ফিলোফোবিয়া পর্ব-২৪+২৫

0
481

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

২৪.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

গ্রাম জুড়ে আজকাল সেই রাতের চর্চা। আয়েশা বেগম আর প্রিয়কে একঘরে করে দিয়েছে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতী দেখে কলেজ থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়েছেন আয়শা বেগম। এদিকে স্কুলের সবাই বেশ কায়দা করে এড়িয়ে চলছে প্রিয়কে। জুবাইদা তানহা আজকাল দূরে দূরে থাকে। কেন থাকে? তাদের বাড়ি থেকেও কি প্রিয়’র সাথে মিশতে নিষেধ করেছে! হয়তো।

আজ পরিক্ষা শেষ। বাড়ি ফিরে ঘরে ঢুকতেই হতভম্ব প্রিয়। খালা তার সব কাপড় গোছগাছ করতে ব্যস্ত। দরজার কাছে দাঁড়ালো প্রিয়। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ খালা! কোথাও কি যাচ্ছি আমরা?’
ব্যাগ গোছাতে গোছাতে ব্যস্ত স্বরে উত্তর দিলো আয়েশা,
‘ আমরা না। শুধু তুই যাচ্ছিস।’
চমকাল প্রিয়। বিহ্বল কন্ঠে বলল,
‘ আমি? কিন্তু কোথায়?’
‘ ঢাকায়। বিকালে তোর বাবা আসবে নিতে।’
এই পরিস্থিতীতে খালাকে একা ফেলে ঢাকায় যেতে একদম অনিচ্ছুক প্রিয়। অনিহা প্রকাশ করল। বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘ আমার কোচিং প্রাইভেট সব কামাই যাবে খালা। সামনে পরিক্ষা…
কথা কেটে বলল আয়েশা,
‘ তা নিয়ে ভাবতে হবেনা। তোর কোচিং প্রাইভেটের স্যারদের সাথে কথা হয়েছে। টেস্ট পরিক্ষা শেষ।বাড়িতে থেকে বারবার সিলেবাস রিভিশন দিলেই চলবে এখন।’
‘ আমি চলে গেলে তুমি একা কি করে থাকবে খালা?’
‘ তুই আসার আগে আমি একাই থেকেছি।’
‘ সেই সময়কার কথা আলাদা। এই পরিস্থিতীতে এখানে একা কি করে সামলাবে তুমি? তুমিও আমাদের সাথে ঢাকায় চলো। কিছুদিন সেখানেই থাকবে।’
প্রিয়’র চোখমুখে খালাকে নিয়ে গভীর চিন্তা, ভ*য়। এসব থেকে কি বেরিয়ে আসতে পারবে খালা? দুর্বল হয়ে পড়ে প্রিয়’র মুখপানে তাকিয়ে মলিন হাসলো আয়শা। বলল,
‘ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। আমার সাথে প্যাঁচিয়ে তোর ভবিষ্যৎ নষ্ট করার কোন মানে হয়না প্রিয়। এমনিতে লোকের মুখে আমাদের বাড়ি এখন ব্যা* বাড়ি নামে পরিচীত।’
শেষ কথাটা বলার সময় আয়েশা বেগমের গলা কেঁপে উঠল। সারাজীবন সৎসাহস নিয়ে বেঁচে। এত মানসম্মান কুড়িয়ে শেষে কিনা ব্যা* নামক নিকৃ*ষ্ট উপাধি পেল?

