি কেন আমি? বল??”

তার কন্ঠে রা-গ নয় চাপা ক-ষ্ট গুলো যেন উপচে পড়ছে। চোখজোড়াও ছলছল করছে! মানুষটা ক-ষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু আমি কি করব? অরিন আপু যে তাকে ভালোবাসে। আর অরিন আপুর মতো কেউই তার জন্য যোগ্য। আমার মতো কেউ নয়।

—-” আপনার মতো পার্ফেক্ট কারোর জীবনে আমার মতো মেয়েরা কেবল উড়ে এসে জুড়েই বসতে পারে। আমিও তাই! ব্যতিক্রম নই,আমিও আপনার জীবনে উড়ে এসে জুড়ে বসেছি৷ আমার জন্য আর পাঁচটা মেয়ে কেন ভুক্তভোগী হবে বলুন তো?”

উনি আমার হাত ছেড়ে গলা চে*পে ধরলেন! আমি দ*ম*ব*ন্ধ করে উনার দিকে তাকাতেই উনি ফুঁসে উঠে বললেন,

—-” তোকে আর পাঁচটা মেয়ের কথা কে ভাবতে বলেছে? এতো মানবদরদী হতে কে বলেছে? আমি তোকে ভালোবাসি না? আমি তোকে কাছে টানি না? নাকি তোর উপর দয়া করি বল? তোর কি মনে হয় আজ পরিস্কার করে বল? আমি দয়া করি তোর উপর?”

আমার শ্বা*স*ক*ষ্ট হতে ছটফট করতে লাগলেই রাহিয়ান আমার গলা ছেড়ে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমার উপর থেকে সরে গিয়ে পা*গ*লের মতো করে জলের গ্লাস খুঁজতে লাগলেন! আমি কাশতে কাশতে উঠে বসতে জলের গ্লাস নিয়ে হাজির হলেন তিনি। আমার মুখের সামনে জলের গ্লাসটা ধরে জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলেন,

—-” স..সরি সরি জান! ক্ষমা করে দাও আমায়। আ..আমি ইচ্ছে করে তোমায় ক*ষ্ট দিতে চায়নি! আমায় ক্ষমা করে দাও! আমা..য়য়য় ক্ষমা করে দাও প্লিজ!”

—-” একটা অনাথ মেয়েকে সবাই দয়াই করবে রাহিয়ান! আপনিও তা-ই করছেন! অস্বাভাবিক তো কিছু নয়!”

স্পষ্ট গলায় আমি কথাটা বলে উঠতেই রাহিয়ান থমকে গেলেন। চোখের মাঝে এক আকাশ সমান বিস্ময় নিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন,

—-” আমি তোমায় দয়া করছি নীলাদ্রিতা?”

আমি টলমল করা চোখ নিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি ছুঁড়ে মারলেন হাতের গ্লাসটা। বিকট চিৎকার পেড়ে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত হলো গ্লাসের টুকরোগুলো। আমি চমকে উঠে উনার দিকে তাকাতেই হেঁচকা টানে তুলে দাঁড় করালেন আমাকে। আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে টেনে নিয়ে উনার ঘরের বড় আয়নাটার সামনে দাঁড় করালেন আমায়। এটাই সেই রহস্যময়ী আয়না! যেটাতে ভূ-তে-র থ্রিডি পেইন্টিং দেখে আমি ভ/য় পেয়ে ছোটাছুটি করে কে*লেং*কা*রী কান্ড করেছিলাম! কিন্তু উনি আমাকে হঠাৎ এই আয়নার সামনে এনে কেন দাঁড় করালেন?

আমি আয়না থেকেই উনার দিকে দৃষ্টিপাত করলাম। আজ বিচ্ছেদের আ*গু*নে দু’জনেই জ্ব*লেপু*ড়ে খাক হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু প্রকাশ করার বেলায় দু’জনেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কেউ কোনো কথা বলছি না! প্রতিত্তোর করছিনা! উনি আমার হাত ছেড়ে আয়নার মাঝখানে ঝুলে থাকা সাদা ফিতেটা ধরে টান দিতেই উদ্ভট এক শব্দ করে ভেসে উঠলো খুব বি*ভৎ*স দেখতে এক ভূ*তে*র ছবি! আমি আঁতকে উঠে দৌড় দিতে নিলেই উনি আমায় আঁটকে ফেলেন! বুঝতে পারছিনা, উনি কি এখন ভূ*তে*র ভ*য় দেখিয়ে আমায় পা*গ*ল বানাতে চাচ্ছেন?

