বকুলের বাস্তবতা পর্ব-০৬

0
299

#বকুলের_বাস্তবতা
#পর্ব_৬(ধামাকাদার পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
আমি ফুফার সাথে চলে আসি আমার মায়ের বর্তমান ঠিকানায়।ধনী এলাকায় একটি বিরাট আলিশান বাড়ি, বাইরে বিভিন্ন মডেলের গাড়ি।এটাই আমার মায়ের দ্বিতীয় শ্বশুর বাড়ি।

মায়ের ইচ্ছে তাহলে পূরণ হয়েছে।যেমন শ্বশুরবাড়ি চেয়েছিল মা ঠিক তেমন শ্বশুর বাড়ি পেয়েছে।এতক্ষণ মায়ের সাথে দেখা করার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও এখন আর তেমন নেই।আমার খুব সংকোচ হচ্ছিল ভেতরে যেতে।আমার অবস্থাটা ফুফা বুঝতে পারলেন।তাই তিনি বললেন,
-“তুমি যদি না চাও তাহলে যেতে হবে না।”

আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এতদূর যখন এসেই গেছি একবার আমার মায়ের সাথে দেখা করেই যাই।মা যে সুখী আসে সেটা তো বুঝতেই পেরেছি এখন একবার দেখি মার চেহারা এখন কেমন হয়েছে।

বাড়ির সামনে আসতেই গার্ড আমাদের আটকে দিল।আমার ফুফা গার্ডদের বললেন,
-“আমরা মিসেসে চৌধুরীর সাথে দেখা করতে এসেছি।আমাদের ভেতরে যেতে দিন।”

গার্ডরা রাজি হলো।বাড়ির দিকে যত অগ্রসর হচ্ছিলাম ততোই আমার সংকোচবোধ হচ্ছিল।একসময় বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ি।বাড়িতে ঢুকতেই নজর যায় আমার মায়ের দিকে।সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন তিনি।

মাকে দেখে আমার চোখে জল চলে আসে।আজ কতদিন পর আমি আমার মাকে দেখলাম।মা এখনো ঠিক আগের মতো সুন্দরী আছে।আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলাম,
-“আম্মু…”

আমার ডাকে পিছনে ফিরে তাকালেন মিসেস শায়লা চৌধুরী মানে আমার মা।আমাকে দেখে বোধহয় ঠিক চিনলেন না।কিন্তু ফুফাকে ঠিকই চিনলেন।ফুফা বলল,
-“কেমন আছেন ময়না ভাবি? আমায় চিনতে পারছেন?”

-“দেলোয়ার ভাই আপনি।আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি হঠাৎ এই বাড়িতে।”

-“আমি একা আসিনি।এই যে আমার পাশে যাকে দেখছেন সে হলো বকুল আপনার আর বাকের ভাইয়ের মেয়ে।”

ফুফার কথাটা শুনে আমার মা ভীষণ অবাক হলেন।পরক্ষণেই বিরক্তির সাথে আমার দিকে তাকালেন।তার এই দৃষ্টিতে আমার মস্তিস্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়।আমি ভেবেছিলাম মা এতদিন পর আমায় দেখে নিজের বুকে টেনে নেবে কিন্তু তিনি বললেন,
-“এতদিন পর এলেন যে? শুনলাম বাকের মারা গেছে।ও বুঝেছি টাকার জন্য এসেছেন।কত টাকা লাগবে বলুন আমি দিয়ে দেবেন তবুও বলবেন না যে এই মেয়েটাকে যেন এখন আমি নিজের কাছে রাখি।আমি আমার এই সংসারে অনেক খুশি আছি।আমার একটা সৎছেলে আর নিজের একটা মেয়ে রয়েছে।আমি নতুন করে কারো দায়িত্ব নিতে পারবোনা।”