পুরো ঘটনায় বেশ দারুণ ফয়দা হয়েছে ছবি বেগমের। এতদিন যে কথাগুলো ইনিয়েবিনিয়ে বলেছেন। আজকাল বেশ বড় গলায় ভাইয়ের সামনে তুলে ধরছেন সেসব। কথায় কথায় ফ্যাচফ্যাচ কুমিরের কান্না করছে। মেয়ে লুবনার দোহাই দেখিয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছে। বারবার বলছে, এমন চরিত্রহীন বাবার মেয়েকে কে বিয়ে করবে?
আজ সকালে খাবার টেবিলে বেশ কায়দা করে চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে লুবনাকে শতাব্দের বউ করে আনার আবদার করলেন। ‘হ্যাঁ ‘ ‘না’ কোন কিছুই বললেন না শাহরিয়ার সাহেব। তবে চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে বোনের কথায় মন গলেছে।
অভিলাষা বেগম ক্ষিপ্ত গতিতে লাগেজ গোছাচ্ছে। স্ত্রীর অহেতুক রাগের উপর বিরক্ত চেয়ারম্যান সাহেব। কন্ঠে বিরক্তি ঠেলে বললেন,
‘ শুধু শুধু ঝামেলা করার কোন মানে দেখছিনা অভিলাষা।আমি হ্যাঁ না কোনকিছু কি বলেছি?’
আলমারি থেকে কাপড় বের করে ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে রাগী কন্ঠে উত্তর দিলেন অভিলাষা,
‘ জবাবের বাকি রেখেছ কি? তোমার বোন দৌড়াদৌড়ি করে মেয়ের বিয়ের কেনাকাটায় করছে। তোমার অনুমতি না পেয়েই কি করছে!’
‘ সকালে সেখানে তুমিও ছিলে। যা কথা হয়েছে তোমার সামনেই হয়েছে।’
‘ তোমার মৌনতাই যে সম্মতির লক্ষণ তা তোমার বোন বেশ ভালো করেই জানে।’
‘ যদি সম্মতি দিয়েও থাকি তাতে ক্ষতি কি? তোমার ভাই যা করেছে, এতকিছুর পর আমার কি বলার থাকবে আর? লুবনার ভবিষ্যতের কি হবে?’
‘ আর প্রিয়? ওর কি হবে ভেবেছ একবার! বোন ভাগ্নীর প্রেমে এত অন্ধ হইয়ো না শাহরিয়ার। এখনকার যুগে এসব কথার কেউ ধা*র ধারেনা। অনেক বছর আগে যেই অঘটন ঘটেছে তা পূর্নবৃত্তি করিও না। এবার ধ্বং*স হবে সব।’
শাহরিয়ার স্ত্রী’র দিক শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন। গম্ভীর কন্ঠে আওড়ালেন,
‘ ওই মেয়েকে নিয়ে তোমার এত মায়া, চিন্তার কারণ আমি বুঝি। রক্তের টান। তাই না?’
‘ প্রিয়কে দেখে তোমার মায়া হয়না? অথচ মেয়েটার জন্ম কিন্তু চোখের সামনে হয়েছে তোমার।’
শাহরিয়ার সাহেব ছোট নিশ্বাস ফেললেন। সত্যি বলতে মেয়েটার জন্য বড্ড মায়া হয়। কিন্তু বোন ভাগ্নীর জীবন গোছানো বেশি জরুরী আপাতত। দুনিয়ার প্রত্যেক জীবই স্বার্থপর। নিজ স্বার্থটা সবার আগে।
অভিলাষা বেশ একটু ক্ষান্ত হলো। ছোট নিশ্বাস ফেলে বলল,
‘ এবার আগের ঘটনার পূর্নবৃত্তি হবেনা। শোয়েব ভাই দুর্বল ছিল, শতাব্দ না। তুমি এখনো তোমার ছেলেকে চিনতে পারোনি। প্রিয়’কে পাওয়ার জন্য যা কিছু করতে হয় সব করবে। যাওয়ার সময় আমাকে স্পষ্ট বলে গেছে, ওর প্রিয়’কে চাই মানে প্রিয়’কেই লাগবে। এখন হোক বা পরে।’
স্ত্রীর কথায় আ*তঙ্কিত শাহরিয়ার সাহেব। শতাব্দের রাগ জেদ সম্পর্কে বেশ ভালো মত অবগত সে।
অভিলাষা বেগম বেশ স্বাভাবিক শান্ত স্বরে বললেন,
‘ তোমাদের বাপ ছেলের ঝামেলায় আমি নেই। স্বামী সন্তান দুইজনই আমার। কারো একজনের পক্ষ টানতে পারবো না আমি। আর মূলকথা, তোমার ভাগ্নি লুবনাকে পছন্দ না আমার। ভীষণ রকম অপছন্দ। প্রিয়’র সাথে তুলনা করলে দশে শূন্য দিবো। তবুও যদি শতাব্দকে রাজি করিয়ে বিয়ে করাতে পারো তাতেও আপত্তি নেই কোন। আপাতত এইসব ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চাই। শান্তি চাই আমার!’
‘ এত তেজ! কোথায় যাবে? বাপের বাড়িতে। যেই বাড়িটা আমার দয়ায় এই পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে আজ। ভুলে যেও না। তোমার ভাই যা কিছু করতে পেরেছে আমার জন্যই পেরেছে।’
অভিলাষা আহত হলো। শাহরিয়ার এভাবে মুখের উপর তাকে খোটা দিতে পারল? এমনি এমনি তো সব হয়নি। শাহরিয়ার পুঁজি দিয়েছিল শুধু। এরপর ব্যবসা বাণিজ্য অর্থ সম্পদ যা হয়েছে শোয়েবই করেছে। টলমল চোখে তাকিয়ে আছে অভিলাষা।
শাহরিয়ার আভিলাষাকে এভাবে বলতে চায়নি। রাগের মাথায় মুখ ফুসকে বেরিয়ে গেছে। কিছু বলবে তার আগেই অভিলাষা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ ভুলে যেওনা প্রত্যেক সফল পুরুষের পেছনে একজন নারীর হাত। অতীত ঘেঁটে দেখো তোমার খারাপ সময় পাশে শুধু আমিই ছিলাম।’
বলেই লাগেজ উঠিয়ে হুড়হুড় করে বেরিয়ে গেল অভিলাষা বেগম। পেছন থেকে ডাকলো শাহরিয়ার সাহেব।
‘ গাড়ি নিয়ে যাও ড্রাইভার পৌঁছে দিবে।’
অভিলাষা বেগম সামনে ফিরেই শক্তপোক্ত কন্ঠে বললেন,
‘ মায়ের পেট থেকে গাড়ি নিয়ে বের হইনি। গাড়ি ছাড়া আর আটদশটা সাধারণ মানুষের মত চলতে পারি।’
স্ত্রী’র এমন তেজী উত্তরে কি বলবে ভেবে পেলেন না শাহরিয়ার সাহেব। ফ্যালফ্যাল করে স্ত্রীর যাওয়ার দিক তাকিয়ে থাকলেন। পুরুষ মানুষ বাহিরে যতবড় বাঘই হোকনা কেন! স্ত্রীর সামনে নিতান্তই ভেজা বিড়াল।