—-” দ..দেখুন আ..আমার কিন্তু খুব ভ..য়য় লাগছে! প..প্লিজ আ..মায় ছেড়ে দিন! প্লিইইইজজজ! মাআআ..”

উনি আমার একটা কথাও কানে তুলছেন না! আমার হাতটা চেপে ধরে কেমন করে পা*ষা*নে*র মতো করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ছবিটার দিকে। ভ*য়ে আমার কলিজা পু*ড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে ভ*য়ং*ক*র ভাবে পু*ড়*ছে! ভ*য়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলাম আমি। বার-বার ঢোক গিলেও গলা ভেজাতে পারলাম না। উনি এমন পা*ষা*ন কেন? দুঃখিত! প্রশ্নটা উল্টো হবে, আমি এতো বোকা কেন? আয়নার উপর আমার হাত পড়তেই ছবিটা পাল্টে আমার হাস্যজ্বল একটা ছবি ভেসে উঠলো! আমার মস্তিষ্ক অবাক হয়ে কুল পাচ্ছে না! এই ছবি টা তো….

উনি আমায় ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেলেন ক’পা। আমি আমার বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছি।

—-” দেখো ভালো করে, ছবিটা দেখে কিছু মনে পড়ছে? ঠিক দুই বছর আগের এই ছবি! সেদিন রাস্তার পাশে কিছু অনাথ বাচ্চাদের সাথে তোমার এই মনোরম দৃশ্য! সাথে কিন্তু সেদিন তোমার বাবাও ছিলো! বাচ্চাগুলোর সাথে হেসে খেলে তোমার কথা বলা। ওদের খাওয়ানো ওদের পড়ানো! এত সুন্দর মনোরম দৃশ্যটা আমার মন কেড়েছিলো নীলাদ্রিতা। সেদিন তোমার এই হাস্যজ্বল মুখ খানা দেখে আমার বুকের পা পাশটা খুব করুন ভাবে চিনচিন করে ব্যা*থা করছিলো! জানান দিচ্ছেিলো প্রকৃতির সবচেয়ে মায়াবী মেয়েটা আমার মন কেড়েছে। আমি কয়েক মুহুর্তের জন্য এই দুনিয়া থেকে হারিয়ে গিয়েছিলাম! বুকের মধ্যে তোলপাড় করে জানান দিচ্ছিলো এই নিষ্পাপ হাসিটার প্রেমে পড়েছি আমি। প্রথম দেখাতেই তোমায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তাই তোমার থেকে পারমিশন না নিয়েই তোমার ছবিটা ক্লিক করি। সেদিন থেকে আজও অব্দি সেই ছবিটা বুকের বা পাশটায় ঠিক আয়নার ছবিটার মতোই জলজ্যান্ত হয়ে ভাসছে। সেদিন কিন্তু তুমি অনাথ ছিলেন না নিধি! তাই তোমার উপর দয়া করে ভালোবাসার কোনো প্রশ্নই আসেনি। সেদিন হঠাৎ করে তোমার দেখা মিললেও টানা দু’দুটো বছরে তোমার দেখা আমি আর পাইনি! পুরো শহর তন্নতন্ন করে ফেলেছি তোমায় খুঁজতে কিন্তু তোমার খোঁজ মিলেনি! ঠিক দু’বছর বাদে তোমায় আবারও খুঁজে পেলাম! তোমার আমার সম্পর্কের একটা নাম খুঁজে পেলাম! নিধি, তুমি কিন্তু সেদিনও অনাথ ছিলেনা! সেই দু’বছর আগে থেকে তোমার প্রতি আমার যে অনুভূতি সবটাই ভালোবাসার কোমল অনুভূতি ছিলো! বিলিভ মি নিধি, আমি তোমায় কখনও দয়া করে ভালোবাসিনি! তাহলে আজ কেন প্রশ্ন উঠছে আমি তোমায় দয়া করছি! তুমি অনাথ হয়েছো বলো তোমায় আমি দয়া করছি! কি করে ভাবলে বলো তো?? মনে এক সেকেন্ডের জন্যও প্রশ্ন জাগল না এই মানুষটা কি করে আমাকে দয়া করতে পারে? ভালো তো তুমিও আমায় একই ভাবে বাসো নীলাদ্রিতা? তবে?”