চোখের জল আর বাধা মানল না।যার সাথে দেখা করার জন্য এতকিছু করলাম সেই কিনা এরকম ব্যবহার করল।আমি মায়ের সামনে গেলাম।তার চোখে চোখ রেখে বললাম,
-“আপনার সাহায্যের আমার কোন প্রয়োজন নেই শায়লা চৌধুরী।আমি শুধু এসেছিলাম একবার আপনার সাথে দেখা করতে।আপনার এই রূপ দেখতে হবে জানলে কোনদিনও আসতাম না।যাইহোক আমার ভুল হয়ে গেছে আমায় ক্ষমা করে দিন।আমি এখন চলে যাচ্ছি আর কখনো আপনাকে আমার মুখ দেখাবো না।”

কথাগুলো বলে ফিরে যেতে নেব তখন কাউকে দেখে থমকে যাই আমি।শিলা মেয়েটা এখানে কি করছে? শিলাও আমাকে দেখে একইরকম অবাক হয়।মায়ের কাছে গিয়ে বলে,
-“এই মেয়েটা এখানে কি করছে আম্মু? ও তো আবীরের স্ত্রী।আমার থেকে আবীরকে কেড়ে নিয়ে ওর শান্তি হয়নি আবার কেন এসেছে।”

আমার মা সরি শায়লা চৌধুরী বোধহয় প্রস্তুত ছিলেন না এতবড় ধাক্কা সামলানোর জন্য।শিলার চিৎকারে শায়নও চলে আসে।আমাকে দেখে সেও প্রচণ্ড রেগে যায়।শিলা সিকিউরিটি গার্ড ডেকে আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে বলে।অথচ শায়লা চৌধুরী তখনো নিশ্চুপ ছিল।আমি ফুফার হাত ধরে বেরিয়ে আসি।আর কখনো ভাববো না আমি কারো কথা।আল্লাহ আমাকে আবীরের মতো এত ভালো জীবনসঙ্গী দিয়েছে।তাকে নিয়েই বাকি জীবন কা*টিয়ে দেব।
~~~~~~~~
বাড়িতে ফিরে বালিশ মুখে চেপে কাদছিলাম আমি।আমার চোখের জলে বালিশও ভিজে যাচ্ছিল।জানিনা ঐ স্বার্থপর মহিলার জন্য এত কান্না কেন পাচ্ছে আমার।

আমার আব্বু ঠিকই বলতেন জন্ম দিলেই মা হওয়া যায়না।এরকম মা যেন কারো নাহয় আল্লাহ, কারো না।

আমার মাথায় কারো শীতল কারো স্পর্শ অনুভব করি।আবীর কোমল কন্ঠে বলে,
-“আপনি নাকি কিছু খাননি।চলুন ডিনার করে নেবেন।”

-“আমার ক্ষিধে নেই।”

-“ক্ষিধে নেই বললেই আমি শুনব না বকুল।তাহেরা খালাকে বলেছি খাবার গরম করতে।আপনাকে খেতে হবে।”

আমি আর ফেলতে পারলাম না আবীরের কথা।চলে আসলাম খেতে।কিছুতেই খাবার আমার গলা দিয়ে নামছিল না।তখন আবীর নিজের হাতে আমায় খাইয়ে দিচ্ছিল।আমি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।আবীর আমাকে বলে,
-“পেট ভরে খান।কাল থেকে আপনাকে কিন্তু পড়াশোনায় মন দিতে হবে।আমি আপনাকে কোন প্রাইভেট মেডিকেলে এডমিশন দেওয়ানোর চেষ্টা করব।পাবলিকে যখন চান্স পেলেন না তখন প্রাইভেটে ট্রাই করুন।”

আবীরের কথা শুনে আমি অবাক হই।বলি,
-“আপনি কি করে জানলেন আমি মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়েছিলাম?”

-“আপনার ফুফার কাছে শুনেছি।আপনার বাবার ইচ্ছে ছিল আপনি ডাক্তার হবেন আপনারও স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া।আপনি যেহেতু আমার স্ত্রী তাই আপনার স্বপ্ন পূরণ করা তো আমার দায়িত্ব।”