ঢাকায় ফেরার পর থেকেই মনমরা প্রিয়। মন বসছেনা কোথাও। মাথায় হাবিজাবি হাজারো চিন্তা। শতাব্দের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে অনেকবার। হচ্ছেনা। কখনো বন্ধ বলছে। কখনো আবার ফোন তুলছেনা। গতরাতে জুবাইদা ফোন করেছিল চুপিচুপি। বাড়িতে শতাব্দের সাথে লুবনার বিয়ের পাকাপাকি কথা চলছে। এসব থেকে বিরক্ত হয়ে অভিলাষা বেগম বাড়ি ছেড়েছে। আগাগোড়া সবটাই প্রিয় শুনেছে। সেই থেকে অস্থিরতা ঝেঁকে ধরেছে। ছটফট করছে সারাক্ষণ! অনেক ভেবেছে সারারাত। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া পথ নেই কোন। শতাব্দকে অন্যকারো সাথে দেখতে পারবেনা কখনো।

সকালে প্রভাকে নিয়ে মা স্কুলে চলে যাওয়ার পর। মায়ের ব্যাগ থেকে কিছু খুচরা টাকা আর নিজের কাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ল প্রিয়। শতাব্দের এপার্টমেন্ট গন্তব্য। রাস্তাঘাট সামান্য মনে থাকলেও চৌরাস্তায় এসে গুলিয়ে ফেলল। কোন দিকে যাবে এখন? সিএনজি ড্রাইভার তাড়া দিচ্ছে বারবার। ঘাবড়ে গেল প্রিয়। আশেপাশে সব অজানা। এতদূর এসে বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেনা। কোনদিক যাবে বলতে না পারায় সিএনজি ড্রাইভার রাস্তায় নামিয়ে দিলো। এমন বাজে পরিস্থীতির শিকার হয়নি কখনো। চিন্তা ভয়ে আরো বেশি ঘাবড়ে গেল প্রিয়। ফুটপাতে টঙ্গের দোকান ঘেঁষে দাঁড়ালো। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে শতাব্দের নাম্বারে ফোন দিলো। কয়েকবার বেজে কেটে গেল। আবারো ফোন করল প্রিয়। এবার শতাব্দ ফোন তুলল। শতাব্দ কিছু বলবে তার পূর্বেই কান্না ভেজা কন্ঠে প্রিয় বলল,
‘ বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি। রাস্তা ভুলে গেছি। আপনার বাড়ির সামনে চৌরাস্তার মোরে দাঁড়িয়ে আছি।’
হতভম্ব শতাব্দ। যেন আকাশ থেকে পড়ল। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা সে। শান্ত কন্ঠে আওড়াল,
‘ সেখানেই দাঁড়াও। আমি আসছি।’
মিনিট দশেক পর একটা বাইক নিয়ে ছুটে এলো শতাব্দ। গায়ে সাদা এপ্রন। তবে কি ক্লাসে ছিল শতাব্দ?
বাইক থেকে নেমে রাগী ক্রো*ধান্বিত দৃষ্টিতে প্রিয়’র দিক তাকালো। চোখ দিয়ে ঝলসে ফেলবে যেন। কাছে এসে নিচে থেকে ব্যাগ তুলল। গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ বাইকে উঠো দ্রুত।’
বাধ্য মেয়ের মত শতাব্দের বাইকের পেছনে উঠল প্রিয়। শতাব্দ বাইক স্টার্ড করে প্রিয়দের বাড়ির রাস্তায় ঘোরাতেই আঁতকে উঠল প্রিয়। আওয়াজ করে বলল,
‘ বাড়ি যাবো না। আপনার বাড়িতে যাবো আমি।’
পেছন ফিরে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো শতাব্দ। চোখমুখ শক্ত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে প্রিয়। শতাব্দ শুনলো না। বাইক প্রিয়দের বাড়ির দিক ঘোরালো। স্প্রিডে টান দিতেই চেঁচিয়ে উঠল প্রিয়। বলল,
‘ আপনি কি নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবেন। নাকি আমি চলন্ত বাইক থেকে রাস্তায় ঝাপ দিবো? ভয় দেখাচ্ছিনা। আমি কিন্তু সত্যি সত্যি ঝাপ দিবো!’
আচমকা বাইক থেমে গেল। পেছন ফিরে তাকালো শতাব্দ। গম্ভীর কন্ঠে আওড়াল,
‘ কি চাও?’
‘ আপনি এখন আমাকে বিয়ে করবেন। এখন মানে এক্ষুনি!’
সোজাসাপটা জবাব প্রিয়’র।