নিজেকে অসহায় নয় বরং ছন্নছাড়া লাগছে বড়। অনুভূতি গুলোও বড় ছিন্ন-বিছিন্ন লাগছে। কান্না পাচ্ছে খুব! কিন্তু এই মানুষটাকে জড়িয়ে ধরার সাহস হচ্ছে না!

—-” অরিন আপু আপনাকে ভালোবাসে….”

—-” আর আমি?”

—-” জানিনা!”

—-” আজ আমার থেকে অরিন তোমার কাছে বড় হয়ে গেলো নিধি?”

—-” অরিন আপুও একটা মেয়ে আর আমিও একটা মেয়ে! একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের অনুভূতি বুঝবো না?”

—-” কেশবও তো তোমাকে চায়? তাই বলে কি আমি একটা ছেলে হয়ে অন্য একটা ছেলের অনুভূতি বুঝে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে দিয়ে দিবো? এতো ইজি? নিজের ভালোবাসার এই মূল্য? তাহলে ভালোবাসলাম কেন?”

আমি হেঁচকি তুলে এবার কেঁদে ফেললাম! উনি আর কিছু না বলেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন! গালে কপালে ভালোবাসার পরশ একে বললেন,

—-” আর কত বোকা থাকবে বলোতো? এবার তো নিজের অধিকারটা শক্ত হাতে ধরতে শিখো? সামনেই বিয়ে আমাদের। বিয়ের একবছরের মাথায় দেখবে তোমার কোল জুড়ে ফুটফুটে এক রাজকন্যা এসে গেছে। তখন কি হবে বলো তো? দেখা যাবে মা, মেয়ের চেয়েও বেশি বাচ্চামো করছে! তখন কি মেয়েকে সামলাবো নাকি মাকে?”

আমি লজ্জায় তার বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললাম! সত্যিই তো ভালোবাসার মানুষটাকে কেউ চাইলেই বুঝি এতো সহজে দিয়ে দেওয়া যায়? সে তো অসম্ভব তাই না?

#চলবে____________________

#প্রেয়সী 🤎(৩৩)
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা

৬৪.

আজ ক্যালেন্ডারে ইংরেজির নয় চলছে। আমাদের বিয়ের তারিখটা আরও দিন পনেরো পেরিয়ে হওয়ার কথা ছিলো! কিন্তু হঠাৎ করেই তা আর ৪দিনের মাথায় নির্ধারিত করার সঠিক কোনো কারন আমি এখনও ধরতে পারলাম না! বড় খালামনি,মেঝ খালামনি,চাচা-চাচি,বড় খালু,মেঝ খালু সব গুরুজনরাই বিয়ের তারিখ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন! গবেষণায় বের হলো আর চারদিন বাদে শুক্রবার-১৩ তারিখ। শুক্রবারে বিয়ে পড়ালে অগ্রীম সওয়াব মিলবে। তাই আগামী ১৩ তারিখই বিয়ের জন্য নির্ধারিত করা হলো। গুরুজনরা সবাই বসে থাকলেও আমরা ছোটরা সবাই সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম! অবশ্য আমি দাঁড়াতে চাইনি! কিন্তু খালামনির কঠোর আদেশে আমাকেও দাঁড়াতে হয়েছে। ১৩ তারিখ বিয়ের ডেট ফাইনাল হতেই হুল্লোড় করে উঠলো সবাই। আমি লজ্জায় লাল হয়ে উঠলাম মুহুর্তেই! ব্যাপারটা যেন
ভ/য়ং/ক/র লাগছে আমার কাছে। এখানে আমার বিয়ের তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে আর আমি কিনা লজ্জা-শরম খুইয়ে হা করে বড়দের কথা গিলছি!

রাহিয়ানের বন্ধুরা উনাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছেন! আর এদিকে রাই,নিতু আপু,রিম্মি আপু,বউমনি তারাও কম যায়না! একেক জনে বালতি ভরে ভরে লজ্জা ছুড়ছে আমার দিকে! আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না! লজ্জায় লাল হয়ে ওঠা মুখ-খানা লুকাতেই দৌড়ে পালালাম সবার থেকে! কিন্তু পালিয়েও কি শান্তি আছে? ঠিকই পেছন পেছন সব দৌড়ে এলো।