আবীরের কথাগুলো শুনে আমার চোখে আনন্দের অশ্রু চলে আসে।এত ভালো স্বামীও মানুষের হয়।তাহেরা খালা পাশ থেকে বলে,
-“কি সুন্দর বন্ধন তোমাদের।কারো নজর যেন না লাগে।আর তোমরা এসব কি আপনি-আপনি করছ।স্বামী স্ত্রী এভাবে কথা বলে নাকি? একে অপরকে তুমি করে বল।তুমি করে বললে ভালো লাগে ব্যাপারটা।”

তাহেরা খালার কথা শুনে আমরা দুজনেই বিব্রতবোধ করি।আবীর বলে,
-“ঠিক আছে আজ থেকে আমরা একে অপরকে তুমি করেই বলব।তাইনা বকুল? আমাকে তুমি করে বলবে তো?”

আমি আনমনে বলে দিলাম,
-“হ্যাঁ।”

আবীর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।আবার এই হাসির প্রেমে পড়ে গেলাম আমি।
________
নতুন একটি দিন শুরু হয়।আবীর আজ আমায় নিয়ে একটু বাইরে এসেছে প্রাতভ্রমণ করার জন্য।সকালের মিষ্টি আবহাওয়া খুব সুন্দর উপভোগ করছিলাম দুজনে।

চলতে চলতে হঠাৎ আমি পড়ে যাই এবং পায়ে ব্যাথা পাই।আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল হাটতে।আবীর সেটা বুঝতে পেরে আমায় কোলে করে বাড়িতে নিয়ে এলেন।লজ্জায় আমি শেষ!

সকালে ব্রেকফাস্টের সময় আজ আদৃতাকে বেশ স্বাভাবিক দেখলাম।আমার সাথেও কোন খারাপ ব্যবহার করছে না।তাহলে কি সব ঠিক হয়ে গেল? হলেই ভালো।আমি চাই এই পরিবারকে নিয়ে আজীবন সুখে থাকতে।

এক মাস পর,
জীবন তার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।আবীর আর আমার সম্পর্ক এখন আর গাঢ় হয়েছে।আবীর এখন আমাকে চোখে হারায়।আদৃতারও শায়নকে নিয়ে পাগলামী বোধহয় কমেছে।তবে আমার সাথে এখনো আদৃতা সেরকম ভালোভাবে কথা বলে না।

আমি এখন একটি প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ছি।সবকিছু মিলিয়ে সুন্দরই চলছে আমার সুন্দর।এখন আমি বলতেই পারি বাস্তবতা সুন্দর৷আসলেই কি তাই? বাস্তবতা কি সুন্দর থাকবে।

আবীর রোজ আমায় মেডিকেলে নামিয়ে দিয়ে যায়।আজ ওর একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস থাকায় আগেভাগেই যেতে হয়েছে।তাই ও নিজের চাচা আব্দুল চৌধুরীকে বলেছে আজ যেন তিনি আমায় মেডিকেলে নিয়ে যায়।

চাচার সাথে মেডিকেলে আসলাম আমি।আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চাচা বললেন,
-“তুমি তো আজ সকালে ব্রেকফাস্ট করো নি।ক্যান্টিনে খেয়ে নিও।”

-“আচ্ছা চাচা।”

উনি গাড়িতে ঢুকতে যাবে তখনই ময়না ম্যাডাম চলে আসেন।উনি এই হাসপাতালের এক ডক্টর এবং আমাদের ক্লাসও নেন।ওনাকে দেখে সালাম বিনিময় করলাম।

ময়না ম্যাডামের গলা শুনে চাচা ওনার দিকে তাকান।দুজনের দৃষ্টি একে অপরের মধ্যে নিবদ্ধ হয়।

চাচা বলেন,
-“ময়না…”

-“অনেকদিন পর দেখা হলো।”
(চলবে)