চলবে…….

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

২৫

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)

ঢকঢক করে পুরো গ্লাস পানি শেষ করল প্রিয়। হাতপা কাঁপছে এখনো। নড়বড়ে কাঁপাকাঁপি হাতে টেবিলের উপর গ্লাসটা রেখে ছোট নিশ্বাস ফেলল। নিচের দিক তাকিয়ে এক দমে বলল,
‘ বাবা আমাদের সম্পর্কের কথা জানলে কোনদিন মেনে নিবেনা। গত কয়েকদিন যাযা হয়েছে তারপর তো এদমই না।তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি।’
মুখোমুখি সোফায় বসে আছে শতাব্দ। শান্ত গম্ভীর মুখ। নিমিষ দৃষ্টিতে গভীর ভাবে পরখ করছে প্রিয়কে। ভীত চোখমুখ। হাতপা কাঁপাকাঁপিটাও চোখ পড়ছে শতাব্দের। এতবড় পদক্ষেপ নিয়ে ভীষণ ঘাবড়ে আছে নিশ্চয়ই!
শতাব্দের কোন সারাশব্দ না পেয়ে, উত্তরের অপেক্ষায় মাথা তুলে তাকালো। লাজলজ্জার তোয়াক্কা না করে।আশান্বিত কন্ঠে বলল,
‘আমাকে বিয়ে করবেন? এখন না হলে আর কোনদিন হবেনা। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।’
শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শতাব্দ। চোখেমুখে ভাবান্তর নেই কোন। শান্ত স্বাভাবিক স্বরে বলল,
‘ আমার পক্ষে তোমাকে এখন বিয়ে করা সম্ভব না প্রিয়।’
প্রিয় যেন আকাশ থেকে পড়লো। চোখমুখ জুড়ে হতভম্ব। ভড়কে যাওয়া কন্ঠে আওড়াল,
‘ কিছুদিন আগেই তো আপনি বিয়ের কথা বলছিলেন। আজ..এখন..
‘ তোমার বয়স অল্প। আন্ডার এইট্টিন। এখন বিয়ে করা অসম্ভব।’
‘ আমি জানি, আপনি চাইলেই সব সম্ভব।’
‘ এই মুহূর্তে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।’
বলেই মুখ ফিরিয়ে জানালার দিক তাকালো শতাব্দ।
শতাব্দের আচরণে বরাবরই হতভম্ব প্রিয়। সেইরাতের ঘটনার পর প্রিয়’র সাথে একবারের জন্যও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি শতাব্দ। প্রিয় চেষ্টা করলেও শতাব্দ এড়িয়ে চলতো বেশ। আজও বাসায় আনতে রাজি হচ্ছিলো না প্রথমে। প্রিয় একপ্রকার জিদ করেই এলো। কয়েক সাপ্তাহ আগেও বিয়ের কথা বলছিল। এখন যখন প্রিয় নিজের থেকে বলছে। মুখ ফিরিয়ে নিলো। এটা কোন শতাব্দকে দেখছে প্রিয়? সেই প্রিয় চেনা মানুষটাকে এত অচেনা লাগছে কেন?
চোখ ভরে এলো প্রিয়’র। কান্নারা গলায় দলা পাকিয়ে আছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। নিজেকে সামলানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করল। ধীর আওয়াজে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমার সব সম্পর্ক পিছনে ফেলে চলে এসেছি। আপনি ফিরিয়ে দিলে আমি কোথায় যাবো?’
শতাব্দ বাহিরে তাকিয়ে এখনো। আগের মতই শান্ত গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ তোমার বাবাকে ফোন করেছি। আসছেন উনি।’
বিমূঢ় প্রিয়। কান্না আটকে রাখতে পারল না আর। ডুকরে কেঁদে ফেলল। উপরের শক্তপোক্ত খোলসটা চুপসে, নরম সরল প্রিয় বেরিয়ে এলো। ছুটে গিয়ে শতাব্দের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। শতাব্দের হাত ধরে কাঁদছে প্রিয়। অনবরত হাতপা কাঁপছে তার। কান্না ভেজা কন্ঠে আকুতি করল,
‘ কিছুদিন আগে আপনি-ই তো বিয়ের কথা বলেছিলেন। এখন কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?’
হাত মুঠোবন্দী করে চোখমুখ শক্ত করল শতাব্দ। কন্ঠে কঠিনত্ব এনে বলল,
‘ মজা করেছিলাম!’
হতভম্ব প্রিয়। নির্বোধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সত্যি কি শতাব্দ সেদিন মজা করেছিল? সেই মজার রেশ ধরেই কি প্রিয় সব ছেড়ে মূর্খের মত ছুটে চলে এলো। আসলেই কি শতাব্দ এমন সস্তা মজা করার লোক! কোনটা সত্য? সেইদিনের সেই আকুল আবদার। নাকি আজকের এই রুক্ষ হয়ে মুখ ফেরানো। মাথা কাজ করছেনা প্রিয়’র। হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। বলল,
‘কেন এমন কঠিন হচ্ছেন! কি হয়েছে আপনার। আমি কি করেছি। কেন এভাবে শাস্তি দিচ্ছিলেন। সেই রাতের পর থেকে না কথা বলছেন। না যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। বরাবরই এড়িয়ে চলছেন। বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি। মিথ্যা বলছে লোকে। আমি খালা কেউই কোনরকম খারাপ কাজ করিনি। শোয়েব আঙ্কেল নিজেই এসেছিলেন। আমরা… ব্যা* না।’