কাল হবে বিয়ের শপিং! সেই নিয়েই লিস্ট নিয়ে বসেছে বউমনি আর রিম্মি আপু। সাথে যোগ হয়েছে নিতু আপুও। বিয়ের ক’টা দিন চাচা-চাচি,নিতু আপু আর হিমেল ভাই সবাই এ বাড়তেই থাকবে। রানিকেও আনার কথা বলা হলে চাচি জানালো ওর মায়ের শরীরটা ভীষণ খারাপ! তাই ও গ্রামে গিয়েছে। বিয়ের দিন যদি সুযোগ হয় তবে ঠিকই আসবে। রাইকে আন্টির থেকে পারমিশন করিয়ে একদম সাতদিনের জন্য রেখে দিয়েছি। আমার সব কিছুতে মেয়েটা না থাকলে যেন শান্তিই পাই না।

ফাহিম ভাইয়া গাল ফুলিয়ে আছে! তারও ইচ্ছে তার প্রান প্রিয় বোনের বিয়েতে যেন তার প্রান প্রিয় সখী শুরু থেকে শেষ অব্দিই থাকে! কিন্তু হিয়া আপুর রা-গী বাবা মেয়েকে বাইরে রাত কাটানোর জন্য পারমিশন দিতে অমত করছেন। বিয়ে হোক আর যাই হোক সে কিছুতেই রাজি হবেননা বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। সেই দুঃখেই ভাইটা আমার কাতর। কি বলে স্বান্তনা দেয়া যায় ভেবে কল ঠুকে দিলাম হিয়া আপুর বাবার কাছে। তাও আবার যে সে কল নয়, একদম ভিডিও কল। আমি বিয়ের কনে হয়ে তার কাছে অনুরোধ করাতে মানুষ টা হঠাৎই পানির মতো গলে গেলো। মিষ্টি করে হেসে আমায় স্নেহ ভরা কন্ঠে বারবার ডেকে বলল,

—-” আমার মেয়েটাকে তোমার ভরসায় পাঠাচ্ছি মা। আমার আর কোনো চিন্তা নেই! বিয়ের পর নতুন জামাই-বউ অবশ্যই আমাদের বাড়িতে আসবে কিন্তু।”

আমিও বিগলিত হেসে তাকে আশ্বাস দিয়ে বললাম,

—-” হিয়া আপুর এ বাড়িতে কোনো সমস্যা হবেনা আঙ্কেল। আপনি একদম নিশ্চিন্তে থাকবেন। আর আমরা অবশ্যই আপনাদের বাড়িতে আসব। খুব শীঘ্রই আসব। সব কিছু জোগাড়যন্তর করে রাখবেন কিন্তু।”

লোকটা হাসতে হাসতে কল কাটল। হিয়া আসছে শুনে ফাহিম ভাইয়ার মেজাজও এবার বেশ ফুরফুরে। এই মানুষটাই আমাদের সবার থেকে একটু বিপরীত ধর্মী। সারাক্ষণ হাসি-মজার মধ্যমণি হিসেবে কিন্তু উনাকেই পাওয়া যাব। আর তারই যদি কোনো কারনে মন খারাপ থাকে তা কি দেখতে ভালো লাগে?

হঠাৎ বিয়ের তারিখ পড়ায় বেশিরভাগ মেহমানই যেন খাদে পড়লেন। এই চারদিনে কি করে কি হবে বাড়ির লোকের থেকে তাদেরই যেন মাথা ব্যাথা বেশি। অনেকে তাড়াহুড়োর উপর এসে হাজির হয়েছে! আর বাকিরা আজকাল এসে যাবেন বলে জানালেন! অল্পবিস্তর লোকজনেই বাড়ির এক কোন যেন কোলাহলপূর্ন। বিয়ের আমেজে রঙ লেগেছে সবার মনে। কমবেশি মানুষের নজর এড়িয়ে হঠাৎ আমায় একলা ডেকে পাঠালেন মহাশয়! ছাদে মানুষের আনাগোনা এখনও তেমন নেই বলেই আপাতত ছাদের যাওয়ার বার্তা নিয়ে পাঠালেন ফাহিম ভাইয়ার হাত থেকে। ফাহিম ভাইয়া চোখ জোড়া সরু করে হাতে ছোট্ট চিরকুট খানা গুঁজে দিয়ে বলল,

—-” শোন বুড়ি, আজ তুই আমার একটা ফেভার করলি বলে আমিও তোর একটা ফেভার করে দিলাম! তোর হবু বরের চিরকুট! কেউ দেখার আগে টুপ করে পড়ে নে তো!”

আমি লজ্জায় মাথা নুইয়েই চিরকুটটাতে চোখ রাখতে দেখা মিলল তার গোটাগোটা অক্ষরের লেখা!

—-” পাঁচমিনিটের জন্য ছাদে এসো!”

লেখাটা পড়তেই মনের মধ্যে অদ্ভুত সব অনুভূতি হতে লাগল। ওলট পালট অনুভূতিগুলো কে সামলে যাবো কি যাবো না ভেবে ভেবেই পার করে ফেললাম আধাঘন্টা! অবশেষে যদিও বা গেলাম তবে একলা যাইনি! সঙ্গে করে পুরো একখানা গ্যাং নিয়ে হাজির হয়েছি। উনি আমার সাথে এতো মানুষজন দেখে ভড়কে গেলেন বুঝি! বোবা চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বলে উঠলেন,

—-” কথাগুলো দেখছি বিয়েটা সেরেই বলতে হবে। অন্যথা এই সিকিউরিটি গার্ড আমার ইজ্জতের বারোটা বাজাবে।”

কথাগুলো বাকিরা স্পষ্ট না শুনলেও আমি বেশ স্পষ্টই শুনলাম! বেচারা আর কিছু বলতে না পেরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মাথা চুলকে নীচে নেমে গেলেন। আমার সাথে আঠার মতো লেগে থাকা পাবলিক গন উনার যাওয়া দেখে মুখ টিপে হাসতে হাসতে শ-খানিক লজ্জার বান ছুড়ল আমার দিকে।

সারারাত ধরে মানুষগুলো হুতুমপেঁচার মতো জেগে থেকে ক্যাটারিং থেকে শুরু করে বিয়ের রান্না-বান্নার কি কি আইটেম হবে তা অব্দি ঠিক করে ফেললেন। আমার ভোরবেলা ঘুম ভাঙল ফাহিম ভাই আর হিমেল ভাইয়ের চেঁচামেচির আওয়াজে! ধড়ফড়িয়ে উঠে বিছানার চাদর আকড়ে বসে রইলাম কয়েক সেকেন্ড। অতঃপর আবারও চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসতেই লাফিয়ে নেমে দৌড়ে এলাম ব্যালকনিতে। চেঁচামেচির আওয়াজ পেছনের গার্ডেন থেকেই আসছে! ব্যলকনি ধরে দাঁড়াতেই বোধগম্য হলো তারা রান্নার লোকেদের কাজ বোঝাচ্ছে! খুব সম্ভব তাদের টিম লিডার কানে কালা! ফাহিম ভাইয়া আর জিয়ান ভাইয়া দাঁত কেলাতে কেলাতে চেঁচাচ্ছে তার সাথে! বারবার হিমেল ভাইও তাল মেলাচ্ছে উৎসাহিত কন্ঠে। আরফান ভাইয়া আছেন তাদের পাশেই। কান্ড দেখছেন বদের হাড্ডি গুলোর। আমি ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে পাশের ব্যলকনিতে তাকাতেই দেখি জনাবেরও একই দশা! গোছালো মানুষটা ঘুমের রেশ কাটানোর বৃথা চেষ্টায় অগোছালো ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। চোখে যে একরাজ্য ঘুম নিয়ে দাঁড়িয়ে তা তার হাই তোলার ধরনেই বেশ বুঝতে পারলাম।

চোখে ঘুম থাকলেও মনের মাঝে চেপে আছে একরাশ বি-র-ক্তি! খুবই স্বাভাবিক, এই ভোর বেলায় কেউ কানের পাশে থেকে এভাবে চেঁচামেচি করলে রাগে দুঃখে পঁচা পানিতে সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করে। তবে ইচ্ছেটা নিতান্তই তার করলেও আমার করল না। মেয়েদের বিয়ের দিন ঠিক হতেই নাকি তারা বিয়ে হওয়ার আগ অব্দি আর দু-চোখের পাতা এক করতে পারেনা! তারা যে আগাম ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় চিন্তায় মশগুল তা কিন্তু নয়! কেবলই অহেতুক ব্যাপার। এর বিশেষ ব্যাখা কার কাছে পাবো জানিনা। জানার আগ্রহও করলাম না! কেবল জেনে রাখলাম এটাই নিয়ম। বিয়ের আগ অব্দি মেয়েরা আর ঘুমোতে পারেনা মুলত এটাই নিয়ম। আমিও সেই নিয়মই পালন করে চলেছি। রাহিয়ান করছেন কি না জানিনা! তবে এই মুহুর্তে মুখের এমন দশা দেখে বোঝা যাচ্ছে রাতে এক ফোঁটাও ঘুম হয়নি তার।