ক্রো*ধান্বিত শতাব্দ ভারী ভারী নিশ্বাস ফেলছে। চোখেমুখে ভয়*ঙ্কর রাগ। চোখ বুজে রাগ দমানোর চেষ্টা করছে যথাসাধ্য।
শতাব্দের কোন সারাশব্দ না পেয়ে প্রিয়’র প্রচন্ড রাগ হলো। সবকিছু ছেড়ে ছুটে এলো শতাব্দের কাছে আর এখন শতাব্দ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? কেন এমন করছে। লুবনাকে বিয়ে করবে বলে।বুক চিড়ে হাউমাউ চিৎকার বেরিয়ে আসতে চাইছে। প্রিয় দমানোর চেষ্টা করল পারলো না। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। মাথা আউলে গেল। ধপ করে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘ এখন আর আমাকে ভালো লাগেনা আপনার? মন ভরে গেছে। পুরাতন হয়ে গেছি আমি। নতুন কাউকে চাই? কাকে চাই লুবনাকে চাই। আপনিও আপনার মামার মত। একজনকে দিয়ে মন ভরে গেলে নতুন কাউকে চাই। আমি..
আর কিছু বলবে তার আগেই প্রিয়’র গাল চেপে ধরল শতাব্দ। র*ক্তিম টলমল চোখ। প্রিয়’র চোখে চোখ রেখে। কঠিন গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ তোমার সাথে কি করেছি? বেডে নিয়ে গেছি?’
আজ প্রিয়’র চোখে ডরভয় নেই। শতাব্দের মতই চোখে চোখ রেখে।নির্ভীক কন্ঠে উত্তর দিলো,
‘ বেডে নিতে পারেননি বলে কি আফসোস হচ্ছে! কি ভাবেন আমাকে ঠকিয়ে লুবনাকে বিয়ে করে ফেলবেন। কেউ কিছু জানবে না? মুখে প্রকাশ না করলেও। ইমান্দিপুরের সবাই জানে আপনার সাথে প্রেমে কথা।’
শতাব্দের রাগ হলো প্রচন্ড। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
‘ লুবনাকে বিয়ে করছি তোমাকে কে বলল?’
প্রিয় জুবাইদার নাম বলতে গিয়ে আটকে গেল। জুবাইদা বারবার সতর্ক করে দিয়েছে। তার নাম যেন শতাব্দকে না বলে। অশ্রু স্নিগ্ধ চোখ জোড়া বুজে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল। কান্না আটকানোর যথাসম্ভব চেষ্টা চালালো। হলো না। বারবার ভিজে আসছে চোখ। দুহাতে মুখ চেপে ডুকরে কেঁদে ফেলল। ধপ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। শতাব্দের সামনে আর শক্তপোক্ত খোলস ধরে থাকতে পারছেনা সে। ভেতরের সহজ সরল ছোট্ট প্রিয় বেরিয়ে এলো। বাচ্চাদের মত কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘ ভালোবাসি শতাব্দ। আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিবেন না। আমি বাড়ি যাবো না। প্লিজ ফিরিয়ে দিবেন না।’
হাউমাউ করে কাঁদছে প্রিয়। শতাব্দকে অন্য কারো সাথে দেখে সহ্য করতে পারবেনা কখনো। প্রথম প্রে্মের বিচ্ছিরি যন্ত্রণা। প্রিয়’র কৈশোর মন সেই ভার সইতে পারছেনা। কষ্ট হচ্ছে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার।
শক্ত পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দ। চোখমুখ অস্বাভাবিক শক্ত কঠিন।
কলিং বেলের শব্দে কেঁপে উঠল প্রিয়। মাথা তুলে অসহায় দৃষ্টিতে শতাব্দের দিক চাইলো। বিড়বিড় করে বলল,
‘ প্লিজ.. ফিরিয়ে দিবেন না।’
শুনলো না শতাব্দ। দরজা খুলে দিলো। বাহিরে জাফর সাহেব দাঁড়ানো। বাবাকে দেখে প্রচন্ড ঘাবড়ে গেল প্রিয়। লজ্জা ভয়ে মাথা নুয়ে নিলো। বাবার রাগ সম্পর্কে বেশ ভালো মত অবগত। বড় আপার সময় দেখেছিল। ভয়ে থরথর কাঁপছে প্রিয়।
জাফর সাহেব ভেতরে এলেন। প্রিয়’র ব্যাগ হাতে নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ বাড়ি চল প্রিয়।’
জাফর সাহেব যথেষ্ট রাগী মানুষ। বাবার অতি স্বাভাবিক শান্ত কন্ঠে বিমূঢ় প্রিয়। বেশ স্বাভাবিক চোখমুখ তার। যেন আগে থেকেই তিনি জানেন সব।
‘ আব্বা..
প্রিয় কিছু বলতে চেষ্টা করলে থামিয়ে দিলেন তিনি। আগের মত স্বাভাবিক গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ যা বলার বাড়িতে গিয়ে শুনবো। লেট হচ্ছে এখন চল।’
মেয়ের হাত টেনে তুলল জাফর সাহেব। এপার্টমেন্ট থেকে বের হবার সময় শতাব্দের সাথে চোখাচোখি হলো। দুজনের চাহনিতে অদ্ভুত কোন রহস্য।
দরজার কাছে যেতেই প্রিয় পিছন ফিরে চাইল। অশ্রুসিক্ত অসহায় চাহনিতে শতাব্দের দিক চেয়ে রইল। মনেমনে বলল,
‘ বাবাকে আটকান। আমাকে আপনার কাছে রেখেদিন প্লিজ!’
প্রিয়’র মনের কথা শতাব্দ অবধি পৌঁছালো না। আটকালো না সে। প্রিয়’র যাওয়ার দিক চেয়ে রইল নিমিষ।