—-” সুপ্রতাম ম্যাডাম।”

উনার ঘুমঘুম কন্ঠে ভাবনার জগতকে ছুটি দিয়ে বেরিয়ে এলাম আমি। উনার স্নিগ্ধ শীতল চাহনি আমাতেই আঁটকে আছে। ফাহিম ভাইয়াদের ছেড়ে কখন আমাতে আঁটকালেন খেয়াল করা হলো না। আমি ঠোঁটের কোনে এক চিলতে মিষ্টি হাসি জুড়লাম। চোখের ভারি পল্লব ফেলে নরম কন্ঠে বললাম,

—-” সুপ্রভাত।”

—-” রাতে ঘুম কেমন হলো?”

সত্যি বলা বাহুল্য হলেও মিথ্যে বলেই চালালাম। চোখ ঝাপটে মাথা নেড়ে বললাম,

—-” বিন্দাস ঘুম হয়েছে। এরকম বিন্দাস ঘুম বোধহয় কয়েক বছরেও ঘুমোইনি!”

সন্দিহান চোখে তাকিয়ে ছোট্ট করে হাসলেন উনি। আমার ন্যায় মাথা নেড়ে বললেন,

—-” আমারও তাই। এমন ঘুম বোধহয় বারো বছরেও হয়নি!”

আমি উৎফুল্ল স্বরে বললাম,

—-” সত্যি?”

—-” হুম একদম সত্যি। দেখো, এমন ঘুম হয়েছে যে এদের সামান্য চেঁচামেচি শুনে বাড়িতে ডাকাত পড়ল কিনা সেই ভয়ে তেড়েফুঁড়ে আসলাম!”

আমি ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম,

—-” আমি ভেবেছি মা/রা/মা/রি লেগেছে!”

আমার কথায় হেসে ফেললেন উনিও। মুহুর্তেই আর জবাব দিলেন না আমায়। ফাহিম ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে ডেকে উঠে বললেন,

—-” কি রে ব্যাটা বিয়ের আগেই কি শান্তির ঘুমের ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে দেওয়ার তালে আছিস নাকি?”

রাহিয়ানের গলা পেয়ে চমকে উঠে তাকাল সবাই। আরফান ভাই আর ফাহিম ভাই জিহ্বায় কামড় বসালেন তৎক্ষনাৎ। জিয়ান ভাই আর হিমেল ভাই মুখ চাওয়াচাওয়িতে ব্যস্ত। আরফান ভাই রাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিলেই উনার নজরে আমিও এলাম। বেচারার মুখখানা তৎক্ষনাৎ কালো হয়ে গেলো। হয়ত তাদের ভাবনাতেও ছিলো না তাদের গলা পেয়ে আমরা এভাবে উঠে পড়তে পারি!

জিয়ান ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে হেসে বললেন,

—-” ভাই, কয়ডা দিন একটু কষ্ট! তারপর সুখই সুখ!”

রাহিয়ান চোখ জোড়া সরু করে তাকালো। পাশ থেকে জিয়ান ভাইয়াকে ঠেলে আরফান ভাই বলে উঠলেন,

—-” সরি রে দোস্ত! আমাদের কথা যে তোদের রুম ভেদ করবে বুঝতে পারিনি! সরি নিধি!”

আমি না সূচক মাথা নেড়ে ছোট্ট করে হাসলাম। অর্থাৎ, চিন্তা নেই! আমার কোনো সমস্যা হয়নি!

রাহিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” বাট আমার অনেক সমস্যা হয়েছে! প্লিজ আমি ঘুমোতে চাই!”

উনার বাচ্চাসুলভ কন্ঠে আমি আরফান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম। আরফান ভাইও হাসতে লাগলেন রাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে। অতঃপর ভরসা চোখে তাকিয়ে বললেন,

—-” যা দোস্ত নিশ্চিন্তে ঘুমো। তোকে আর কেউ ডিস্টার্ব করবেনা!”

উনি হাসলেন মাথা চুলকে। আরফান ভাই তাদের কাজে মনোযোগ দিতেই উনি গলারস্বর টা খানিকটা নীচু করে আমার উদ্দেশ্যে বললেন,

—-” কাছে বউ থাকলে ড্যাম সিওর আমাকে কেউ টেনে হিঁচড়েও উঠাতে পারত না! কিন্তু কি করার? মাঝেমধ্যে বউয়ের টেনশনেও উঠে পড়তে হয়, বউটা আবার হারিয়ে গেলো কি না!”

কথাটা বলেই চোখ টিপলেন উনি। আমি কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে বললাম,

—-” মুখে অবশ্যই লাগাম টানতে হবে। এসব কথা কেউ বলে?”

উনি হেসে ফেললেন। মাথা চুলকে চমৎকার হেসে বললেন,

—-” বউয়ের সাথে মশকরাতেও কিন্তু ঝুড়িঝুড়ি সওয়াব আছে বিবিজান।”

৬৫.

কাঠফাটা রোদের মধ্যে একেক জনে হাতে কম করে হলেও দশটা দশটা শপিংব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাসায় ফেরার তাড়া হচ্ছে। রোদকে মাড়িয়েই আস্তে ধীরে গাড়িতে উঠতে লাগল সবাই। আমি আগেই উঠে বসেছি জনাবের আদেশে। আদেশ কেবল উনার একার নয়, বাড়িসুদ্ধ সবার! বিয়ের কনে এভাবে রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ভালো দেখায় না।

বাকি গাড়ি গুলো আসতে আসতে ততক্ষণে আমাদের গাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হোক বলে বড়খালু এবং বড়খালামনির হুকুম। হুকুম পালনে রাহিয়ানও উঠে এলেন গাড়িতে। সেই সাথে উঠল ফাহিম ভাইয়া, হিয়া আপু,নিতু আপু আর রাফিন ভাইয়া। সকাল সকাল শপিংএর জন্য বের হয়ে বেশ তাড়াতাড়িই শেষ করা গেলো এই ঝামেলা। সময় কম হলেও কেউ বলতে পারবেনা এতোগুলো ড্রেস একত্রে কিনে কেউ ঠকেছে। সবার মুখেই বিজয়ের হাসি। বিশেষ করে খালামনিদের।

মায়েরা বরাবরই এই শপিংএর ক্ষেত্রে বেশ কড়া। দোকানী যদি বলে,’আপা এই ড্রেসটা হাজার দুয়েকের নীচে হবেনা।’ দোকানীর রায় শুনে তারা বেশ স্বাভাবিক রিয়াকশন দেয় বটে কিন্তু বিপরীতে ঠিকই একখানা অস্বাভাবিক কথা বলে বসে। চুপচাপ শান্ত ভঙ্গিতে বলে বসবে, ‘চারশ দিলে দেন না দিলে উঠলাম!’ দোকানী অবশ্য থতমত খেয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন বটে। কিন্তু শেষ অব্দি মায়েদের ঠিক করা দামেই তারা ড্রেস প্যাক করে দিয়ে হাসি মুখে বলবেন, ‘আচ্ছা আপা আবার আসবেন কিন্তু।’ রিম্মি আপুর থেকেই শোনা মেঝ খালামনি নাকি বরাবর তাকে নিয়ে শপিংএ এসে এই কাজই করেন।

আজ যদিও টাকা খরচাতে কারোর কড়াকড়ি ছিলো না তবুও তাদের দাম মোতাবেকই দোকানীরা সব কিছু দিয়ে দিলেন। আমি তো কেবল দেখলাম আর অবাক হলাম। এতোসব কিছুর মাঝেও অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনার সাক্ষী হলাম। আরফান ভাই রাইকে নিয়ে বেশ আগ্রহী। সবার নজর এড়িয়েই সে রাইয়ের বেশ ভালোই যত্নআত্তি করলেন দেখা গেলো। দেখতে বেশ লাগছিলো। আমার মনটা যেন না চাইতেও বলে উঠলো দু’জনকে বেশ মানাবে।

—-” তোমার এখনও ক্ষিদে পায়নি?”

ড্রাইভিং সিটে বসে দু’হাতে স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে কথাটা বলে উঠলেন রাহিয়ান। আমার ভাবনার তাল ঘেঁটে গেলো। দৃষ্টি সামনের অদূর থেকে তুলে এনে উনার উপর আঁটকানোর প্রচেষ্টা করলাম। যতক্ষণে সফল হলাম ততক্ষণে পেট চেপে কাতর কন্ঠে জবাব দিল ফাহিম ভাইয়া,

—-” ভাইয়া খুব জোর ক্ষিদে পেয়েছে রে! আশেপাশে একটা রেস্টুরেন্ট দেখে দাঁড় করা না গাড়িটা?”