শাওয়ারের নিচে দুঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে আয়েশা। বিষাদপূর্ণ চোখমুখ। পানির সাথে অশ্রু মিশে ঝড়ছে। সব শেষ। এত বছর পরিশ্রম করে যা সম্মান কুড়িয়েছেন আজ সব শেষ। সব!
পরিস্থিতী সামাল দিতে কলেজ থেকে ব্রেক নিয়েছিল। ছুটি কাটিয়ে আজ কলেজে গিয়েছিলো। প্রথম থেকেই সবাই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল। প্রথমে এসবের তোয়াক্কা না করলেও ধীরেধীরে আশেপাশে ফিসফিস কানে আসছে। গ্রামের লোকেরা তার নামের সাথে ব্যা* তোকমা লাগিয়ে দিয়েছে। এতদিন যেই মানুষ গুলো সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস পেতনা আজ তারা কথা শোনাচ্ছে। সিনিয়র জুনিয়র কলিগ, স্টুডেন্ট সবাই তাকে নিয়ে প্রকাশ্যে আড়ালে ফিসফিস করছে।গালমন্দ করছে।
টিফিন টাইমে টিচার রুম মোটামুটি খালি ছিল। রেজাল্ট শিট তৈরি করছিল আয়েশা। এমন সময় টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো প্রদীপ স্যার। তিনি কলেজের একাউন্টিং-এর টিচার। বয়সে আয়েশা বেগমের বেশ জুনিয়র। প্রথমে কৌশল বিনিময় করে কথা বললেও।হঠাৎ আয়েশা বেগমের কাছে ঝুঁকে এসে কুপ্রস্তাব রাখলো। বলল,
‘ শুনলাম আপনার বাড়িতে নাকি মেয়ে ভাড়া দেন। কতটাকা ঘন্টা? আপনার ভাগ্নীও নাকি এই পেশায় আছে। যত টাকা লাগে আমি দিবো। শুধু আজকের রাতের জন্য প্রিয়কে যদি…..’
কথা শেষ করতে দিলোনা আয়েশা। প্রদীপ স্যারের গালে সজোরে চ*ড় বসালো। অ*গ্নিশিখার মত জ্বলে উঠল। চিৎকার করে বলল,
‘ অমা*নুষ, জা*নোয়ার! মেয়ে বয়সী একটা বাচ্চা মেয়ের দিকে কুনজর দিতে লজ্জা করে না তোর? বাড়িতে বউ রেখে ভালোমানুষির মুখোশ পড়ে এসব করে বেড়াস বাহিরে। ছি!’
প্রদীপ গর্জন করে বলল,
‘ ব্যা*গো আবার ভাব। খালা ভাগ্নী যে চেয়ারম্যানের পোলা আর শালারে ফাঁ*সাইছ তা বুঝি আমরা জানি না? কতটাকা দেয় ওরা। আমি আরো বেশি দিবো।’
কলার চেপে ধরল আয়শা বেগম। ক্রো*ধে চোখ ঝলঝল করছে। ততক্ষণে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজে। অনেক লোক জড় হয়েছে সেখানে। লোকজন দেখে ভালো সাজার নাটক করল প্রদীপ। কলার ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
‘ আপনি অনেক সম্মানের ম্যাডাম। আপনার কাছ থেকে এমন কু*প্রস্তাব আশা করিনি। সামান্য কিছু টাকার লোভে প্রিয়কে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ও আমার মেয়ের বয়সী। আমার বাড়িতে বউবাচ্চা আছে। ওর সাথে রাত কাটানো। ছিছি!’