কথাটা বলার প্রায় সাথে সাথেই তার পেট বরাবর গুঁতো বসালো হিয়া আপু। আর সামনে থেকে উনার ক্ষে-পা গলায় উত্তর গেলো,

—-” খেয়ে খেয়ে নিজের হাল টা কি করেছিস দেখেছিস একবারও? এই দশমিনিট আগেও দুই প্যাকেট চিপস্ আর দুই লিটারের কোকের বোতলটা তুই একাই শেষ করলি! আবার এক্ষনি বলছিস খুব জোর ক্ষিদে পেয়েছে? এতো খাবার যে খাস সব কোন রাস্তা ধরে হজম হয় বলতো?”

রাফিন ভাইয়া হেসে উঠলেন বেশ শব্দ করে। তাল দিলেন নিতু আপু আর হিয়া আপুও। ফাহিম ভাই আহত নয়নে তাকালো হিয়া আপুর দিকে।

—-” তো কি ক্ষিদে পেলে বলবো না?”

হিয়া আপু হাসতে হাসতে না সূচক মাথা নাড়ল! আমি এদের কান্ড দেখে ফাহিম ভাইয়ার সাইড নিয়ে বললাম,

—-” ঠিকই তো। ভাইয়ার ক্ষিদে পেলে বলবেনা? এমন করে কেন বলছেন ভাইয়াকে?”

আমার কথায় ফাহিম ভাইয়া বুক ভরে শ্বাস নিলো। রাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিলেই রাহিয়ান বলে উঠলেন,

—-” ওর এতো ক্ষিদে পাওয়া তো স্বাভাবিক নয় নিধি। বেয়াদবটা তো দিনদিন অস্বাভাবিকে পরিণত হচ্ছে।”

রাহিয়ানের কথাটায় আরও একদফা হাসির রোল পড়ে গেলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম উনার দিকে। ফাহিম ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়ে ভাইয়াকে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলে উনাকে বললাম,

—-” আপনি মোটেই আমার ভাইকে অস্বাভাবিক বলতে পারেন না বলে দিলাম। ভাইয়া কিন্তু মোটেই অস্বাভাবিক নয় এবং অত বেশিও খায়না। আরে বাবা সামান্য একটু ফাস্টফুডে কি পেট ভরে নাকি? ভারি কিছু খেলেই না পেট ভরবে! আপনিও না পারেন বটে।”

আমার কথার তালে তাল মিলিয়ে ফাহিম ভাইয়া কথা বলতে নিলেই আবারও বাঁধ সাধলেন রাহিয়ান। আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,

—-” তুমি কাল রাত থেকে না খেয়ে। ভোরের দিকে নিতু তোমায় জোর করে একটু খাওয়ালো বলে খেলে। তাও কি খেলে একটা রুটি আর এতোটুকু গাজরের ভাজি। তারপর থেকে কিন্তু এই দুপুর তিনটে বাজে এখনও অব্দি খাওয়ার নাম নাওনি তুমি। আমি ফাহিম কে অস্বাভাবিক বলছি কিন্তু আমি তো ভুল। উচিৎ তো তোমাকে অস্বাভাবিক বলা। না খেতে খেতে দিন দিন অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছ তুমি। আচরনও কিছু অস্বাভাবিকের থেকে কম নয়!”

আমি জ্বলে উঠলাম সঙ্গে সঙ্গে। চোখমুখ কুঁচকে নিয়ে উনার বিরূদ্ধে কিছু বলতে নিলেই ফাহিম ভাইয়া আমার হয়েই প্রতিবাদ করতে লাগল। লোকটা রীতিমতো আমাদের দুই ভাইবোনকে অস্বাভাবিক বলছে। অস্বাভাবিক মিনস প্রতিবন্ধী! দিস ইজ টু মাচ। উনাকে বোঝাতে হবে আমরা মোটেই অস্বাভাবিক নই! বরং উনি উনার এমন অদ্ভুত আচরণে প্রমান করে দিচ্ছেন যে উনিই অস্বাভাবিক। কিন্তু এমন কথা বলার সাহস যে আমি বা আমার ভাই কেউই রাখিনা। তাই ফাহিম ভাইয়ের প্রতিবাদ করা দেখে আমি চুপ করে রইলাম। কি বলব? কিছুই বলার নেই।

#চলবে___________________