আয়েশা যেন আকাশ থেকে পড়ল। আশেপাশে অন্য স্যার ম্যাডামদের ভেতর গুঞ্জন। এমন হাতাহাতি’র ঘটনা শুনে প্রিন্সিপাল ডাকল রুমে। সারা স্কুল কলেজ জুড়ে তখন চাপা গুঞ্জন।
প্রিন্সিপালের রুমে আয়েশা নিজের দিক তুলে ধরার চেষ্টা করল। শুনলো না কেউ। পুরো স্টাফ প্রদীপের দলে। আয়েশা প্রিয়কে নিয়ে আজেবাজে কথা রটিয়েছে ছবি বেগম। এতকিছুর পর কেউ বিশ্বাস করছে না তাকে। সমাজে একা নারীকে কেইবা মানে?
সব শুনে চাকরি থেকে আয়েশা বেগমকে বরখাস্ত করে দিলো প্রিন্সিপাল। এত বছর তিলেতিলে কুড়িয়ে আনা এই মান সম্মান মুহূর্তেই গুড়িয়ে গেল সব। এত মানুষের সামনে জঘন্য অপবাদ অপমানে গা ঘিনঘিনিয়ে উঠল তার। এত বছরের এত পরিশ্রম এত সম্মান বিফলে গেল সব। সেই সাথে প্রিয় নিষ্পাপ সুন্দর গোছানো জীবনটায় দাগ ফেলে দিলো বাজে। নিজে কাছে গোছাতে এনে আউলে দিলো তাকে। দাগ লাগিয়ে দিলো চরিত্রে!
আরো আধঘন্টা পানিতে ভিজে ঘরে চলে এলো আয়েশা বেগম। কাপড় পাল্টে ভেজা চুল নিয়ে চিঠি লিখতে বসলো টেবিলে। সন্ধ্যায় কাজের খালা এলে। কিছু টাকা দিয়ে চিঠি পোস্ট করতে পাঠালো বাজারে। সেই সাথে বলল,
‘ কাল থেকে আসতে হবে না আর।’
কাজের খালা ঘাবড়ে গেলেন। ভীতি কন্ঠে বললেন,
‘ কেন। আমি কি করছি আফা!’
‘ তুমি কিছু করোনি। আমার শান্তি চাই। দূরে বেড়াতে যাবো আমি।’
‘ কবে ফিরবেন?’
‘ জানিনা।’
অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দিলো আয়েশা। কাজের খালা আর কথা বাড়ালেন না। চিঠি নিয়ে চলে গেলেন।
রাতে টলমলে শরীর নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরেঘুরে দেখছেন আয়েশা বেগম। নিজ হাতে সাজানো বাড়িটাকে এটাই বুঝি শেষ বারের মত দেখা। সারাজীবন এত আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে এই বয়সে এসে এমন অপবাদ, অপমান সহ্য করছে পারছেনা শরীর মন। ধৈর্যের একটা বয়স সীমা থাকে। সেই বয়স পাড় হয়ে গেলে ধৈর্য সীমা নিতান্তই নিচে নেমে যায়। সারাজীবন তো শুধু লড়াই করল। কি পেল? না স্বামী পেল, না সংসার হলো। সারাজীবন শুধু ঠকেই গেল। বৈধ হয়েও সমাজের সামনে নিজের সন্তানের পরিচয় আনতে পারলো না। না প্রিয়কে জানাতে পারল তিনিই তার মা।
নিজের মেয়ের এত কাছে থেকে মা ডাক না শোনার মত আক্ষেপ কষ্ট, য*ন্ত্রণা দুনিয়াতে হতে পারেনা আর। কখনোই না। এমন নিরর্থক জীবন রেখে কি লাভ?
আচ্ছা, প্রিয় যখন সত্যিটা জানবে ক্ষমা করবে কি তাকে?
ভাবতে ভাবতেই শাড়ির ফাঁদে মাথা ঢুকালো । চোখ বুঝে শেষবারের মত প্রিয়’র চেহারাটা মনে করল। বিড়বিড় করে বলল,
‘ ক্ষমা করে দিস প্রিয়। আমি তোর ভালো মা হতে পারলাম না কখনো।’

শতাব্দের এপার্টমেন্ট থেকে ফিরে স্তব্ধ হয়ে গেছে প্রিয়। আজকাল ঘর ছেড়ে বের হয়না কোথাও। এই চার দেয়ালই তার সব।চারপাশের সবকিছু যেন এলোমেলো। এত বড় একটা ঘটনা ঘটলো। তাকে কেউ কোনকিছু জিজ্ঞেস করল না। না জানতে চাইল। সবকিছু একদম আগের মত স্বাভাবিক যেন। বাবার এই শান্ত স্বভাব প্রিয়কে ভাবাচ্ছে বড্ড।
আচমকা মায়ের চিৎকার চেঁচামেচি শুনলো। কান্নার আওয়াজ। বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠল প্রিয়। ড্রইং রুমে যেতেই হতভম্ব। মা হাত পা ছড়িয়ে ‘আপা, আপা’ বলে কাঁদছে। পাশেই চূর্ণবিচূর্ণ ফোনটা পড়ে।
বুক মোচড় দিয়ে উঠল প্রিয়’র। মায়ের কাছে ছুটে গেল। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার। অস্থির লাগছে খুব। মাকে ঝাকিয়ে বিমূঢ় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল প্রিয়,
‘ মা, কি হয়েছে খালার? ‘
আমেনা বেগম বিড়বিড়িয়ে এলোমেলো কন্ঠে বিলাপ করছে। কি বলছে বুঝল না প্রিয়। অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ খালার কি হয়েছে?’
‘ আপা আর নেই প্রিয়। আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। অনেক দূর চলে গেছে…’
প্রিয় যেন আকাশ থেকে পড়ল। চোখের সামনে অন্ধকার লাগছে সব। চারিদিক ঘুরছে। মায়ের কথাটা কানে বাজছে বারবার।
চোখ বুজতে বুজতে বিড়বিড় করে বলল প্রিয়,
‘ খালা নেই? খালা আর নেই…’
বলতে বলতেই মাটিতে অচেতন হয়ে পড়ল।

চলবে………

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।